১৭. স্লিথারিনের উত্তরাধিকার

১৭. স্লিথারিনের উত্তরাধিকার

সে দাঁড়িয়ে আছে বেশ দীর্ঘ প্রায়ান্ধকার একটা চেম্বারের প্রান্তে। পাথরের বিশাল বিশাল সাপ খোদাই করা, পিলার অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া একটা সিলিংকে ভর দিয়ে রেখেছে। চেম্বারের অস্বাভাবিক সবুজ অস্পষ্টতার মধ্যে পিলারগুলি লম্বা কালো ছায়া ফেলেছে।

ওর হৃৎপিও চলছে খুব দ্রুতগতিতে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হ্যারি শুনছে শীতল নৈঃশব্দ। বাসিলিস্ক কি কোন পিলারের পেছনে ছায়াঘন কোণায় ওত পেতে আছে?

জাদুদণ্ড বের করল হ্যারি এবং সাপের পিলার গুলির মাঝখান দিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। সাবধানে দেয়া প্রত্যেকটি পদক্ষেপ ছায়ায় ঢাকা দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। চোখ সরু করা, সামান্যতম আওয়াজেই বন্ধ করার জন্য প্রস্তুত। পাথরের সাপের চোখের শূন্য কোটরগুলি যেন ওকে অনুসরণ করছে। কতবার যে পেটে মোচড় মেরেছে আর তার মনে হয়েছে কিছু একটা নড়তে দেখেচ্ছে।

তারপর, যখন সে শেষ পিলার জোড়ার সমান সমান হলো ওর দৃষ্টি পড়ল পেছনের দেয়ালের সামনে দাঁড়ানো চেম্বারের সমান উঁচু একটা বিশাল মূর্তির উপর।

উপরের বিরাট চেহারাটা দেখার জন্যে হ্যারিকে নিজের ঘাড় বকের মতো বাকাতে হলো। প্রাচীন এবং প্রাচীন এবং বানরের মতো দেখতে মুখ, লম্বা পাতলা দাড়ি এসে পড়েছে একেবারে পাথরের পোশাকের নিচে, যেখানে দুটো বিরাট ধূসর পাথরের পা চেম্বারের মসৃণ মেঝের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। এবং পা দুটোর মাঝখানে, পড়ে রয়েছে, মুখ নিচের দিকে করা, অগ্নিশিখার মতো লাল চুল, কালো পোষাক পরা ছোট্ট একটি মানুষ।

জিনি! হ্যারি বিড় বিড় করল, দৌড়ে গেলো ওর কাছে এবং হাঁটু গেড়ে বসল। জিনি! মরে যেও না প্লিজ মরে নেও না!ওর জাদুদণ্ডটা একদিকে ছুঁড়ে দিল, কাঁধে ধরে জিনিকে ঘুরিয়ে দিল। ওর মুখটা মার্বেলের মতো সাদা, এবং একই রকম ঠান্ডা, কিন্তু ওর চোখ বন্ধ, তাহলে সে পেট্রিফাইড হয়নি। তাহলে ও নিশ্চয়ই…।

জিনি, প্লিজ জেগে ওঠো, বিড় বিড় করল হ্যারি মরিয়া হয়ে ঝাঁকি দিচ্ছে জিনিকে। জিনির মাথা এদিক ওদিক গড়াচ্ছে, মনে হয় কোন আশা নেই।

ও জাগবে না, বলল একটা নরম কণ্ঠস্বর।

হ্যারি লাফিয়ে উঠে হাটুর ওপর ঘুরল।

সবচেয়ে কাছের পিলারটার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি লম্বা কালো–চুলের ছেলে। কিনারাগুলোতে কেমন যেন আবছা, যেন কোন কুয়াশাচ্ছন্ন জানালার মধ্যে দিয়ে ওকে দেখছে হ্যারি। কিন্তু ওর চিনতে ভুল হয়নি।

টম-টম রিডল?

মাথা নাড়ল রিডল, হ্যারির চেহারার ওপর থেকে দৃষ্টি সরালো না।

কি বলতে চাও, ও জাগবে না মানে? মরীয়া হ্যারি বলল। ও–ও–না?

ও, এখনো বেঁচে আছে, বলল রিডল। কিন্তু শুধু মাত্র।

হ্যারি ওর দিকে তাকিয়ে আছে, অপলক। টম রিডল হোগার্টস্-এ ছিল পঞ্চাশ বছর আগে, কিন্তু এই যে এখানে দাঁড়িয়ে আছে, ওর চারপাশে একটা অস্পষ্ট রহস্যময় আলো ঘিরে রেখেছে, ষোল বছরের চেয়ে একদিনও বড় নয়।

তুমি কি ভূত? জিজ্ঞাসা করল হ্যারি অনিশ্চিত ভাবে।

একটা স্মৃতি, বলল রিডল শান্তভাবে। একটা ডায়রিতে সংরক্ষিত পঞ্চাশ বছর ধরে।

সে মূর্তিটার পায়ের আঙুলের কাছে দেখালো। ওখানে পড়ে রয়েছে মোনিং মার্টলের বাথরুমে পাওয়া কালো ডায়রিটা, খোলা। এক সেকেন্ডের জন্য হ্যারি ভবল ওটা ওখানে পৌঁছাল কিভাবে কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যেগুলো আগে সুরাহা করা দরকার।

আমাকে সাহায্য করতে হবে, টম, বলল হ্যারি, আবার জিনির মাথাটা তুলে ধরল ও। ওকে এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে। এখানে একটা বাসিলিস্ক রয়েছে…আমি জানি না কোথায়, কিন্তু যে কোন মুহূর্তে চলে আসতে পারে। প্লিজ, আমাকে সাহায্য করো…

রিডল নড়ল না। হ্যারি ঘামছে, জিনিকে মেঝের উপর থেকে অর্ধেক মাত্র তুলতে পেরেছে, এবং আবার বুকল ওর জাদুদণ্ডটা তুলে নেয়ার জন্যে।

কিন্তু ওর জাদুদণ্ডটা নেই।

তুমি কি দেখেছ?

সে মুখ তুলে তাকাল। রিভ তখনও ওকে লক্ষ্য করছে–ওর লম্বা আঙুলের ফকে হ্যারির জাদুদ টা নিয়ে খেলা করছে।

ধন্যবাদ, বলল হ্যারি, হাত বাড়াল ওটা নেয়ার জন্যে।

রিডল-এর মুখের কোণে একটা বাঁকা হাসি খেলে গেল। সে তারির দিকে তাকিয়েই আছে, জাদ্যদণ্ডটা ঘোরাচ্ছে বন বন করে।

শোন, বলল হ্যারি দ্রুত, জিনির ওজনে ওর হাটু বেঁকে বসছে, আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হবে। যদি বাসিলিস্ক আসে…

না ডাকা পর্যন্ত ওটা আসবে না, বলল রিডল শান্তভাবে।

জিনিকে আবার মেঝেতে নামিয়ে রাখল হ্যারি, ওকে আর তুলে লাখতে পারছিল না।

কি বলতে চাচ্ছো? বলল ও। দেখো, আমার জাদুদণ্ডটা দাও, আমার এটা প্রয়োজন হতে পারে।

রিডল-এর হাসি আরো চওড়া হলো।

তোমার এটা আর প্রয়োজন হবে না, বলল সে।

হ্যারি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো। কি বলছো, আমার আর প্রয়োজন–?

এর জন্যে আমি অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করে আছি হ্যারি পটার, বলল রিড়। তোমাকে দেখার জন্যে। তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্যে।

দেখো, বলল হ্যারি, ধৈৰ্য্য হারাচ্ছে সে,আমার মনে হয় না তুমি বুঝতে পারছ। আমরা চেম্বার অব সিক্রেটস-এ দাঁড়িয়ে আছি। আমরা পরে কথা বলতে পারবো।

আমরা এখনই কথা বলবো, বলল রিডল, এখনও মুখে চওড়া হাসি, হ্যারির জাদুদণ্ডটা পকেটে ভরে ফেলেছে সে।

হ্যারি ওর দিকে তাকিয়ে রইল। এখানে কিছু আজব ব্যাপার স্যাপার ঘটছে।

জিনি এ রকম হলো কি ভাবে? সে ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করল।

আচ্ছা, এটা একটা মজার প্রশ্ন, বলল রিডল খোশমেজাজে। এবং একটা লম্বা কাহিনীও। আমি মনে করি আসল যে কারণ, যে কারণে জিনি উইসলি এরকম হয়েছে সেটা হচ্ছে, একজন অদশ্য অপরিচিতের কাছে নিজের। মন খুলে দেয়া এবং নিজের সব গোপন কথা বলা।

কি বলছ তুমি? বলল হ্যারি।

ডায়রিটা, বলল রিডল। আমার ডায়রি। জিনি মাসের পর মাস এই ডায়রিতে লিখেছে, ওর সব দুঃখের কথা, যন্ত্রণার কথা: কি ভাবে তার বাইয়েরা তাকে টিজ করে, কি ভাবে তাকে পুরনো বই এবং পোশাকে স্কুলে আসতে হয়েছে, কেমন করে–রিডল-এর চোখ ঝিকঝিক করে উঠল, কিভাবে সে ভাবত যে বিখ্যাত, ভাল, গ্রেট হ্যারি পটার তাকে কখনো পছন্দ করবে না… 

যতক্ষণ রিডল কথা বলেছে ততক্ষণ ওর চোখ হ্যারির মুখ থেকে নড়েনি। ওই দুটি চোখে প্রায় একটা ক্ষুধার্ত দৃষ্টি রয়েছে।

খুবই বিরক্তিকর, এগারো বছরের বালিকার নির্বোধ সব ছোটখাট সমস্যার কথা শোনা, সে বলে চলল। কিন্তু আমি ধৈর্যশীল ছিলাম। আমি জবাব লিখে, আমি তার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলাম, আমি সহৃদয় ছিলাম। জিনি আমাকে শুধুই ভালবাসত।

তোমার মতো কেউ আমাকে বুঝতে পারেনি, টম…আমি এত খুশি যে এই ডায়রিটা পেয়েছি আমার মনের কথা বলবার জন্যে…যেন একজন বন্ধু যাকে আমি পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারি…

রিডল হাসল, একটা উচ্চ, শীতল হাসি, ওকে মানালো না সেই হাসিতে। হ্যারির ঘাড়ের নিচের চুল দাঁড়িয়ে গেল।

আমি যদি নিজে বলি, হ্যারি, যাকে আমার প্রয়োজন তাকে আমি সব সময়ই জাদুর প্রভাবে ফেলতে পারি। সুতরাং জিনি তার মনের সব কথা আমাকে বলল, এবং তার আত্মা হয়ে গেল ঠিক আমি যা চাই সেরকম। ওর সবচেয়ে গভীর ভয়ের, সবচেয়ে গভীর গোপন কথা জেনে আমি আরো শক্তিশালী হতে থাকলাম। আমি শক্তিশালী হলাম, ছোট্ট মিস উইসলির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। মিস উইসলিকে আমার কয়েকটা গোপন কথা দেয়ার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী, আমার আত্মার খানিকটা ধীরে ধীরে তার মধ্যে…

কি বলছ তুমি? বলল হ্যারি, ওর মুখের ভেতরটা শুকিয়ে গেছে।

তুমি কি এখনো আন্দাজ করতে পারনি, হ্যারি পটার? নরম করে বলল রিডল। জিনি উইসলি চেম্বার অব সিক্রেটস খুলেছে। স্কুলের মোরগগুলিকে সেই মেরেছে। দেয়ালে হুমকি দেয়া লেখাগুলিও এই লিখেছে। চারজন মাডব্লাড এবং স্কুইবের বেড়ালটার ওপর স্লিথারিনের সাপ ওই লেলিয়ে দিয়েছে।

না, ফিস ফিস করে বলল হ্যারি।

হ্যা বলল রিডল শান্তভাবে। অবশ্য প্রথমে ও জানত না ও কি করছে। তখন এটা ওর কাছে খুব মজার ছিল। তুমি যদি ওর তখনকার ডায়রির এন্ট্রিগুলো দেখতে…অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং, এভাবে লিখত…প্রিয় টম, মুখস্থ বলে যেতে লাগল, হ্যারির ভয় পাওয়া চেহারা দেখতে দেখতে, আমার মনে হয় আমি স্মৃতি হারিয়ে ফেলছি। আমার পোশাক মোরগের পালকে ভর্তি এবং আমি বুঝতে পারছি না ওগুলো এলো কোঋেকে। প্রিয় টম, আমি মনে করতে পারছি না। হ্যালোঈন রাতে আমি কি করেছি, কিন্তু একটা বেড়াল আক্রান্ত হয়েছিল এবং আমার সামনেটা রঙে মাখামাখি ছিল। প্রিয় টম, পার্সি আমাকে শুধু বলছে আমি ফ্যাকাসে হয়ে গেছি এবং আমি আর আমি নেই। আমার মনে হয় ও আমাকে সন্দেহ করছে…আজ আরেকটা হামলা হয়েছে এবং আমি জানি আমি কোথায় ছিলাম। টম, আমি কি করবো? আমার মনে হয় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি..আমার মনে হয় আমিই সকলকে আক্রমণ করছি, টম!।

হ্যারির হাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেছে, নখগুলো বসে গেছে তালুতে।

ডায়রিটাকে বিশ্বাস না করতে নির্বোধ জিনির অনেক দীর্ঘ সময় নিয়েছে, বলল রিডল। অবশেষে সে সন্দেহ করতে লাগল এবং ওটা ফেলে দিতে চেয়েছিল। এবং এখান থেকে তোমার অনুপ্রবেশ হ্যারি পটার। তুমি ওটা পেয়েছিলে, এবং আমি এর চেয়ে খুশি আর কিছুতে হইনি। সমস্ত লোকের মধ্যে কে পেয়েছে, তুমি, যার সঙ্গে দেখা করার জন্যে আমার সমচেয়ে বেশি অগ্রহ…

এবং তুমি কেন আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছ? বলল হ্যারি। ওর ভেতর দিয়ে রাগের স্রোত বয়ে যাচ্ছে, অনেক কষ্টে কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখতে পারছে।

বেশ, শোন, জিনি আমাকে তোমার সম্পর্কে সব কিছুই লিখেছে, বলল রিভল্। তোমার সমস্ত চমকপ্রদ ইতিহাস। হ্যারির কপালের দাগটার ওপর দিয়ে তার চোখের দৃষ্টি ঘুরে এলো, এবং তার চেহারার ক্ষুধার ভাবটা আরো বাড়ল। আমি জানতাম তোমার সম্পর্কে আমার আরো জানতে হবে, তোমার সঙ্গে কথা বলতে হবে, যদি পারি তোমার সঙ্গে দেখা করতে হবে। সেই কারণে, তোমার বিশ্বাস অর্জনের জন্য, তোমাকে আমার সেই বিখ্যাত গ্রেপ্তার, হ্যাগ্রিডকে আটকটা দেখাতে হয়েছিল।

হ্যাগ্রিড আমার বন্ধু, বলল হ্যারি, এখন তার স্বর কাঁপছে। এবং তুমি তাকে ফাঁদে ফেলেছ, তাই না? আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো ভুল করেছ, কিন্তু

রিডল হাসল তার সেই উচ্চকণ্ঠের হাসি।

হ্যাগ্রিডের বক্তব্যের বিরুদ্ধে আমার কথা, হ্যারি। তুমি ভাবেতে পারো ব্যাপারটা বৃদ্ধ আরমান্ডো ডিপেট-এর কাছে কেমন লেগেছিল। একদিকে, টম রিডল, গরীব কিন্তু ব্রিলিয়ান্ট, পিতৃমাতৃহীন কিন্তু এত সাহসী, স্কুল প্রিফেক্ট, আদর্শ ছাত্র; অন্য দিকে বিশালকায়, ভুল করা হ্যাগ্রিড, এক দুই সপ্তাহে ঝামেলা পাকায়, বিছানার নিচে ওয়েরউফ-এর বাচ্চা পালে, নিষিদ্ধ বনে চলে যায় দানবের পেছনে সময় ব্যয় করতে। কিন্তু আমি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি যে প্ল্যানটা এত ভালভাবে কাজ করবে এতে আমিও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম কেউ একজন বুঝে ফেলবে যে হ্যাগ্রিড স্লিথারিনের উত্তরাধিকার হতে পারে না। আমার পুরো পাঁচ বছর লেগেছে চেম্বার অব সিক্রেটস সম্পর্কে যা কিছু জানবার ছিল তা জানতে এবং গোপন প্রবেশদ্বারটা খোঁজ পেতে …যেন হ্যাগ্রিডের এসব করার মতো মস্তিষ্ক অথবা ক্ষমতা ছিল আর কি?

শুধুমাত্র ট্রান্সফিগিউরেশন শিক্ষক, ডাম্বলডোরই মনে হয় ভাবতেন যে হ্যাগ্রিড নির্দোষ। সেই ডিপেটকে সম্মত করিয়েছে হ্যাগ্রিডকে রেখে দিয়ে গেম টিচার হিসেবে ট্রেনিং দিতে। হ্যাঁ, আমি অনুমান করছি ডাম্বলডোর অন্দিাজ করতে পেরেছিলেন। অন্য শিক্ষকরা আমাকে যেমন পছন্দ করতেন, ডাম্বলডোর আমাকে কখনোই তেমন পছন্দ করেননি…

আমি বাজি ধরে বলতে পারি ডাম্বলডোর একেবারে তোমার ভেতরটা দেখতে পেত, দাঁতে দাঁত চেপে বলল হ্যারি।

হ্যাঁ, হ্যাগ্রিড বহিস্কার হওয়ার পর ডাম্বলডোর অবশ্যই আমার ওপর নজর রাখত, বলল রিডল বেপরোয়াভাবে। আমি জানতাম স্কুলে থাকতে চেম্বারটা আবার ভোলা নিরাপদ হবে না। কিন্তু এটা খুঁজে বের করতে আমার যে কয় বছর সময় গেছে সেটা আমি নষ্ট করতে পারি না। আমি ঠিক করলাম একটা ডায়রি রেখে যাব, পাতায় পাতায় আমার ষোল বছরটাকে সংরক্ষিত থাকবে ওটাতে, যেন একদিন, ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে আমি আরেকজনকে আমার পথে নিয়ে আসতে পারি, এবং সালাজার স্লিথারিনের মহৎ কর্ম শেষ করতে পারি।

কিন্তু, তুমি তো শেষ করতে পারোনি, বলল হ্যারি বিজয়ীর মতো। এবার কেউই মারা যায়নি, এমন কি বেড়ালটাও না। কয়েক ঘন্টার মধ্যে মেনড্রেকের ওষুধ তৈরি হয়ে যাবে এবং যারা যারা পাথর হয়ে গিয়েছিল তারা আবার সুস্থ হয়ে উঠবে।

আমি কি এরই মধ্যে তোমাকে বলিনি, আস্তে করে বলল রিডল, যে মাড়ব্লাড়দের হত্যা করা আমার কাছে আর কোন বিষয় নয়? অনেক মাস ধরেই আমার নতুন টার্গেট–তুমি।

হ্যারি ওর দিকে তাকিয়ে থাকল অপলকে।

কল্পনা করো আমার ডায়রি যখন আবার খোলা হলো তখন আমি কি রকম রেগে গিয়েছিলাম, জিনি

আমার কাছে লিখছিল, তুমি নও। সে তোমাকে ডায়রিটাসহ দেখেছিল, এবং ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কি হবে, যদি তুমি এটা ব্যবহারের কৌশল জেনে যাও এবং আমি তার সব গোপন কথা তোমাকে জানিয়ে দিই? কি হবে, আরো খারাপ, যদি তোমাকে জানিয়ে দিই কে মোরগগুলিকে গলা টিপে মেরেছে? সেই কারণে ওই বোকা মেয়েটা অপেক্ষা করেছে কখন ভোমারা রুমে এবং তোমার রুম থেকে ওটা সে সুযোগ বুঝে চুরি করেছে। কিন্তু আমি জানতাম আমাকে কি করতে হবে। আমার কাছে বরাবরই পরিস্কার ছিল যে তুমি স্লিপারিনের উত্তরাধিকারের সন্ধানে ছো। তোমার সম্পর্কে জিনি যা বলেছে, তা থেকে বুঝতে পারি, এই রহস্য সমাধানে তুমি বহু দূর যেতে পারে। বিশেষ করে যদি তোমার সবচেয়ে অন্তরঙ্গ কোন বন্ধু আক্রান্ত হয়। এবং জিনি আমাকে বলেছিল যে পুরো স্কুলে হৈচৈ পড়ে গিয়েছে যে তুমি পারসেলটাঙে কথা বলতে পারো…।

সেই কারণে আমি জিনিকে দিয়ে দেয়ালে ওরই বিদায় বার্তা লিখিয়ে ওকে এখানে এনে অপেক্ষা করিয়ে রেখেছি। ও লড়েছে এবং কেঁদেছে এবং খুবই বিরক্তিকর হয়ে গিয়েছিল। ওর মধ্যে আর খুব বেশি জীবন নেই, সে খুব বেশি দিয়ে দিয়েছে ডায়রিতে, আমাকে। এত যে, শেষ পর্যন্ত ওটার পাতাগুলি ত্যাগ করার জন্যে যথেষ্ট। আমি জানতাম তুমি আসবে। তোমার জন্যে আমার অনেক প্রশ্ন রয়েছে, হ্যারি পটার।

যেমন? হ্যারি থুথু ফেলল, মুঠো এখনও শক্ত হয়ে রয়েছে।

বেশ, বলল রিডল, একটা শিশু যার কোন অসাধারণ ম্যাজিক্যাল প্রতিভা নেই, সে কিভাবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জাদুকরকে পরাজিত করল? তুমি কি ভাবে বেঁচে গেলে শুধু কপালে একটা দাগ হওয়া ছাড়া, আর লর্ড ডোলডেমর্টর ক্ষমতাই ধ্বংস হয়ে গেল?

ওর ক্ষুধার্ত চোখে এখন অস্বাভাবিক লাল দ্যুতি।

তুমি কেন মাথা ঘামাচ্ছ আমি কি ভাবে বেঁচে গিয়েছি সেটা নিয়ে? বলল হ্যারি ধীরে ধীরে। ভোলডেমর্ট তো তোমার পরের সময়ের।

ভোলডেমর্ট, বলল রিডল নরম করে, আমার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ, হ্যারি পটার…

পকেট থেকে হ্যারির জাদুদণ্ডটা বের করল এবং বাতাসে ওটা দিয়ে আঁকল, তিনটা কাঁপা কাঁপা চকচকে শব্দ লিখল:

টম মারভোলো রিডল

তারপর সে জাদুদণ্ডটা বাতাসে একবার দোলালো, এবং তার নামের বর্ণগুলো নিজেদেরকে নতুন করে সাজালো:

আমি লর্ড ভোলডেমর্ট

দেখেছ? সে ফিস ফিস করে বলল। এই নামটা আমি আগেই হোগার্টস এ ব্যবহার করছিলাম, অবশ্য শুধুমাত্র আমার খুব অন্তরঙ্গ বন্ধুদের মাঝে। তুমি কি মনে করো আমি আমার নোংরা মাগল বাবার নামটা চিরদিনের জন্য ব্যবহার করবো? আমি, যার ধমণীতে সালাজার স্লিথারিনের রক্ত বইছে, মায়ের দিক থেকে? আমি, একজন জঘন্য, সাধারণ মাগলের নাম বয়ে বেড়াব, যে আমাকে আমার জন্মের আগেই ত্যাগ করেছিল, শুধু এই কারণে যে সে জানতে পেরেছিল যে তার স্ত্রী একজন ডাইনী? না, হ্যারি। আমি নিজের জন্য একটা নতুন নাম তৈরি করলাম, একটা নাম, যে নাম আমি জানতাম একদিন সারা দুনিয়ার জাদুকররা উচ্চারণ করতে ভয় পাবে, যখন আমি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাদুকর হবো!

হ্যারির মস্তিষ্ক যেন জাম হয়ে গেছে। সে বোধশক্তিহীনের মতো বিড়ল-এর দিকে তাকিয়ে রইল, সেই অনাথ বালকটির দিকে যে বড় হয়েছে হ্যারির পিতা মাতাকে হত্যা করার জন্য এবং আরো কত জনকে…অবশেষে সে যেন জোর করে কথা বলার শক্তি ফিরে পেলো।

কিন্তু তুমি নও, বলল সে। তার শান্ত স্বর ঘৃণা ভর্তি।

কি নই? তিক্ত স্বরে বলল রিডল।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাদুকর নও, বলল হ্যারি দ্রুত শ্বাস নিতে নিতে। তোমাকে হতাশ করার জন্যে দুঃখিত, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাদুকর হচ্ছেন আলবাস ডাম্বলডোর। সবাই তাই বলে। যখন তুমি ক্ষমতাশালী ছিলে তখনও, তুমি হোগার্টস নিয়ে নেয়ার সাহস করোনি। ডাম্বলডোর তোমার রূপটা দেখেতে পেয়েছিলেন যখন তুমি স্কুলে ছিলে এবং এখনও তিনিই তোমার মধ্যে ভীতি সঞ্চার করেন, যেখানেই তুমি লুকিয়ে থাকে না কেন।

রিডল-এর চেহারা থেকে হাসি খসে পড়ল, এখন তার চেহারার ভীষণ একটা কুৎসিত রূপ।

শুধু মাত্র আমার কথা উঠতেই ডাম্বলডোরকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে! হিস হিস করে সে বলল।

তুমি যেমন ভাবছ, তিনি সেরকম চলে যাননি! হ্যারি পাল্টা জবাব দিল। সে অনবরত কথা বলে যাচ্ছে, রিঙকে ভয় পাওয়াতে চাচ্ছে, বিশ্বাস করার চেয়ে এটা যেন সে ইচ্ছাই করছে।

রিডল ওর মুখ খুলল, কিন্তু জমে গেল।

কোন এক যায়গা থেকে গান ভেসে আসছে। শূন্য চেম্বারটা দেখার জন্যে এক পাক ঘুরল রিডল। গানের শব্দ বাড়ছে। ভীতিকর, মেরুদণ্ডে শির শির করা, অপার্থিব গান; হ্যারির মাথার চুল দাঁড়িয়ে গেছে এবং ওর হৃৎপিন্ডটা ফুলে যেন স্বাভাবিক আকৃতির দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। তারপর, একসময় যখন গান এমন তীব্রতায় পৌঁছাল যে হ্যারির মনে হলো ওর পাঁজরের হাড়গুলো পর্যন্ত কাঁপছে, সবচেয়ে কাছের পিলারের মাখা থেকে আগুনের শিখা বের হলো।

হাসের সমান একটি লাল টকটকে পাখি বেড়িয়ে এলো, ধনুকাকৃতির সিলিং-এ ওর অপার্থিব সঙ্গীত ছড়িয়ে দিল। পাখিটার চকচকে সোনালী লেজ ময়ূরের লেজের মতোই বড়, চকচকে সোনালী বাকা নখ, ওগুলো একটা জীর্ণ বান্ডিল বহন করছে।

সোজা হ্যারির দিকে উড়ে গেলো পাখিটা। ওর পায়ের কাছে জীর্ণ বোঝাটা ফেলে দিয়ে ওর কাঁধে বসল। ওটার বিশাল ডানা ভাঁজ করা হলে হ্যারি মুখ তুলে দেখল ওটার লম্বা,তীক্ষ্ণ সোনালী ঠোঁট রয়েছে পাখিটার এবং ছোট ছোট কালো চোখ।

পাখিটা গান গাওয়া বন্ধ করল। ওটা হ্যারির চিবুকের পাশে বসে থাকল স্থির, উষ্ণ, স্থির দৃষ্টিতে রিডল-এর দিকে তাকিয়ে রইল।

ওটা একট ফিনিক্স… বলল রিডল, ওটার দিকে পাল্টা তাকিয়ে রইল কঠোর দৃষ্টিতে।

ফোকস? হ্যারি দম নিল, এবং পাখিটার সোনালী নখ আস্তে করে ওর কাঁধে চাপ দিল।

এবং সেটা– বলল রিডল, ফোক্স যে জীর্ণ বান্ডিলটা ফেলেছে ওটার দিকে ইশারা করে, ওটা হচ্ছে স্কুলের পুরনো বাছাই হ্যাট।

আসলেও তাই। তালি দেয়া, ছেঁড়া, এবং ময়লা, হ্যাটটা পড়ে রয়েছে। নিঃশব্দে হ্যারির পায়ের কাছে।

রিডল আবার হাসছে। এত জোরে জোরে যে কালো চেম্বারটা ওর সাথে সাথে হাসির গমকে কেঁপে উঠল, যেন দশজন রিভ হাসছে এক সঙ্গে।

এই ডাম্বলডোর পাঠিয়েছে তার ডিফেন্ডারের জন্য! একটা গানের পাখি আর একট পুরনো হ্যাট! তুমি কি সাহস পাচ্ছো, হ্যারি পটার? তুমি কি নিরাপদ বোধ করছো?

হ্যারি জবাব দিল না। সে হয়তো বুঝতে পারছে না ফোকস এবং হ্যাট কিভাবে কাজে লাগবে কিন্তু এটুকু বোধ হলো যে সে আর এখন একা নয়, এবং সে বাড়তি সাহস নিয়ে অপেক্ষা করছে রিডল-এর হাসি থামার জন্যে।

কাজের কথা হোক, হ্যারি, বলল রিডল, এখনও বড় করে হাসছে। দুবার তোমার অতীতে, আমার ভবিষ্যতে আমাদের দেখা হয়েছিল। এবং দুবারই তোমাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়েছি। তুমি কি ভাবে বেঁচে গেলে? আমাকে সব বলো। যত বেশি তুমি কথা বলবে, নরম স্বরে যোগ করল, তত বেশি সময় তুমি বেঁচে থাকবে।

খুব দ্রুত চিন্তা করছে হ্যারি, ওর সুযোগ গুলি মেপে নিচ্ছে। রিডল-এর হাতে জাদুদণ্ড। ভার, হ্যারির রয়েছে ফোকস এবং বাছাই হ্যাট, ডুয়েল লড়তে গেলে কোনটাই বিশেষ সুবিধের হবে না। অবস্থা খারাপই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু রিডল ওখানে যতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে, ততক্ষণ জিনির ভেতর থেকে প্রাণ বেরোতে থাকবে… এবং এর মধ্যে, হ্যারি হঠাৎ লক্ষ্য করল, রিডল-এর কাঠামোটা পরিস্কার হচ্ছে, আরো কঠিন। যদি তার আর বিডল-এর মধ্যে লড়াই হতেই হয় তবে পরের চেয়ে আগেই ভাল।

কেউ জানে না আমাকে আক্রমণ করে তুমি কেন তোমার শক্তি হারিয়েছ, হঠাৎ বলল হ্যারি। আমি নিজেও জানি না। কিন্তু আমি জানি কেন তুমি আমাকে হত্যা করতে পারনি। কারণ আমার মা আমাকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। আমার সাধারণ মাগল–জাত মা, যোগ করল সে, অবদমিত রাগে কাঁপছে সে। আমাকে হত্যা করতে তিনিই তোমাকে থামিয়েছেন। এবং আসলে তোমাকে দেখেছি, আমি তোমাকে গত বছর দেখেছি। তুমি শেষ হয়ে গেছ। তুমি কোনভাবে শুধু বেঁচে আছ। ওখানেই তোমার সব শক্তি তোমাকে নিয়ে গেছে। তুমি এখন পালিয়ে থাক। তুমি কুৎসিৎ, তুমি নোংরা!

রিডল-এর চেহারা বিকৃত হয়ে গেল। তারপর যেন জোর করে একটা ভয়ংকর হাসি হাসল।

তাহলে। তোমার মা তোমাকে বাঁচতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। হ্যাঁ, ওটা একটা শক্তিশালী প্রতি–জাদু। আমি এখন বুঝতে পারছি–আসলে তোমার মধ্যে বিশেষ কিছু নেই। দেখো, আমি ভেবেছি। তোমার আমার মধ্যে অদ্ভুত মিল রয়েছে, হ্যারি পটার। এমনকি তুমিও হয়তো লক্ষ্য করেছ। দুজনেই অর্ধ বিশুদ্ধ রক্তের, এতিম, মাগলদের দ্বারা প্রতিপালিত। গ্রেট স্লিথারিনের পর সম্ভবত হোগার্টস-এ আমরাই দুজন পারসেলমাউথ–যারা সাপের ভাষায় কথা বলতে পারে এবং বোঝে। আমরা দুজন কোন কোন ক্ষেত্রে দেখতেও এক রকম…কিন্তু এ পর্যন্ত ভাগ্যই তোমাকে আমার হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ওটাই আমি জানতে চেয়েছিলাম।

হ্যারি দাঁড়িয়ে আছে, উত্তেজনায় টান টান, অপেক্ষা করছে রিভল্ কখন জাদুদণ্ড তোলে। কিন্তু রিডল-এর বাঁকা হাসি আবার বিস্তৃত হচ্ছে।

এখন, হ্যারি আমি তোমাকে একটু শিক্ষা দেবো। চলো আমরা সালাজার স্লিথারিনের উত্তরাধিকার লর্ড ভেলডেমর্ট-এর ক্ষমতার বিরুদ্ধে বিখ্যাত হ্যারি পটার এবং ডাম্বলডোর তাকে যে সবচেয়ে ভাল অস্ত্র দিতে পারে তার ক্ষমতার মোকাবেলা করি।

সে ফোকস আর বাছাই হ্যাটটার দিকে কৌতূহলোদ্দীপক দৃষ্টি দিল, তারপর হেঁটে দূরে গেল। হ্যারির বোধশক্তিহীন পায়ে ভয় ছড়িয়ে পড়ছে, দেখল রিডল দাঁড়িয়ে পড়েছে বড় পিলারগুলোর মাঝে এবং উপরে থিরিনের মুখের দিকে তাকাল, ওর অনেক ওপরে প্রায়ান্ধকারে। রিড় তার মুখ খুলল এবং সাপের মতো হিস করল–কি হ্যারি বুঝতে পারছে ও কি বলছে।

আমার সঙ্গে কথা বলো, স্লিথারিন, হোগার্টসের চারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।

হ্যারি ঘুরল মূর্তিটাকে দেখার জন্যে, ফোকস কেঁপে উঠল তার কাঁধের উপর।

স্লিথারিনের বিরাটাকারের পাথরের মুখ নড়ছে। ভয়ে আক্রান্ত হ্যারি দেখল ওর মুখ খুলছে, বড় আরো বড় হচ্ছে এক সময় বিশাল একটা গর্ত তৈরি হলো।

এবং কিছু একটা মূর্তিটার মুখের ভেতরে নড়ছে। গর্তের গভীর ভেতর থেকে কিছু একটা টলতে টলতে ঊঠছে।

হ্যারি পিছিয়ে গেলো, চেম্বারের অন্ধকার দেয়ালে গিয়ে ঠেকল। চোখ বন্ধ করল সজোরে, অনুভব করে ফোক-এর পাখা তার গাল স্পর্শ করছে, পাখিটা উড়ে গেলো। হ্যারি চিৎকার করতে চাইল, আমাকে ছেড়ে যেও না! কিন্তু সাপের রাজার সঙ্গে একটা ফিনিক্সের কি লড়বার কতটুকু ক্ষমত?

চেম্বারের পাথরের মেঝেতে বিশাল কিছু একটা পড়ল, হ্যারির মনে হলো ওটা কেঁপে উঠল। সে জানে কি হতে যাচ্ছে, সে আন্দাজ করতে পারছে, প্রায় দেখতে পাচ্ছে দৈত্যাকার সরিসৃপটা স্লিথারিনের মুখ থেকে পাঁক খুলছে। এরপর সে শুনতে পেলো রিডল-এর হিসস… ওকে হত্যা করো।

বাসিলিস্ক এগোচ্ছে হ্যারির দিকে, সে শুনতে পাচ্ছে ওটার ভারী শরীর প্রকান্ডভাবে পিছলিয়ে অগ্রসর হচ্ছে ধুলোমাখা মেঝে দিয়ে। এখনো চোখ বন্ধ, দেয়ালের পাশে পাশে দৌড়াল হ্যারি, হাত মেলে ধরে দিশা ঠিক করার চেষ্টা করছে। হাসছে রিড়…

পড়ে গেল হ্যারি। পাথরের উপর জোরে পড়েছে এবং মুখে রক্তের স্বাদ পেলো। সাপটা ওর থেকে এক ফুটও দূরে নয়, ওটা আসছে, শুনতে পাচ্ছে ও।

ওর ঠিক উপরে প্রচন্ড শব্দে যেন থুথুর বিস্ফোরণ হলো এবং তারপর ভারী কিছু একটা তাকে এত জোরে মারল যেন তাকে দেয়ালের সঙ্গে পিষে ফেলল। হ্যারি অপেক্ষা করছে ওর শরীরে বিষদাঁত বসার, শুনছে আরো হিস হিস শব্দ, কিছু একটা পাগলের মতো পিলারগুলোর সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খাচ্ছে।

আর সে থাকতে পারল না। চোখটা সরু করে যতটা খুললে দেখা যায় ততটা খুলল হ্যারি কি ঘটছে দেখার জন্যে।

প্রকান্ড সাপটা, উজ্জল, বিষাক্ত সবুজ, ওক গাছের গুঁড়ির মতো মোটা, শূণ্যে দাঁড়িয়ে গেছে অনেক দূর, এবং বিরাট ভোত মাখাটা মাতালের মতো দুলছে পিলারগুলোর মাঝখানে। হ্যারি কাঁপছে, সাপটা এদিকে ফিরলেই চোখ বন্ধ করে ফেলার জন্যে প্রস্তুত। এখন সে দেখল সাপটার মনোযোগ অন্যদিকে গেলো কিসে।

ওটার মাথার উপর উড়ে বেরাচ্ছে ফোকস এবং বাসিলিস্ক ওর তরবারির সমান লম্বা বিষদাঁত দিয়ে ওটাকে ছোবল মারা চেষ্টা করছে।

ফোকস ডাইভ দিল। ওর লম্বা সোনালী ঠোঁট দৃষ্টির বাইরে ডুবে গেলো এবং হঠাৎ কালো রক্তের একটা ঝর্ণা মেঝেটা ভিজিয়ে দিল। সাপটার লেজটা একটা ঝাপটা দিল, অল্পের জন্য বেঁচে গেল রি এবং হ্যারি ওর চোখ বন্ধ করবার আগেই ওটা ঘুরল। হ্যারি সোজা তাকাল ওটার মুখটার দিকে এবং দেখল ওটার চোখ, ওটার বড় বড় দুই ফোলা হলুদ চোখই ফুটো করে দিয়েছে ফিনিক্স পাখিটা; রক্তে মেঝে ভেসে যাচ্ছে এবং সাপটা যন্ত্রণায় মুখ দিয়ে থুথু নিক্ষেপ করছে।

না! হ্যারি শুনল চিৎকার করল রিডল। পাখিটাকে ছেড়ে দাও! পাখিটাকে ছাড়ো! ছেলেটা তোমার পেছনে! এখনও ওর গন্ধ পাবে! শুকে মারো!

অন্ধ সাপটা দুলল, বিভ্রান্ত, এখনো মারাত্মক। ফোকস এখনো ওটার মাথার উপর চক্কর মারছে, গাইছে ওর ভুতুড়ে গান, এবং বাসিলিস্কের আঁশটে নাকের এখানে ওখানে ঠোকর মারছে, রক্ত পড়ছে ওটার চোখ থেকে।

সাহায্য কর, আমাকে সাহায্য কর, বিড় বিড় করছে হ্যারি পাগলের মতো, কেউ, যে কেউ!

সাপের লেজটা চাবুকের মতো বাড়ি মারল মেঝের উপর দিয়ে। হ্যারি চট করে নিচু হয়ে গেলো। নরম কিছু একটা ওর মুখে মারল।

বাসিলিস্কটা হ্যারির হাতে বাছাই হ্যাটটা উড়িয়ে নিয়ে এসেছে। হ্যারি ওটা চট করে ধরে ফেলল। ওটাই এখন ওর একমাত্র ভরসা। মাথায় পড়ল ওটা এবং মেঝেতে ঝাঁপ দিল, বসিলিস্কের লেজ আরেকটা ঝাপটা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে।

সাহায্য করো…আমাকে সাহায্য করো…হ্যারি ভাবল, ওর চোখ হাটের ভেতরটায় স্থির। প্লিজ আমাকে সাহায্য করো!

জবাবে কোন কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো না হ্যারি। পরিবর্তে হাটটা সঙ্কুচিত হলো, যেন একটা অদৃশ্য হাত দৃঢ়ভাবে চিপে দিয়েছে।

হ্যারির মাথার উপরে কোনকিছু খুব শক্ত এবং ভারী কিছু পড়ল ভোতা আওয়াজ করে, ওকে প্রায় ফেলেই দিয়েছিল। চোখে তারা দেখল হ্যারি, উপরটা ধরে মাথার উপর থেকে হ্যাটটা নামাতে গেল ও, এবং এটার নিচে লম্বা এবং কঠিন কিছু পেল সে।

ঝিকমিক একটা রুপার তলোয়ার পাওয়া গেল হাটের নিচে। ওটার হাতল চকচক করছে ডিমের সমান সাইজের রুবি পাথরে।

ছেলেটাকে মারো! পাখিটাকে ছেড়ে দাও! ছেলেটা তোমার পেছনে রয়েছে। শোকো–ওর গন্ধ নাও!

দাঁড়িয়ে আছে হ্যারি, প্রস্তুত। বাসিলিস্কের মাথাটা নিচে নামছে; ওটার শরীর পাকাচ্ছে, পিলারে মারছে ওর দিকে ফিরছে সাপটা। এ দেখতে পাচ্ছে বড় বড় রক্তাক্ত চোখের কোটর, মুখটা হা করছে, ওকে গিলে খাওয়ার মতো হা, দুপাশে ওর হাতের তলোয়ারের সমান দাঁত, পাতলা, চকচকে এবং বিষভর্তি…

অন্ধ সাপটা লাফ দিল। হ্যারি সরে গেল এবং ওটা চেম্বার দেয়ালে আছাড় খেল। আবার লাফ দিল, এবং ওটার ছেরা জি হ্যারির এক পাশে বাড়ি মারল। দুই হাতে তলোয়ারটা তুলল হ্যারি।

বাসিলিস্কটা আবার লাফ দিল, এবার দিশা ঠিক হলো। তলোয়ারটা সাপের মুখের ভেতর দিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে ওটা একেবারে হাতল পর্যন্ত ঢুকিয়ে দিল হ্যারি।

উষ্ণ রক্ত হ্যারির হাত ভিজিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু কনুইয়ের ঠিক ওপরে প্রচন্ড ব্যথায় অসাড় হয়ে যাচ্ছে। লম্বা একটা বিষাক্ত প্রবেশ করছে ওর হাতে, গভীর থেকে আরো গভীরে। একটা প্রবল ঝুঁকি দিয়ে বাসিলিস্ক এক দিকে কাত হয়ে পড়ে যেতেই বিষদাঁতটা ভেঙ্গে গেল।

হ্যারিও পড়ে গেল দেয়ালের দিকে। শরীরে বিষ ছড়ানো বাসিলিঙ্কের দাঁতটা ধরল মুঠো করে, একটানে বের করে নিয়ে আসল। কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে। তীব্র ব্যথা এবং জ্বালা ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষতস্থান থেকে। বিষদাতটা। ফেলে দিয়ে ও দেখছে নিজের রক্তই ওর কাপড় ভিজিয়ে দিচ্ছে ধীরে ধীরে ওর দৃষ্টি কুয়াশাচ্ছন্ন হচ্ছে টের পেলো হ্যারি। চেম্বারটা আস্তে আস্তে ধূসর হয়ে মিষিয়ে যাচ্ছে যেন।

টকটকে লাল একটা একটা দলা ওর পাশ দিয়ে সাতরে গেল যেন এবং হ্যারি শুনতে পেল এর পেছনে নখের আওয়াজ।

ফোকস, বলল হ্যারি ভারি গলায়। তুমি সত্যি অসাধারণ, ফোক্স… ও টের পেল যেখানে সাপের বিষদাত ওর হাতে ঢুকেছিল সেখানে পাখিটা ওর সুন্দর মাথা রাখল।

পায়ের শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে শুনল হ্যারি, ওর সামনে একটা ঘন ছায়া এসে দাঁড়াল।

তুমি শেষ, তোমার মরণ হয়ে গেছে, হ্যারি পটার, ওর উপর থেকে রিডল এর গলার বলল। মৃত্যু। এমনকি ডাম্বলডোরের পাখিটাও জানে। দেখতে পাচ্ছো ওটা কি করছে, পটার? ওটা কাঁদছে।

হ্যারি চোখ পিট পিট করল। ফোর্স-এর মাথাটা একবার দৃষ্টিতে এসেই মিলিয়ে গেল। মোটা মোটা মুক্তোর মতো চোখের জলের ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে চকচকে পাখাগুলোর মধ্যে দিয়ে।

আমি এখানে বসে বসে তোমার মৃত্যুটা উপভোগ করব, হ্যারি পটার। সময় নাও। আমার অতো তাড়া নেই।

.

ঘুম পাচ্ছে হ্যারি পটারের। ওর চারপাশের সব কিছুই মনে হয় ঘুরছে।

তাহলে এইভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে বিখ্যাত হ্যারি পটার, শোনা যাচ্ছে যেন বহু দূর থেকে আসা রিডল-এর কণ্ঠ। একাকী চেম্বার অব সিক্রেটস-এ বন্ধুদের দ্বারা পরিত্যক্ত, অবশেষে ডার্ক লর্ডের কাছে পরাজিত, যাকে চ্যালেঞ্জ করাটাই ছিল বুদ্ধিহীনতার পরিচয়। তাড়াতাড়িই তুমি তোমার প্রিয় মাডব্লাড মায়ের কাছে চলে যাচ্ছ, হ্যারি…সে তোমাকে বারো বছরের সময় ধার করে এনে দিয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত লর্ড ভোল্ডেমর্ট তোমাকে শেষ করতে পারল, যেমন তুমি জান তাকে পারতেই হবে।

এই যদি মৃত্যু হয়, ভাবল হ্যারি, তাহলে মৃত্যু তো অত মন্দ নয়। এমনকি ব্যথাটাও ওকে ছেড়ে যাচ্ছে…

কিন্তু এটাই কি মৃত্যু? অন্ধকার হওয়ার চেয়ে চেম্বারটা আবার ওর দৃষ্টিতে ফিরে আসছে। হ্যারি মাথা ঝাঁকাল এবং সে দেখতে পাচ্ছে ওই যে ফোক্স, এখনও তার হাতে মাথা দিয়ে আছে। ক্ষতের চারপাশে মুক্তোর মতো একটা অশ্রুজল চকচক করছে. শুধু ক্ষতটাই আর নেই।

সরে যা, এই পাখি, হঠাৎ রিডল-এর কন্ঠ বলল। আমি বলছি ওর কাছ থেকে সরে যা

হ্যারি ওর মাথা তুলল। হ্যারির জাদুদণ্ডটা রিডল তাক করে রয়েছে ফোক্স-এর দিকে; বন্দুকে গুলি করার মতো প্রচন্ড শব্দ হলো এবং ফোকস আবার উড়ল লাল–সোনালী ঘূর্ণির মধ্যে।

ফিনিক্সের অশ্রুজল… বলল রিডল শান্ত স্বরে, হ্যারির হাতের দিকে তাকিয়ে। নিশ্চয়ই…রোগ সারাবার ক্ষমতা আছে…আমি ভুলে গিয়েছিলাম…

সে তাকাল হ্যারির চেহারার দিকে। কিন্তু এতে কোন তফাৎ হচ্ছে না। আসলে, আমি এভাবেই পছন্দ করি। শুধু তুমি আর আমি, হ্যারি পটার…তুমি আর আমি…

সে জাদুদণ্ডটা তুলল।

তারপর, পাখার এক ঝাপটায়, ফোকস উড়ে এলো মাথার ওপরে এবং কিছু একটা পড়ল হ্যারির কোলের উপর–ডায়রিটা।

এক মুহূর্তের জন্য, হ্যারি এবং রিডল দুজনই, তখনও জাদুদণ্ড তোলা, দেখল ডায়রিটাকে। তারপর, কোন চিন্তা না করে, কোন বিবেচনা না করে, যেন সব সময় এটাই করতে চেয়েছে, হ্যারি মেঝে থেকে বাসিলিস্কের বিষদাঁতটা তুলে নিল এবং ওটা সজোরে ঢুকিয়ে দিল একেবারে ডায়রিটার মাঝখানে।

একটা দীর্ঘ, ভয়াবহ, কান ফাটানো তীক্ষ্ণ আর্তনাদ শোনা গেল। ডায়রি থেকে স্রোতের মতো কালি বেরিয়ে আসছে, হ্যারির হাত ভরে দিল, মেঝেতে বন্যা বইয়ে দিল। রিডল পাক দিচ্ছে মোচড় খাচ্ছে, আর্তনাদ করছে এবং আঁচড়াচ্ছে এবং তারপর…

চলে গেছে সে। শব্দ করে হ্যারির জাদুদণ্ডটা মেঝেতে পড়ল এবং তারপর নিরবতা। নিরবতা শুধূ ডায়রি থেকে তখনও ফোঁটা ফোঁটা কালি পড়ছে সমানভাবে। বাসিলিস্কের বিষ ওটাকে পুড়িয়ে ঠিক মাঝখান দিয়ে গর্ত করেছে।

একটা ঝাড়া দিয়ে, হ্যারি উঠে দাঁড়াল। ওর মাথা ঘুরছে, যেন এই মাত্র ফ্লু পাউডার দিয়ে অনেক মাইল দূর থেকে এসেছে সে। ধীরে ধীরে, জাদুদণ্ড আর বাছাই হ্যাটটা তুলে নিল ও এবং অনেক জোরে একটা বড় টান দিয়ে বাসিলিস্কের মুখ থেকে চকচকে তলোয়ারটা খুলে নিল।

চেম্বারের শেষ প্রান্ত থেকে ভেসে এলো গোঙানীর আওয়াজ। জিনি নড়ছে। হ্যারি দ্রুত ওর কাছে গেলো, উঠে বসেছে জিনি। ওর বিস্মিত দৃষ্টি ঘুরছে মৃত বাসিলিস্কের বিরাট কায়া থেকে, হ্যারি এবং হ্যারির রক্ত মাখা কাপড়ে, তারপর ওর হাতের ডায়রিতে। কেঁপে উঠে সে একটা বড় দম নিল তারপর চোখের পানি পড়তে লাগল তার দুগাল বেয়ে।

হ্যারি–ওহ, হ্যারি–না–নাস্তার টেবিলে আমি তোমাকে সব বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পার্সির সামনে বলতে পারিনি। আমি, হ্যারি–কিন্তু আমি–আমি শপথ করছি আ–আমি করতে চাইনি–রি–রিডল আমাকে বাধ্য করেছে, সে আমাকে তার প্রভাবে নিয়ে ফেলেছিল–আর–তুমি কি ভাবে ওই–ওটাকে মেরেছ? রিডল কো–কোথায়? শেষ যা মনে পড়ছে সেটা হচ্ছে আমি ওই ডায়রিটার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছিল।

সব ঠিক আছে, বলল হ্যারি, ডায়রিটা তুলে ধরে জিনিকে বিষদাঁতের করা গর্তটা দেখালো, রিডল শেষ। দেখো! সে এবং বাসিলিস্ক দুজনই খতম। চলো জিনি, এখান থেকে বেরোতে হবে।

আমাকে বহিস্কার করা হবে! জিনি কাঁদছে, হ্যারি ওকে দাঁড়াতে সাহায্য করল। যখন থেকে বি–বিল হোগার্টস-এ এসেছে এবং এখন আমাকে ছাড়তে হবে আর–মা এবং বাবাই বা কি বলবে?

ফোকস ওদের জন্য অপেক্ষা করছে, চেম্বারের প্রবেশ পথের উপর উড়ছে। হ্যারি জিনিকে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে; মৃত বাসিলিস্কের নিশ্চল দেহটা পার হলো, যেন প্রতিধ্বনিত বিষাদের মধ্য দিয়ে আবার ফিরে এলো সুড়ঙ্গে। হ্যারি শুনল, পেছনে পাথরের দরজা দুটো বন্ধ হয়ে গেলো ক্ষীণ একটা হিসস করে।

সুড়ঙ্গ ধরে কয়েক মিনিট এগোবার পর, দূরে ধীরে ধীরে পাথর সরাবার আওয়াজ হ্যারির কানে এলো।

রন! হ্যারি চিৎকার কলল, দৌড়ে গেলো। জিনি ঠিক আছে। আমি নিয়ে এসেছি!

ও শুনতে পেলো রন একটা দম আটকানো উল্লাস ধ্বনি করল। পরের বাকটা ঘুরে দেখল ভেঙ্গে পড়া পাথরের দেয়ালের মধ্যে করা ফাঁকটার মধ্যে দিয়ে অস্থির রন তাকিয়ে আছে প্রবল আগ্রহ নিয়ে।

জিনি! ফাঁকের মধ্য দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল রন ওকে প্রথমে তুলে নেয়ার জন্যে। তুমি বেঁচে আছে। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না! কি হয়েছিল?

সে ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে চেয়েছিল, কিন্তু ও রনকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিল, কাঁদছে জিনি।

কিন্তু তুমি তো ঠিক আছ, জিনি, বলল রন, ওর দিকে হাস্যেজ্জল মুখে তাকিয়ে। এখন সব শেষ হয়ে গেছে, এটা–ওই পাখিটা কোত্থেকে এলো আবার?

জিনি পর ফোকস ভেতরে চলে এসেছে ফাঁকটা দিয়ে। ও ডাম্বলডোরের, বলল হ্যারি, ফাঁকের মধ্যে দিয়ে নিজেকে গলিয়ে।

এবং তুমি একটা তলোয়ার পেলে কোথায়? বলল রন, হ্যারির হাতে চকচকে অস্ত্রটার দিকে তাকিয়ে।

এখান থেকে বেরিয়ে সব ব্যাখ্যা করব, বলল হ্যারি জিনির দিকে একটা অপাঙ্গে লুকিয়ে।

কিন্তু

পরে, বলল হ্যারি দ্রুত। সে মনে করছে না, কে চেম্বার খুলেছে এটা এখনও বনকে সমিচীন হবে না, অন্তত জিনির সামনে নয়। লকহার্ট কোথায়?

ওখানে পেছনে, বলল রন, হেসে সুড়ঙ্গ থেকে পাইপের দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে। ওর অবস্থা খারাপ। এস দেখবে।

ফোকস-এর পেছন পেছন ওরা এগিয়ে গেলো। ওর বিশাল লাল টকটকে দুই ডানা অন্ধকারের মধ্যে মৃদু সোনালী আভা ছড়াচ্ছে। ওরা একেবারে পাইপের মুখ পর্যন্ত হেঁটে গেল। গিল্ডরয় লকহার্ট বসে রয়েছে, নিজের মনে গুণ গুণ করছেন।

ওর স্মৃতি হারিয়ে গেছে, বলল রন? মেমরি চার্ম আত্মঘাতি হয়েছে। ওঁকেই আঘাত করেছে আমাদের বদলে। এখন নিজে যে কে সে সম্পর্কে কোন ধারণাও নেই, কোথায় সে অথবা কে আমরা সেটাও বুঝতে পারছে না। আমি ওকে বলেছে এখানে এসে অপেক্ষা করতে। ও এখন নিজের জন্যেই বিপদ।

ওদের সবাইকে দেখল লকহার্ট, ভালভাবেই।

হ্যালো, সে বলল। অদ্ভুত যায়গা, এটা, তাই না? তোমরা কি এখানে থাক?

না, বলল রন, হ্যারির দিকে ভ্রু তুলে।

হ্যারি ঝুঁকে দীর্ঘ বাঁকা অন্ধকার পাইপের ভেতরটা দেখল।

তুমি কি ভেবেছ এটার ভেতর দিয়ে কিভাবে উপরে যাব? বলল সে রনকে।

রন ওর মাথা নাড়ল, কিন্তু ফিনিক্স পাখি ফোকস হ্যারির পাশ দিয়ে উড়ে গিয়ে ওর সামনে এসে ডানা ঝাপটাচ্ছে, অন্ধকারে ওর ছোট ছোট চোখ উজ্জল দেখাচ্ছে। ওর লম্বা সোনালী লেজের পাখাগুলো নাড়ছে। হ্যারি অনিশ্চিতভাবে ওর দিকে তাকাল।

মনে হচ্ছে ও চাচ্ছে যে তুমি ওর লেজটা ধরে থাকো… বলল রন, ওকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় মনে হচ্ছে। কিন্তু একটা পাখির পক্ষে তোমাকে উপরে টেনে তোলার জন্য তুমি অনেক ভারি।

 ফোকস, বলল হ্যারি, কোন সাধারণ পাখি নয়। সে অন্যদের দিকে তাকাল। আমাদের একজন আরেকজনকে ধরে থাকতে হবে। জিনি, রনের হাত ধরো। প্রফেসর লকহার্ট

সে তোমার কথা বলছে, রন বলল তীব্র স্বরে লকহার্টকে।

আপনি জিনির আরেক হাত ধরবেন।

তলোয়ার এবং বাছাই হ্যাটটা কোমরে খুঁজল হ্যারি, রন ধরল হ্যারির কাপড়ের পেছনটা, হ্যারি আঁকড়ে ধরল কোকস-এর লেজের অদ্ভুত রকমের উষ্ণ পাখাগুলো।

একটা অসাধারণ আলো মনে হচ্ছে ওর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে, এবং পরের মুহূর্তে, হুশ, পাইপ ধরে উপরের দিকে উড়ছে ওরা। হ্যারি শুনতে পাচ্ছে নিচে লকহার্ট এদিক ওদিক বাড়ি খাচ্ছে, বলছে, আশ্চর্য! আশ্চর্য! ঠিক ম্যাজিকের মতো! ঠাণ্ডা বাতাস যেন চাবুক মারছে হ্যারির চুলে। এবং যাত্রাটা এনজয় করা হতে বিরত হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেল–ওরা চারজনই মোনিং মার্টলের বাথরুমে ভেজা মেঝেতে এসে পড়ল। এবং লকহার্ট যখন ওর হাটটা ঠিক ঠাক করছেন, তখন পাইপটাকে ঢেকে রেখেছিল যে সিঙ্কটা, ওটা আবার ধীরে ধীরে নিজের যায়গায় ফিরে যাচ্ছে দেখা গেলো।

মার্টল খল খল করে উঠল।

তুমি এখনও জীবিত, ফাঁকা স্বরে বলল সে হ্যারিকে।

হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই, বলল সে কঠোরভাবে, চশমা থেকে রক্ত আর চটচটে আঠা মুছতে মুছতে।

ওহ, আচ্ছা…আমি শুধু ভাবছিলাম, যদি তুমি মারা যেতে আমার টয়লেটটা শেয়ার করার জন্যে তোমার জন্যে আমন্ত্রণ থাকত, বলল মার্টল, লজ্জায় সাদা হয়ে গেল সে।

অহ! বলল রন, বাইরের অন্ধকার জনশূন্য করিডোরে বেরিয়ে এলো ওরা বাথরুম ছেড়ে। হ্যারি! আমার মনে হয় মার্টল তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছে। তোমার প্রতিযোগী আছে জিনি!

কিন্তু এখনও নিরবে পড়ছে চোখের জল জিনির গাল বেয়ে।

এখন কোথায়? বলল রন, জিনির দিকে একটা উদ্বিগ্ন দৃষ্টি দিয়ে হ্যারিকে জিজ্ঞেস করলো।

ফোক্স পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, করিডোরে সোনালী আভা। ওরা ওর পেছন পেছন যাচ্ছে। এবং কয়েক মুহূর্ত পর নিজেদের আবিস্কার করল প্রফেসর ম্যাকগোনাগল-এর অফিসের বাইরে।

হ্যারি নক করল এবং ধাক্কা দিয়ে দরজাটা খুলল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *