২৯. দ্য ড্রিম

২৯. দ্য ড্রিম

হারমিওন ওর কপাল টিপতে টিপতে বলল–তাহলে এই সিদ্ধান্তে আসা যায়–হয় মি. ক্রাউচ ভিক্টরকে আক্রমণ করেছিলেন, নয়ত অন্য কেউ, মানে ভিক্টর যখন অন্যদিকে তাকিয়েছিল তখন দুজনকেই আক্রমণ করেছিল।

রন কথাটা শুনে সঙ্গে সঙ্গে বলল–কোনও সন্দেহ নেই মি. ক্রাউচই আক্রমণ করেছেন, তাই হ্যারি আর ডাম্বলডোর ছুটে আসার আগেই দৌড়ে পালিয়েছেন।

হ্যারি মাথা নেড়ে বলল–আমার কিন্তু তা মনে হয় না। কাউচের আক্রমণ কোনো শক্তিই ছিলো না।

হারমিওন বলল–তোমায় কতবার বলেছি হোগার্টের মাঠে বা জঙ্গলে একা একা ঘুরবে না? সিরিয়সও তোমাকে সাবধান করেছিল।

–বেশ তাহলে ধরা যাক, রন জোরে জোরে বলল।–ক্রাম, কাউকে মেরেছে… তারপর বোকা বানাবার জন্য গাছের তলায় পড়েছিল।

হারমিওন চোখ বড় বড় করে বলল–তারপর মি. ক্রাউচ উবে গেলেন, তাই?–ওহো… মানে…।

সকালের দিকে ওদের কোনও ক্লাস ছিলো না। খুব সকালে উঠে ওরা ডরমেটরি থেকে বেরিয়ে পাচাঁদের আস্তানায় সিরিয়সকে চিঠি পাঠানোর জন্য হাজির হল। ওখানে দাঁড়িয়ে ফোলা ফোলা চোখে শিশিরসিক্ত মাঠের দিকে তাকিয়ে রইল। গত রাতে দেরি করে শুয়েছে, উঠেছেও অনেক ভোরে। ঘুম ভাল করে হয়নি, তাই তিনজনেরই চোখ ফোলা ফোলা।

হারমিওন, হ্যারিকে বলল–আচ্ছা আর একবার বল মি. ক্রাউচ উল্টোপাল্টা কি বলছিলেন?

হ্যারি বলল–আমি তো আগেই বলেছি ওর কথার মধ্যে… মানে উল্টোপাল্টা বলছিলেন যেমন–ডাম্বলডোরকে সাবধান করে দেওয়া, হ্যাঁ বার্থা জোরকিনসের নাম করেছিলেন… মনে হয় তিনি মারা গেছেন…বলেছিলেন, যা কিছু ঘটেছে তার জন্য তিনি দায়ী নিজের ছেলেরও নাম উল্লেখ করেছিলেন…।

–সবই তার দোষ বলছিলেন তাই না? হারমিওন রসিয়ে বলল।

হ্যারি বলল–মনে হয় ভারসাম্য হারিয়েছিলেন, বলছিলেন ছেলে–স্ত্রী এখনও বেঁচে আছে, আবার পার্সির সঙ্গে অফিসের কাজের কথাও বলছিলেন, ইট্রাকশন দিচ্ছিলেন একটা গাছকে।

রন বলল–মনে পড়েছে, ইউ–নো–সম্বন্ধে কি বলছিলেন?

হ্যারি বলল–আরে কতবার এক কথা বলব? বলছিলেন ইউ–নো–ই আরও শাক্তিশালী হয়েছে।

তিনজনেই চুপ করে রইল।

তারপর নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে রন বলল-এই যে তুমি বললে, মনে হয় তার মাথা ঠিক ছিলো না? তাহলে মন হয় সব কথা প্রলাপ ছাড়া কিছু নয়।

–ভোল্ডেমর্টের নাম বলার সময় একটুও প্রলাপ বা অসংলগ্ন মনে হয়নি। হ্যারি রনের ঠাট্টা ভ্রুক্ষেপ না করে বলল, সব কথা গুছিয়ে বলতে পারছিলেন না, একটার সঙ্গে আর একটা জড়িয়ে যাচ্ছিল। তবে মনে হয় ঠিকভাবে বলার প্রাণপন চেষ্টা করছিলেন; কিন্তু পারছিলেন না। বারবার ডাম্বলডোরের সঙ্গে দেখা করার কথা বলছিলেন।

হ্যারি জানালা থেকে সরে গিয়ে ঢালু ছাদের দিকে তাকিয়ে রইল। পাচাঁদের থাকার অর্ধেক দাঁড় প্রায় শূন্য, মাঝে মধ্যে পাচারা দাঁড়ে এসে বসছে আবার খোলা জানালা দিয়ে হুস করে উড়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার রাতের শিকার ইঁদুর ঠোঁটে করে নিয়ে আসছে।

–স্নেইপ যদি ডাম্বলডোরের কাছে যেতে আমাকে না–আটকাতেন তাহলে আমরা হয়ত ঠিক সময় ওখানে পৌঁছতে পারতাম, হ্যারি তিক্ত কণ্ঠে বলল। উনি বললেন, হেডমাস্টার দারুণ ব্যস্ত পটার, কি সব বকছ পটার? এইসব মাথা খারাপের কথা। আমাকে আটকাবার কোনও কারণ ছিলো না স্নেইপের। উনি আমাকে ডাম্বলডোরের কাছে চলে যেতে দিতে পারতেন।

রন সঙ্গে সঙ্গে বলল–হয়ত স্নেইপ তোমাকে ওই স্থানে ফিরে যেতে দিতে চাননি। আচ্ছা কত তাড়াতাড়ি স্নেইপ ওখানে যেতে পারতেন? তোমার চেয়েও আগে? ডাম্বলডোরকেও হারিয়ে দিতেন?

হ্যারি বলল–মানুষ থেকে বাদুর হলে…।

হারমিওন বলল, ঠাট্টা–তামাশা রাখ। আমাদের এখন প্রফেসর মুডির সঙ্গে দেখা করার দরকার। জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে মি. ক্রাউচকে পেলেন কিনা আমাদের জানতে হবে।

হ্যারি বলল–প্রফেসর মুডির কাছে একটা মারাউডাবস ম্যাপ (যদিও সেটা ওর) থাকলে খুব সুবিধে হত।

ক্রাউচ সীমানার বাইরে চলে গেলে ম্যাপ দিয়ে কিছুই হত না রন বলল।

হারমিওন ঠোঁটে আঙ্গুল ঠেকিয়ে শু শব্দ করল। সাবধান করে দিল।

হ্যারির কানে এল দুজনের সিঁড়ি দিয়ে ওঠার পদ শব্দ আর তাদের তর্কবিতর্ক। ওদের দিকেই তারা আসছে। যত এগিয়ে আসে, স্পষ্ট শুনতে পায় তাদের কথা।

–ব্ল্যাকমেল ছাড়া কিছুই নয়… আমরা কিন্তু অনেক ভোগান্তিতে পড়তে পারি।

–আমরা ভদ্ৰ হবার অনেক চেষ্টা করেছি। এখন ওর মত নোংরা হতে হবে। ও যেসব কাজ করেছে, মিনিস্ট্রি অব ম্যাজিক সেটা জানুক, একেবারেই চায় না।

–আমি কোন ঢাক ঢাক গুড় গুড় না–করে বলছি, তুমি যদি লিখে জানাও তো সেটা ব্ল্যাকমেল ছাড়া অন্য কিছু হবে না।

–তুমি যদি বেশ মোটা রকম কিছু পাও, তাহলে ব্যাপারটা কানে তুলবে না, নালিশ করবে না। তাই না?

প্যাঁচার আর দরজা শব্দ করে খোলার শব্দ হল। ফ্রেড আর জর্জ দরজার মুখে দাঁড়িয়ে ওদের তিনজনকে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেল।

রন আর ফ্রেড একই প্রশ্ন একই সঙ্গে করল।

–তোমরা এখানে কিসের জন্য এসেছ?

–চিঠি পাঠাতে, হ্যারি আর রন একই সঙ্গে বলল।

হারমিওন ফ্রেডকে বলল-এই সময়ে?

ফ্রেড হাসল–তোমরা যদি জানতে না চাও আমরা কেন এসেছি, তাহলে আমরাও তোমাদেরটা জানতে চাবো না।

হ্যারি দেখল ফ্রেডের হাতে সিল করা একটা খাম। ফ্রেড ইচ্ছে করেই হোক বা এমনিতে, খামটা এক হাত থেকে অন্য হাতে রাখার সময় ঠিকানা–নাম দেখতে পাওয়া গেল।

–যাকগে আমরা তোমাদের আটকে রাখছি না, ইচ্ছে করলে যেতে পার, ফ্রেড দরজাটা দেখাল।

রন যেমন দাঁড়িয়ে ছিল তেমনভাবে দাঁড়িয়ে রইল, বলল–কাকে তোমরা ব্লেকমেল করছ?

ফ্রেডের মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল। হ্যারি তখন জর্জ ফ্রেডের মুখের দিকে আড়চোখে তাকাল।

ফ্রেড বলল–বোকার মতো কথা বলবে না। আমি ঠাট্টা করছিলাম। ফ্রেড ও জর্জ–পরস্পরের দিকে তাকাল।

তারপর ফ্রেড বলল–রন কতবার তোমায় বলা হয়েছে অন্যের ব্যাপারে নাক গলাবে না? তুমি কী তোমার নাক যেমনটি আছে তেমন রাখতে চাও?… অযথা কেন…

–তোমরা যদি কাউকে ব্লেকমেল করার কথা ভাব, তাহলে আমার বাধা দেবার অধিকার আছে জর্জ ঠিকই বলেছে শেষে তুমি বিপদে জড়িয়ে পড়বে।

জর্জ বলল–বললাম তো–ঠাট্টা করছিলাম। কথাটা বলার পর জর্জ ফ্রেডের হাত থেকে খামটা নিয়ে কাছাকাছি একটা লক্ষ্মী পাচার পায়ে বেঁধে দিল। তুমি দেখি আমাদের প্রিয় বড় ভাইয়ের মতো সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছ রন, নিজের চরকায় তেল দাও, অচিরে প্রফেট হয়ে যাবে।

রন তেজের সঙ্গে বলল–না; তা আমার দরকার নেই।

জর্জ প্যাঁচাটাকে হাতে নিয়ে জানালার কাছে এসে উড়িয়ে দিল।

তারপর রনের দিকে তাকিয়ে জর্জ হেসে বলল–চললাম, পরে দেখা হবে।

ওরা চলে গেলে হ্যারি, রন আর হারমিওন চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।

 হারমিওন বলল–মনে করবে না গতরাতে ব্যাপারটা ওরা কিছু জানে না।

হ্যারি বলল–আমার তো মনে হয় না। তা হলে ওরা এর মধ্যে সবাইকে বলে বেড়াত, ডাম্বলডোরকেও।

রনের মুখে নিদারুণ অস্বস্তির ছাপ।

হারমিওন সেটা লক্ষ্য করে বলল–ব্যাপার কি, কী ভাবছ?

–বলতে পারছি না, রন বলল–ইদানীং লক্ষ্য করছি ওরা দুজনে অর্থের পেছনে ছুটছে, যখনই ওদের কাছে যাই অর্থ ছাড়া অন্য কিছু বলে না।

–যা ইচ্ছে করুক; কিন্তু ব্ল্যাকমেল? হ্যারি বলল।

–জোক শপের ব্যাপার হয়তো। ভেবেছিলাম ওরা মাকে রাগাবার জন্য বলে; এখন ওদের কাজকর্ম দেখে মনে হয় শপ খুলতে ওরা বদ্ধপরিকর। মনে হয় একটা খুলবে। আরতো একটা বছর হোগার্টে থাকবে, তারপর ভবিষ্যত তো দেখতে হবে। বাবা কিছু করতে পারবেন বলে মনে হয় না। ওদের কাজ শুরু করার জন্য সোনা দরকার। কোথা থেকে পাবে!

হারমিওন একটু বিস্মিত হলো। বলল–ঠিক আছে, সবই মানলাম; কিন্তু সোনার জন্য বেআইনি কাজ করতে হবে?

রন বলল–ওরা কি করছে না করছে সঠিক জানি না। সত্যি কি অবাক হবো যদি ওরা বেআইনি কাজ করছে বা ভবিষ্যতে করে?

হারমিওন বলল–বুঝলে রন, সরকারের আইন স্কুলের আইন নয়। ব্ল্যাকমেল করা অপরাধ! এ কারণে ওদের জেল হতে পারে, পার্সিকে ব্যাপারটা জানানো উচিত। পার্সি জানলে ভাল হয়।

রন কথাটা শুনে বলল–তুমি পাগল হলে নাকি? ও একটি ক্রাউচ, জানতে পারলে ওদের জেলে পুরে দেবে। কথাটা বলে ও খোলা জানালার দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। একটু আগে ফ্রেড আর জর্জ ওখান দিয়ে প্যাঁচা পাঠিয়েছে। যাকগে চল ব্রেকফাস্ট খাবো না?

হারমিওন পেচানো সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল, প্রফেসর মুডির সঙ্গে কথা বলা… মানে এত তাড়াতাড়ি, ঠিক হবে কী?

রন বলল–ঘুম থেকে সাতসকালে ওকে তুললে দারুণ ক্ষেপে যেতে পারেন। রেগেমেগে আমাদের ছুঁড়ে ফেলেও দিতে পারেন। অপেক্ষা করাই ভাল।

ম্যাজিকের ইতিহাসের ক্লাস শেষ হতেই ওরা ডার্ক আর্টস ক্লাসরুমের দিকে ছুটতে ছুটতে চলল। দেখল প্রফেসর মুডি ঘর থেকে বেরোচ্ছেন।

ওদের মুডিকে দেখে মনে হল খুব ক্লান্ত। ওনার স্বাভাবিক চোখটা ক্ষীণ মুখটাও স্বাভাবিক নয়।

ভিড় ঠেলে মুডির দিকে ওরা এগিয়ে গেল। হ্যারি বলল–প্রফেসর মুডি?

মুডি হুংকার দিয়ে বললেন–হ্যারি পটার, এদিকে আমার ঘরে তোমারা এসো। ওরা ঘরে ঢোকার পর মুডি পা টেনে ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।

হ্যারি অন্য কোনও কথা না বলে প্রথমেই জিজ্ঞেস করল, কাল মি. ক্রাউচকে খুঁজে পেয়েছিলেন?

–না, মুডি বললেন। তারপর পা টেনে টেনে নিজের বসার জায়গায় বসে কাঠের পাটা আঃ শব্দ করে খুলে ফেলে সযত্নে পাশে রাখলেন।

–ম্যাপটা ব্যবহার করেছিলেন? হ্যারি বলল।

–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই; মুডি বললেন, ফ্লাস্ক থেকে এক চুমুক মদ্যপান করলেন। অনেক খুঁজেও ম্যাপে ধরা গেলো না।

রন বলল–তাহলে ডিসপারেট করেছিলেন?

–রন মাঠ থেকে সেটা সম্ভব নয়, হারমিওন বলল।–অন্য কোনও উপায়ে ক্রাউচ সম্ভবত: উধাও হয়ে গেছেন। আপনি কি বলেন প্রফেসর? মুডির ম্যাজিক্যাল চোখ নেচে উঠে হারমিওনের দিকে স্থির হল।

–তুমি দেখছি ভাল অরর হবার ক্যারিয়র বেছে নেবে। তুমি সঠিক অনুমান করেছ মিস গ্রাঞ্জার।

প্রশংসা শুনে হারমিওনের গালটা লাল হয়ে গেল।

হ্যারি বলল–তিনি অদৃশ্য ছিলেন না। আমাদের ম্যাপে অদৃশ্য মানুষকে দেখা যায়। মনে হয় মাঠ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।

–নিজের শক্তিতে, হারমিওন বলল–অথবা অন্যকেউ বাধ্য করেছিল।

–হ্যাঁ হ্যাঁ কেউ হয়ত তার ঝাড়ুতে চাপিয়ে নিয়ে গেছে, সেটাও হতে পারে তাই না? রন বলল। কথাটা এমনভাবে বলল যেন ওকে মুডি হারমিওনের মতো ভবিষ্যতে অরর হতে পারে বলে তারিফ করবেন।

মুডি বললেন–কিডন্যাপের কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

–তাহলে আপনি কী মনে করেন তিনি হগসমেড কোথায়ও আছেন? রন বলল।

মুডি মাথায় ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন–হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। একটা বিষয় সুস্পষ্ট তিনি এখানে নেই।

কথাটা বলে মুডি বড় করে একটা হাই তুললেন। মুডির অনেক দাঁত নেই। এখন আসল কথা বলি। ডাম্বলডোর চাইলে তোমরা তদন্তকারী হতে পার। তাছাড়া এখন যা অবস্থা ক্রাউচের বিষয়ে এর বেশি কিছু করা যাবে না। ডাম্বলডোর মিনিস্ট্রিকে সব জানিয়েছেন, আশা করা যায় মিনিস্ট্রি, যা করার তা করবে। পটার তুমি এসব মাথায় না এনে তোমার তৃতীয় টাস্কের কথা ভাব।

হ্যারি বলল–ও হ্যাঁ সে তো ভাবতেই হবে।

হ্যারি সেই যে ক্রামের সঙ্গে মাঠ পেরিয়ে অরণ্যের মুখে গিয়েছিল, এরপর থেকে, আর ম্যাকগোনাগলের কথা, তৃতীয় টাস্কের কথা একটা বারও ভাববার সময় পায়নি।

–সব পারবে, ঠিক উৎরে যাবে। মুডি থুতনি চুলকোতে চুলকোতে বললেন। ডাম্বলডোর বলেছেন তুমি সব বাধা–বিঘ্ন কাটিয়ে সঠিক জায়গায় পৌঁছবে। প্রথম বছরে ফিলোসফার স্টোনস? তুমি সেটাকে গার্ড দিতে কত বাধা–বিঘ্ন কাটিয়েছ। কাটাও নি?

রন বলল–আমরাও সাহায্য করেছিলাম–আমি ও হারমিওন।

মুডি হাসলেন। বললেন–খুব ভাল কথা, তাহলে ওকে অনুশীলন করার সময়ও সাহায্য কর। হ্যারি জিততে না পারলে আমি খুবই আশ্চর্য হব। আমি জানি সে জিতবেই। তা হলেও সবসময় চোখ খুলে রাখবে, সর্তক থাকবে। সাবধানে মার নেই। কোমরে বাধা ফ্লাস্ক থেকে মুডি আবার অনেকটা তরল পদার্থ, গলায় ঢাললেন। তারপর ম্যাজিক্যাল আই দিয়ে জানালার বাইরে তাকালেন। দেখলেন লেকের জলে ভাসমান ডারমস্ট্রংগ জাহাজের সবচেয়ে বড় মাস্তুলের ওপর পতাকাটা পৎ পৎ করে উড়ছে।

***

তারপর দিন সকালে ওদের প্যাঁচাকে দিয়ে চিঠির জবাব পাঠিয়ে দিলেন সিরিয়স।

হ্যারি,
তুমি কি মনে কর না যে অরণ্যে রাত্রি বেলা ভিক্টর ক্রামের সঙ্গে যাওয়াটা ছেলে মানুষি কাজ হয়েছে তোমার? আমি চাই তুমি প্রতিজ্ঞা করে আমাকে জানাও যে ভবিষ্যতে তুমি একা বা অন্য কারও সঙ্গে রাত্রিবেলা কোথাও যাবে না। হোগার্টে বর্তমানে একজন মারাত্মক মানুষ রয়েছে। আমার কাছে জলের মতো পরিষ্কার যে ওরা ক্রাউচকে ডাম্বলডোরের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। তুমি কয়েক ফিট দূরে থাকার জন্য বেঁচে গেছ। তোমাকে ওরা হত্যা করতে পারতো।
এ কথা জানবে, গবলেট অব ফায়ার থেকে তোমার নাম আকস্মিকভাবে বেরিয়ে আসেনি। তোমাকে যদি কেউ হত্যা করতে, আক্রমণ করতে চায় তাহলে সেটাই হবে ওদের শ্রেষ্ঠ সুযোগ। সব সময় তুমি রন ও হারমিওনের কাছাকাছি থাকবে। ছুটির পর কখনই গ্রিফিন্ডর টাওয়ার ছেড়ে ঘোরাফেরা করবে না। তৃতীয় টাস্কের জন্য ভালভাবে প্রস্তুত হবে। স্টানিং ডিসআর্মিং খুব বেশি করে অনুশীলন করবে। দু একটা জাদুমন্ত্র বা সম্মোহন তোমাকে কাবু করতে পারবে না, ব্যর্থ হবে। তুমি কাউচের ব্যাপারে কিছুই করতে পারবে না। মাথা ঠাণ্ডা করে নিজের ভাল–মন্দ ভেবে চলবে। আমি তোমার আমাকে কথা দিয়ে চিঠির উত্তরের আশায় রইলাম। আবার বলছি কখনই সীমার বাইরে রাত্রিতে যাবে না।
সিরিয়স

উনি কে যে আমাকে সীমানার মধ্যে থাকতে উপদেশ দেন? হ্যারি সিরিয়সের চিঠিটা রোবের পকেটে রাখতে রাখতে ব্যথিত হয়ে বলল। স্কুলে থাকতে নিজে কি করেছেন?

হারমিওন বলল–মনে রেখ সিরিয়স তোমার গডফাদার। মুডি বা হ্যাগ্রিডের মতো। তোমার বিষয়ে তিনি খুবই চিন্তিত তাই তোমাকে লিখেছেন, তুমি কী তাদের কথা শোনো না!

–আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে আক্রমণ করেনি, কেউ আমার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না, হ্যারি বলল।

হারমিওন বলল–অবশ্যই গবলেট অব ফায়ারে তোমার নাম দেওয়া ছাড়া। কোনও কারণের জন্য ওরা তোমার নাম দিয়েছে নিশ্চয়ই। একথা ভুলে যাবে না হ্যারি। লাপাত্তা সঠিক বলেছেন, হতে পারে তারা তাদের নাম গোপন করেছে, হতে পারে তারা তোমাকে ধরার সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে।  

হ্যারি অধৈর্য হয়ে বলল–শোন, ধরে নেওয়া যাক লাপাত্তা (সিরিয়সের ছদ্ম নাম) ঠিক বলেছেন, তারা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে, হতে পারে নাম গোপন রেখে তাদের এই কাজটা করতে হুকুম দেওয়া হয়েছে। হতে পারে, ক্রামকে সম্মোহন করে ওরা ক্রাউচকে কিডন্যাপ করেছিল। তাহলে নিশ্চয়ই তারা আমাদের গাছের কাছাকাছি ছিল–তাই না? কিন্তু তারা আমি ওখান থেকে চলে না যাওয়া। পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল। তাহলে এটাই স্পষ্ট, আমি তাদের টার্গেট নই।

–কিন্তু অরণ্যে তোমাকে হত্যা করলে কখনই দুর্ঘটনায় তোমার মৃত্যু হয়েছে বলে চালাতে পারতো না, হারমিওন বলল। কিন্তু টাস্ক করার সময় যদি তুমি মারা যাও…।

–ক্রামকে ওরা আক্রমণ করেনি। করেছিল কী? হ্যারি বলল। সেই সময় আমাকেও সাফ করে দিল না কেন? এমনও একটা অজুহাত সৃষ্টি করতে পারত যে আমি আর ক্রাম দ্বন্ধযুদ্ধ বা ওই রকম কিছু একটা করেছি।

হারমিওন বোঝাবার আপ্রান চেষ্টা করে বলল, হ্যারি তোমার মনোভাব আমি মোটেই বুঝতে পারছিনে। তবে আমি জানি নানারকম সব উদ্ভট ব্যাপার–স্যাপার ঘটছে।… ভাবতে আমার ভাল লাগে না। আমার মতে মুডি ও লাপাত্তা ঠিক বলেছে…. তোমাকে অন্যকিছু ভাবনা মাথায় না–রেখে থার্ড টাস্কের কথা ভাবা উচিত। তুমি আজই লাপাত্তাকে লিখে জানাও–তুমি তার উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে, বুঝেছ?

***

হোগার্টের মাঠ যে এত সুন্দর হ্যারির আগে চোখে পড়েনি। যেন ওকে হাতছানি দিচ্ছে। তারপর কয়েকটা দিন হ্যারি হারমিওন ও রনের সঙ্গে ছুটির সময়টা লাইব্রেরিতে কাটাল। জাদুমন্ত্র বিষয়ক বই পড়া ছাড়াও মাঝে ফাঁকা ক্লাসরুমে উঁকি–ঝুঁকি দিতে লাগল তিনজনে। হ্যারি স্টানিং স্পেল সম্বন্ধে আরো বেশি করে পড়াশুনা আর বইপত্র ঘাটতে লাগল। এর আগে ও কখনও স্টানিং স্পেল ব্যবহার করেনি। মুস্কিল এই যে ওই স্পেলটা রন বা হারমিওনের ওপর পরীক্ষা করতে হবে। কিন্তু সেটাও সম্ভব নয়।

রন লাঞ্চ টাইমে বলল–সবচেয়ে ভাল হবে মিসেম নরিসকে কিডন্যাপ করা। করতে পারবো আমরা?

হারমিওন অ্যারিথমেনসির ক্লাসে যাবার সময় রন আর হ্যারিকে বলল, তোমরা তোমাদের ক্লাসে যাও, ডিনারের সময়ে দেখা হবে।

হ্যারি আর রন প্রফেসর ট্রেলনের ভবিষ্যৎ কথন ক্লাসের জন্য তার ঘরের দিকে চলল। রন বলল,–ঘটায় দারুণ গরম। সব সময় প্রফেসর ট্রেলন ঘরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে রাখেন। নর্থ টাওয়ারে ভবিষ্যৎ কথনের ক্লাসরুম। করিডলর দিয়ে ওরা হাঁটতে লাগল। উঁচু জানালা থেকে করিডোরে সোনার মতো চকচকে রোদ এসে পড়েছে। বাইরের আকাশ নীল, মনে হয় যেন নীল রঙ করা।

রন একটুও মিথ্যে বলেনি। প্রায় অন্ধকার ঘরটায় শুধু এক কোণে আগুন জ্বলছে, এত গরম যে মনে হয় যেন ফার্নেস। সমস্ত ঘরটায় সুগন্ধিতে ভারি হয়ে আছে। পর্দা ঢাকা একটা জানালার পাশ দিয়ে যেতে যেতে মাথাটার ভেতর মনে হল কিছু সাঁতার কাটছে।

প্রফেসর ট্রেলনে তার ডানাওয়ালা বিরাট আর্ম চেয়ারে বসলেন। সামনে ক্লাসের ছাত্র–ছাত্রী। ট্রেনে বড় বড় চোখ করে বললেন–আমার প্রিয় ছাত্র–ছাত্রীরা, আমরা গ্রহ সম্পর্কিত ভবিষ্যৎ কথনের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি। আজ আমাদের মার্সের (মঙ্গলগ্রহের) প্রভাব সম্বন্ধে পরীক্ষার অসাধারণ সুযোগ পাব কারণ এই গ্রহ বর্তমানে খুবই আকর্ষণীয় স্থানে অবস্থান করছেন। তোমরা সকলে এইদিকে তাকাও, তোমাদের দেখার সুবিধে জন্য আলো কমিয়ে দিচ্ছি।

কথাটা বলে ট্রেলনে দণ্ডটি ঘোরাতেই সব আলো চলে গেল। এখন আলো বলতে ঘরে যে আগুন জ্বলছে। প্রফেসর ট্রেলনে নিচু হয়ে তার চেয়ারের তলা থেকে সৌরজগতের গ্রহণক্ষত্রাবলীর একটা ছোট মডেল বের করলেন। সেটা রয়েছে একটা কাঁচের গোলাকার গম্বুজের ভেতর। নটি গ্রহ ও জ্বলন্ত সূর্যের চার পাশে প্রতিটি চাঁদ তাদের নিজেদের গতিপথে ক্ষীণ আলো বিচ্ছুরিত করছে। সব কটি গ্লাস বলের অভ্যন্তরে অতি সূক্ষ্ম বাতাসে ঝুলছে।

মঙ্গলগ্রহের সঙ্গে নেপচুন সে মনোরম ত্রিকোণ সৃষ্টি করছে, প্রফেসর ট্রেলনে সেটা দেখাবার সময়, হ্যারি খুব একটা মনোযোগ দিয়ে দেখল না, শুনলোও না। অতি উগ্র সুগন্ধী বাষ্প ওর শরীরকে ধৌত করে দিল। মৃদুমন্দ বাতাস খোলা জানালা দিয়ে এসে ওর মুখের ওপর ঝাপটা দিতে লাগল। পর্দার অন্তরাল থেকে একটা অজানা কীটের মিষ্টি ডাক কানে ভেসে আসতে লাগল। ধীরে ধীরে ওর দুচোখের পাতা বন্ধ হয়ে গেল। ও একটা বড় ঈগল–পাচার ওপর বসে, দেখল নীল আকাশের নিচে পাহাড়ের কোলে একটা আইভি গাছে ঢাকা পুরনো বাড়ি। যত নিচে নামে ঠাণ্ডা হাওয়া এসে মুখে লাগে। তারপর, ঈগল পাখি আর ও, সেই বাড়ির দোতলায়, একটা অন্ধকার ভাঙা জানালার সামনে থামল। তারপর, ওরা উড়তে উড়তে অস্পষ্ট একটা গলির শেষপ্রান্তে একটা ঘরের সামনে থামল। ঘরের খোলা দরজা দিয়ে পাখির পিঠে বসে ভেতরে গেল, ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘর, ঘরের সব জানালা বন্ধ। হ্যারি পাচার পিঠে আর বসে নেই। এখন ও দেখছে, ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে, একটা চেয়ারের পেছনে এসে দাঁড়াল, চেয়ারের দুপাশে দুটি কাল ছায়া মেঝেতে বসে রয়েছে… দুজনেই অতিচঞ্চল।

দুটির মধ্যে একটি বিরাট সাপ, অন্যটি একটি মানুষ…বেঁটে… মাথায় টাক… চোখ দুটো তার অনুজ্জ্বল… তীক্ষ্ণ নাক… ও কম্বলে বসে বড় বড় শ্বাস ফেলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। পাচাটা যে চেয়ারে উড়তে উড়তে বসেছিল সেই চেয়ারে একজন বসে… তাকে দেখা যাচ্ছে না। সে ঠাণ্ডা শিরশিরে গলায় বলল–ওয়ার্মটেল তোমার ভাগ্য ভাল, সত্যি তুমি ভাগ্যবান, তোমার সাংঘাতিক ভুল সবকিছু ধ্বংস করেনি। ও মরে গেছে।

মেঝেতে বসে থাকা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদা বন্ধ না করে বলল–মাই লর্ড, আমি… আমি অতিশয় আনন্দিত… অতিশয় দুঃখিত..।

–নাগিনি–সেই শীতল কণ্ঠ বলল। তোমার ভাগ্য খারাপ… ওয়ার্মটেলকে তো তোমার জন্য ছেড়ে দেবো না। যাকগে, তার জন্য দুঃখ করবে না। এখনও তো হ্যারি পটার আছে।

সাপ হিস্ হিস্ শব্দ করল। হ্যারি সাপের সরু ললকে জিব দেখতে পেল। প্রতি হিস হিস শব্দের সাথে সাথে জিব বেরিয়ে আসছে।

-এখন শোন ওয়ার্মটেল, শীতল কণ্ঠে বলল–তুমি আমার আরও একটু সাবধানবাণী মনে রাখবে। আমি এরপর তোমার আর কোনও ভুল সহ্য করবো না।

–মাই লর্ড আর কখনও ভুল হবে না, আমায় ক্ষমা করুণ লর্ড।

চেয়ারের গভীরতা থেকে ছোট দণ্ডের মুখ দেখতে পেল হ্যারি। দণ্ডটা ওয়ার্মটেলের দিকে প্রসারিত। কুসিও শীতল কণ্ঠে বলল।

ওয়ার্মটেল আর্তনাদ করে উঠল, এমন এক আর্তনাদ যেন ওর দেহের প্রতিটি শিরা–উপশিরাতে আগুন লেগে গেছে। ওয়ার্মটেলের যন্ত্রণাকাতর আর্তনাদে হ্যারির মাথা ঝন ঝন করে উঠল, কপালের কাটা দাগে তীব্র যন্ত্রণা যেন তপ্ত লোহা চেপে ধরেছে। হ্যারিও ওয়ার্মটেলের মতো তীব্র যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠল, ভোল্ডেমর্ট তার চিৎকার শুনতে পেল, জেনে গেল হ্যারি পটারের উপস্থিতি।

–হ্যারি! হ্যারি!… ওর স্বপ্ন… দুঃস্বপ্ন ভেঙে গেল।

হ্যারি চোখ খুলল! দেখল, ও প্রফেসর ট্রেলনের ঘরের মেঝেতে হাতে মুখ ঢেকে শুয়ে রয়েছে। ওর কপালের কাটা দাগের যন্ত্রণা তখনও প্রশমিত হয়নি। দারুণ জ্বালা–যন্ত্রণা। ওর চোখ দিয়ে হু হু করে জল বেরোচ্ছে। ব্যথাটা স্বপ্নে দেখা নয়–সত্য। ক্লাসের সব ছাত্রছাত্রী ওকে ঘিরে রয়েছে। রন ওর মুখের দিকে ভীত হয়ে তাকিয়ে রয়েছে।

রন বলল–তুমি ঠিক আছ তো হ্যারি?

প্রফেসর ট্রেলনেকে দারুণ উত্তেজিত দেখাচ্ছে। বড় বড় চোখে হ্যারিকে বললেন–কী ব্যাপার পটার? আগে–ভাগে সতর্ক করে দেওয়া? অপছায়ার আবির্ভাব? তুমি কী দেখেছ?

হ্যারি মিথ্যে কথা বলল–কিছু নাতো। ও উঠে বসল, তখনও ওর শরীরের ভেতরটা থর থর করেছে। ও চারপাশে তাকাল, সামনে একটা কালছায়া… সেই ছায়ার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে ভোল্ডেমর্টের শীতল, গা শির শির করা কণ্ঠস্বর।

–তো তুমি তোমার কপালের কাটাদাগে–হাত চেপে ধরেছিলে! তুমি মেঝেতে শুয়ে ছটফট করছিলে, আমাকে তুমি খুলে বল, এই ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা আছে।

হ্যারি প্রফেসর ট্রেলনের দিকে তাকাল।

–আমি হসপিটালে যেতে চাই, আমার খুব মাথার যন্ত্রণা হচ্ছে হ্যারি বলল।

–তুমি নিশ্চয়ই আমার ঘরে অভূতপূর্ব আলোকদৃষ্টির কম্পনে উদ্দীপিত হয়েছিলে! প্রফেসর ট্রেলনে বললেন–তুমি এখন চলে গেলে বাকি সুন্দর জিনিসগুলো দেখতে পাবে না।

হ্যারি বলল–মাথা ধরা কমান ছাড়া আমি কিছুই দেখতে চাই না।

হ্যারি দাঁড়াল। তারপর ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে রনকে বলল–পরে তোমার সঙ্গে কথা হবে।

হ্যারি চলে যাওয়াতে প্রফেসর ট্রেলনে দুঃখিত হলেন চোখে–মুখে দারুণ হতাশার ছাপ পড়ল। যেন তাকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

সিরিয়স ওকে বলেছিলেন, আবার যদি মাথার যন্ত্রণা হয়, কাটাদাগ চুলকোয়, জ্বালা করে তাহলে কি করতে হবে। সেই কথাটা মেনে হাসপাতালে না গিয়ে ও সোজা ডাম্বলডোরের অফিসের দিকে চলল। করিডলর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্বপ্নের কথা ভাবতে লাগল। স্বপ্ন বলে যেন মনে হয় না। প্রিভেট ড্রাইভে থাকতে ওই রকম এক স্বপ্ন দেখেছিল, প্রতিটি সেকেন্ডের কথা, ঘটনা, ওর মনে আছে। ভোমের্টের ওয়ার্মটেলকে শাসানি, ওয়ার্মটেলের কান্না, সাপের হিস হিস শব্দ… সবকিছুই। পাচা একটা শুভ সংবাদ আনাতে ওয়ার্মটেলের মারাত্মক অপরাধ প্রশমিত হয়েছে, কেউ মারা গেছে… তাহলে ভোল্ডমর্ট কী ওয়ার্মটেলকে সাপের মুখে ছেড়ে দেবে না।.. হ্যারি কী তার বদলে সাপের খাদ্য হবে।

হ্যারি করিডর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ডাম্বলডোরের অফিসের দরজার পাশে পাথরের সিংহমুখের সামনে দাঁড়াল। পাশওয়ার্ডটা কিছুতেই মনে আসে না। তবু একবার শোনা পাশওয়ার্ডটা অনেক চেষ্টা করে মনে এনে ও বলল–শেরবেট লেমন।

বাঘের মুখটা একটুও নড়ল না।

–ঠিক আছে, হ্যারি মুখটার দিকে তাকিয়ে বলল। তারপর একের পর এক পাশওয়ার্ড বলতে লাগল; পিয়ার ড্রপ, এর–লিকোরাইস, ওয়াল্ড ফিজিং হুইজবী, ডুবুলসম বেস্ট ব্লোইং গাম, বাটি বটস এভরি ফ্লেভার বিনস… দরজা তবু খোলে না। হ্যারি রেগে গিয়ে বলল,–দরজা খুলতে পারছে না। আমার যে ডাম্বলডোরের সঙ্গে দেখা করা দরকার… খুব জরুরি কাজ!

বাঘের মুখ তবু নড়ে না।

হ্যারি লাথি মারল। ফল হল পায়ে যন্ত্রণা।

এক পায়ে দাঁড়িয়ে বলল–চকোলেট ফ্রগ, সুগার স্কুইল, ককরো ক্লাস্টার!

গারগইল জীবন্ত হয়ে উঠল, সামান্য পাশে সরে গেল। হ্যারি ওর দিকে পিটপিট করে তাকাল।

–ককরোচ ক্লাস্টার? ও আবার বলল, আরে আমি তোমার সঙ্গে মজা করছিলাম।

হ্যারি সময় নষ্ট না করে দেওয়ালের ফাটল দিয়ে গিয়ে পেঁচানো চলন্ত সিঁড়ির একটা ধাপে পা রাখল। সিঁড়ির মুখের দরজাটা বন্ধ হতেই সিঁড়ি ওপরে উঠতে লাগল। থামল একটা চকচকে পালিশ করা এক কাঠের দরজার সামনে। দরজায় পেতলের ডোর–নকার।

ঘরের ভেতরের কথাবার্তা ওর কানে এল। ও সিঁড়ির পা–দানি থেকে নেমে দরজায় নক না, করে কথা শুনতে লাগল।

কর্নেলিয়াস ফাজের গলা; ডাম্বলডোর আমি তো এর মধ্যে কারণ খুঁজে পাচ্ছি, দেখতেও পাচ্ছি না। বেগম্যান বলছে বার্থা ইচ্ছে করেই লুকিয়ে আছে। আমি ধরে নিচ্ছি… এর মধ্যে আমরা ওকে খুঁজে বের করতে যেহেতু পারিনি… কিন্তু পেলেও কিছুই হতো না, কারণ আমাদের কাছে ওর আত্মগোপন বার্টি ক্রাউচের হদিস না পাওয়ার সাথে কোনো সংযোগের প্রমাণ নাই।

মুডির হুংকার মিনিস্টার, বার্টি ক্রাউচের ঘটনা সম্বন্ধে আপনি কি ভাবছেন?

ফাজ, আমার চোখের সামনে দুটি সম্ভাবনা অ্যারস্টর। হয় ক্রাউচ উন্মাদ হয়ে গেছে… সেটাই সম্ভব, আমি আশাকরি আপনারা মেনে নেবেন, ক্রাউচের ব্যক্তিগত জীবনের দিকে তাকালে সেটাই সম্ভব মনে হয়। তাই পাগল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

অথবা, আমি আপনার বর্ণিত সেই জায়গাটা না দেখে কিছু অভিমত দিতে পারছিনে, আপনি বলছেন জায়গাটা বক্সটেন ক্যারেজ পার হয়ে। আর সে–ই মহিলাটিকে তো আপনি ভাল করেই জানেন।

–উনি সুদক্ষ নাচিয়ে শুধু নন একজন বিচক্ষণ হেডমিস্ট্রেস; ডাম্বলডোর শান্ত সুরে বললেন।

ফাজের রাগত কণ্ঠ, ডাম্বলডোর শুনুন, আপনি কী হ্যাগ্রিড়ের মুখ চেয়ে মহিলার প্রতি সহানুভূতি শীল নন? আমার মতে দুজনেই হার্মলেস নয়। হ্যাগ্রিডকে আপনি ভয়ে খাতির করেন।

ডাম্বলডোর; আমি মাদাম ম্যাক্সিম বা হ্যাগ্রিড, কাউকে সন্দেহ করছি না। কর্নেলিয়স; আমার মনে হয় আপনি অযথা সন্দেহ করছেন।

মুডি; আমরা কী আলোচনা এখানে শেষ করতে পারি?

কর্নেলিয়স; ঠিক আছে তাহলে চলুন জায়গাটা দেখে আসি।

মুডি; তার জন্য আলোচনা শেষ করতে বলছি না। পটার আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ডাম্বলডোর। সে দরজার বাইরে অপেক্ষা করছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *