১৬. দরোজার ফাঁদের ভেতর দিয়ে

দরোজার ফাঁদের ভেতর দিয়ে

সুদূর ভবিষ্যতে হ্যারি কখনও মনে করতে পারবে না এত সহজে কীভাবে সে সব পরীক্ষায় উতরে গেল। আর বিশেষ করে যখন ভলভেমর্টের আগমনের আশঙ্কা তার মাথার ওপর খাঁড়া হয়ে ঝুলছে।

এর মধ্যে বেশ কিছুদিন কেটে গেল। কুকুর ফ্লাফি এখনও নিশ্চয়ই সেই তালাবদ্ধ দরোজাটা পাহারা দিচ্ছে।

বড় ক্লাসরুমটা অত্যন্ত গরম। পরীক্ষার জন্য তাদের পালকের কলম দেয়া হয়েছে। এই কলমগুলো জাদু করা যেন কেউ পরীক্ষায় নকল না করতে পারে।

ব্যবহারিক পরীক্ষায় অধ্যাপক ফ্লিটউইক ছাত্রদের এক এক করে ডাকলেন। তারপর বললেন ডেস্কের ওপর নৃত্যরত আনারস তৈরি করতে। অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল তাদের নির্দেশ দিলেন, ইঁদুরকে নস্যির কৌটা বানাতে। ভালো ফলাফলের জন্য পয়েন্ট দেবার ব্যবস্থা ছিল। বিস্মৃতির ওষুধ তৈরি করার নির্দেশ দিয়ে অধ্যাপক স্নেইপ তাদের অলক্ষ্যে পেছনে দাঁড়িয়ে ঘাড়ে শ্বাস ফেলে সবাইকে নার্ভাস করেন।

কপালের তীব্র ব্যথা সত্ত্বেও হ্যারি যথাসাধ্য ভালো করল। বনে যাওয়ার পর থেকে সে কপালের যন্ত্রণায় ভুগছে। নেভিল ভেবেছিল, হ্যারি পরীক্ষায় ভালো করবে না। কারণ, তার মত হ্যারিরও রাতে ঘুম হয়নি। নেভিলের ধারণা পরীক্ষার দুশ্চিন্তায় ওর ঘুম হয়নি, কিন্তু আসলে প্রায়ই দুঃস্বপ্ন তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতো। মাঝে মাঝে সে ঘুমের ভেতর রক্তাক্ত ছায়ামূর্তি দেখতে পেতো।

হ্যারি বনে যা দেখেছে–তারা তা দেখেনি। অথবা এমনও হতে পারে যে তাদের কপালে হ্যারির মতো কাটা দাগ নেই। পাথর নিয়ে হ্যারি যতটা উদ্বিগ্ন রন বা হারমিওনকে তেমন উদ্বিগ্ন মনে হয় না। ভুলডেমর্টের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা তাদেরকেও ভাবনায় ফেলেছিল। অবশ্য ভলডের্ট তাদের কাছে স্বপ্নে এসে দেখা দিত না। তারা পরীক্ষার পড়া নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল যে–স্নেইপ বা অন্য কেউ কী করছেন বা কী করবেন-এ নিয়ে ভাবার মতো সময় তাদের হাতে ছিল না।

শেষ পরীক্ষাটা ছিল জাদুর ইতিহাসের ওপর। এক ঘণ্টার প্রশ্নোত্তর। অধ্যাপক রিনসের ভূত যখন তাদের বলল–কলম বন্ধ কর আর তোমাদের পার্চমেন্ট ভাঁজ কর তখন অন্যদের সাথে হ্যারিও ভীষণ খুশি না হয়ে পারলো না। পরীক্ষার ফলাফল বের হবার আগ পর্যন্ত তাদের ছুটি।

রৌদ্র করোজ্জ্বল মাঠে সবাইকে ডেকে হারমিওন বলল–আমি ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক সহজ।

হারমিওন সব সময় পরীক্ষার পর পরীক্ষার খাতাগুলো আবার দেখে। রন বলে যে এতে করে সে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই তারা মাঠে, হ্রদে, বৃক্ষের নিচে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে লাগল।

ঘাসের ওপর হাঁটতে হাঁটতে রন বলল–আবার এত রিভিসনের দরকার কি। পরীক্ষার চিন্তা বাদ দাও হাসিখুশি থাক হ্যারি। এখনও এক সপ্তাহ হাতে আছে। এক সপ্তাহ পর জানা যাবে আমাদের পরীক্ষা কেমন হলো। অতএব এখন চিন্তা করার কোন কারণ নেই। হ্যারি তার কপালে হাত বুলাচ্ছিল।

হ্যারি ক্রুদ্ধ স্বরে বলল–আমার এই কপালের কাটা দাগ সব সময় আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আমি যদি জানতে পারতাম-এর অর্থ কী। এর আগেও কষ্ট দিয়েছে তবে এত কষ্ট দেয়নি কখনও।

মাদাম পমফ্রের কাছে যাও। হারমিওন পরামর্শ দিল।

আমি অসুস্থ নই। হ্যারি জবাব দিল–আমার মনে হয় এটা একটা সতর্ক সংকেত, মনে হয় সামনে বিপদ আসছে।

রনও কাজ করতে পারছিল না, কারণ তখন খুব গরম আবহাওয়া ছিল।

রন আর হারমিওন হ্যারিকে সান্তুনা দিয়ে বলল–হ্যারি এত অস্থির হয়ো না। ঘাবড়াবার এত কি আছে, যেখানে ডাম্বলডোর রয়েছেন সেখানে পরশমণি নিরাপদ। আর অধ্যাপক স্নেইপ কখনোই ফ্লাফিকে কোন অবস্থাতেই কাবু করতে পারবেন না।

হ্যারি মাথা নাড়াল, কিন্তু একটা চিন্তা মাথা থেকে কিছুতেই দূর করতে পারছিল না। তার বার বার মনে হচ্ছিল, একটা কাজ তার করা উচিত ছিল কিন্তু করা হয়নি। যখন সে বিষয়টা হারমিওনের কাছে ব্যাখ্যা করল, হারমিওন বলল–সামনে পরীক্ষা। আমি রাত জেগে পড়ছিলাম। পড়ার মাঝখানে আমার মনে হল যে কাজটা আমরা শেষ করেছি।

হ্যারি জানে, তার অস্থির মনের সাথে কাজের কোন সম্পর্ক নেই। হঠাৎ সে দেখলো একটা পেঁচা স্কুলের দিকে উড়ে আসছে। ঠোঁটে একটা চিঠি। আকাশটা উজ্জ্বল, নীল। হ্যাগ্রিড ছাড়া আর কেউ হ্যারিকে চিঠি লেখে না। অবশ্য হ্যাগ্রিড কখনোই ডাম্বলডোরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন। হ্যাগ্রিড কখনোই বলবেন না, কীভাবে ফ্লাফিকে কাবু করা যায়–হ্যারি দ্রুত লাফ দিয়ে উঠে পড়ল। রন জানতে চাইল–কোথায় যাও।

আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। আমাদেরকে এখুনি হ্যাগ্রিডের কাছে যেতে হবে।

কেন? হারমিওন প্রশ্ন করল।

তুমি তো জানো, হ্যাগ্রিড কি চান? হ্যারি বলল–তিনি সবার আগে একটা ড্রাগন চান। অনেকেই পকেটে ড্রাগনের ডিম রাখে। এটা কিন্তু জাদু আইনের পরিপন্থী।

তুমি কী করতে চাও? রন জানতে চাইল। এ প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে হ্যারি বনের দিকে রওনা হল, রন ও হারমিওন তার পেছনে পেছনে গেল।

হ্যাগ্রিড বাইরে আরাম কেদারায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তার ট্রাউজার আর জামার আস্তিন গুটানো। মটরশুটি ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে পাশে রাখছিলো।

হ্যালো মুচকি হেসে হ্যাগ্রিড তাদের স্বাগত জানিয়ে বললেন পরীক্ষা তো শেষ। কি, একটু পানীয় পানের সময় হবে কী?

হ্যাঁ, তা হতে পারে। : বন বলল, কিন্তু হ্যারি ওর কথা থামিয়ে বললো–না, আমাদের একটু তাড়া আছে, হ্যাগ্রিড। আমরা একটা বিশেষ কারণে এখানে এসেছি। আপনার মনে আছে, আপনি যে রাতে নর্বার্টকে ডিমটা পেয়েছিলেন, তখন আপনি যে লোকটার সাথে তাস খেলছিলেন, সে লোকটি দেখতে কেমন।

আমার মনে নেই। হ্যাগ্রিড নির্লিপ্তভাবে জবাব দিল।

হ্যাগ্রিডের কথা শুনে তারা তিনজনই হতভম্ব হয়ে গেল। হ্যাগ্রিড বললেন, এখানে কত রকম লোক আসে। গ্রামের শেষ প্রান্তের পাবে মদ খেতে কত কিসিমের আজব লোক আসে। কেউ কেউ ড্রাগন ডিলার। ওই লোকটার মুখটাও তো আমি দেখতে পাইনি, মাথার টুপিটা এমন নিচু করে মুখ ঢেকে রেখেছিল। হ্যারি মটরশুটি বৌলের কাছে বসে পড়ল।

হ্যাগ্রিড, আপনি তার সাথে কি কথা বলেছেন। আপনি কি কখনও হোগার্টসের কথা উচ্চারণ করেছেন?

হয়ত বলে থাকতে পারি। হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন তাকে আমি এটা বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে হোগার্টসে আমি একজন গেইম কীপার। তিনি আমার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন আমি কী ধররে প্রাণী দেখাশোনা করি। আমি তাকে বলেছিলাম যে ড্রাগন আমার প্রিয় প্রাণী।

সে কি ফ্লাফির ব্যাপারে কোন আগ্রহ প্রকাশ করেছে?

হ্যারি জানতে চাইল।

হতে পারে, বলে হ্যাগ্রিড মনে করার চেষ্টা করলেন। বলল, হ্যা মনে পাড়েছে, আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ

আচ্ছা, হোগার্টসে তোমরা কটা তিন মাথাওয়ালা কুকুর দেখেছ? তাই আমি তাকে বলেছিলাম–তুমি যদি ওকে শান্ত করতে জান, তা হলে ফ্লাফি একটি কেকের মতো। গান বাজালেই সে নিদ্রার কোলে ঢলে পড়বে।

হ্যাগ্রিড হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বললেন-এসব তোমাদের বলা আমার উচিত হয়নি। যা বলেছি সব ভুলে যাও। তাকে চিন্তিত মনে হল উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে গিয়ে আবার ঘরে ফিরে এলেন। হ্যারি, রন আর হারমিওন কেউ কোন কথা বললো না।

বিষয়টা ডাম্বলডোরকে জানাতে হবে। হ্যারি বলল–ফ্লাফিকে কীভাবে বশ করা যায়, হ্যাগ্রিড ওই লোককে বলে দিয়েছেন। আমার ধারণা লোকটা–ছদ্মবেশে হয় স্নেইপ নতুবা ভোলাডেমর্ট। আমার ধারণা, ভালভোর আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন, আমার এটাও বিশ্বাস, ফিরে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন যদি বেন তাকে বাধা না দেয়।

ডাম্বলডোরের অফিস কোথায়?

তারা চারিদিকে দেখতে লাগলো, ডাম্বলডোরের অফিসে যাওয়ার কোন নির্দেশনা দেখা যায় কিনা। ডাম্বলডোর কোথায় থাকেন তারা জানে না কেউ তাদের বলেওনি। ডাম্বলডোরের বাসভবনে কেউ গিয়েছে কখনো, এমন কথাও তারা শোনেনি।

আমাদের করতে হবে… হ্যারি যখন কথা বলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই একটা কণ্ঠস্বর হল ঘর থেকে তাদের কানে ভেসে এল।

তোমরা তিনজন এখানে কী করছ? কণ্ঠস্বরটা ছিল অধ্যাপক ম্যাকগোনাগলের। তার হাতে একগাদা বই।

আমরা অধ্যাপক ডাম্বলডোরের সাথে দেখা করতে চাই। হারমিওন সাহসের সাথে বলল। হ্যারি, আর রন চুপ রইল।

ম্যাকগোনাগল বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করলেন–ডাম্বলডোরের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাও, কিন্তু কেন? একটু ঢোক গিলে হ্যারি বলল–বিষয়টা গোপনীয়।

অধ্যাপক ম্যাকগোনাগলের চেহারায় বিরক্তির চিহ্ন স্পষ্ট।

তিনি বললেন–দশ মিনিট আগে ডাম্বলডোর বের হয়েছেন। তিনি জাদু মন্ত্রণালয় থেকে জরুরী পেঁচা পেয়ে লন্ডন গেছেন।

তিনি চলে গেছেন? হ্যারি হতাশার সাথে মন্তব্য করল–তাহলে এখন কী হবে?

অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল বললেন–হ্যারি, অধ্যাপক ডাম্বলডোর খুব উঁচু মাপের জাদুকর। তার সময়ের মূল্য আছে।

কিন্তু এটাও তো খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়।

মি. পটার। জাদু মন্ত্রণালয়ের কাজের চাইতে কি তোমার কথা বলাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

কলড্রনটা বাতাসের দিকে ঠেলতে ঠেলতে হ্যারি বলল–প্রফেসর, বিষয়টা পরশমণি সংক্রান্ত।

অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল প্রত্যাশা কেন, কল্পনাও করতে পারেননি যে, তিনি এ রকম একটা কথা শুনবেন। অবাক বিস্ময়ে পাথরের মত তাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন এবং হাতের বইগুলো হাত থেকে পড়ে গেল। কিন্তু তিনি একটা বইও মাটি থেকে তুললেন না।

তোমরা এসব জানো কীভাবে? ম্যাকগোনাগল প্রশ্ন করলেন।

প্রফেসর–আমার মনে হয়–আমি জানি–অধ্যাপক স্নেইপ এটা চুরি করতে চাচ্ছেন। এই পাথরটা। তাই এ ব্যাপারে ডাম্বলডোরের সাথে আমাকে কথা বলতেই হবে।

সন্দেহ আর বিস্ময়ের দৃষ্টিতে ম্যাকগোনাগল হ্যারির দিকে তাকালেন। তারপর একটু থেমে বললেন–অধ্যাপক ডাম্বলডোর আগামীকাল ফিরে আসবেন। আমি বুঝতে পারছি না তোমরা কীভাবে পাথরটার খোঁজ পেলে। তবে নিশ্চিত থেকো–কেউই এটা চুরি করতে পারবে না। এটা এখন নিরাপদেই আছে।

কিন্তু প্রফেসর…

আমি কী বিষয়ে কথা বলছি সেটা আমি জানি। ম্যাকগোনাগল এই কথা বলে মাটি থেকে বইগুলো কুড়িয়ে নিলেন। তারপর একটু থেমে বললেন–তোমরা সবাই একটু বাইরে গিয়ে রোদ উপভোগ কর।

ম্যাকগোনাগল তাদের চোখের আড়ালে চলে যেতেই হ্যারি বলল আজ রাতেই স্নেইপ দরজার ফাঁদ পার হবেন। তার যা যা দরকার সবই তিনি হাতে পেয়ে গেছেন। ডাম্বলডোরকে কৌশলে বাইরে পাঠানো হয়েছে। আমি নিশ্চিত, ডাম্বলডোরের লন্ডন পৌঁছানোর পর জাদু মন্ত্রণালয়ও বিরাট ধাক্কা খাবে।

তাহলে আমরা কী করতে পারি?

হারমিওন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। হ্যারি ও রন একটু ঘুরে তাকাতেই দেখে স্নেইপ তাদের পাশে দাঁড়িয়ে।

তার দিকে তাকাতেই, গুড আফটারনুন, অদ্ভুত ধরনের হাসি হেসে স্নেইপ বললেন-এমন একটি দিনে তো তোমাদের এখানে থাকার কথা নয়।

আমরা হ্যারি কী বলতে কী বলবে, গুছিয়ে নিতে না পারায় তার কিছু বলা হলো না।

সাবধানে থেকো। এইভাবে ঘোরাফেরা করলে লোকে সন্দেহ করবে। আর তোমরা নিশ্চয়ই এটা চাইবে না যে, গ্রিফিল্ডর হাউজ আরো পয়েন্ট হারাক।

তারা বাইরে যেতে উদ্যত হলো। ঠিক তখনি স্নেইপ আবার তাদের ডাকলেন।

হ্যারি, আমি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি। আবার যদি তোমাকে এভাবে রাতে ঘোরাঘুরি করতে দেখি, তাহলে তোমাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

স্নেইপ স্টাফরুমের দিকে অগ্রসর হলেন।

হ্যারি রন ও হারমিওনের দিকে তাকাল।

আমাদের এখন যা করতে হবে। হ্যারি ফিস ফিস করে বলল আমাদের একজনকে অন্তত স্নেইপকে সব সময় চোখে চোখে রাখতে হবে। স্টাফ রুমের বাইরে তাকে ফলো করতে হবে। হারমিওন, তোমাকেই এ দায়িত্বটা নিতে হবে।

আমি কেন? হারমিওন প্রশ্ন করে।

কারণ, তুমি এ কাজটা ভালো করতে পারবে। ভান করবে, যেন তুমি ফ্লিটউইকের জন্য অপেক্ষা করছ। কেননা ফ্লিটউইকের সাথে তোমার পরিচয় আছে।

প্রথমে আপত্তি করলেও হারমিওন এই প্রস্তাবে রাজি হলো। হ্যারি বলল–আমাদের এখন চার তুলার করিডোরের বাইরে যাওয়া উচিত। রন, চলে এসো।

কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। যে দরোজাটা ফ্লাফি থেকে স্কুলটাকে পৃথক করেছে, সেই দরোজায় তারা হাজির হওয়া মাত্র সেখানে উপস্থিত হলেন অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল। তিনি তাদের দেখে রেগে আগুন, তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।

তিনি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন–মনে হচ্ছে, তোমরা কাউকেই তোয়াক্কা করার প্রয়োজন মনে করছ না। তোমরা তো একেবারেই সীমা ছাড়িয়ে গেছ। আমি যদি তোমাদের কাউকে এখানে আবার দেখি, আমি গ্রিফিল্ডর হাউজ থেকে আরো পঞ্চাশ পয়েন্ট কেটে নেব। হ্যাঁ, গ্রিফিল্ডর আমার নিজের হাউজ হওয়া সত্ত্বেও

হ্যারি আর রন কমনরুমে ফিরে এলো। হ্যারি শুধু এইটুকু বলেছে–যা হোক হারমিওন স্নেইপের ওপর নজর রাখছে। ঠিক তখনি মোটা মহিলার প্রতিকৃতিটি উন্মুক্ত হলো এবং হারমিওনও এসে উপস্থিত হলো।

হ্যারি, আমি দুঃখিত। হারমিওন বলল–স্নেইপ এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি করছি। আমি বললাম–আমি ফ্লিটউইকের জন্য অপেক্ষা করছি। ফ্লিটউইককে আনার জন্য স্নেইপ চলে গেলেন। আমিও চলে এসেছি। আমি জানি না স্নেইপ আসলে কোথায় গেছেন।

ঠিক আছে। হ্যারি জবাব দিল।

অন্য দুজন তার দিকে তাকিয়ে রইল। তার মুখমণ্ডল বিবর্ণ ও চোখ দুটো জ্বল জ্বল করছে।

হ্যারি বলল–আমি আজ রাতে বেরিয়ে পরশমণির খোঁজ করব।

তুমি কি পাগল হয়েছ? রন বলে উঠল।

না তুমি যেতে পারবে না। হারমিও বলল–বিশেষ করে অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল আর স্নেইপের সাবধানের পর। তোমাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করে দেবে।

হ্যারি জবাব দিল–বহিষ্কারই তো হবে আর কী? তোমরা কি বুঝতে পারছ না–স্নেইপ যদি পাথরটা পেয়ে যান তাহলে ভোলডেমর্ট ফিরে আসবে। সে তার ক্ষমতা ফিরে পেতে চায়। সে এলে হোগার্টসকে কালো জাদুর বিদ্যালয়ে পরিণত করবে। তোমরা কী মনে কর, গ্রিফিল্ডর হাউজ কাপ পেলেও তোমাদেরকে এবং তোমাদের পরিবারকে সে নিশ্চিন্তে থাকতে দেবে। আমার পরশমণি পাবার আগে ওরা যদি আমাকে ধরে ফেলে, আমার কোন দুঃখ থাকবে না। আমি বাড়ি ফিরে যাব। আজ রাতে আমি গোপন দরোজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করব। কেউ আমাকে ঠেকাতে পারবে না। মনে রেখো ভোলডেমট আমার বাবা–মাকে হত্যা করেছে।

তুমি ঠিকই বলেছ, হ্যারি। হারমিওন নিচু কণ্ঠে বলল।

হ্যারি বলল–আমি আমার অদৃশ্য হওয়ার পোশাকটা ব্যবহার করবো। ভাগ্য ভালো, পোশাকটা পাওয়া গেছে।

রন বলল-এ পোশাকটা কি আমাদের তিনজনকে ঢাকবে?

তিনজন কেন? হ্যারি অবাক হয়ে প্রশ্ন করল।

তুমি কি ভেবেছ–আমরা তোমাকে একা যেতে দেব?

অবশ্যই নয়। হারমিওন সাথে সাথে করল–তুমি কি করে ভাবলে, আমাদেরকে বাদ দিয়ে তুমি পরশপাথরের খোঁজে যাবে? আমি এক নজর বইগুলো দেখে আসি। হয়ত সেখানে জরুরী কিছু পেয়েও যেতে পারি। যদি আমরা ধরা পড়ি তাহলে তোমাদেরকেও তো স্কুল থেকে বের করে দেয়া হবে। হ্যারি বলল।

না, আমার বেলায় তা হবে না। হারমিওন বলল–ফ্লিটউইক আমাকে গোপনে বলেছেন যে, আমি তার পরীক্ষায় ১১২% নম্বর পেয়েছি। এরপর তারা আমাকে আর স্কুল থেকে বের করে দেবে না।

***

ডিনারশেষে তারা তিনজন কমনরুমে গিয়ে বসলো, তারা চিন্তিত। কেউ তাদের ধারে কাছেও ভিড়লো না। গ্রিফিন্ডারের কারো যেন হ্যারির সঙ্গে কোন কথা বলার প্রয়োজন নেই। এই প্রথমবারের মতো হ্যারি এ ধরনের উপেক্ষা নিয়ে মাথা ঘামালো না।

হারমিওন আপ্রাণ চেষ্টা করছিল, বইয়ে তাদের প্রয়োজনীয় কোন তথ্য পাওয়া যায় কিনা। হ্যারি আর রন তেমন কোন কথাবার্তা বলেনি। তাদের দুজনেরই মাথায় চিন্তা–আজ রাতে তারা যে কাজে বেরুবে সেটা নিয়ে।

এক সময় কমনরুম খালি হয়ে গেল। প্রায় সবাই শুতে গেছে।

অদৃশ্য হওয়ার পোশাকটা নিয়ে এসো। রন আস্তে আস্তে বলল।

হ্যারি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে ডর্মিটরিতে গেল। পোশাকটা নেবার সময় বাঁশির ওপর হ্যারির দৃষ্টি গেল। বাঁশিটি হ্যাগ্রিড তাকে তার জন্মদিনে উপহার দিয়েছিলেন। এই বাঁশিটা ফ্লাফির ওপর প্রয়োগ করলে কেমন হয়!

হ্যারি আবার কমনরুমে ফিরে এলো।

আমরা এখানেই পোশাকটা পরে দেখি তিনজনের হয় কিনা। আবার ফিলচ আমাদের কাউকে দেখে ফেলে–সে ভয়ও রয়েছে।

তোমরা কী করছ? ঘরের কোন থেকে একটি কন্ঠস্বর ভেসে এলো।

নেভিলের কণ্ঠস্বর।

পোশাকটা পেছনে ভাল করে হ্যারি তাড়াতাড়ি বলল–না, কিছু না।

তাদের অপরাধী অপরাধী মুখের দিকে তাকিয়ে নেভিল বলল–তোমরা নিশ্চয়ই আবার বাইরে যাচ্ছো? তোমরা আবারও ধরা পড়বে। আবার গ্রিফিল্ডর হাউজের পয়েন্ট কাটা যাবে।

হ্যারি জবাব দিল–তুমি বুঝতে পারবে না। আমাদের কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নেভিলও ওদের থামাবার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সে বলল আমি তোমাদের যেতে দেব না। প্রতিকৃতির গর্তের সামনে দাঁড়িয়ে নেভিল বলল–আমি তোমাদের বাধা দেব।

নেভিল রন বলল–সামনে থেকে সরে দাঁড়াও। বুদ্ধুর মত কাজ করো না।

আমাকে বুন্ধু বলল না। নেভিল বলল–আমি তোমাদেরকে আর নিয়ম ভাঙতে দেব না। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা তোমরাই আমাকে শিখিয়েছ।

আমাদের বিষয়ে তোমাকে একথা বলা হয়নি। রন হতাশার সুরে বলল–নেভিল তুমি বুঝতে পারছ না তুমি কি করছ?

রন এক পা আগে বাড়ল। নেভিল তার ব্যাঙ ট্রেভরকে মাটিতে ফেলে দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাঙটি অদৃশ্য হয়ে গেল।

আমাকে আঘাত করে যেতে পারলে যাও। নেভিল হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলল–আমি তোমাদের বাধা দেয়ার জন্য প্রস্তুত।

হ্যারি হারমিওনের দিকে তাকাল।

কিছু একটা করো। অস্থির হয়ে হ্যারি বলল।

হারমিওন আগে বাড়ল।

নেভিল, হারমিওন বলল–সত্যিই আমি তোমার ব্যবহারে খুবই দুঃখ পেয়েছি।

হারমিওন এবার তার জাদুদণ্ড ওঠাল।

পেট্ৰিফিকাশ টোটালাস। নেভিলের প্রতি ইঙ্গিত করে সে এই মন্ত্রটি উচ্চারণ করল।

নেভিলের মুষ্টিবদ্ধ হাত শিথিল হয়ে ঝুলে পড়ল। সারা পা–শরীর পাথর হয়ে গেল। তারপর একটু নড়ে উঠে দুম করে মেঝের ওপর পড়ে গেল।

হারমিওন দৌড়ে নেভিলের কাছে গেল। তার দাঁতে খিল লেগে গেছে। তাই সে কথা বলতে পারছে না। কেবল তীর চোখ কাজ করছে। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে নেভিল শুধু তাদের দিকে তাকিয়ে রইল।

তাকে তুমি কী করেছ? হ্যারি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।

আমি তার শরীর নিশ্চল করার জাদু করেছি। হারমিওন জবাব দিল নেভিলের ওপর এ জাদু প্রয়োগ করতে হয়েছে বলে আমার খুব খারাপ লাগছে।

নেভিল, আমরা এটা করতে বাধ্য হয়েছি। ব্যাখ্যা করার মতো সময়ও। আমার হাতে নেই। হ্যারি বলল।

নেভিল তুমি পরে এটা বুঝতে পারবে। নেভিলের দেহের ওপর দিয়ে যেতে যেতে রন বলল। তারা অদৃশ্য হওয়ার পোশাকটা পরে ফেলো।

নেভিলকে এভাবে বেহুশ অবস্থায় ফেলে যাওয়াও ঠিক হচ্ছে না। এই নিয়ে তারা তিনজনই খুব উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় প্রতিটি ছায়ামূর্তিকেই তারা ফিলচ বলে মনে করতে লাগল। আর প্রতি মুহূর্তে ভয় করছিল-এই বুঝি পিভিস তাদের ওপর লাফিয়ে পড়বে। সিঁড়ির গোড়ায় তারা মিসেস নরিসকে দেখতে পেল।

তাকে লাথি দিয়ে ফেলে দেই। রন হ্যারির কানে কানে বলল। হ্যারি মাথা নাড়িয়ে না বলল। নরিস তার উজ্জ্বল চোখ দিয়ে তাদের দিকে তাকালেও সে কিছু করেনি।

চার তলার সিঁড়িতে ওঠার আগে তারা কাউকেই দেখেনি। চার তলায় এসে পেল পিভসকে। পিভস কার্পেটটা ঝাড়ুছিল। পিভস চিৎকার করে উঠল–কে ওখানে?

সে তার কালো চোখ ছোট করে বলল–আমি দেখতে না পেলেও আমি জানি তোমরা এখানে আছে। সে ছন্দ করে প্রশ্ন করলো, তোমরা কারা? তোমরা কী ভূত না পেত্নি, না ছাত্র না জন্তু…।

সে বাতাসে ভর করে তাদের কাছে চলে এলো।

আমি কি ফিলচকে ডাকব? পিভস বলল। কোন কিছু যদি অদৃশ্য হয়ে আমার চারদিকে ঘোরে তাহলে আমাকে তাই করতে হবে।

হঠাৎ হ্যারির মাথায় একটি বুদ্ধি খেলে গেল। ধমকের স্বরে বলল, ব্লাডি ব্যারনের প্রয়োজন হলে সে অদৃশ্য হবেই। পিভস হ্যারিকে ব্যারন মনে করে ভয় পেয়ে কেঁপে উঠলো।

নরম তল তলে স্বরে পিভিস বলল, জ্বী স্যার, জ্বী স্যার।

নিজেকে ব্লাডি ব্যারন বলে পরিচয় দিয়ে হ্যারি অনায়াসে ছাড়া পেয়ে গেল।

পিভস। হ্যারি একটু কর্কশকণ্ঠে বলল–আমাদের এখানে কিছু কাজ আছে। আজ রাতটার জন্য এখান থেকে একটু দূরে সরে থাকো।

আমি অবশ্যই দূরে থাকব স্যার। পিভস খুব বিনয়ের সাথে বলল আশা করি আপনার কাজ ঠিকভাবে হবে। পিভস তৎক্ষণাৎ বিদায় নিল।

চমৎকার হ্যারি। রন ফিসফিস করে বলল।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তারা চার তলার করিডোরে পৌঁছলো। দরোজা আগে থেকেই খোলা ছিল।

আমরা এসে গেছি। হ্যারি নিচু কণ্ঠে বলল–স্নেইপ ইতোমধ্যেই ফ্লাফিকে অতিক্রম করেছেন।

দরোজা খোলা দেখে তাদের তিনজনেরই ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারিত হয়ে গেল।

পোশাকের ভেতরে থেকেই হ্যারি অন্য দুজনের উদ্দেশ্যে বলল তোমরা যদি ফিরে যেতে চাও যেতে পার, আমি তোমাদের দোষ দেব না। ফিরে যাওয়ার সময় অদৃশ্য হওয়ার পোশাকটা নিয়ে যেতে পারো। এটার প্রয়োজন আমার আর নেই।

বোকার মত কাজ করো না। রন বলল।

আমরা তোমার সাথেই আছি। হারমিওন বলল।

হ্যারি ধাক্কা দিয়ে দরোজাটা খুলল।

দরোজা খোলার সাথে সাথে কুকুরের গর্জন তাদের কানে ভেসে এলো।

কুকুরটা এর তিনটি নাক দিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে ঘ্রাণ নেয়ার চেষ্টা করছে। যদিও কুকুরের দৃষ্টি ছিল তাদের দিকে কিন্তু তাদেরকে দেখেনি।

তার পায়ে এটা কী? হারমিওন ফিসফিস করে প্রশ্ন করল।

বীণার মত মনে হচ্ছে। রন বলল নিশ্চয়ই অধ্যাপক স্নেইপ এটা ফেলে গেছেন। বাঁশি বাজানো শেষ হওয়া মাত্রই কুকুরগুলো জেগে উঠবে। হ্যারি বলল।

হ্যারি হ্যাগ্রিডের দেয়া বাঁশিটা ঠোঁটে লাগিয়ে বাজাতে শুরু করল। বাঁশিতে হ্যারি তেমন কোন সুর তুলল না। কিছুক্ষণের মধ্যে কুকুরের ঘেউ ঘেউ বন্ধ হলো। হ্যারির বাঁশী শুনে কুকুর আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ল। গর্জন স্তিমিত হয়ে এলো। হাটু মুড়ে কুকুরটা বসে পড়ল। তারপরই মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল।

অদৃশ্য হওয়ার পোশাক থেকে বেরিয়ে এসে ফাঁদের দরোজার দিকে যেতে যেতে রন বলল–বাঁশী বাজিয়ে যাও। এগিয়ে যেতে যেতে তারা যখন কুকুরের দানবীয় মাথার কাছাকাছি পৌঁছল তখন তারা কুকুরের নিঃশ্বাসের তাপ অনুভব করল।

রন বলল–আমার মনে হয়–চেষ্টা করলে আমরা দরোজাটা খুলতে পারব। হারমিওন, তুমি কি আমার সাথে যাবে?

না, আমি যাব না। হারমিওন বলল।

ঠিক আছে। দাঁতে দাঁত চেপে রন বলল। কুকুরের লেজ অতিক্রম করে রন ফাঁদের দরোজার হাতল চাপতেই দরোজাটা খুলে গেল।

তুমি কি কিছু দেখতে পাচ্ছ? হারমিওন উদ্বেগের সাথে জিজ্ঞেস করল।

রন বলল না, আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার। কিছু ধরে নিচে নামারও কোন উপায় নেই। আমাদেরকে লাফ দিতে হবে।

হ্যারির বাঁশি বাজানো তখনও শেষ হয়নি। তার দিকে তাকানোর জন্য হ্যারি রনকে ইশারা করল।

হ্যারিকে রন বলল–তুমি কি সবার আগে যেতে চাও? আমি জানি না স্থানটি কতটা গভীর। হ্যারি বাঁশি হারমিওনকে দিল, যাতে সে বাঁশি বাজিয়ে কুকুরটাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারে।

কয়েক মুহূর্ত বাঁশি বাজানো বন্ধ থাকায় কুকুরটা মৃদু স্বরে ঘেউ ঘেউ করল। হারমিওন যখন আবার বাঁশি বাজানো শুরু করল তখন কুকুরটা আবার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।

হ্যারি ওপরে উঠল। সেখান থেকে নিচে তাকিয়ে সে কোন খেই খুঁজে পেল না। হ্যারি মাথা নিচু করে তার হাতের আঙুলের ওপর ভর দিল। এবং দরোজার ফঁদের ভেতর দিয়ে ওপরে রনের দিকে তাকিয়ে বলল–আমার যদি কোন কিছু ঘটে তাহলে তোমরা আর আমার পেছনে আসবে না। সরাসরি পেঁচাঁদের কাছে চলে যাবে এবং হেডউইগকে অধ্যাপক ডাম্বলডোরের কাছে পাঠিয়ে দেবে।

ঠিক আছে। রন জবাব দিল। আশা করি এক মিনিটের ভেতর আবার দেখা হবে।

হ্যারি নিচে ঝাঁপ দিল।

গভীর, গভীর তলদেশ। সে নিচে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। কোথায় এর শেষ কে জানে। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস।

ধপ করে হ্যারি নরম কোন বস্তুর ওপর পড়ল। মনে হল নরম কোন উদ্ভিদ।

হ্যারি ওপরের দিকে চেঁচিয়ে বলল–রন, ঝাঁপ দাও। ভয় নেই। এখানে রম কিছু আছে।

রন লাফ দিয়ে হ্যারির কাছে চলে এলো।

জিনিসটা কী? রন প্রথমেই প্রশ্ন করল।

মনে হচ্ছে এক ধরনের উদ্ভিদ। তারপর হারমিওনের উদ্দেশ্যে বলল হারমিওন তুমিও চলে এসো।

দুরের বাঁশি বন্ধ হয়ে গেছে। বিকট আওয়াজে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শোনা গেল। হারমিওনও ঝাঁপ দিয়ে তাদের কাছে চলে এল।

আমরা এখন স্কুল থেকে অনেক অনেক দূরে। হারমিওন মন্তব্য বলল।

আমাদের ভাগ্য ভালো, এখানে উদ্ভিদ ছিল। রন বলল।

ভাগ্যবান! শব্দটি উচ্চারণ করেই হারমিওন চিৎকার করে উঠল।

তোমরা দুজনেই নিজেদের দিকে লক্ষ্য কর।

কোন কিছু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হারর্মিওন লাফ দিয়ে একটি স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করল। সে কোন কিছু থেকে আত্নরক্ষার জন্য হাত পা ছুড়ছে। সে যখন উদ্ভিদের ওপর লাফ দেয় তখন উদ্ভিদটার লতা সাপের মত পেচিয়ে তার পা জড়িয়ে ধরেছে।

হ্যারি আর রনের অজান্তেই সাপ জাতীয় উদ্ভিদ তাদের পা জড়িয়ে ধরেছে।

হারমিওন কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে লতার বন্ধন থেকে মুক্ত করলেও হ্যারি আর রনকে লতা শক্ত করে জাপটে ধরেছে। তারা বাধন শিথিল করার জন্য যতই চেষ্টা করছে বন্ধন ততই শক্ত হচ্ছে।

হারমিওন বলল–তোমরা নড়াচড়া করো না। আমি জানি এটা কী। এটাকে বলা হয় ডেভিলস স্নেয়ার বা শয়তানের কাজ।

আমি খুশি হয়েছি যে, তুমি লতাটার নাম জানো। এটাও একটা বিরাট সাহায্য। এই বলে রন তার গলা থেকে লতার বাঁধন খোলার চেষ্টা করল।

চুপ করে থাক। এটাকে কীভাবে হত্যা করা যায় সেটা আমি মনে করার চেষ্টা করছি। হারমিওন বলল।

রন চিৎকার করল–আমাকে বাঁচাও। আমি আর নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।

শয়তানের কাজ। অধ্যাপক স্প্রাউট এ বিষয়ে ক্লাসে কি বলেছিলেন হারমিওন মনে করতে পারছে না।

হ্যারি বলল আগুন জ্বালাও।

আগুন তো জ্বালাব। কিন্তু কাঠ কোথায়? হারমিওন প্রশ্ন করল।

তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? রন চিৎকার করল। তুমি না জাদুকর?

ওহ! ঠিক বলেছ। বলে হারমিওন তার জাদুদণ্ড বের করল।

কিছু মন্ত্র উচ্চারণ করল। বহ্নিশিখা ছুঁড়ে দিল। এ শিখ সে অধ্যাপক স্নেইপের দিকেও ছুঁড়ে দিয়েছিল। নীল ধোঁয়া এসে তার বাধন ঢিলে করে দিল। হ্যারি ও রন বাঁধন খুলে নিজেদের মুক্ত করল।

এরপর থেকে তুমি হার্বোলোজিতে আরো বেশি মনোযোগ দিও। হ্যারি তার মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলল।

আমিও তাই বলি। রন বলল, আর এটা আমাদের সৌভাগ্য যে, কোন সঙ্কটের সময় হ্যারি মাথা গরম করে না।

এই পথে যেতে হবে। হ্যারি একটা পথের দিকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

হঠাৎ পানির ছলাৎছল আওয়াজ।

কিছু শুনতে পাচ্ছ?

পাচ্ছি।

কোন ভূত প্রেত নয় তো।

বলা মুশকিল। তবে মনে হচ্ছে কিছু একটা নড়ছে।

হঠাৎ সামনে পড়ল উজ্জ্বল আলোকিত একটা ঘর। উঁচু সিলিং? আর্চের মতন। এক ঝাঁক পাখি উড়ছে। নানা রঙের পাখি। একদিকে একটা মোটা কাঠের দরোজা।

রন বলল–ঘরটা পেরোতে গেলে কি তারা আমাদেরকে আক্রমণ করবে?

হতেও পারে! হ্যারি বলল। তবে ওদের খুব খারাপ মনে হচ্ছে না। ওরা যদি সত্যিই আমাদেরকে আক্রমণ করে আমি দৌড় দেব।

হ্যারি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাত দিয়ে তার মুখ ঢাকল। তারপর ঘরের ভেতর দিয়ে দৌড় দিল।

হ্যারির আশঙ্কা ছিল পাখিরা তাদের তীক্ষ্ণ ঠোই বা নখ দিয়ে যেকোন সময় তাকে আক্রমণ করতে পারে।

কিন্তু ভাগ্য ভাল তেমন কিছু ঘটেনি। হ্যারি নির্বিঘ্নে দরোজার কাছে গিয়ে হাতল ধরে টান দিল, দরোজা খুলল না। দরোজাটা তালাবদ্ধ।

রন ও হারমিওন হ্যারিকে অনুসরণ করল। দরোজার সামনে এসে তারা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আপ্রাণ চেষ্টা করেও তারা দরোজাটাকে একটুও নড়াতে পারল না। হারমিওনের মন্ত্রোচ্চারণও কোন কাজে আসল না।

এখন কি হবে? হ্যারি প্রশ্ন করল।

এ পাখিগুলো নিশ্চয়ই সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নয়। হারমিওন মন্তব্য করল।

তারা পাখিগুলোকে লক্ষ্য করলো।

এগুলো পাখি নয়। এগুলো উড়ন্ত চাবি। হ্যারি মন্তব্য করল।

দেখ, ঝাড়ু পাওয়া যায় কিনা।

ঝাড়ু নিয়ে উড়ে গিয়ে তারা চাবিগুলো ধরতে গেল, কিন্তু জাদু করা চাবি তাদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেল।

হ্যারি ছিল শতাব্দীর কনিষ্ঠতম সিকার। অন্যান্য লোকের তুলনায় কোন কিছু চেনার তার ক্ষমতা ছিল বেশি। মিনিটখানেক পরই রঙধনুর মতো পালকের ভেতর একটা চাবি হ্যারির নজরে পড়ল। রূপালী রঙের চাবি। হ্যারি দ্রুত চাবি ছিনিয়ে নিয়ে নিচে নেমে এল।

হ্যারি চাবি নিয়ে তালায় ঢুকাল, কিন্তু কোন কাজ হলো না।

হ্যারি বলল–রন, ওই চাবিটা আন তো। ওই পাশের বড় বাঁকা চাবিটা।

আমাদের সবাইকে কাছাকাছি থাকতে হবে। হ্যারি বলল–রন তুমি ওপরে থাকে। আর হারমিওন, তুমি নিচে।

রন দ্রুতগতিতে হ্যারির দেখানো স্থানে উঠতে গিয়ে তার মাথা ছাদে ধাক্কা খেল এবং অল্পের জন্য ঝাড়ু থেকে পড়ে যেতে যেতে রক্ষা পেল।

আর নিচে যেও না। আমি চেষ্টা করছি। তুমি এটা ধর। ঠিক আছে। এখনই আমদের এটা ধরতে হবে।

ওপর থেকে রন নিচে ঝাঁপ দিল। হারমিওন গেল ওপরের দিকে। কিন্তু চাবিটা তাদের দুজনকেই ফাঁকি দিয়ে দেয়ালের দিকে চলে গেল। এরপর হ্যারি ওষ্টার পেছনে ছুটলো। চাবিটা কেবল দেয়ালের দিকে ছুটে যাচ্ছে। হ্যারি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। চাবিটাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। এবার আর চাবি তাকে ফাঁকি দিতে পারল না। ধরা দিতেই হল। নিচে রন আর হারমিওনের উল্লাস শোনা গেল।

ওরা নিচে নেমে দরোজার দিকে দৌড় দিল। তালায় চাবি ঢুকিয়ে ঘোরাতেই দরোজা খুলে গেল। তালা খোলার সাথে সাথেই চাবিটা আবার উড়ে চলে গেল।

তোমরা প্রস্তুত? হ্যারি রন আর হারমিওনকে জিজ্ঞেস করল। হ্যারি দরোজার হাতলে হাত রাখল। তারা দুজন মাথা নাড়িয়ে জানাল তারা প্রস্তুত।

হ্যারি দরোজা খুলে ফেলল।

ভেতরের ঘরটি অন্ধকার। এত অন্ধকার যে এ ঘর থেকে তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। কিন্তু যখন ঘরে প্রবেশ করল ঠিক তখনই আলোর বন্যা পুরো ঘরটিকে উদ্ভাসিত করে দিল। আলোতে তারা যা দেখল তা সত্যিই এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।

বিশাল এক দাবাবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালো পাথরের এক দাবা খেলোয়াড়। কিন্তু দড়ির কোন মুখ নেই।

এখন কী করা? হ্যারি ফিসফিস করে বলল।

এটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। রন জবাব দিল-এখন আমাদের ঘরের ভেতর ঢুকে আমাদের কাজ সারতে হবে।

তারা পেছনে আরেকটা দরোজা দেখতে পেল।

এখন কী হবে? নার্ভাস হয়ে হারমিওন প্রশ্ন করল।

আমার মনে হচ্ছে রন বলল–আমাদেরকে দাবাড়ু সাজতে হবে। তারা ব্ল্যাক নাইটের ঘোড়া স্পর্শ করার সাথে সাথেই পাথরে প্রাণ এল। ব্ল্যাক নাইট তাদের অভিবাদন জানাল! দাবার ছকের ঘুটি সব জীবন্ত হয়ে উঠল।

এই স্থান অতিক্রম করার জন্য আমাদেরকেও কি দাবা খেলায় যোগ দিতে হবে?

ব্ল্যাক নাইট মাথা নাড়াল। হ্যারি রন ও হারমিওনের দিকে তাকাল।

হ্যারি আর হারমিওন চুপ করে অপেক্ষা করছিল, রন যেন কি ভাবছে। অবশেষে সে বলল–আমার কথায় তোমরা কেউ কষ্ট পেয়ো না। আসলে তোমাদের দুজনেরই কেউই দাবা খুব ভালো খেলতে পারো না।

আমরা কিছু মনে করিনি। হ্যারি বলল–আমাদের কি করতে হবে কেবল সেটা বলে দাও।

ঠিক আছে, হ্যারি তুমি বিশপ হও। আর হারমিওন তুমি কিস্তির পরিবর্তে হ্যারির পাশে দাঁড়াও।

আর তুমি কী হবে?

রন বলল–আমি নাইট হব।

দাবা খেলা জমে উঠল।

রন আটকা পড়ে গেছে। সে বলল–আমাকে তোমরা ছেড়ে দাও।

–না, তা হতে পারে না। হ্যারি আর হারমিওন দুজনেই চিৎকার করে উঠল।

আরে এটাই তো দাবা খেলা। এখানে কাউকে না কাউকে ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। সাদা রানী আমাকে গ্রাস করবে। হোয়াইট কুইন। ফাঁকা জায়গা। তোমরা পালাও। হ্যারি, তোমার রাজাকে বাঁচাও।

কিন্তু।

তুমি কী স্নেইপকে আটকাতে চাও, না চাও না?

রন–

দেখ, যদি দেরি করো, তাহলে স্নেইপ পাথর পেয়ে যাবে। আর পরশমণি চিরকালের জন্য আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।

তোমরা প্রস্তুত? রন প্রশ্ন করল-এই আমি যাচ্ছি। তোমরা জেতার পর আর অপেক্ষা করবে না।

রন এগিয়ে গেল। সাদা রানী তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। লোহার হাত দিয়ে সে রনের মাথায় আঘাত করল। রন মেঝের ওপর ছিটকে পড়ল। সাদা রানী তাকে একদিকে ছুঁড়ে ফেললো। হারমিওন চিৎকার করে উঠল।

এবার হ্যারির যুদ্ধ সাদা রাজার সাথে। রাজা তার মুকুট খুলে হ্যারির দিকে ছুঁড়ে মারল।

তারা জয়লাভ করল। পাথরের দাবাড়ুরা মাথা নত করে ধীরে ধীরে ভেগে পড়লো। দরোজা খোলা রেখেই হ্যারি ও হারমিওন শেষবারের মতো রনের দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে এগুলো।

রনের কি হবে? হারমিওন জানতে চাইল।

রন ঠিক হয়ে যাবে। হ্যারির জবাব অনেকটা নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো।

এখন আমরা কি করবো।

আমরা স্প্রাউটকে পার হয়ে এলাম, শয়তান জাদুটা করেছে ফ্লিটউইক চাবিগুলোকে মন্ত্র পড়িয়ে রেখেছেন। ম্যাকগোনাগল দাবাড়দের ভেতর শারীরিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, যাতে তারা প্রয়োজনে জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে। এরপর বাকি থাকে অধ্যাপক কুইরেল আর স্নেইপ…।

তারা আরেকটা দরোজার সামনে উপস্থিত হলো।

সব ঠিক আছে তো? হ্যারি নিম্নকণ্ঠে বলল।

আগে বাড়ো।

হ্যারি দরোজাটা ধাক্কা দিয়ে খুলল।

বিশ্রী গন্ধ তাদের নাকে এল। বাধ্য হয়ে তারা নাকে কাপড় দিল। তাদের চোখ ভিজে গেল। তারা দেখল তাদের সামনে একটা বিরাট দানব। তারা যে দানবটাকে কুপোকাত করেছিল এটা তার চেয়ে অনেক বড়। মাথায় একটা কুঁজ।

আমাদের ভাগ্য ভালো, ওটার সাথে আমাদের যুদ্ধ করতে হয়নি। হ্যারি অস্ফুট কন্ঠে বলল। তারপর তারা দানবের বিশাল পা ডিঙ্গিয়ে অগ্রসর হলো। হ্যারি বলল–চলে এসো। আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না।

হ্যারি ধাক্কা দিয়ে পরের দরোজাটা খুলল। এরপর তাদের সামনে কি আসতে পারে দেখার মতো সাহস তাদের ছিল না। না, এখানে ভয় পাবার মত কোন কিছু ছিল না। একটা টেবিল, টেবিলের ওপর বিভিন্ন ধরনের সাতটা বোতল সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে।

স্নেইপের কাজ। হ্যারি বলে উঠল–আমাদের কী করা উচিত?

হঠাৎ দরোজার কাছে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠল। অর্থাৎ ওরা হ্যারি, রন আর হারমিওন-এখন আটকা পড়ে গেছে। হারমিওন বোতলের পাশ থেকে এক টুকরো কাগজ তুলে নিল। কাগজটাতে লেখা–

বিপদ তোমার সামনে যখন নিরাপদ তোমার পেছনে
আমাদের দুজন তোমাকে সাহায্য করবে যেভাবে তুমি পেতে চাও
আমাদের সাতজনের একজন তোমাকে সামনে নিয়ে যাবে
আরেকজন মদ্যপায়ী পেছনে নিয়ে আসার বাহন হবে
আমাদের দুজন শুধু নিখাঁদ মদ নিয়ে টিকে আছে
আমাদের তিন জন খুনি, অপেক্ষা করে আছে আড়ালে
পছন্দ করো, অন্যথায় আজীবন তোমাকে এখানে থাকতে হবে
আর তোমার পছন্দের জন্য আমরা চারটি সমাধান সূত্র দেব
এক, যদি তুমি বিষ গোপন করার চেষ্টা কর, সেটি হবে হাস্যকর
তুমি সর্বদা কিছু নিখাঁদ মদ পাবে বাম পাশে
দুই. যারা শেষে দাঁড়িয়ে আছে তাদের দেখবে ভিন্নতর
যদি তুমি সামনে এগোও কাউকেই বন্ধু হিসেবে পাবে না
তিন, যেমন পরীক্ষার তুমি দেখো, বিভিন্ন আকারের তারা
অথবা অভিন্ন; ডোয়ার্ক বা অতিকায় কেউই ভেতরে মরে না
চার, বামদিকের দ্বিতীয় ও ডানদিকের দ্বিতীয়টি যদি চেখে দেখ
অভিন্ন স্বাদের; যদিও প্রথম দেখায় ভিন্ন মনে হবে।

হারমিওন এই লেখার মধ্যে একটা ইঙ্গিত খুঁজে পেল। হ্যারি বিস্মিত হয়ে দেখল যে হারমিওন মুচকি মুচকি হাসছে।

চমৎকার। হারমিওন বললো। এটা কিন্তু জাদু নয়। এটা একটা ধাঁধা। অনেক বড় বড় জাদুকরের মাথায় একবিন্দু যুক্তি কাজ করে না। তারা জীবনের জন্য এখানে আটকা পড়ে।

তাহলে আমরা এই কাগজের লেখাই মেনে চলব, কি বল?–হ্যারি জিজ্ঞেস করল।

অবশ্যই। হারমিওন জবাব দিল–আমাদের যা যা দরকার সবই এই কাগজে লেখা আছে। এখানে সাতটা বোতল। তিনটা বিষাক্ত, দুটো মদের বোতল। একটা আমাদেরকে নিরাপত্তা দেবে। অন্যটা আমাদেরকে জাদুর জাল ভেদ করে নিয়ে যাবে।

কিন্তু কী করে বুঝব কোনটা পান করার মদ?

এক মিনিট। হ্যাঁ, পেয়েছি। ছোট বোতলটা। কাগজে লেখা আছে ওটাই আমাদেরকে কালো আগুনের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাবে–পরশমণির কাছে।

হ্যারি ছোট বোতলটার দিকে তাকাল।

এখানে তো মাত্র একজনের পানীয় আছে। হ্যারি বলল-এক চুমুকও তো হবে না।

তারা পরস্পরের দিকে তাকাল।

কোনটা তোমাকে আগুন থেকে বাইরে নিয়ে যাবে?

সারির শেষে একটি গোলাকার বোতলের দিকে হারমিওন ইশারা করল।

তুমি ওটা পান কর। হ্যারি বলল–না, না শোনে, ফিরে গিয়ে রনকে নিয়ে চাবির ঘর থেকে আগে ঝাড়ুটি নিয়ে এসো। এরপর রনকে নিয়ে এসো এবং ফাঁদের দরোজা দিয়ে কুকুরটা পার হও। তারপর যাবে পেঁচাঁদের কাছে। হেডউইগকে ডাম্বলডোরের কাছে পাঠিয়ে দাও। তাকে দরকার। আমি স্নেইপকে কিছুক্ষণ আটকে রাখতে পারব, কিন্তু তিনি আমার চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী।

কিন্তু হ্যারি, স্নেইপের সাথে যদি ইউ-নো-হু থাকে তাহলে কী হবে?

আমি এক সময় সৌভাগ্যবান ছিলাম। নয় কি? সে তার কপালের দাগের প্রতি ইশারা করল–আশা করি, সেই ভাগ্য আরেকবার আমাকে দেখা দেবে।

হারমিওনের ঠোঁট কাঁপছিল। সে হঠাৎ হ্যারির গায়ে পড়ে গিয়ে বাহু দিয়ে হ্যারিকে ধরে ফেলল।

হারমিওন। হ্যারি বিস্মিত হলো।

হারমিওন বলল–হ্যারি, তুমি কি জানো তুমি একজন বড় মাপের জাদুকর।

তোমার মত দক্ষ নই। হ্যারি বলল।

আমি! হারমিওন আশ্চর্যের সাথে হ্যারিকে জিজ্ঞেস করল। আমি তো বই পড়েছি আর বুদ্ধি খাঁটিয়েছি। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে। তা হলো বন্ধুত্ব আর সাহস। হ্যারি, তুমি সতর্ক থেকো।

হ্যারি হারমিওকে বলল–তুমি আগে চুমুক দাও। তুমি সঠিকভাবে জানো কোন বোতলটি কোন কাজের জন্য।

তা ঠিক। এই বলে হারমিওন গোলাকার বোতল থেকে মদ পান করলো।

বিষ নয়তো এটা? হ্যারি উদ্বেগের সাথে জিজ্ঞেস করল।

না–তবে বরফের মত ঠাণ্ডা। হারমিওন জবাব দিল।

তাড়াতাড়ি যাও।

গুডলাক। সাবধানে থেকো।

তুমি যাও।

বেগুনি আগুনের ভেতর দিয়ে হারমিওন পার হয়ে গেল।

হ্যারি এবার ছোট বোতলটাতে চুমুক দিল। এরপর সে কালো অগ্নিশিখার মুখোমুখি হওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালো। আমি আসছি। হ্যারি চিৎকার করে বলল।

মনে হলো তার দেহ যেন বরফে ভাসছে। সে বোতল রেখে এগিয়ে গেল। কালো শিখা তাকে ঘিরে ধরল। সে কিন্তু কিছুই টের পেল না। কিছুক্ষণ শুধু কালো আগুন ছাড়া আর কিছুই দেখা গেল না।

তারপর একদম ওপরে। শেষ চেম্বার। সেখানে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি স্নেইপও নন, এমনকি ভোলডেমর্টও নন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *