০৩. যে চিঠি কেউই লেখেনি

যে চিঠি কেউই লেখেনি

ব্রাজিলিয়ান বোয়া সাপটা বের হয়ে যাওয়ার কারণে হ্যারিকে দীর্ঘস্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে।

শাস্তিভোগের পর যখন সে কাবার্ড থেকে মুক্তি পেল তখন গরমের ছুটি চলছে। এরই মধ্যে ডাডলি তার নতুন সিনেমা ক্যামেরাটা ভেঙে ফেলেছে। নষ্ট করেছে রিমোট কন্ট্রোল এরোপ্লেন। তাছাড়া মিসেস ফিগ যখন ক্রাচে ভর করে প্রিভেট ড্রাইভের রাস্তা পার হচ্ছিলেন তখন ডাডলি তার রেইসিং সাইকেলে ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেয়।

স্কুল ছুটি থাকায় হ্যারির বেশ ভালো লাগছে। তবে ডাডলির সাঙ্গপাঙ্গদের অত্যাচার থেকে কোন মুক্তি নেই। তারা প্রতিদিন এই বাসায় বেড়াতে আসে। পায়ার্স, ডেনিস, ম্যালকম এবং গর্ডন এরা সবাই নির্বোধ। ডাডলি ছিল এই নির্বোধদের দলপতি। তাদের প্রধান খেলা ছিল হ্যারির ওপর নির্যাতন চালানো।

এই কারণে হ্যারি ইচ্ছে করেই বেশির ভাগ সময় বাসার বাইরে কাটাতো। এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াত। শিগগিরই ছুটি শেষ হয়ে যাবে। সেপ্টেম্বর মাসে হ্যারি সেকেন্ডারি স্কুলে যাবে। তখনই সে প্রথমবারের মতো ডাডলির হাত থেকে ছাড়া পাবে। ডাডলি ভর্তি হবে আঙ্কল ভার্ননের পুরনো স্কুলে। পায়ার্সও সেখানে ভর্তি হবে। হ্যারি ভর্তি হবে স্টোনওয়াল হাই-এ।

ডাডলি হ্যারিকে বললো–স্টোনওয়ালে কি হয় জানিস? প্রথমদিনই তোদের মাথা টয়লেটে ঢুকিয়ে রাখবে। একবার ওপর তলায় গিয়ে প্র্যাকটিস করে দেখ কেমন লাগে?

না, ধন্যবাদ। হ্যারি জবাব দিল। এই খারাপ টয়লেটে মাথা ঢোকাবার মতো নোংরা আর কিছু হতে পারে না। এই বলে হ্যারি দৌড়ে পালিয়ে গেল যাতে ডাডলি তাকে দিয়ে এ ধরনের প্র্যাকটিস না করাতে পারে।

জুলাই মাস। স্কুলের ইউনিফর্ম কেনার জন্য আন্ট পেতুনিয়া ডাডলিকে নিয়ে লন্ডন গেলেন। হ্যারিকে রেখে গেলেন মিসেস ফিগের কাছে। তার অবস্থা তখন এত খারাপ ছিল না। জানা গেল তিনি তার পোষা বিড়ালের একটাকে ডিঙোতে গিয়ে পড়ে গিয়ে এক পা ভেঙে ফেলেছেন। এর পর থেকে বিড়ালের প্রতি তার ভালোবাসার ঘাটতি পড়েছে। তিনি হ্যারিকে টিভি দেখতে দিলেন এবং বছরের পর বছর রেখে দেয়া কিছু বাসি চকোলেট কেকও খেতে দিলেন।

ওইদিন সন্ধ্যায় বসার ঘরে ডাডলি তার নতুন ইউনিফর্ম পরে হেঁটে দেখালো সবাইকে। স্মেলটিং স্কুলের মেরুন রঙের নিকার বোকার ইউনিফর্ম। হাতে একটা লাঠি। অপরকে পেটাবার জন্য। অবশ্যই শিক্ষকের দৃষ্টি এড়িয়ে। এটা পরবর্তী জীবনের জন্য ভাল ট্রেনিং বলে মনে করা হয়।

আঙ্কল ভার্নন ডাডলিকে নতুন ইউনিফর্মে দেখে খুব খুশি। তিনি খুশি হয়ে বললেন–আজ আমার জীবনে একটি পরম গর্বের দিন।

ডাডলিকে দেখে আন্টের চোখে আনন্দাশ্রু। তিনি বললেন–আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, ডাডলি এত বড় হয়ে গেছে। এসব কথায় হ্যারির হাসি পাচ্ছিল। সে বহুকষ্টে হাসি চেপে রাখলো।

পরদিন সকালে হ্যারি নাশতার জন্য রান্নাঘরে গেলে একটা বিশ্রী গন্ধ পেল। রান্নাঘরটা ছিল বড়সড়। সেখানেই খাবার টেবিল। মনে হচ্ছে ওখানে রাখা একটা বড় গামলা থেকে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। হ্যারি উঁকি দিয়ে দেখল যে বড় গামলায় ময়লা কাপড় পানিতে ভেজানো।

সে আন্ট পেতুনিয়াকে জিজ্ঞেস করল-এগুলো কি?

আন্ট ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিরেট কণ্ঠে বললেন-এগুলো তোমার স্কুলের ইউনিফর্ম।

হ্যারি মন্তব্য করল–আমি বুঝতে পারিনি যে এগুলো এত ভেজা হবে।

আন্ট বললেন–বোকার মতো কথা বলো না। আমি তোমার জন্য ডাডলির কিছু পুরনো কাপড় রঙ করে দিয়েছি। শেষ হলে দেখবে তোমাকে ঠিকই মানাচ্ছে।

হ্যারির মনে সন্দেহ দেখা দিলেও সে কোন প্রশ্ন করল না। ওই পোশাকে স্টোনওয়াল স্কুলে তাকে প্রথম দিন কেমন দেখাবে। তাকে দেখে মনে হবে সে হাতির চামড়ার পোশাক পরেছে।

ডাডলি এবং আঙ্কল ভার্নন ঘরে ঢুকে নাক কুঁচকালেন–কারণ হ্যারির ইউনিফর্ম থেকে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। আঙ্কল ভার্নন পত্রিকার পাতা খুললেন আর ডাডলি লাঠি দিয়ে টেবিল পেটাতে লাগল।

বাইরে ডাকবাক্সে পড়ার শব্দ শোনা গেল।

আঙ্কল ভার্নন বললেন–ডাডলি যাও তো, চিঠিগুলো নিয়ে এসো।

হ্যারি যাক না। ডাডলি বলল।

হ্যারি, যাও তো চিঠিগুলো নিয়ে এসো আঙ্কল ভার্নন বললেন।

ডাডলি, ওকে লাঠি দিয়ে খোঁচা মারো তো। আঙ্কল ভার্নন বললেন।

লাঠি তোলার আগেই হ্যারি উঠে ডাক বাক্সের দিকে রওনা দিলো।

হ্যারি গিয়ে দেখল পাপোসের ওপর তিনটা চিঠি পড়ে আছে। একটা পোস্টকার্ড এসেছে আঙ্কল ভার্ননের বোন মার্জের কাছ থেকে। তিনি আইলসঅউইটে ছুটি কাটাচ্ছেন। দ্বিতীয় চিঠি একটি বাদামী খামের ভেতর। কোন বিল থাকতে পারে এতে। তৃতীয় চিঠিতে লেখা–হ্যারির জন্য চিঠি, নিজের চিঠিটি হ্যারি হাতে তুলে নিল। তার বুক ধড়পড় করতে লাগল। তাকে তো এ পর্যন্ত কেউ চিঠি লেখেনি। তার কোন বন্ধু–বান্ধব বা আত্নীয়স্বজনও নেই। তাহলে কে লিখতে পারে? চিঠির খামে হ্যারির নাম লেখা। চিঠি যে হ্যারিকে লেখা এ ব্যাপারে তো কোন সন্দেহ নেই।

মি. এইচ. পটার
সিঁড়ির নিচের কাবার্ড
৪, প্রিভেট ড্রাইভ
লিটল হুইংগিং
সারে

চামড়ার মতো শক্ত হলুদ খামে সবুজ অক্ষরে লেখা ঠিকানাটা। ওপরে কোন ডাকটিকেট নেই। হ্যারি খামটা উল্টেপাল্টে দেখল। তার বুক কাঁপছিল। হ্যারি দেখল, খামের ওপর কতগুলো রঙিন ছাপ–সিংহ, ঈগল আর সাপের। চারদিকে বড় অক্ষরে ইংরেজি এইচ লেখা আছে।

রান্নাঘর থেকে আঙ্কল ভার্নন চিৎকার করলেন হ্যারি, জলদি এসো। ওখানে তুমি কী করছ। তুমি কি পত্ৰবোমা পরীক্ষা করছ?

নিজের রসিকতায় আঙ্কল ভার্নন নিজেই হাসলেন।

হ্যারি রান্নাঘরে আঙ্কল ভার্ননের হাতে দুটো চিঠি দিল। তারপর তার নিজের চিঠি খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

আঙ্কল ভার্নন চিঠিটা খুলে দেখলেন এবং বিরক্তির সাথে পোস্টকার্ডটি দেখলেন। আন্ট পেতুনিয়াকে বললেন, শুনছ, মার্জ নাকি অসুস্থ। কী এক ঝামেলা।

ঠিক এই সময় ডাডলি দৌড়ে এসে বলল–বাবা, হ্যারি যেন কিছু পেয়েছে।

হ্যারি চিঠিটার ভাঁজ খুলতে যাচ্ছিল। এই চিঠিটার কাগজটিও খামের মত শক্ত। চিঠি খোলার আগেই আঙ্কল ভার্নন এসে হ্যারির হাত থেকে চিঠিটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিলেন।

এ চিঠি তো আমার। এই বলে হ্যারি চিঠি ফেরত নেয়ার চেষ্টা করল।

তোমাকে আবার কে চিঠি লিখবে। আঙ্কল ভার্নন ঠাট্টা করে বললেন। হাতে ধরা চিঠিটা তিনি বার বার পরখ করে দেখলেন। তারপর পড়তে শুরু করলেন। তার মুখের রঙ ট্রাফিক লাইটের মতো বদলাতে লাগল। লাল থেকে সবুজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখের রঙ হয়ে গেল ধূসর শাদা। অনেকটা পুরনো পরিজের মতো।

তিনি চিৎকার করে উঠলেন–পে–পে–পে–তুনিয়া।

ডাডলি চিঠিটা পড়ার জন্য হাতে নেয়ার চেষ্টা করল। নাগালের বাইরে থাকায় সে ধরতে পারল না। আন্ট পেতুনিয়া চিঠিটা পড়লেন। প্রথম লাইন পড়েই তার ভিরমি খাবার জোগাড়। তিনি চিৎকার করে উঠলেন–ভার্নন, ওহ মাই গুডনেস, ভার্নন?

আঙ্কল ভার্নন ও আন্ট পেতুনিয়া পরস্পরের দিকে তাকালেন। ঘরে যে ডাডলি আছে তা তারা ভুলেই গেলেন। তবে ডাডলি এ পরিবারে কখনোই অবহেলিত নয়। সে তার লাঠি দিয়ে তাঁর বাবার মাথায় মৃদু টোকা দিল। তারপর চিৎকার করে বলল–আমি চিঠিটা পড়তে চাই।

হ্যারি বলল–আমি চিঠিটা পড়তে চাই। কারণ আমাকে লেখা।

তোমরা দুজনই ঘর থেকে বেরোও। আঙ্কল ভার্নন ডাডলি ও হ্যারিকে ধমক দিলেন। অবশেষে হ্যারি আর ডাডলিকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়ার পর তিনি নিজেই দড়াম করে রান্নাঘরের দরোজাটা বন্ধ করে দিলেন।

আন্ট পেতুনিয়া বললেন–ভার্নন দেখো তো, চিঠিতে কি ঠিকানা লেখা আছে। হ্যারি কোথায় ঘুমায় এটা তারা জানল কী করে? তোমার কি মনে হয় না, তারা আমাদের বাসার ওপর নজরদারি করছে?

নজরদারি?…তার মানে গোয়েন্দাগিরি। তুমি বলতে চাইছ কেউ আমাদের অনুসরণ করছে।

তাহলে আমরা কী করব ভার্নন? আমরা কী লিখে দেব–আমরা এ ধরনের কিছু আশা করিনা।

আঙ্কল ভার্নন বললেন–আমরা বিষয়টা আমলে আনব না। ওরা যাতে কোন উত্তর না পায়, সেটাই ভালো হবে।

কিন্তু….

আমি ঘরে এসব ঘটতে দেব না, পেতুনিয়া। আঙ্কল ভার্নন বললেন আমরা যখন ওকে ঘরে এনেছিলাম তখনই কি আমরা সিদ্ধান্ত নিইনি–তার মগজে যা কিছু খারাপ আছে সব ঝেটিয়ে বিদেয় করব!

ওইদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে আঙ্কল ভার্নন এমন এক কাজ করলেন যা তিনি জীবনেও করেননি। তিনি কাবার্ডে হ্যারিকে দেখতে গেলেন।

হ্যারি তাকে প্রশ্ন করল, আমার চিঠি কোথায়? কে আমাকে চিঠি লিখেছে?

আঙ্কল ভার্নন বললেন–ভুল করে খামে তোমার ঠিকানা লেখা হয়েছিল। আমি সেই চিঠিটা পুড়িয়ে ফেলেছি।

খামে ভুল ঠিকানা লেখা হয়নি। হ্যারি দৃঢ়তার সাথে বলল-এমনকি ওখানে আমার কাবার্ডের ঠিকানাও ছিল।

চুপ। আর কোন কথা নয়। আঙ্কল ভার্নন ভীষণ জোরে ধমক দিলেন। তার ধমকের শব্দে সিলিং থেকে কয়েকটি মাকড়সা নিচে পড়ে গেল।

ধমকের পর পরিবেশ সহজ করার জন্য তিনি হাসার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তার চেহারার কাঠিন্য কিছুতেই দূর হলো না।

হ্যাঁ, হ্যারি। আঙ্কল ভার্নন বললেন–আমি আর তোমার আন্ট ভাবছিলাম–যেহেতু তুমি বড় হয়েছে সেহেতু তোমাকে আর কাবার্ডে রাখা হবে না। তুমি ডাডলির দ্বিতীয় শোবার ঘরে চলে যাও।

কেন? হ্যারি প্রশ্ন করে বসল।

কোন প্রশ্ন করা যাবে না। আঙ্কল কড়া ভাষায় বললেন–তোমার মালামাল ওপরে নিয়ে যাও।

ডার্সলি পরিবার যে বাড়িতে থাকে সেখানে চারটা কক্ষ। একটায় থাকেন আঙ্কল আর আন্ট, দ্বিতীয় কক্ষটি অতিথিদের জন্য পৃথক করে রাখা হয়েছে, আরেকটাতে থাকে ডাডলি। সর্বশেষ ঘরটা সব থেকে ছোট, এখানে ডাডলির সব খেলনার জিনিসে ভরা। ডাডলির শয়নকক্ষে এগুলোর স্থান সংকুলান হয় না।

অন্যদিকে হ্যারির জিনিসপত্র এত কম যে কাবার্ড থেকে মালামাল নিয়ে সে একবারেই উপরে উঠে গেল।

হ্যারি বিছানায় বসে চারদিকে তাকাল। ঘরের প্রায় সব জিনিসই ভাঙা।

মাত্র এক মাসের পুরনো সিনেমা ক্যামেরাটি ভাঙা, ভাঙা টেলিভিশনও, এছাড়া আছে পাখির একটি বড় খাঁচা, যেটায় কাকাতুয়া থাকত। এছাড়াও আছে ভাঙা এয়ারগান। র‍্যাকগুলোতে অসংখ্য বই। বই গুলো দেখেই বোঝা যায় যে এখনও কেউ স্পর্শ করেনি। নিচ থেকে ডাডলির বিরক্তির কথা শোনা যাচ্ছিল মা, আমি চাই না সে ওই ঘরে থাকুক। সে এখানে থাকতে পারবে না। ঘরটা আমার, ঘরটা আমার লাগবে।

হ্যারি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। আর ভাবতে লাগল, গতকাল হলেও ওপরতলার ঘরে আসার জন্য হ্যারি সম্ভব সব ধরনের চেষ্টাই চালাত। আর আজ তার কাছে কাবার্ডই বেশি গ্রহণযোগ্য। কারণ কাবার্ডের ঠিকানাতেই তার চিঠিটা এসেছে।

***

পরদিন সকালে সবাইকে শান্ত দেখা গেল। কিন্তু ডাডলির রাগ আর ছটফটানি দেখে কে? সে বাবাকে লাঠি দিয়ে বাড়ি দিল। মাকে লাথি মারল। তার ছোট খরগোশটা ছুঁড়ে ফেলল। হ্যারি ঘর ছাড়েনি। আঙ্কল আর আন্ট গম্ভীর মুখে পরস্পরের দিকে তাকালেন।

পরদিন যখন ডাকপিয়ন এলো তখন আঙ্কল ভার্নন হ্যারিকে নয়, নরম স্বরে ডাডলিকে বললেন–বাবা যাও তো! চিঠিগুলো নিয়ে এসো। ডাডলি তার লৌহদণ্ডে দুম দাম শব্দ করতে করতে হল ঘর পার হয়ে চিঠি আনতে দরোজার দিকে গেল।

সেখান থেকেই ডাডলি চিৎকার করে উঠল, আবার একটা চিঠি এসেছে। ঠিকানা লেখা আছে–

মি, এইচ পটার
স্মলেস্ট বেডরুম
৪ প্রিভেট ড্রাইভ

আর্তনাদ করে উঠলেন আঙ্কল ভার্নন এবং চেয়ার থেকে উঠে হল রুমের দিকে ছুটলেন। হ্যারি তার পেছনে পেছনে ছুটলো। চিঠিটা হাতে নেয়ার জন্য ডাডলিকে মাটিতে ফেলে দিলেন ভার্নন। এদিকে হ্যারি পেছন থেকে তার গলা ধরে ঝুলে পড়ার কারণে চিঠিগুলো ডাডলির কাছ থেকে কেড়ে নিতে অসুবিধা হচ্ছিল। প্রত্যেকের গায়েই লোহার রডটা আঘাত করেছে। একটা বিভ্রান্তিকর এলোমেলো পরিস্থিতির পর পর–আঙ্কল ভার্নন সোজা হয়ে দাঁড়ালেন, দীর্ঘশ্বাস নিলেন এবং হ্যারিকে লেখা চিঠিখানা খামচে ধরলেন।

আঙ্কল ভার্নন নির্দেশ দিলেন–হ্যারি তোমার কাবার্ডে… মানে তোমার শোবার ঘরে যাও…. আর ডাডলি তুমিও এখান থেকে ভাগো।

হ্যারি তার নতুন শোবার ঘরের বাইরে পায়চারি করতে লাগল। হ্যারি নিশ্চিত হল–তাকে যিনি চিঠি দিয়েছেন তিনি জেনেছেন হ্যারির ঘর বদল হয়েছে এবং হ্যারি আগের চিঠিটা পায়নি। তিনি নিশ্চয়ই আবার চিঠি লিখবেন। এবার তাকে চিঠিটা পেতেই হবে। হ্যারি একটা পরিকল্পনার কথা ভাবতে লাগল। সে ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখল।

পরদিন সকাল ৬টায় ভাঙা ঘড়িতে অ্যালার্ম বেজে উঠল। ভোরের আলো তখনও ঘরে প্রবেশ করেনি। হ্যারি অ্যালার্ম বন্ধ করে চুপি চুপি জামা পরে নিল। ডার্সলি পরিবারের কাউকেই সে জাগাবে না। কোন বাতি না জ্বালিয়ে অন্ধকারে সে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল। হল ঘর পার হয়ে সে দরোজার কাছে গেল। তার ইচ্ছে ছিল প্রিভেট ড্রাইভের কোনায় দাঁড়ানো যাতে ডাক পিয়ন আসা মাত্রই সে চিঠি তার হাতে নিতে পারে! দরোজার কাছাকাছি পা দিতেই…

হঠাৎ আ–র–র–র—

হ্যারি লাফ দিয়ে উঠল। আরে পাপোসের ওপরে কি যেন! আরে এ যে জীবন্ত প্রাণী।

হ্যারির মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেল। এ কী, এ যে আঙ্কল ভার্নন। তিনি দরোজার গোড়ায় একটি স্লিপিং ব্যাগে ঘুমিয়ে আছেন। হ্যারি এমন কিছু একটা করবে তার মনে আগেই সন্দেহ হয়েছিল। আঙ্কল ভার্নন স্লিপিং ব্যাগ থেকে বের হয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা হ্যারিকে বকাঝকা করলেন। তারপর হুকুম দিলেন চা বানাবার জন্য। হ্যারিকে রান্নাঘরে ঢুকতে হল। চা নিয়ে এসেই হ্যারি দেখে যে ডাকপিয়ন এসে গেছে এবং চিঠিগুলো আঙ্কল ভার্ননের কোলে। হ্যারি লক্ষ্য করল তিনটা চিঠিই সবুজ কালি দিয়ে লেখা।

হ্যারি বলল–আমার চিঠি কোথায়?

এর মধ্যে আঙ্কল ভার্নন সব চিঠির খাম খুলে ফেলেছেন।

তোমাকে আবার কে চিঠি লিখবে? আঙ্কল ভার্নন প্রশ্ন করলেন। তোমাকে কেউই চিঠি লিখবে না। আঙ্কল ভার্নন আবার বললেন–ওই চিঠিতে ভুল করে তোমার নাম লেখা হয়েছিল।

আমার চিঠি কোথায়? হ্যারি প্রশ্ন করল। প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আঙ্কল ভার্নন হ্যারির সামনেই সবগুলো চিঠি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললেন।

তিনি সেদিন আর অফিসে গেলেন না। সারাদিন বাসায় কাটালেন। ডাকবাক্সটাতে এমনভাবে পেরেক ঠুকে দিলেন যাতে এখানে কেউ চিঠি ফেলতে না পারে।

ভালোই হলো। আন্ট পেতুনিয়া মন্তব্য করলেন-এখন তারা আর চিঠি দিতে পারবে না। চিঠি দিতে হলে তাদেরকে ওপরে উঠতে হবে।

আঙ্কল ভার্নন ততটা আশ্বস্ত হতে পারলেন না। তিনি বললেন-এসব লোক আমাদের মত নয়। সব সময়ই এরা নতুন নতুন ফন্দি–ফিকির বের করতে জানে।

***

শুক্রবারে হ্যারির নামে কম করে হলেও বারোটা চিঠি এলো।

ডাকবাক্সে ফেলা সম্ভব হয়নি বলে চিঠিগুলি এবার দরোজার নিচের ফাঁক দিয়ে গলিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছু কিছু চিঠি বাথরুমের জানালা দিয়েও ভেতরে ফেলা হয়েছে। আঙ্কল ভার্নন এদিনও অফিসে গেলেন না। বাসাতেই কাটালেন। তিনি হাতুড়ি, পেরেক আর ছোট ছোট কাঠের টুকরো দিয়ে দরোজা ও জানালার সবগুলো ফাঁক বন্ধ করলেন।

শনিবারে আরো বড়ো অঘটন ঘটল। হ্যারির নামে চব্বিশটা চিঠি এলো। চিঠিগুলো দুডজন ডিমের বাক্সের ভেতর পাঠানো হয়েছিল। ডেইরির লোকেরা কিছু বুঝতে না পেরেই শয়নকক্ষের জানালা দিয়ে ডিমগুলোর সাথে চিঠিগুলো আন্ট পেতুনিয়ার কাছে দিয়েছিল। ক্ষিপ্ত হয়ে আঙ্কল ভার্নন ডাকঘর আর ডেইরিতে বার বার ফোন করলেন। আর আন্ট পেতুনিয়া চিঠিগুলো টুকরো টুকরো করে ফুড মিক্সচারে দিয়ে নষ্ট করে ফেললেন।

ডাডলি বিস্ময়ের সাথে হ্যারিকে প্রশ্ন করল–তোমার সাথে কথা বলার জন্য কে এমন উতলা হল?

***

রোববার সকালে আঙ্কল ভার্নন নাশতার টেবিলে বসলেন। তিনি পরিশ্রান্ত। তবে তাকে বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছিল।

তিনি বললেন–আজ রোববার, ছুটির দিন। আজ আর কোন চিঠি আসবে না।

কিন্তু হঠাৎ রান্নাঘরের চিমনিতে শব্দ শোনা গেল। কিছু যেন গড় গড় করে চিমনি বেয়ে নিচে পড়ছে। তিনি যা দেখলেন তাতে স্তম্ভিত হয়ে পড়লেন। উনুনের চিমনি দিয়ে তিরিশ চল্লিশটা চিঠি বুলেটের মত বেরিয়ে এল। ডার্সলি পরিবারের সবাই অবাক। আর চিঠিগুলো ধরার জন্য হ্যারি লাফ দিল।

বের হও! এখান থেকে বের হও!

আঙ্কল ভার্নন হ্যারির কোমর জড়িয়ে ধরে উঁচু করে তাকে রান্নাঘর থেকে হল ঘরে ছুঁড়ে ফেললেন। আন্ট পেতুনিয়া আর ডাডলি হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বাইরে চলে গেল। আঙ্কল ভার্নন দড়াম করে দরোজা বন্ধ করে দিলেন। চিঠিগুলো দেয়াল এবং মেঝেতে এসে পড়েছে-এ শব্দ তাদের কানে আসছিল। রাগে ক্ষোভে টান দিয়ে গোঁফ ছিঁড়তে ছিঁড়তে আঙ্কল ভার্নন বললেন–তোমাদেরকে পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে তোমরা তোমাদের গুটি কয়েক জামা–কাপড় নিয়ে নিচে নেমে আসবে। আমরা এখান থেকে চলে যাব। এই বিষয়ে আর কোন কথা নয়।

আঙ্কল ভার্ননের অর্ধেক গোঁফ উড়ে যাওয়ায় তাকে খুবই ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল। তাই কেউ তাকে কোন প্রশ্ন করতে সাহস করল না। সবাই গিয়ে গাড়িতে বসল। ডাডলি পেছনে বসে ফুঁসছিলো। কারণ সে তার টেলিভিশন, ভিডিও আর কম্পিউটার সাথে নেয়ার জন্য প্যাক করছিলো। আঙ্কল ভার্নন তার মাথার চারদিক চেপে তাকে জোর করে উঠিয়ে দেন।

গাড়ি চলছে তো চলছেই। আন্ট পেতুনিয়ারও সাহস হলো না প্রশ্ন করে, গাড়ি কোথায় যাচ্ছে। আঙ্কল ভার্নন একটু পর পরই ডানদিকে বামদিকে কঠিন মোড় নিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলেন।

খাওয়া–দাওয়ার জন্যও গাড়ি কোথাও থামল না। সন্ধ্যা হতেই ডাডলির বিলাপ শোনা যেতে লাগল। তার জীবনে কোন দিন এত খারাপ যায়নি। সে খুবই ক্ষুধার্ত। সে টেলিভিশনের পাঁচটা প্রোগ্রাম মিস করেছে যা সে দেখতে চেয়েছিল। তাকে এত খেসারত দিতে হবে জানলে সে গাড়িতেই উঠত না। অবশেষে আঙ্কল ভার্নন এক শহরতলীতে এসে একটা হোটেলের সামনে তার গাড়ি থামালেন। একটা ঘরে দুটো নোংরা বিছানায় হ্যারি আর ডাডলিকে খাকতে হল। ডাডলি বিছানায় পড়েই নাক ডাকা শুরু করল। হ্যারির চোখে কোন ঘুম নেই। হ্যারি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চলন্ত গাড়িগুলোর আলোর দিকে তাকিয়ে রইল।

পরদিন সকালের নাশতায় তারা খেলো বাসি কর্নফ্লেক ও টোস্টের সাথে টিনের টমেটো। নাশতা খাবার পর পরই হোটেলের মালিক তাদের টেবিলে এলেন।

তিনি বললেন-এক্সকিউস মি, আপনাদের মধ্যে হ্যারি পটার কে? তাঁর নামে ফ্রন্ট ডেসকে একশ চিঠি এসেছে।

হোটেলের মালিক ভদ্রমহিলা একটা চিঠি তাদের সামনে তুলে ধরলেন। সবুজ কালিতে লেখা–

মি. এইচ. পটার
কক্ষ নং–১৭
রেইলভিউ হোটেল
ককওয়ার্থ

চিঠিটা নেবার জন্য হ্যারি হাত বাড়াল। হ্যারির হাতটি আঙ্কল ভার্নন সরিয়ে দিলেন। হোটেলের মালিক ভদ্রমহিলা বিস্মিত হলেন। আঙ্কল ভার্নন উঠে দাঁড়িয়ে ভদ্রমহিলাকে বললেন–চলুন। আমি চিঠিগুলো নেব।

***

কয়েক ঘণ্টা গাড়ি চলার পর আন্ট পেতুনিয়া ভয়ে ভয়ে বললেন–ঘরে ফিরে গেলে কি ভালো হত না?

কিন্তু আঙ্কল ভার্নন তার কথায় কান দিলেন না। তিনি যে ঠিক কী চাইছেন তা অন্য কেউ জানে না। তিনি গাড়ি চালিয়ে একটি গভীর বনে প্রবেশ করলেন। গাড়ি থেকে নামলেন। চারদিকে তাকালেন। মাথা নাড়লেন। আবার গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলেন। এ রকম ঘটনা আরো একাধিকবার ঘটল।

ডাডলি বলে উঠল–বাবার কি মাথা খারাপ হয়েছে?

সমুদ্র উপকূলের কাছে এসে আঙ্কল ভার্নন গাড়ি পার্ক করলেন। সবাইকে গাড়ির ভেতর বসিয়ে রেখে কোথায় যেন গেলেন। বাইরে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। গাড়ির ছাদেও বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে লাগল।

ডাডলি তার মাকে বলল–আজ সোমবার। আজ রাতে টিভিতে দ্য গ্রেট হামবেটেসি আছে। আমি যদি টিভি আছে এমন স্থানে থাকতে পারতাম।

সোমবার হ্যারিকে কষ্ট করে মনে করতে হয় না, আজকে কি বার। কোনদিন সোমবার তা জানার জন্য ডাডলির ওপর নির্ভর করা যায়, কারণ সোমবারের টিভির প্রিয় এই প্রোগ্রামের জন্য দিন গুনতে থাকে সে। আগামীকাল মঙ্গলবার। আগামীকাল হ্যারির একাদশ জন্মদিন। অবশ্য এ বাড়িতে হ্যারির জন্মদিনের কোন গুরুত্ত্ব নেই। গত জন্মদিনে সে ডার্সলি পরিবার থেকে পেয়েছিল একটি কোট হ্যাঙার এবং আঙ্কল ভার্ননের এক জোড়া পুরনো মোজা। প্রতিদিনই তো বয়স এগারো থাকে না।

আঙ্কল ভার্নন ফিরে এলেন। মুখে ঈষৎ হাসি। হাতে লম্বা ও সরু একটা প্যাকেট।

কী কিনেছো? আন্ট পেতুনিয়া জানতে চাইলেন। তিনি এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললেন–চমৎকার একটা জায়গা পেয়েছি। সবাই গাড়ি থেকে নামো।

গাড়ির বাইরে খুব ঠাণ্ডা। আঙ্কল ভার্নন যে জায়গাটা দেখালেন সেটা একটা শিলাময় ছোট দ্বীপ। এর মাঝখানে পুরনো একটা ছোট বাড়ি। এ বাড়িতে যে কোন টেলিভিশন নেই–তা হলফ করেই বলা যায়।

আঙ্কল ভার্নন বললেন–আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে আজ রাতে ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দ্বীপটাতে যাবার জন্য এই ভদ্রলোক আমাদেরকে তার নৌকাটা ধার দিয়েছেন।

ফোকলা মুখের এক বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে একটা নৌকা দেখিয়ে তাদের সেদিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। তার মুখে কপট হাসি।

আমার কাছে এখনো কিছু খাবার আছে। সবাই নৌকায় ওঠো। আঙ্কল ভার্ননের নির্দেশ।

নৌকাতে হিমেল হাওয়া। সাথে বৃষ্টি। সবাই ঠাণ্ডায় অস্থির। মনে হলো কয়েক ঘণ্টা যাত্রার পর তারা দ্বীপে পৌঁছল। আঙ্কল ভার্নন তাদেরকে একটি ভাঙা বাড়িতে নিয়ে গেলেন।

বাড়ির ভেতরটা ছিল আরো ভয়ঙ্কর। ঘরের ভেতরে সামুদ্রিক আগাছার গন্ধ। ফায়ার প্রেস স্যাঁতসেঁতে, কাঠের দেয়ালের ফাঁক দিয়ে সমুদ্রের বাতাসের শো শো শব্দ। বাড়িতে মাত্র দুটো কক্ষ।

আঙ্কল ভার্ননের খাবার ভাণ্ডারে যা ছিল তা হল মাত্র এক প্যাকেট মচমচে বিস্কুট ও এক হালি কলা।

তিনি ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালাবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু সেখানে কোন কাঠ নেই, একেবারেই খালি।

আঙ্কল ভার্নন আনন্দের সাথে মন্তব্য করলেন–যাক, এখানে কোন চিঠি আসবে না। তিনি নিশ্চিত যে এই ঝড়ের রাতে কেউ তাদের কাছে আসতে পারবে না। রাত নামলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস মোতাবেক ঝড় শুরু হলো। সমুদ্রের তরঙ্গ দেয়ালে ছিটকে পড়ছে। বাইরের ঝড়ো বাতাস জরাজীর্ণ ও নোংরা জানালায় আঘাত করছে।

আন্ট পেতুনিয়া একটা পোকায়–কাটা সোফার ওপর কম্বল বিছিয়ে ডাডলির শোয়ার ব্যবস্থা করলেন। আঙ্কল ভার্নন ও আন্ট পেতুনিয়া পাশের কক্ষে চলে গেলেন। হ্যারি মেঝের ওপর একটা ছেঁড়া পাতলা কম্বল বিছিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল। রাত বাড়ার সাথে সাথে ঝড়ের বেগও বাড়তে লাগল। হ্যারি ঘুমোতে পারল না। একটু আরাম পাবার জন্য এপিঠ–ওপিঠ করছে। পেট খিদেয় চো চো করছে। অপরদিকে ডাডলি নিশ্চিন্তে নাক ডাকছে। তার হাতঘড়ির আলো একটু পর পর ঠিকরে পড়ছে। অন্ধকারে ঘড়ির আলো থেকে হ্যারি বুঝতে পারল আর দশ মিনিটের ভেতর তার বয়স এগারো পূর্ণ হবে। ডাডলি ভাবছিল পত্রলেখক এখন কোথায়।

পাঁচ মিনিট পর হ্যারি বাইরে যেন কিসের আওয়াজ শুনল। তার ভয় হচ্ছিল–ছাদ মাথার ওপর ভেঙে পড়বে না তো? ছাদ ভেঙে পড়লে সে অবশ্য আরো বেশি উষ্ণতা উপভোগ করতে পারত।

আর চার মিনিট বাকি–হয়তো বা প্রিভেট ড্রাইভে এত চিঠি আসবে যে সারা বাড়ি চিঠিতে ভরে যাবে। সেখান থেকে যেভাবেই হোক অন্ততঃ একটা চিঠি চুরি করতে হবে। তিন মিনিট বাকি।

সমুদ্রের ঢেউ কি এ বাড়ির ওপর আছড়ে পড়ছে।

এখনও দু মিনিট বাকি।

অদ্ভুত শব্দ। সাগরে শিলাখণ্ড টুকরো টুকরো হয়ে সাগরে মিলিয়ে যাচ্ছে?

আর একটা মিনিট।… তিরিশ সেকেন্ড… কুড়ি সেকেন্ড…. দশ,.. নয়… বিরক্ত করার জন্য হলেও ডাডলিকে জাগাবে কি?

তিন… দুই… এক… বুম। বুম।

হঠাৎ বিকট আওয়াজ।

গোটা দ্বীপটা কেঁপে উঠল, হ্যারির দরোজায় কে যেন খুব জোরে জোরে কড়া নাড়ছে। কে যেন ভেতরে আসতে চায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *