২০. দ্য ডিমেন্টরস কিস

২০. দ্য ডিমেন্টরস কিস

এমন অপরিচিত কোন দলের একজনের সঙ্গে হ্যারির এর আগে কখনো দেখা হয়নি। কশ্যাংকস ওদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে; লুপিন, পেট্টিগ্রু এবং রন ওর পেছনে, যেন জোড়া পায়ের দৌড় প্রতিযোগী। এরপর যাচ্ছেন প্রফেসর স্নেইপ, একটু ওপরে ভেসে। নিজের হাতে ধরা নিজের জাদুর কাঠিটা ওর দিকেই তাক করা, ওভাবেই ওর হাতে ওটা ধরিয়ে দিয়েছে সাইরিয়াস। হ্যারি এবং হারমিওন সবচেয়ে পেছনে।

সুড়ঙ্গের ভেতরে ঢোকাটাই সবচেয়ে কঠিন। লুপিন, পেট্রি এবং রনকে কাত হয়ে ঢুকতে হয়েছে; এখনও পেট্টিগ্রুর দিকে জাদুর কাঠি তাক করে রয়েছেন লুপিন। এক সারিতে খুবই কষ্ট করে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। তখনও কুকশ্যাংকস সামনে। ঠিক ব্ল্যাক-এর পেছনে হ্যারি, তখনও স্নেইপকে ওদের সামনে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে; নিচু সিলিংয়ের সঙ্গে বাড়ি খাচ্ছে ওর মাথা। হ্যারির যেন মনে হলো এটা বন্ধ করার ব্যাপারে সাইরিয়াস-এর কোন চেষ্টা নেই।

তুমি বুঝতে পারছ এর তাৎপর্য? হঠাৎ হ্যারিকে জিজ্ঞেস করল সাইরিয়াস। পেট্টিগ্রুকে ধরিয়ে দেয়ার অর্থ?

তুমি অভিযোগ মুক্ত হয়ে যাবে, বলল হ্যারি।

হ্যা বলল সাইরিয়াস। কিন্তু আমি ঠিক জানি না–কেউ কখনও বলেছে কি না–যে আমিই তোমার গডফাদার।

হ্যাঁ, আমি জানি, বলল হ্যারি।

আচ্ছা তোমার পিতা–মাতা আমাকেই তোমার অভিভাবক বানিয়ে ছিলেন, একটু যেন আড়ষ্টভাবে বলল সাইরিয়াস। যদি তাদের কিছু হয়ে যায়।

অপেক্ষা করে রয়েছে হ্যারি। ও যা ভাবছে সাইরিয়াস কি তাই বোঝাতে চাইছে?

তুমি যদি তোমার আঙ্কল এবং আন্টির সঙ্গে থাকতে চাও, আমি সেটা বুঝব, বলল সাইরিয়াস। কিন্তু আচ্ছা ওটা ভেবে নিও। একবার যদি আমি অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পারি তুমি যদি চাও একটা ভিন্ন বাসা

হ্যারির পাকস্থলীতে যেন বিস্ফোরণ হলো।

কী–তোমার সঙ্গে থাকা? বলল সে, হঠাৎ বেরিয়ে থাকা একটা পাথরের সঙ্গে লাগল ওর মাথাটা। ডার্সলিদের ছেড়ে আসা?

নিশ্চয়ই, আমি ভেবেছিলাম তুমি সেটা চাইবে না, দ্রুত বলল সাইরিয়াস। আমি বুঝতে পারছি। শুধু ভেবেছিলাম

তুমি কী পাগল হলে? বলল হ্যারি, সাইরিয়াস-এর মতোই আবেগে বুজে এসেছে ওর গলা। অবশ্যই, আমি ডার্সলিদের ছেড়ে আসতেই চাইছি! তোমার কী কোন বাড়ি রয়েছে? আমি কখন ওখানে উঠতে পারব?

ঘুরে ওর দিকে তাকাল সাইরিয়াস; সিলিং হেঁচড়ে যাচ্ছে স্নেইপ-এর মাথা, কিন্তু ওদিকে সাইরিয়াস-এর কোন নজর নেই।

তুমি তাই চাও? বলল সে। সত্যিই?

হ্যাঁ, সত্যিই! বলল হ্যারি।

এই প্রথম বারের মতো ওর শুষ্ক চেহারায় সত্যিকারের একটা হাসি দেখতে পেল হ্যারি। এর ফলে যা দেখল হ্যারি সেটা সত্যি বিস্ময়কর, যেন অনাহারক্লিষ্ট কোন মুখোশের আড়াল থেকে ঝিলিক দিয়ে উঠল আরও দশ বছরের কম কোন মানুষ। মুহূর্তের জন্যে ওকে চেনা গিয়েছিল, ওর মা-বাবার বিয়ের দিনে সেই হাসি মুখের মানুষটি হিসেবে।

সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় পৌঁছানোর আগে আর ওদের মধ্যে কথা হলো না। সামনে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে কশ্যাংকস। গাছটার গেরোটার উপর থাবা চেপে ধরে আছে লুপিন, পেট্টিগ্রু এবং রন উপরে উঠে এলো কিন্তু কোন ডাল তেড়ে এলো না ওদের দিকে।

স্নেইপকে ঠেলে উপরে পাঠিয়ে দিল সাইরিয়াস। সরে দাঁড়িয়ে হ্যারি এবং হারমিওনকে বের করে দিল। সবশেষে বেরিয়ে এলে সে নিজে।

ঘন অন্ধকার ছেয়ে আছে চারদিকে, প্রাসাদের জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে একমাত্র আলো। কোন কথা নেই কারো মুখে, প্রাসাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলো ওরা। ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে তখনও পেট্টিগ্রু, কখনও কাঁদছে ইনিয়ে বিনিয়ে। হ্যারির মনটা উৎফুল্ল। ডার্সলিদের ছেড়ে আসতে যাচ্ছে সে। সাইরিয়াস ব্ল্যাক, তার বাবা-মায়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তার সঙ্গে থাকতে যাচ্ছে সে একটু আনমনা হয়ে গেল সে ও যখন ডার্সলিদের বলবে যে টেলিভিশনে ওরা যে আসামিটাকে দেখেছে তার সঙ্গেই সে থাকতে যাচ্ছে তখন কি যে হবে!

 যদি কোন গড়বড় কর পিটার, হুমকি দিলেন লুপিন। ওর জাদুর কাঠি তখনও পেট্টিগ্রুর বুকের দিকে তাক করা।

কোন কথা ছাড়াই নীরবে হেঁটে চলেছে ওরা। প্রাসাদের আলো বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে। সাইরিয়াস-এর সামনে এগিয়ে চলেছে স্নেইপ দুলতে দুলতে, বুকের সঙ্গে এসে লাগছে ওর থুতনি। এবং তারপর

মেঘটা সরে গেল। মাঠে হঠাৎ দেখা গেল হালকা ছায়া। পুরো দলটা যেন ম্লান করল চাঁদের আলোয়।

লুপিন, পেট্টিগ্রু এবং রন দাঁড়িয়ে পড়ল হঠাৎ, ওদের উপর হুমড়ি খেল স্নোইপ। বরফের মত জমে গেল সাইরিয়াস। হঠাৎ একটা হাত সামনে বাড়িয়ে দিয়ে হ্যারি এবং হারমিওনকে থামিয়ে দিল।

লুপিন-এর আবছা আকৃতিটা দেখতে পাচ্ছে হ্যারি। যেন শক্ত হয়ে গেছে ও। হঠাৎ ওর হাত–পা প্রবলভাবে কাঁপতে শুরু করল।

হা ঈশ্বর–রুদ্ধশ্বাসে বলল হারমিওন। আজ রাতে সে পোশনটা খায়নি! নিরাপদ নয় সে!

দৌড়াও, ফিসফিস করে বলল সাইরিয়াস। পালাও! এখনই!

কিন্তু হ্যারি দৌড়াতে পারল না। পেড়ি আর লুপিন-এর সঙ্গে হাতকড়া দিয়ে বাধা রন। ও লাফ দিল সামনে কিন্তু ওকে ধরে ফেলল ব্ল্যাক, ছুঁড়ে ফেলে দিল পেছনে।

ওটা আমার হাতে ছেড়ে দাও–দৌড়াও

প্রচণ্ড একটা ক্রুদ্ধ গর্জন শোনা গেল। লম্বা হচ্ছে লুপিন-এর মাথাটা। শরীরটাও। কাঁধটা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মুখে এবং হাতে গজিয়ে উঠছে বড় বড় লোম। হাতগুলো থাবা হয়ে যাচ্ছে। কশ্যাংকস-এর গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল, পিছু হটছে সে

ওয়েরউলফটা পেছন ফিরে ওর লম্বা চোয়ালটা দিয়ে কামড়ে দেয়ার চেষ্টা করল, হ্যারির পাশ থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল সাইরিয়াস। ও রূপান্তরিত হয়ে গেছে। বিশাল আকৃতির ভালুকের মতো কুকুরটা লাফিয়ে সামনে চলে গেল। হাতকড়া থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা যখন করছে ওয়েরউলফ, তখন দৈত্যাকার কুকুরটা ওটার ঘাড়ে কামড়ে ধরে পেছনে নিয়ে গেল। রন এবং পেট্টিগ্রুর কাছ থেকে দূরে। জম্ভ দুটো তখন পরস্পরকে আক্রমণ করছে যেন আটকে গেছে চোয়ালে চোয়ালে, থাবাগুলো পরস্পরকে ছিঁড়েখুড়ে ফেলার চেষ্টা করছে

হ্যারি দাঁড়িয়ে আছে, দৃশ্যটা দেখে তার আর নড়বার শক্তি নেই; লড়াইটা ওর সব মনোযোগ আকর্ষণ করে ফেলেছে, আর কিছু দেখবার ক্ষমতা নেই ওর। হারমিওন-এর চিৎকার ওকে সতর্ক করে দিল।

লুপিন-এর ফেলে দেয়া জাদুর কাঠিটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে পেট্টিগ্রু। ব্যান্ডেজ করা পায়ের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে রন কিন্তু স্থির হতে পারছে না, পড়ে গেল সে। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ হলো, আলোর ঝলকানি–মাটিতে পড়ে রয়েছে রন নিথর। আরেকটা শব্দ–আকাশে উড়ে গেল কুকশ্যাংকস, মাটিতে পড়ল থপ করে।

এক্সপেলিয়ার্মাস! চিৎকার করে উঠল হ্যারি, জাদুর কাঠিটা তাক করে আছে পেট্টিগ্রুর দিকে; লুপিন-এর জাদুর কাঠিটা আকাশে উড়ে হারিয়ে গেল। যেখানে আছ সেখানেই থাক! হ্যারি চিৎকার করল, দৌড়ালো সামনের দিকে।

দেরি হয়ে গেছে। এরই মধ্যে নিজেকে রূপান্তরিত করে ফেলল পেট্টিগ্রু। হ্যারি দেখতে পাচ্ছে রন-এর ছড়ানো হাতের হাতকড়ার ভেতর দিয়ে বেরিয়ে গেল ওর লেজটা, শুনতে পেল ঘাসের মধ্য দিয়ে দ্রুত সরে যাচ্ছে ইঁদুরে রূপান্তরিত হওয়া পেট্টিগ্রু।

নেকড়ের হুঙ্কার আর গুরুগুরু গর্জন শোনা গেল; ঘুরে দাঁড়িয়ে হ্যারি দেখল ওয়েরউফলটা দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে; বনের দিকে।

সাইরিয়াস, পালিয়েছে, পেট্টিগ্রু আবার রূপান্তরিত হয়ে গেছে! চিৎকার করে উঠল হ্যারি।

রক্ত ঝরছে সাইরিয়াস-এর গা থেকে; ওর মুখ আর পিঠ ফালাফালা করে কাটা, হ্যারির কথা শুনে আবার দৌড়াতে শুরু করল ও মাঠের ওপর দিয়ে।

হ্যারি আর হারমিওন দৌড়ে গেল রন-এর দিকে।

ও রনকে কী করল? ফিসফিস করে বলল হারমিওন। রন-এর চোখ অর্ধ নির্মিলিত; মুখ হা করা। ও বেঁচে রয়েছে, ওর শ্বাস–প্রশ্বাস শুনতে পাচ্ছে ওরা, কিন্তু মনে হচ্ছে ও ওদেরকে চিনতে পারছে না।

আমি জানি না।

অসহায়ের মতো এদিক ওদিক তাকাল হ্যারি। ব্ল্যাক এবং লুপিন দুজনেই নেই … এখন স্নেইপ ছাড়া ওদের সঙ্গী কেউ নেই, কিন্তু সেও অচেতন ঝুলে রয়েছে বাতাসে।

আমরা বরং প্রাসাদে ফিরে যাই এবং কাউকে ঘটনাটা খুলে বলি, বলল হ্যারি, ভাবতে চেষ্টা করছে সে। এসো–

কিন্তু তখন হঠাৎ করেই অন্ধকারের মধ্যে ওরা যেন একটা আর্তধ্বনি শুনতে পেল; যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে একটা কুকুর

সাইরিয়াস, বলল হ্যারি, পলকহীন তাকিয়ে রয়েছে অন্ধকারে।

মুহূর্তের সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সে, কিন্তু এই মুহূর্তে রন-এর জন্য তাদের কিছু করার নেই। অন্যদিকে আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে বিপদে পড়েছে ব্ল্যাক

দৌড়াতে শুরু করল হ্যারি, পেছন পেছন আসছে হারমিওন। কাতর ধ্বনিটা মনে হচ্ছে কাছের লেকটার ওখান থেকে আসছে। ওদিকে ছুটল ওরা, এবং দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ ঠাণ্ডা লাগল হ্যারির গায়ে, কিন্তু বুঝতে পারছে না কি ঘটছে

হঠাৎ কাতরধ্বনিটা থেমে গেল। লেকের কিনারায় পৌঁছে বুঝতে পারল কেন থেমে গেছে সাইরিয়াস আবার মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে। মাটিতে পড়ে রয়েছে সে, দুহাত দিয়ে মাথা আঁকড়ে ধরে আছে।

নুউউউ, যন্ত্রণায় কাতরে উঠল সে। নুউউউ প্লিজ

এবং তারপর হ্যারি দেখতে পেল ওদের। ডিমেন্টারস, কমপক্ষে একশজন, কালো একটা জমি পেরিয়ে লেকের উপর দিয়ে ওদের দিকে আসছে। ঘুরে দাঁড়াল সে, পরিচিত বরফ শীতল বোধটা দুদিক থেকেই যেন ওর ভেতরে প্রবেশ করছে, কুয়াশা ঝাঁপসা করে দিচ্ছে ওর দৃষ্টি; সবদিক থেকে আরও ডিমেন্টার এগিয়ে আসছে; ওদেরকে প্রায় ঘিরে ফেলছে …

হারমিওন, আনন্দের কিছু একটা ভাব! চিৎকার করল হ্যারি, জাদুর কাঠি তুলে ধরেছে, দৃষ্টি পরিষ্কার করার জন্যে প্রবলভাবে চোখ পিটপিট করছে, ভেতর থেকে উঠে আসা ক্ষীণ আর্তনাদটাকে মাথা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য নাড়ছে মাথা

আমি আমার গডফাদারের সঙ্গে থাকব। আমি ডার্সালিদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি।

নিজেকে বাধ্য করল সে সাইরিয়াস-এর কথা, এবং শুধু সাইরিয়াস-এর কথা, জোরে জোরে আওড়াতে লাগল: এক্সপেক্টো পেট্রোনাম! এক্সপেক্টো পেট্রোনাম!

কেঁপে উঠল ব্ল্যাক, গড়িয়ে পড়ল মাটিতে, পড়ে থাকল নিথর, মৃত্যুর মতই ফ্যাকাশে।

ও ঠিক হয়ে যাবে। আমি ওর সঙ্গে যাব ওর সঙ্গেই থাকব।

এক্সপেক্টো পেট্রোনাম! হারমিওন, আমাকে সাহায্য কর! এক্সপেক্টো পেট্রোনাম!

এক্সপেক্টো– ফিসফিস করে হারমিওন, এক্সপেক্টো-এক্সপেক্টো

কিন্তু আর বলতে পারছে না হারমিওন। ডিমেন্টাররা কাছে চলে এসেছে, মাত্র দশ ফিট দূরে। হ্যারি এবং হারমিওন-এর চারদিকে দেয়াল তৈরি করেছে, এবং আরও কাছে চলে আসছে,

এক্সপেক্টো পেট্রোনাম! চিৎকার করল হ্যারি, কানের ভেতরের আর্তনাদকে যেন ডুবিয়ে দিতে চাচ্ছে। এক্সপেক্টো পেট্রোনাম!

ওর জাদুর কাঠির মাথা থেকে চিকন রূপালী একটা রশ্মি বেরিয়ে এলো, ওদের ওপরে কুয়াশার মতো স্থির হয়ে থাকল। ঠিক সেই মুহূর্তে হ্যারি দেখল ওর পাশেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল হারমিওন। ও একা একেবারেই একা।

এক্সপেক্টো-এক্সপেক্টো পেট্রোনাম–

হাঁটুতে ঠাণ্ডা ঘাস লাগছে টের পেল হ্যারি। ওর চোখ আচ্ছন্ন করে ফেলেছে কুয়াশা। প্রবল চেষ্টায় সে মনে করবার চেষ্টা করছে–সাইরিয়াস নির্দোষ–নির্দোষ ও ঠিক হয়ে যাবে। আমি ওর সঙ্গে থাকব

এক্সপেক্টো পেট্রোনাম! ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে সে।

নিজের তৈরি আকৃতিহীন পেট্রোনাস-এর ক্ষীণ আলোয় হ্যারি দেখল ওর খুব কাছে দাঁড়িয়ে পড়ল একটা ডিমেন্টার। হ্যারির তৈরি রূপালী কুয়াশার মধ্যে দিয়ে ওটা আসতে পারছে না। ওটার কাপড়ের নিচ থেকে একটা মৃত সরু হাত বেরিয়ে এলো। যেন পেট্রোনাসটাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

না–না– রুদ্ধস্বরে বলল হ্যারি। সে নির্দোষ এক্সপেক্টো-এক্সপেক্টো পেট্রোনাম

ও বুঝতে পারছে ওরা ওকে দেখছে, ওদের সর্বনাশা নিঃশ্বাস ওর গায়ে এসে লাগছে যেন ওর চারদিকে অশুভ কোন বায়ু। সবচেয়ে কাছের ডিমেন্টারটি মনে হচ্ছে যেন ওকে ভালো করে দেখছে। তারপর দুটো পচন ধরা হাত বের করে নিজের মাথার উপর থেকে কাপড়টা সরিয়ে দিল।

যেখানে চোখ থাকার কথা ছিল, সেখানে রয়েছে পাতলা, ধূসর, ঘা ওঠা চামড়া, শূন্য কোটরের উপর টানা। কিন্তু একটা মুখ রয়েছে একটা গর্ত, আকৃতিহীন, বাতাস টেনে নিচ্ছে মৃত্যুর–শব্দে।

ভয়ে হাত–পা অবশ হয়ে গেল হ্যারির, সে আর নড়তে পারছে না কথাও বলতে পারছে না। ওর তৈরি পেট্রোনাসটা এক ফুয়ে যেন হারিয়ে গিয়ে মরে গেল।

সাদা কুয়াশা ওকে অন্ধ করে দিয়েছে। ওকে লড়তে হবে এক্সপেক্টো পেট্রোনাম দেখতে পাচ্ছে না এবং একটু দূরে পরিচিত চিৎকারটা শুনতে পাচ্ছে সে এক্সপেক্টো পেট্রোনাম কুয়াশার মধ্যেই সাইরিয়াস-এর জন্য হাত বাড়ালো সে, ওর হাতটা খুঁজে পেল ওরা ওকে নিয়ে যেতে পারবে না…

একজোড়া ঠাণ্ডা চটচটে হাত হ্যারির গলা জড়িয়ে ধরল হঠাৎ। ওর মুখটাকে জোর করে উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করছে … ওটার নিঃশ্বাস পড়ছে ওর মুখে, টের পাচ্ছে হ্যারি ওকেই প্রথমে শেষ করবে পচা গলিত দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস লাগছে ওর নাকে মায়ের চিৎকার কানে বাজছে ওর মনে হচ্ছে যেন ওটাই ওর শেষ শুনতে পাওয়া

এবং তারপর, কুয়াশার মধ্যে দিয়ে, যেটা ওকে ডুবিয়ে দিচ্ছিল, ওর মনে হলো যেন একটা রূপালী আলোর রেখা দেখতে পেল, উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে ..উপুড় হয়ে ঘাসের উপরে মুখ থুবড়ে পড়ল সে

দুর্বল, নড়তে পারছে না, কাঁপছে, অসুস্থ, মুখ নিচের দিকে, চোখ খুলল হ্যারি। চোখ ধাঁধানো আলো ওর চারদিকের ঘাসকে আলোকিত করেছে … চিৎকার থেমে গেছে, অশরীরী ঠাণ্ডাটা সরে যাচ্ছে ….

কিছু একটা তাড়িয়ে দিচ্ছে ডিমেন্টারদের ওটা সাইরিয়াস, হারমিওন এবং ওর চারদিকে ঘুরছে, ভয়ঙ্কর শব্দ দূরে সরে যাচ্ছে ডিমেন্টাররা। চলে যাচ্ছে ওরা

বাতাস আবার উষ্ণ হয়ে উঠছে …।

সমস্ত শক্তি একত্রিত করে মাথাটা কয়েক ইঞ্চি তুলল হ্যারি, দেখল আলোর মধ্যে একটা প্রাণী লেকের উপর দিয়ে ঘোড়ার মতো ছুটে যাচ্ছে। ঘামে ওর দৃষ্টি আচ্ছন্ন হয়ে গেছে, হ্যারি মনে করবার চেষ্টা করল কি ছিল ওটা … ইউনিকর্ন অর্থাৎ রূপকথার এক সিংওয়ালা ঘোড়ার মতো উজ্জ্বল ওটা। সচেতন থাকার জন্য নিজের সঙ্গে লড়ছে হ্যারি, দেখল লেকের অপর পাড়ে গিয়ে ওটা থেমে দাঁড়াল। মুহূর্তের জন্য হ্যারি দেখল, ওটারই উজ্জ্বলতায়, যেন কেউ একজন ওটাকে সাদরে ডেকে নিচ্ছে হাত তুলছে ওটাকে আদর করার জন্য সেজনকে ওর কাছে অদ্ভুতভাবে পরিচিত মনে হলো কিন্তু এটা হতে পারে না হ্যারি বুঝতে পারছে না। তার আর চিন্তা করার শক্তি নেই। শরীরের শেষ শক্তিটাও যেন নিঃশেষ হয়ে গেল। মাটিতে আছড়ে পড়ল ওর মাথা। অজ্ঞান হয়ে গেল হ্যারি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *