২০. দ্য ফার্স্ট টাস্ক

২০. দ্য ফার্স্ট টাস্ক

সেদিন ছিল রোববার। সকাল বেলা উঠে যেমন তেমন করে ড্রেস পড়লো। কোনো মনযোগ ছিল না জামা পরায়। টুপিটাকে মোজা মনে করে পা গলালো। তারপর যখন বুঝলো এটা মোজা নয়, ওটা ফেলে মোজা নিল। তারপর যখন সবকিছু ঠিকঠাক পরে নিয়ে হারমিওনের খোঁজে বেরোল। হারমিওন তখন গ্রিফিন্ডরের টেবিলে বসে বসে জিন্নির সঙ্গে গ্রেট হলে নাস্তা করছে। ওর খাবার তেমন ইচ্ছে নেই, অপেক্ষা করতে লাগল হারমিওনের কখন পরিজ খাওয়া শেষ হবে। ওর খাওয়া শেষ হলে ওকে এক রকম টানতে টানতে আরও একবার হাঁটার জন্য নিয়ে গেল। হারমিওন অনেক ভোরে উঠে মর্নিং ওয়াক শেষ করেছে।–চলতে চলতে ওকে গত রাতে হ্যাগ্রিড ও ড্রাগনের কথা বলল। শুধু তাই নয় সিরিয়সের সঙ্গে যা যা কথা হয়েছে তাও।

কারকারফের কথা শুনে হারমিওন বিচলিত হলেও আরও বেশি ভয় পেল ড্রাগনের ভয়াবহ সব কথা শুনে। ওর মনে হল কারকারফের চেয়ে ড্রাগন আরও বেশি মারাত্মক! সমস্যা তো বটেই।

যাকগে মঙ্গলবার সন্ধ্যে পর্যন্ত এসব কথা বাদ দাও, হারমিওন বেপরোয়া হয়ে বলল। তারপর কারকারফ সম্বন্ধে ভাবা যাবে।

একই সমস্যা, ভয়… ইত্যাদি আলোচনা করতে করতে অন্তত কম করে তিনবার লেকের চার ধারটা ঘুরল। আলোচনা করতে লাগল ছোটখাট অতি সাধারণ জাদুমন্ত্র কেমন করে দুর্দান্ত ড্রাগনদের কাবু করতে পারা যায়। সমস্যার সমাধান হল না, ছোট–খাট স্পেলের কথা মাথায় এলো না। শেষ পর্যন্ত ওরা লাইব্রেরিতে এসে বসল।… লাইব্রেরিতে ভয়ঙ্কর ড্রাগন সম্বন্ধে যত বই আছে, সব টেনে নামাল। যদি কিছু সূত্র পাওয়া যায়। দুজনে সব বই পুংখানুপুংখ দেখতে লাগল।

টেলন–ক্লিপিং বাই চার্মস… ট্রিটিং সেকল রট… এটা ঠিক নয়, হ্যাগ্রিডের জন্তু–জানোয়ারদের কাছের বই। তাদের প্রতিপালনের বই।

ড্রাগনদের মেরে ফেলা অতি কঠিন কাজ… কারণ তাদের শক্ত মোটা চামড়া, জাদুমন্ত্র দিয়ে আচ্ছাদিত। খুব শক্তিশালী জাদুমন্ত্র ছাড়া সেই চামড়া ভেদ করতে পারে না কিন্তু সিরিয়স যে আমাকে বললেন শক্তিশালী জাদুমন্ত্রের প্রয়োজন নেই… খুব সাধারণ জাদুমন্ত্রে ওরা কাবু হবে।

দেখা যাক ছোটখাট জাদুমন্ত্র সংক্রান্ত বই… তারপর, হ্যারি বলল। ছুঁড়ে ফেলে দিল মেন হু লাভ ড্রাগন টু মাচ (যে সমস্ত মানুষ ড্রাগনদের খুব ভালবাসে) বাকি সব বই ফেরত দিয়ে ওরা দুজনে পালা করে বইয়ের প্রতিটি পাতা মন দিয়ে পড়তে থাকে। হারমিওন বিড়বিড় করে পাতা প্রথম পাতার পড়ে উল্টোতে থাকে। হ্যাঁ এইতো–সুইচিং স্পেল সম্বন্ধে অনেক কিছু লেখা রয়েছে… কিন্তু সুইচিং করার প্রয়োজন কিসের?… কোনোটাই সুবিধের মনে হয় না। ট্রান্সফিগার করলে কেমন হয়? কিন্তু অত বড় জকে কি ট্রান্সফিগার করা সম্ভব হবে? ম্যাকগোনাগল বলেছেন, আগে নিজেদের ওপর প্রয়োগ করতে।

কিন্তু কোন কিছুই ঠিক হল না। ক্রামকে আসতে দেখে ওরা লাইব্রেরি থেকে চলে গেল। ক্রাম লাইব্রেরির এক কোনায় বসে বই পড়তে লাগল।

***

হ্যারি সেই দিন রাত্রে একদম ঘুমোতে পারছেনা। সোমবার সকালে উঠে ভাবল বাঁচতে গেলে হোগার্ট থেকে পালিয়ে যেতে হবে। এর আগে এমন চিন্তা মাথায় আসেনি। কিন্তু গ্রেট হলে ব্রেকফাস্ট খেতে এসে ওর ভাবনা বদলে গেল। চারদিকে বন্ধু–বান্ধদের হৈ চৈ, আনন্দ, গল্প গুজব… ক্যাসেল ছেড়ে চলে গেলে অন্য কোথায় পাবে না। হয়ত মা-বাবার কাছে থাকলে জীবনটা অন্য রকম হত… কিন্তু মা-বাবা? তাদের কথা ওর মনে পড়ে না।

যাই হোক, এখানে থেকে ড্রাগনের মুখোমুখি হওয়া প্রিভেট ড্রাইভে ডার্সলে পরিবারের সঙ্গে থাকার চেয়ে সহস্রগুণে ভাল। এই সব কথা ভেবে ওর মন শান্ত হল। ব্রেকফাস্ট তাড়াতাড়ি সেরে ও আর হারমিওন বাইরে যাবার জন্য দাঁড়িয়ে দেখল হাফলপাফের টেবিল থেকে সেডরিক ডিগরি চলে যাচ্ছে।

সেডরিক ড্রাগন সম্বন্ধে হয়ত কিছু জানে না… তা হলে সে একমাত্র চ্যাম্পিয়ন যে জানে না। ম্যাক্সিম এবং কারকারফ নিশ্চয়ই ফ্লেউর আর ক্রামকে বলেছেন।

হ্যারি বলল–হারমিওন, তোমার সঙ্গে গ্রীন হাউজে দেখা হবে। তখন সে দেখল সেডরিক হল ছেড়ে যাচ্ছে। তুমি এগোও আমি তোমাকে ধরছি।

হ্যারি, তোমার লেট হয়ে যাবে… এখনই ক্লাসের ঘণ্টা বাজবে।

আমি তোমাকে ধরে ফেলব, ঠিক আছে?

হ্যারি যখন মার্বেল সিঁড়ি দিয়ে এক তলায় নেমেছে, সেডরিক তখন দোতলায় সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে। ওর সঙ্গে সিক্সথ ইয়ারের অনেক ছেলেমেয়ে। হ্যারির ওদের সামনে সেডরিকের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করলো না। ওই ছেলেমেয়েগুলো রিটা কীটারের লেখা পড়ে পড়ে সকলকে শোনাচ্ছিল। হ্যারি সেডরিকের পেছনে পেছনে চলল… সামান্য দূরত্ব বজায় রেখে। ও দেখল সেডরিক চার্মস করিডলরের দিকে এগোচ্ছে।… তখন ওর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলল। ও নিজের জাদুদণ্ডটা টেনে বার করে খুব সাবধানে নিশানা করে বলল, ডিফিনডো।

সেডরিকের ব্যাগটা ছিঁড়ে গেল। ব্যাগের মধ্য থেকে পার্চমেন্ট, পালক, বই খাতা ছড়িয়ে পড়লো ফ্লোরে। তিন–চারটে কালির দোয়াত ভেঙে গেল।

ওর বন্ধুরা মাটিতে পড়ে থাকা বই–খাতা তুলেদিতে থাকে। সেরিক ওর বন্ধুদের বলল, আমিই তুলছি, তোমরা যাও আর ফ্লিটউইককে বলবে… আমি একটু পর আসছি… যাও।

এই রকম একটা পরিস্থিতি হ্যারি মনে মনে কামনা করছিল। ও জাদুদণ্ডটা আলখেল্লার মধ্যে লুকিয়ে ফেলল, অপেক্ষা করতে লাগল সেডরিকের বন্ধুদের ক্লাসরুমে চলে যাওয়ার। করিডলর তখন শূন্য… সেডরিক আর হ্যারি দাঁড়িয়ে রয়েছে।

হাই, সেডরিক বলল, তুলে নিল এক কপি এ গাইড টু অ্যাডভান্সড ট্রান্সফিগারেশন… সেটাও কালি মাখামাখি।–আমার ব্যাগটা হঠাৎ কেন জানি না ছিঁড়ে গেল… একেবারে নতুন ব্যাগ…।

সেডরিক, হ্যারি বলল–শুনেছ তো আমাদের প্রথম টাস্ক ড্রাগনস।

কী বললে? সেডরিক মুখ তুলে তাকাল।

ড্রাগনস্ ওদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, হ্যারি দ্রুত বলল… প্রফেসর ফ্লিটউইক যে কোনও সময়ে এসে পড়তে পারেন। চারটে ড্রাগন এসেছে, একজনের জন্য এক একটা… আমাদের তাদের সঙ্গে লড়াই করতে হবে।

সেডরিক, হ্যারির দিকে সোজাসুজি তাকাল। হ্যারির মনে হল তারই মতো সেরিক খবরটা শুনে উদ্বিগ্ন হয়েছে। গত শনিবার থেকে হ্যারির মনে স্বস্তি নেই।

তুমি ঠিক বলছ? ভয়ার্ত স্বরে সেডরিক জিজ্ঞেস করল।

অবশ্যই, হ্যারি বলল–আমি স্বচক্ষে ওদের দেখে এসেছি।

কিন্তু তুমি ওদের পেলে কোথায়? আমাদের তো জানার কথা নয়।

আমি শুনেছি, হ্যারি বলল–(সত্যি কথাটা বললে হ্যাগ্রিড হয়ত বিপদে পড়তে পারে)–আমি ছাড়া অনেকেই জানে। এখন হয়ত ফ্লেউর, ক্রাম জেনে গেছে। মাদাম ম্যাক্সিম, কারকারফ দুজনেই ড্রাগন দেখেছেন।

সেডরিক কালিমাখা হাতে খাতা–বইপত্র, কুইল, পার্চমেন্ট ইত্যাদি তুলে ভেঁড়া ব্যাগটায় রাখতে রাখতে হ্যারির দিকে তাকাল। ওর চোখে দুঃশ্চিন্তার ছাপ।

এসব আমাকে বলছ কেন?

হ্যারি ওর কথাটা শুনে হকচকিয়ে গেল। হ্যারি ভেবেছিল সেডরিক ওকে জিজ্ঞেস করবে নিজে দেখেছে কিনা। হ্যারি মনেপ্রাণে চায় না ওর সবচেয়ে শত্রুও যেন ওই সব দানব–সম ড্রাগনদের সামনে প্রস্তুতি না হয়ে সম্মুখীন হয়।

এমনকি ম্যালফয়, স্নেইপও নয়।

আমাদের জানার কোনও দোষ নেই। হ্যারি সেডরিককে বলল।–আমরা এখন একই পথের পথিক।

কিন্তু সেডরিক সব শোনার পরও যেন মন থেকে সন্দেহ সরাতে পারে না। হ্যারি শুনতে পেল এক পরিচিত কণ্ঠস্বর। ও পেছন ফিরল দেখল, মুডি একটা ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসছেন।

বললেন, আমার সঙ্গে চল পটার, ডিগরি তুমি এখন যেতে পার।

হ্যারি ভয়ে ভয়ে ম্যাড–আই মুডির দিকে তাকালো। ভাবল ওদের কথা কি শুনতে পেয়েছেন? প্রফেসর এখন আমার হারবোলজির ক্লাস আছে।

থাকুক পটার আমার অফিসে চল।

হ্যারি, মুডির পিছু পিছু চলল। মনে দারুণ দুঃশ্চিন্তা! যদি শুনে থাকেন তাহলে? যদি মুডি জানতে চান কেমন করে ও ড্রাগনদের সংবাদ পেল! মুডি তাহলে কী ডাম্বলডোরের কাছে গিয়ে হ্যাগ্রিডের নামে নালিশ করবেন? তা না করে হ্যাগ্রিডকে কাণ্ডহীন লোক ভাববেন?

হ্যারিকে নিয়ে ঘরে ঢুকে মুডি দরজা বন্ধ করেছিলেন। হ্যারির দিকে তার দু রকম চোখ দিয়ে তাকালেন। সাধারণ ও ম্যাজিক্যাল আই।

মুডি ধীর শান্তস্বরে বললেন, তুমি খুব চমৎকার কাজ করেছ পটার। হ্যারি কি বলবে ভেবে পায় না। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া মুডির কাছ থেকে আশা করেনি হ্যারি।

বস, মুডি বললেন। হ্যারি বসল, চারদিক তাকাল।

এর আগেও দু একবার হ্যারি মুডির ঘরে এসেছে। প্রফেসর লকহার্ট ডেতে। ঘরটা এখন নতুন করে ঢেলে সাজান হয়েছিল। দেওয়ালে নতুন প্লাস্টার, রং… দেওয়ালে বড় বড় লকহার্ট আর অন্যদের ফটো। লুপিন যখন ঘরটায় থাকতেন অন্যরকম ছিল। নানা রকমের ছবি, ডার্ক ক্রিয়েচারদের স্পেসিমেন ক্লাসে পড়াশুনোর জন্য কিনতেন। এখন ভোল পাল্টে গেছে। অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিসে ঠাসা।

খুব সম্ভব মুডি যখন অরর ছিলেন তখন সেগুলো ব্যবহার করতেন। টেবিলের ওপর রেখেছেন স্তিকোস্কোপ। ওর কাছে একটা আছে তবে সেটা আয়তনে ছোট ঘরের একটা সোনার টিভি এরিয়ল। ওটা থেকে মৃদু শব্দ শোনা যাচ্ছে। দেওয়ালে প্রচণ্ড বড় একটা আয়না ঝুলছে–তবে তাতে কোনও ঘরের প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছেনা। তার মধ্যে ছায়ার মতো কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনটাই পরিষ্কার করে দেখা যাচ্ছে না।

হ্যারিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মুডি বললেন–আমার ডার্ক ডিটেক্টর কেমন মনে হচ্ছে? সোনার এরিয়লটা দেখিয়ে হ্যারি বলল,–ওটা কী?–গোপন সংবাদ সংগ্রহ করে সিক্রেসী সেনসর। কোনও কিছু লুকিয়ে রাখলে অসত্য বললে ওটা ভাইব্রেট করে (কাঁপতে থাকে)। এখানে অবশ্য এটা তেমন কাজের নয়। সব ছাত্র–ছাত্রী শুধু গোপন করে না, মিথ্যেও বলে। যেদিন থেকে এটা রেখেছি ক্রমাগত ভাইব্রেট করে আর হুমহুম শব্দ করে। স্তিকোস্কোপও একই ব্যাপার… চালু রাখলে পিপ পিপ পিপ শব্দ বন্ধ করে না। তাই বাধ্য হয়ে অফ করে রেখেছি।

আর ওই অদ্ভুত আয়না?

ওটাতে কেবল মাত্র শত্রুদের ছায়া পড়ে। দেখতে পাচ্ছেনা ওদের ছায়া নেচে নেচে বেড়াচ্ছে? তাতে আমার কোনও ক্ষতি নেই, সাবধান হই যদি না ওদের চোখের সাদা অংশ না দেখি।… দেখতে পাই যখন আমার ট্রাঙ্ক খুলি।

মুডি খুক খুক করে হেসে জানালার ধারে বিরাট এক ট্রাঙ্ক দেখালেন। হ্যারি দেখল ট্রাঙ্কে পর পর সাতটা চাবির গর্ত। কেন পর পর সাতটা গর্ত। কি আছে ট্রাঙ্কে হ্যারি বুঝতে পারে না। মাথার ভেতরটা কেমন কেমন করে। মুডির কথায় ওর চিন্তা ব্যাহত হয়। স্বপ্নের জগৎ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসে।

তাহলে তুমি স্বচক্ষে ড্রাগন দেখেছ?

হ্যারি কিছু বলতে গিয়ে থমমত খেয়ে যায়। ভয় করতে থাকে। কিন্তু কোথায় দেখেছে সেডরিককে বলেনি।… অবশ্যই মুডিকেও বলবে না… কোথায় দেখেছে, কে দেখিয়েছে। বললেই হ্যাগ্রিড নিয়ম ভঙ্গের অপরাধে অভিযুক্ত হতে পারেন। মুডি বুঝতে পারে হ্যারি কেন চুপ করে আছে।

–খুব ভাল কথা, মুডি মুখে ব্যথা পাওয়ার শব্দ করে চেয়ারে বসে কাঠের পাটা ছড়িয়ে ছিলেন। টুর্নামেন্টও চিটিং বলতে পার অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত… চলে আসছে।

আমি কাউকে চিট করিনি, করবোও না। আপনার সঙ্গে দেখা হওয়াটা হঠাৎ হয়েছে বলতে পারেন, হ্যারি পরিষ্কার কণ্ঠে বলল।

 কথাটা শুনে মুডি হাসলেন–আমি তোমাকে কোনও দোষ দিচ্ছি না। আমি তো তোমার সম্বন্ধে ডাম্বলডোরকে ভাল কথাই বলি।…ডাম্বলডোর কখনও কাউকে গোপন কথা বলেন না। কারকরফ আর মাদাম ম্যাক্সিম ডাম্বলডোরের মতো উঁচু মাপের মানুষ নয়। ওরা সব সময় সব ব্যাপারে ডাম্বলডোরকে হেয় করার চেষ্টা চালায়।

মুডি কথাগুলো বলে সশব্দে হেসে উঠলেন। হাসার সাথে সাথে ওর ম্যাজিক্যাল আই বন বন করে ঘুরতে লাগল। তাই দেখে হ্যারির মুখ শুকিয়ে গেল, বুকের ভেতরটা দুরু দুরু করতে লাগল।–ভাবছ ড্রাগন পরীক্ষা কেমনভাবে উৎরোবে তাই না?

না তা নয়।

ওয়েল, তোমাকে আমি কিছু বলবো না। আমি পক্ষপাত মোটেই বরদাস্ত করতে পারি না। তাইলেও তোমাকে কয়েকটা উপদেশ দিতে চাই। প্রথমটা হচ্ছে, নিজের শক্তি ও বুদ্ধির ওপর আস্থা।

দুটোই আমার নেই।

ভুল যদি বলি কিছু মনে করবে না। আমার মতে তোমার দুটোই আছে।…মনে মনে ভাব তোমার শক্তি সম্বন্ধে, মনোবল বাড়াও। তোমার শ্রেষ্ঠতা সম্বন্ধে ভাব। কিসে তুমি শ্রেষ্ঠ?

হ্যারি, মুন্ডীর কথা বুঝতে চেষ্টা করে.. কিসে ও শ্রেষ্ঠ?

কিডিচ খেলাতে। ও বোকার মতো বলল।

খুব ভাল, ঠিক কথা, মুডি বললেন ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।… আমি শুনেছি তুমি খুব দক্ষ ফ্লাইয়ার।

কিন্তু আমাকে ঝাড়ু ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না, আমার কাছে শুধু জাদুদণ্ড থাকবে।

আমার দ্বিতীয় উপদেশ… ধরে নাও সাধারণ উপদেশ; মুডি বেশ জোর দিয়ে বললেন, তুমি খুব ছোট ছোট সুন্দর জাদুমন্ত্র ব্যবহার করবে… তাহলে তোমার যা চাওয়া তা পেয়ে যাবে। তোমার যা দরকার।

হ্যারি বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। ওর তো কোনও কিছু দরকার নেই।

যাকগে, যা বললাম… সেগুলো একত্রিত কর… করাটা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।

হ্যারি নিজের গুণ সম্বন্ধে ভাবতে থাকে। ও ভাল ফ্লাই করতে পারে, প্রয়োজন হলে হিংস্র ড্রাগনকে শূন্যে তুলে দিতে পারে–তার জন্য চাই ওর একটা ফায়ারবোল্ট।

ওর প্রফেসর স্প্রাউটের ক্লাসে যেতে পাঁচ–দশমিনিট দেরি হয়ে গেল। তার জন্য ও ক্ষমা চাইল।

হারমিওন। হ্যারি ফিস ফিস করে ওকে ডাকল। হারমিওন আমি তোমার সাহায্য চাই।

…তুমি কি মনে কর আমি করছি না? হারমিওনও ফিসফিস করে জবাব দিল।

হারমিওন, সামনিং চার্ম কেমনভাবে করতে হয় আমাকে শেখাবে… কাল বিকেলে সময় হবে?

***

তারপর হ্যারি খাওয়া–দাওয়া, বিশ্রাম সব কিছু শিকেতে তুলে অনুশীলন করতে লাগল। ভুলত্রুটি হচ্ছে… তাও পরিশ্রম করে চলল। শিখতেই হবে… যেমন করে হোক শিখতেই হবে কঠোর পরিশ্রম করে।

মনোযোগ দাও, হ্যারি মনোযোগ দাও

তবুও পিছিয়ে গেলে চলবে না। মুডি বলেছেন, তোমার শক্তি আছে, সাহস আছে, বুদ্ধি আছে… সাহস করে এগিয়ে যাও।… অনুশীলনের জন্য ও ক্লাসে যোগ দিতে পারে না।

সামোনিং চার্মস ওকে আয়ত্ত্বে আনতে হবেই।

 প্রথম টাস্কের দিন এসে গেল। স্কুলে, ছাত্রাবাসে, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দারুণ টেনশন, উত্তেজনা। মধ্য দুপুরে সব ক্লাস বন্ধ হয়ে গেল। ছাত্রছাত্রীরা চ্যাম্পিয়নদের দেখার জন্য বেড়ার কাছে জড়ো হল। ওরা অবশ্য জানে না ওখানে ওরা কি দেখবে। যা কিছু জেনেছে… ভাসাভাসা। সত্য–মিথ্যে জানে না।

হ্যারি যেন সকলে থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে গেছে। কারা উৎসাহ দিচ্ছে, কারা ব্যাঙ্গ করেছে তা বুঝতে পারছে না–জানে না। ওকে যেতে দেখলে ব্যাঙ্গ করে বলে, পটার চোখের জল মোছর জন্য অনেক টিস্যু পেপারের বাক্স জমা করে রেখেছি। প্রতিটি মিনিটে ও যেন অনড়–অচল হয়ে যাচ্ছে। এত বেশি যে.. ওর মনে হয় ও ড্রাগনের কাছে পৌঁছবার আগেই মাথা ঘুরে পড়ে যাবে… তখন সামনে থাকে দেখবে তাকে অভিশাপ দেবে।

অদ্ভুতভাবে সেই সময়টা এগিয়ে আসছে। ভীষণভাবে তালগোল পাকিয়ে লাফাতে লাফাতে।

–পটার চ্যাম্পিয়নদের মাঠে যাবার সময় হয়ে গেছে… প্রথম কাজের জন্য তোমায় তৈরি হতে হবে।

–ওকে, হ্যারি বলল–দাঁড়িয়ে উঠে সাহস সঞ্চয় করে বলল। হাত থেকে ওর কাঁটা চামচ মেঝেতে পড়ে গেল। পড়ার সময় শব্দটা যেন বেশি হল।

–হ্যারি গুডলাক, হারমিওন চাপা গলায় বলল–কোনো ভয় নেই।

–না না ভয় কিসের! হ্যারির গলার স্বর কেঁপে উঠল। নিজের কণ্ঠস্বর যেন নিজেই চিনতে পারে না।

ও প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের সঙ্গে গ্রেট হল ছেড়ে চলল। ম্যাকগোনাগলকে দেখে মনে হয় তিনিও হারমিওনের মতো চিন্তিত। চোখে–মুখে উল্কণ্ঠার ছাপ। হ্যারিকে চাঙ্গা করবার জন্য পাথরের সিঁড়ি দিয়ে ওর পাশে রইলেন। বাইরে তখন নভেম্বর মাসে শীত। ম্যাকগোনাগল হ্যারির কাঁধে হাত রাখলেন।

–অযথা ভয় পাবে না হ্যারি, ম্যাকগোনাগল বললেন–মাথা ঠাণ্ডা রাখবে। সে–রকম কিছু হতে দেখলে আমরা দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করব। আমাদের হাতের বাইরে কিছুই নেই। জদুদণ্ড আছে। তুমি তোমার শক্তি–সামর্থ্যের মত করবে। কেউ তোমার অমঙ্গল চায় না… তুমি ভাল আছে তো!

–হা, হা আমি ঠিক আছি, হ্যারি যেন নিজেকে নিজে বলল।

ম্যাগগোনাগল হ্যারিকে নিষিদ্ধ অরণ্যের সীমানায় যেখানে ড্রাগনরা রয়েছে সেখানে ওকে নিয়ে চললেন। ওরা এক ঝাড়ু বড় বড় গাছের সামনে দাঁড়াল। তবে পেছনেই এনক্লোজারটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। হ্যারি দেখল একটা বড় তাবু খাটান হয়েছে। ভেতরে যাবার রাস্তার মুখে… এমন ভাবে খাটান হয়েছে যে বাইরে থেকে ড্রাগনদের দেখতে পাওয়া যায় না।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন-এখানে দাঁড়াও। বাকি তিনজন চ্যাম্পিয়ন এলে তাদের সঙ্গে তুমিও ভেতরে যাবে।… বলার সময় তার কণ্ঠস্বর কাপল। একটু অপেক্ষা করতে হবে পটার। ওদিকে মিঃ বেগম্যান রয়েছেন, তিনি এসে তোমাদের নিয়ম–কানুন বলে দেবেন… গুডলাক!

–ধন্যবাদ, হ্যারি যেন বহুদূর থেকে কথাটা বলল! ম্যাকগোনাগল চলে গেলেন হ্যারিকে এনট্রেন্সের মুখে দাঁড় করিয়ে।

ফ্লেউর ডেলাকৌর অদূরে একটা ছোট কাঠের টুলে বসেছিল। ওকে ঠিক শান্ত দেখাচ্ছিল না… একটু যেন নেতিয়ে পড়েছে। ভিক্টর ক্রামকে একটু যেন বেশি বদমেজাজী দেখাচ্ছে। হ্যারির মনে হল ও যেন ভয় পায়নি দেখাতে চাইছে। সেডরিক খুব সম্ভব উত্তেজনা ও ভয় কাটাবার জন্য পায়চারি করছে। হ্যারিকে দেখে ও হাসল। হ্যারিও হাসল। ওর হাসতে যেন কষ্ট হল। মুখের মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে আছে। মনে হয় মাংসপেশিগুলোও তাদের কাজ ভুলে গেছে।–হ্যারি! ভাল আছে তো!, বেগম্যান হাসতে হাসতে উৎসাহ প্রদানের জন্য যেন বললেন। এস এস… ভেতরে এস… জবুথবু হয়ে থেকো না। স্বাভাবিক হও।

বেগম্যানকে হ্যারির দেখলে মনে হয় বিরাট একটা কার্টুনের কাট আউট।.. নিত্যকার মতো পরে রয়েছেন পুরনো ঢোলা আলখেল্লা, বেগম্যান ওদের দেখে বললেন,–বেশ, আমরা এখন সকলে এখানে রয়েছি। সময় এগিয়ে আসছে। দর্শকরা এলেই শুরু হবে। হ্যারি বেগম্যানকে দেখে মনে হল খুবই খুশি খুশি ভাবে।… আমি তোমাদের এই ব্যাগটা দিচ্ছি। বেগম্যান বেগুনি–লাল রং এর একটা সিল্কের থলে দেখালেন।… এর ভেতর থেকে ছোট মডেল বের করবে… আসলের সামনে দাঁড়াবার জন্য। মানে, যে মডেলটা বের করবে সেটা হচ্ছে আসলের মডেল। নানা মডেল… নিলেই দেখতে পাবে।… আমি আরও কিছু তোমাদের জানাতে চাই… ও হ্যাঁ তোমাদের টাস্ক হবে সোনার ডিম সগ্রহ।

হ্যারি, সেডরিকের দিকে তাকাল। ওর মুখে দেখে মনে হল বেগম্যানের কথা বুঝতে পেরেছে। আগের মতই ও তাঁবুর সামনে পায়চারি করতে লাগল। হাঁটছে… এধার ওধার তাকাচ্ছে; কিন্তু বিষণ্ণ–চিন্তিত। ডেলাকৌর আর ক্রামের কোনও তাপ উত্তাপ নেই। এমন মুখ বন্ধ করে রয়েছে সে মুখ খুললেই অসুস্থ হয়ে পড়বে, অন্তত ওদের দেখে হ্যারির মনে হল। কে জানে ইচ্ছে করেই ওই রকম ভাব নিয়ে বসে রয়েছে।

একটু পর শত শত মানুষ টেন্টের পাশ দিয়ে চলতে লাগল। তারা হাসছে, হৈ হৈ করছে… নিজেদের মধ্যে গল্প–গুজব হাসি–ঠাট্টা করছে.. হ্যারির সেদিকে চোখ নেই। ওদের থেকে ও সম্পূর্ণ আলাদা–ভিন্ন জগতের লোক।… তারপর ওর চোখে পড়ল বেগম্যান একটা সিল্কের থলির মুখ খুলছেন।

–লেডিস ফাস্ট, বেগম্যান বললেন, থলেটা এগিয়ে দিলেন ডেলাকৌরের দিকে।

ও একটা কম্পিত হাতকে বেগম্যানের থলের মধ্যে ঢোকাল। তুলে আনল ছোট একটা ড্রাগনের মডেল সবুজ রং। মডেলের গলায় লেখা নম্বর দুই। হ্যারি আগে থেকেই জানত ডেলাকৌর কোনও রকম আশ্চর্য হবার ভাব মুখে আনবে না, এমন ভাব করে দাঁড়িয়ে রইল–তার প্রত্যাশা ঠিকই হয়েছে। হয়ত মাদাম ম্যাক্সিম কি হতে পারে আগে–ভাগে ওকে ওয়াকিবহাল করে রেখেছেন।

ক্রামের বেলায় যা ভেবেছিল তাই। ও একটা টকটকে লাল চাইনিজ বলের মাঝখানের অংশ তুলল। সেই বলের চারধারে লেখা নম্বর তিন। ও সেটা দেখে একটুও ভুরু কোঁচকাল না–ঘাসের দিকে তাকিয়ে রইল।

সেডরিক থলেতে হাত ঢুকাল। ওর হাতে উঠল নীল–ধূসর রং-এর ছোট একটা জন্তুর নাক। নাম্বার ওয়ান লেখা একটা কাগজ তাতে বাধা।… সবশেষে হ্যারি। তিনটে তোলা হয়েছে… বাকি রয়েছে একটা। হ্যারি সিল্কের থলিতে হাত ঢোকাল… তুলে নিল। হাংগেরিয়ান ড্রাগনের একটি মডেল। চার নয়। ওর দিকে তাকাতেই ড্রাগন তার দুটো ডানা মেলল। সরু সরু ধারাল দাঁত মুখব্যাঙ্গ করতে বেরিয়ে এল।

–খুব সুন্দর। এখন তোমাদের মডেলে নম্বর লেখা ড্রাগনের সামনে দাঁড়াতে হবে… ভাল করে দেখেছ তো? এখন তোমরা একটু বিশ্রাম নিতে পার… এখনই ফিরে আসছি ডিগরির কাছে রিপোর্ট করে। হুইসেল শোনার সাথে সাথে তোমরা ঘেরা টোপের ভেতরে যাবে, বুঝতে পেরেছ?…হ্যারি একটু এধারে আসবে তোমার সঙ্গে দু একটা কথা বলতে চাই–বেগম্যান বলে গেলেন।

–ও হাঁ নিশ্চয়ই, হ্যারি বেগম্যানের সঙ্গে তাঁবুর বাইরে চলে গেল।… ওকে নিয়ে বেগম্যান একটা গাছের তলায় দাঁড়ালেন। হ্যারির মুখের দিকে পিতৃস্নেহ দৃষ্টিতে তাকালেন–ভাল বোধ করছে তো? তোমার কিছু চাই?–না, না আমার কিছু দরকার নেই, হ্যারি বলল। কি করবে কিছু ভেবেছ? কোনও কিছু ফন্দি আঁটছেন সেই রকম চাপাগলার বেগম্যান বললেন–আমি সব সময় মানুষজনের সঙ্গে মতবিনিময় করতে ভালবাসি… তুমি যদি চাও তো আমি…, আরও বললেন যতটা সম্ভব চাপাগলায়, তুমি খুব অসহায়, বল আমি তোমায় কি রকম সাহায্য করতে পারি।

–কিছু না, হ্যারি বলল। কথাটা বলার পর হ্যারির মনে হল বড় বেশি কঠিন স্বরে বলেছে। আমি ঠিক করে নিয়েছি আমি কি করব। ধন্যবাদ।

বেগম্যান আবার বললেন–ব্যাপারটা তোমার–আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কেউ জানবে না।

–না, সত্যি বলছি আমার কোনও সাহায্য দরকার নেই।…হ্যারি বুঝতে পারে লোকেরা কেন ওকে অসহায় মনে করছে। কখনও তো কারও কাছে অসুবিধে আছে বলেনি। ও বলল–আমি একটা প্ল্যান ঠিক করেছি, আমি…।

ঠিক সেই সময় তীব্রভাবে বাঁশি বাজল।

বেগম্যান সচকিত হয়ে বললেন–ঈশ্বর রক্ষা করন… আমি পালাই, কথাটা বলে বেগম্যান চলে গেলেন।

হ্যারি তাঁবুতে ফিরে এসে দেখল সেডরিক যাবার জন্য প্রস্তুত। হ্যারি শুভ কামনা জানাতে সেডরিক কোনও জবাব না দিয়ে চলে গেল।

হ্যারি ফ্লেউর আর ক্রাম সেখানে বসেছিল সেখানে যাবার সাথে সাথে দর্শকদের চিৎকার শুনতে পেল, তার মানে সেরিক এনক্লোজারে ঢুকে গেছে।… এমন সময় কানে এল বেগম্যানে ধারাবিবরণী একটুর জন্য মিস করল, আহাহা একটুর জন্য… ও রিস্ক নিচ্ছে… এই তার!… দারুণভাবে এগিয়েছে… ব্যর্থ হল।

তারপরই কানে এল তীব্র গর্জন… কর্ণবিদারক গর্জন। তার একটি মানে, সেডরিক ড্রাগনদের কাছে গেছে… সোনার ডিম তুলে নিয়েছে।

–দারুণ… দারুণ! বেগম্যান চিৎকার করে উঠলেন।… এখন বিচারকরা ওকে নম্বর দেবেন…!

কিন্তু কত মার্ক পেল বেগম্যান তার ধারাবিবরণীতে বললেন না। হ্যারির মনে হল বিচারকরা ওর নম্বরটা হাতে নিয়ে তুলে ধরে দর্শকদের দেখাচ্ছেন।

-এখন আরও তিনজন আছে। বাঁশি বাজিয়ে বললেন–মিস ডেলাকৌর। হ্যারি দেখল ফ্লেউর কাঁপছে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত কাঁপছে। ও কারও দিকে না তাকিয়ে মাথা উঁচু করে টেন্ট ছেড়ে চলে গেল। হাতে তার জাদুদণ্ড। তাঁবুতে রয়ে গেল হ্যারি আর ক্রাম।

–আবার বেগম্যান ধারা বিবরণী শুরু করলেন।… ওহহা আমার মনে হয় বুদ্ধিমানের মতো কাজ করল… প্রায় ধরে ফেলেছে… সাবধান… হায় ঈশ্বর, মনে হয়েছিল ও কৃতকার্য হয়েছে।

দশ মিনিট পর আবার দর্শকদের অভিনন্দন শুনতে পেল। তাহলে ফ্লেউর পেরেছে। একটু চুপচাপ… খুব সম্ভব ফ্লেউরের মার্ক দেখান হচ্ছে।… প্রচণ্ড করতালি শুনতে পেল হ্যারি।… তৃতীয়বার বাঁশি শুনল।

–ও এবার ক্রাম আসছে! বেগম্যান খুব জোরে জোরে বললেন। ক্রাম তাঁবুতে হ্যারিকে একা রেখে চলে গেল।

হ্যারি অব্যক্ত এক মানসিক যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল। সারা শরীরটা যেন কুঁকড়ে যাচ্ছে… বুকের ভেতর হাতুড়ি পিটছে। ও সোজা হয়ে বসে তাঁবুর দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল। দশর্কদের সোরগোল যেন বহু দূর থেকে ভেসে আসছে ওর কানে।… বেগম্যান বললেন–পেরেছে মিঃ ক্রাম পেরেছে…যা ও ডিম হাতে ধরে আছে!

তীব্র অভিনন্দন যেন ঝড় বইয়ে দিচ্ছে। সেই ঝড় সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দেবে। ক্রাম কৃতকার্য হয়েছে।… এখন হ্যারির ডাক পড়বে। যে কোনও মুহূর্তে শুনতে পাবে ওর নাম।

হ্যারি দাঁড়াল। মনে হল ওর পা দুটো যেন নরম তুলতুলে হয়ে গেছে বিলের ধারে গজিয়ে ওঠা গুলের মতো। ও অপেক্ষা করতে লাগল। ও বাঁশির শব্দ শুনতে পেল। ও সবরকম দুর্বলতা চেপে রেখে টেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে গেল। সবুজ পাতার গাছের তলাদিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সামনে তাকাল। সবকিছুই যেন ব্যস্তব নয়, রঙ্গিন স্বপ্ন মনে হল। শত শত মানুষের মুখ ওকে দেখছে দর্শক ভর্তি স্ট্যান্ড থেকে।… তারপরেই চোখে পড়ল হর্ণটেলের দিকে। সোনার ডিমগুলো পাশে রেখে গেঁড়ে বসে রয়েছে। ডান দিয়ে ঢেকে অশুভ, হলুদ দুই চোখ ওর দিকে বিশ্রীভাবে তাকিয়ে রয়েছে দানবের মতো–আঁশযুক্ত কুচকুচে কাল চতুস্পদ গিরগিটি। মাঝে মাঝে ফলাকাযুক্ত ল্যাজ জমিতে ঝাপটা দিচ্ছে… সেই ঝাপটায় জমি গর্ত হয়ে যাচ্ছে। দর্শকরা দারুণ হৈ হৈ করছে, কর্ণভেদী চিৎকার করে চলেছে। তাদের চিৎকার বন্ধুত্বের না ব্যাঙ্গের ও জানে না। হ্যারির তাতে কিছু যায় আসে না। এখন যা করবার তাই ওকে করতে হবে।… সোনার ডিম তুলে আনতে হবে।

হ্যারি ওর জাদুদণ্ড তুলে ধরে চিৎকার করে বলল, অ্যাকিও ফায়ার বোল্ট।  দর্শকরা এখনও নীরব হয়নি। তাহলে কী ওর জাদুমন্ত্র কাজ করলো না? ব্যর্থ হল?

তারপরই ও দেখল ওর ফায়ার বোল্ট তীব্রভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তারপর ঘুরতে ঘুরতে ওর সামনে স্থির হয়ে দাঁড়াল। ওকে ভোলার জন্য অপেক্ষা করছে। দর্শকরা আরও গর্জন করতে লাগল… বেগম্যান কি বলছেন ওর কানে ঢুকল না। তাহলে কী হ্যারির কানে তালা লেগে গেছে? কিছু শোনা তখন ওর কাছে খুব প্রয়োজনীয় নয়।

ও ঝাড়ুতে বসে দু ধারে পা ঝুলাল। তারপর মাটিতে পায়ের ঝটকা দিল। এক সেকেন্ড পর অদ্ভুত বিস্ময়কর এক ঘটনা ঘটল…। ও হু হু করে আকাশে উড়তে লাগল। দেখতে দেখতে নিচে দর্শকদের মুখগুলো বিন্দু বিন্দু হয়ে গেল। বিরাট হর্ণটেল কুঁকড়ে ছোট একটা কুকুরের বাচ্চার মতো হয়ে গেল।… ও তখন বুঝতে পারলো শুধুমাত্র মাটি ছেড়ে আকাশে উড়ছে নয়… মনের সব ভয়ও উড়ে গেছে।… আবার ও সেখান থেকে আকাশে উড়েছিল সেখানে ফিরে এল।… ঠিক যেন কিডিচ ম্যাচের মতো। হর্নটেল যেন একটা বিরোধী পক্ষ।

ও ডিমের দিকে তাকাল… তার মধ্য থেকে সোনার ডিম লক্ষ্য করল। সিমেন্ট রং-এর আরও অনেক ডিমের মধ্যে সেটা জ্বল জ্বল করছে। ড্রাগন সেই ডিমটাকে সামনের দুটো পা–বাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। ঠিক আছে হ্যারি আপন মনে বলল ও ভিন্নমুখী করার কৌশল… ওদিকে যাওয়া যাক। হ্যারির কৌশল কম নয়। ও ধাওয়া করে হর্নটেলকে পরাস্ত করবেই। নানাদিক থেকে সে ডাইভ দেওয়া শুরু করল।

বেগম্যান হাততালি দিয়ে বললেন–দেখ দেখ তোমরা সবাই দেখ… আমাদের সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রতিযোগী সবচেয়ে কম সময়ে ডিম তুলে নিয়েছে… সোনার ডিম। হ্যারি সব রকম বাধা–বিঘ্ন কলা দেখিয়েছে।

 হ্যারি এই প্রথম দর্শকদের হর্ষধ্বনি শুনতে পেল। সকলেই চিৎকার করছে, অভিনন্দিত করছে… তাদের সবকিছু যেন ওয়ার্ল্ডকাপের আইরিশ সাপোর্টারদের ছাপিয়ে গেছে। হ্যারি দেখল ড্রাগন–কীপার হর্ণটেলকে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করছে। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল, মুডি, হ্যাগ্রিড এনট্রেন্সের মুখে দাঁড়িয়েছিলেন… ওকে ফিরতে দেখে সকলেই দৌড়ে গেলেন। তাদের আনন্দ আর ধরে না হ্যারি প্রথম কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে।… ও মৃত্যুর মুখোমুখি থেকে ফিরে এসেছে।

হ্যারি পটার যখন ফায়ার বোল্ট থেকে নামছে তখন ম্যাকগোনাগল বললেন, অপূর্ব, অদ্ভুত… হ্যারি পটার। তারপর ওর পিঠে যেখানে কেটে গেছে হাত রেখে সস্নেহে বললেন–বিচারকরা নম্বর দেবার আগে তুমি অবশ্যই মাদাম পমফ্রের সঙ্গে দেখা করবে। উনি এখন ডিগরির সঙ্গে কথা বলছেন।

হ্যাগ্রিড বলল–হ্যারি–তুমি পেরেছ, তুমি পেরেছ। আমি কী স্বপ্ন দেখিছি? চার্লি বলল–তুমি যাকে পরাজিত করলে সেই ড্রাগনটা সবচেয়ে মারাত্মক। আমার মনে একটু ভয়ছিল। ও তাড়াতাড়ি হ্যাগ্রিডের সামনে থেকে পালাতে চায়। কে জানে, আনন্দের আতিশয্যে না বলে ফেলেন গতকাল হ্যারিকে ড্রাগনদের দেখিয়েছিলেন।

প্রফেসর মুডিও দারুণ খুশি। ওর ম্যাজিক্যাল চোখ সকেটের মধ্যে নাচছে।

বললেন–পটার তুমি সুন্দরভাবে ও সহজে কৌশলটা প্রয়োগ করেছ।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন–খুব খুশি হয়েছি… এখন তো আমাদের ফাস্ট এড টেন্টে যেতে হয়…।

হ্যারি তখনও হাঁফাচ্ছে। এনক্লোজার থেকে বেরিয়ে দেখল মাদাম পমফ্রে দ্বিতীয় টেন্টের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। একটু যেন উদগ্রিব।

–ড্রাগন! কথাটা নিদারুণ বিরক্তির হয়ে বলতে বলতে মাদাম পমফ্রে হ্যারিকে ধরে টেন্টের ভেতরে নিয়ে গেলেন। টেন্টের ভেতর হ্যারি দেখল ছোট ছোট কিউবিকলস বানান। একটার মধ্যে সেডরিকের ছায়া দেখতে পেল। ওর মতন সেডরিক আঘাত পায়নি। অন্তত: বসে আছে। পমফ্রে হ্যারির কাঁধের ক্ষত পরীক্ষা করতে করতে কথার পর কথা বলে চললেন–গত বছরে ডেমেনটর, আর এবার ড্রাগনস। এর পরের বছর তাহলে কাঁদের আনবে? হ্যারি তুমি ভাগ্যবান… খুব সামান্য ক্ষত…. একটু পরিষ্কার করা দরকার।

পমফ্রে ক্ষতটা সাবধানে এন্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করে… তার ওপর জাদুদণ্ড ছোঁয়ালেন। তৎক্ষণাৎ ক্ষতটা সেরে গেল।

-এক মিনিট চুপটি করে বসে থাক, তারপর যেও। কথাটা বলে পমফ্রে পাশের ঘরে গেলেন। হ্যারি শুনতে পেল, পমফ্রের কথা, এখন কেমন বোধ করছ ডিগরি?

হ্যারির বসে থাকার ইচ্ছে ছিলো না; কিন্তু ওষুধের জন্য বসে থাকতে হল। কিছু সময় বসে থাকার পর ও দাঁড়িয়ে পড়ল। বাইরে কি হচ্ছে দেখার প্রবল ইচ্ছে… টেন্ট থেকে বেরিয়ে যাবার সময় দুজনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গেল। বাইরে থেকে টেন্টে ঢুকছিল হারমিওন, ওর পেছনে রন।

হারমিওন–উল্লসিত হয়ে বলল–হ্যারি তুমি দারুণ বললে কম বলা হয়। হারমিওনের মুখে আঙ্গুলের দাগ। ভয়ে আঙ্গুল দিয়ে মুখ চেপে ধরার জন্য লাল লাল দাগ–তুমি অদ্ভুত তুলনাহীন।

কিন্তু হ্যারির হারমিওনের প্রশংসায় মন নেই। ও রনের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। ও এমন এক মুখ করে হ্যারির দিকে তাকিয়েছিল যেন ও একটা ভূত–হ্যারি নয়।

–হ্যারি, রন গম্ভীরে হয়ে বলল–যারা তোমার নাম গবলেটে দিয়েছিল… আমার দৃঢ় ধারণা তারা তোমার অনিষ্ট করার চেষ্টায় ছিল। গবলেটে নাম আসার পর যে অবিশ্বাসের মধ্যদিয়ে দিন–সপ্তাহ গেছে সে গুলো এখন তারা ভুলে গেছে। চ্যাম্পিয়ন হবার পর এই প্রথম রন হ্যারির সঙ্গে বন্ধুর মতো কথা বলল।

হ্যারি ক্ষীণকণ্ঠে বলল–ভাল, তাহলে তুমি আসল ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে। তবে বুঝতে একটু বেশি সময় নিয়েছ।

হারমিওন দুজনের মুখের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। কি করবে, কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। হ্যারির মনে হল রন কিছু বলতে চাইছে। দুঃখ প্রকাশ? না, হ্যারি রনের মুখে থেকে কিছু শুনতে চায় না।

রন কিছু বলার আগেই হ্যারি হেসে বলল–থাক তোমাকে কিছু বলতে হবে। ওসব কথা ভুলে যাও।

–না, রন জোর দিয়ে বলল–আমার উচিত হয়নি।

–আঃ বললাম তো ভুলে যাও।

তখন দু বন্ধু হো: হো করে হেসে উঠল।

আনন্দে হারমিওন প্রায় কেঁদে ফেলল।

হ্যারি হকচকিয়ে বলল–আরে কান্নার কি আছে।

হারমিওন কাঁদ কাঁদ কণ্ঠে বলল–তোমরা দুজনেই বোকা!

হারমিওনের কান্না থামানোর জন্য দুজনেই ওকে জড়িয়ে ধরল।… তারপর তিনজনেই হৈ হৈ করতে করতে সেখানে পয়েন্ট ঘোষণা হবে সেদিকে ওরা দৌড়ল।–হ্যারি চল চল তুমি কত পেয়েছ এখনি ঘোষণা হবে।

হ্যারি সোনার ডিম আর ফায়ার বোল্ট নিয়ে টেন্ট থেকে বেরিয়ে ওদের সঙ্গে ছুটল।

ওরা হাঁফাতে হাঁফাতে এনক্লোজারের সীমানায় পৌঁছল।… তখন মাঠ থেকে ড্রাগনদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হ্যারি দেখতে পেল পাঁচজন বিচারক পাশাপাশি গম্ভীর মুখে বসে রয়েছেন। তাদের চেয়ারগুলো সোনার পাতে মোড়া।

রন বলল–প্রত্যেক বিচারকের মুঠোতে আছে দশ নম্বর। হ্যারি মাঠ থেকে বাঁকা চোখে দেখল প্রথম বিচারক–মাদাম ম্যাক্সিম–ওর একটা হাত তোলা। হাতে বেশ লম্বা মতো একটা চকচকে জিনিস রূপালি বিবর্ণে মোড়া এমনভাবে মোড়া দেখলে মনে হবে আট।

–খুব একটা খারাপ নয়, রন বলল জনতার হর্ষধ্বনির মধ্যে। আমার মনে হয় তোমার কাঁধের ক্ষতের জন্য দুনম্বর কম দিলেন।

মিঃ ক্রাউচ ন নম্বর দিলেন। রন হ্যারির পিঠ চাপড়ে জোরে জোরে বলে উঠল দারুণ! জনতা আরও আরও বেশি হর্ষধ্বনি করে উঠল। ডাম্বলডোর দিলেন ন নম্বর।

লাডো বেগম্যান–দশ

দশ! হ্যারি যেন বিশ্বাস করতে চায় না।

এবার কারকারফ হাতের জাদুদণ্ড তুললেন। সামান্য সময়… তারপরই একটা নম্বর ওর দণ্ড থেকে বেরিয়ে এল–চার!

রন দারুণ ক্ষেপে গেল। মাত্র চার? চার কেন?… ইতর–সমাজের আবর্জনা… পক্ষপাতদুষ্ট… তুমি ক্রামকে দশ পয়েন্ট দিয়েছে।

কিন্তু হ্যারির কোনও ভ্রুক্ষেপ বা তাপ উত্তাপ নেই। কারকারফ ওকে শূন্য দিলেও কিছু মনে করতো না। রনের তার প্রতি ঘৃণা।–ওর পক্ষ হয়ে… হাজার পয়েন্টের সমান। রনকে অবশ্য ও কিছু বলল না, কিন্তু ওর শরীর–মন–হৃদয় বাতাসের চেয়ে হালকা হয়ে গেল এনক্লোজার ছেড়ে যাবার আগে। শুধু রন নয় যারা গ্রিফিন্ডর হাউজের ছেলে–মেয়েদের জয়–উল্লাস কম নয়। সেডরিক শুধু নয়, সারা হোগার্টের ছাত্র–ছাত্রী আকাশে হ্যারির সঙ্গে হর্ণটেলের লড়াই দেখেছে–তখন তারা আনন্দে মেতে উঠেছিল। স্লিদারিনদেন আর ও পরোয়া করে না… ও তাদের সঙ্গে লড়বার শক্তি রাখে।

চার্লি বলল–হ্যারি, তুমি আর ক্রাম দুজনেই প্রথম হয়েছে!… আমাকে এখন মামকে আউল পাঠিয়ে সমস্ত ব্যাপারটা জানাতে হবে, সঠিকভাবে প্রতিটি ঘটনা… কিন্তু এখনও যেন আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ও হ্যাঁ, ওরা বলেছে আরও কিছুক্ষণ তোমায় অপেক্ষা করতে হবে… বেগম্যান টেন্টে ফিরে এসে তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চান।

রন বলল ও অপেক্ষা করবে, হ্যারি আবার তাঁবুতে ফিরে আসে। এখন টেন্টটাকে ওর অন্যরকম মনে হয়–বন্ধুপূর্ণ আর অন্তরঙ্গ।

ফ্লেউর, সেডরিক আর ক্রাম একসঙ্গে টেন্টে ঢুকল। সেডরিকের এক ধারের গালে কমলা রং-এর মোটা পেস্ট। বোঝাই যায় আগুনে ঝলসে যাওয়ার জন্য পমফ্রে প্রলেপ লাগিয়েছেন। ও হ্যারিকে দেখে হাসল।–নিশ্চয়ই ভাল আছ হ্যারি।

–তোমরা সবাই দারুণভাবে টাস্ক শেষ করেছ। বেগম্যান টেন্টে এক রকম লাফাতে লাফাতে এসে বললেন। মুখে হাসি, আনন্দে টগবগ করছেন। মনে হয় ওদের জয় যেন তারই জয়।… এখন তোমাদের সঙ্গে কিছু আলাপ–আলোচনা করতে চাই, বেগম্যান বললেন–সেকেন্ড টাস্ক হতে এখন অনেক দেরি, হাতে অনেক সময় পাবে। দিন ঠিক হয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে নটা। এখন তোমাদের কিছু চিন্তা করার ব্যাপার আছে। তোমাদের হাতে যে সোনার ডিমগুলো রয়েছে… দেখবে সেগুলো ভোলা… খোলা জায়গার জোড়গুলোও দেখ। এখন ডিমের ভেতরে কি আছে তোমাদের সমাধান করতে হবে… সমাধান হলে তোমরা দ্বিতীয় কাজ কি হবে জানতে পারবে… এখন প্রস্তুতি নাও। সবাই ভাল করে বুঝতে পেরেছ?… মনে হয় অবশ্যই। এখন তোমরা যে যার কাজে যেতে পার।

হ্যারি টেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে রনের কাছে দাঁড়াল। ওরা অরণ্যের ধার ঘেঁষে হাঁটতে লাগল… অনেকে সব শক্ত কথা আলোচনা করতে লাগল। হ্যারির ইচ্ছে সেডরিক ক্ৰাম আর ফ্লেউরের মুখ থেকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা শোনে… বিশদভাবে। হ্যারি হ্যাগ্রিডের সঙ্গে প্রথম যে সব গাছগুলোর অন্তরাল থেকে ড্রাগন দেখেছিল, তাদের প্রবল গর্জন শুনেছিল, দেখল এক জাদুকরি ওদের উঁকি মেরে দেখছে।

জাদুকরি আর কেউ নয় রিটা স্কীটার। আজ অ্যাসিড–সবুজ রোবস পরেছে। হাতে সেই দ্রুত লিখিয়ে পালক!

–অভিনন্দন হ্যারি! ও হ্যারির দিকে এগিয়ে এসে বলল…।–তোমার কী আমার সঙ্গে দু-একটা কথা বলার সময় হবে?… প্রশ্ন, ড্রাগনদের সামনে তুমি কেমন করে দাঁড়ালে। নম্বর দেওয়া সম্বন্ধে তোমার মনোভাব?

হ্যারি বলল–অবশ্যই একটা কথা বলতে পারি–গুডবাই। স্কীটারকে সাফ কথাটা বলে ও রনের সঙ্গে ক্যাসেলের দিকে চলল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *