১৩. নিকোলাস ফ্লামেল

নিকোলাস ফ্লামেল

অধ্যাপক ডাম্বলডোরের পরামর্শের পর হ্যারি আর সেই আয়নার কাছে যায়নি। তাই তার অদৃশ্য হওয়ার পোশাক বড়দিনের ছুটিতে তার ট্রাংকের মধ্যে রয়ে গেল। তবু হ্যারি চেষ্টা করেও সেই আয়নার কথা ভুলতে পারে না। প্রতি রাতে সে দুঃস্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্নে দেখে তার বাবা মা, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই তা অদৃশ্য হয়ে যায়। তারপর অট্টহাসির শব্দ।

রন বলল–অধ্যাপক ডাম্বলডোর ঠিকই বলেছেন। এই আয়না মানুষকে পাগল করে দিতে পারে।

ক্লাস শুরু হবার আগে গতকালই হারমিওন ফিরে এসেছে। সে বিষয়টা অন্য দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করল। হ্যারি পর পর তিন রাত বিছানায় না থেকে আয়না দেখতে গিয়েছে-একথা শুনেই সে শিউরে উঠল। সে শঙ্কিত, যদি কেয়ারটেকার ফিলচ দেখে ফেলত তা হলে কি হত। নিকোলাস ফ্লামেলের ব্যাপারে কোন তথ্য সংগৃহীত না হওয়ায় সেও হতাশ।

ফ্লামেল সম্পর্কে জানার ব্যাপারে হ্যারি এখনও হাল ছাড়েনি। লাইব্রেরিতে অনেক বই খোঁজাখুঁজি করেও তারা ফ্লামেলের ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেনি। তবে ব্যারির মনে পড়ছে সে কোথায় যেন ফ্লামেলের নাম পড়েছে।

ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ায় এখন তাদের হাতে আগের মত সময় নেই। প্রতিদিন বিরতির সময় তারা লাইব্রেরিতে বই খোঁজে। দুজনকেই খুঁজতে হচ্ছে। কারণ কিডিচ প্রতিযোগিতার জন্য হ্যারিকে অনুশীলনে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়েছে। দলের জন্য উড় এখন দ্বিগুণ পরিশ্রম করছে। লাগাতার বৃষ্টি সত্ত্বেও উডের উৎসাহে কোন ভাটা পড়ল না। উইসলি ভাইয়েরা উডের অতি উৎসাহের বিরুদ্ধে আপত্তি করলেও হ্যারি ছিল উডের পক্ষে। তাদের পরবর্তী খেলা হাফলপাফ হাউজের বিরুদ্ধে। এ খেলায় যদি জেতা যায় তাহলে গ্রিফিল্ডর হাউজ স্লিদারিন হাউজের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। খেলার অনুশীলন শুরু হওয়ার পর থেকে হ্যারির দুঃস্বপ্নও কমে গেল। খেলা ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সময় নাই তার।

কর্দমাক্ত মাঠে অনুশীলন চলছে। একদিন উড় রন আর তার ভাইয়ের ওপর খুব ক্ষেপে গেল। কারণ তারা ডাইভিং বোমা ও ঝাড়ু থেকে পড়ে যাবার ভান করেছিল।

উড চেঁচিয়ে বলল–তোমরা কি ফাজলামি বন্ধ করবে। এসব করলে তো খেলায় জেতা যাবে না। মনে রাখবে, এবার রেফারি হবেন অধ্যাপক স্নেইপ। তিনি অজুহাত পেলেই গ্লিফিল্ডর হাউজের পয়েন্ট কেটে নেবেন। একথা শুনে জর্জ ওয়েসলি সত্যি সত্যিই ঝাড়ু থেকে পড়ে গেল।

জর্জ বলল, অধ্যাপক স্নেইপ রেফারি? এর আগে কি কোন খেলায় তিনি রেফারি ছিলেন? আর তিনি রেফারি হলে খেলা তো তিনি নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করবেন না।

উড বলল-এখানে আমার কিছুই করার নাই। আমাদের ভালো খেলতে হবে। তাহলেই স্নেইপ কোন অজুহাত খুঁজে পাবেন না।

হ্যারি চায় না যে সে যখন খেলবে তখন স্নেইপ সেখানে থাকুন। এর পেছনে আরেকটি কারণ আছে…।

অনুশীলন শেষে খেলোয়াড়রা যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল তখন রন আর হারমিওনের সাথে দাবা খেলার জন্য হ্যারি সরাসরি গ্রিফিল্ডর হাউজের কমনরুমে চলে এল। সেখানে হারমিওন ও রন দাবা খেলছিল।

দাবা খেলায় হারমিওনকে হারানো কঠিন। হ্যারির ও রন মনে করে হারমিওনের জন্য এই খেলাটাই সবচেয়ে উপযুক্ত। হ্যারি রনের পাশে গিয়ে বসতেই রন বলল, এখন আমার সাথে কথা বলবে না, আমার মনযোগ নষ্ট হবে বলেই হ্যারির দিকে তাকাল। হ্যারিকে খুব চিন্তিত দেখে রন নিজেই কথা বলল–কি ব্যাপার, তুমি এত কী ভাবছ?

হ্যারি খুব শীতলকণ্ঠে বলল–চক্রান্ত করে স্নেইপ কিচি প্রতিযোগিতার রেফারি হয়েছেন।

তাহলে তুমি খেলো না। হারমিওন বলল।

তুমি বল তুমি অসুস্থ। রন পরামর্শ দিল।

তুমি ভান কর তোমার পা ভেঙে গেছে। হারমিওন বলল।

সত্যি সত্যিই পা ভেঙে ফেল। রন পরামর্শ দিল।

হ্যারি বলল-এটা তো সম্ভব নয়। আমাদের দলে কোন রিজার্ভ খেলোয়াড় নেই। আমি না থাকলে গ্রিফিল্ডর হাউজ খেলতেই পারবে না।

ঠিক এ সময়ে নেভিল ঘরে প্রবেশ করল। সে কীভাবে প্রতিকৃতির গর্ত দিয়ে এত ওপরে উঠল কেউ সেটা বলতে পারবে না, কারণ তার পা ছিল অভিশপ্ত। দুপা জোড়া লাগা। নিশ্চয়ই সে ব্যাঙ-এর মত লাফিয়ে লাফিয়ে এসেছে।

নেভিলকে দেখে সবাই হাসলেও হারমিওন হাসল না। হারমিওন তাকে প্রতি–অভিশাপ দিলে তার পা দুভাগ হয়ে গেল। কাঁপতে কাঁপতে সে পায়ের ওপর সোজা হয়ে দাঁড়াল।

কি হয়েছিল? হারমিওন তাকে হ্যারি আর রনের পাশে বসবার সময় জিজ্ঞেস করল।

নেভিল বলল–লাইব্রেরির বাইরে ম্যালফয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। সে অনুশীলনের জন্য একজনকে খুঁজছিল।

তুমি এখনই বিষয়টা অধ্যাপক ম্যাকগোনাগলকে জানাও।

নেভিল মাথা নেড়ে বলল–আমি সেটা পারব না। তাহলে আরো ঝামেলা হবে।

তাকে তোমার মোকাবিলা করতে হবে। রন নেভিলকে বলল–সে সবার মাথার ওপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে। সে যা করবে তার সব মেনে নেব, তা হতে পারে না।

আমি তা পারব না। আমাকে বলার দরকার নেই যে গ্রিফিরে থাকার মত সাহস আমার নেই। নেভিল বললো।

হ্যারি তার জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা চকোলেট ফ্রগ বের করল। হারমিওন তাকে বড়দিনের উপহার হিসেবে যে বাক্সটা পাঠিয়েছিল এটাই ছিল সে বাক্সের শেষ চকোলেট ফ্রগ। হ্যারি এটা নেভিলকে দিলে সে খুশিতে আত্মহারা হলো।

হ্যারি বলল–ম্যালফয়কে এত ভয় পাও কেন, তুমি বারোজন ম্যালফয়ের সমান। তোমার কি মনে নেই সেই হ্যাটটা তোমার জন্য গ্রিফিল্ডর হাউজ নির্বাচিত করেছিল আর ম্যালফয়ের জন্য করেছিল স্লিদারিন হাউজ?

চকোলেট ফ্লগের প্যাকেট খুলতে খুলতে নেভিলের মুখে মৃদু হাসি দেখা দিল।

ধন্যবাদ হ্যারি… আমি এবার ঘুমোতে যাচ্ছি… ও তুমি তো কার্ড জমাও, এই কার্ডটা নাও। সে চকোলেট ফ্লগের প্যাকেটের কার্ডটা হ্যারিকে দিল। নেভিল চলে গেলে হ্যারি কার্ডটা দেখল।

আর ডাম্বলডোর। হ্যারি মন্তব্য করল।

হ্যারি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আবার সে কার্ডের পেছনে দেখতে লাগল। সেখানে কার্ডের জাদুকর সম্পর্কে তথ্য থাকে।

তারপর হ্যারি হঠাৎ চিৎকার করে উঠল–পেয়েছি। আমি পেয়েছি। নিকোলাস ফ্লামেলকে পেয়েছি। ১৯৪৫ সালে একটা জাদু প্রতিযোগিতায় অধ্যাপক ডাম্বলডোর তার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

হারমিওন লাফ দিয়ে উঠল। হোমটাস্কের প্রথম অংশের মার্ক পাওয়ার পর হারমিওনকে আর কখনো এত উত্তেজিত দেখা যায়নি। তোমরা এখানেই থাকো। এই বলে হেমিওন সিঁড়ি দিয়ে উঠে মেয়েদের ডর্মিটরিতে চলে গেল। হ্যারি আর রন দৃষ্টি বিনিময় করার পূর্বেই সে বিশাল মোটা একটা বই হাতে ফিরে এল।

হারমিওন বলল-এ বইটা আমি কয়েক সপ্তাহ আগে লাইব্রেরি থেকে এনেছিলাম, কিন্তু পড়ার সময় পাইনি। তারপর হারমিওন রহস্যময় সুরে বলল–নিকোলাস ফ্লামেল কে জানো? ফ্লামেল হচ্ছে আমাদের জানা লোকদের মধ্যে পরশমণির একমাত্র আবিষ্কারক।

পরশমণি?

হ্যাঁ, পরশমণি। ফিলজোফার্স স্টোন।

সেটা কি?

আগে বইয়ের এ জায়গাটা পড়।

হ্যারি আর রন পড়তে লাগল। লেখা আছে–

রসায়নশাস্ত্রের প্রাচীন গবেষণায় যা পাওয়া গেছে
তা হলো ফিলোসফারস স্টোন-এ রয়েছে
কিংবদন্তী মর্মবস্তু, বিস্ময়কর ক্ষমতা
যেকোন ধাতু সোনা হয়ে যাবে ছোঁয়ালে
সে পরশ পাথর; এ পাথর জীবনের অমরত্ব সুধা
যে পান করবে সে হবে চিরঞ্জীব।

ফিলোসফারস স্টোন নিয়ে বহু গল্প শুনেছি
শতকের পর শতক; কিন্তু এখন একটি পাথরই
আছে নিকোলাস ফ্লামেলের কাছে
যিনি নিজেও একজন রসায়নবিদ ও অপেরা প্রেমিক
যিনি গত বছর তার ৬৬৫তম জন্মদিন পালন
করেছেন; যিনি ডিভোন-এ সস্ত্রীক যাপন করেন
ধীরস্থির জীবন বর্ষব্যাপী (ছয়শত আটান্ন)।

রন ও হ্যারির পড়া শেষ হলে হারমিওন বলল–আমার ধারণা ওই কুকুরটাই ফ্লামেলের পরশমণি পাহারা দিচ্ছে। এটা ডাম্বলডোরেরও দায়িত্ব বটে। তারা দুজনে বন্ধু। তাই তিনি চান এটা গ্রিংগট থেকে বাইরে থাকুক।

হ্যারি বলল–যে পাথর সব ধাতুকে সোনা করে, মানুষকে অমর করে, এমন একটি পাথরের পেছনে স্নেইপ তো ছুটবেনই। এতে আশ্চর্যের কী আছে। যেকোন লোকই এই পাথরের পেছনে ছুটবে।

রন বলল–বইটাতে উল্লেখ আছে নিকোলাস ফ্লামেল সম্প্রতি তার ৬৬৬তম জন্মবার্ষিকী পালন করেছেন।

পরদিন কালো জাদুর ক্লাসে ক্লাস লেকচার নোট করার সময়ও হ্যারি আর রন ভাবছিল যদি একটা পরশমণি পেয়ে যায় তাহলে তারা কী করবে। রম বলল–আমি নিজে একটা কিডিচ দল কিনে ফেলব। ব্যারির মনে পড়ল শিগগিরই কিডিচ প্রতিযোগিতা হবে যেখানে স্নেইপ রেফারি থাকবেন।

আমি খেলব। রন আর হারমিওনকে হ্যারি বলল। আমি যদি না খেলি তাহলে দিারিন হাউজের খেলোয়াড়গণ মনে করবে আমি খেলতে ভয় পাচ্ছি। আমরা যদি জিতি তাহলে তাদের মুখের হাসি শুকিয়ে যাবে।

যতক্ষণ না আমরা তোমাকে মাঠ থেকে তুলে আনছি। হারমিওন ফোড়ন কাটলো।

প্রতিযোগিতার সময় যতই ঘনিয়ে এল হ্যারি ততই অস্থির হয়ে উঠল। দলের মধ্যেও অস্থিরতা বাড়ছে। স্লিদারিনদের বিরুদ্ধে হাউজ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা গৌরবের বিষয়। গত সাত বছরে কেউ ওদের থেকে চ্যাম্পিয়নশিপ নিতে পারেনি। কিন্তু প্রশ্নটা হলো–পক্ষপাতদুষ্ট রেফারির কাছে কি নিরপেক্ষ খেলা পরিচালনা আশা করা যায়?

এসব হ্যারির কল্পনা না সত্যি, তা সে জানে না। শুধু জানে সে যেখানেই যায় সেখানেই সে স্নেইপের কথা ভাবতে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় স্নেইপ তার পিছু লেগেছেন। স্নেইপের ওষুধ তৈরির ক্লাসটা ছিল যেন নরক যন্ত্রণা। শেইপ কি জানেন যে, তারা পরশমুণির সন্ধান পেয়েছে?

***

পরের দিন বিকালে ওরা হ্যারিকে গুডলাক জানিয়ে বিদায় নিল, কিন্তু হ্যারি জানে হারমিওন ও রন ফিরে এসে হ্যারিকে জীবিত দেখতে পাবে কিনা সে ব্যাপারে ওদের সন্দেহ আছে। তবে হ্যারিকে খেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। তাই সে কিডিচ খেলার পোশাক পরে নিল এবং নিম্বাস ২০০০ ঝাড়ু হাতে তুলে নিল।

রন ও হারমিওন নেভিলের কাছাকাছি একটা জায়গা করে নিল। নেভিল কিছুতেই বুঝতে পারছিল না ওরা এত গম্ভীর কেন। ওরা দুজন জাদুদণ্ড নিয়ে কেনই বা মাঠে এল তার বোধগম্য হচ্ছিল না। হ্যারিও জানত না যে হারমিওন ও রন স্নেইপের ওপর পা–অচল হওয়ার অভিশাপ প্রয়োগ করবে যদি তিনি রেফারি হিসেবে পক্ষপাতিত্ব দেখান।

ভুলে যেও না-এটা লোকোমোটর মর্টিস। হারমিওন নিচুস্বরে হ্যাবিকে বলল।

রন তার আস্তিনে জাদুদণ্ডটি রেখে বলল–আমি তা জানি। প্রসাধন কক্ষে উড হ্যারিকে পৃথকভাবে নিয়ে বলল–হ্যারি, তোমার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাই না। তবে আমাদের যদি জিততে হয় তাহলে এটাই সুযোগ। অধ্যাপক স্নেইপ পক্ষপাতিত্ব করার আগেই খেলা শেষ করতে হবে। ফ্রেন্ড উইসুলি এসে বলল–স্কুলের সবাই খেলা দেখতে এসেছে। এমন কী অধ্যাপক ডাম্বলডোরও এসেছেন।

ডাম্বলডোর! হ্যারি বিস্মিত কণ্ঠে বলল। একটু পরে নিজে গিয়েই দেখে এল যে ফ্রেড মিথ্যে বলেনি।

হ্যারি অনেকটা স্বস্তি বোধ করল। কারণ ডাম্বলডোর খেলা দেখলে স্নেইপ কোন পক্ষপাতিত্ত্ব দেখাতে পারবেন না এবং হ্যারিকে কোন ক্ষতি করতে পারবেন না।

খেলোয়াড়রা যখন মাঠে নামছে তখন স্নেইপকে খুব ক্ষুব্ধ দেখাল। রন বুঝতে পারল ডাম্বলডোরের উপস্থিতিই তার ক্ষোভের কারণ।

স্নেইপ যে এত নিচে নামতে পারেন তা আমি কখনোই ভাবিনি। রন হারমিওনকে বলল।

কে যেন রনকে পেছন থেকে ধাক্কা দিল। সে পেছন ফিরে দেখে ম্যালফয়।

দুঃখিত, উইসলি। আমি খেয়াল করিনি। ম্যালফয় বলল।

এবার দেখা যাবে হ্যারি কতক্ষণ ঝাড়ুর ওপর থাকতে পারে। কেউ কি আমার সাথে বাজি ধরবে? উইসলি তুমি ধরবে? ম্যালফয় প্রস্তাব দিল।

রন কোন জবাব দিল না। খেলা শুরু হল।

স্নেইপ জর্জের একটা ফাউলকে কেন্দ্র করে হাফলপাফের অনুকূলে পেনাল্টি দিলেন। হ্যারি সারা মাঠ চষে স্নিচ খুঁজে বেড়াচ্ছে। কয়েক মিনিট পর মালয় উচ্চকণ্ঠে বলল–দেখেছ গ্রিফিল্ডর হাউজ কেমন খেলোয়াড় বেছে নিয়েছে।

প্রথম পেনাল্টি ব্যর্থ হলে কিছুক্ষণ পর স্নেইপ বিনা কারণে হাফলপাফের অনুকূলে আরেকটি পেনাল্টি দিলেন।

দর্শকরা হইচই করে উঠলো। সমস্ত দর্শকের সহানুভূতি এবার হ্যারির প্রতি।

ম্যালফয় বলে চলল, এদের জন্য সকলের দুঃখ হয়। এই যে পটার, ওর মা–বাবা নাই, আর উইসলি গরিব, কোন টাকা–পয়সা নেই ওর। আর এই যে তুমি লংবটম, তোমার একটা ভাল টিমে থাকা উচিত ছিল, কারণ তোমার মত যাদের মাথায় কিছু নেই তদেরই তো টিমে থাকার কথা।

নেভিলের চেহারা রাগে লাল হয়ে উঠল। সে পেছন ফিরে ম্যালফয়ের মুখোমুখি হলো।

আমি তোমার মত বারোটার সমান, ম্যালফয় নেভিল বলল।

ম্যালফয়, ক্রেব ও গয়েল উচ্চস্বরে হেসে উঠল। রন খেলা থেকে দৃষ্টি ফিরিয়েই নেভিলকে বলল–ঠিক বলেছ নেভিল, বলে যাও।

লংবটম, যদি মস্তিষ্ক সোনা হতো তাহলে তুমি উইসলির তুলনায় গরীব হতে। আজ এইটুকুই বললাম, যাও।

হ্যারির চিন্তায় রন এমনিতেই উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। সে ম্যালফয়ের দিকে মুখ না ফিরিয়ে বলল–ম্যালফয়, আমি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি। এরপর যদি তুমি আর একটি বাজে কথা বল তাহলে তোমাকে দেখে নেব।

রন হারমিওন হঠাৎ চিৎকার করে উঠল–হ্যারি, হ্যারি,..

কী হয়েছে?… কোথায়?

হ্যারি একটা চমৎকার ডাইভ দিয়ে বুলেটের মত ছুটে গেল। দর্শকরা হর্ষধ্বনি ও হাততালি দিয়ে বাহবা দিল হ্যারিকে। হারমিওন হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে তার মুখে ফিঙ্গার ক্রস করল। আর হ্যারি বুলেটের মত মাটির দিকে ছুটছে।

উইসলি তোমাদের ভাগ্য ভাল। হ্যারি নিশ্চয়ই মাঠের ভেতর কিছু পয়সার সন্ধান পেয়েছে। ম্যালফয় হ্যারির মাটির দিকে ছুটে যাওয়া দেখে তামাশা করে বলল।

ম্যালফয়কে কিছু বোঝার সুযোগ না দিয়েই রন তাকে মাটিতে ফেলে দিল। নেভিল কাছেই ছিল। কিছুক্ষণ দ্বিধা করে সে সাহায্যের জন্য এগিয়ে গেল।

শাবাশ হ্যারি খেলে যাও। তার আসন থেকে উঠে হারমিওন চিৎকার করল। হারমিওন লক্ষ্য করল যে, হ্যারি স্নেইপের দিকে ছুটে যাচ্ছে। হারমিওন ভীষণভাবে উত্তেজিত। হারমিওন এতক্ষণ লক্ষ্যই করেনি যে, তার পায়ের কাছে রন আর ম্যালফয় মারামারি করছে।

স্নেইপ তার ঝাড়ু সোজা করতে করতে অবাক হয়ে দেখলেন যে আকাশ থেকে একটি ঝাড়ু তার নাকের এক ইঞ্চি দূর দিয়ে তীরবেগে ছুটে গেল। আরেকটু হলেই…

ডাইভ থামিয়ে হঠাৎ হ্যারির চিৎকার। সে স্নিচটাকে ধরে ফেলেছে। এটা একটা রেকর্ড। সারা গ্যালারিতে হইচই। এর আগে কেউ কোন দিন এত তাড়াতাড়ি মিচ ধরে ফেলতে পারেনি।

হারমিওন চিৎকার করে বলল–রন, রন। কোথায় তুমি। খেলা শেষ। হ্যারি জিতেছে।

সবাই শুনল হেরমিওনের উল্লাস। আমরা জিতেছি, আমরা জিতেছি। গ্রিফিল্ডর এখন এগিয়ে।

হারমিওন আনন্দে নাচছে। সামনের সারির পার্বতী পাতিলকে জড়িয়ে ধরল।

মাটি থেকে মাত্র এক ফুট ওপরে থাকতেই হ্যারি ঝাড়ু থেকে লাফ দিল। এখনও তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, সে জিতেছে। একটু আগেই খেলা শেষ হয়েছে।

শাবাশ। ভালো খেলেছ। তুমি নিশ্চয়ই এখন আর আয়না নিয়ে চিন্তা করছ না। ডাম্বলডোর তাকে বললেন খুব ধীরে যাতে অন্য কেউ না শোনে।

স্নেইপ খুব তিক্ত বদনে মাটিতে থুথু ফেলল।

হ্যারি প্রসাধন কক্ষ থেকে একটু পরেই বের হয়ে এলো। এরপর নিম্বাস ২০০০ নিয়ে সে ঝাড়ুশালার দিকে রওনা হল। আজ তার মত আনন্দিত পৃথিবীতে আর কেউই নেই। সত্যিই সে গর্বিত হওয়ার মত কাজ করেছে। তার সুনাম এখন চতুর্দিকে। ক্লান্তি কাটাবার জন্যে হ্যারি কিছুক্ষণ ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়ালো।

সে ঝাড়ু রাখার শেডে পৌঁছে শেডের কাঠের দরোজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। সে হোগার্টসের দিকে তাকাল। অস্তাচলগামী সূর্যের কিরণে জানালার কাঁচ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। গ্রিফিল্ডরে এখন অগ্রগামী। আর এই কৃতিত্বের দাবিদার হ্যারি নিজে। স্নেইপকে বুঝিয়ে দেয়া গেছে।

হ্যারি স্নেইপের কথা ভাবতেই, দেখল.

একটি সারা শরীর আবৃত মূর্তি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল। যেন চুপি চুপি কোথাও যাচ্ছে যাতে তাকে কেউ দেখতে না পায়। যাচ্ছে নিষিদ্ধ বনের দিকে। হ্যারির মাথায় এবার আর জয়ের আনন্দ নেই। জয়ের পরিবর্তে এখন উৎকণ্ঠা। এ যে স্নেইপ। সবাই যখন ডিনারে যাচ্ছে তখন তিনি বনে যাচ্ছেন কেন?

হ্যারি আবার নিম্বাস ২০০০ এর ওপর চড়ে বসল। কাছে গিয়ে দেখল স্নেইপ বনে ঢুকে গেছেন।

বিরাট বিরাট গাছ হ্যারিকে বাধা দিচ্ছে। সে স্নেইপকে দেখতে পেয়ে নীরবে একটি বা গাছে আশ্রয় নিল। সেখান থেকে স্নেইপ কি করছেন দেখতে থাকলে।

গাছের ঠিক নিচেই স্নেইপ দাঁড়িয়ে আছেন। তার সাথে অধ্যাপক কুইরেল। তবু তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। হ্যারি শুনতে পাচ্ছে কুইরেল তোতলাতে তোতলাতে বলছেন–আ… আ… আমি জানি… না তুমি কেন আমাকে এখানে কেন। …. সেভেরাস…. স্নেইপ শীতল কণ্ঠে বললেন–আমি বিষয়টি গোপন রাখতে চাই। আমার ধারণা ছাত্ররা এখনও পরশমণি সম্পর্কে কিছুই জানে না।

হ্যারি আরেকটু সামনে ঝুঁকল। কুইরেল কিছু বলতে চাচ্ছিলেন। স্নেইপ তাকে থামিয়ে দিলেন। স্নেইপ বললেন–হ্যাগ্রিডের কুকুরটাকে কীভাবে এড়ানো যায়, ভেবে দেখেছ কি?

কুইরেল বললেন–আ… আ… আমি কিছুই জানি না। তুমি কী বলতে…. চাইছ।

তুমি ভালোভাবেই জানো আমি কী বলতে চাইছি।

হঠাৎ একটা পেঁচা উড়ে গেল। হ্যারি একটু অসতর্ক হলেই গাছ থেকে নিচে পড়ে যেত। হ্যারি নিজেকে সামলে নিল।

ঠিক আছে। স্নেইপ বললেন–আমরা পরে আবার কথা বলব। তখন তুমি আরো ভেবে দেখতে পারবে। তোমার আনুগত্য কোনদিকে–সেটাও ঠিক করতে পারবে।

হ্যারি দেখল অধ্যাপক কুইরেল ভীত–সন্ত্রস্ত হয়ে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *