০৯. নির্মম পরাজয়

০৯. নির্মম পরাজয়

গ্রিফিন্ডর হাউজের সবাইকে আবার গ্রেট হলে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন প্রফেসর ডাম্বলডোর। দশ মিনিট পর ওখানে হাফলপাফ, র‍্যাভেনক্ল এবং স্লিথারিনরাও এসে উপস্থিত। সকলকেই বিভ্রান্ত লাগছে।

সবগুলো ক্যাসেল-এ আমাদের ভালো করে খুঁজতে হবে, বললেন প্রফেসর ডাম্বলডোর। এদিকে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল এবং ফ্লিটউইক হলঘরের সব দরজা বন্ধ করে দিলেন। নিরাপত্তার জন্যে তোমাদের সকলকে হলঘরেই রাত কাটাতে হবে। প্রিফেক্টরা হলঘরের প্রবেশপথে পাহারায় থাকবে। এবং হেডবয় আর হেডগার্লরা দায়িত্বে থাকবে যেন এর অন্যথা না হয়। যে কোন সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাতে হবে, পার্সির দিকে তাকালেন তিনি, ওকে খুবই গর্বিত এবং গুরুত্বপূর্ণ দেখাচ্ছিল। খবর দিতে হলে কোন একটি ভূতের মাধ্যমে পাঠাবে।

প্রফেসর ডাম্বলডোর থামলেন, হলঘর ছাড়তে উদ্যত হলেন, আবার বললেন, ও হ্যাঁ, তোমাদের প্রয়োজন হবে।

জাদুর কাঠি নাড়তেই লম্বা লম্বা টেবিলগুলো উড়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে সেঁটে গেল; আবার নাড়ালেন জাদুর কাঠি, মেঝেটা ভরে গেল শত শত গোলাপী স্লিপিং ব্যাগে।

ভালো করে ঘুমাও, নিজের পেছনে দরজাটা বন্ধ করতে করতে বললেন প্রফেসর ডাম্বলডোর।

মুহূর্তের মধ্যে হলঘরটা ভরে গেল শত শত উত্তেজিত কণ্ঠে; স্কুলের অন্য সবাইকে গ্রিফিন্ডররা বলছিল এইমাত্র ঘটে যাওয়া ঘটনাটা।

সবাই যার যার স্লিপিং ব্যাগে! চিৎকার করে উঠল পার্সি। আর কোন কথা নয়! দশ মিনিটের মধ্যে বাতি বন্ধ করে দেয়া হবে।

এসো, হ্যারি আর হারমিওনকে বলল রন। তিনজন তিনটা স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে এক কোণায় সরে গেলো।

তোমরা কী মনে করো ব্ল্যাক এখনো প্রাসাদেই রয়ে গেছে? উদ্বেগের সঙ্গে জানতে চাইল হারমিওন।

ডাম্বলডোর বোধয় ভাবছেন নিশ্চয়ই সেরকমই কিছু ভাবছেন, বলল রন।

সে যে আজকের রাতটাকেই বেছে নিয়েছে এটা খুবই ভাগ্যের কথা, বলল হারমিওন, ধরাচুড়া পড়েই স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে কথা বলছে ওরা। যে রাতটায় আমরা কেউই টাওয়ারে নেই

মনে হচ্ছে পালাতে পালাতে ওর সময় জ্ঞান লোপ পেয়েছিল, বলল রন। বুঝতে পারেনি আজকের রাতটা হ্যালোঈন-এর রাত। না হলে হঠাৎ করেই সে এখানে আসতে পারত।

ভয়ে কেঁপে উঠল হারমিওন।

ওদের চারপাশে সবাই একে অপরকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছে : ও এখানে ঢুকল কী করে?

সে হয়তো জানে কি করে বাতাসের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে হয়, কয়েক ফুট দূর থেকে একজন র‍্যাভেনক্ল বলে উঠল।

হয়তো ছদ্মবেশে, পঞ্চম বর্ষের একজন হাফলপাফ।

হয়তো উড়ে এসেছে, বলল ডিন থমাস।

বিশ্বাস করো আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে হোগার্টস-এর ইতিহাস পড়বার কষ্টটা করেছি? মেজাজ নিয়ে হারমিওন বলল হ্যারি আর রনকে।

বোধহয়, বলল রন, কেন?

কারণ, তোমরা জান প্রাসাদটি দেয়াল নয় আরো অতিরিক্ত কিছু দিয়ে সুরক্ষিত, বলল হারমিওন। এর ওপর অনেক রকমের জাদু কার্যকর রয়েছে, যেন কেউ গোপনে প্রবেশ করতে না পারে। তুমি এখানে বাতাসের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে পার না। ওই ডিমেন্টরদের বোকা বানিয়েছে যে ছদ্মবেশ আমি সেটা একবার দেখতে চাই। এখানে প্রবেশের প্রতিটি ক্ষেত্র ওরা পাহারা দিয়ে রেখেছে। ও যদি উড়ে আসত তবুও ওরা ওকে দেখতে পেত। এবং সবগুলো গোপন পথ ফিলচের জানা, ওগুলোয় নিশ্চয়ই পাহারা ছিল …।

বাতি নিভিয়ে দেয়া হচ্ছে, চিৎকার করে উঠল পার্সি। সবাই যার যার স্লিপিং ব্যাগে এবং আর কোন কথা নয়!

এ সঙ্গে সবগুলি মোমবাতি নিভে গেল। একমাত্র আলো যা রয়েছে সেটা আসছে রূপালী ভূতগুলো ছড়াচ্ছে, ঘুরে ফিরে ওরা প্রিফেক্টদের সঙ্গে গুরুতর কিসব আলোচনা করছে। হলঘরের জাদু করা সিলিং-এ বাইরের আকাশের মতোই তারারা সব মিট মিট করছে। তখনও চলছে ফিসফাস, তারপর ওই আলোর মধ্যে হ্যারির মনে হলো সে ঘুমিয়ে রয়েছে বাইরে তারা ভরা আকাশের নিচে মৃদুমন্দ বায়ুর মধ্যে।

প্রতি ঘন্টায় একজন করে শিক্ষক আসছেন, দেখে যাচ্ছেন সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে কি না। প্রায় ভোর তিনটায় যখন অনেক ছাত্রই ঘুমিয়ে গেছে, তখন প্রফেসর ডাম্বলডোর এলেন। হ্যারি খেয়াল করল উনি পার্সিকে খুঁজছেন, ও তখন স্লিপিং ব্যাগগুলোর মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্ছে, সবাইকে বলছে কথা না বলার জন্যে। হ্যারি, রন আর হারমিওনের কাছ থেকে সামান্য দূরে ছিল পার্সি, ডাম্বলডোরের পদশব্দ কাছে এগিয়ে আসতেই ওরা তিনজন ঘুমের ভান করে পড়ে রইল।

ওর কোন নিশানা পাওয়া গেল, প্রফেসর? ফিসফিস করে জানতে চাইল পার্সি।

না। এখানে সব ঠিকঠাক আছে তো?

সব কিছুই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, স্যার।

ঠিক আছে। এই রাতে সবাইকে আবার নিয়ে যাওয়ার কোন মানে হয় না। গ্রিফিন্ডরের ছবির ফুটোর জন্য অস্থায়ী একজন রক্ষক পাওয়া গেছে। কাল সকলকে ফিরিয়ে নেয়া যাবে।

আর স্থূলকায়ার কি অবস্থা, স্যার?

তৃতীয় তলায় আর্গিলশায়ারের ম্যাপে লুকিয়ে রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে পাস ওয়ার্ড ছাড়া সে ব্ল্যাককে ভেতরে ঢুকতে দিতে চায়নি। সেই কারণেই সে হামলা করেছে। এখনও বেচারার একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থা। একটু স্বাভাবিক হয়ে এলে মিস্টার ফিলচ তাকে যথাস্থানে ফিরিয়ে আনবেন।

হলের দরজাটা আবার কাঁচ ক্যাচ করে উঠল। খুলল। অনেকগুলো পদশব্দ শুনতে পেলো হ্যারি।

হেডমাস্টার? স্নেইপ এসেছেন। সতর্কভাবে কান পাতল হ্যারি। চতুর্থ তলার পুরোটাই তন্ন তন্ন খোঁজা হয়েছে, সে ওখানে নেই। মাটির নিচের ঘরগুলো খুঁজেছে ফিলচ। ওখানেও নেই।

অ্যাস্ট্রনমি টাওয়ার? প্রফেসর ট্রিলনির রুম? পেঁচাঁদের থাকার যায়গায়?

সব যায়গায়ই খোঁজা হয়েছে …

ঠিক আছে সেভেরাস। আমি আমি অবশ্য আশাকরি না এতক্ষণ ধরে এখানে ঘোরাফেরা করছে ব্ল্যাক।

স্নেইপ জিজ্ঞাসা করলেন, ও কীভাবে এখানে ঢুকল, সে সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা আছে প্রফেসর?

আরো ভালো করে শোনার জন্যে হাতের ওপর থেকে মাথাটা সামান্য তুলল হ্যারি।

অনেকগুলো, সেভেরাস এবং প্রত্যেকটিই অন্যটির চেয়ে ভিন্ন।

ওদের দিকে তাকিয়ে চোখ সামান্য খুলল হ্যারি। সরু করল। ওর দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে ডাম্বলডোর, কিন্তু ও পার্সির চেহারা পুরোটাই দেখতে পাচ্ছে, মনোযোগে আবিষ্ট হয়ে রয়েছে, ওর দৃষ্টির মধ্যে রয়েছে স্নেইপও, মনে হচ্ছে রেগে আছেন যেন।

আমাদের আলোচনাটা মনে আছে হেডমাস্টার–মানে এই টার্ম শুরু হওয়ার ঠিক আগে যে আলোচনা? বললেন স্নেইপ। কথা বলার সময় ঠোঁট নড়ছে কি নড়ছে না প্রফেসর স্নেইপের, যেন পার্সিকে শোনাতে চাচ্ছেন না নিজের কথা।

মনে আছে সেভেরাস, বললেন ডাম্বলডোর। ওর গলার স্বরে যেন একটা সতর্কবাণী রয়েছে।

মনে হচ্ছে-এটা একেবারেই অসম্ভব যে ভেতরের কোন সাহায্য ছাড়া ব্ল্যাক স্কুলের ভেতরে ঢুকতে পেরেছে। আমি আমার উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলাম যখন আপনি নিয়োগ

আমি বিশ্বাস করি না এই প্রাসাদের একজনও ব্ল্যাককে ভেতরে ঢুকতে সাহায্য করেছে, বললেন ডাম্বলডোর। এবং তার কণ্ঠস্বরে পরিষ্কার বোঝা গেল তিনি আলোচনাটাকে এখানেই থামিয়ে দিলেন, আর কোন কথাই বলতে পারলেন না প্রফেসর স্নেইপ।

আমাকে ডিমেন্টর্সদের কাছে যেতে হবে, ওদের বলেছিলাম, আমাদের খোঁজাখুঁজি শেষ হয়ে গেলে জানানো হবে, বললেন প্রফেসর ডাম্বলডোর।

ওরা সাহায্য করতে চায়নি, স্যার? জানতে চাইল পার্সি।

হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, ঠাণ্ডা স্বরে বললেন ডাম্বলডোর। কিন্তু আমি হেডমাস্টার থাকতে কোন ডিমেন্টররই এই প্রাসাদের চৌকাঠ মাড়াতে পারবে না।

সামান্য অপ্রস্তুত হলো পার্সি। নিঃশব্দে কিন্তু দ্রুত পা ফেলে হল থেকে বেরিয়ে গেলেন ডাম্বলডোর। চেহারায় তীব্র অসন্তোষের ছাপ নিয়ে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে প্রফেসর স্নেইপও বেরিয়ে গেলেন।

দুপাশে রন আর হারমিওনের দিকে তাকাল হ্যারি। ওরাও চোখ খুলে রেখেছে বইকি, তারা ঝিলমিল সিলিংটা প্রতিফলিত হচ্ছে ওদের চোখে।

ওসব কী নিয়ে কথা হচ্ছিল? মুখ খুলল রন।

পরের কয়দিন স্কুলে অন্য কোন আলোচনা ছিল না, সাইরিয়াস ব্ল্যাকের প্রসঙ্গ ছাড়া।

সে কিভাবে স্কুল-প্রাসাদে ঢুকতে পেরেছিল এ প্রশ্নের জবাবে প্রতিদিনই অসম্ভব অসম্ভব সব গল্প শোনা যেতে লাগল। হাফলপাফ হাউজের হান্নান অ্যাবট পরবর্তী হারবলজি ক্লাসের প্রায় পুরো সময়টাই উৎসুক শ্রোতাদের শুনিয়ে বেড়াল, কিভাবে ব্ল্যাক একটা ফুলের তোড়ায় রূপান্তরিত হতে পারে।

দেয়াল থেকে স্থূলকায়ার ছেঁড়া ক্যানভাসটি নামিয়ে ফেলা হলো। ওর যায়গায় স্যার ক্যাডোগান এবং তার ধূসর রঙের মোটাসোটা ঘোড়ার বাচ্চার ছবি টাঙিয়ে দেয়া হলো। অবশ্য এ ব্যাপারে কেউই খুশি হলো না। স্যার ক্যাডোগান তার জীবনের একাংশ কাটিয়েছেন মানুষকে ডুয়েল লড়তে আহ্বান করে আর অন্য অংশ কাটিয়েছেন অসম্ভব রকমের জটিল পাস ওয়ার্ডের কথা ভাবতে ভাবতে। শেষেরটা দিনে আবার কমপক্ষে দুবার পরিবর্তনও করতেন।

হাউ হাউ করা পাগল একটা, পার্সিকে বলল সিমাস ফিনিগান ক্ষিপ্ত হয়ে। আর কাউকে কি পাওয়া যায় না?

অন্য কোন ছবিই কাজটা করতে সম্মত হয়নি, বলল পার্সি। স্থূলকায়ার পরিণতি দেখে ভয় পেয়ে গেছে। স্যার ক্যাডোগানই একমাত্র যে স্বেচ্ছায় কাজটা করতে চেয়েছেন।

হ্যারি অবশ্য স্যার ক্যাডোগানকে নিয়ে মোটেই ভাবছে না। এখন ওর ওপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। শিক্ষকগণ কোন না অজুহাতে ওর সঙ্গে করিডোর ধরে হাটেন। আর (সম্ভবত ওর মায়ের নির্দেশে) পার্সি উইজলি সারাক্ষণ ওর পেছনে আঠার মত লেগে রয়েছে, একেবারে পাহারাদার কুকুরের মত। আরো বড় কথা প্রফেসর ম্যাকগোনাগল এমন গম্ভীর–বিষাদ মুখে হ্যারিকে ডেকে পাঠালেন যে ও মনে করেছিল কেউ বুঝি মারা গেছেন।

তোমার কাছে লুকিয়ে রাখার আর কোন অর্থ হয় না, পটার, গম্ভীরভাবে বললেন তিনি। জানি তোমার কাছে একটা বড় ধরনের আঘাত, কিন্তু সাইরিয়াস ব্ল্যাক

আমি জানি সে আমার পেছনে লেগেছে, ক্লান্ত স্বরে বলল হ্যারি। রনের মাকে ওর বাবা বলছেন আমি শুনেছি। মিস্টার উইজলি ম্যাজিক মিনিস্ট্রিতে কাজ করেন।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। দু এক মুহূর্তের জন্য অপলকে চেয়ে রইলেন হ্যারির দিকে, তারপর বললেন, আচ্ছা বেশ! তাহলে তো তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে সন্ধ্যায় কুইডিচ প্র্যাকটিসে তোমার যাওয়া উচিত নয়। শুধু টিম মেম্বারদের সঙ্গে ভর সন্ধ্যায় বাইরে কুইডিচ পিচে একেবারে অরক্ষিত অবস্থায়, পটার

শনিবার আমাদের প্রথম ম্যাচ, বলল হ্যারি, ক্ষেপে গেছে সে। আমাকে তো প্র্যাকটিস করতে হবে, প্রফেসর!

গভীর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল। হ্যারি জানে, গ্রিফিন্ডর টিমের সাফল্য সম্পর্কে প্রফেসর গভীরভাবে আগ্রহী; হাজার হোক তিনিই তো হ্যারির নামটা সিকার হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন। দম আটকে অপেক্ষা করছে সে।

হুমমমম… উঠে দাঁড়ালেন, জানালার কাছে গিয়ে কুইডিচ পিচটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে পিচটা আবছা দেখা যাচ্ছে। বেশ… ঈশ্বর জানেন, অবশেষে কাপটা আমরাই জিতেছি দেখতে চাই কিন্তু একই কথা, পটার…একজন শিক্ষক যদি উপস্থিত থাকেন প্রাকটিসের সময়] আমি স্বস্তি পাবো। ম্যাডাম হুচকে অনুরোধ করব তোমাদের প্রাকটিসে উপস্থিত থাকতে।

***

প্রথম কুইডিচ ম্যাচটা এগিয়ে আসতে আসতে আবহাওয়া আরো খারাপ হয়ে গেল। অকুতোভয় গ্রিফিন্ডর টিম ম্যাডাম হুচ-এর উপস্থিতিতে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে আরো কঠোরভাবে প্রাকটিস চালিয়ে যেতে লাগল। কিন্তু, তাদের শনিবারের ম্যাচের ঠিক চূড়ান্ত প্রাকটিসের আগে, অলিভার উড জানালো অনাকাংখিত খবরটা।

স্লিথারিন টিমের সঙ্গে আমরা খেলছি না! বলল সে, ক্ষেপে গেছে সে। এইমাত্র ফ্লিন্ট দেখা করতে এসেছিল। এর বদলে আমরা খেলছি হাফলপাফদের সঙ্গে।

কেন? টিমের বাকি সবাই এক সঙ্গে বলে উঠল।

ফ্লিন্ট-এর অজুহাত হচ্ছে যে ওদের সিকার-এর হাত এখনও ভালো হয়নি, দাঁতে দাঁত ঘষে বলল সে। কিন্তু ওরা যে কেন খেলতে চাচ্ছে না সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, এই আবহাওয়ায় খেলতে চায় না ওরা, যদি হেরে যায় 

সারা দিন ধরে প্রবল বাতাস আর বৃষ্টি, উড-এর কথার সঙ্গে সঙ্গে দূরে কোথাও থেকে বজ্রপাত হলো। শব্দ কানে এলো ওদের।

ম্যালফয়ের হাতের কিছুই হয়নি! বলল হ্যারি তীব্রভাবে। ও ভান করছে।

আমি জানি, কিন্তু প্রমাণ তো করতে পারব না, তিক্তস্বরে বলল উড। আর আমরা, সারাক্ষণ ওই সব চাল প্রাকটিস করেছি যে খেলাটা স্লিথারিনদের সঙ্গে হবে, এখন খেলতে হচ্ছে হাফলপাফদের সঙ্গে। ওদের খেলার স্টাইল ভিন্ন। ওদের এখন নতুন অধিনায়ক এবং সিকার, সেড্রিক ডিগরি–

ফিক ফিক করে হেসে উঠল অ্যাঞ্জেলিনা, আলিসিয়া এবং কেটি।

কী হলো? ভ্রূ কুঁচকালো উড। সিরিয়াস সময়ে ওদের হালকা আচরণ পছন্দ হয়নি।

ওই লম্বা, হ্যাণ্ডসাম ছেলেটা না? জিজ্ঞাসা করল অ্যাঞ্জেলিনা।

শক্ত সমর্থ এবং স্বল্পবাক, বলল কেটি, আবার ফিক ফিক করে হাসতে শুরু করল ওরা।

স্বল্পবাক কারণ দুটো শব্দ এক সঙ্গে বলতে পারে না জিহ্বার জড়তার কারণে, বলল অসহিষ্ণু ফ্রেড। বুঝতে পারছি না এত ভয় পাচ্ছো কেন, অলিভার, হাফলপাফকে গোণায় ধরে কে! শেষবার যখন খেলেছিলাম হ্যারি পাঁচ মিনিটের মধ্যে স্নিচটা ধরে ফেলেছিল মনে আছে?

এখন আমরা একেবারেই ভিন্ন পরিস্থিতিতে খেলছি! রীতিমত চিৎকার করে উঠল উড, চোখ দুটো সামান্য বেরিয়ে এসেছে। ডিগরি একটা শক্তিশালী দল তৈরি করে ফেলেছে! সে নিজে একজন তুখোড় সিকার! আমার ভয় ছিল তোমরা ব্যাপারটাকে হাল্কাভাবেই নেবে! আমাদের আরাম করবার সুযোগ নেই! আমাদের সজাগ থাকতে হবে! স্লিথারিনরা আমাদের অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলতে চাইছে আমাদের জিততেই হবে।

***

খেলার একদিন আগে বাতাসের শো শো আওয়াজ গর্জনে রূপান্তরিত হলো আর বৃষ্টি পড়তে লাগল যেন আকাশ ছাপিয়ে। ক্লাসরুম আর করিডোরে এত অন্ধকার যে অতিরিক্তি টর্চ আর বাতির প্রয়োজন পড়ল। স্লিথারিন টিমটাকে খুবই আত্মতৃপ্ত মনে হচ্ছে। এবং এদের মধ্যে ম্যালফয় সবচেয়ে খুশি।

আহ! যদি আমার হাতটা শুধু আর একটু ভালো হতো! দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বলল সে। বাইরে তখন ঝড়ো বাতাসের তাণ্ডব চলছে।

হ্যারির মাথায় তখন পরের দিনের ম্যাচ সম্পর্কে দুশ্চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নেই। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে অলিভার উড ওর কাছে এসে খেলা সম্পর্কে এটা ওটা টিপস দিয়ে যেতে লাগল। তৃতীয়বার এমন হলো যে উডের দীর্ঘ আলোচনার জন্য হ্যারি তার ডিফেন্স এগেনস্ট দ্য ডার্ক আর্ট ক্লাসে দশ মিনিট দেরী করে ফেলল। দৌড়াতে শুরু করল ও, পেছন পেছন চিৎকার করছে উড, খুব দ্রুত পাশ ফিরতে পারে, হ্যারি তুমি হয়তো গোত্তা খেয়ে ওকে পাশ কাটাতে চাইবে।

পিছলে গিয়ে ডিফেন্স এগেনস্ট দ্য ডার্ক আর্টস ক্লাসরুমের বাইরে থামল হ্যারি, টেনে দরজা খুলে সটান ভেতরে ঢুকল।

দুঃখিত, আমার দেরি হয়ে গেছে, প্রফেসর লুপিন, আমি…।

কিন্তু টেবিলের ওপার থেকে যিনি মুখ তুললেন তিনি প্রফেসর লুপিন নন, তিনি প্রফেসর স্নেইপ।

দশ মিনিট আগে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে পটার, সুতরাং গ্রিফিন্ডার থেকে দশ পয়েন্ট কাটা গেল। বসো।

কিন্তু হ্যারি নড়ল না।

প্রফেসর লুপিন কোথায়? জিজ্ঞাসা করল ও।

তিনি বলেছেন তিনি খুবই অসুস্থ, আজ ক্লাস নিতে পারবেন না,বাঁকা হেসে বললেন স্নেইপ। আমার মনে হয় তোমাকে বসতে বলা হয়েছে?

যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল হ্যারি।

ওর কী হয়েছে?

স্নেইপের কালো চোখ জোড়া চকচক করে উঠল।

মারা যাওয়ার মতো কিছু হয়নি, বললেন তিনি, তাকে দেখে মনে হলো এ রকমই কিছু হোক এটাই তিনি চেয়েছিলেন। গ্রিফিন্ডর থেকে আরো পাঁচ পয়েন্ট কাটা গেল, এরপর যদি তোমাকে আবার বসতে বলতে হয় তবে পঞ্চাশ পয়েন্ট কাটা যাবে।

ধীরে ধীরে হেঁটে গিয়ে সিটে বসল হ্যারি। ক্লাসের ওপর চোখ বুলিয়ে নিলেন স্নেইপ।

যেমন আমি বলছিলাম পটার বাধা দেয়ার আগে। এ পর্যন্ত যা পড়ানো হয়েছে সে সম্পর্কে প্রফেসর লুপিন কোথাও লিখে রেখে যাননি।

স্যার, আমরা এ পর্যন্ত বোগার্ট, লাল টুপি, কাপ্পাস এবং গ্রিন্ডিলো সম্পর্কে ক্লাস করেছি, বলল হারমিওন দ্রুত, এবং আমরা শুরু করতে যাচ্ছিলাম।

চুপ করো, শীতল স্বরে বললেন স্নেইপ। আমি তোমার কাছে জানতে চাইনি। আমি শুধু প্রফেসর লুপিনের শৃংখলার অভাবের কথা বলছিলাম।

এ পর্যন্ত আমরা যত ডিফেন্স এগেনস্ট দ্য ডার্ক আর্টস-এর টিচার পেয়েছি তাদের মধ্যে তিনিই সবার সেরা, সাহস করে বলে ফেলল ডিন থমাস। ক্লাসের সব দিক থেকে সম্মতির গুঞ্জন শোনা গেল। আগের চেয়ে ভয়ংকর দেখাল স্নেইপকে।

তোমরা খুব সহজেই সভ্রষ্ট হয়ে যাও। লুপিন তোমাদেরকে খাটায় না বললেই চলে–আমি তো মনে করি প্রথম বর্ষের ছাত্ররাও লাল টুপি আর গ্রিন্ডিলোকে সামাল দিতে সক্ষম হবে। আজ আমরা আলোচনা করব…।

হ্যারি ওকে দেখল দ্রুত পাতা উল্টে বইয়ের একেবারে শেষে অধ্যায়ে চলে যেতে। এবং তিনি নিশ্চয়ই জানেন ওরা সেটা করেনি।

ওয়েরউলফ (নেকড়েয় রূপান্তরিত মানব সন্তান), বললেন স্নেইপ।

কিন্তু স্যার, হারমিওন যেন নিজিকে আর ধরে রাখতে পারছে না, এখনও আমাদের ওয়েরউফ সম্পর্কে ক্লাস করা উচিত নয়, আমাদের হিংকিপাংক সম্পর্কে শুরু করার কথা।

মিস গ্রেঞ্জার, বললেন স্নেইপ, ভয়ংকর শান্ত স্বরে, আমার মনে হয় ক্লাসটা আমি নিচ্ছি, তুমি নও। এবং আমি তোমাদের সকলকে বলছি তিনশ চৌরানব্বই পৃষ্ঠা খোল। চারদিকে তাকালেন তিনি, সকলেই! এখনই!

অনেক তিক্ত তির্যক চাহনি এবং চাপা ক্রোধের অস্ফুট মন্তব্য শোনা গেল, সবাই বই খুলল।

তোমাদের মধ্যে কে বলতে পারে, কীভাবে আমরা নেকড়েয় রূপান্তরিত মানুষ এবং আসল নেকড়ের মধ্যে তফাত ধরতে পারবো? বললেন স্নেইপ।

সকলেই নীরব নিশ্চল বসে আছে। সকলেই শুধু হারমিওন ছাড়া, ওর হাত যেমন প্রায়ই করে তেমনি উঁচু করে ভোলা।

কে বলতে পারে? হারমিওনের তুলে ধরা হাত উপেক্ষা করে আবার জিজ্ঞাসা করলেন স্নেইপ। মুখের বাঁকা হাসিটা আবার ফিরে এসেছে। তোমরা কি বলতে চাও যে প্রফেসর লুপিন তোমাদেরকে মৌলিক পার্থক্যটা…।

আমরা তো বলেইছি, হঠাৎ বলে উঠল পার্বতী.ওয়েরউলফ পর্যন্ত আমরা যাইনি, আমরা অগ্রসর হচ্ছিলাম।

চুপ করো? দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উঠলেন স্নেইপ। বেশ, বেশ, কখনো ভাবিনি এমন একজন থার্ড ইয়ার ছাত্রের সঙ্গে দেখা হবে যে দেখলেও ওয়েরউলফ চিনতে পারবে না। প্রফেসর ডাম্বলডোরকে জানানো প্রয়োজন যে তোমরা সকলেই কত পেছনে পড়ে রয়েছ …।

প্লিজ, স্যার, বলল হারমিওন, তখনও ওর হাত তোলা, কয়েকটি ছোটখাট বিষয়ে ওয়েরউফ আসল নেকড়ে থেকে ভিন্ন। ওয়েরউলফের নাকটা।

এই নিয়ে দুইবার তুমি জিজ্ঞাসা না করা হলেও কথা বলেছ, মিস গ্রেঞ্জার, বললেন স্নেইপ, কণ্ঠস্বর শীতল। অসহ্য রকমের সবজান্তা হওয়ার জন্য গ্রিফিন্ডর থেকে আরো পাঁচ পয়েন্ট কাটা গেল।

লাল হয়ে গেল হারমিওন। হাত নামাল। একদষ্টে তাকিয়ে থাকল মেঝের দিকে, চোখ ছল ছল করছে। সবাই খরদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সেইপের দিকে, বোঝা গেল ক্লাসের প্রায় সবাই ওকে কি পরিমাণে ঘৃণা করে। রন জোরে বলে উঠল, আপনি একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন এবং ওর জানা আছে উত্তরটা! শুনতেই যদি না চান তাহলে জিজ্ঞাসা করা কেন?

ক্লাসের সকলেই তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারল যে অনেক বেশি বলে ফেলেছে রন। স্নেইপ ধীরে ধীরে রনের দিকে এগোলেন, পুরো ক্লাস দম বন্ধ করে রয়েছে।

ডিটেনশন উইজলি, মসৃণ স্বরে বললেন স্নেইপ, মুখটা নিয়ে গেছেন একেবারে রনের মুখের কাছে। এরপর যদি কখনও শুনি আমার পড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা করছ তাহলে তোমাকে খুব পস্তাতে হবে বলে দিচ্ছি।

এরপর পুরো ক্লাসে আর কেউই কোন শব্দ করল না। বসে বসে বই থেকে ওয়েরউফ সম্পর্কে নোট নিল।

খুবই দূর্বলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ওটা ভুল, কাপ্পা সাধারণত মঙ্গোলিয়ায় পাওয়া যায় প্রফেসর লুপিন একে দশে আট দিয়েছেন? আমি তো তিনও দিতাম না…

অবশেষে ঘন্টা পড়ল। কিন্তু স্নেইপ ওদের ধরে রাখলেন ক্লাসে।

তোমরা সকলে রচনা লিখে আমার কাছে জমা দেবে, বিষয় হলো, কিভাবে ওয়েরউলফ চেনা এবং হত্যা করা যায়। এ বিষয়ে পার্চমেন্টের দুটো রোল লিখতে হবে, এবং সোমবার সকালের মধ্যে জমা দিতে হবে। এই ক্লাসটার দিকে কারো একজনের নজর দেয়ার এটাই সময়। উইজলি তুমি অপেক্ষা করো তোমার ডিটেনশনটা ঠিক করতে হবে।

ক্লাসের অন্যদের সঙ্গে হ্যারি আর হারমিওনও ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে এলো। অপেক্ষা করল সবাই যতক্ষণ না নিরাপদ দূরত্বে চলে গেল, তারপর ফেটে পড়ল স্নেইপ সম্পর্কে ক্ষিপ্ত মন্তব্যে।

ডিফেন্স এগেনস্ট দ্য ডার্ক আর্টস-এর অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে তো স্নেইপ এ রকম করেন না, যদিও তিনিই কাজটা পেতে চান, হ্যারি বলল। লুপিনের পেছনে লেগেছেন কেন? তোমার কী মনে হয় বোগার্টের জন্যে?

আমি জানি না, বিষাদক্লিষ্ট কণ্ঠে জবাব দিল হারমিওন। কিন্তু আমি চাই প্রফেসর লুপিন যেন খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে ওঠেন…

মহাক্ষিপ্ত রন ওদের সঙ্গে যোগ দিল পাঁচ মিনিট পর।

জান আমাকে কী শাস্তি দিয়েছে ওই–(এমন একটা গালি দিল যে হারমিওনও তীব্রকণ্ঠে বলে উঠল রন)? হাসপাতালে আমাকে বেডপ্যান পরিস্কার করতে হবে। এবং কোন রকম জাদু ছাড়াই পরিষ্কার করতে হবে! ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে রন। হাতের মুঠো পাকানো। ব্ল্যাক কেন যে সেইপের অফিসে লুকিয়ে থাকেনি। তাহলে তো ওকে শেষ করে ফেলতে পারতো অন্তত আমাদের স্বার্থে!

***

পরদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠল হ্যারি, এত ভোরে যে তখনও অন্ধকার চারদিকে। মুহূর্তের জন্যে ভাবল বাতাসের গর্জন ওর ঘুম ভাঙিয়েছে, পরক্ষণেই ঘাড়ের কাছে হিমশীতল বাতাসের স্পর্শ পেল সে, শোয়া থেকে একেবারে খাড়া হয়ে বসল হ্যারি। হল্লাবাজ ভূত পিভস বাতাসে ভাসছে আর ওর কানে জোরে ফুঁ দিচ্ছে।

ও রকম করছ কেন? ক্ষেপে গিয়ে বলল হ্যারি।

জোরে আরেকটা ফুঁ দিয়ে হা হা করে হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল পিভস।

অ্যালার্ম ঘড়িটা কোন মতে খুঁজে পেল হ্যারি, দেখল ভোর সাড়ে চারটা মাত্র। পিভসকে একটা অভিশাপ দিয়ে আবার বিছানায় গড়িয়ে পড়ল সে, ঘুমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করল। কিন্তু ঘুম আর আসে না। বজ্রপাতের প্রচণ্ড শব্দ, প্রাসাদের দেয়ালে বাতাসের সগর্জন ঝাপটা এবং নিষিদ্ধ বনের গাছগুলোর মর্মর আর্তনাদ এসব উপেক্ষা করে কি আর ঘুমানো যায়! কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাকে যেতে হবে কুইডিচ পিচে, ওই প্রচণ্ড বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। অবশেষে ঘুমাবার চেষ্টাটা বাদই দিল হ্যারি। উঠে কাপড় পড়ে নিম্বাস দুই হাজারটা হাতে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো।

দরজা খুলতে কি যেন একটা ওর পায়ে লাগল। নুয়ে ঠিক সময় মত কশ্যাংকের লোমশ লেজটা ধরে ফেলল, টেনে বাইরে বের করে নিয়ে এলো।

রন তোমার সম্পর্কে ঠিক কথাই বলে, কশ্যাংকে লক্ষ্য করে বলল হ্যারি। আশেপাশে অনেক উঁদুর রয়েছে যাও না ওদের তাড়া করে বেড়াও, যাও না। পা দিয়ে কশ্যাংককে ঘোরানো সিঁড়িটা বরাবর নামিয়ে দিতে দিতে বলল, স্ক্যাবার্স এর পেছনে লাগবে না, ওকে একা থাকতে দাও।

কমনরুমে এসে ঝড়ের গর্জন আরো বেশি শোনা যেতে লাগল। ম্যাচ বাতিল যে হবে না এটা হ্যারি নিশ্চিত। ঝড়–বৃষ্টির মতো ছোটখাট ঘটনায় কুইডিচ ম্যাচ কখনও বাতিল করা হয় না। তারপরও সে উদ্বিগ্ন। করিডোরে সেড্রিক ডিগরিকে দেখিয়ে দিয়েছে উড; ডিগরি পঞ্চম বর্ষের ছাত্র এবং হ্যারির চেয়ে গায়ে গতরে অনেক বড়। সিকাররা সাধারণত হালকা পাতলা এবং অত্যন্ত দ্রুতগামী হয়; কিন্তু এই আবহাওয়ায় ডিগরির ওজনই ওর জন্য সুবিধাজনক হবে, অন্তত বাতাস তাকে ঠেলে কোর্সের বাইরে ফেলতে পারবে না।

ভোর না হওয়া পর্যন্ত আগুনের সামনে বসে হ্যারি সময়টা কাটিয়ে দিল। মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে কশ্যাংকের চুপি চুপি উপরে ওঠাটা বন্ধ করে এসেছে। নাস্তার সময় হলে নিজেই একা ছবির ফুটোটা দিয়ে অগ্রসর হলো।

দাঁড়াও এবং যুদ্ধ করো নোংরা কাপুরুষ কোথাকার! চিৎকার করে উঠল ছবির স্যার ক্যাডোগান।

ওহ, চুপ করো, ধমকে উঠল হ্যারি, হাই তুলল।

বড় এক বোল পরিজ নিয়ে বসল হ্যারি এবং টোস্ট ভেঙে মুখে পুরতে পুরতে শুরু করতে করতে টিমের অন্য সবাই এসে পড়ল।

খুবই কঠিন হবে, বলল উড, ও নিজে কিছুই খাচ্ছে না।

অলিভার দুশ্চিন্তা বাদ দাও তো, মোলায়েম স্বরে বলল এলিসিয়া, একটু আধটু বৃষ্টি আমরা পরোয়া করি না।

কিন্তু মুশকিল হলো বৃষ্টিটা একটু আধটুর চেয়ে অনেক বেশিই হচ্ছিল। কুইডিচ খেলার জনপ্রিয়তা পুরো স্কুলকেই ঝড়ো বৃষ্টির মধ্যে পিচে টেনে আনল। ড্রেসিং রুমে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে হ্যারি দেখল বিরাট একটা ছাতা মাথার ওপর ধরে স্টেডিয়ামের দিকে যেতে যেতে ওকে দেখে হাসছে আর আঙুল তুলে দেখাচ্ছে ম্যালফয়, ক্র্যাব আর গয়ল।

টিমের সকলে রক্তবর্ণ জার্সি পড়ে নিয়ে উডের প্রাক–ম্যাচ আলোচনার জন্যে। অপেক্ষা করছে। কিন্তু কোনো আলোচনা হলো না। ও কয়েকবার কথা বলতে চেষ্টা করল, কিন্তু অদ্ভুত ঢোক গেলার শব্দ ছাড়া আর কিছুই বের হলো না, হতাশায় মাথা নেড়ে ওদেরকে অনুসরণ করার জন্যে ইশারা করল উড।

বাতাস এত জোরে বইছে যে পিচের দিকে যেতে যেতে এপাশ ওপাশ হেলে পড়ল ওরা। দর্শকরা যদি কোন চিৎকার করেও থাকে বজ্রের গর্জনে কিছুই শুনতে পেল না। হ্যারির চশমার ওপর দিয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ছে, এর মধ্যে দিয়ে সে কিভাবে স্নিচটাকে দেখতে পাবে নিজেই ভেবে পাচ্ছে না।

হাফলপাফরা পিচের বিপরীত দিক থেকে আসছে, হলুদ জার্সি পরনে। দুই দলের অধিনায়ক পরস্পরের দিকে হেঁটে গেলো, করমর্দন করল, উডের দিকে তাকিয়ে ডিগরি হাসল, কিন্তু উডকে দেখে মনে হলো ওর চোয়াল আঁটকে গেছে, শুধু মাথা নেড়ে প্রত্যুত্তর দিল সে। হ্যারি দেখল ম্যাডাম হুচ-এর মুখ থেকে নিঃসৃত হলো,যার যার ব্রুমে চড়ো। কাদার ভেতর প্যাঁচ প্যাঁচ শব্দের মধ্যে দিয়ে হ্যারি ওর ডান পা তুলে নিম্বাস দুহাজারের উপর দিয়ে ঘুরিয়ে আনল। ম্যাডাম হুচ হুইসল বাজালেন, দূর থেকে তীব্র একটা শব্দ ভেসে এলো–ছুটতে শুরু করল সবাই।

দ্রুত ওপরে উঠে গেল হ্যারি কিন্তু বাতাসে কাঁপছে ওর নিম্বাস। যত জোরে সম্ভব ওটাকে আঁকড়ে ধরল সে, ঘুরল, চোখ সরু করে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।

পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ভিজে সারা হ্যারি এবং ঠাণ্ডায় প্রায় জমে গেল, এর মধ্যে স্নিচ দূরের কথা নিজের টিমের প্লেয়ারদেরই দেখতে পাচ্ছে না সে। পিচের ওপর দিয়ে সামনে পেছনে উড়ে যাচ্ছে সে, আবছা লাল এবং হলুদ মূর্তিগুলোর পাশ দিয়ে সঁত সাত করে উড়ে যাচ্ছে, খেলার অন্যদিকে যে কি হচ্ছে কোন ধারণা নেই। বাতাসের তোড়ে খেলার ধারাবিবরণীও শুনতে পাচ্ছে না। দু দুবার হ্যারিকে প্রায় ফেলে দিয়েছিল একজন ব্লাজার; চশমার কাঁচের ওপর বৃষ্টির ধারা ওর দৃষ্টি এমনভাবে ঝাঁপসা করে দিয়েছে যে দেখতেই পায়নি আসছে ওরা।

সময়ের ধারণা হারিয়ে ফেলল সে। ব্রুমটাকে সোজা করে ধরে রাখাটাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আঁধার আরো ঘনিয়ে এলো, যেন রাত স্থির করেছে তাড়াতাড়ি চলে আসবে। দুবার আরেকজন প্লেয়ারকে প্রায় মেরেই বসেছিল আরকি, বুঝতেও পারেনি নিজের দলের না অন্যপক্ষের প্লেয়ার সে। সবাই এত ভিজে গেছে আর বৃষ্টি এত ঘন হয়ে পড়ছে যে সে বুঝতেই পারছে না তফাতটা।

প্রথম বিদ্যুৎ চমকের সঙ্গে সঙ্গে বেজে উঠল ম্যাডাম হুচ-এর হুইসল; ঘন বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে হ্যারি শুধু উডের আবছা মূর্তিটা দেখতে পেলো, ওকে মাটিতে নামার সংকেত দিচ্ছে। পুরো দলটা ঝপ করে নামল কাদার ওপর।

আমি বলেছি সময় শেষ! দলের উদ্দেশ্যে গর্জন করে উঠল উড। এদিকে এসো, এদিকে।

পিচের ধারে বড় একটা ছাতার নিচে সবাই জড়ো হলো; চোখ থেকে চশমাটা খুলে তাড়াতাড়ি মুছে নিল হ্যারি।

স্কোর কত?

আমরা পঞ্চাশ পয়েন্ট বেশি, বলল উড, কিন্তু তাড়াতাড়ি স্নিচটা কজা করতে পারলে আমাদেরকে রাতের বেলায় খেলতে হবে।

কিন্তু চোখে যতক্ষণ চশমা রয়েছে আমার কিচ্ছুটি করবার নেই, অসহিষ্ণুভাবে বলল হ্যারি চশমাটা দোলাতে দোলাতে।

ঠিক সেই মুহূর্তে হারমিওন এসে দাঁড়াল ওর পেছনে; মাথার ওপর ওর বর্ষাতিটা ধরা। ওর মুখটা কি এক ব্যাখ্যার অতীত আনন্দে উদ্ভাসিত।

দেখি চশমাটা আমার কাছে দাও তো জলদি!

ওর হাতে চশমাটা দিল হ্যারি, বিস্ময়ে পুরো দলটা দেখছে, চশমায় জাদুর কাঠিটা ছোঁয়াল হারমিওন, বলল, ইমপারভাইয়াস!

দেখো! হ্যারির হাতে চশমা ফিরিয়ে দিতে দিতে,এর ওতে আর বৃষ্টির পানি লাগবে না!

উডকে দেখে মনে হলো এখনই চুমু খেয়ে ফেলবে হারমিওনকে।

অসাধারণ! ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল ওর উদ্দেশ্যে, ততক্ষণে ও মিলিয়ে গেছে ভীড়ের মধ্যে। ও.কে. চলো এবার যাওয়া যাক।

হারমিওনের জাদু ওদের পক্ষে আসল কাজটা করল। হ্যারি তখনও ঠাণ্ডায় অসাড় হয়ে আছে, জীবনে এত ভেজা কখনও ভিজেনি সে, কিন্তু এখন সে দেখতে পাচ্ছে। নতুন উদ্যমে ব্রুমটাকে ঝড়ো বাতাসের মধ্যে দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে চলল, চারদিকে দেখছে লক্ষ্য সিচ, এক ব্লাজারকে এড়িয়ে, নিচু হয়ে ডিগরিকে ফাঁকি দিল, ও বিপরীত দিকে উড়ে যাচ্ছিল।

আবার বজ্রের গর্জন শোনা গেল, পরক্ষণেই বিদ্যুতের চমক। খেলাটা ক্রমেই আরো বিপদজনক হয়ে উঠছে। হ্যারিকে তাড়াতাড়ি স্নিচটা ধরতে হবে

ঘুরল সে, ইচ্ছা পিচের মধ্যেখানে যাবে, ঠিক সেই মুহূর্তে বিদ্যুতের আরেকটা চমক চারদিক আলোকিত হলো, সঙ্গে সঙ্গে কিছু একটা দেখল হ্যারি, ওর মনোযোগ আকৃষ্ট হলো ওদিকে: লোমবিশিষ্ট বিশাল কালো একটি কুকুরের ছায়ামূর্তি, স্থির নিশ্চল, সবচেয়ে ওপরের খালি আসনগুলোতে আকাশের পটভূমিকায় যেন আঁকা।

হ্যারির অসাড় আঙুলগুলো পিছলে গেল এবং ওর নিম্বাস কয়েক ফুট নেমে গেল। এক ঝাঁকিতে চোখের ওপর থেকে সিক্ত চুলগুলো সরিয়ে আবার আসনগুলোর দিকে তাকাল। নেই! হাওয়া হয়ে গেছে কুকুরটা।

হ্যারি! গ্রিফিন্ডর গোলপোস্ট থেকে উডের আর্তনাদ ভেসে এলো। হ্যারি তোমার পেছনে।

উদ্ভ্রান্তের মতো চারদিকে তাকাল হ্যারি। পিচের মধ্য দিয়ে ধেয়ে আসছে সেড্রিক ডিগরি এবং ওদের মাঝখানের বৃষ্টি ধৌত বাতাসে ক্ষুদে একটা সোনালী কণা

আতঙ্কের এক ধাক্কায় হ্যারি ব্রুমের হাতলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সিটাকে লক্ষ্য করে ধেয়ে গেল।

চলো! হুংকার ছাড়ল সে তার নিম্বাসের উদ্দেশ্যে, বৃষ্টি এক ঝাপটা দিয়ে গেল তার মুখে। আরো জোরে!

কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটছিল তখন। পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে রহস্যজনক একটা নীরবতা। বাতাস আগের মতোই জোরে বইছে কিন্তু গর্জন করতে ভুলে গেছে। যেন কেউ একজন শব্দটা বন্ধ করে দিয়েছে, হ্যারি কী হঠাৎ কালা হয়ে গেছে? হচ্ছেটা কী?

এরপর ঠাণ্ডার এক ভয়ানক স্রোত ওকে গ্রাস করল, ওর ভেতরে প্রবেশ করল, ঠিক সেই সময় ওর মনে হলো নিচে পিচের মধ্যে কারা যেন

চিন্তার আগেই হ্যারি স্নিচের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিচে পিচের দিকে তাকাল।

কমপক্ষে একশ ডিমেন্টরস দাঁড়িয়ে রয়েছে, ওদের লুকনো মুখগুলো উপরে হ্যারির দিকে তোলা। বরফ শীতল ছুরি যেন ওর বুকে কেউ মেরেছে, ভেতরটা কেটে দুই ভাগ করে ফেলেছে। এবং এরপর আবার চিৎকারটা শুনল হ্যারি … কেউ একজন আর্তনাদ করছে, আর্তনাদ করছে ওর মাথার ভেতর একজন মহিলা

হ্যারিকে নয়, না হ্যারি নয়, প্লিজ হ্যারিকে নয়?

সরে দাঁড়াও, বোকা মেয়ে এখন সরে দাঁড়াও

হ্যারিকে নয়, প্লিজ না, আমাকে নাও, ওর বদলে আমাকে মেরে ফেল।

অনুভূতিহীন সাদা কুয়াশার ঘূর্ণি হ্যারির মস্তিষ্ক দখল করে ফেলছে কী করছে সে? সে কেন উড়ছে? ওকে ওর সাহায্য করা দরকার সে মারা যাচ্ছে … তাকে হত্যা করা হবে

সে পড়ছে, শীতল কুয়াশার মধ্যে দিয়ে নিচে নামছে।

না, হ্যারি নয়! প্লিজ দয়া কর দয়া কর।

তীক্ষ একটা স্বর হাসছে, মহিলাটি চিৎকার করছে, এবং এরপর হ্যারির আর কিছু মনে নেই।

***

ভাগ্য ভালো মাটিটা নরম ছিল।

আমি নিশ্চিত ভেবেছিলাম ও মারা গেছে।

কিন্তু ওর চশমাটা পর্যন্ত ভাঙেনি।

ফিস ফিস করে বলা কথাগুলি শুনতে পাচ্ছে হ্যারি কিন্তু কোন অর্থ করতে পারছে না। কোথায় আছে কিছুই বুঝতে পারছে না, কিভাবে ওখানে পৌঁছেছে সে ধারণাও নেই, অথবা এখানে আসার আগে কি করছিল সেটাও মনে করতে পারছে না। শরীরের প্রতিটি ইঞ্চিতে তীব্র ব্যথা, যেন কেউ পিটিয়েছে ওকে।

আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভীতিকর দৃশ্য ছিল ওটা।

ভীতিকর…ভীতিকর বিষয় মাথা ঢাকা কালো মানুষ…ঠাণ্ডা…আর্তনাদ…

সট করে খুলে গেল ্যারির চোখ। হাসপাতালে শুয়ে রয়েছে সে। আপাদমস্তক কর্দমাক্ত গ্রিফিন্ডর টিম ওর বেডের চারপাশে। রন আর হারমিওনও রয়েছে।

হ্যারি! বলল ফ্রেড, কাদা মাখা ওকে ফ্যাকাশে সাদা দেখাচ্ছে। এখন কেমন বোধ করছ?

হ্যারির স্মৃতি যেন ফাস্ট ফরওয়ার্ড হতে শুরু করল। বিদ্যুতের চমক দ্য গ্রিম দ্য সিচ এবং ডিমেন্টরস…

কী হয়েছে? বলল সে, এত আকস্মিকভাবে উঠে বসল যে সবাই হা হয়ে গেল।

তুমি পড়ে গিয়েছিলে, বলল ফ্রেড। তুমি মানে–কী–নিশ্চয়ই পঞ্চাশ ফিট ওপর থেকে পড়েছ?

আমরা ভেবেছিলাম তুমি মরেই গিয়েছ, বলল এলিসিয়া, কাঁপছে ও।

ছোট্ট একটা তীক্ষ্ণ শব্দ করল হারমিওন। ওর চোখ রক্তবর্ণ।

কিন্তু ম্যাচ, জিজ্ঞাসা করল হ্যারি। খেলার কী হলো? আবার খেলা হবে?

কেউ কিছু বলল না। ভয়ানক সত্যিটা হ্যারির ওপর পাথরের মত চেপে বসল।

আমরা নিশ্চয়ই–পরাজিত হইনি?

ডিগরি স্নিচটা ধরে ফেলেছিল, বলল জর্জ। ঠিক তুমি পড়ে যাওয়ার পরেই। ও বুঝতে পারেনি কি হয়েছে। যখন সে দেখল তুমি মাটিতে পড়ে রয়েছ সে খেলা বন্ধ করতে চেয়েছিল। আবার খেলতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা ভালোভাবে খেলেই বিজয়ী হয়েছে … উডও স্বীকার করে নিয়েছে।

উড কোথায়? জিজ্ঞাসা করল হ্যারি, হঠাৎ খেয়াল হলো উড নেই ওখানে।

এখনও গা ধুচ্ছে, বলল ফ্রেড। মনে হয় ও নিজেকে ডোবাতে চেষ্টা করছে।

হাটুতে মুখ গুজল হ্যারি, হাত দিয়ে মুঠো করে নিজের চুল ধরে টানল। ওর কাধ ধরে সজোরে ঝাঁকালো ফ্রেড।

এই হ্যারি, এমন করছ কেন, তুমি তো আগে কখনও স্নিচ ধরতে ব্যর্থ হওনি।

কোন একটা সময় নিশ্চয়ই থাকবে যখন তুমি ওটা ধরতে পারবে না, বলল জর্জ।

এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি, বলল ফ্রেড। আমরা একশ পয়েন্টে হেরেছি, ঠিক? এখন হাফলপাফ যদি র‍্যাভেন-এর কাছে হারে এবং আমরা র‍্যাভেনক্ল আর স্লিথারিন দুটোকেই হারাতে পারি।

হাফলপাফদের কমপক্ষে দুশ পয়েন্টে হারতে হবে, বলল জর্জ।

কিন্তু ওরা যদি র‍্যাভেনক্লদের হারিয়ে দেয়।

সব কিছু নির্ভর করছে পয়েন্টের ওপর–যে কোন দিকে একশ পয়েন্টের পার্থক্য থাকতে হবে

হ্যারি চুপচাপ শুয়ে আছে। একটি কথাও বলছে না। ওরা হারল এই প্রথমবারের মতো, ও একটা কুইডিচ ম্যাচ হেরেছে।

দশ মিনিট পর ম্যাডাম পমফ্রে এসে ওদের যেতে বললেন।

পরে এসে তোমাকে আবার দেখে যাব, বলল ফ্রেড। নিজেকে দোষ দিও হ্যারি, এখনও আমাদের সেরা সিকার তুমি।

পুরো দলটি বেরিয়ে গেল। পেছনে রেখে গেল কাদা মাটির দাগ। ম্যাডাম পমফ্রে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন, ওকে খুব খুশি দেখাচ্ছে না। রন এবং হারমিওন হ্যারির বিছানার কাছে এগিয়ে গেল।

ডাম্বলডোর সত্যিই খুব রেগে গেছেন, কম্পিত স্বরে বলল হারমিওন। এর আগে কখনও ওঁকে এমন করতে দেখিনি। তুমি যখন পড়তে শুরু করেছ দৌড়ে পিচের মধ্যে গেলেন, জাদুর কাঠিটা নাড়লেন, মাটিতে পড়বার আগে তোমার গতিটা একরকম ধীর হয়ে গেল। তারপর ওটা ঘোরালেন ডিমেন্টর্সদের দিকে। ওদের লক্ষ্য করে রূপালী কিছু ছুড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে ওরা স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে গেল

ওরা যে মাঠে এসেছিল সে জন্যে সাংঘাতিক ক্ষেপে গিয়েছিলেন উনি, আমরা শুনতে পেলাম বলছেন–

তারপর জাদু করে তোমাকে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিলেন, বলল রন। এতে করে ভাসতে ভাসতে তুমি স্কুলে গেলে সঙ্গে ডাম্বলডোরও গেলেন। সবাই ভেবেছিল তুমি বোধহয়।

ওর কথা আস্তে আস্তে থেমে গেল, কিন্তু ওসব শোনেইনি। সে ভাবছিল ডিমেন্টররা ওকে কি করল ভাবছে চিৎকারটা সম্পর্কে। চোখ তুলে দেখল রন আর হারমিওন উদ্বেগের সঙ্গে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে, তাড়তাড়ি সে এমন–কিছু হয়নি ধরনের প্রশ্ন করল একটা।

আমার নিম্বাসটা কি কেউ তুলে রেখেছে?

রন আর হারমিওন দ্রুত দৃষ্টি বিনিময় করল।

ইয়ে

কী? বলল হ্যারি, একজন থেকে অন্যজনের দিকে সরে গেল ওর দৃষ্টি।

মানে যখন তুমি পড়ে গেলে, ওটা উড়ে গেল, দ্বিধা জড়িত কণ্ঠে বলল হারমিওন।

তারপর?

তারপর ওটা গিয়ে আছড়ে ওহ হ্যারি–ওটা আছড়ে পড়ল হোমপিং উইলো গাছটার ওপর।

হ্যারির ভেতরটা পাক দিয়ে উঠল। গাছটা সাংঘাতিক রকমের উগ্র মেজাজের, একাকী দাঁড়িয়ে রয়েছে মাটিতে।

তারপর? উত্তরটা ভেবে ভয় পাচ্ছে হ্যারি।

তুমি তো জান হোমপিং উইলোর কথা, বলল রন। ওকে কেউ আঘাত করুক গাছটা মোটেই সেটা পছন্দ করে না।

তোমার জ্ঞান ফিরবার সামান্য আগে প্রফেসর ফ্লিটউইক ওটা নিয়ে এসেছেন, ছোট্ট করে বলল হারমিওন।

ধীরে ধীরে সে পায়ের কাছের ব্যাগটা তুলে উপুড় করল, কয়েকটা কাঠের টুকরা এবং গাছের একটা সরু ডাল পড়ল ব্যাগ থেকে। হ্যারির বিশ্বস্ত ব্রুমস্টিকের অবশিষ্ট।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *