১১. অ্যাবোর্ড দ্য হোগার্টস এক্সপ্রেস

১১. অ্যাবোর্ড দ্য হোগার্টস এক্সপ্রেস

ছুটি প্রায় শেষ, স্কুলে ফেরার পালা। হ্যারির অনেক ভোরে ঘুম ভাঙল। ছুটির এই শেষ দিনটি হ্যারির বিমর্ষ ও বিস্বাদ লাগছে। আকাশ কালো করে বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। মিসেস উইসলি তাড়া দেবার আগেই হ্যারি বিছানা ছেড়ে উঠে তৈরি হয়ে নিল। জীনস সুইটসশার্ট। হোগার্টস এক্সপ্রেসে উঠেই সেগুলো ছেড়ে স্কুলের ইউনিফরম পরে নেবে।

রন, হারমিওন, ফ্রেড, জর্জ, জিনিও তৈরি। ওরা তখন একতলায় নেমেছে কিচেনে যাবার জন্য। সিঁড়িতে মিসেস উইসলির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। মিসেস উইসলিকে দারুণ উদভ্রান্ত দেখালো।

সিঁড়ি থেকেই জোরে জোরে বললেন–আর্থার, আর্থার তোমার অফিস থেকে জরুরি খবর…!

হ্যারি নিচে নামতে নামতে সিঁড়ির দেয়ালে পিঠ ঘেঁষে দাঁড়াল। মি, উইসলি রোব পরেই তাড়াতাড়ি নেমে গেলেন। হ্যারি রান্না ঘরে ঢুকে দেখল, মিসেস উইসলি ড্রয়ার খুলে ডিস, কাঁটা চামচ বার করছেন ব্যস্ত সমস্ত হয়ে এখানে একটা কুইল রেখেছিলাম (লেখার কলম), মি, উইসলি ফায়ার প্লেসের কাছে ঘাড় নিচু করে কথা বলছেন

হ্যারির চোখে তখনও ঘুম লেগে রয়েছে। তবু ঠিক দেখতে পাচ্ছে কিনা বোঝার জন্য চোখ দুটো বন্ধ করে আবার খুলল।

আমোস ডিগরিব মাথাটা আগুনের শিখার মাঝে দেখা যাচ্ছে অনেকটা ডিমের দাড়ি গজানোর মতো। মুখ থেকে অনর্গল কথা বেরিয়ে আসছে–খুবই তাড়াতাড়ি, মুখের চারপাশে আগুনের শিখার জন্য একটুও বিচলিত নয়–কানের মধ্যেও অগ্নিশিখা ঢুকছে।

আর্থার মাগলরা ক্ষেপে গেছে–ওদের তোমায় শান্ত করা দরকার।

–পেয়েছি, এই নাও পার্চমেন্ট (কাগজ) আর দোয়াত, কলম। মিসেস উইসলি যে পালকের কলমটা (কুইল) দিলেন সেটা তেড়াবাকা!

–সত্যি আমাদের ভাগ্যবান বলতে হবে, আগুনের মধ্য থেকে মি. ডিগরির মুণ্ডুটা বলল–দুএকটা পেচা পাঠানোর জন্য আমাকে সকাল সকাল অফিসে আসতে হয়েছে। আমি খবর পেয়েছি চতুর্দিকে অজস্র বেআইনি ম্যাজিকের প্রয়োগ চলছে–রিটা কীটারের যদি খবর পায় আর্থার।

উইসলি জিজ্ঞেস করলেন–ম্যাড আই কী বলে?–উইসলি দোয়াতের ঢাকনি খুলতে খুলতে বললো… তারপর নোট করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। ডিগরি চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে বলল–বলছে, ওর বাড়ির বাগানে কে যেন ঢুকেছিল তারপর ডাস্টবিনের পেছনে লুকিয়ে পড়েছে–উইসলি বললেন–তারপর?

–তারপর আর কি, সেখান থেকে গাদাগাদা ময়লার বাণ্ডিল গুলি–গোলার মতো ছুঁড়তে থাকে–চতুর্দিকে। এর বেশি কিছু বলতে পারছিনে, ডিগরি বললেন ওদের মধ্যে একজন ছিল যখন ওর লোকজনেরা সেখানে উপস্থিত হয়।

–লোকটি কে?

–আর্থার তুমি তো ম্যাড আইকে ভাল করেই জান। ডিগরির চোখ আবার ঘুরতে থাকে। গভীর রাতে ওর বাড়ির চত্বরে কেউ ঘোরাফেরা করেছে! খুব সম্ভব কিছু বেড়াল খাবারের জন্য ঘুরছিল… আলুটালু শোষা ছাড়িয়ে খাচ্ছিল… যদি অন্য কিছু হয়… মানে তুমি তো ওর রেকর্ড জান… তাহলে ওকে চার্জ করতে হবে… সেই যাই হোক, ডাস্টবিনের ব্যাপারটা কী?

–হতে পারে সতর্ক করে দেওয়া; উইসলি লিখতে লিখতে বললেন ম্যাড আই ওর জাদুদণ্ড ব্যবহার করেনি? কাউকে তাড়া করেনি?

–অবশ্যই জানালা দিয়ে দেখেছেন, ডিগরি বললেন–সে যাই হোক কোনও দুর্ঘটনা হয়নি।

–আচ্ছা আমি যাচ্ছি। মি, উইসলি ব্যাগে কাগজপত্র নিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ডিগরির গোল গোল চোখ আর গোল মুখ তখনও আগুনের মধ্যে।

–অত্যন্ত দুঃখিত মল্লি, ডিগরি বলল খুব শান্তভাবে–তোমাকে সাতসকালে বিরক্ত করলাম। একমাত্র আর্থার ম্যাড আইকে ট্যাকল করতে পারে। ম্যাড আই এর আজ নতুন কাজে যোগদানের কথা আছে। কে জানে গত রাতে…।

–আমোস এসব নিয়ে চিন্তা করো না, মিসেস উইসলি বললেন–যাবার আগে দুএকটা টোস্ট খেয়ে যাবে?…

মিসেস উইসলি প্লেট থেকে একটা টোস্টে বেশি করে মাখন মাখালেন কিচেন টেবিল থেকে নিয়ে… মি. ডিগরির মুখের সামনে ধরলেন।

–ধন্যবাদ! ডিগরি অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

মি. উইসলিকে ছেলেমেয়েদের বলতে শোনা গেল–আমি ঠিক সময়ে ফিরতে পারলেও অধৈর্য হবে না। স্কুলের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নেবে। ভাল করে টার্ম শেষ করবে।–কথাগুলো বলে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

একটু পর বিল কিচেনে ঢুকে বলল–ম্যাড আই-এর নাম শুনছিলাম যেন? কি ব্যাপার? চোর এসেছিল।

–কী বললে ম্যাড আই মুডী? জর্জ টোস্টে মারমালেড পুরু করে লাগাতে লাগাতে বলল–ওকে নিয়ে এত মাথা ঘামাবার দরকার কী?

মিসেস উইসলি বললেন–তোমরা যাই বলো না কেন, তোমাদের বাবার কিন্তু মি. মুডীর সম্বন্ধে ধারণা অন্যরকম। ও খুব নামকরা জাদুকর। ডাম্বলডোরের বিশেষ বন্ধু। ডাম্বলডোর অবশ্য ওকে স্বাভাবিক মানুষ বলেন না–বুঝি না কোটা ঠিক।

হ্যারি বলল–ম্যাড আই কে?

-একজন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। আগে মিনিস্ট্রিতে কাজ করতেন। চার্লি হ্যারিকে বলল–তদন্তকারী বলতে পারে।

–আমি জীবনে একবারই বাবার অফিসে ওকে দেখেছি। ওনার সঙ্গে কিছু করার কথা ছিল। একজন ডার্ক জাদুকর ধরনেওলা। কথাটা বলে হ্যারির দিকে তাকাল। হ্যারি এমন ফাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল।–তোমরা বোধহয় জানো না এখন আজকাবানের জেলে যারা আছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি অপরাধীদের ও পাকড়াও করেছে। সেই সব ভাল কাজ করতে গিয়ে আজ ওর হাজার হাজার শত্রু! নানারকম ঘাত–প্রতিঘাতে আজ ওর মাথা ঠিক নেই। প্যারানয়েড বলতে পার। বয়স হয়েছে। আগের মতো কর্মক্ষমতাও নেই।… মজার কথা ও আজ কাউকে বিশ্বাস করে না। সর্বত্র ডার্ক জাদুকরদের দেখে।

বিল আর চার্লি কিংস ক্রশ স্টেশনে ওদের সি অফ করতে এল। এলো না শুধু পার্সি! অনেক দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। আসতে পারেনি অফিসে একগাদা পেন্ডিং ও জরুরি কাজের জন্য।… বলেছে, মি. ক্রাউচ ওকে ছাড়া এক দণ্ডও চলতে পারেন না।

জর্জ বলল-এমনিভাবে টিকে থাকলে তোমার জয় জয়কার হবে।

মি. উইসলি ওদের গ্রামের বাড়ি থেকে লন্ডনে কিংস ক্রশ স্টেশনে পৌঁছে দেবার জন্য তিনটে ট্যাক্সির ব্যবস্থা করে গেছেন। মাগলদের পরিচালিত ট্যাক্সি।

মিসেস উইসলি বললেন–আর্থার অবশ্য মিনিস্ট্রির গাড়ি রিকুইজিশন দিয়েছিলেন–হয়নি। ওরা সকলে উঠানে দাঁড়িয়ে। ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। থামার নাম নেই। ব্যাজার মুখে ট্যাক্সিওয়ালারা মালপত্র তুলছে। বড় বড় ছটা ভারি ট্রাঙ্ক যাবে হোগার্টে।

হ্যারির পেচা যেমন ট্যাক্সিতে যেতে নারাজ তেমনি জিনির বেড়াল। ফ্রেড জর্জের বিরাট ট্রাঙ্কের ডালা হঠাৎ খুলে গেলে ওদের জাদুমন্ত্রে ভরা জিনিসগুলো বাক্স থেকে ছিটকে পড়তেই মাগল ট্যাক্সিওয়ালা ভয় পেয়ে গেল। কুকস্যাংকস হামাগুড়ি দিয়ে গেল ট্যাক্সিওয়ালার দিকে।

একগাদা মালপত্র আর বেশি সংখ্যক যাত্রীর জন্য বলতে গেলে ওদের স্টেশন যাত্রা খুব আরামদায়ক হল না।

ওরা যখন স্টেশনে পৌঁছল তখন হোগার্টস এক্সপ্রেস প্লাটফরমে ঢুকে গেছে। চতুর্দিকে যাত্রীদের কলরব। ইঞ্জিন থেকে মেঘের মতো কয়লার ধোঁয়া উড়ছে হোগার্টের ছাত্র–ছাত্রী আর তাদের বাবা-মা ধোয়াতে ছেয়ে গেছে মনে হয় কালো কালো ঘোট ঘোট ভূত। হ্যারি রন–হারমিওন মোটামুটি খালি একটা কামরায় ঢুকল। মাঝখানের বগিতে ভাল জায়গা পেয়ে গেল। ওরা সিটে মালপত্র রেখে স্টেশনে নামল। মিসেস উইসলি চার্লি আর বিল ওদের সুন্দর যাত্রা কামনা করে একে একে বুকে টেনে নিল। মিসেস উইসলির চোখে জল। আবার কবে দেখা হবে জানেন না।

চার্লি বলল–মনে হয় আবার তোমাদের সঙ্গে শীঘ্র দেখা হবে।

–কেন? ফ্রেড বড় বড় চোখ করে বলল।

–পার্সিকে বলবে না। ক্লাসিফাইড গোপন খবর। এখনও কেউ জানে না। বিল বলল, মিনিস্ট্রি সময় বুঝে জানাবে।

বিল বলল–আমার আবার ইচ্ছে করছে হোগার্টে পড়তে যাই।

–কেন? জর্জ বলল।

-এবার তোমাদের বছরটা দারুণ কাটবে, বিল বলল–সময় পেলে আমি একবার ঘুরে আসব। মন কেমন করে, গ্রেট হল, কিডিচ মাঠ, নিষিদ্ধ বন দেখার জন্য।

ঠিক সময় ট্রেন ছাড়ার হুইসেল বাজল, গার্ড সবুজ ফ্ল্যাগ নাড়তে লাগলেন। মিসেস উইসলি ছেলে–মেয়েদের একরকম ধাক্কাতে ধাক্কাতে ট্রেনে তুলে দিলেন।

হারমিওন মিসেস উইসলিকে বলল–ধন্যবাদ, আপনার কাছে দারুণ আনন্দের মধ্যে দিয়ে ছুটি কাটালাম। নিজের বাড়ির মতোই ভাল লেগেছে।

হ্যারি দরজা বন্ধ করে জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে একই কথা বলল।

–বড়দিনে কিন্তু তোমরা আবার আসবে। মিসেস উইসলি বললেন।–ওখানে সবাই মিলেমিশে থাকবে।

রন বলল–মা তোমরা মনে হয় কোন একটা কথা লুকাচ্ছ।

–আজ সন্ধ্যাবেলা পৌঁছে জানতে পারবে! দারুণ ব্যাপার। শুনেছি ওখানে অনেক আইনের পরিবর্তন হয়েছে।

–কি আইন? হ্যারি–রন–ফ্রেড–জর্জ একই সঙ্গে বলল।

–আমি বলবো না। বলবেন প্রফেসর ডাম্বলডোর। আবার তোমাদের বলছি ভালভাবে থাকবে, মন দিয়ে পড়াশুনা করবে।

ট্রেনের তীব্র হুইসেল! এবার ট্রেন ধীরে ধীরে প্লাটফরমের বাইরে মাঠ–ঘাট বন–জঙ্গল–পাহাড় ছেড়ে হোগার্টে যাবে।

আবার জর্জ মায়ের কাছে আইনের পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইল।

–কি সব বদলাচ্ছে মা?

কিন্তু মিসেস উইসলি হাসলেন। কিছু বললেন না হাত নেড়ে শুভযাত্রা জানালেন। বিল, চার্লি খুবই হতাশ হল।

হ্যারি বসবার জন্য সিট পরিষ্কার করল তারপর লাল একটা কাপড় দিয়ে পিগ উইগের খাঁচাটা ঢেকে দিল। পিগ উইগ বড়ই চেঁচাচ্ছে। সেই সঙ্গে নিজের ড্রেস বদলাল। রনও তাই করল।

ও বলল–আশ্চর্য ব্যাপার ওয়ার্ল্ডকাপে বেগম্যান একটা কিছুর আভাষ দিয়েছিলেন; কিন্তু সেটা যে কি, তা তিনি বলেননি।… আশ্চর্য লাগছে আমার মা জেনেও সে সম্বন্ধে কিছুই বললেন না।

হারমিওন ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করার ইঙ্গিত দিল।… আঙ্গুল দিয়ে পাশের কম্পার্টমেন্ট দেখাল। পাশের কামরা থেকে একটা পরিচিত চাপাগলার স্বর শুনতে পেল।

–বাবা কিন্তু আমাকে হোগার্টের বদলে ডার্মস্ট্রংগ-এ পাঠাতে চেয়েছিলেন। তোমাদের বলিনি। হেডমাস্টারের সঙ্গে তার খুব ভাব। ডাম্বলডোর সম্বন্ধে তার মত কি তোমরা তো জান–দারুণ মাডব্লড লাভার। ওদিকে মা চান না বেশি দূরে যাই। বাবা বলেন, ড্রামসাংগদের শিক্ষা পদ্ধতি বিশেষ করে ডার্কআর্টসের বিষয়ে উন্নত। ওখানকার ছেলেমেয়েদের ওই বিদ্যা ভালোভাবেই শিখে, আমাদের মতো শুধুমাত্র যেনতেন আত্মরক্ষামূলক নয়।

হারমিওন ম্যালফয়ের কুৎসিত ভাষা শুনতে চায় না, তাই পা টিপে টিপে দরজাটা বন্ধ করে দিল।

ও রেগে বলল–তাহলে ওর হোগার্টস পছন্দ হচ্ছে না, ড্রামসস্ট্রাংগ যেতে চায়। বাদরটা গেলেই বাঁচি।

হ্যারি বলল–ওটা বুঝি আর একটা জাদু স্কুল?

হ্যাঁ, ঠিক বলেছ, হারমিওন বলে, এর যথেষ্ট দুর্নাম তবে অ্যান অ্যাপ্রাইজল অফ ম্যাজিক্যাল এডুকেশন ইন ইউরোপে যে এর ডার্ক আর্টসের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

রন ভাসাভাসা ভাবে বলল–বোধহয় আমি শুনেছি।–ওই স্কুল কোথায়, কোন রাজ্যে?

হারমিওন বলল–আমাদের জানার বাইরে। হ্যারি বলল–জানার অসুবিধে? দুই স্কুলের মধ্যে বহুদিনের বিরোধ। সব ম্যাজিক স্কুলের মধ্যে এই বিরোধ নতুন কিছু নয়। ডারমসস্ট্রাংগে আর বকসব্যাটন চায় কেউ যেন তাদের গোপনীয় বিষয় চুরি না করতে পারে এবং তাদের সম্পর্কে জানতে না পারে, হারমিওন সোজাসুজি বলল।

–রন হাসতে হাসতে বলল–দুটো স্কুলই আয়তনে সমান, তাহলে তাদের এই বিরাট ক্যাসেল কেমন করে লুকিয়ে রাখা যায়?

হারমিওন বলল, হোর্টও লুকিয়ে আছে। সকলেই জানে… হোগার্ট একটা ইতিহাস।

–তাহলে তোমার কথাতে বলি, হোগার্ট লুকিয়ে থাকবে কেন?

-এই জন্য যে ওটা জাদুমুগ্ধ, হারমিওন বলল-একজন মাগল যদি ওটা দেখে তাহলে একটা ভগ্নস্তূপ মনে করবে–দরজার মুখে দেখবে, ভেতরে যাওয়া বিপজ্জনক, সুরক্ষিত নয়।

–তাহলে ডারমসস্ট্রাংগর বাইরের লোকের একই দৃষ্টি?

হারমিওন বলল–হতে পারে, অথবা মাগল রিপেলিং চার্মস আছে। অনেকটা ওয়ার্লড কাপের স্টেডিয়ামের মতো। বিদেশী জাদুকরদের হোগার্ট স্কুল খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।

–সবটুকু বুঝিনি, একটু ব্যাখ্যা করবে।

–তুমি একটা বড় বাড়ি ইন্দ্রজালে আবদ্ধ করে রাখতে পার, কিন্তু একটা মানচিত্রে তো তা পারবে না।

হ্যারি বলল–হ্যাঁ, তাই তো।

–তবে আমার মনে হয় ডারমস্ট্রাংগ… সুদুর উত্তরে, হারমিওন ভেবে চিন্তে বলল, ভীষণ শীতের দেশ–কারণ ওরা স্কুলের ইউনিফর্মের সঙ্গে চার চারটে ক্যাপ পরে।

–তাহলে এটাই ভাবা যায়, রন নাটকীয়ভাবে বলল, ম্যালফয়কে পাহাড়ের শিলাখণ্ড থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া যেত এবং একে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া যেত। ওর মা ওকে কেন যে ভালবাসে ওকে!

বৃষ্টির দাপট আরও বেড়ে গেল। ট্রেন উত্তরপথে ঘিস ঘিস করে চলল। আকাশ ঘন অন্ধকার, কামরা আরও বেশি। দেখার জন্য লণ্ঠন জ্বালাতে হল। লাঞ্চ ট্রলি ঠনঠন শব্দ করতে করতে করিডোর দিয়ে চলল। হ্যারির দারুণ ক্ষিধে পেয়েছে।

একগাদা কলড্রন কেক তুলে নিল।

সন্ধ্যে বেলা ওদের অনেক বন্ধু সিমাস ফিনিগান, ডিন টমাস, নেভিল লংবটম ওদের কামরায় বসে জমিয়ে আড্ডা দিল। নেভিল লংবটম ভীষণ ভুলো মনের ছেলে, কিছুই মনে রাখতে পারে না। ওর গ্রান্ডমাদারের এক ভয়ঙ্কর স্বভাবের জাদুকরের কাছে ও মানুষ হয়েছে। সিমাস তখনও তার আয়ারল্যান্ডের গোলাপ বুকে এঁটে রেখেছে। কিন্তু গোলাপটির জাদুশক্তি একটু একটু করে কমছে। তাহলেও মাঝে মাঝে ভেসে আসে ট্রয়! মুলেট! মোরান! কিন্তু শব্দ অতি ক্ষীণ।

ওদের গল্পে শুধু কিডিচ, কিডিচ মাঠ, খেলা ইত্যাদি শুনতে শুনতে হারমিওনের মাথা ধরে গেছে। ও নিষ্কৃতি পাবার জন্য স্ট্যান্ডার্ড বুক অফ স্পেলস, গ্রেড ফোর এ ডুবে গিয়ে সামননিং চার্ম শিখতে লাগল।

ঈর্ষান্বিত নেভিল অন্যদের কাছ থেকে কিডিচ খেলার কথা শুনতে লাগল। ম্যাচ কবে শেষ হয়ে গেছে তাও ওরা কথাবার্তা বলে যেন পুরনো খেলা বাঁচিয়ে রাখতে চায়।

ও বলল–ওর গ্রান্ডমাদার চায়নি যে ও খেলা দেখুক। তাই ওর জন্য টিকেটও কেনেনি। শুনতে মজা লাগে তাই না?

রন বলল–ঠিক বলেছ, যাকগে একটা জিনিস তোমায় দেখাচ্ছি।

ও লাগেজ রেক থেকে ট্রাঙ্কটা নামাল। তার মধ্যে থেকে ভিক্টর কামের ছোট মূর্তি বার করল।

নেভিল বলল–ওহ! চমৎকার! ওর কথার মধ্যে খানিকটা ঈর্ষার সুর।

রন বলল–আমরা ওকে টপ বক্স থেকে চাক্ষুস দেখেছি।

-এই প্রথম, এই শেষ উইসলি

ড্র্যাকো ম্যালফয় দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়েছে। পেছনে ওর দুই চামচা–ক্রাব আর গোয়েলে। ও ছুটিতে বেহিসেবি খেয়ে আরও মোটা হয়ে গেছে। সন্দেহ নেই। ওরা ওদের কথাবার্তা শুনেছে। ডিন আর সিমাস দরজা সামান্য খুলে রেখেছিল।

–আমি কিন্তু তোমাকে আমাদের সঙ্গে বসতে বলছি না। হ্যারি চাছাছোলাভাবে ওদের বলল।

পিগ উইগের ঢাকা খাঁচাটা দেখিয়ে ম্যালফয় বক্র দৃষ্টিতে বলল–ওটা কী?

রন জবাব দিল না।

ট্রেন চলেছে–খাঁচা দুলছে, ঢাকা দেওয়া কাপড়টাও দুলছে।

হ্যারি জামাটাকে ঠিক করে রাখতে গেলে ম্যালফয় তার আগেই জামার হাতাটা ধরে টান মেরে খুলে দিয়েছে।

রনের মা রনকে সেকেন্ডহ্যান্ড রোব কিনে দিয়েছেন। সকলের নতুন, ওরটা পুরনো সামান্য রঙচটা। সেটা দেখে ম্যালফয়ের শয়তানী আনন্দ!

ম্যালফয় রনের বোরটা হাতে নিয়ে দোলাতে দোলাতে বলল-এই দেখো, দেখো কি সুন্দর… এটা কী রন? ওটা দেখে ক্রাব আর গোয়েলের হাসি থামে না।

–আরে উইসলি দারুণ ফ্যাশানেবল তো তুমি? ১৮৯০ সালের জামা? রন রেগে গিয়ে বলল–গোবর ও ম্যালফয়। ম্যালফয়ের হাত থেকে রোবটা এক ঝটকায় ছিনিয়ে নিল। ম্যালফয় শেয়ালের মত ধূর্ত হাসিতে সমস্ত কামরাটা ভরিয়ে দিল। ক্রাব আর গোয়েলে বাদ যাবে কেন?

–শুনলাম তুমিও নাকি হোগার্ট ছাড়ছ? আমার বাবা-মা আমাকে যে স্কুলে পাঠাচ্ছেন সেখানে অনেক খরচ। তোমরা খরচ করতে পারবে?

হারমিওন স্ট্যান্ডার্ড বুক অফ স্পেলের পাতা ওল্টাচ্ছিল। ম্যালফয়ের অসভ্য আচরণে বিরক্ত হয়ে বলল–শোন, তোমাদের যদি কোনও কাজ থাকে তাই কর। এখানে ফ্যাচফ্যাচ করে আমাদের বিরক্ত করবে না। তাছাড়া ডারমস ম্যাজিক স্কুল সম্বন্ধে আমরা কিছু জানি না।

–সে কি, জান না? তোমার বাবা, বড় ভাই মিনিস্ট্রিতে ভাল পোস্টে আছে, তারাও জানে না? উইসলির বাবা বড় পোস্ট হোল্ড করে না তাই ডারমস ম্যাজিক স্কুল সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নয়। ওর সামনে কেউ দরকারি কথা বলে না।

ম্যালফয়, ক্রাব ও গোয়েলের সঙ্গে হাসতে হাসতে ঘর ছেড়ে চলে গেল।

রন সিট থেকে উঠে স্লাইডিং দরজাটা সশব্দে বন্ধ করে দিতেই দরজার কাঁচ ঝন ঝন করে উঠল।

রন রাগে গড় গড় করে বলল, ব্যাটা সবসময় সবজান্তার মত কথা বলে। আমার বাবাকে সব বড় বড় অফিসাররা খাতির করে। অনেক আগেই বাবার প্রমোশন পাওয়া উচিত ছিল। আসলে বাবা কাউকে তোয়াজ টোয়াজ করেন না। যেমন আছেন তেমনই থাকতে ভালবাসেন।

হারমিওন বলল–তুমি তো জান ম্যালফয়ের এবং ওর বন্ধুদের সভ্যতা–ভব্যতা জ্ঞান কম… এইসব নিয়ে ওর সঙ্গে কথাবার্তা না বলাই ভাল।

–বুঝলে আমার পেছনে লাগলে…সুবিধা করতে পারবে না। কথাটা বলে রন আরও এক খামচা কলড্রন কেক তুলে নিল।

সারা রাস্তা রনের মেজাজ খারাপ। হোগার্ট পৌঁছতে আর বেশি বাকি নেই। নামতে হবে। ও সকলের মতই স্কুল ড্রেস পরে নিল। হোগার্ট এক্সপ্রেস ধীরে ধীরে হগসমেড স্টেশনে ঝিক ঝিক করতে করতে থামল।

ট্রেন থামলে হারমিওন ক্লার্কশঙ্ককে কোলে তুলে নিল। বাক্তে পিগ উইগের ঝটপটানি ও ছাড়া পাবার জন্য চিৎকার করছে। সেই যে বৃষ্টি পড়ে চলেছে তার ব্রিাম নেই। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে বালতি বালতি ফজল গায়ে মাথায় ঢেলে দিচ্ছে।

অনেক দূর থেকে হ্যারি হ্যাগ্রিডকে দেখতে পেল। গাঢ় অন্ধকার বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

ওকে দেখতে পেয়ে হ্যারি হাত তুলে বলে উঠল–হাই… হ্যাগ্রিড!

হ্যাগ্রিড হাত তুলে বলল–ভাল, খুব ভাল দেখা হবে গ্রেট হলে খাওয়া দাওয়ার সময়। হ্যাগ্রিডের ছাত্র–ছাত্রীদের গাইড করতে হবে। নতুন বছরের ছাত্ররা ওকে ঘিরে রেখেছে। নতুন ছাত্ররা হ্যাগ্রিডের সঙ্গে পাল তোলা নৌকা দিয়ে লেক অতিক্রম করবে।

হারমিওন নৌকোয় চড়বে না। হারমিওন বলল–আমি নৌকোতে চেপে যাবো, এই বৃষ্টি–বাদলের মধ্যে।

অনেক ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে ওরা অন্ধকারে বৃষ্টি মাথায় করে প্লাটফরম থেকে ধীরে ধীরে, যেখানে অনেক অশ্ববিহীন ঘোড়ার গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে, এসে দাঁড়াল। ওরা একটা খালি ক্যারেজে চাপল–হোগার্ট ক্যাসেলে যাবার জন্য।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *