০৪. ত্রিস ডান কিউবের উজ্জ্বল আলো

৩১ অধ্যায়

ত্রিস ডান কিউবের উজ্জ্বল আলো থেকে বের হয়ে বাইরের শূন্যতার গাঢ় অন্ধকারে আসতেই সে পরিচিত এড্রেনালিনের সোত নিজের ভিতরে অনুভব করে। এসএমএসসির ফ্রন্টগেট থেকে এইমাত্র জানান হয়েছে যে ক্যাথরিনের অতিথি ড. অ্যাবাড্ডন এসে পৌঁছেছেন এবং পড পাঁচে তাকে নিয়ে আসবার জন্য একজন সহচর দরকার। কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে ত্রিস নিজেই তাকে গিয়ে নিয়ে আসতে রাজি হয়। দর্শনার্থী সম্বন্ধে ক্যাথরিনের পেট থেকে সামান্য কথাই বের হয়েছে আর সেটা ত্রিশের কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পিটার সলোমন গভীরভাবে বিশ্বাস করেন লোকটা আপাতভাবে তাদের একজন সলোমন ভাইবোন কখনও কোন দর্শনার্থী নিয়ে কিউবে আসেনি। এবারই প্রথম।

বেচারা ক্রসিংএর ধাক্কা ঠিকমত সামলাতে পারলে হয়, নিথর অন্ধকারের ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাবার সময়ে ত্রিস মনে মনে ভাবে। ল্যাবে যেতে হলে কি করতে হবে সেটা উপলব্ধি করে ক্যাথরিনের এই ভিআইপি ভেতরে গেলেই হয়েছে। প্রথমবারটা সবচেয়ে জঘন্য সবসময়ে।

প্রায় একবছর আগে ত্রিস কিউবে প্রথম প্রবেশ করেছিল। সে ক্যাথরিনের চাকরীর প্রস্তাব গ্রহণ করে, গোপনীয়তা রক্ষার সনদে স্বাক্ষর করে তারপরে ক্যাথরিনের সাথে এসএমএসসিতে এসেছিল ল্যাবটা দেখতে। দুই ভদ্রমহিলা দি স্ট্রীট বরাবর হেঁটে এসে পড পাঁচ লেখা ধাতব দরজার সামনে এসে উপস্থিত হন। ক্যাথরিন যদিও আগে থেকে তাকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে ল্যাবের নিঃসঙ্গ অবস্থানের কথা বর্ণনা করেছিল, তারপরেও পডের দরজা হিস শব্দে খুলে যেতে ত্রিস যা দেখে সে সেটার জন্য প্রস্তুত ছিল না।

শূন্যতা।

ক্যাথরিন চৌকাঠ অতিক্রম করে নিখুঁত অন্ধকারের ভিতরে কয়েক ফিট এগিয়ে যায় এবং তারপরে ত্রিসকে ইঙ্গিতে অনুসরণ করতে বলে। আমার উপরে ভরসা রাখ। তুমি পথভ্রষ্ট হবে না। ক্রিস মনে মনে কল্পনা করে সে স্টেডিয়ামের সমান বিশাল একটা গাঢ়

অন্ধকার ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং কেবল চিন্তা করেই সে ঘেমে নেয়ে উঠে।

আমাদের একটা গাইডেন্স সিস্টেম আছে তোমাকে পথ দেখাবার জন্য, ক্যাথরিন মেঝের দিকে নির্দেশ করে বলে। খুবই হাতুড়ে একটা ব্যাপার।

ত্রিস অন্ধকারের ভিতরে চোখ কুচকে সিমেন্টের খরখরে মেঝের দিকে তাকায়। অন্ধকারের ভিতরে জিনিসটা খুঁজে পেতে তার এক মুহূর্ত দেরী হয়, কিন্তু তারপরে সে দেখে একটা সরু কার্পেট রানার সরলরেখায় বিছান রয়েছে। কার্পেটটা একটা রাস্তার মত সামনের অন্ধকারে হারিয়ে গেছে।

তোমার পায়ের দিকে চোখ রাখো, ঘুরে দাঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করার আগে ক্যাথরিন বলে। আমার পেছন পেছন এসো।

ক্যাথরিন অন্ধকারে মিলিয়ে গেলে, ত্রিস ঢোক গিলে ভয় তাড়িয়ে তাকে অনুসরণ করে। এটা একটা পাগলামি। কার্পেটের উপর দিয়ে সে কয়েকপা মাত্র এগিয়েছে এমন সময় বেমাক্কাভাবে পড় পাচের দরজা তার পিছনে বেরসিকের মত বন্ধ হয়ে গিয়ে আলোর শেষ রেশটুকুও মিলিয়ে দেয়। নাড়ীতে এফ ওয়ানের গতি অনুভব করে, ত্রিস তার সমস্ত মনোযোগ পায়ের নীচের কার্পেটে নিবিষ্ট করে। নরম রানারের উপর দিয়ে সে কেবল কয়েক পা এগিয়েছে যখন সে টের পায় তার ডান পা শক্ত সিমেন্টের উপরে আঘাত করেছে। চমকে উঠে সে সাথে সাথে বামে সরে এসে দুপাই নরম কার্পেটের উপরে রোপন করে।

সামনের অন্ধকারে ক্যাথরিনের কণ্ঠ শোনা যায়, তার উচ্চারিত শব্দের শ্রুতিগুণ নিপ্রাণ এই অন্ধকার গহ্বর গিলে ফেলে। মানবদেহ আসলেই বিস্ময়কর,সে বলে। তুমি যদি তার ইন্দ্রিয় বন্ধ করে দাও তবে তখন অন্য ইন্দ্রিয়গুলো দায়িত্ব নেয়, প্রায় সাথে সাথে। ঠিক এখন যেমন, তোমার পায়ের স্নায়ু আক্ষরিক অর্থে নিজেদের টিউনিং করছে আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠবার প্রচেষ্টায়।

ভাল কথা, গতিপথ ঠিক করার ফাঁকে ত্রিস ভাবে।

অনন্তকাল ধরে যেন তারা অন্ধকারে হাঁটতে থাকে। আর কতদূর? শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে ত্রিস জানতে চায়।

আমরা অর্ধেকটা পথ এসে পড়েছি, ক্যাথরিনের কণ্ঠ এখন আরও দূর থেকে ভেসে আসে।

ক্রিস দ্রুত এগোতে থাকে, চেষ্টা করে নিজেকে সুস্থির রাখতে কিন্তু তার মনে হয় অন্ধকারের বিস্তার যেন তাকে আপুত করে ফেলবে। মুখের এক মিলিমিটার সামনে কি আছে সেটাই দেখতে পাচ্ছি না! ক্যাথরিন কখন থামতে হবে বুঝবো কিভাবে?

কিছুক্ষণের ভিতরেই তুমি জানতে পারবে, ক্যাথরিন তাকে আশ্বস্ত করে বলে।

এটা এক বছর আগের কথা, এবং এখন আজরাতে, ত্রিস আবার শূন্যতার ভিতরে উল্টোদিকে হেঁটে চলেছে, লবি থেকে তার বসের অতিথিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসবে বলে। পায়ের নীচে কার্পেটের বুননে সহসা পরিবর্তন হলে সে বুঝতে পারে বের হবার এক্সিট থেকে সে তিন ফিট দূরে রয়েছে। সতর্ককারী পথরেখা, পিটার সলোমনের ভাষায়, সে বেসবলের দারুণ ভক্ত। ত্রিস একটু দূরে থামে, পকেট থেকে তার কিকার্ড বের করে এবং অন্ধকারে হাতড়াতে থাকে যতক্ষণ না বের হয়ে থাকা স্লট খুঁজে পায় এবং কার্ড প্রবেশ করায়।

দরজাটা হিস শব্দ করে খুলে যায়।

এসএমএসসির হলওয়ের উজ্জ্বল আলোতে বেড়িয়ে এসে ত্রিস চোখ পিটপিট করতে থাকে।

আরো একবার…উতরে গেছি।

শূন্য করিডোরের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, ত্রিস টের পায় সে সুরক্ষিত নেটওয়ার্কে খুঁজে পাওয়া অদ্ভুত সেই সম্পাদিত ফাইলটার কথাই ভাবছে। প্রাচীন সিংহদ্বার? গোপন ভূগর্ভস্থ লোকেশন? সে ভাবতে চেষ্টা করে মার্ক জুবিয়ানিস রহস্যময় ডকুমেন্টটা কোথায় অবস্থিত সেটা খুঁজে বের করতে পেরেছে কিনা।

—————

কন্ট্রোলরুমের ভেতরে, পাজমা ওয়ালের কোমল আভার সামনে ক্যাথরিন দাঁড়িয়ে এবং তাদের খুঁজে বের করা রহস্যময় ডকুমেন্টের দিকে তাকিয়ে আছে। সে তার মূল বাক্যাংশগুলো এবার আলাদা করে এবং ক্রমশ নিশ্চিত হতে থাকে যে ড. আবাজ্জনের সাথে তার ভাই যে সুদূরপ্রসারী কিংবদন্তি নিয়ে আলোচনা করেছে এই ডকুমেন্টেও সেটার কথাই বলা হয়েছে।

ভূগর্ভস্থ গোপন স্থান যেখানে
ওয়াশিংটন ডি.সির কোথাও, যার সমন্বয়কারী
একটা প্রাচীন সিংহদ্বার খুঁজে পাওয়া যা
সতর্ক করে দেয় পিরামিডে বিপজ্জনক
এই খোদাই করা সিম্বলিয়নের পাঠোদ্ধার

বাকী ফাইলটা আমার দেখতেই হবে, ক্যাথরিন ভাবে।

সে আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপরে প্লাজমা ওয়ালের পাওয়ার সুইচ অফ করে দেয়। ফুয়েল সেলের তরল হাইড্রোজেন যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ক্যাথরিন কাজ না থাকলে সবসময়ে শক্তি-সংহত ডিসপ্লে বন্ধ করে দেয়।

তার মূল বাক্যাংশগুলো ধীরে ঝাঁপসা হয়ে যায় তার চোখের সামনে, শেষে একটা ক্ষুদ্র সাদা বিন্দুতে পরিণত হয়ে ওয়ালের মাঝে ভাসতে থাকে এবং তারপরে শেষপর্যন্ত নিভে যায়। সে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের অফিসের দিকে হাঁটা ধরে। ড. অ্যাবাড্ডন যেকোন সময়ে এসে উপস্থিত হবেন এবং সে চায় বেচারা যেন এখানে এসে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

.

৩২ অধ্যায়

প্রায় পৌঁছে গেছি, শেষ না হওয়া করিডোরের ভিতর দিয়ে সাটো আর। ল্যাংডনকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে যেতে এনডারসন বলে, করিডোরটা ক্যাপিটলের পূর্বদিকের ভিতের পুরো দের্ঘ্য বরাবর বিস্তৃত। লিঙ্কনের সময়ে, এই গলিটার মেঝেটা নোংরা ছিল আর ইঁদুর গিজগিজ করতো তখন এখানে।

ল্যাংডন কৃতজ্ঞ বোধ করে মেঝেতে টাইলস বসান হয়েছে বলে; কেউ তাকে ইঁদুরপ্রেমিকের বদনাম দিতে পারবে না। লম্বা গলিপথে দলটার পদধ্বনি বেসুরে রহস্যময় ঢাকের বোল তুলে। লম্বা হলওয়েতে দরজার সারি দেখা যায় কিছু বন্ধ কিন্তু বেশিরভাগই ফাঁক হয়ে আছে। নীচের এই লেভেলে মনে হয় অনেক ঘরই পরিত্যাক্ত। ল্যাংডন খেয়াল করে দরজার নম্বর কমতে শুরু করেছে এবং একটা সময়ে আর নম্বর দেখা যায় না।

এসবি৪…এসবি৩…এসবি২…এসবি১…

তারা নম্বরহীন একটা দরজা অতিক্রম করে, এবং এনডারসন তারপরেই দাঁড়িয়ে পড়ে এখন নম্বর আবার বাড়তে শুরু করেছে।

এইচবি১…এইচবি২…

দুঃখিত, এনডারসন বলে। দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিল। আমি এত গভীরে আসিনি বললেই চলে।

দলটা কয়েক পা পিছিয়ে এসে একটা পুরানো ধাতব দরজার সামনে দাঁড়ায়, যা ল্যাংডন এখন বুঝতে পারে হলওয়ের ঠিক একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত-যে কাল্পনিক রেখা সিনেট বেসমেন্ট আর হাউজ বেসমেন্টকে পৃথক করেছে। দেখা যায়, এই দরজাটাতেও চিহ্ন দেয়া আছে, কিন্তু খোদাই এতটাই মলিন হয়ে গেছে যে প্রায় বোঝাই যায় না।

এসবিবি

আমরা এসে গেছি, এনডারসন বলে। চাবি যেকোন সময়ে এসে পৌঁছাবে।

সাটো ভ্রু কুচকে ঘড়ির দিকে তাকায়।

ল্যাংডন এসবিবি লেখাটার দিকে তাকিয়ে এনডারসনকে জিজ্ঞেস করে, এই জায়গাটাকে সিনেটের দিকে সংযুক্ত করা হয়েছে কেন যেখানে এটা ঠিক মাঝে অবস্থিত?

এনডারসনকে বোকা বোকা দেখায়। তুমি কি বলতে চাও?

এখানে লেখা এসবিবি, যা এস দিয়ে শুরু হয়েছে এইচ দিয়ে নয়।

এনডারসন অপারগতার মাথা নাড়ে। এসবিবির এস সিনেটের এস না। এটা—

চীফ? দূর থেকে এক গার্ড ডাক দেয়। দৌড়াতে দৌড়াতে সে হলওয়ে দিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসে, তার হাতে চাবি ধরা রয়েছে। সরি, স্যার, কয়েকমিনিট দেরী হয়ে গেল আসতে। আমরা প্রধান এসবিবির চাবি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এটা বাড়তি চাবি একটা স্পেয়ারের বক্সে রাখা ছিল।

আসলটা হারিয়ে গেছে? বিস্মিত কণ্ঠে এনডারসন জিজ্ঞেস করে।

সম্ভবত হারিয়ে গেছে, গার্ড হাফাতে হাফাতে এসে বলে। বহুযুগ ধরে এখানে কেউ নামার জন্য অনুরোধ করেনি।

এনডারসন চাবি হাতে নেয়। এসবিবি১৩র কোন দ্বিতীয় চাবি নেই।

দুঃখিত, এখন পর্যন্ত আমরা এসবিবি অংশের কোন ঘরের চাবি খুঁজে পাইনি। ম্যাকডোনাল্ড এখনও খুঁজছে। গার্ড তার রেডিও বের করে কথা বলে। বব, আমি চীফের সাথে আছি। এসবিবি১৩র চাবি সংক্রান্ত কোন অগ্রগতির খবর আছে?

গার্ডের রেডিও খরখর করে এবং তারপরে উত্তর শোনা যায়, সত্যি বলতে হ্যাঁ আছে। ব্যাপারটা অদ্ভুত। আমরা কম্পিউটারাইজড করার পরে কোন এন্ট্রি দেখতে পাচ্ছি না, কিন্তু হার্ড লগে দেখছি বিশ বছর আগে এসবিবির গুদামঘরগুলো পরিষ্কার করে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এটা এখন অব্যবহৃত স্থান হিসাবে বিবেচিত হচেছ। সে একটু থেমে আবার বলে, সবগুলো কেবল এসবিবি১৩ বাদে।

এনডারসন তার রেডিও জোরে আঁকড়ে ধরে। চীফ বলছি। কি আবোলতাবোল বলছে, সব কেবল এসবিবি১৩ বাদে?

বেশ স্যার, কণ্ঠস্বরটা উত্তর দেয়, আমার কাছে একটা হাতে লেখা নোট আছে যেখানে এসবিবি১৩কে ব্যক্তিগত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা অনেকদিন আগের একটা নোট এবং নীচে প্রধান স্থপতির ইনিশিয়াল দেয়া আছে।

স্থপতি শব্দটা ল্যাংডন জানে যে ক্যাপিটলের নক্সা প্রণয়ন করেছে তাকে বোঝতে ব্যবহৃত হয় না, ব্যবহৃত হয় যে এটা পরিচালনা করে তাকে বোঝাতে। অনেকটা ভবনের কেয়ারটেকারের মত, ক্যাপিটলের স্থপতি হিসাবে যাকে নিয়োগ দেয়া হবে সে রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, নিরাপত্তা, লোক নিয়োগ তাদের দায়িত্ব বন্টন সবকিছুর দায়িত্বে থাকবে।

অদ্ভুত ব্যাপার…রেডিও কণ্ঠস্বর বলে, এই যে স্থপতির নোটে দেখা যাচ্ছে এই ব্যক্তিগত স্থানটা পিটার সলোমনের ব্যবহারের জন্য পৃথক রাখা হয়েছে।

ল্যাংডন, সাটো আর এনডারসন সবার সবাই দিকে চমকে তাকায়।

আমার ধারণা, স্যার, কণ্ঠস্বরটা বলতে থাকে, যে মি. সলোমনের কাছে এসবিবির আসল চাবিটা রয়েছে সেই সাথে এসবিবি১৩র অন্যসব চাবি।

ল্যাংডন কানে ভুল শুনেছে বলে মনে করে। পিটার সলোমনের ক্যাপিটলের বেসমেন্টে ব্যক্তিগত কক্ষ রয়েছে? সে সবসময়েই ধারণা করেছে পিটার সলোমনের লুকানর মত বিষয় আছে, কিন্তু এটা এমনকি ল্যাংডনকেও বিস্মিত করে।

ঠিক আছে, এনডারসন বলে, স্পষ্টতই বিরক্ত। আমরা এসবিবি১৩তে প্রবেশ করতে বিশেষভাবে আগ্রহী, তাই বাড়তি চাবির খোঁজ চালু রাখো।

আমরা তাই করছি, স্যার। আমরা আপনার অনুরোধ করা ডিজিটাল ইমেজ নিয়েও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

ধন্যবাদ, বলে তাকে থামিয়ে দিয়ে এনডারসন টক বাটন চেপে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। আপাতত আর কিছু নেই। ইমেজ ফাইলটা যখনই হাতে পাবে ডিরেকটর সাটোর ব্ল্যাকবেরীতে পাঠিয়ে দেবে।

বুঝতে পেরেছি, স্যার। রেডিও এরপরে নিরব হয়ে যায়।

এনডারসন তাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডের হাতে রেডিওটা দেয়।

গার্ডটা এবার ফটোকপি করা একটা ব্লুপ্রিন্ট বের করে এবং তার চীফের হাতে সেটা দেয়। স্যার, ধুসর এলাকাটা এসবিবি এবং আমরা এসবিবি১৩কে এক্স দিয়ে চিহ্নিত করেছি, যাতে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। জায়গাটা খুব একটা বড় না।

এনডারসন গার্ডকে ধন্যবাদ জানিয়ে ব্লুপ্রিন্টের দিকে মনোযোগ দিতে তরুণ ছেলেটা দৌড়ে যে পথে এসেছিল সেপথেই ফিরে যায়। ল্যাংডন তাকিয়ে ইউএস ক্যাপিটলের নীচে কিউবিকলের বিস্ময়কর সংখ্যা যা একটা আজব গোলকধাঁধাঁ করেছে দেখে বিস্মিত হয়।

এনডারসন এক মুহূর্ত ব্লুপ্রিন্টটা দেখে, মাথা নাড়ে, এবং তারপরে সেটা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রাখে। এসবিবি চিহ্নিত দরজার দিকে ঘুরে সে চাবি বের করে কিন্তু ইতস্তত করে, দরজাটা খোলার ব্যাপারে তাকে অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা যায়। ল্যাংডনও একই অনুভূতিতে ভুগতে থাকে; তার কোন ধারণা নেই দরজার পিছনে কি থাকতে পারে সে বিষয়ে, কিন্তু সে একটা বিষয়ে নিশ্চিত যে সলোমন। এখানে যাই লুকিয়ে রাখুক সে সেটাকে একান্তই রাখতে চেয়েছে। একান্ত ব্যক্তিগত।

সাটো কেশে গলা পরিষ্কার করতে এনডারসন বক্তব্যটা বুঝতে পারে। চীফ জোরে একটা দম নিয়ে চাবি প্রবেশ করিয়ে সেটা ঘুরাতে চেষ্টা করে। চাবি অনড় হয়ে থাকে। মুহূর্তের জন্য, ভুল চাবি ভেবে ল্যাংডন আশাবাদী হয়ে উঠে। দ্বিতীয়বার চেষ্টা করতে, অবশ্য, চাবি ঘুরে এবং এনডারসন ঠেলে দরজাটা খুলে।

ভারী দরজাটা জড়তা ভেঙে ভেতরের দিকে খুলে যেতে করিডোরে ভেপসা বাতাস এসে ভরে যায়।

ল্যাংডন ভিতরের অন্ধকারে উঁকি দেয় কিন্তু কিছুই দেখতে পায় না।

প্রফেসর, লাইটের সুইচের জন্য অন্ধের মত হাতড়াতে হাতড়াতে এনডারসন ল্যাংডনের দিকে তাকিয়ে বলে। আপনার প্রশ্নের উত্তর হল এসবিবি এর এস সিনেটের এস না। এটার মানে সাব।

সাব? ল্যাংডন বেকুব হয়ে বলে।

এনডারসন মাথা নাড়ে এবং দরজার ভিতরের দিকে একটা সুইচ অন করে। একটা নিঃসঙ্গ বা গাঢ় অন্ধকারের দিকে খাড়াভাবে নেমে যাওয়া একপ্রস্থ সিঁড়ি আলোকিত করে তুলে। এসবিবি হল ক্যাপিটলের সাব বেসমেন্ট।

The-Lost-Symbol-32

.

৩৩ অধ্যায়

সিস্টেম সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ মার্ক জুবিয়ানিস তার জাপানী বসার আসন ফুটনে আরও জাকিয়ে বসে তার ল্যাপটপের তথ্য স্ক্রল করতে থাকে।

এটা আবার কোন জামানার এ্যাড্রেস?

ডকুমেন্টে প্রবেশ করতে বা ত্রিশের রহস্যময় আইপি এ্যাড্রেস আনমাস্ক করতে, তার হ্যাকিং এর শ্রেষ্ঠ আয়ুধ কার্যত নির্বিষ প্রমাণিত হয়। দশ মিনিট হয়ে গেছে, এবং জুবিয়ানিসের প্রোগ্রাম এখনও নেটওয়ার্কের ফায়ারওয়ালে মাথা খুটে মরছে। তারা ভেতরে ঢুকতে পারবে বলে মনে হয় না। এবার বুঝেছি এত টাকা কেন দিচ্ছে? সে আয়ুধ পরিবর্তন করে একটা ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করবে এমন সময়ে ফোন বেজে উঠে।

ঈশ্বরের দিব্যি ত্রিস আমি বলেছি আমি তোমাকে ফোন করব। সে ফুটবল খেলা মিউট করে ফোনটা তুলে। হ্যাহ?

মার্ক জুবিয়ানিস কথা বলছেন? একটা পুরুষ কণ্ঠ জিজ্ঞেস করে। ৩৫৭ কিংস্টন ড্রাইভ ওয়াশিংটন থেকে?

জুবিয়ানিস পেছনে অস্পষ্ট কথোপকথন শুনতে পায়। প্লেঅফের দিনে টেলিমার্কেটার ফোন করেছে? শালারা কি পাগল হয়ে গেল? আচ্ছা আমি বলি কি হয়েছে, আমি এ্যাঙ্গুলায় এক সপ্তাহের হলিডে জিতেছি?

না, কণ্ঠস্বরটা রসকষহীনভাবে উত্তর দেয়। সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সির সিস্টেম সিকিউরিটি থেকে বলছি। আমরা জানতে চাই আমাদের একটা ক্লাসিফায়েড ডাটাবেসে আপনি কেন হ্যাক করার মহান উদ্যোগ নিয়েছেন?

ক্যাপিটল ভবনের সাববেসমেন্টের তিনতলা উপরে দর্শনার্থী কেন্দ্রের বিশাল খোলা জায়গায়, বরাবরের মত আজ রাতেও ন্যুনেজজ ভিতরে প্রবেশ করার প্রধান দরজায় তালা দেয়। সে প্রশস্থ মার্বেল বিছান ফ্লোরের উপর দিয়ে হেঁটে ফিরে যাবার সময়ে, সে আর্মি-সারপ্লাস জ্যাকেট পরিহিত উল্কি আঁকা লোকটার কথা ভাবে।

আমি তাকে ভিতরে ঢুকতে দিয়েছি। ন্যুনেজজ ভাবে আগামীকাল চাকরী থাকে কিনা।

এস্কেলেটরের দিকে এগিয়ে যাবার সময়ে, বাইরের দিকের দরজায় সহসা আঘাতের শব্দে সে ঘুরে তাকায়। সে দৌড়ে প্রধান প্রবেশ পথের কাছে আসে এবং দেখে একজন বয়স্ক আমেরিকান বাইরে দাঁড়িয়ে আছে হাতের তালু দিয়ে কাঁচে আঘাত করছে আর ইঙ্গিতে ভিতরে প্রবেশ করতে চাইছে।

ন্যুনেজজ মাথা নেড়ে ঘড়ি দেখায়।

লোকটা আবার ধাক্কা দেয় এবং আলোতে সরে আসে। লোকটার পরণে নীল রঙের নিখুঁত স্যুট এবং মাথার ধুসর চুল ছোট করে কাটা। ন্যুনেজজের হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়। হলি শিট। দূর থেকে হলেও ন্যুনেজজ এবার তাকে চিনতে পারে। সে দ্রুত প্রধান প্রবেশ পথের কাছে আসে এবং দরজার তালা খুলে দেয়। আমি দুঃখিত স্যার, অনুগ্রহ করে ভেতরে প্রবেশ করুন।

ওয়ারেন বেল্লামি-ক্যাপিটলের স্থপতি- চৌকাঠ অতিক্রম করে এবং মৃদু মাথা নেড়ে ন্যুনেজজকে ধন্যবাদ জানায়। বেল্লামি হালকাঁপাতলা নমনীয় গড়নের লোক, যার অভিব্যক্তি টানটান আরদৃষ্টি ক্ষুরধার যা পারিপার্শ্বিকের উপরে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে সেই আত্মবিশ্বাস বিকিরিত করে। গত পঁচিশ বছর ধরে, বেল্লামি ইউ.এস ক্যাপিটলের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছে।

স্যার আমি কি আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারি? ন্যুনেজজ জিজ্ঞেস করে।

ধন্যবাদ, হ্যাঁ, বেল্লামি চৌকষ স্পষ্টতায় শব্দ দুটি উচ্চারন করেন। উত্তরপূর্বাঞ্চলের আইভি লীগ স্নাতক, তার শব্দচয়ন এতটাই কড়া যে প্রায় বৃটিশের মতই শোনায়। আমি এইমাত্র জানতে পারলাম এখানে সন্ধ্যেবেলা একটা ঘটনা ঘটেছে। তাকে ভীষণ উদ্বিগ্ন দেখায়।

হ্যাঁ, স্যার। ব্যাপারটা হল-

চীফ এনডারসন কোথায়?

সিআইএ অফিস অব সিকিউরিটির ডিরেকটর সাটোর সাথে নীচে গিয়েছেন।

আশঙ্কায় বেল্লামির চোখ বড়বড় হয়ে যায়। সিআইএ এখানে এসেছে?

যা, স্যার। ঘটনার পরপরই ডিরেকটর সাটো এখানে এসে পৌঁছান।

কেন? বেল্লামি জানতে চায়।

ন্যুনেজজ কাঁধ ঝাঁকায়। যেন আমি তার কাছে জানতে চেয়েছি?

বেল্লামি সোজা এস্কেলেটরের দিকে হাঁটা দেয়। তারা এখন কোথায়?

তারা এই মাত্র নীচের লেভেলে গিয়েছে। ন্যুনেজজ তার পেছনে হন্তদন্ত হয়ে এগোতে এগোতে বলে।

চোখে প্রশ্ন নিয়ে বেল্লামি পেছনে তাকায়। নীচতলায়? কেন?

আমি আসলে জানিনা স্যার- আমি কেবল আমার রেডিওতে শুনেছি।

বেল্লামি এখন আরও দ্রুত গতিতে এগোতে শুরু করেছে। আমাকে এই মুহূর্তে তাদের কাছে নিয়ে চলো।

হ্যাঁ, স্যার।

খোলা জায়গাটা দুজনে মিলে দ্রুত অতিক্রম করার সময়ে, ন্যুনেজজ বেল্লামির আঙ্গুলে একটা বিশাল সোনার আংটি এক ঝলক দেখতে পায়।

ন্যুনেজজ তার রেডিও বের করে। আমি চীফকে সতর্ক করে দেই যে আপনি নীচে আসছেন।

না, বেল্লামির চোখের দৃষ্টি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। আমি কাউকে না জানিয়ে উপস্থিত হতে চাই।

ন্যুনেজজ আজরাতে অনেক ভুল করেছে, কিন্তু স্থপতি ভবনে এসেছেন এ বিষয়টা চীফ এনডারসনকে জানাতে ব্যর্থ হলে সেটা সম্ভবত তার শেষ ভুল হবে।

স্যার, কণ্ঠে অস্বস্তি নিয়ে সে বলে। আমার মনে হয় চীফ এনডারসন পছন্দ করবেন

তুমি জান যে আমি মি. এনডারসনকে নিয়োগ দিয়েছি? বেল্লামি বলে।

ন্যুনেজজ মাথা নাড়ে।

তাহলে আমার মনে হয় তোমার উচিত আমার ইচ্ছা মান্য করা।

.

৩৪ অধ্যায়

ত্রিস ডান এসএমএসসির লবিতে প্রবেশ করতে বিস্ময়ে তার চোখ কপালে উঠে যায়। অপেক্ষমান অতিথি ফ্লানেলের কাপড় পরিহিত পড়য়া ডক্টরদের মত অ্যানথ্রোপলজি, ওশেনোগ্রাফি, জুওলজি এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রের যারা এই ভবনে সচরাচর প্রবেশ করে থাকে তাদের কাতারে পড়ে না। বরং ঠিক তার বিপরীত, ড,অ্যাবাজ্জনকে তার দর্জির তৈরী নিখুঁত স্যুটে প্রায় অভিজাতবংশীয় মনে হয়। লোকটা লম্বা, সাথে চওড়া ধড়, মুখের নিয়মিত যত্ন নেয়া ত্বক এবং মাথায় নিখুঁত করে আঁচড়ানো সোনালী চুল যা দেখে ত্রিশের মনে হয় সে ল্যাবরেটরীর চেয়ে বিলাসিতায় বেশি অভ্যস্থ।

আমার ধারণা আপনি ড,অ্যাবাড্ডন? ত্রিস হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে।

লোকটাকে অনিশ্চিত দেখায় তবে সে ত্রিশের নাদুসনুদুস হাতটা নিজের চওড়া তালুতে বন্দি করে। আমি দুঃখিত। এবং আপনি?

ত্রিস ডান, সে উত্তর দেয়। আমি ক্যাথরিনের সহকারী। তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন আপনাকে পথ দেখিয়ে ল্যাবে নিয়ে যাবার জন্য।

ওহ, বুঝতে পেরেছি, লোকটা এবার হেসে উঠে। ত্রিস, আপনার সাথে পরিচিত হয়ে খুশী হলাম। আমাকে যদি বিভ্রান্ত দেখায় তবে মাফ করবেন। আমার মনে হয়েছিল ক্যাথরিন আজ সন্ধ্যাবেলা একাই আছেন। সে হলের দিকে ইঙ্গিত করে। কিন্তু এখন আমি পুরোপুরি আপনার উপরে নির্ভরশীল। পথ দেখান।

দ্রুত সামলে নিলেও ত্রিস লোকটার চোখে হতাশার ঝলক দেখতে পেয়েছে। ড. অ্যাবাড্ডনের ব্যাপারে ক্যাথরিনের পূর্বের গোপনীয়তা এবার তার কাছে ভিন্ন মাত্রা লাভ করে। সম্ভবত প্রণয়ঘটিত ব্যাপার? ক্যাথরিন কখনও তার সামাজিক জীবনের কথা আলোচনা করে না, কিন্তু তার অতিথি আকর্ষণীয় এবং ধোপদুরস্ত যদিও বয়সে ক্যাথরিনের চেয়ে ছোটই হবে, সেও তার মতই বিত্ত আর বৈভবের জগতের বাসিন্দা। তাছাড়া, ড. আবাজ্জন আজ রাত নিয়ে যাই ভেবে থাকুক না কেন, ত্রিশের উপস্থিতি তার পরিকল্পনার ভিতরে ছিল না।

লবির সিকিউরিটি চেক পয়েন্টে, নিঃসঙ্গ প্রহরী দ্রুত তার হেডফোন খুলে এবং ক্রিস রেডস্কিনের খেলার শব্দ শুনতে পায়। প্রহরী নিয়ম অনুযায়ী ড. অ্যাবাড়নকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করে হাতে অস্থায়ী নিরাপত্তা কার্ড ধরিয়ে দেয়।

কে জিতছে? ড. অ্যাবাড্ডন তার পকেট থেকে লাইটার, চাবির গোছা আর সেলফোন বের করার ফাঁকে অমায়িকভাবে জিজ্ঞেস করে।

স্কিনস তিন এগিয়ে, প্রহরী বলে, বোঝাই যায় সে আবার খেলায় ফিরে যেতে ব্যগ্র। হেলুভা খেলা।

মি. সলোমন শীঘ্রই এসে পৌঁছাবেন, ত্রিস প্রহরীকে বলে। তিনি আসবার সাথে সাথে তুমি তাকে দয়া করে ল্যাবে পাঠিয়ে দেবে?।

ঠিক আছে দেবো। তারা এগিয়ে গেলে প্রহরী সমর্থনের ভঙ্গিতে চোখ মটকায়। সতর্ক করার জন্য ধন্যবাদ। আমি কাজে ব্যস্ত থাকার ভান করবো।

ত্রিশের উক্তি কেবল প্রহরীকে সতর্ক করার জন্যই না বরং ড. অ্যাবাড্ডনকে মনে করিয়ে দেয়া যে ক্যাথরিনের সাথে তার একান্ত সন্ধ্যেটায় ত্রিসই কেবল একলা বহিরাগত নয়।

ক্যাথরিনের সাথে আপনার কিভাবে পরিচয়? রহস্যময় অতিথির দিকে তাকিয়ে ত্রিস জিজ্ঞেস করে।

ড. অ্যাবাড্ডন মুচকি হাসেন। ওহ, সে এক লম্বা কাহিনী। আমরা একটা বিষয়ে একসাথে কাজ করছি।

বুঝেছি, ত্রিস ভাবে। আমার এক্তিয়ারের বাইরে।

এই স্থাপণাটা অসাধারণ, বিশাল করিডোর দিয়ে হেঁটে যাবার সময়ে চারপাশে তাকিয়ে অবাড্ডন মন্তব্য করে। আমি আসলে এখানে আগে কখনও আসিনি।

তার ভাসাভাসা কণ্ঠস্বর প্রতি পদক্ষেপে আন্তরিক হয়ে উঠে এবং ত্রিস খেয়াল করে সে সতর্ক চোখে চারপাশের সবকিছু লক্ষ্য করছে। হলওয়ের উজ্জ্বল আলোতে, সে আরও লক্ষ্য করে তার মুখের তামাটে রঙ কেমন যেন মেকী মনে হয়। ঠিক মিলে না। ফাঁকা করিডোর দিয়ে তারা এগিয়ে যাবার সময়ে ত্রিস অবশ্য তাকে এসএমএসসির কাজ আর উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা দেয়, সাথে বিভিন্ন পড় আর তাদের ভিতরে রাখা বস্তু সম্পর্কেও তাকে গুছিয়ে বলে।

দর্শনার্থীকে বেশ মুগ্ধ দেখায়। শুনে মনে হচ্ছে এখানে অমূল্য শিল্পবস্তুর একটা গুপ্তধন আছে। আমার ধারণা সবজায়গাতেই প্রহরী ঠিকমত আছে।

দরকার নেই, উপরের সিলিংএ সারিবদ্ধ মাছের চোখের মত লেন্সের। দিকে দেখিয়ে ত্রিস বলে। এখানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অটোমেটেড। এই করিডোরের প্রতি ইঞ্চি চব্বিশ/সাত রেকর্ডিং হচ্ছে এবং এই করিডোরটা এই স্থাপণার মেরুদণ্ড। কি কার্ড আর পিন নাম্বার ছাড়া এই করিডোরের কোন কামরায় প্রবেশ করা সম্ভব না।

ক্যামেরার দক্ষ ব্যবহার।

কাঠের মতই নিরেট, আমাদের এখানে কখনও চুরি হয়নি। আর তাছাড়া মানুষ সাধারনত এধরনের জাদুঘরে চুরি করতে ঢোকে না- বিলুপ্ত ফুল, ইনুইট কায়াক বা দানবীয় স্কুইডের খোলসের কালোবাজারে খুব একটা ভাল দাম পাওয়া যাবে না।

ড. অ্যাবাড্ডন মুচকি হাসেন। আমার মনে হয় তোমার কথাই ঠিক।

আমাদের এখানে নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় হুমকি হল কীটপতঙ্গ আর ইঁদুর। ত্রিস ব্যাখ্যা করে কিভাবে এসএমএসসির আবর্জনা ফ্রিজ করে এই ভবনকে কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা হয়েছে এবং সাথে আরো আছে একটা স্থাপত্য বৈচিত্র ডেড জোন- দ্বৈত দেয়ালের মাঝে অনাতিথেয় কম্পার্টমেন্ট যা পুরো ভবনটা বর্মের মত ঘিরে রেখেছে।

অবিশ্বাস্য, অ্যাবাচ্চন বলে। তো পিটার আর ক্যাথরিনের ল্যাবটা কোথায়?

পড় পাঁচ, ত্রিস বলে। এই হলওয়ের একেবারে শেষপ্রান্তে।

অ্যাবাড়ন সহসা দাঁড়িয়ে পড়ে, ডানদিকে একটা ছোট জানালার দিকে এগিয়ে যায়। খোদা! তুমি এটা একবার দেখবে?

ত্রিস হেসে উঠে। হাহ, ওটা পড় ৩। তারা এটাকে ওয়েট পড বলে।

ওয়েট? কাঁচে মুখ চেপে রেখে অ্যাবাড্ডন জানতে চায়।

ভিতরে প্রায় তিন হাজার গ্যালন তরল ইথানল আছে। আমি আগে যে দানবীয় স্কুইডের খোলসের কথা বলেছিলাম সেটার কথা মনে আছে?

এটাই সেই স্কুইড?! বড় বড় চোখে ড,অ্যাবাড্ডন মুহূর্তের জন্য কাঁচের সামনে থেকে দৃষ্টি সরায়। জিনিসটা বিশাল।

একটা স্ত্রী আৰ্চিটিউথিস, ত্রিস বলে। প্রায় চল্লিশ ফিট লম্বা।

স্কুইডটা ড. অ্যাবাড্ডনকে আপাত দৃষ্টিতে পরমানন্দিত করেছে কাঁচ থেকে সে চোখ ফিরাতেই পারছে না। এক মুহূর্তের জন্য লোকটা পেটশপের জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা কোন বাচ্চা ছেলে বলে মনে হয় ত্রিশের কাছে, ভিতরে গিয়ে যে একটা কুকুরের ছানা দেখতে চায়। পাঁচ সেকেণ্ড পরে, সে তখনও একমনে জানালার ভিতর দিয়ে তাকিয়ে আছে।

ঠিক আছে ঠিক আছে, হেসে ফেলে ব্রিস অবশেষে তার কিকার্ড ঢুকিয়ে পিন নাম্বার টাইপ করে। এসো, আমি তোমাকে স্কুইডটা দেখাই।

মাল’আখ পড ৩ এর ভিতরে প্রবেশ করে দেয়ালে সিকিউরিটি ক্যামেরা খুঁজে। ক্যাথরিনের হোল সহকারী এই ঘরে রক্ষিত নমুনা সম্পর্কে কি যেন আবোলতাবোল বকে চলেছে। সে তাকে থামিয়ে দেয়। দানবীয় স্কুইড সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। এই অন্ধকার, নিভৃত এলাকাটা সে একটা অপ্রত্যাশিত সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করতেই বেশি আগ্রহী।

.

৩৫ অধ্যায়

ক্যাপিটলের সাব বেসমেন্টের দিকে নেমে যাওয়া খাড়া আর ভাসাভাসা কাঠের সিঁড়ির মত কোন সিঁড়ি ল্যাংডন তার বাপের কালেও দেখেনি। তার শ্বাস প্রশ্বাসের বেগ বেড়ে যায় এবং বুকটা কেমন চেপে আসে। নীচের বাতাস বেশ শীতল এবং স্যাঁতসেঁতে এবং কয়েকবছর আগে ভ্যাটিকানের নেকনোপোলিসে এমনই আরেক প্রস্থ সিঁড়ির কথা ল্যাংডনের মনে ভেসে উঠে। দি সিটি অব দি ডেড।

তার সামনে এনডারসন ফ্লাশলাইটের আলোয় পথ দেখাতে দেখাতে এগিয়ে চলেছে। ল্যাংডনের ঠিক পেছনেই সাটো তাকে অনুসরণ করছে, তার ক্ষুদে হাত মাঝে মাঝে তার পিঠে ধাক্কা দেয়। আমি যতটা সম্ভব দ্রুত চলছি। ল্যাংডন জোরে একটা শ্বাস নেয়, চেষ্টা করে চারপাশের চেপে আসা দেয়ালের কথা ভুলে থাকতে। সিঁড়ির খাঁচায় ল্যাংডনের কাঁধ কোনমতে জায়গা পেয়েছে, এবং তার পিঠের ডেব্যাগ পাশের দেয়ালে ঘষা খাচ্ছে।

ব্যাগটা তোমার উপরেই রেখে আসা উচিত ছিল, সাটো পেছন থেকে পরামর্শ দেয়।

আমি ঠিক আছি, ল্যাংডন উত্তর দেয়, চোখের সামনে থেকে এটাকে দূর রাখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা তার নেই। সে মনে মনে পিটারের ছোট প্যাকেটটার কথা

স্মরণ করে এবং ইউ.এস ক্যাপিটলের সাব বেসমেন্টের কিছুর সাথে সে এটার কোন যোগসূত্র খুঁজে পায়না।

আর কয়েকটা ধাপ, এনডারসন সামনে থেকে বলে। প্রায় পৌঁছে গেছি।

দলটা অন্ধকারের ভিতরে নীচে নামতে থাকে সিঁড়ির একমাত্র নিঃসঙ্গ বাটার আলো এতদূরে পৌঁছায় না। ল্যাংডন কাঠের শেষ ধাপটা থেকে মেঝেতে পা রাখতেই টের পায় তার পায়ের নীচে ধূলা মাটি। জানি টু দি সেন্টার অব দি আর্থ। সাটো তার পেছন পেছন নেমে আসে।

এনডারসন এবার আলোটা উঁচু করে, তাদের চারপাশটা জরিপ করে। সাববেসমেন্ট নামেই বেসমেন্ট, আদতে এটা সিঁড়ির সাথে লম্বভাবে বিস্তৃত একটা খুবই সংকীর্ণ করিডোর। এনডারসন তার হাতের লাইটটা প্রথমে বামে পরে ডানে নিক্ষেপ করে এবং ল্যাংডন দেখে প্যাসেজটা কেবল চল্লিশ ফিট লম্বা এবং এর দুপাশে সারি দিয়ে কাঠের ছোট ছোট দরজা রয়েছে। দরজাগুলোর কাঠামো এতটা পাশাপাশি অবস্থিত যে তাদের পেছনে অবস্থিত ঘরগুলো কোনমতেই দশ ফিটের বেশি প্রশস্থ হতে পারে না।

এসিএমই স্টোরেজ ডোমাটিল্লা ক্যাটাকোম্বের সাথে মিলিত হয়েছে, এণ্ডারসনের ব্লুপ্রিন্ট দেখার ব্যস্ততা দেখে ল্যাংডন ভাবে। যে ক্ষুদ্র অংশটা সাব বেসমেন্ট চিহ্নিত করছে সেটাকে এক্স চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে এসবিবি১৩ এর অবস্থান সনাক্ত করতে। ল্যাংডন লক্ষ্য না করে পারে না যে লে আউটটা ঠিক একটা চৌদ্দ সমাধি বিশিষ্ট মুসোলিয়াম, সমাধিমন্দির- যেখানে সাতটা ভল্ট বাকি সাতটা ভল্টের মুখোমুখি অবস্থিত- যার একটাকে সরিয়ে সিঁড়ির জায়গা করা হয়েছে যেটা দিয়ে এইমাত্র তারা নীচে নেমে এসেছে। তেরটা টিকে আছে।

The-Lost-Symbol-35

সে সন্দেহ করে যে আমেরিকার তের মাত্রার ষড়যন্ত্রকারী তাত্ত্বিকেরা আনন্দে বিভোর হয়ে উঠবে যদি একবার জানতে পারে ইউ.এস ক্যাপিটলের নীচে ঠিক তেরটা স্টোরেজ রুম চাপা পড়ে রয়েছে। ইউনাইটেড স্টেটসের গ্রেট সীলে তেরটা তারকা, তেরটা তীর, পিরামিডের তেরটা ধাপ, বর্মে তেরটা দাগ, তেরটা জলপাইয়ের পাতা, কমবে annuit coeptis এ তেরটা অক্ষর এবং এ বসবে pluribus unum এ তেরটা অক্ষর অনেককেই সন্দিহান করে তুলে। এবং এমন বিষয় আরো আছে।

দেখেতো পরিত্যাক্ত বলেই মনে হচ্ছে, তাদের ঠিক সামনে অবস্থিত চেম্বারে আলো ফেলে এনডারসন মন্তব্য করে। ভারী কাঠের দরজাটা হা করে খোলা। ভিতরে প্রবেশ করা আলোকপথে একটা সংকীর্ণ পাথুরে প্রকোষ্ঠ নজরে আসে-দশ ফিট চওড়া আর তের ফিট গভীর- অনেকটা কানাগলির মত কোথাও যাবার কোন পথ নেই। প্রকোষ্ঠে কয়েকটা পুরাতন দোমড়ানো কাঠের বাক্স আর। ভাঁজ করা প্যাকিং পেপার পড়ে রয়েছে।

দরজার উপরে আটকানো তামার প্লেটের উপরে এনডারসন আলো ফেলে। প্লেটটা সবুজ তাম্ৰমলে ছেয়ে গেছে কিন্তু পুরাতন খোদাই পড়া যায়:

এসবিবি ৪, এনডারসন বলে।

এসবিবি ১৩ কোনটা, সাটো জানতে চায়, ভূগর্ভস্থ শীতল বাতাসের কারণে তার মুখ থেকে হাল্কা বাষ্পের কুণ্ডলী নির্গত হয়।

এনডারসন করিডোরের দক্ষিণ প্রান্ত আলো দিয়ে দেখায়। ওদিকে।

সংকীর্ণ প্যাসেজ বরাবর তাকিয়ে থাকার সময়ে নিজের অজান্তে ল্যাংডন কেঁপে উঠে, ঠাণ্ডার ভিতরেও সামান্য ঘাম অনুভব করে।

দরজার সারিবদ্ধ বিন্যাসের পাশ দিয়ে তারা এগিয়ে যায়, সবগুলো কামরা একই রকম দেখায়, দরজা সামান্য খুলে রয়েছে, বোঝাই যায় অনেকদিন আগে এলাকাটা পরিত্যাক্ত হয়েছে। সারির শেষ মাথায় যখন তারা পৌঁছায়, এডারসন ডান দিকে ঘুরে এবং আলোটা তুলে আনে এসবিবি ১৩ এর ভিতরে কি আছে সেটা দেখতে। ফ্লাশলাইটের আলো অবশ্য একটা ভারী কাঠের দরজায় বাধাপ্রাপ্ত হয়।

এসবিবি ১৩ এর দরজা অন্য দরজাগুলোর মত না, বন্ধ।

এই শেষ দরজাটা দেখতে বাকী দরজাগুলোর মতই- ভারী কজা, লোহার হাতল এবং সবুজ হয়ে যাওয়া তামার নাম্বার প্লেট। নাম্বার প্লেটের সাতটা চিহ্ন উপর তলায় পিটারের তালুর ঠিক সেই সাতটা চিহ্নই।

এসবিবি XIII

কেউ একজন আমাকে বল দরজাটা বন্ধ, ল্যাংডন ভাবে।

সাটো কোনরকম জড়তা ছাড়াই কথা বলে। দরজাটা ঠেলা দাও।

পুলিশ প্রধানকে অস্বস্তিতে পড়তে দেখা যায় কিন্তু তারপরেও সে এগিয়ে যায় এবং ভারী লোহার হাতলটা আঁকড়ে ধরে এবং ভেতরের দিকে ঠেলা দেয়। হাতলটার কোন হেলদোল দেখা যায় না। সে এবার আলো ফেললে একটা পুরানো কেতার লক-প্লেট আর চাবি ঢুকাবার গর্ত উদ্ভাসিত হয়।

মাস্টার কী দিয়ে চেষ্টা করে দেখো, সাটো বুদ্ধি জোগায়।

উপর তলার প্রবেশের দরজা থেকে সংগৃহীত মাস্টার কী এনডারসন বের করে কিন্তু চাবিটা খাপই খায় না।

আমার কি ভুল হল, কণ্ঠে বিদ্রূপ ফুটিয়ে তুলে সাটো বলে, নাকি আপদকালীন সময়ে ভবনের প্রতিটা কোণে যাবার কোন প্রয়োজন নেই সিকিউরিটির?

এনডারসন দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাটোর দিকে তাকায়। ম্যাম আমার লোকেরা এখনও বাড়তি চাবিটা খুঁজছে, কিন্তু

তালা ভাঙো, লিভারের নীচের কী-প্লেট দেখিয়ে সাটো বলে।

ল্যাংডনের নাড়ী বোধ হয় হালই ছেড়ে দেবে।

এনডারসন গলা খাকড়ায়, বোঝা যায় অস্বস্তিতে পড়েছে। ম্যাম আমি বাড়তি চাবির কোন সংবাদ পাওয়া যায় কিনা সেজন্য অপেক্ষা করছি। আমি নিশ্চিত না ভেঙে ভেতরে ঢোকাটা আমাদের বোধহয় উচিত।

তুমি বোধহয় সিআইএর অনুসন্ধানে বিঘ্ন ঘটাবার জন্য জেলে যেতেই মুখিয়ে আছ?

এণ্ডারসনের চোখে অবিশ্বাস দেখা দেয়। বেশ কিছুক্ষণ পরে সে সাটোর হাতে ফ্লাশলাইটটা দিয়ে হোলস্টারের ফ্ল্যাপের ঢাকনা খুলে।

দাঁড়াও! আর নির্বাক দাঁড়িয়ে না থাকতে পেরে ল্যাংডন চেঁচিয়ে উঠে বলে। একটা কথা ভাবো। পিটার তার ডান হাতের কব্জি খুইয়েছে এই ঘরের পেছনে যাই থাকুক সেটা প্রকাশিত হতে না দিয়ে। তুমি কি নিশ্চিত যে আমরা এটাই করতে চাই? সন্ত্রাসবাদীর দাবি পক্ষান্তরে মেনে নেয়ার সামিল হবে দরজাটা খোলা।

তুমি কি পিটার সলোমনকে ফিরে পেতে চাও? সাটো জিজ্ঞেস করে।

অবশ্যই, কিন্তু-

তাহলে আমার পরামর্শ হল তার বন্দিকর্তার কথা মত কাজ করা।

এক প্রাচীন সিংহদ্বার অবারিত করা? তোমার ধারণা এটাই সেই সিংহদ্বার?

সাটো ফ্লাশের আলো ল্যাংডনের মুখে ফেলে। প্রফেসর, এ বিষয়ে আমার কোন ধারণাই নেই। এটা একটা গুদামঘর না কোন প্রাচীন পিরামিডে প্রবেশের গোপন পথ যাই হোক না কেন, আমরা এটা খুলতে চাই। আমার কথা কি বোঝা গেছে?

আলোর দিকে ল্যাংডন চোখ কুচকে তাকিয়ে থাকে এবং মাথা নাড়ে।

সাটো আলোটা নামিয়ে সেটা পুনরায় দরজার প্রাচীন কি-প্লেটে উপরে ফেলে। চীফ? শুরু কর।

ধীরে ধীরে এনডারসন তার পিস্তল বের করে এবং সেটার দিকে অনিশ্চিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে, এখন পরিকল্পনার ঠিক উল্টোটা করাই তার ইচ্ছা।

ঈশ্বরের দিব্যি, হাত চালাও, সাটো তার ক্ষুদে হাতটা বাড়িয়ে দেয় এবং সে পিস্তলটা তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়। তার খালি হাতে সে ফ্লাশলাইটটা গুঁজে দেয়। আলো ফেলল, জানো কোথায়। তার পিস্তল নাড়াচাড়া দেখে বোঝা যায় সেটা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস, পিস্তলের সেফটি অফে সময় নষ্ট না করে, সে অস্ত্রটা কক করেই তালার দিকে নিশানা ঠিক করে।

দাঁড়াও! ল্যাংডন চেঁচিয়ে উঠে, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে।

পিস্তলটা তিনবার গর্জে উঠে।

ল্যাংডনের মনে হয় তার কানের পর্দা ফেটে গেছে। মহিলা কি পাগল? বদ্ধস্থানে পিস্তলের আওয়াজে কানে তালা লেগে যায়।

এনডারসনকে বিহ্বল দেখায়, বুলেটে ক্ষতবিক্ষত দরজায় আলো ফেলার। সময়ে তার হাত সামান্য কাঁপতে থাকে।

তালা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে, তার চারপাশের কাঠ আক্ষরিক অর্থেই ছাতুতে পরিণত হয়েছে। তালা খুলে দরজাটা এখন সামান্য ফাঁক হয়ে আছে।

সাটো পিস্তলটা বাড়িয়ে সেটার নল দিয়ে দরজায় ঠেলা দেয়। দরজাটা পেছনের অন্ধকারে পুরোপুরি খুলে যায়।

ল্যাংডন ভিতরে উঁকি দেয় কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখতে পায় না। খোদার দুনিয়ায় ওটা কিসের গন্ধ? অন্ধকার থেকে একটা অপরিচিত গা গুলান দুর্গন্ধ ভেসে আসে।

এনডারসন।

চৌকাঠে পা রাখে এবং মেঝেতে আলো ফেলে, ময়লা মেঝে বরাবর আলোটা সতর্কতার সাথে ঘুরিয়ে নিয়ে যায়। এই ঘরটাও অন্য ঘরগুলোর মতই লম্বা সংকীর্ণ স্থান। পাশের দেয়ালগুলো অসমান পাথরের হওয়ায় কামরাটা একটা প্রাচীন জেলখানার মত মনে হয়। কিন্তু দুর্গন্ধটা…

এখানে কিছু নেই, চেম্বারের মেঝে বরাবর আলোটা প্রসারিত করে এনডারসন বলে। আলোর রেখাটা মেঝের শেষপ্রান্তে পৌঁছালে সে আলোটা উঁচু করে চেম্বারের অপরপাশের দেয়াল আলোকিত করবে বলে।

হায় ঈশ্বর…! এনডারসন চেঁচিয়ে উঠে।

সবাই ব্যাপারটা লক্ষ্য করে এবং লাফিয়ে উঠে।

চেম্বারের শেষপ্রান্তের ফাঁকা স্থানের দিকে চোখে অবিশ্বাস নিয়ে ল্যাংডন তাকিয়ে থাকে।

তাকে আতঙ্কিত করে তুলে কিছু একটা তার দিকে পাল্টা তাকিয়ে রয়েছে।

.

৩৬ অধ্যায়

ঈশ্বরের দিব্যি ওটা কি…? এসবিবি১৩ এর চৌকাঠে দাঁড়িয়ে, এনডারসন হাতের আলো আনাড়িভাবে নাড়ায় এবং একপা পিছিয়ে আসে।

ল্যাংডনও গুটিয়ে যায়, এমনকি সাটোও, যাকে আজ রাতে সবাই প্রথমবারের মত চমকে উঠতে দেখে।

সাটো পিস্তলটা পেছনের দেয়াল লক্ষ্য করে তাক করে এবং এনডারসনকে ইঙ্গিত করে আলোটা আরেকবার ফেলতে। এনডারসন আলোটা উপরে উঠায়। শেষ প্রান্তের দেয়ালে পৌঁছাবার আগেই আলোকরশ্মি দূর্বল হয়ে পড়ে কিন্তু একটা ভৌতিক আর ফ্যাকাশে মুখের অবয়ব আলোকিত করার জন্য সেটা যথেষ্ট, প্রাণহীন অক্ষিকোটর তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

মানুষের করোটি।

চেম্বারের পেছনের দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা একটা কাঠের রুগ্ন টেবিলের উপরে খুলিটা রয়েছে। খুলির দুপাশে মানুষের পায়ের দুটো হাড়, সাথে আরও অনেক উপাচার সতর্কতার সাথে যথাযথভাবে ডেস্কের উপরে মন্দিরের আঙ্গিকে সাজান একটা প্রাচীন বালিঘড়ি, একটা ফটিকের ফ্লাক্স, মোমবাতি, ধূসর। পাউডারের দুটো পাত্র এবং একটা সাদা কাগজ। ডেস্কের পাশে দেয়ালের গায়ে ভীতিকর আঁকৃতির একটা লম্বা কাস্তে রাখা, এর বাঁকান ফলা যেকোন পরিচিত ফলার মতই ভয়ঙ্কর।

সাটো ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে। বেশ, এখন…বোঝা যাচ্ছে আমি যা কল্পনা করেছিলাম পিটার সলোমনের তারচেয়ে অনেকবেশী সিক্রেট রয়েছে।

এনডারসন মাথা নাড়ে, তার পেছনেই সে রয়েছে। তোমার ক্লজেটের কঙ্কাল কিভাবে এল। সে আলোটা তুলে বাকী কামরাটা পরীক্ষা করে। এবং গন্ধটা কিসের? নাক কুচকে সে জানতে চায়। এটা কি?

সালফার, তাদের পেছন থেকে ল্যাংডন বলে। ডেস্কের উপরে দুটো পিরীচ থাকার কথা। ডানদিকের পিরীচে লবণ থাকবে। এবং অন্যটায় সালফার।

চোখে অবিশ্বাস নিয়ে সাটো ঘুরে দাঁড়ায়। তুমি এসব কিভাবে জানো? কারণ, ম্যাম, ঠিক এরকম কক্ষ সারা পৃথিবীতে প্রচুর রয়েছে।

.

সাববেসমেন্টের একতলা উপরে, ক্যাপিটলের নিরাপত্তা প্রহরী ন্যুনেজজ, ক্যাপিটলের আর্কিটেক্ট, ওয়ারেন বেল্লামিকে পথ দেখিয়ে লম্বা হলওয়ে দিয়ে। নিয়ে যায়, পূর্বদিকের বেসমেন্টের দৈর্ঘ্য বরাবর যা বিস্তৃত। ন্যুনেজজ দিব্যি কেটে বলতে পারে একটু আগে সে এখানে তিনটা গুলির শব্দ শুনেছে, তোতা এবং নীচ থেকে এসেছে। এটা হতেই পারে না।

সাববেসমেন্টের দরজা খোলা হয়েছে, হলওয়ের একটা দরজার দিকে তাকিয়ে যা দূরে সামান্য ফাঁক হয়ে ভোলা রয়েছে, বেল্লামি বলেন।

আজকের সন্ধ্যার বলিহারি যাই, ন্যুনেজজ ভাবে। নীচে কেউ যাবে না। কি হচ্ছে জানতে পারলে আমি খুশীই হব, রেডিও বের করার ফাঁকে সে বলে।

যাও তোমার ডিউটিতে ফিরে যাও, বেল্লামি বলেন। এখান থেকে আমি দিব্যি যেতে পারব।

ন্যুনেজজ অস্বস্তির সাথে নড়ে উঠে। আপনি নিশ্চিত?

ওয়ারেন বেল্লামি দাঁড়িয়ে পড়ে ন্যুনেজজের কাঁধে শক্ত করে হাত রাখে। বাছা, পঁচিশ বছর আমি এখানে কাজ করছি। আমার মনে হয় আমি নিজের পথ খুঁজে নিতে পারব।

.

৩৭ অধ্যায়

মাল’আখ তার জীবনে অনেক ভীতিকর স্থান দেখেছে কিন্তু পড় ৩ এর অপার্থিব জগতের সাথে সেসব কারো তুলনা চলে না। অতিকায় ঘরটা দেখে মনে হবে কোন এক পাগল বৈজ্ঞানিক ওয়ালমার্টে চড়াও হয়েছে এবং সব এইসেল আর শেলফে হরেক আঁকার আর আঁকৃতির স্পেসিমেন জারে ভরে ফেলেছে। ফটোগ্রাফিক ডার্করুমের ন্যায় আলোকিত পুরো স্থানটা লালচে আভার নিরাপদ আলোয় ভাসছে যা শেলফের নীচ থেকে বিকিরিত হয়ে উপরে ছড়িয়ে পড়েছে আর ইথানল পূর্ণ ধারকগুলো আলোকিত করে তুলেছে। সংরক্ষণকারী রাসায়নিকের হাসপাতালের মত গন্ধে গা গুলিয়ে উঠে।

এই পডে বিশ হাজারের উপরে নমুনা রয়েছে, মোটা মেয়েটা বলছিল। মাছ, ইঁদুর, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী।

সবই মৃত, আশা করি? কণ্ঠে ভয়ের ভাব ফুটিয়ে তুলে মাল’আখ জানতে চায়।

মেয়েটা হাসে। হাহ। সবই মৃত। আমাকে স্বীকার করতেই হবে এখানে। কাজে যোগ দেবার পরে প্রথম ছয়মাস আমি এখানে ঢোকার সাহসই পাইনি।

মাল’আখ কারণটা সহজেই বুঝতে পারে। সে যেদিকেই তাকায় মৃত প্রাণের নমুনা ভর্তি জার– স্যালাম্যানডার, জেলীফিস, ইঁদুর, ছারপোকা, পাখি এবং আরো অনেক কিছু যা সে ঠিকমত চিনে উঠতে পারে না। এই সগ্রহটা নিজেই যেন অস্থিরতার চুড়ান্ত না, ঘোলাটে লাল সেফলাইট যা ফটোসেনসিটিভ এইসব নমুনাকে দীর্ঘ মেয়াদি আলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে, একজন দর্শনার্থীর এখানে মনে হবে সে একটা বিশাল এ্যাকুরিয়ামের ভিতরে দাঁড়িয়ে। আছে যেখানে প্রাণহীন জন্তু কোনভাবে একত্রিত হয়েছে ছায়ার আড়াল থেকে তাকে দেখার জন্য।

ওটা একটা কোয়েলাকান্থ, একটা বড় প্লেক্সিপ্লাসের জারের দিকে ইঙ্গিত করে মেয়েটা বলে যেটায় মাল’আখের দেখা সবচেয়ে কুৎসিত মাছটা রাখা। ধারণা করা হয়েছিল, ডায়নোসরের সাথে এটাও বিলুপ্ত হয়েছে কিন্তু আফ্রিকার। উপকূলে গত শতাব্দির শুরুর দিকে এটা পুনরায় মাঝিদের জালে ধরা পড়ে।

কি ভাগ্যের কথা, মাল’আখ ভাবে, খুব অল্প কথাই তার কানে প্রবেশ করে। সে কেবল দেয়ালে সিকিউরিটি ক্যামেরা খুঁজতে থাকে। সে কেবল একটা ক্যামেরা দেখতে পেয়েছে- প্রবেশের মুখে দরজার কাছে রয়েছে- অবাক হবার কিছু নেই, যেখানে প্রবেশ পথই সম্ভবত একমাত্র উপায় ভেতরে আসবার।

আর এই যে যেটা আপনি দেখতে চেয়েছিলেন…তাকে দানবীয় ট্যাঙ্কের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলে মেয়েটা। আমাদের দীর্ঘতম নমুনা। সে গেম-শোর হোস্টের মত নতুন গাড়ি দেখাচ্ছে এমন ভঙ্গিতে কুৎসিত প্রাণীটার দিকে হাত প্রসারিত করে। আৰ্চিটিউথিস।

স্কুইডের ট্যাঙ্কটা দেখলে মনে হবে অনেকগুলো কাঁচের ফোন বুথ পাশাপাশি রেখে জোড়া দেয়া হয়েছে। লম্বা স্বচ্ছ প্লেক্সিগ্লাসের কফিনে অসুস্থকর ধরণের ফ্যাকাশে, আর এ্যামরফোঁস আঁকৃতির জিনিসটা ভেসে বেড়ায়। মাল’আখ বস্তার মত মাথাটা আর বাস্কেটবল আঁকৃতির চোখের দিকে তাকায়। এর পাশে তোমাদের কোয়েলাকান্থ রীতিমত সুদর্শন, সে বলে।

অপেক্ষা কর, আগে তাকে প্রজ্জ্বলিত হতে তো দেখো।

ত্রিস ট্যাঙ্কের লম্বা ঢাকনাটা খুলে দেয়। ইথানলের বাষ্প উঠার মধ্যে ট্যাঙ্কের ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে তরলের ঠিক ওপরে অবস্থিত একটা সুইচ অন করে। ট্যাঙ্কের তলদেশে স্থাপিত একসারি ফুরোসেন্ট বাতি পরপর জ্বলে উঠে। আচিটিউথিস এখন স্বমহিমায় জ্বলজ্বল করছে-বিশাল মাথাটা ক্ষুরধার সাকার আর নষ্ট হতে থাকা টেন্টাক্যালসের অংশের সাথে যুক্ত।

সে ব্যাখ্যা করতে থাকে কিভাবে আৰ্চিটিউথিস সম্মুখ যুদ্ধে স্পার্ম হোয়েলকে পরাস্ত করতে সক্ষম।

মাল’আখ কেবল অর্থহীন বিড়বিড়ানি শুনতে পায়।

সময় হয়েছে।

.

পড তিনে প্রবেশ করলে ত্রিস ডান সবসময়েই একটা অস্বস্তিতে ভোগে, কিন্তু এই মুহূর্তে যে শিরশির ভাবটা তার ভিতরে সঞ্চালিত হয় সেটা ভিন্ন। ধরণের।

জৈবিক। আদ্যকালীন।

সে বিষয়টাকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে, কিন্তু সেটা দ্রুত বাড়তে থাকে এবং তার অস্তিত্বের গভীরে ছড়িয়ে পড়ে। ত্রিস যদিও তার উদ্বেগের উৎস ঠিক ঠাহর করতে পারে না, তার সহজাত প্রবৃত্তি তাকে বলতে থাকে যাবার সময় হয়েছে।

যাই হোক, এটাই সেই স্কুইড, কথাটা বলে সে পুনরায় ট্যাঙ্কের ভিতরে প্রবেশ করে এবং লাইট নিভিয়ে দেয়। আমাদের বোধহয় ক্যাথরিনের কাছে ফিরে যাওয়া

একটা চওড়া হাতের তালু তার মুখ চেপে ধরে, তার মাথাটা পেছনে হেচকা টান দেয়। সেই সাথে, একটা শক্তিশালী হাত তার দেহ চারপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে পাথরের মত একটা বুকে তাকে পিন করে আটকে ফেলে। মুহূর্তের জন্য, এই আঁকস্মিক ধাক্কায় ত্রিস অসার হয়ে যায়।

তারপরেই আতঙ্ক ধেয়ে আসে।

লোকটা বুকে কি যেন খুঁজে, তার কিকার্ড চেপে ধরে এবং জোরে নীচের দকে টান দেয়। গলার পেছনে কার্ডের ফিতেটা ছিঁড়ে যাবার আগে তার পিঠে আগুন ধরিয়ে দেয়। কি কার্ড মেঝেতে তাদের পায়ের কাছে পড়ে যায়। সে যুদ্ধ। করে, মোচড় খেয়ে সরে যেতে চেষ্টা করে, কিন্তু লোকটার আঁকৃতি আর শক্তি কোনটার সাথেই তার তুলনা চলে না। সে চিৎকার করতে চায়, কিন্তু তার হাত এখনও শক্ত করে মুখ চেপে রেখেছে। সে ঝুঁকে আসে এবং তার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে কথা বলে। আমি যখন তোমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেব তুমি কোন চিৎকার করবে না, পরিষ্কার?।

সে পাগলের মত মাথা নাড়ে, তার বুক বাতাসের অভাবে খাবি খায়। আমি শ্বাস নিতে পারছি না!

লোকটা এবার তার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয় এবং ত্রিস হাঁসফাঁস করতে করতে জোরে শ্বাস নেয়।

আমাকে যেতে দাও! রুদ্ধশ্বাসে সে দাবী জানায়।

তোমার পিন নাম্বার আমাকে বল, লোকটা তার কথা পাত্তা না দিয়ে বলে।

ত্রিশের সবকিছু কেমন তালগোল পাকিয়ে যায়। ক্যাথরিন! বাঁচাও! কে এই লোক?! সিকিউরিটি তোমাকে দেখে ফেলবে! সে ভাল করেই জানে তারা ক্যামেরার রেঞ্জের বাইরে রয়েছে, তবুও বলে। আর কেউ দেখছেও না। যাইহোক।

তোমার পিন নাম্বার, লোকটা আবার বলে। তোমার কিকার্ডের সাথে যে নাম্বারটা মিলে।

তার পেটে ভয়ের একটা শীতল অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে এবং ত্রিস পাগলের মত মোচড়াতে শুরু করে, একটা হাত কোনমতে ছাড়িয়ে নিয়ে, চারপাশে হাতড়াতে থাকে, লোকটার চোখে একবার খামচি দেবার চেষ্টা করে। তার আঙ্গুল মাংসে আঘাত করে এবং গালে আঁচড় টেনে দেয়। সে যেখানে খামচি দিয়েছে সেখানের মাংসে চারটা কালো ক্ষতমুখ উন্মুক্ত হয়। তখন কেবল সে অনুধাবন করে মাংসের উপরে কালো দাগগুলো রক্ত না। লোকটা মেকআপ নিয়ে আছে, যা সে এইমাত্র তুলে ফেলেছে, ভিতরে লুকান উল্কি উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে।

এই দানবটা কে?!

আপাতভাবে অতিদানবীয় শক্তিতে, লোকটা তাকে উল্টো দিকে ঘুরায় এবং উঁচু করে ধরে তাকে স্কুইডের খোলা ট্যাঙ্কে ঠেলে দেয়, ত্রিশের মুখ এখন ইথানলের উপরে ভাসছে। ধোয়ায় তার নাক জ্বলতে শুরু করে।

তোমার পিন নাম্বার কি? সে পুনরাবৃত্তি করে।

তার চোখ জ্বলে এবং সে দেখে তার মুখের নীচে স্কুইডের ধুসর মাংসপেশী অর্ধেক ডুবে আছে।

বলো আমাকে, সে তার মুখটা আরও নীচের দিকে ঠেলে দিয়ে বলে। নাম্বারটা কি?

তার কণ্ঠ এবার জ্বলে যেতে থাকে। শূন্য-আট-শূন্য-চার! সে অস্পষ্ট কণ্ঠে বলে, শ্বাস নিতেই তার রীতিমত কষ্ট হচ্ছে। আমাকে ছেড়ে দাও! শূন্য আট-শূন্য-চার!

তুমি যদি মিথ্যে বলে থাক, তাকে ইথানলের দিকে আরও ঠেলে দিয়ে সে বলে, ত্রিশের চুল এখন ইথানলে ভিজছে।

আমি মিথ্যে বলছি না! কাশতে কাশতে সে বলে। আগস্ট ০৪ আমার জন্মদিন!

ত্রিস, তোমাকে ধন্যবাদ।

তার শক্তিশালী হাত তার মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরে, এবং বিধ্বংসী শক্তিতে তাকে নীচের দিকে ঠেসে ধরে, তার মুখ ট্যাঙ্কের ভিতরে ডুবে যায়। তীব্র ব্যথায় তার চোখ জ্বলে যায়। লোকটা তাকে আরও জোরে চেপে ধরে, তার পুরো মাথা ইথানলে ঠেসে ধরে। ত্রিস টের পায় স্কুইডের মাংসল মাথা তার মুখে ধাক্কা দিচ্ছে।

নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে সে ভীষণভাবে পেছনে ধাক্কা দেয়, পেছনে বেঁকে গিয়ে ট্যাঙ্ক থেকে মাথাটা তুলতে চেষ্টা করে। কিন্তু শক্তিশালী হাতের চাপ একটুও শীথিল হয় না।

আমাকে শ্বাস নিতে হবে!

সে তরলে ডুবে থাকা অবস্থায় চোখ বা মুখ না খোলার চেষ্টা করে। নিঃশ্বাস নেবার জন্য তার বুক মনে হয় ফেটে যাবে। না! একেবারেই না! কিন্তু শেষ পর্যন্ত ত্রিশের শ্বাস নেবার প্রবনতাই জয়ী হয়।

তার মুখ খুলে যায় এবং তার ফুসফুস ভীষণভাবে প্রসারিত হয় শরীরের চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন টেনে নেবে বলে। তরল লোহার মত দগ্ধকারী উল্লাসে তার মুখের ভিতরে ইথানলের একটা স্রোত প্রবেশ করে। তার কণ্ঠনালী দিয়ে রাসায়নিক পদার্থ ফুসফুঁসে পৌঁছালে, ত্রিস এমন একটা ব্যথা অনুভব করে যা

তার কল্পনাতেও ছিল না। একটাই বাঁচোয়া, ব্যথাটা কেবল কয়েক সেকেণ্ড স্থায়ী হয় তারপরেই পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায়।

.

ট্যাঙ্কের পাশে দাঁড়িয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হবার ফাঁকে মাল’আখ ক্ষতির পরিমাণ জরিপ করে।

প্রাণহীন মেয়েটা ট্যাঙ্কের কিনারে নিথর হয়ে পড়ে আছে, তার মাথা এখন ইথানলে ডুবে আছে। তাকে সেখানে দেখে, মাল’আখের মনে অন্য আরেক মহিলা তার একমাত্র শিকার ভেসে উঠে।

ইসাবেল সলোমন।

অনেক আগের কথা। অন্য জীবনের কাহিনী।

মাল’আখ এবার মেয়েটার শীথিল লাশের দিকে তাকায়। সে তার প্রশস্থ কোমড় জড়িয়ে ধরে এবং নিজের পা দিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে উপরে তুলে, সামনের দিকে ঠেলতে থাকে যতক্ষণ না সে স্কুইডের ট্যাঙ্কের কিনারা দিয়ে ভিতরে পিছলে যেতে শুরু না করে। ক্রিস ডান মাথা নীচের দিকে দিয়ে ইথানলে পিছলে যেতে থাকে। তার বাকী দেহ ইথানল ছিটিয়ে নীচের দিকে অনুসরণ করে। আস্তে আস্তে বুদবুদ মিলিয়ে যায় মেয়েটার দেহ এখন বিশাল সামুদ্রিক জটার উপরে নিস্তেজ হয়ে ভাসছে। তার পরনের কাপড় ভারী হলে সে তখন ডুবতে শুরু করে, অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকে। অল্প অল্প করে, ত্রিস ডানের দেহ বিশাল জটার উপরে এসে থিতু হয়।

মাল’আখ হাত মুছে, প্লেক্সিগ্নাসের ঢাকনা জায়গামত বসিয়ে, ট্যাঙ্ক সীল করে দেয়।

ওয়েট পডে নতুন একটা নমুনা যোগ হল।

সে মেঝে থেকে এবার ত্রিশের কিকার্ড তুলে নেয় এবং পকেটে ভরে: ০৮০৪।

মাল’আখ লবিতে যখন প্রথম ত্রিসকে দেখেছিল, সে তার ভিতরে একটা বাড়তি ঝামেলা লক্ষ্য করেছিল। তারপরে সে অনুধাবন করে তার কিকার্ড আর পাসওয়ার্ড তার ইনসুরেন্স। ক্যাথরিনের তথ্য সংরক্ষণ কক্ষ যদি পিটারের কথা মতই সুরক্ষিত হয়ে থাকে তবে মাল’আখ বুঝতে পারে ক্যাথরিনকে বুঝিয়ে সেটা খোলানর জন্য তাকে অনেক দেন দরবার করতে হবে। এখন আমার নিজেরই। একসেট কি আছে। সে নিজের উপর প্রীত হয় এই ভেবে যে এখন আর তাকে ক্যাথরিনকে তেল দিতে হবে না তার ইচ্ছামত কাজ করার জন্য।

মাল’আখ সোজা হয়ে দাঁড়াতে সে জানালায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় এবং বুঝতে পারে তার মেকআপের বারোটা বেজে গেছে। এখন আর কিছু আসে যায় না। ক্যাথরিন যখন পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারবে ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে যাবে।

.

৩৮ অধ্যায়

এই ঘরটা ম্যাসনিক? সাটো করোটির দিক থেকে ঘুরে অন্ধকারে ল্যাংডনের দিকে তাকিয়ে জানতে চায়।

ল্যাংডন শান্ত ভাবে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। একে বলা হয় চেম্বার অব রিফ্লেকশন। এই ঘরগুলোকে শীতল, নিরাভরণ জায়গা হিসাবে বিন্যস্ত করা হয় যেখানে একজন ম্যাসন তার নশ্বরতা বিবেচনা করবে। মৃত্যুর অনতিক্রম্যতার উপরে ধ্যান করে, একজন ম্যাসন জীবনের ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির উপরে মূল্যবান ধারণা লাভ করে।

সাটো ভীতিকর জায়গাটার চারপাশে তাকায়, দেখে বোঝা যায় সে মোটেই সন্তুষ্ট নয়। এটা কোন এক ধরণের ধ্যানের ঘর?

মূলত, হ্যাঁ। এই চেম্বারগুলোতে সবসময়ে একই প্রতীক সন্নিবেশিত করা হয়- করোটি, আড়াআড়ি করে রাখা হাড়, কাস্তে, বালিঘড়ি, সালফার, লবন, খালি কাগজ, মোমবাতি আরো অনেক কিছু। মৃত্যুর প্রতীকসমূহ একজন ম্যাসনকে উদ্বুদ্ধ করে এই পৃথিবীর জীবন কিভাবে আরও সুন্দর করে যাপন করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে।

দেখে মনে হচ্ছে অনেকটা মৃত্যুর উপাসনা মন্দির, এনডারসন মন্তব্য করে।

এটাই আসল কথা। আমার সিম্বলজির অধিকাংশ ছাত্রেরই প্রথমে এই প্রতিক্রিয়া হয়। ল্যাংডন প্রায়শই তাদের বেরেসনিয়েকের সিম্বলস অব ফ্রিম্যাসনারী নির্দিষ্ট করে দেয়, যেখানে চেম্বারস অব রিফ্লেকশনের অসংখ্য সুন্দর ছবি আছে।

আর তোমার ছাত্ররা, সাটো জানতে চায়, ম্যাসনরা করোটি আর কাস্তের সাহায্যে ধ্যান করে জানতে পেরে বিচলিত বোধ করে না?

খ্রিস্টানরা সবিদ্ধ একটা লোকের পায়ের কাছে, বা হিন্দুদের চারমাথা বিশিষ্ট হাতি যাকে তারা গনেশ বলে তার সামনে মন্ত্রপাঠের চেয়ে বেশি বিচলিত বোধহয় না। কোন সংস্কৃতির প্রতীককে ভুল বোঝা থেকেই সংস্কারের সূচনা।

সাটো ঘুরে তাকায়, বক্তৃতা শোনার মত মুডে নেই বোঝা যায়। সে টেবিলে সজ্জিত আর্টিফ্যাক্টের দিকে এগিয়ে যায়। ফ্ল্যাশলাইট দিয়ে এনডারসন তাকে পথ দেখাতে চায় কিন্তু আলোকরশ্মি উজ্জ্বলতা হারাতে শুরু করেছে। সে লাইটের পেছনে কয়েকটা আঘাত করে এবং আরেকটু উজ্জ্বল আলো পেতে সক্ষম হয়।

তিনজন সংকীর্ণ স্থানটার আরো ভিতরে প্রবেশ করতে, সালফারের ঝাঁঝালো গন্ধে ল্যাংডনের নাক জ্বালা করতে থাকে। সাববেসমেন্ট এলাকাটা স্যাঁতসেঁতে এবং বাতাসের আদ্রতা পাত্রের সালফারকে সক্রিয় করে তুলেছে। সাটো টেবিলটার কাছে পৌঁছে এবং করোটি আর তার আশেপাশের বস্তুগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। এনডারসন তার সাথে যোগ দিয়ে দূর্বল ফ্ল্যাশলাইটের আলোতে ডেস্কটা আলোকিত করতে চেষ্টা করে।

সাটো টেবিলের সবকিছু খুঁটিয়ে দেখে এবং শেষে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এসব আবর্জনার মানে কি?

এই ঘরের আর্টিফ্যাক্টসমূহ, ল্যাংডন জানে, খুব সতর্কতার সাথে নির্বাচিত আর বিন্যস্ত। রূপান্তরের প্রতীক, সে তাকে বলে, সামনে এগিয়ে তাদের সাথে টেবিলের পাশে এসে দাঁড়াতে নিজেকে তার কেমন বন্দি বন্দি লাগে। করোটি বা caput mortuum একজন মানুষের পঁচনের পরে শেষ রূপান্তর উপস্থাপন করে; এটা একটা সতর্কবাণী যে একদিন আমাদের সবার নশ্বর দেহ বিনষ্ট হবে। সালফার আর লবণ অ্যালকেমীক্যাল প্রভাবক যা রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করে। বালিঘড়ি সময়ের রূপান্তরের ক্ষমতা বোঝায়। সে না জ্বালান মোমবাতিটা দেখায়। এবং মোমবাতিটা আদিকালীক আগুনের গঠণাত্মক শক্তি এবং অজ্ঞতার দ্রিা ভেঙে মানুষের জেগে ওঠা বোঝায়- আলোকিত হয়ে রূপান্তর।

এবং…ওটা? সাটো কোনার দিকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে।

এনডারসন ফ্ল্যাশের ক্ষীণ আলো পেছনের দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা অতিকায় কাস্তের উপর ফেলে।

মৃত্যুর কোন প্রতীক না, যদিও অনেকেই তা মনে করে, ল্যাংডন বলে। কাস্তেটা আসলে প্রকৃতির পুষ্টির রূপান্তরের প্রতীক- প্রকৃতির দান আহরন করা।

সাটো আর এনডারসন চুপ করে থাকে, এই বিচিত্র পরিবেশের সাথে আপাত দৃষ্টিতে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টায় তারা ব্যস্ত।

ল্যাংডন যেভাবে হোক এই জায়গাটা থেকে যেতে পারলে যেন বাঁচে। এই ঘরটাকে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে বলে আমার মনে হয়েছে, সে তাদের বলে, কিন্তু এখানে দেখার কিছু নেই; এটাই আসলে স্বাভাবিক। অনেক ম্যাসনিক লজেই ঠিক এই রকমের ঘর আছে।

কিন্তু এটা কোন ম্যাসনিক লজ না! এনডারসন ঘোষণা করে। এটা ইউ.এস ক্যাপিটল, এবং আমি জানতে চাই আমার ভবনে এটা কি করছে।

ম্যাসনরা কখনও কখনও তাদের অফিস, বাসা বা ধ্যানের স্থানে এমন ঘর তৈরী করে থাকে। এটা সাধারণ ঘটনা। ল্যাংডন বস্টনের এক হার্ট সার্জনকে চেনে যে তার অফিসের একটা ক্লজিটকে চেম্বার অব রিফ্লেকশনে রূপান্তরিত করেছে যাতে সে প্রতিবার সার্জারীতে যাবার আগে মরণশীলতার বিষয়টা নিয়ে ভাবতে পারে।

সাটোকে বিভ্রান্ত দেখায়। তুমি বলতে চাও পিটার সলোমন এখানে আসত মরণশীলতা নিয়ে ভাববার জন্য?

এটা আমি সত্যিই জানি না, ল্যাংডন আন্তরিকভাবে বলে। সে হয়ত এটা তৈরী করেছিল তার অন্য ম্যাসনিক ভাইদের জন্য যারা এই ভবনে কাজ করে, পার্থিব জগতের বিশৃঙ্খলা থেকে একটা তাদের একটা আধ্যাত্মিক অভয়াশ্রমের সন্ধান দিতে চেয়েছিল…ক্ষমতাধর লমেকারের জন্য একটা স্থান যেখানে সে সিদ্ধান্ত নেবার আগে এখানে এসে বিবেচনা করতে পারে, যা তার সাথী লোকদের উপরে প্রভাব ফেলবে।

চমৎকার ভাববিলাসিতা, সাটো তার পরিচিত বিদ্রুপাত্মক কণ্ঠে মন্তব্য করে, কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তাদের নেতারা কাস্তে আর করোটি নিয়ে ক্লজেটে প্রার্থনা করছে এই বিষয়টা আমেরিকানরা স্বাভাবিকভাবে নেবে না।

বেশ, তাদের নেয়াও উচিত না, ল্যাংডন ভাবে, কল্পনা করতে চেষ্টা করে যদি নেতারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া আগে মৃত্যুর চূড়ান্ত অবস্থা সময় নিয়ে বিবেচনা করতো তবে এ পৃথিবী কতটা আলাদা হতে পারত।

সাটো ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে এবং সতর্ক চোখে চেম্বারের মোমবাতি আলোকিত চারটা কোণ জরিপ করে। প্রফেসর, রাসায়নিক পদার্থ আর মানুষের হাড় ছাড়াও এখানে অবশ্যই অন্য কিছু একটা আছে। কেউ একজন তোমাকে কেমব্রিজের বাসা থেকে কেবল এই ঘরটা পরিদর্শনের জন্য উড়িয়ে এনেছে।

ল্যাংডন তার পাশে ঝুলতে থাকা ডেব্যাগ আঁকড়ে ধরে, এখনও বুঝতে পারেনি যে প্যাকেটটা সে নিয়ে এসেছে সেটার সাথে এই চেম্বার কিভাবে সম্পর্কিত। ম্যাম আমি দুঃখিত, কিন্তু আমি এখানে অসাধারণ কিছুই খুঁজে পাইনি। ল্যাংডন আশা করে এবার হয়ত তারা পিটারকে খোঁজার কাজ শুরু করতে পারবে।

এণ্ডারসনের হাতে বাতি নিভে আবার জ্বলে উঠে এবং সাটো তার দিকে ঘুরে তাকায় তার মেজাজ প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। যীশুর দিব্যি, খুব বেশি কিছু তোমাকে করতে বলা হয়নি? সে নিজের পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা সিগারেট লাইটার বের করে। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ফ্লিন্টে আঘাত করে আগুন ধরিয়ে সে টেবিলের একমাত্র মোমবাতিটা জ্বালায়। সলতেটা দপদপ করে এবং তারপরে জ্বলে উঠে আটসাটো এলাকাটায় একটা ভৌতিক আভা ছড়িয়ে দেয়। পাথুরে দেয়ালে লম্বা ছায়া পড়ে। শিখা আরেকটু উজ্জ্বল হতে একটা অপ্রত্যাশিত দৃশ্য তাদের সামনে ভেসে উঠে।

দেখো! এনভারসন নির্দেশ করে বলে।

মোমবাতির আলোতে, তারা এখন হাল্কা হয়ে যাওয়া সামঞ্জস্যহীন দেয়াল লিখন গ্রাফিতি দেখতে পায়- পেছনের দেয়াল জুড়ে সাতটা ক্যাপিটেল লেটার। লেখা রয়েছে।

ভিটরিয়ল

একটা অদ্ভুত শব্দ চয়ন, মোমবাতির আলোয় দেয়ালের অক্ষরের উপরে করোটির ভীতিকর ছায়া পড়তে, সাটো বলে।

আসলে এটা একটা আদ্যক্ষরা, ল্যাংডন বলে। বেশীর ভাগ চেম্বারের পেছনের দেয়ালে ম্যাসনিক ধ্যান মন্ত্রের শাঁটলিপি হিসাবে এটা লেখা থাকে: Visita interiora terrae, rectificando invenies occultum lapidem.

সাটো তার দিকে তাকায়, দৃষ্টিতে মুগ্ধতা। মানে?

পৃথিবীর অভ্যন্তরে ভ্রমণ কর, এবং পরিশুদ্ধির দ্বারা, তুমি লুকান পাথর খুঁজে পাবে।

 সাটোর দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়। লুকান পাথর কোনভাবে লুকান পিরামিডের সাথে সম্পর্কিত নয়তো?

ল্যাংডন কাঁধ ঝাঁকায়, তুলনাতে সে যেতে রাজি না। যারা ওয়াশিংটনে লুকান পিরামিডের কথা কল্পনা করতে পছন্দ করে তারা হয়ত তোমাকে বলবে acentam tapidern পাথরের পিরামিডের কথা বলে, হ্যাঁ। অন্যেরা বলবে এটা পরশ পাথরের অভিসম্বন্ধ একটা পদার্থ অ্যালকেমিস্টরা বিশ্বাস করতো যা। তাদের অনন্ত জীবন বা সীসাকে সোনায় রূপান্তরিত করার শক্তি দেবে। অন্যেরা দাবী করে এটা হলি অব হলিসের শরণ, গ্রেট টেম্পলের অভ্যন্তরে লুকান একটা পাথরের প্রকোষ্ঠ। আবার কারো মতে এটা সেন্ট পিটারের গোপন শিক্ষার অভিসম্বন্ধ- দি রক। প্রতিটা গুপ্ত প্রথা দি স্টোনকে নিজের আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করেছে, কিন্তু প্রতিটা ক্ষেত্রেই accatam lapidan ক্ষমতা আর আলোকপ্রাপ্তি দীক্ষার উৎস।

এনডারসন গলা পরিষ্কার করে। এটা কি সম্ভব সলোমন এই লোকটাকে মিথ্যা বলেছে? সে হয়ত তাকে বলেছে নীচে এখানে কিছু একটা আছে…এবং সেখানে আসলেই কিছু নেই।

ল্যাংডনও একই বিষয় ভাবছিলো।

কোন ধরণের আগাম জানান না দিয়ে মোমবাতির শিখা একটা ঝাঁকি খায়, যেন বাতাসের ঝাঁপটার ভিতরে পড়েছিল। একমুহূর্তের জন্য শিখাটা অনুজ্জ্বল হয় এবং তারপরে পুনরায় উজ্জ্বল হয়ে পুড়তে থাকে।

এটা অদ্ভুত, এনডারসন বলে। আমি আশা করি উপরের তলায় কেউ দরজা বন্ধ করেনি। সে হেঁটে চেম্বার থেকে বের হয়ে বাইরের অন্ধকার হলওয়েতে যায়। হ্যালো?

তার বাইরে যাওয়া ল্যাংডন খেয়াল করে না। তার দৃষ্টি সহসা পেছনের দেয়ালে আঁকৃষ্ট হয়। এইমাত্র কি ঘটল?

তুমি খেয়াল করেছে ব্যাপারটা? সাটো আতঙ্কিত চোখে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।

ল্যাংডন মাথা নেড়ে সায় দেয়, তার নাড়ীর স্পন্দন দ্রুততর হয়ে উঠে। আমি এইমাত্র কি দেখলাম?

ক্ষণিক আগে, পেছনের দেয়াল যেন চকচক করে উঠেছিল, যেন শক্তির একটা ঝলক এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

এনডারসন এবার ঘরে ফিরে আসে। বাইরে কেউ নেই। সে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়ালটা আবার চকচক করে উঠে। হলি শিট! সে চেঁচিয়ে উঠে, লাফিয়ে পেছনে সরে যায়।

তাদের তিনজনই অনেকক্ষণ কোন কথা না বলে চুপ করে থাকে, সবার দৃষ্টি পেছনের দেয়ালে নিবদ্ধ। ল্যাংডন টের পায় তারা কি দেখছে সেটা বুঝতে পেরে আরেকটা শীতল অনুভূতি তার ভিতরে প্রবাহিত হয়। সে অনিশ্চিত ভঙ্গিতে হাত বাড়ায়, যতক্ষণ না তার আঙ্গুলের ডগা চেম্বারের পেছনের দেয়ালের উপরিভাগ স্পর্শ করে। এটা কোন দেয়াল, সে বলে।

এনডারসন আর সাটো একসাথে এগিয়ে এসে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে দেখে।

এটা একটা ক্যানভাস, ল্যাংডন তাদের বলে।

কিন্তু এটা উঁচুনীচু, সাটো দ্রুত উত্তর দেয়।

হ্যাঁ, একটা ভারী বিচিত্র উপায়ে। ল্যাংডন উপরিভাগ আরও কাছ থেকে দেখে। ক্যানভাসের ঔজ্জ্বল্য মোমবাতির আলোকে একটা চমকপ্রদ উপায় প্রতিসরিত করেছে কারণ ক্যানভাসটা ঢেউ খেলে কক্ষ থেকে সরে যেতে শুরু করেছে…পেছনের দেয়ালের সমান অংশের উপর দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে পেছনে সরে যেতে শুরু করেছে।

ল্যাংডন তার বাড়ান আঙ্গুলের ডগা আলতো করে ক্যানভাসের উপরে রেখে পেছন দিকে চাপ দেয়। চমকে উঠে সে তার হাত সরিয়ে নেয়। পেছনটা উন্মুক্ত।

টেনে পাশে সরাও, সাটো নির্দেশ দেয়।

ল্যাংডনের হৃৎপিণ্ডে এখন পাগলা ঘোড়ার পায়ের বোল। সে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে ক্যানভাসের ব্যানারের প্রান্ত আঁকড়ে ধরে, ধীরে ধীরে কাপড়টা একপাশে টানে। পেছনে যা লুকিয়ে ছিল সেদিকে সে চোখে অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে থাকে। হা ঈশ্বর!

সাটো আর এনডারসন পেছনের দেয়ালের উন্মুক্ত স্থানের দিকে নির্বাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে।

সাটো অবশেষে কথা বলে উঠে। মনে হচ্ছে আমরা আমাদের পিরামিড এই মাত্র খুঁজে পেয়েছি।

.

৩৯ অধ্যায়

রবার্ট ল্যাংডন চেম্বারের পেছনের দেয়ালে অবস্থিত খোলা স্থানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ক্যানভাসের পর্দার আড়ালে লুকান, একটা নিখুঁত বর্গাকার গর্ত দেয়ালে মুখ ব্যাদান করে রেখেছে। তিন ফুট প্রশস্থ খোলা স্থানটা বোঝা যায় ইটের স্তূপ সরিয়ে তৈরী করা হয়েছে। এক মুহূর্তের জন্য ল্যাংডনের মনে হয় গর্তটা বোধহয় পেছনের ঘরের জানালা।

এখন সে দেখে তার অনুমান সঠিক না।

খোলা স্থানটা দেয়ালের ভিতরে কয়েক ফিট গিয়ে শেষ হয়ে গেছে। এবড়ো থেবড়ো করে কাটা বদ্ধ প্রকোষ্ঠের ন্যায়, শূন্যস্থানটা ল্যাংডনকে মূর্তি রাখার জন্য জাদুঘরে তৈরী করা নিভৃতকক্ষের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর এই কুলুঙ্গিতে মানানসই একটা ছোট অনুষঙ্গও প্রদর্শিত রয়েছে দেখা যায়।

প্রায় নয় ইঞ্চি লম্বা জিনিসটা একটা নিরেট গ্রানাইট থেকে তৈরী। পৃষ্ঠতল মসৃণ আর রুচিশীল যার চারটা পার্শ্বদেশ রয়েছে এখন মোমবাতির আলোতে যা চিকচিক করছে।

ল্যাংডন বুঝতে পারেনা জিনিসটা এখানে কি করছে। একটা পাথরের পিরামিড।

তোমার বিস্মিত দৃষ্টি দেখে, সাটো বলে, তাকে আত্ম-তৃপ্ত দেখায়, আমি ধরেই নিচ্ছি চেম্বার অব রিফ্লেকশনের ভিতরে এই বস্তুটা ঠিক আদর্শ নমুনা না?

লাঙ্গডন মাথা নাড়ে।

তাহলে তুমি সম্ভবত ওয়াশিংটনে লুকান ম্যাসনিক পিরামিড রয়েছে বলে প্রচলিত যে কিংবদন্তি রয়েছে সে সম্পর্কে নিজের পূর্ববর্তী দাবী পুনরায় বিবেচনা করতে পছন্দ করবে? তার কণ্ঠে আত্মতৃপ্তির সুর স্পষ্ট শোনা যায়।

ডিরেকটর, ল্যাংডন সাথে সাথে জবাব দেয়, এই ক্ষুদে পিরামিডটা মোটেই ম্যাসনিক পিরামিড না।

তার মানে পুরোটাই কাকতালীয় যে আমরা ইউ,এস ক্যাপিটলের একেবারে কেন্দ্রস্থলে একজন ম্যাসনিক নেতার গোপন চেম্বারে একটা পিরামিড লুকান অবস্থায় পেয়েছি?

ল্যাংডন চোখ ডলে, চেষ্টা করে পরিষ্কার করে চিন্তা করতে। ম্যাম মিথের সাথে এই পিরামিডের কোন দিক দিয়েই মিল নেই। ম্যাসনিক পিরামিডের আঁকৃতি বর্ণনা করা হয়েছে অতিকায় হিসাবে যার চূড়াটা সোনা দিয়ে বাঁধান।

আর তাছাড়া ল্যাংডন জানে, এই ছোট পিরামিডটা-যার মাথাটা সমতল আদতে সত্যিকারের পিরামিডই না। চূড়া না থাকার কারণে এটা সম্পূর্ণ আলাদা প্রতীক। এটা অসমাপ্ত পিরামিড হিসাবে পরিচিত, এটা একটা প্রতীকি সতর্কবাণী যে মানুষের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনের প্রক্রিয়া সবসময়েই একটা চলমান প্রক্রিয়া। যদিও খুব কম লোকই সেটা অনুধাবন করতে পারে, তবে এই প্রতীকটা পৃথিবীতে সর্বাধিক মুদ্রিত প্রতীক। প্রায় বিশ বিলিয়নের বেশি মুদ্রিত। প্রতিটা প্রচলিত এক ডলার বিলে অলঙ্কৃত, অসমাপ্ত পিরামিড ধৈর্য্য ধরে তার চকচকে ক্যাপস্টোনের জন্য প্রতিক্ষা করছে, যা এর উপরে আমেরিকার এখনও অপূর্ণ গন্তব্য আর অসমাপ্ত কাজের স্মরণীকা হিসাবে ভাসছে, দেশ এবং ব্যক্তিমানুষ উভয়ের নিরিখে।

ওটা নিচে নামিয়ে রাখ, পিরামিডটা দেখিয়ে সাটো এনডারসনকে বলে। আমি কাছ থেকে ওটা দেখতে চাই। করোটি আর আড়াআড়ি করে রাখা হাড়ের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা না দেখিয়ে একপাশে সরিয়ে সে ডেস্কের উপরে জায়গা করতে শুরু করে।

ল্যাংডনের নিজেকে মামুলি কবর চোর বলে মনে হতে থাকে, একটা ব্যক্তিগত সমাধিক্ষেত্র অপবিত্র করছে।

এনডারসন ল্যাংডনকে অতিক্রম করে এগিয়ে, প্রকোষ্ঠটার কাছে যায় এবং দুহাতের তালু দিয়ে দুদিক থেকে পিরামিডটা আঁকড়ে ধরে। তারপরে, বেকায়দা কোণের কারণে কোন মতে পিরামিডটা তুলে নিজের দিকে টেনে নেয় এবং কাঠের ডেস্কে দড়াম শব্দে নামিয়ে রাখে। সে পেছনে সরে এসে সাটোকে জায়গা করে দেয়।

ডিরেকটর মোমটা পিরামিডের কাছে নিয়ে আসে এবং মসৃণ উপরিতল মনোযোগ দিয়ে দেখে। তার ক্ষুদে আঙ্গুল ধীরে ধীরে এর এর উপরে বুলায়, সমতল উপরিভাগের প্রতি ইঞ্চি সে খুটিয়ে দেখে তারপরে পার্শ্বদেশে নজর দেয়। সে পিরামিডটা জড়িয়ে ধরে পেছনটা পরীক্ষা করার জন্য তারপরে আপাত অসন্তোষে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রফেসর, তুমি বলেছিলে ম্যাসনিক পিরামিড গোপন তথ্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত হয়েছে।

সেটাই কিংবদন্তি, হ্যাঁ।

তাহলে হাইপোথেটিক্যালি বলা যায় যদি পিটারের বন্দিকর্তা বিশ্বাস করে এটাই ম্যাসনিক পিরামিড, সে তাহলে বিশ্বাস করে এটার ভেতরে শক্তিশালী তথ্য রয়েছে।

ল্যাংডন মাথা নাড়ে, তার ধেৰ্য্যচ্যুতি ঘটেছে। হ্যাঁ, অবশ্য সে যদি এই তথ্য খুঁজে পায়ও সে সেটার পাঠোদ্ধার করতে পারবে না। কিংবদন্তী অনুসারে, পিরামিডে রক্ষিত তথ্য সাংকেতিক ভাষায় লেখা রয়েছে, তাদের পাঠোদ্ধারের অযোগ্য করে ফেলা হয়েছে…কেবল সবচেয়ে যোগ্য যারা তারাই এটা বুঝতে পারবে।

আমাকে মাফ করবেন?

ল্যাংডনের বাড়তে থাকা অসহিষ্ণুতা সত্ত্বেও, সে শান্ত কণ্ঠে উত্তর দেয়। পৌরাণিক গুপ্তধন সবসময়েই যোগ্যতার পরীক্ষা দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। আপনার হয়ত মনে আছে পাথরে প্রোথিত তরবারির কিংবদন্তিতে পাথর আথার ছাড়া বাকি সবাইকেই তরবারি দিতে বিমুখ করেছে, যে আধ্যাত্মিকভাবে তরবারির অমিত শক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রস্তুত ছিল। ম্যাসনিক পিরামিড সেই একই ধারণার উপরে নির্ভর করে তৈরী করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে, তথ্যটাই গুপ্তধন এবং বলা হয়ে থাকে সেটা সাঙ্কেতিক ভাষায় লিখিত-হারিয়ে যাওয়া শব্দের মরমী ভাষা যোগ্য ব্যক্তিরাই কেবল তার মর্মোদ্ধার করতে পারবে।

সাটোর ঠোঁটে ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা যায়। আর সেটাই ব্যাখ্যা করে কেন তোমাকে আজ রাতে এখানে ডেকে আনা হয়েছে।

মাফ করবেন?

সাটো শান্তভঙ্গিতে পিরামিডটাকে অক্ষের উপরে পুরো ১৮০ ডিগ্রী ঘুরায়। পিরামিডের চতুর্থ পার্শ্ব এখন মোমবাতির আলোয় উদ্ভাসিত।

রবার্ট ল্যাংডন বিস্মিত হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। বোঝা যাচ্ছে, সাটো বলে, যে কেউ একজন মনে করে তুমি যোগ্য।

.

৪০ অধ্যায়

ত্রিশের এত দেরী হবার কি কারণ হতে পারে?

ক্যাথরিন সলোমন আবার ঘড়ি দেখে। ড. অ্যাবাউনকে তার ল্যাবে আসার বিচিত্র পথ সম্পর্কে সতর্ক করার কথা সে ভুলে গিয়েছিল কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদের আসতে এত দেরী হচ্ছে সেটা ভাবারও সঙ্গত কারণ নেই। তাদের এতক্ষণে পৌঁছে যাওয়া উচিত ছিল।

ক্যাথরিন বের হবার পথের কাছে হেঁটে যায় এবং সীসার পাত দেয়া দরজাটা ঠেলে খুলে, শূন্যতার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে চুপ করে থেকে কিছু শোনার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুই শুনতে পায় না।

ত্রিস? সে নাম ধরে ডাকে, কিন্তু অন্ধকারে তার কণ্ঠস্বর হারিয়ে যায়।

নিরবতা।

বিভ্রান্ত হয়ে সে দরজা বন্ধ করে, সেলফোন থেকে লবিতে ফোন করে। ক্যাথরিন বলছি। ত্রিস কি ওখানে আছে?

না, ম্যাম, লবির প্রহরী উত্তর দেয়। দশমিনিট আগে আপনার অতিথিকে নিয়ে সে ফিরে গেছে।

সত্যি? আমার মনে হয় না তারা পড পাঁচের ভিতরে এখনও প্রবেশ করেছে।

অপেক্ষা করুন। আমি দেখছি। ক্যাথরিন প্রহরীর কম্পিউটার কিবোর্ডে আঙ্গুল নড়াচড়ার শব্দ শুনতে পায়। আপনার কথাই ঠিক। মিস.ডানের কি কার্ডের লগ অনুসারে, সে এখনও পড় পাঁচের দরজা খোলেনি। তার শেষ। প্রবেশের ঘটনা আট মিনিট আগে…পড তিনে। আমার মনে হয় সে আপনার অতিথিকে একটু ঘুরিয়ে সবকিছু দেখাচ্ছে।

ক্যাথরিনের ভ্রু কুচকে যায়। আপাতদৃষ্টিতে। সংবাদটা একটু অদ্ভুত, কিন্তু একটা বিষয়ে সে জানে পড় তিনে ব্রিস বেশিক্ষণ থাকবে না। ভেতরের গন্ধ তোদরকেও হার মানাবে। ধন্যবাদ। আমার ভাই কি এসে পৌঁছেছে?

না, ম্যাম। এখনও আসেননি।

ধন্যবাদ তোমাকে।

ক্যাথরিন ফোন নামিয়ে রাখতে সে আঁকষ্মিক একটা সচকিত ভাব অনুভব করে। অস্বস্তিবোধটা তাকে দাঁড়াতে বাধ্য করে কিন্তু কেবল এক মুহূর্তের জন্য। আজ সকালে ড. আবানের বাসায় প্রবেশের সময়েও সে ঠিক এই একই ধরণের অস্থিরতা বোধ করেছিল। সেখানে তার মেয়েলি অর্ন্তজ্ঞান তাকে থোকা দিয়ে, লজ্জায় ফেলেছিল। মারাত্মকভাবে।

এটা কিছুনা। ক্যাথরিন নিজেকে আশ্বস্ত করে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *