১৮. ডব্বি’র পুরস্কার

১৮. ডব্বি’র পুরস্কার

হ্যারি, রন, জিনি আর লকহার্ট প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের অফিসের দরজায় এসে দাঁড়ালো ময়লা, চটচটে আঠাল রস আর রক্ত (হ্যারির ক্ষেত্রে) মাখানো। মুহূর্তের মধ্যে নিরবতা নেমে এলো। তারপর একটা চিৎকার শোনা গেল।

জিনি!

মিসেস উইসলির চিৎকার। আগুনের সামনে বসে কাঁদছিলেন সে অবস্থায় লাফিয়ে উঠলেন, সঙ্গে সঙ্গে মিস্টার উইসলিও। এবং দুজনেই জড়িয়ে ধরলেন তাদের মেয়েকে।

হ্যারি, অবশ্য তাকিয়ে ছিল ওদের কে ছাড়িয়ে। প্রফেসর ডাম্বলডোর দাঁড়িয়ে আছেন চুল্লির পাশে, হাস্যোজ্জ্বল, প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের পাশেই, লম্বা করে শ্বাস নিচ্ছিলেন তিনি বুক চেপে ধরে। হুউশ করে ফোক্স হ্যারির কানের পাশ দিয়ে এবং ডাম্বলডোরের কাঁধের উপর গিয়ে বসল। ঠিক এই সময়ই মিসেস উইসলি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন হ্যারি আর রনকে।

তোমরা ওকে বাঁচিয়েছ! তোমরা ওকে বাঁচিয়েছ! কিভাবে করলে তোমরা?

আমার মনে হয় আমরা সবাই জানতে চাই সেটা, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল দূর্বলভাবে।

মিসেস উইসলি হ্যারিকে ছেড়ে দিলেন, একটু দ্বিধা করে ও এগিয়ে গেলো ডেস্কের দিকে এবং ওটার উপর রাখল একটা বাছাই হ্যাট, রুবি পাথর খচিত তলোয়ার এবং রিডল-এর ডায়রির অবশিষ্ট যেটুকু ছিল।

তারপর ও বলতে শুরু করল সব কিছু। প্রায় পনরো মিনিট ধরে সে সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন সেই নিরবতার মধ্যে বলে গেল: সে বলল অশরিরী সেই কণ্ঠস্বরের কথা, কি ভাবে হারমিওন অবশেষে বুঝতে পারল যে আসলে সে পানির পাইপের মধ্যে থেকে আসা বাসিলিস্কের কথা শুনছে, কি ভাবে সে আর রন বনের ভেতরে মাকড়সাদের অনুসরণ করেছে, আরাগগ ওদের বলেছে বাসিলিস্কের শেষ শিকার কোথায় মারা গিয়েছিল; কিভাবে সে আন্দাজ করল যে মোমানিং মার্টল–ই সেই শেষ শিকার এবং চেম্বার অব সিক্রেটস-এর ঢোকার পথটা ওর বাথরুমেই হতে পারে…

চমৎকার, হ্যারি থামতেই প্রফেসর ম্যাকগোনাগল মন্তব্য করলেন, তাহলে তোমরী পেয়ে গিয়েছিলে প্রবেশ পথটা এবং পাবার পথে স্কুলের শখানেক নিয়ম ভেঙে, যদি আমি যোগ করতে পারি কিন্তু ওখান থেকে জান্তু বেরিয়ে আসলে কিভাবে তোমরা, পটার?

হ্যারি, তার কণ্ঠ ফ্যাসফ্যাসে হয়ে গেছে এত কথার পর, তাদের বলল সময়মত ফোকস-এর আগমন এবং বাছাই হ্যাটের তলোয়ার দেয়ার কথা। কিন্তু এরপর সে একটু আমতা আমতা করল, এ পর্যন্ত সে রিভলু-এর ডায়রি অথবা জিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছে। ও দাঁড়িয়ে মিসেস উইসলির কাঁধে মাথা দিয়ে, তখনও নিরবে পানি গড়াচ্ছে তার দুগাল বেয়ে। যদি ওরা ওকে বহিস্কার করে? ভয়ে ভয়ে ভাবল হ্যারি। রিডল-এর ডায়রি এখন কাজ করে না..? শেষ পর্যন্ত ওরা কি ভাবে প্রমাণ করবে যে রিডল–ই ওকে দিয়ে সব কিছু করিয়ে নিয়েছে?

সহজাত প্রবৃত্তিতে সে প্রফেসর ডাম্বলডোরের দিকে তাকাল, ক্ষীণ হাসলেন তিনি, তার অর্ধচন্দ্র চশমার কাছ থেকে আগুনের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে।

আমার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ, বললেন ডাম্বলডোর শান্তভাবে, যে কিভাবে এখানে লর্ড ভোলর্ডেমর্ট জিনিকে তার মায়াজালে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল, অথচ আমার সূত্রগুলো জানাচ্ছিল যে সে বর্তমানে আলবেনিয়ার জঙ্গলে লুকিয়ে রয়েছে।

স্বউষ্ণ, পরিপূর্ণ এবং চমৎকার স্বস্তির আবেগ বয়ে গেল হ্যারির মনের ওপর দিয়ে।

ও–ওটা আবার কি? বললেন মিস্টার উইসলি, কণ্ঠে হতবুদ্ধির ভাব। ইউ নো হু? জিনিকে জাদু করেছে? কিন্তু জিনি তো না…জিনি ছিল না…ছিল?

এই ডায়রিটা?, হ্যারি তাড়াতাড়ি, হাতে তুলে নিয়ে ডাম্বলডোরকে দেখিয়ে। রিডল লিখেছিল ষোল বছর বয়সে।

ডাম্বলডোর হ্যারির হাত থেকে ডায়রিটা নিলেন। এবং তার লম্বা নাকের ডগা দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওটার পোড়া আর ভেজা পাতা গুলির দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

ব্রিলিয়ান্ট, বললেন আস্তে করে। অবশ্য সেই হচ্ছে এ পর্যন্ত হোগার্টস এর সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। তিনি উইসলিদের দিকে ফিরে তাকালের, ওদের দুজনই তখন সম্পূর্ণ হতভম্ব।

খুব কম লোকই জানে যে এক সময় লর্ড ভোল্ডেমর্টকে টম রিডল ডাকা হতো। আমি তাকে পড়িয়েছি পঞ্চাশ বছর আগে, হোগার্টস-এই। স্কুল ছাড়র পর সে উধাও হয়ে যায়, অনেক দেশ ঘুরেছে…ডার্ক আর্টস-এ এমনভাবে ডুবে যায়, আমাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ধরনের যারা তাদের সঙ্গে হাত মেলায়, অনেকগুলো বিপদজনক, ম্যাজিকাল পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে, যে, যখন সে লর্ড ভোল্ডেমর্ট হিসেবে আবার দেখা দেয় তাকে প্রায় চেনাই সম্ভব হয়নি। লর্ড ভোলডেমর্টের সঙ্গে এখানকার মেধাবী, সুদর্শন ছেলেটির, যে এক সময় এখানে হেড বয় ছিল, কেউ সহজে কোন যোগসূত্রই পায়নি।

কিন্তু জিনি, বললেন মিসেস উইসলি, আমাদের জিনির কি করবার থাকতে পারে–ওর–সঙ্গে?

ওর ডায়রি! জিনি বলল, কাঁদছে। আমি ওটাতে লিখছিলাম, এবং ও সারা বছর ধরে লিখত

জিনি! বললেন মিস্টার উইসলি হতবুদ্ধি হয়ে গেছেন তিনি। আমরা কি তোমাকে কিছুই শেখাইনি? আমি তোমাকে সব সময় কি বলেছি? নিজের জন্য চিন্তা করতে পারে এমন কোন কিছুকেই বিশ্বাস করবে না, যদি না জান সে কি চিন্তা করছে। ডায়রিটা তুমি আমাকে বা তোমার মাকে দেখলে না কেন? এ রকম একটা সন্দেহজনক জিনিস, পরিস্কার যে এটা ডার্ক ম্যাজিকে পরিপূর্ণ!

আমি জা–জানতাম না, কাঁদল জিনি। মাম যে বইগুলো কিনে দিয়েছিল তারই একটার মধ্যে অমি ওটা পেয়েছিলাম। আমি ভে–ভেবেছিলাম কেউ হয়তো ওটা ভুলে রেখে গেছে…

মিস উইসলিকে এখনই সরাসরি হাসপাতালে যেতে হবে, মাঝখানে বাধা দিলেন প্রফেসর ডাম্বলডোর দৃঢ় কণ্ঠে। এটা ওর জন্যে ভয়াবহ একটা অভিজ্ঞতা ছিল সন্দেহ নেই। কারো কোন শাস্তি হবে না। ওর চেয়ে অনেক প্রবীণ এবং জ্ঞানী জাদুকরদেরও লর্ড ভোলডেমর্টের ধোঁকাবাজিতে পড়েছে। হেঁটে গিয়ে দরজাটা খুললেন তিনি। সম্পূর্ণ বিশ্রাম এবং সম্ভবত এক মগ গরম চকলেট। ওটা সব সময়ই আমাকে আনন্দ দেয়, জিনির দিকে চেয়ে সস্নেহে চোখের পলক ফেলে বললেন তিনি। মাদাম পমফ্রে এখনো জেগে আছেন, মেনড্রেক জুস খাওয়াচ্ছেন–বসালঙ্কের শিকার যারা, তারা যে কোন সময় জেগে উঠতে পারে।

তাহলে, হারমিওন, ঠিক আছে! রনের চেহারা উজ্জ্বল হলো।

মিসেস উইসলি জিনিকে সঙ্গে করে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন, এবং মিস্টার উইসলি তাকে অনুসরণ করলেন, এখনো মনে হচ্ছে সাংঘাতিক রকম নাড়া খেয়েছেন ভদ্রলোক।

কি জান মিনারভা, বললেন প্রফেসর ডাম্বলডোর চিন্তিতভাবে প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে, আমার মনে হয় এত ঝামেলার সফল সমাপ্তিতে একটা ভাল ফিস্টের দাবি রাখে। আমি কি আপনাকে অনুরোধ করতে পারি কিচেনকে এ ব্যাপারে খবর দিতে।

ঠিক, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল দ্বিধাহীন চিত্তে, দরজার দিকে যেতে যেতে। পটার আর উইসলির ব্যাপারে ফায়সালা করবার জন্যে আপনার কাছে দিয়ে যাচ্ছি, দেব?

নিশ্চয়ই, বললেন ডাম্বলডোর।

অফিস ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি। এবং আরি আর রন অনিশ্চিতভাবে প্রফেসর ডাম্বলডোরের দিকে তাকাল। ফয়সালা বোঝাতে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন? নিশ্চয়ই–নিশ্চয়ই–তাদের এখন শাস্তি দেয়া হবে না?

আমার মনে হচ্ছে আমি বলেছিলাম যে, আর যদি স্কুলের কোন নিয়ম ভাঙো তবে তোমাদেরকে আমার বহিস্কার করতে হবে, বললেন ডাম্বলডোর।

রন মুখ খুলল ভয়ে।

এ থেকে দেখা যাচ্ছে আমাদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট যারা তাদেরকেও অনেক সময় নিজের কথাই নিজেকে হজম করতে হয়, বললেন ডাম্বলডোর মুচকি হেসে। তোমরা দুজনই স্কুলের প্রতি বিশেষ সার্ভিস দেয়ার জন্যে বিশেষ পদক পাবে এবং দেখা যাক–হ্যাঁ, প্রত্যেকে গ্রিফিল্ডরের জন্য দুশ করে পয়েন্ট পাবে।

লকহার্টের ভ্যালেন্টাইন ফুলের মতো গোলাপী হয়ে গেলো রন, মুখ বন্ধ করল।

কিন্তু আমদের মধ্যে একজন এই ভয়ঙ্কর অভিযানে তার ভূমিকার ব্যাপারে একেবারেই চুপ করে রয়েছেন, ডাম্বলডোর যোগ করলেন। এতো বিনয় কেন, গিল্ডরয়?

সচকিত হলো হ্যারি। প্রফেসর লকহার্টের কথা সে একেবারেই ভুলে গিয়েছিল। ঘুরে সে দেখল লকহার্ট দাঁড়িয়ে রয়েছেন ঘরের এক কোণে, এখনও মুখে অনিশ্চিত হাসি। ডাম্বলডোর যখন তার সঙ্গে কথা বললেন তখন কাঁধের উপর দিয়ে পেছনে চাইলেন তিনি, ডাম্বলডোর কার সঙ্গে কথা বলছেন দেখার জন্যে।

প্রফেসর ডাম্বলডোর, রন বলল তাড়াতাড়ি, নিচে চেম্বার অব সিক্রেটস এ একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। প্রফেসর লকহার্ট

আমি কি একজন? বললেন লকহার্ট মৃদু বিস্ময়ে। হা ইশ্বর। আমার মনে হয় আমি কোন কাজে লাগিনি, লেগেছি?

উনি একটা মেমরি চার্ম করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু জাদুদটা উল্টো ওকেই ঘায়েল করেছে, বন ব্যাপারটা আস্তে করে ডাম্বলডোরকে বোঝালে।

হায় হায়, বললেন ডাম্বলডোর মাথা নেড়ে, ওঁর লম্বা রূপালী গোঁফ কেঁপে উঠল। নিজের তরবারিতে নিজেরই প্রাণবধ, গিল্ডরয়?

তরবারি? ক্ষীণ কণ্ঠে বললেন লকহার্ট। আমার নেই। যদিও ওই ছেলেটার আছে। হ্যারিকে দেখিয়ে বললেন। ও তোমাকে ধার দেবে।

কিছু যদি মনে করো, তুমি কি প্রফেসর লকহার্টকেও হাসপাতালে নিয়ে যাবে? বললেন ডাম্বলডোর রণকে।হ্যারির সঙ্গে আমি আরো কয়েকটা কথা বলে নিতে চাই…

স্বচ্ছন্দ পদক্ষেপে বেরিয়ে গেলেন লকহার্ট। দরজা বন্ধ করতে করতে ডাম্বলডোর আর হ্যারির দিকে কৌতূহলী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল রন।

আগুনের পাশে একটা চেয়ারে গিয়ে বসালেন প্রফেসর ডাম্বলডোর।

বসো, হ্যারি, বললেন তিনি, হ্যারি বসল, অস্বস্তিকরভাবে নার্ভাস বোধ করছে।

প্রথমত, হ্যারি আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিতে চাই, বললেন ডাম্বলডোর, আবার চোখ পিট পিট করলেন। চেম্বারে নিশ্চয়ই তুমি আমার প্রতি সত্যিকার অর্থেই নিঃশর্ত বিশ্বস্ততা দেখিয়েছ। অন্য কিছুই নয় শুধু। ওটাই তোমার কাছে ফোক্স–কে নিয়ে যেতে পেরেছে।

ফিনিক্সটাকে আদর করলেন তিনি, ও উড়ে গিয়ে ওঁর হাঁটুতে বসলেন।

আনাড়ির মতো হাসল হ্যারি, ডাম্বলডোর তাকিয়ে দেখছেন তাকে।

এবং তাহলে টম রিডল-এর সঙ্গে তোমার দেখা হয়েছে? চিন্তিত ভাবে বললেন ডাম্বলডোর। আমি ধারণা করি সে তোমার ব্যাপারেই সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিল…

হঠাৎ অনেকক্ষণ ধরে যেটা ওকে খোঁচাচ্ছে সেই কথাটা হ্যারির মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

প্রফেসর ডাম্বলডোর…রিডল বলেছে আমি তার মতো। অদ্ভুত সাদৃশ্য, বলেছে সে…

বলেছে সে, এখন? বললেন ডাম্বলডোর, ওঁর মোটা রূপালি ভ্রূর নিচে দিয়ে চিন্তিতভাবে হ্যারির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, আর তুমি কি ভাবো হ্যারি?

আমি মনে করি না আমি ওর মতো! বলল হ্যারি, সে যতটা জোরে বলতে চেয়েছিল তার চেয়ে জোরে বলে ফেলল। আমি বলতে চাচ্ছি, আমি–আমি গ্রিফিল্ডরে, আমি…

সে থেমে গেল, একটা ওঁত পেতে থাকা সন্দেহ যেন ওর মনে আবার দেখা দিয়েছে।

প্রফেসর, এক মুহূর্ত পর সে আবার বলতে শুরু করল, বাছাই হ্যাটটা আমাকে বলেছে আমি–আমি স্লিথারিনে ভাল করব। কিছু সময়ের জন্য প্রত্যেকে ভেবেছে আমিই স্লিথারিনের উত্তরাধিকার,, কারণ আমি পারসেল্টাং বলতে পারি…।

তুমি পারসেলটাং বলতে পারো, হ্যারি, শান্তভাবে বললেন ডাম্বলডোর, কারণ লর্ড ভোলডেমর্ট–যে সালাজার স্লিথারিনের সর্বশেষ জীবিত উত্তরাধিকার পারসেলটাং বুঝতে পারে। আমার যদি খুব ভুল না হয়ে থাকে, যে রাতে সে তোমাকে কপালের এই দাগটা দিয়েছে সে রাতেই সে তার কিছু ক্ষমতা তোমাকে দিয়েছে। সে যে ইচ্ছে করে দিয়েছে তা নয়, আমি নিশ্চিত…

ভোলডেমর্ট তার কিছুটা আমার মধ্যে দিয়ে দিয়েছে? বলল হ্যারি, বজ্রাহত।

নিশ্চিতভাবেই সেরকম মনে হচ্ছে।

তাহলে আমার স্লিথারিনে থাকা উচিৎ, মরীয়া হয়ে ডাম্বলডোরের মুখের দিকে তাকিয়ে। বাছাই হ্যাটটা আমার মধ্যে স্লিথারিনের ক্ষমতা দেখতে পেয়েছিল, এবং ওটা–

তোমাকে গ্রিফিল্ডরে দিয়ে দিয়েছে, শান্তভাবে বললেন ডাম্বলডোর। আমার কথা শোন, হ্যারি। সালাজার স্লিথারিন তার বাছাই করা প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে যে সব গুণ সঞ্চারিত করেছিলেন, তার অনেকগুলিই হয়তো তোমার মধ্যে রয়েছে। তার নিজের দুর্লভ গুণ, পারসেলটাঙ…সম্ভাবনাশক্তি–দৃঢ়তা…নিয়মের প্রতি এক ধরনের অসম্মান, তিনি যোগ করলেন, তার গোঁফ আবার কাঁপছে। তারপরও বাছাই হ্যাট তোমাকে গ্রিফিল্ডরে পাঠিয়েছে। তুমি জান কেন এমন হলো। ভাবো।

আমাকে গ্রিফিল্ডরে পাঠিয়েছে, পরাজিতের স্বরে বলল হ্যারি, কারণ আমি স্লিথারিনে যেতে চাইনি…

ঠিক তাই, বললেন ডাম্বলডোর, হাস্যোজ্জ্বল আবার। যেটা তোমাকে টম রিডল থেকে খুবই ভিন্নতর করেছে। আমাদের ক্ষমতার চেয়ে বেশি, আমাদের পছন্দ–অপছন্দই, হ্যারি, দেখায় আমরা সত্যিকারভাবে যে কি। হ্যারি চেয়ারে বসে আছে, আঘাতে হতবুদ্ধি যেন, স্থির। তুমি যদি প্রমাণ চাও, যে তুমি গ্রিফিল্ডরই, তাহলে আমি তোমাকে আরো ভাল করে এটা দেখবার জন্যে অনুরোধ করব।

ডাম্বলডোর প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের ডেস্কে গেলেন, রক্ত মাখানো রূপালী তলোয়ারটা তুলে নিলেন এবং হ্যারির হাতে তুলে দিলেন। বিমর্ষ হ্যারি ওটা ওল্টালো, আগুনের আভায় চুণিগুলোতে যেন আগুন ধরে গেলো। এখন সে দেখল হাতলে খোদাই করা নামটা।

গড্রিক গ্রিফিল্ডর।

শুধুমাত্র একজন সত্যিকারের গ্রিফিল্ডরই এটা হ্যাটের নিচে থেকে বের করতে সক্ষম, হ্যারি, সহজভাবে বললেন ডাম্বলডোর।

মিনি খানেকের জন্য কেউই কথা বললেন না।

তারপর ডাম্বলডোর প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের ডেস্কের একটা ড্রয়ার খুললেন, এবং একটা পালকের কলম এবং কালির দোয়াত বের করলেন।

তোমার এখন যেটা দরকার, হ্যারি, তা হচ্ছে কিছু খাবার এবং ভাল একটা ঘুম। তুমি নিচে ফিস্টে যাও, ইতোমধ্যে আমি আজকাবানে একটা চিঠি লিখে ফেলি–আমাদের গেমকিপারকে ফেরত পেতে হবে। এবং আমাকে ডেইলী প্রফেটের জন্য একটা বিজ্ঞাপনও খসড়া করতে হবে, যোগ করলেন তিনি চিন্তিত ভাবে। আমাদের একজন নতুন ডিফেন্স এগেনস্ট দ্য ডার্ক আর্টস শিক্ষকেরও প্রয়োজন হবে। শেষ পর্যন্ত আমরা ওদেরকে সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করতে পেরেছি, পারিনি?

উঠে দাঁড়িয়ে হ্যারি দরজার দিকে গেলো। দরজার হাতলে শুধু হাতটা দিয়েছে, অমনি, দড়াম করে খুলে গেল ওটা এতো জোরে যে দেয়ালে লেগে ফিরে এলো।

লুসিয়াস ম্যালফয় দাঁড়িয়ে রয়েছে, দরজায়, চেহারায় ক্রোধ। এবং ওর বগলের নিচে, সংঘাতিক রকমে ব্যান্ডেজে মোড়া, ডব্বি

গুড ইভিনিং লুসিয়াস, বললেন ডাম্বলডোর প্রশান্তভাবে।

রুমে ঢোকার সময় মিস্টার ম্যালফয় হ্যারিকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় ফেলে দিয়েছিল, পেছনে পেছনে দ্রুত ছুটছে ডব্বি, ওর আলখাল্লার প্রান্তটা ধরে আছে, ওর চোখে মুখে সাংঘাতিক ভয়ের ভাব।

তাহলে! বললেন লুসিয়াস ম্যালফয়, ওর শীতল ভাবলেশহীন চোখ দুটো স্থির হয়ে আছে ডাম্বলডোরের উপর। তুমি আবার ফিরে এসেছ। গভর্ণররা তোমাকে সাসপেন্ড করেছে, তারপরও তুমি হোগার্টস-এই ফিরে আসা ঠিক মনে করেছ।

বেশ, দেখো লুসিয়াস, বললেন ডাম্বলডোর, নির্মল হাসি দিয়ে, অন্য এগারোজন গভর্ণর আজ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সত্যি বলতে কি শিলাবৃষ্টির মতো যেন পেঁচাগুলি পড়ছিল। ওরা শুনেছে যে আর্থার উইসলির মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে এখানে আমাকে ফেরত চেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ওরা ভেবেছেন আমিই কাজটার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত। ওরা আমাকে খুব অদ্ভুত কথাও বলেছেন, জানো! কয়েকজন তো মনে হলো, ভেবেছেন ওরা যদি আমাকে সাসপেন্ড করতে মত না দিতেন, তবে তুমি তাদের পরিবারকে শাপ দেয়ার হুমকি দিয়েছ।

স্বাভাবিকের চেয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেলেন মিস্টার ম্যালফয়। কিন্তু ওর চোখে এখনও ক্রোধ।

তাহলে–তুমি কি হামলা বন্ধ করতে পেরেছে? বিদ্রূপ করলো লুসিয়াস ম্যালফয়। অপরাধীকে ধরতে পেরেছ?

আমরা ধরেছি। হাসলেন ডাম্বলডোর।

আচ্ছা? বললেন ম্যালফয় তীক্ষ্ণ কন্ঠে। কে সে?

গতবারের ব্যক্তিই, লুসিয়াস, বললেন ডাম্বলডোর। কিন্তু এবার, লর্ড ভোল্ডেমর্ট অন্য আরেকজনের মাধ্যমে কাজ করছিল। ওর ডায়রির সাহায্যে।

মিস্টার ম্যালফয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তিনি মাঝখানে বড় গর্তসহ কালো বইটা তুলে ধরলেন। হ্যারি অবশ্য নজর রেখেছে ভবির দিকে।

গৃহ-ডাইনীটা কেমন যেন অদ্ভুত আচরণ করছে! ওর বড় বড় দুই চোখ হ্যারির ওপর স্থির, বার বার ডায়রিটা দেখাচ্ছে, তারপর মিস্টার ম্যালফয়ের দিকে দেখাচ্ছে এবং তারপর নিজের কপালে জোরে জোরে হাত দিয়ে ঘুষি মারছে।

ও তাই…. ধীরে ধীরে মিস্টার ম্যালফয় বললেন ডাম্বলডোরকে।

একটা বেশ চতুর প্ল্যান, ডাম্বলডোর বললেন অকম্পিত স্বরে, চোখ এখনও মিস্টার ম্যালফয়ের চোখের ওপর। কারন, এই যে হ্যারি–মিস্টার ম্যালফয় হ্যারির দিকে দ্রুত এবং তীক্ষ্ণ একটা দৃষ্টি হানলেন, এবং তার বন্ধু রন এই বইটি যদি বের করতে না পারত, তাহলে–জিনি উইসলিকেই সব দায় নিতে হতো। কেউ প্রমাণ করতে পারত না যে সে তার নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় কিছুই করেনি…

মিস্টার ম্যালফয় কিছুই বললেন না, হঠাৎ মনে হলো তার মুখের ওপর যেন একটা মুখোশ পরানো রয়েছে।

এবং ভাবো, ডাম্বলডোর বলে চলেছেন, তাহলে কি হতো…উইসলিরা আমাদের প্রখ্যাত বিশুদ্ধ–রক্ত পরিবারগুলির অন্যতম। ভাবেতো একবার আর্থার উইসলি এবং তার মাগল প্রটেকশন আইনের উপর এর কি প্রভাব পড়ত? যদি তার নিজের মেয়ে মাগল–জাতদের উপর হামলা করে, ওদের হত্যা করে। ভাগ্য ভাল যে ডায়রিটা পাওয়া গিয়েছিল, এবং এর মধ্যে থেকে রিডল এর স্মৃতি মুছে দেয়া হয়েছে। না হলে, কে জানে আবার কি পরিণতি হতো…

মিস্টার ম্যালফয় যেন জোর করে কথা বললেন।

খুবই ভাগ্যের কথা, আড়ষ্টভাবে বললেন তিনি।

এবং তখনও ওর পেছন থেকে ডব্বি দেখাচ্ছে, প্রথমে ডায়রিটার দিকে এবং তারপর লুসিয়াস ম্যালফয়ের দিকে এবং পরে নিজের কপালে জোরে ঘুষি মারছে।

হঠাৎ হ্যারি বুঝতে পারল। সে ডব্বিদের সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়ল, ডব্বি পেছনে এক কোণায় সরে গেলো, নিজেকে শাস্তি দেয়ার জন্যে নিজের কান মলছে সে।

কি ভাবে জিনি ওই ডায়রিটা পেলো, আপনি কি জানতে চান না মিস্টার ম্যালফয়? বলল হ্যারি।

লুসিয়াস ম্যালফয় ঘুরে ওর দিকে তাকালো।

আমি কিভাবে জানবো বোকা মেয়েটা কেমন করে এটা পেয়েছে?

কারণ, আপনিই ওটা ওকে দিয়েছিলেন, বলল হ্যারি। ফ্লারিশ এবং ব্লটস-এ, আপনি ওর পুরনো ট্রান্সফিগিউরেশন বইটা তুলে নিয়ে, ডায়রিটা ওটার ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, দেননি?

হ্যারি দেখল মিস্টার ম্যালফয়ের হাতের মুঠো একবার খুলছে একবার বন্ধ হচ্ছে।

প্রমাণ করো, হিসহিসিয়ে বললেন।

ওহ না, কেউ এটা প্রমাণ করতে পারবে না, বললেন ডাম্বলডোর, হ্যারির দিকে চেয়ে হেসে। এখন যখন রিডল ডায়রিটা থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে, এখন তো নয়ই। অন্যদিকে আমি তোমাকে কিছু উপদেশ দিতে চাই, লুসিয়াস, লর্ড ভোলডেমর্টের স্কুলের পুরনো কোন জিনিষ কাউকে দেবে না। যদি এরপর আর কোন কিছু এই ভাবে কোন নির্দোষ হাতে পাওয়া যায়, আমার মনে হয় আর্থার উইসলি, নিশ্চিত করবে যে, ওগুলোর সূত্র খুঁজতে খুঁজতে যেন তোমার কাছে পৌঁছানো যায়…

লুসিয়াস ম্যালফয় দাঁড়ালেন এক মুহূর্তের জন্য, এবং হ্যারি পরিষ্কারভাবে দেখল ওর ডান হাত বাঁকা হচ্ছে যেন জাদুদণ্ডটা বের করবার জন্যে নিশপিশ করছে। এর পরিবর্তে, গৃহ-ডাইনীটার দিকে ফিরলেন।

আমরা যাচ্ছি, ডব্বি!

দরজাটা খুললেন তিনি এবং যেই না গৃহ-ডাইনীটা দৌড়ে ওর কাছে গেল, এক লাথি মেরে ওটাকে দরজা পার করলেন লুসিয়াস ম্যালফয়। ওরা শুনতে পেলো করিডোর ধরে ডব্বি যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে যাচ্ছে। হ্যারি দাঁড়াল এক মুহূর্ত, গভীরভাবে চিন্তা করল। তারপর ওর মাথায় এলো ব্যাপারটা।

প্রফেসর ডাম্বলডোর, সে বলল দ্রুত, আমি কি ওই ডায়রিটা মিস্টার ম্যালফয়কে ফেরৎ দিতে পারি, প্লিজ?

নিশ্চয়ই, হ্যারি, বললেন ডাম্বলডোর শান্তভাবে। কিন্তু তাড়াতাড়ি করো, ফিস্ট আছে মনে রেখো।

ছোঁ মেরে ডায়রিটা নিয়ে হ্যারি দৌড়ে অফিস থেকে বের হয়ে এলো। সে শুনতে পাচ্ছে ডব্বির যন্ত্রণাকাতর চিৎকার করিডোরের কোণা দিয়ে দূরে সরে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি করতে হবে, ভাবছে প্ল্যানটা কাজ করবে কি না, হ্যারি ওর একটা জুতা খুলে ফেলল, একটা নোংরা, চটচটে মোজা টেনে খুলল এবং ডায়রিটা ওটার ভেতর ভরল। অন্ধকার করিডোর ধরে দৌড়ে গেল সে।

সিঁড়ির ওপরেই ওদেরকে ধরে ফেলল।

মিস্টার ম্যালফয়, হাঁপাচ্ছে সে, পেছনে থামল, আপনার জন্যে একটা। জিনিস রয়েছে।

এবং দুর্গন্ধযুক্ত মোজাটা জোর করে মিস্টার ম্যালফয়ের হাতে খুঁজে দিল।

কি বাজে–?

ডায়রি থেকে মোজাটা টেনে ছিঁড়ে ফেলে একদিকে ছুঁড়ে ফেলল, তারপর ক্ষিপ্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ডায়রিটার পেছন থেকে হ্যারির দিকে তাকালেন।

তুমিও একদিন তোমার মা-বাবার মতোই দুর্ভাগ্যজনক পরিণতিই বরণ করবে, হ্যারি পটার, বললেন তিনি নম্রভাবে। ওরাও নাক–গলানো গাধা ছিল। যাওয়ার জন্যে ফিরলেন তিনি।

আয়, ডব্বি। আমি বলছি আয়!

কিন্তু ডব্বি নড়ল না। ও হ্যারির নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত মোজাটা ধরে রয়েছে, ওটার দিকে তাকাচ্ছে যেন ওটা একটা অমূল্য রত্ন।

প্রভু ডব্বিকে একটা মোজা দিয়েছে, অবাক হয়ে বলছে গৃহ-ডাইনীটা। প্রভু এটা ডব্বিকে দিয়েছে।

কি ওটা? থুথু ফেললেন মিস্টার ম্যালফয়। কি বললি?

ডব্বি একটা মোজা পেয়েছে, বলল ডব্বি, বিশ্বাস করতে পারছে না। প্রভু ছুঁড়ে দিয়েছেন, এবং ডব্বি ধরে ফেলেছে, এবং ডব্বি–ডব্বি এখন মুক্ত।

লুসিয়াস ম্যালফয় যেন জমে পাথর হয়ে গেলেন। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন গৃহ-ডাইনীটার দিকে। তারপর হ্যারির দিকে ক্রদ্ধ ম্যালফয় লাফ দিলেন।

তুমি আমার চাকর তাড়িয়েছ, হ্যারি!

কিন্তু ডব্বি চিৎকার করে উঠল, খবরদার তুমি হ্যারি পটারের ক্ষতি করবে না?

একটা বিকট শব্দ হলো এবং মিস্টার ম্যালফয় উড়ে পেছন দিকে গেলেন। তার পেছনেই সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ছেন তিনি, এক একবারে তিনটা করে ধাপ, একেবারে নিচে পড়লেন তালগোল পাকিয়ে। উঠে দাঁড়ালেন, রাগে জ্বলছে মুখ এবং জাদুদণ্ডটা বের করলেন, কিন্তু ডব্বি একটা লম্বা আঙুল তুলল হুমকির ভঙ্গিতে।

তুমি এখন চলে যাবে, ভয়ঙ্করভাবে বলল ডব্বি আঙুল তুলে। তুমি হ্যারি পটারকে স্পর্শ করবে না, তুমি এখন চলে যাবে।

লুসিয়াস ম্যালফয়ের কোন উপায় নেই। ওদের দিকে একটা শেষ ক্ষিপ্ত দৃষ্টি ছুঁড়ে, আলখাল্লাটা উড়িয়ে নিয়ে ওদের দৃষ্টির বাইরে চলে গেল।

হ্যারি পটার ডব্বিকে মুক্তি দিয়েছে। তীক্ষ্ণ চিঙ্কারে বলল গৃহ-ডাইনীটা, হ্যারির দিকে তাকিয়ে, ওর বিরাট দুই গোলকের মতো তার দুই চোখে কাছের জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে। হ্যারি পটার ডব্বিকে মুক্ত করেছে।

সামান্যই আমি করতে পেরেছি, ডব্দি  বলল হ্যারি, দাঁত বের করে হেসে। শুধু প্রতিজ্ঞা করো আর কখনো আমার জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করবে না।

গৃহ-ডাইনীটার কুৎসিৎ বাদামী মুখটা হঠাৎ একটা চড়া দেঁতো হাসিতে ভেঙ্গে পড়ল।

আমার শুধু একটা প্রশ্ন, ডব্বি, বলল হ্যারি, ও হ্যারির মোজাটা টানছে কাঁপা হাতে। তুমি আমাকে বলেছিলে এর কোন কিছুই যার নাম নিতে নেই তার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, মনে আছে? কিন্তু

এটা একটা সূত্র, স্যার, বলল ডব্বি, ওর চোখ বড় হয়ে গেছে, যেন এটা ঘটতই। ডব্বি আপনাকে একটা সূত্র দিচ্ছিল। ডার্ক লর্ড ওর নাম পরিবর্তন করার আগে, ওর নাম নেয়া যেত, বুঝতে পেরেছেন?

ঠিক, বলল হ্যারি দূর্বলভাবে। আমার এখন যাওয়া উচিৎ। ফিস্ট আছে একটা, এবং আমার বন্ধু হারমিওন এখন নিশ্চয়ই জেগে উঠেছে…

হ্যারির কোমর জড়িয়ে ধরল ডব্বি।

হ্যারি পটার ডব্বির জানার চেয়ে অনেক বড়! কাঁদল সে। বিদায় হ্যারি পটার!

এবং একটা শেষ বিকট আওয়াজ করে অদৃশ্য হয়ে গেলো ডব্বি।

***

হ্যারি বেশ কয়েকটা হোগার্টস ফিস্ট-এ গেছে, কিন্তু কোনটাই এটার মতো ছিল না। প্রত্যেকেই তাদের রাতের পাজামা পরে ছিল এবং সারারাত চলেছে ফিস্ট। হ্যারি জানে না কোনটা ওর কছে সবচেয়ে ভাল লেগেছিল, হারমিওনের চিৎকার করতে করতে ছুটে আসা, তুমি সমাধান করেছ। তুমি সমাধান করেছ!, না হাফপাফ টেবিল থেকে জাস্টিনের উঠে আসা এবং তাকে সন্দেহ করার জন্যে বার বার ক্ষমা চাওয়া, অথবা রাত সাড়ে তিনটায় এসে হ্যাগ্রিডের ওকে আর রনকে কাঁধের ওপর এতো জোরে ঠেসে ধরা যে ওরা ওদের প্লেটের উপরই হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়েছিল ওরা, অশ্ববা তার আর রমের চারশ পয়েন্টে পরপর দ্বিতীয়বারের গ্রিফিন্ডরের জন্যে হাউজ কাপ জয় করা অথবা প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের দাঁড়িয়ে বল যে স্কুলের তরফ থেকে উপহার হিসেবে সব পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে (ওহ না, বলল হারমিশুন), অথবা ডাম্বলডোরের ঘোষণা, দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রফেসর লকহার্ট আগামী বর্ষে ফিরে আসতে পারবেন না, কারণ তাকে চলে যেতে হচ্ছে তার স্মৃতি ফিরে পাওয়ার জন্যে। শিক্ষকদেরও কেউ কেউ এ ঘোষণার আনন্দে যোগ দিলেন।

লজ্জার ব্যাপার, বলল রন, বিস্কুট নিতে নিতে। ও আমার উপরেও প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছিল।

***

গ্রীষ্মের বাকী সময়টা কড়া সূর্যালোকের মধ্যেই কাটল। হোগার্টস স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। ছোট খাট দুই একটা পার্থক্য ছাড়া। ডিফেন্স এগেনস্ট দ্য ডার্ক আর্টস ক্লাস বাতিল করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ হারমিওনকে রন বলল এমনিতেই আমাদের প্রচুর প্র্যাকটিস হয়ে গেছে এবং লুসিয়াস ম্যালফয়কে স্কুল গভর্ণরের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ড্র্যাকো আর আগের মত হাবভাব করে স্কুলে ঘুরে বেড়ায় না যেন ও এটার মালিক ছিল। বরং তাকে এখন মনমরা এবং গোমড়া বলে মনে হয়। এদিকে জিনি উইসলি আবার পুরোপুরি খুশি।

দ্রুতই হোগার্টস এক্সপ্রেসে চড়ে বাড়ি ফেরার সময় এসে গেলো। হ্যারি, রন, হারিমিওন, ফ্রেড, জর্জ। এবং জিনি নিজেদের জন্যে একটা কামরা পেলো।

ছুটির আগের শেষ কয়েক ঘণ্টা তাদেরকে ম্যাজিক করতে অনুমতি দেয়া হয়েছিল এবং এই সময়টার পুরোপুরি সদ্ব্যাবহার করল ওরা। ওরা খেলল, এক্সপ্লোডিং স্ন্যাপ, ফ্রেড এবং জর্জের শেষ কয়েকটা ফিলিস্টা আতশবাজিতে আগুন ধরিয়ে দিল, এবং একে অন্যকে ম্যাজিক দিয়ে অস্ত্রমুক্ত করা প্র্যাকটিস করল। হ্যারি এটাতে খুব দক্ষ হয়ে উঠছিল।

ওরা যখন প্রায় কিংস ক্রসের কাছাকাছি তখন হ্যারির কিছু একটা মনে হলো।

জিনি–তুমি পার্সিকে কি করতে দেখেছিলে, যে ও চায়নি তুমি কাউকে বলো?

ওহ, সেই কথা, বলল জিনি খিল খিল করে হেসে। বেশ–পার্সির একজন গার্লফ্রেড আছে।

ফ্রেড জর্জের মাথায় এক গাদা বই ফেলে দিল।

কি?

ওই ফ্ল্যাভেনক্ল প্রিফেক্টটা, পেনেলোপে ক্লিয়ারওয়াটার, বলল জিনি। ওকেই সে পুরো গ্রীষ্ম ধরে চিঠি লিখছিল। স্কুলের বিভিন্ন জায়গায় সে ওর সাথে দেখা করছিল গোপনে। একদিন খালি ক্লাসরুমে ওরা চুমু খাচ্ছিল আমি হঠাৎ ওখানে গিয়ে পড়ি। ওর উপর যখন হামলা হলো–তোমরা জানো পার্সি এতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল! তোমরা ওকে টিজ করবে না প্লীজ, করবে? সে জানতে চাইল শঙ্কার সাথে।

স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি, বলল ফ্রেড, মনে হচ্ছে যেন ওর জন্মদিন সময়ের আগে চলে এসেছে।

অবশ্যই নয়, বলল জর্জ চাপা হেসে।

হোগার্টস এক্সপ্রেসের গতি কমে এলো এবং এক সময় থেমেও গেল।

হ্যারি ওর পালকের কলম এবং এক টুকরো পার্চমেন্ট বের করে রন এবং হারমিওনের দিকে তাকাল।

এটাকে টেলিফোন নাম্বার বলে, সে বলল রনকে, একটা নাম্বার দুবার লিখে, পাতাটা দুটুকরা করে দুজনের হাতে ধরিয়ে দিল। আমি গত গ্রীষ্মে তোমার ড্যাডকে টেলিফোন ব্যবহারের নিয়ম বলে দিয়েছিলাম, উনি জানবেন। ডার্সলিদের ওখানে আমাকে ফোন করো, ওকে? আগামী দুমাস শুধু ডাডলির সঙ্গে কথা বলে থাকতে হবে এটা আমি ভাবতেই পারি না…

তোমার আঙ্কল এবং আন্টি তোমার জন্যে গর্ববোধ করবেন, করবেন না? বলল হারমিওন, ট্রেন থেকে নামতে নামতে, সকলের সঙ্গে জাদুকরা দেয়ালটার দিকে যেতে যেতে। যখন তারা শুনবে এ বছর তুমি কি করেছ?

গর্ববোধ? বলল হ্যারি। তুমি কি পাগল হলে? ওই সময় আমি মরতে পারতাম এবং আমি মরিনি বলে ওরা আমার উপর ক্ষিপ্ত হবেন সাংঘাতিক…

এবং এক সাথে ওরা গেট দিয়ে প্রবেশ করল আবার মাগল বিশ্বে।

1 Comment
Collapse Comments

Again! What a novel! This is my third time reading!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *