২৭. প্যাডফুট রিটার্নস

২৭. প্যাডফুট রিটার্নস

দ্বিতীয় টাস্কের পরে প্রধান আলোচনা বিষয় হয়ে উঠল জলের তলায় চার চ্যাম্পিয়ন ও হোস্টেজেদের নানা চমকপ্রদ ঘটনা। হ্যারি বলে, আর রন পাশে বসে বসে ঘটনার ভিন্ন বর্ণনা করে। রন বলে, তার কাল্পনিক বাহাদুরির কথা। হ্যারি লক্ষ্য করল রন কখনই একই ঘটনার একই বিবরণ দেয় না। প্রথমে, যা প্রকৃত ঘটনা তাই বলেছিল, হারমিওনের বিবরণের সঙ্গে একই রকম। সে যাকগে প্রকৃত ঘটনা হলো: ডাম্বলডোর প্রত্যেক হোস্টেজকে প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের অফিসে এনে জাদুমন্ত্রে ঘুমে আচ্ছন্ন করে দিয়ে ছিলেন। বলে ছিলেন, তোমরা নিরাপদে ফিরে আসবে, জলের তলা থেকে ফেরার পর তোমাদের ঘুম ভাঙবে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে রন, কিডন্যাপিং ও তার সঙ্গে ওর একার রোমাঞ্চকর লড়াই ইত্যাদির গল্প ফেঁদে বসল। একা ওর পঞ্চাশ জন মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মারপিপলদের সঙ্গে লড়াই… শেষ পর্যন্ত তাদের পরাজয়। এইসব আত্মপ্রশংসা।

এমনি ভাবেই দিন–মাস গড়াতে গড়াতে মার্চ মাস এসে গেল। শীত নেই… গরম হাওয়া লেগে ওদের হাত–পা–মুখ শুকিয়ে যেতে লাগল। মাঠে গেলেই গ্রীষ্মের দাপট। চিঠিপত্র ও ঠিকমতো যায় না, আসে না। প্যাঁচারা অন্য কাজে ব্যস্ত। হ্যারি সিরিয়সকে বাদামী প্যাঁচা মারফত হাসমেডের তারিখ জানিয়েছিল তার জবাব শুক্রবার প্রাত:রাশের সময় এসেছে। প্যাঁচার অবস্থা কাহিল, ওর এক ডানা শক্ত হয়ে আছে! হ্যারি তাড়াতাড়ি সিরিয়সের জবাব খুলে পড়ার আগেই প্যাঁচা উড়ে পালাল। ওর ভয় আবার না ওকে বাইরে পাঠায় হ্যারি!

আগের চিঠির মতই এবারের চিঠিও ছোট

শনিবার বিকেলে দুটোর সময় হাসমেডের (ডারভিস অ্যান্ড বেনগেস-এর পরে) রাস্তার শেষে প্রাচীরের কাছে থাকবে, সঙ্গে যতটা পারবে খাবার–দাবার নেবে।

রন চিঠিটা পড়ে অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলল-এর আগে কখনও তিনি হগসমেডে ফিরে আসেন নি?

হারমিওন বলল–আমার তো তাই মনে হয়, তাই না?

–আমার তো বিশ্বাস হয় না, হ্যারি চাপা উত্তেজনায় বলল। যদি ধরা পড়ে যান…।

রন বলল–আমি শঙ্কিত। ডেমেন্টসদের চোখ এড়িয়ে চলা কঠিন। এই না যে এখানে ডেমেন্টরসরা নেই।

হ্যারি সিরিয়সের চিঠিটা পাঠ করতে করতে ভাবল–সত্যি কী ও সিরিয়সের সঙ্গে দেখা করতে চায়। ডবল ডোজ পোসান খেয়ে হ্যারি উত্তেজনা কমিয়ে নিজেকে চাঙ্গা করে ডানজিয়নস্ যাবার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল।

স্নেইপের ক্লাসরুমের সামনে ম্যালফয়, ক্রেব আর গোয়েল… প্যানসি পারকিনসনের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। আরও কিছু দিারিয়নের ছাত্রীও। সকলেই ঝুঁকে পড়ে একটা কাগজ পড়ছে। প্যানসির হাতে–উইচ উইকলী। কাগজের প্রথম পাতায় একটি কোঁকড়া কোঁকড়া চুলওয়ালা জাদুকরীর ছবি। মেয়েটি দাঁত বের করে হাসছে আর হাতের দণ্ড দিয়ে একটা বড় স্পনজ কেক দেখাচ্ছে।

–গ্রেঞ্জার ছবিটা ভাল করে দেখবে? তোমার ভাললাগার খোরাক থাকতে পারে, প্যানসি খুব জোরে জোরে হারমিওনকে বলল। হারমিওন ছবিটা দেখে হকচকিয়ে গেল। ঠিক সেই সময় স্নেইপের ক্লাসরুমের দরজা খুলে গেলে স্নেইপ ওদের সকলকে ঘরের মধ্যে আসতে বললেন।

বরাবর হ্যারি, রন আর হারমিওন স্নেইপের ক্লাসে একবারে শেষে বসে। স্নেইপ ওদের দিকে পেছন ফিরে পোসানের উপকরণ ব্ল্যাকবোর্ডে লেখার সময় হারমিওন প্যানসির দেওয়া উইচ উইকলীটা ডেস্কের তলায় রেখে পাতা ওল্টাতে লাগল। সেন্টার পেজে পেয়ে গেল হারমিওন যেটা খুঁজছিল। হ্যারি ও রন খবরটা পড়ার জন্য ঝুঁকে পড়ল। খবরের উপরে হ্যারি পটারের একটা রঙীন ছবি ও তলায় হ্যারি পটারের গোপন ব্যথা শিরোনামে লেখা

রিটা স্কীটার লিখেছেন, একটি বালক একটু অন্যরকম–ছেলে মানুষ হলেও সম্ভবত সে আকস্মিক বয়ঃসন্ধির স্বাভাবিক তাড়নার ভুগছে। বাবা-মার শোচনীয় মৃত্যুর পর তাদের ভালবাসায় বঞ্চিত চৌদ্দ বছরের হ্যারি পটার ভেবেছিল ওর হোগার্টের বান্ধবীর কাছ থেকে কিছুটা সান্ত্বনা পাবে। বান্ধবী মাগল পরিবারে জন্ম হারমিওন গ্রোর। ওর কোনো ধারণা ছিল না যে আবার একটি তীব্র মানসিক আঘাত পাবে। পূর্বের ব্যক্তিগত মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে আরও একটি সংযোজনা।
মিস গ্রোর একটি সাধারণ মেয়ে হলেও উচ্চাকাঙ্ক্ষী মেয়ে। মনে হয় ও বিখ্যাত বিখ্যাত জাদুকরদের সংঘর্ষে আসতে চায়… যা হ্যারি পটার সে পর্যায়ে পড়ে না। বুলগেরিয়া সীকার ভিক্টর ক্রামের (গত আন্তর্জাতিক কিডিচ কাপের হিরো) হোগার্টে আসার পর থেকেই মিস গ্রেঞ্জার সঙ্গে তার অনুরাগ চলেছে। ক্রাম কোনও রকম ঢাক ঢাক গুড় গুড় না–করে গায়ে পড়া মিস গ্রোরকে গরমের ছুটিতে বুলগেরিয়ায় যাবার নেমন্ত্রন করেছে এবং বলেছে এর আগে কোনও মেয়ের সঙ্গে ওর তেমন ঘনিষ্ঠতা হয়নি।
মনে হয় মিস গ্রেঞ্জারের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ওই দুটি ছেলেকে প্রভাবিত করেছে।
চতুর্থ বর্ষের সুন্দরী ছাত্রী প্যানসি পারকিনসনের ভাষায় মেয়েটি মোটেই সুশ্রী নয় অতি চালাক মেয়ে। লাভ পোসান খাইয়ে ছেলেদের ছলনা করছে।
লাভ পোসান হোগার্টে বানান ও খাওয়া নিষিদ্ধ। আশাকরি আমার এই লেখার সত্য–মিথ্যা প্রফেসর ডাম্বলডোর তদন্ত করে দেখবেন। ইতোমধ্যে হ্যারি পটারের সুভাকাকীরা অবশ্যই চাইবে ভবিষ্যতে ও যেন ওর হৃদয়–মন এক যোগ্য মেয়েকে দান করে।

–আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম, রন হারমিওনকে প্রতিবেদনটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল–বলেছিলাম না রিটা স্কীটারকে ক্ষেপিও না! তোমাকে ও একটি স্কারলেট ওম্যান (খারাপ মেয়ে… স্বভাব চরিত্র যাদের ঠিক নেই) বানিয়েছে।

হারমিওন হেসে ফেলল। মুখের মধ্যে কোনও আক্রোশ বা আশ্চর্য হবার ভাব অন্তর্হিত।

–স্কারলেট ওম্যান? ও কথাটা বলল, হাসি চেপে রনের মুখের দিকে তাকাল।

–ওই রকম চরিত্রের মেয়েদের… মা বলেন। রন খুব আস্তে আস্তে বলল, পাছে কেউ না শোনে। ওর কান দুটো রাগে রক্ত বর্ণ!

হারমিওন কাগজটা পাশের একটা চেয়ারে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, হাসতে হাসতে বলল,-এ ছাড়া রিটা আর কি করতে পারে, এমনি করে নিজেকে খেলো করছে। পুরনো জঞ্জাল ছাড়া কিছু নয়।

ও স্লিদারিনদের দিকে তাকাল, দেখল ওরা সবাই মুখ টিপে টিপে হাসছে, প্রতিবেদনটা পড়ে হারমিওনের মানসিক বিপর্যয় হয়েছে কিনা সমানে দেখে চলেছে। ও প্রতিবেদনটা পড়ে গায়ে মাখেনি এমন একটা মনোভাব ওদের জানাবার জন্য তাচ্ছিল্যভরা হাসিতে মুখটা ছাপিয়ে দিল। তারপর ওরা তিনজনে উইট শার্পেনিং নির্যাস বানাবার প্রয়োজনীয় উপকরণের প্যাকেট খুলতে লাগল।

মিনিট দশ পরে হারমিওন মণ্ডগুলো গুবড়ে পোকাভর্তি একটা পাত্রে রেখে বলল–আচ্ছা এত কথা রিটা স্কীটার জানলো কেমন করে বলত?

কেমন করে? রন এক মুহূর্ত দেরি না করে বলল–তুমি লাভ পোসানস মেশাওনি?… সত্যি করে বল?

হারমিওন গুবড়ে পোকাগুলো পেটাতে পেটাতে ভুরু কুঁচকে বলল,–রন বোকার মতো কথা বলবে না বলে দিচ্ছি… না, ও কেমন করে জানলো ভিক্টর আমাকে গরমের ছুটিতে বুলগেরিয়া যাবার ইনভাইট করেছে?

কথাটা বলার সময় হারমিওনের মুখটা টকটকে লাল হয়ে গেল। ইচ্ছে করেই রনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।

–কি বললে? রন সশব্দে ওর উপরকণ দিয়ে বানান পিন্ডগুলো রেখে দিল।

–লেকের জল থেকে তোলার সময় আমাকে অর্ধ চেতন অবস্থায় মনে হয় ওই রকম একটা কথা বলেছিল। হারমিওন আস্তে আস্তে বলল,–ওর মুণ্ডুটা তো হাঙরের মুণ্ডু হয়েছিল। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পর আমরা কম্বলমুডি দিয়ে মাদাম পমফ্রের নির্দেশে শুয়েছিলাম, তারপর বিচারকদের কাছে যাবার সময় আমাকে একবার ফিসফিস করে বলেছিল, যাতে কথাটা ওরা শুনতে না পান। ও বলেছিল, তোমার যদি অন্য কোনও কাজ না থাকে তাহলে গরমের ছুটিতে আমাদের…। আর কথাটা শুনে তুমি কি বললে? রন মন্ডগুলো একত্র করে ডেস্কের ওপর রেখে হাসতে হাসতে বলল। ডেস্কের ওপর মণ্ডটা প্রায় ছ ইঞ্চি উঁচু করল যাতে হারমিওনকে কথা বলার সময় দেখতে পায়।

হা ক্রাম ওকে বলেছিল। ক্রামের আগে কেউ ওকে ওই ভাবে বলেনি। হারমিওনের মুখটা আরও লাল হয়ে গেল। হ্যারি হারমিওনের শরীরের উত্তেজনা বোধ হয় বুঝতে পারলো; কিন্তু সোজা কথাটা ভেবে পায় না রিটা স্কীটার জানলে কেমন করে? রিটার কাছে কি অদৃশ্য হবার আলখেল্লা আছে? হতেও পারে… ও সেটা গায়ে জড়িয়ে ওদের আশপাশে ছিচকের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিল।

রন আবার বলল,–কথাটা শুনে তুমি কী বললে?

–আমি? আমি তখন তোমার আর হ্যারির চিন্তায় মগ্ন ছিলাম।

–মিস গ্রেঞ্জার তোমার ব্যক্তিগত কথা শুনতে কেউ চায় না। হারমিওনের কানের কাছে কে যেন মৃদু ধমকে বলল। আমি চাই ক্লাস চলাকালীন তুমি কথা বলবে না। গ্রিফিন্ডরের দশ পয়েন্ট কাটা গেল।

স্নেইপ ডেস্কের তলা থেকে কাগজটা নেবার জন্য হাত বাড়ালেন।… তখন ক্লাসের সব ছাত্রছাত্রী ওর দিকে তাকিয়ে। ম্যালফয় সুযোগ বুঝে স্নেইপের প্রায় অন্ধকার ক্লাসরুমে পটার স্টিংকস স্টিকারটা তুলে হ্যারিকে দেখাল।

স্নেইপ বললেন,–ওহ্ ম্যাগাজিনও পড়ছ দেখি! উইচ উইকলি। আরও দশ পয়েন্ট গেল গ্রিফিন্ডরদের। স্নেইপের কাল চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে উঠল।

–পটার তাহলে তুমি খবরটা কেটে নিয়ে (প্রেস কাটিং) নিজের কাছে রেখে দাও। ঘরটা স্লিদারিয়নেদের হাসিতে গমগম করে উঠল। বিশ্রী মুখ করে স্নেইপ প্রতিবেদনটা উচ্চস্বরে পড়তে লাগলেন। হ্যারি রাগে ছটফট করতে লাগল।

–হ্যারি পটারের… হৃদয়ের গোপন ব্যথা ডিয়ার পটার ব্যথা তোমার কিসের? সেইপে প্রতিবেদনটা বেশ রসিয়ে রসিয়ে পড়লেন, তার পড়াশুনে স্নিদারিয়নরা তুমুলভাবে হেসে উঠে। স্নেইপ পুরো দশ মিনিট সময় নষ্ট করলেন।

স্নেইপ কাগজটা দল পাকাতে পাকাতে বললেন, হ্যারি পটার ভবিষ্যতে যেন ওর হৃদয়–মন এক যোগ্য মেয়েকে দান করে…। তারপর গম্ভীর হয়ে বললেন, মনে হয় এবার থেকে তোমাদের আলাদা আলাদা আমার ক্লাসে বসা দরকার। তাহলে ভালবাসা–টালবাসার গল্প না করে পড়ায় মন দিতে পার। উইসলি তুমি যেমন আছ তেমন থাক, মিস গ্যাঞ্জার তুমি মিস পারকিনসনের পাশে, পটার ওই টেবিলটা আমার কাছে নিয়ে এস হ্যা… হা… টেনে আন… তুমি এখানে বসবে। ক্ষুব্ধ হ্যারি পোসান তৈরি করার সব উপকরণ গামলার (কলড্রন) মধ্যে রেখে স্নেইপের সামনের শূন্য টেবিলটায় রাখল।

স্নেইপ শান্তভাবে বললেন, ওইসব প্রেমের খবর তোমার মাথাটা আরও বেশি ফুলিয়ে দিয়েছে পটার। ছাত্র–ছাত্রীরা সোরগোল থামালে স্নেইপ আবার ক্লাস শুরু করলেন।

হ্যারি খুব ভালকরেই জানে স্নেইপের ওদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারলে, করতে পারলে খুশি হন। অতীতেও করেছেন, ও নম্বর কেটে নিয়েছেন।

হ্যারি আদা টুকরো টুকরো করে কলড্রনে রাখতে লাগল। কাটার সময় রাগে ওর হাত কাঁপতে থাকল। স্নেইপের কথা যাতে না শুনতে হয় তার জন্য মন দিয়ে ক্লাসওয়ার্ক করতে চেষ্টা করল।

স্নেইপের ক্লাসরুমের বন্ধ দরজায় কেউ নক করতে স্নেইপ বললেন, আসুন। এখন তার গলার স্বর স্বাভাবিক। কারকারফ ঘরে ঢুকে ছাগল দাড়িতে হাত বুলোতে বুলোতে লাগলেন। মুখ দেখে মনে হয় খুব রেগে রয়েছেন।

–আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। স্নেইপ কথাগুলো এমনভাবে বললেন যাতে ছাত্র–ছাত্রীরা শুনতে না পায়। স্নেইপের কাছাকাছি রয়েছে হ্যারি। কারকারাফের কথা শোনার জন্য কান খাড়া করে রইল।

ক্লাস শেষ হবার পর আপনার সঙ্গে কথা বলব মি. কারকারফ, স্নেইপ বললেন। কিন্তু কারকারফ অপেক্ষা করতে চান না।

–আমি দেরি করতে চাই না। যা বলার এখনি বলা ভাল…হ্যাঁ হ্যাঁ কি বলতে এসেছি… আপনি কিন্তু আমাকে এড়িয়ে চলছেন সিভেরাস।

–ক্লাস শেষ হবার পর… স্নেইপ বাধা দিলেন।

হ্যারি ওদের কথা শোনার জন্য ও একটা মেজার কাপে অ্যারমাডিলো বাইল ঢালতে লাগল সন্তর্পণে। কারকারফকে দেখে মনে হল খুবই উদ্বিগ্ন। স্নেইপ খুব রেগে আছেন। কারকারফ ঘরের বাইরে না গিয়ে ক্লাসরুমে উত্তেজিত হয়ে পায়চারি করতে লাগলেন। স্নেইপ যদি ক্লাস শেষে, ওর সঙ্গে কথা না বলে চলে যান, এই আশঙ্কায় দাঁড়িয়ে রইলেন।

–কী এমন আর্জেন্ট কথা? হ্যারি স্নেইপকে বলতে শুনল।

হ্যারি আড়চোখে দেখল কারকারফ জামার বাঁ–হাত গুটিয়ে হাতে কিছু স্নেইপকে দেখালেন।–দেখেছেন? ভাল করে দেখুন।

–হাতটা সরান, স্নেইপ ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে বললেন।

–কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই দেখলেন…।

-এ বিষয়ে, আমরা পরে কথা বলব, প্রফেসর। কথাটা বলে, স্নেইপ পটারের দিকে তাকিয়ে বললেন,–পটার তুমি কী করছ?

–প্রফেসর আমি আমার আরমাডিলো বাইল পরিষ্কার করছি। কথাটা বলে হ্যারি ছেঁড়া কাপড়টা স্নেইপকে দেখাল।

কারকারফ দুম দুম পদশব্দ করে স্নেইপের ঘর থেকে চলে গেলেন।

ক্লাস শেষ হবার পর এক মিনিটও সময় নষ্ট না করে হ্যারি রন ও হারমিওনকে ঘটনাটা জানাতে দৌড় দিল।

***

পরদিন দুপুরে ওরা ক্যাসেলের বাইরে এসে দাঁড়াল। মেঘহীন ফট ফটে আকাশ। হালকা বোদ মাঠে এসে পড়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া ভাল। হগসমেডে পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে ওরা রোবস খুলে ফেলে পিঠে ঝুলিয়ে নিল।

হ্যারির হাতে সিরিয়সের খাবারের ক্যারিয়র। অনেক ডিম সিদ্ধ, পাউরুটি, ফ্লাক্সভর্তি কদুর রস। সবই লাঞ্চ টেবিল থেকে তুলে এনেছে।

ডব্বিকে একটা উপহার দেবে বলে গ্লাডর্যাগস্ উইজার্ড ওয়্যার–তে ঢুকল। নানারকম সুন্দর সুন্দর পোশাক–পরিচ্ছদ–মোজা ওখানে পাওয়া যায়।… তারপর ওরা হাইস্ট্রিটে গিয়ে ডারভিস অ্যান্ড ব্যানজেসের দিকে এগোল। রাস্তাটা গ্রামের মুখে শেষ হয়েছে।

হ্যারি আগে কখনও এ দিকটায় আসেনি। আঁকাবাকা সরু রাস্তাটা হগসমেড থেকে গ্রামের দিকে চলে গেছে। ছোট ছোট কিছু কটেজ কটেজের সামনের বাগানগুলো বেশ বড় বড়। ওরা একটা পাহাড়ের কোল ধরে হাঁটতে লাগল। অদূরে হাসমেড তারা ছায়া এসে পড়েছে পাহাড়ের কোলে। সরু রাস্তার শেষে একটা স্টাইল (রাস্তা থেকে গ্রামে ঢোকার পথ। দুধারে বেড়া… হাঁটার জন্য ছোট ছোট ধাপ) দেখতে পেল। স্টাইলের কাছে সিরিয়স আসতে লিখেছেন।

ওরা পরিচিত একটি কাল কুকুর দেখল। তার মুখে কয়েকটা খবরের কাগজ।

হ্যারি ওর কাছে গিয়ে বলল–হ্যালো সিরিয়স।

হ্যারি কাল লোমওয়ালা কুকুরটা (সিরিয়স) হ্যারির খাবারের ক্যারিয়রটা শুকতে লাগল। ল্যাজ নাড়তে লাগল। তারপর ওদের গ্রামের ভেতর পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল। হ্যারি–রন–হারমিওন ওর পিছু পিছু আকাবাকা সরু পথ দিয়ে উঠতে লাগল। প্রায় আধঘণ্টা ওপরে উঠার পর ওরা একটা সর্পিল পাহ্যাগ্রিড রাস্তার সামনে দাঁড়াল।

বেশ খানিকটা সর্পিল দৃর্গম পথ হাঁটার পর সিরিয়সকে আর দেখতে পেলো না। যেখান থেকে সিরিয়স মিলিয়ে গেলেন, সেখানে ওরা পাহাড়ে ঢোকার একটা সরু ফাটল দেখতে পেল। ওরা সেই ফাটল দিয়ে কুঁকড়ে–মুকড়ে ভেতরে ঢুকল। তারপরই দেখল পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন একটা গুহা, খুব অস্পষ্ট আলো জ্বলছে। সেই গুহার শেষে একটা বড় চাই পাথরের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা ছোট্ট ঘোড়া হিপপোগ্রিফ (বাকবিক)। অর্ধেক ধুসর রং-এর ঘোড়া, আধা–দানব ঈগল পাখি বাকবিকের কমলা রং-এর ভয়ার্ত চোখ ওদের দেখে মশালের মতো আলো জ্বলে উঠল। ওরা তিনজনেই ওকে দেখে মাথা নোয়াল। কয়েক মুহূর্ত ওদের দিকে উদ্ধত ভাবে তাকিয়ে বাকবিক (অর্ধ ঘোড়া–অর্ধ ঈগল) উটের মতো ওর সামনের হাঁটু দুটো মুড়লো… হারমিওনকে এগিয়ে এসে ওর লোমওয়ালা গলায় আদর করতে বাধা দিলো। হ্যারি কিন্তু তার গড ফাদার সিরিয়সকে দেখতে পেল। সিরিয়সের গায়ে জীর্ণ ধূসর রং-এর কম্বলের রোবস (ছোট আলখেল্লা), আজকাবান থেকে পালিয়ে আসার সময় একই রকম রোবস পরে ছিলেন সিরিয়স। মাথার চুলগুলো আরও লম্বা হয়েছে। ক্যাসেলে আগুনের ভেতর থেকে মুখ বাড়ানোর সময় একই রকম অগোছাল আর ঝাকড়া ঝাঁকড়া। তবে বেশ শীর্ণ হয়ে গেছেন।

হাত থেকে পুরনো ডেইলি প্রফেট ফেলে দিয়ে সিরিয়স কর্কশ কণ্ঠে বললেন, চিকেন! চিকেন এনেছে?

হ্যারি খাবারের ক্যারিয়ারের ভেতর থেকে চিকেন লেগ আর রুটি বের করে দিল।

–ধন্যবাদ! সিরিয়স বললেন-এখানে কিছুই খেতে পাই না, কতদিন আর ইঁদুর হয়ে হগসমেডে খাবার চুরি করে খাওয়া যায়! সিরিয়স গোগ্রাসে চিকেন আর রুটি খেতে লাগলেন।

হ্যারি বেদনাসিক্ত কণ্ঠে বলল-এখানে আপনি কেমন করে থাকেন, কি করেন? খাওয়া–দাওয়ার কী খুব কষ্ট?

–গড ফাদারের কর্তব্য পালন করি, সিরিয়স বললেন। চিকেন লেগ করি মচর করে চিবুতে লাগলেন। আমার সম্বন্ধে চিন্তা করবেনা। আমি অ্যানিমেগাস করে কুকুর হয়ে বেশ রয়েছি।

তখন সিরিয়স হাসিমুখে ছিলেন। কিন্তু একটু পরে হ্যারির চোখে মুখে উদ্বেগ চিন্তা দেখে একটু বেশি গম্ভীর হয়ে বললেন, তোমার শেষ চিঠি অনুযায়ী আমি তোমাদের স্পটে থাকতে চেয়েছিলাম। যাকগে দিন দিন সব কিছু জটিল হয়ে উঠছে। কেউ কাগজ পড়ার পর ছুঁড়ে ফেলে দিলে সেগুলো আমি চুরি করি, তুমি আমাকে দেখে বুঝতে পারবে না, একমাত্র আমি নই, অনেকেই যা ঘটছে, বা ঘটতে পারে তার জন্য খুবই চিন্তিত।

সিরিয়স গুহার মেঝেতে পড়ে থাকা একটা হলুদ বর্ণের ডেইলি ফেটের দিকে তাকালেন, রন সেটা তুলে নিয়ে খুলল।

হ্যারি তখনও সিরিয়সের দিকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে, খানিকক্ষণ পর বলল যদি আপনাকে ধরতে পারে? যদি আপনাকে দেখতে পায়?

–তোমরা তিনজন আর ডাম্বলডোর ছাড়া আর কেউ জানে না যে আমি অ্যানিমেগাস হয়ে কুকুরের রূপ নিয়েছি, সিরিয়স বললেন। তখনও চিকেনের ঠ্যাং খাওয়া শেষ করেননি।

রন দুটো ডেইলি প্রফেট দিল। প্রথমটার শিরোনাম মিষ্ট্রি ইলনেস অব বার্তেমিয়স ক্রাউচ (বার্তেমিয়স ক্রাউচের রহস্য জনক অসুস্থতা); দ্বিতীয়টা: মিনিষ্ট্রি উইচ স্টিল মিসিং মিনিষ্টার ফর ম্যাজিক নাও পার্সোনেলী ইনভলব (মন্ত্রণালয়ের জাদুকর এখনও পর্যন্ত লাপাত্তা, ম্যাজিকমন্ত্রী এখন ব্যক্তিগতভাবে এই ব্যাপারে জড়িত)

হ্যারি, ক্রাউচ সম্বন্ধে লেখা (সংবাদ পত্রের ভাষায় স্টোরি) পড়তে লাগল। নভেম্বর থেকে আর তাকে দেখতে পাওয়া যায়নি… তার বাসস্থান শূন্য… সেন্ট… মাংগোস, ম্যাজিক্যাল ব্যাধি সংক্রান্ত হাসপাতাল কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার… মন্ত্রণালয় অতি অসুস্থতার গুজব সম্বন্ধে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ।

হ্যারি ধীর স্থির ভাবে বলল,-এমন ভাবে ব্যাপারটা পরিবেশন করছে যাতে মনে হয় তার মৃত্যু আসন্ন। কিন্তু তিনি এত অসুস্থ নয় যে চলাফেরা করতে পারছেন না।

রন সিরিয়সকে বলল–আমার ভাই মি:ক্রাউচের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। সে বলছে, বেশি কাজ করার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

হ্যারি বলল–শেষবার আমি যখন খুব সামনে থেকে তাকে দেখেছিলাম, তখন তাকে অসুস্থ মনে হয়েছিল।… যেদিন রাতে আমার নাম গবলেট অব ফায়ার থেকে বেরিয়ে এসেছিল।

হারমিওন বলল–উইঙ্কীকে তাড়াবার শাস্তি ক্রাউচ ভোগ করছেন বলতে পার। কথাটা বলে হারমিওন বাকবিককে আদর করতে লাগল। বাকবিক তখন সিরিয়সের ফেলে দেওয়া চিকেনের হাড় চিবুচ্ছিল।

–আমি বাজি ধরে বলতে পারি তখন তিনি এলফকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন এখন সে অবস্থাতে আছেন, তাড়াবার কথা ভাবতে পারেন না। কেউ তাকে এখন দেখভাল করার নেই।

রন বলল,–হারমিওনের হাউজ এলফদের নিয়ে তোমার এই এক পাগলামী!

সিরিয়স কথাটা শুনে খুশি হলেন, কী বললে ক্রাউচ ওর হাউজ এলফেকে ছাড়িয়ে দিয়েছে?

হ্যারি বলল,–কিডিচ ওয়ার্লড কাপের সময়। তারপর ও ডার্ক মার্কের আবির্ভাব, উইঙ্কীর হাতে ওর জাদুদণ্ড, ক্রাউচের রাগ… ইত্যাদির ঘটনা সিরিয়সকে এক এক করে বলল।

হ্যারির কথা শেষ হলে সিরিয়স গুহার ভেতর পায়চারি করতে লাগলেন। হ্যাঁ কি বলছিলে, (সিরিয়স আরও একটা চিকেন লেগ নিলেন) তুমি প্রথমে এলফকে টপ বক্সে দেখেছিলে…ও ক্রাউচের জন্য নির্দিষ্ট সিটে বসেছিল–তাই না? ঠিক বলেছি?

হ্যারি–রন–হারমিওন এক সঙ্গে বলল,–হ্যাঁ।

–কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রাউচ মাঠে আসেনি?

–না, হ্যারি বলল। শুনলাম খুব ব্যস্ত ছিলেন তাই…।

সিরিয়স কোনও কথা না বলে গুহাতে পায়চারি করতে লাগলেন, হ্যারি টপবক্স থেকে চলে আসার আগে তোমার পকেটে তোমার দণ্ডটা আছে কি নেই চেক করেছিলে?

হ্যারি সামান্য সময় ভেবে নিয়ে বলল–না, অরণ্যে যাবার আগে ওটা আমার দরকার হয়নি। আমি পকেটে হাত পুরে একের ভেতর বহু দূরবীক্ষণ যন্ত্র পেয়েছিলাম। কথাটা বলে ও সিরিয়সের দিকে তাকাল। তাহলে আপনি বলছেন যে মার্ক ব্যবহার করেছিল, সে–ই টপবক্স থেকে আমার দণ্ডটা চুরি করেছিল?

–সম্ভবত, সিরিয়স বললেন।

হারমিওন উইঙ্কীর পক্ষে বলল–তাই বলে উইঙ্কী হ্যারির দণ্ড চুরি করেনি।

–অবশ্য, এলফ টপবক্সে একা বসে ছিলো না, সিরিয়স বললেন। ভুরু কুঁচকে আবার বললেন–তোমার পেছনে কে বসেছিল মনে আছে?

হ্যারি বলল–অনেক লোক; বুলগেরিয়ান মন্ত্রীরা, কর্নেলিয়স ফাজ… ম্যালফয়রা…।

ম্যালফয়রা কথাটা অসম্ভব জোরে রন বলল। আমি বাজি রেখে বলতে পারি লুসিয়স ম্যালফয় ছিলেন!

–আর কেউ? সিরিয়স জিজ্ঞেস করলেন।

হ্যারি জবাব দিল–আর কেউ নয়। হারমিওন ওকে মনে করিয়ে দিল–লাড্ডা বেগম্যানও ছিলেন… মনে নেই?

–ও হা… বেগম্যান অ্যানাউন্স করছিলেন।

সিরিয়স অস্থির হয়ে বললেন, আমি অবশ্য বেগম্যান সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানি না, তবে শুনেছি উইমবোর্ন ভিমরুলের খেদাড়ে হয়ে মাঝে মাঝে কাজ করতেন। লোকটি কেমন তোমাদের মনে হয়?

–মন্দ নয়। উনি ট্রাই–উইজার্ড টুর্নামেন্টে প্রথম টাস্কে আমাকে অনেক না চাইতেও সাহায্য করেছেন। হ্যারি বলল।

-এবারে করেছেন? জানি না কেন করেছেন। সিরিয়স আরও বেশি গম্ভীর হয়ে বসলেন।

–বলছিলেন… আমাকে খুব পছন্দ করেন, হ্যারি বলল।

সিরিয়স বললেন,–হাঁ, বুঝলাম… পছন্দ করেন।

হারমিওন সিরিয়স কে বলল,–ডাকমার্কের বাড়ি ফেরার একটু আগে তাকে আমি অরণ্যে দেখেছিলাম।… তোমাদের মনে আছে হ্যারি?

–মনে আছে; কিন্তু উনি তো অরণ্যের মধ্যে ছিলেন না… গোলমালের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পের দিকে চলে গিয়েছিলেন।

–গিয়েছিলেন? জানলে কেমন করে? হারমিওন বলল।… তারপর কোথায় আবার এসেছিলেন সে সম্বন্ধে কিছু জান?

রন রেগে গিয়ে বলল–তাহলে তোমার ধারণা লাডো বেগম্যান ডার্কমার্ক প্রয়োগ করেছিলেন?

হারমিওন দৃঢ়ভাবে বলল–সম্ভবত তাই। উইঙ্কী করতে পারে না।

রন, সিরিয়সের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল–আপনাকে আগেও বলেছি, এখনও বলছি ওর হাউজ এলফদের সম্বন্ধে দারুণ এক দূর্বলতা আছে।

সিরিয়স হাত তুলে রনকে থামতে বললেন–কথাটা হচ্ছে, যখন ডার্কমার্ক প্রয়োগ করা হয়েছিল, এলফকে হ্যারির দণ্ডটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তাহলে ক্রাউচ কি করছিল?

হ্যারি বলল–ঝোপ জঙ্গল দেখতে গেলেন; কিন্তু সেখানে ওকে ছাড়া কাউকে পাননি।

সিরিয়স বললেন–অবশ্যই… কার ঘাড়ে দোষ চাপাবে?… কিন্তু সেখানে নিজের এলফ! শেষ পর্যন্ত ওকে বরখাস্ত করলেন?

হারমিওন ব্যাঙ্গস্বরে বলল–হাঁ, ওকে বরখাস্ত করলেন এই কারণে যে ও নিজের তাঁবুতে ছিলো না শুধু নয়… ভিড় ভাঙ্গায় পদদলিত হয়েছিল।

রন বলল–হারমিওন এবার তুমি এলফদের একটু বিশ্রাম দাও…।

কিন্তু সিরিয়স রনের মন্তব্য শুনে মাথা নেড়ে বললেন–রন, আমার মনে হয় ক্রাউচ সম্বন্ধে ওর মাপজোখ তোমার চেয়ে একটু বেশি। শোন, যদি তুমি একজন মানুষ সে ভাল কি মন্দ বিচার করতে চাও, তাহলে সবার আগে সে তার অধীনস্ত কর্মচারীদের সঙ্গে কি রকম ব্যবহার করে সেটা দেখবে, অবশ্যই তার সমান একই স্তরের মানুষের সঙ্গে ব্যবহারের তুলনা নয়।

সিরিয়স তার বড় বড় দাড়িতে হাত বুলিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে লাগলেন বার্তি ক্রাউচ যে সব উল্টাপাল্টা কাজ কর্ম করছে, কিন্তু ওয়ার্ল্ড কাপ নিয়ে ওর অবদান ও পরিশ্রম কম ছিল না। তা সত্ত্বেও ও মাঠে আসেনি… আগে তো অসুস্থতার জন্য একদিনও ছুটি নেয়নি।

হ্যারি বলল–আপনি আগে থেকে ক্রাউচকে জানেন?

কথাটা শুনে সিরিয়সের মুখ ভয়াবহ হয়ে গেল।… অনেকটা, হ্যারি যখন প্রথম তাকে দেখেছিল… সেই ভয়ঙ্কর রাতের মতো যখন হ্যারির ওকে দেখে খুনি ছাড়া অন্য কিছু মনে হয়নি।

–ও হ্যাঁ হ্যাঁ, ওকে আমি খুব ভাল করেই চিনি, সিরিয়স সামলে নিয়ে বললেন। ও তো আমাকে আজকাবান জেলে পাঠানোর আদেশ জারি করেছিল। অবশ্য কোনও বিচার ছাড়াই। কী বললেন? রন–হারমিওন একই সঙ্গে বলে উঠল।

হ্যারি বলল,–আপনি তামাশা করছেন।

–মোটেই না, সিরিয়স চিকেনের অনেকটা মাংস মুখে পুরে বললেন। তোমরা কি জান সেই সময় ক্রাউচ ম্যাজিক্যাল আইন ও প্রয়োগকারী বিভাগের কর্তা ছিলেন?

ওরা তিনজনেই মাথা নাড়ল।

সিরিয়স বললেন–পরবর্তী মিনিষ্টার অব ম্যাজিকের জন্য ওকে ঠিক করা হয়েছিল। ও খুব বিখ্যাত জাদুকর সন্দেহ নেই, বার্তি ক্রাউচ অসম্ভব ইন্দ্রজালিক ক্ষমতা রাখে তবে ও ক্ষমতালোভী। কোন কালেই ভোল্ডেমর্টের দলের নয়। কথাগুলো বলে হ্যারির মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। অবশ্যই ক্রাউচ সব সময় অশুভের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তাহলেও, আরও অনেকে অশুভের বিরুদ্ধে… যাকগে তুমি ছোট মানুষ এসব কথা বুঝবে না।

রন বলল–বাবা ওয়ার্ল্ড কাপের সময় ওই রকম বলছিলেন। ওর স্বরে বিরক্তির ছাপ। আমাদের ওপর ভরসা করে দেখুন।

সিরিয়সের মুখে হাসির আলো ফুটে উঠল–ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি চেষ্টা করব।

গুহার ভেতরে ঢুকে, ফিরে এসে সিরিয়স বললেন–কল্পনা করতে পার, ভোর্টে আবারও হারানো শক্তি ফিরে পেয়েছে। তোমরা জানোনা কারা তার পক্ষে, কারা ওর হয়ে কাজ করে চলেছে, বা কারা করছে না। তোমরা ভাবতে পারো সে এখন কতটা শক্তিশালী। ও ভয়ঙ্কর লোকদেরকে (ডার্কমার্কদের) মানুষের প্রাণ নাশ ও ক্ষতি করার জন্য নিজেকে হাতের মুঠোর মধ্যে রেখেছে; কিন্তু তাদের সেই কুকর্ম বাধা দেবার বা নিয়ন্ত্রণ করার কারও ক্ষমতা নেই বললেই চলে। আমি, তুমি, সকলেই তাই ওর ভয়ে উল্কণ্ঠিত।… তোমার পরিবারের লোকজন… বন্ধু–বান্ধব… সকলেই প্রতি সপ্তাহে নৃশংসভাবে খুন–জখম হত্যার খবর আসে। কত মানুষ উধাও হয়ে যায়, ভয়াবহভাবে অত্যাচারিত হয়। ম্যাজিক মন্ত্রণালয় অসহায় হয়ে ভোল্ডেমর্টের কীর্তিকলাপ দেখে যাচ্ছে। তারা জানে না ও বুঝতে পারছে না ক্ষমতালোভী ভোল্ডেমর্টকে কেমন করে বাগে আনবে। মাগলদের কাছে তাই সব কিছু গোপন করে রাখছে। কিন্তু নিরপরাধ মাগলদেরও, নৃশংসভাবে ও অবাধে সে তার সব ভয়াবহ অনুচর ডার্কমার্কদের দিয়ে হত্যা করে চলেছে। ভয়, আতঙ্ক, বিশৃঙ্খলা সব জায়গায়…।

ভোল্ডেমর্ট আর তার সাগরেদদের শায়েস্তা করার জন্য ক্রাউচ যে পথ বেছে নিয়েছিলেন… শুনেছি প্রথম প্রথম খুবই ফলপ্রসূ হয়েছিল, তবে বর্তমানে শুনেছি…। সেই কারণে মন্ত্রণালয়ে ওর খুব তাড়াতাড়ি পদোন্নতি হতে লাগল। ক্ষমতায় আসার পর ক্রাউচ ভোল্টেমর্টের সাগরেদদের দমন করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে লাগলেন, গোপনে যারা খোঁজ–খবর নেয়, সেই আরোরদের নতুন নতুন ক্ষমতা দিলেন। হত্যা করার ক্ষমতা, ধরার নয়। উদাহরণ দিচ্ছি যেমন আমাকে বিনাবিচারে সোজা নৃশংস ডেমেন্টরদের (জেলের গার্ড) হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। ক্রাউচ হিংসার বদলে হিংসা শুরু করলেন। সন্দেহভাজনদের অমার্জনীয় কার্স ব্যবহারের অনুমোদন দিলেন। আমার মতো কাল বা অশুভদের চাইতে বেশি নিষ্ঠুর হয়ে উঠলেন। অনেকে তার পক্ষে গেল, কারণ তারা ভাবল ক্রাউচের নিষ্ঠুর দমননীতি ঠিক। অনেক অযোগ্য জাদুকর–জাদুকরীকে ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ে ঢুকালেন। যখন ভোল্ডেমর্ট অন্তর্ধান হল, ধরে নিতে পার ক্রাউচ তখন শীর্ষস্থানে পৌঁছেছে। তারপর কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটল…। এইটুকু একদমে বলে সিরিয়স হাসলেন।–ক্রাউচের ছেলে একদল ডেথইটারদের (ভোল্ডেমর্টের নৃশংস কাজের সাগরেদ। ওরা মানুষের বুকের ওপর চেপে বসে প্রাণ নেয়) সঙ্গে ধরা পড়েছিল। পরে ওরা আজকাবান কারাগার থেকে পালিয়েছিল। তাই ভোল্টেমর্টের দলে ওরা আবার যোগ দিয়েছে। পুনরায় ভোল্ডেমর্টকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।

হারমিওন হতবাক হয়ে বলল–ক্রাউচের ছেলে ধরা পড়েছিল? সিরিয়স বলল–অবশ্যই, মাংসহীন হাড়গুলো বাকবিকের খাবার জন্য ছুঁড়ে দিয়ে বললেন।

–সন্দেহ নেই ছেলের ব্যাপারে বার্টি খুবই আঘাত পেয়েছিল। ওর উচিত ছিল অফিসের কাজে অহেতুক বেশি সময় না দিয়ে, পরিবারের লোকজনদের কিছু সময় ওর দেওয়া উচিত ছিল, কী বল? মাঝে মধ্যে অফিস থেকে একটু আগে বেরিয়ে আসার প্রয়োজন ছিল। তাহলে ছেলের ব্যাপারে জানতে পারত।

হ্যারি বলল–ক্রাউচের ছেলে কী ডেথইটার?

–বলতে পারি না, কোনও ধারণা নেই। তবে ছেলেটা তাদের দলের সাথে ধরা পড়েছিল। বা ভাগ্য খারাপ–ভুল পথে, ভুল সময়ে চলছিল, অনেকটা হাউজ এলফের মতো।

হারমিওন বলল–ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে ক্রাউচ চেষ্টা করেন নি?

সিরিয়স অদ্ভুতভাবে হো হো করে হেসে উঠলেন। হাসিটা হিংস্র নেকড়ে বাঘের গর্জনের মতো। ক্রাউচ ছেলেকে মুক্ত করবে? হারমিওন আমার ধারণা ছিল তুমি মানুষ চেনো। ম্যাজিকমন্ত্রী হবার জন্য ক্রাউচ হেন কাজ নেই করতে ছাড়েনি। তুমি দেখেছ ও একজন ভাল ও সৎ হাউজ এলফকে তাড়িয়ে দিল, কারণ ও ডার্কমার্কের ব্যাপারে ক্রাউচকে জড়িত করে ছিল। তাহলে বুঝতে পারছ মানুষটি কেমন! নিজেকে অতি কর্তব্যপরায়ণ ও সৎ মানুষ প্রচার করার জন্য নিজের ছেলেকে বিনা বিচারে আজকাবানে পাঠিয়েছে। লোককে দেখাতে চেয়েছে…। যাকগে সে সব কথা।

–নিজের ছেলেকে ডেমেনটরসের হাতে তুলে দিলেন? হ্যারি ধীরস্থিরভাবে বলল।

–ঠিকই বলেছ, সিরিয়স বললেন–দেখাতে চেয়েছে আমি কত সৎ ন্যায়পরায়ণ… নিজের ছেলেকেও ছাড়ি না।… আজও আমার চোখে সেই দৃশ্য ভাসে। আমি দেখেছিলাম, ডেমেনটরসরা ওকে ধরে বেঁধে নিয়ে এল। সবই দেখেছি আমার সেলের লোহার গারদের ফাঁক দিয়ে। আমার সেলের কাছেই ওকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, মাত্র উনিশ বছর তার বয়স! সন্ধ্যে হলেই ও সেলের মধ্য থেকে মা… মা… বলে কাঁদত। তারপর ও চুপ হয়ে যেত। সকলেই তাই যায়। কেউ কেউ গভীর রাতে কাঁদতে থাকে, চেঁচাতে থাকে। সিরিয়স চোখ বন্ধ করলেন।

হ্যারি বলল-এখনও আজকাবানে আছে?

–না সেখানে আর থাকলো কই। ওকে ধরে নিয়ে আসার এক বছর পর শুনেছি মারা গেছে।

–মরে গেছে?

সিরিয়স তিক্ত কণ্ঠে বললেন–ও একা নয়, আজকাবানে কেউ মরে, কেউ উন্মাদ হয়ে যায়। অনেকেই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে মরে যায়। খুব কমই সেখানে বাঁচে। ডেমেনটররা বলে দেয় কবে মরবে। মৃত্যুর পর, তাদের আত্মীয়–স্বজনকেও দেখতে দেওয়া হয় না। ওর বাবা মন্ত্রণালয়ে বড় অফিসার ছিলেন তাই তাকে ও তার স্ত্রীকে ছেলের মৃত্যুর আগে দেখতে দেওয়া হয়েছিল। সেল থেকে সেই শেষবার আমি ক্রাউচকে দেখেছিলাম। ছেলের মৃত্যুর পর শোকাভিভূত ও অবহেলিত মিসেস ক্রাউচ বেশিদিন বাঁচেননি। দূর্ভাগা ছেলের মতই তার মৃত্যু… পুত্র শোক। শুনে আশ্চর্য হবে মৃত্যুর পর ক্রাউচ ছেলের মৃতদেহ পর্যন্ত দেখতে আসেনি। কারাগারের বাইরে ডেমেনটররা (জেলের গার্ড) ওকে কবর দিয়েছে। আমি নিজে দেখেছি।

কথাটা শেষ করে সিরিয়স ঘেন্নায় সব খাবার ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে শুধু পামকিন জুস পান করতে লাগলেন।… তারপরই নায়কের মৃত্যু। কর্নেলিয়স ফাজ উচ্চ পদ পেয়ে গেলেন। ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশানল ম্যাজিক্যাল অপারেশনের অফিসে ক্রাউচকে এলেবেলে করে রাখা হয়েছে।

সকলেই নীরব। হ্যারির চোখে ভাসছিল ক্রাউচকে দৃষ্টির দৃশ্য। কিডিচ ওয়ার্ল্ড কাপ খেলা শেষ হবার পর ক্রাউচের অবাধ্য হাউজ এলফের অরণ্যের ঝোপে ভীত হয়ে বেরিয়ে আসার দৃশ্য। ডার্কমার্ক প্রয়োগের পর উইঙ্কীর অবস্থা ক্রাউচের ছেলের কথা… ওর উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে পতনের কথা।

হ্যারি সিরিয়সকে বলল মুডি বলেন, সে সব জাদুকর কাল জাদু (অশুভ) করে তাদের ধরতে ক্রাউচ এখন ব্যস্ত।

সিরিয়স বললেন–শুনেছি। তুমি আমার কাছ থেকে কিছু জানতে চাও তো বলি, ও এখন অন্তত: একজন ডেথইটারকে ধরে, ওর অতীতের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে চায়।

রন বলল–তার জন্য ভোররাতে স্নেইপের অফিসে তালাভেঙে ঢোকার কি কারণ থাকতে পারে?

সিরিয়স বললেন–নিছক পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। কোনো মানে হয় না।

রন উত্তেজিত হয়ে বলল–নিশ্চয়ই কোনও কারণ আছে।

সিরিয়স বললেন–তবে শোন, ক্রাউচ স্নেইপ সম্বন্ধে খোঁজ–খবর নেওয়ার জন্য টুর্নামেন্টে বিচারক হয়ে আসেনি। ওই রকম বদখচ কিছু না করে রেগুলার হোগার্টে এসে স্নেইপের ওপর চোখ রাখতে পারত।

–তাহলে স্নেইপ…।  

–শোন তোমরা কি ভাবছ সে সম্বন্ধে আমি একটুও উতলা নই।

ডাম্বলডোর, স্নেইপকে বিশ্বাসের পাত্র মনে করেন। হারমিওন বলল।

রন বলল–হারমিওন, আমরা সবাই জানি ডাম্বলডোর বিরাট এক ব্যক্তি। তার মানে এই নয় যে একজন চালাক কাল ম্যাজিক করা জাদুকর তাকে বোকা বানাতে পারবে না।

–কেন, স্নেইপ, হ্যারিকে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় বাঁচিয়ে ছিলেন? ওকে তো নাও বাঁচাতে পারতেন… মরতে দিলেন না কেন?

–আমি বলতে পারি না–হতে পারে, ভেবেছিলেন না বাঁচালে ডাম্বলডোর ওকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিতে পারেন।

-এ বিষয় আপনার কী মত সিরিয়স? হ্যারি চীৎকার করে বলল

হারমিওন ও রন কানে আঙ্গুল দিল।

সিরিয়স বললেন–রন, হারমিওনের বক্তব্যের মধ্যে অর্থ আছে। কথাটা বলে ওদের দিকে তাকালেন। কবে থেকে স্নেইপ হোগার্টে পড়াতে শুরু করেছে, আমি ভেবে পাই না কেন ডাম্বলডোর ওকে কাজ দিয়েছেন। স্নেইপ সর্বদা ডার্ক আর্টের ভক্ত। স্কুলেও সে এ সম্বন্ধে বিখ্যাত ছিল। রোগা, মাথাভর্তি তেল চুকচুকে চুল… দেখতে ছিল অসুন্দর। হ্যারি–রন সিরিয়সের মুখে স্নেইপের ছাত্র জীবনের চেহারার বর্ণনা শুনে ফিক ফিক করে হাসল।… শুনলে অবাক হবে যখন ও স্কুলে পড়তে এসেছিল তখন অনেক কার্স জানত। সেভেন্থ ইয়ারের অর্ধেক ছাত্ররাও তা জানতো না। স্লিদারিন দলে যারা ছিল প্রায় সকলেই ওরা বলতে গেলে ডেথইটার হয়েছে। যেমন, সিরিয়স আঙ্গুল গুনে গুনে বললেন–রজিয়ার, উইলস্কি… ওদের অররা মেরে ফেলেছিল ভোল্ডেমর্টের পতনের এক বছর আগে। লেসস্ট্রারসরা বিবাহিত দম্পতি এখন আজকাবানে আছে। আভেরী–ওর কোনও পাত্তা নেই। তবে যতদূর জানি স্নেইপকে কেউ ডেথইটার বা ওই রকম কিছু বলে না। ওদের মধ্যে অনেকেই ধরা পড়েনি। স্নেইপ মহা ধূর্ত ও সবসময় বিপদ দেখলেই পড়ে।

রন বলল–স্নেইপ আর কারকারফ দুজনে বন্ধু; কিন্তু খুব বেশি লোককে জানতে–টানতে দেয় না।

হ্যারি রনের কথা শেষ হওয়া মাত্র বলে উঠল–কাল যখন পোন ক্লাসে প্রফেসর স্নেইপের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন তখন ওর মুখখানা দেখেছিলে! কারকারফ স্নেইপের সঙ্গে কিছু কথা বলতে এসেছিলেন। তখন বলছিলেন, স্নেইপ নাকি ইদানীং ওকে এড়িয়ে চলছেন। কারকারফকে দেখে খুবই বিচলিত মনে হয়েছিল। স্নেইপের কাছ থেকে কিছু জবাব চেয়েছিলেন; কিছু একটা দেখিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা যে কি দেখতে পাইনি।

সিরিয়স গুহার দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে হতাশার ভাব করলেন।–তাহলেও কথাটা সত্যি সে ডাম্বলডোর স্নেইপকে বিশ্বাস করেন। স্নেইপের ওপর ডাম্বলডোরের যে বিশ্বাস বা আস্থা আছে তা অনেকের ওপরে নেই। তবে ও যদি ভোল্ডেমর্টের অনুগামী হয়ে কোনোদিন কাজ করে থাকে, তাহলে অবশ্যই ওকে হোগার্টে শিক্ষকতা করতে ডাম্বলডোর দেবেন না।

–তাহলে মুডি আর ক্রাউচ কেন স্নেইপের অফিসে ঢুকতে চেয়েছেন? রন একগুয়ের মতো বলল।

সিরিয়স ধীরে ধীরে বললেন–আমি কখনই মনে করি না ম্যাড আই হোগার্টে এসে প্রতিটি শিক্ষকের অফিস সার্চ করেছেন। ডার্ক আর্টসের তার প্রতিরোধ খুবই স্পষ্ট। আমি ঠিক জানি না মুডির কারও ওপর আস্থা আছে বা নেই; এ কথা আমি মুডির পক্ষ নিয়ে বলতে পারি ও কখনও কাউকে হত্যা করেন নি। সব সময় মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। অতিমাত্রায় শক্ত মানুষ সন্দেহ নেই; কিন্তু কখনই ডেথইটারসদের পর্যায় নিজেকে টেনে আনেননি। ক্রাউচ, যদিও… তার ব্যাপারটা অন্যরকম… সত্যি কি তিনি অসুস্থ? তাই যদি হয় তাহলে স্নেইপের অফিসে কেন গেলেন…। টপ বক্সে না যাওয়া, টুর্নামেন্টে বিচারক হয়ে না থাকা কেমন যেন গোলমেলে ব্যাপার!

কথাগুলো বলতে বলতে সিরিয়স থেমে গেলেন। তখনও তার চোখ গুহার দেওয়ালে। বাকবেক তখন ঘনঘন পাথরের মেঝেতে পা ঠুকে ঠুকে কিছু হাড়টার আছে কিনা খুঁজছে।

শেষে সিরিয়স বনের দিকে তাকালেন। তুমি বলেছিলে না তোমার ভাই এখন ক্রাউচের ব্যক্তিগত সহকারী। জিজ্ঞেস করতে সম্প্রতি ও ক্রাউচকে দেখেছে কিনা?

রন বলল–দেখা হলে জেনে নিতে চেষ্টা করব। পার্সির সঙ্গে ক্রাউচের সম্পর্ক ভাল।

-এটাও জানার চেষ্টা করবে বার্থা জোরকিন্স সম্বন্ধে কিছু জানে কিনা, সিরিয়স বললেন। দৃষ্টি তার ডেইলি ফেটের দ্বিতীয় কপির দিকে।

হ্যারি বলল–বেগম্যান বলছিলেন ওরা জানে না।

–ও হা কাগজওয়ালাকে সে–রকম কিছু বলেছেন, সিরিয়স বললেন।–অনেকদিন থেকে বার্থাকে আমি জানি। জানিনা ইদানীং তার মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে কিনা। তবে বার্থা ভুলোমনের কিন্তু পরচর্চা করবার জন্য স্মৃতিশক্তি অসাধারণ। অবশ্য ওই পরচর্চা করার জন্য ওকে অনেক ভুগতে হয়েছে। বিপদে পড়েছে। ও কখন চুপ করে থাকতে হয় জানে না। ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ে মাঝে মধ্যে ওকে বোঝা মনে করতে লক্ষ্য করেছি। হতে পারে সেই কারণে বেগম্যান ওর থাকা না থাকাতে কোনও ভ্রুক্ষেপ করেন না।

সিরিয়স খুব বড় দেখে একটা হাই তুলে চোখ রগড়াতে রগড়াতে বললেন এখন কটা বেজেছে?

হ্যারি দেখল ওর ঘড়িটা বিকল হয়ে আছে।

হারমিওন বলল–সাড়ে তিনটে…।

সিরিয়স বললেন–তোমাদের এখন স্কুলে ফিরে যাবার সময় হয়েছে। তারপর হ্যারির দিকে বিশেষভাবে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন–গোপনে তুমি স্কুল থেকে চলে এসে আমার সঙ্গে দেখা কর আমি চাই না। বুঝতে পেরেছ? তেমন প্রয়োজন হলে এখানে ছোট ছোট চিঠি পাঠিও। তেমন কিছু ঘটলে খবর পেলে খুশি হব। বিনা অনুমতিতে তুমি হোগার্ট থেকে কোথাও যাবে না, তাই যদি করো তাহলে কেউ একজন তোমাকে আক্রমণ করার সুবর্ণ সুযোগ পাবে।

হ্যারি বলল–ড্রাগন আর দুএকটা গ্রিন্ডিলোস ছাড়া আজ পর্যন্ত আমাকে কেউ আক্রমণ করেনি।

সিরিয়াস বিরক্তিকর মুখে ওর দিকে তাকালেন–তাতে আমার কিছু যায় আসে, টুর্নামেন্ট শেষ হলে আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলব, জুনের আগে নিশ্চয়ই না। ও হ্যাঁ আর একটা কথা, কারও সঙ্গে আমার প্রসঙ্গ নিয়ে কথাবার্তা শুনলে ভুলেও আমার নাম মুখে আনবে না, বলবে লাপাত্তা মনে থাকবে তো?

সিরিয়স হ্যারির হাতে খালি খাবারের কৌটো আর ফ্লাস্ক ফিরিয়ে দিয়ে বললেন–চল, তোমাদের গ্রামের সীমান্তে ছেড়ে আসি। দেখি ফেলে দেওয়া একটা ডেইলি প্রফেট সংগ্রহ করতে পারি কিনা।

তারপরই সিরিয়স বিরাট এক কাল কুকুর হয়ে গেলেন। কুকুর রূপী সিরিয়সের সঙ্গে ওরা পাহাড়ের দিকে হাঁটতে লাগল। ওরা বিদায় নেবার আগে সিরিয়সের অনুমতি নিয়ে ওর (কুকুর) মাথায় হাত বুলাল, গ্রাম ছেড়ে হামেড হয়ে হোগার্টের দিকে চলল।

রন বলল–কে জানে, পার্সি ক্রাউচ সম্বন্ধে এত কথা জানে কিনা। জানলেও হয়ত ভ্রুক্ষেপ করবে না, আরও বেশি করে ওর পক্ষ নেবে। পার্সি আইন মেনে চলে, বলবে ক্রাউচের ছেলের চাইতে আইন বড়।

হারমিওন চিবিয়ে চিবিয়ে বলল–পার্সি নিশ্চয়ই, কোনও কারণে নিজের পরিবারের লোককে ডিমেনটরদের হাতে ছেড়ে দেবে না।

রন বলল–আমি জানি না। ও যদি জানে আমরা ওর চাকরির উন্নতির পথে অন্তরায়, বুঝতেই পারছ উচ্চাকাঙ্ক্ষী পার্সি কি করবে?

এনট্রেন্স হলের পাথরের সিঁড়ির মুখে দাঁড়াতেই ওদের নাকে এল গ্রেটহল থেকে ডিনারের ভাল ভাল খাবারের গন্ধ।

রনের খাবারের খুশবো পেয়ে সিরিয়সের কথা মনে পড়ে বলল–বেচারা বৃদ্ধ এখন লাপাত্তা। দুঃখ হয় তার কথা ভাবলে! খাওয়া–থাকার ঠিক নেই। বাধ্য হয়ে আত্মগোপন করে আছেন। একমাত্র ডাম্বলডোর ওর কষ্ট লাঘব করতে পারেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *