১.০৩ ইলোরার গুহায় আঁধারে

১.০৩ ইলোরার গুহায় আঁধারে

শুধু সত্যি নয়, তার চেয়েও বেশি। মরাঠা রাজকুমার ধুন্ধুপন্থ—পেশোয়া বাজি রাওএর সেই দুর্দান্ত দত্তকপুত্র, যিনি হয়তো সিপাহী অভ্যুত্থানের একমাত্র জীবিত নেতাকিনা শেষ পর্যন্ত নেপালের দুর্গম অঞ্চল ত্যাগ করে পরম দুঃসাহসে ও স্পর্ধায় আবার ভারতে প্রবেশ করেছেন! শুধু দুঃসাহস নয়, ঔদ্ধত্য। বিপদের সঙ্গে তার বন্ধুতা–সে কি আজকের? তীক্ষ্ণ্ণতম গোয়েন্দাটির চোখে অনায়াসে তিনি ধুলো দিতে পারেন, তোয়াক্কা রাখেন না কোনোকিছুর; কোনো ভয়ডর নেই। শেষ অব্দি দাক্ষিণাত্যে তিনি এসেছেন নতুন করে বিক্ষোভের বীজ বপন করার জন্যে যে-বণিকগোষ্ঠী ভারত দখল করে বসে আছে, এই ডাকাবুকো মানুষটি তাদের মারাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বী। কেনই বা হবেন না? বাজি রাও-এর উত্তরাধিকার কি তার উপরেই বর্তায়নি? অথচ ১৮৫১ সালে পেশোয়া যখন মারা গেলেন, ঈস্ট ইণ্ডিয়া কম্পানি তখন তাকে বার্ষিক আট লাখ টাকা বৃত্তি দিতে সরাসরি অস্বীকার করে বসলো। এটা একটা কারণ বটে, কিন্তু শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থই নেই। ছত্রপতি শিবাজির স্বপ্ন হানা দেয় তার চোখে বার-বার, আর সেই স্বপ্নই সর্বস্ব!

কিন্তু এখন—এখন নানাসাহেব কীসের প্রত্যাশা করবেন? বিদ্রোহ দমিত হয়েছে–তাও আজ আট বছর হলো; কম্পানির হাত থেকে ভারতের শাসনভার ক্রমশ ইংরেজ সরকারের হাতে চলে যাচ্ছে : জনশ্রুতি, রানী ভিক্টরিয়া নাকি ভারতেশ্বরী হবেন। পুরোনো পল্টন ভেঙে আবার নতুন করে ফৌজ গড়া হয়েছে : সেই মহা-অভ্যুত্থানের কোনো চিহ্ন মাত্র নেই। তাহলে কি সারা হিন্দুস্থান-জোড়া এক জাতীয় বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছেন নানাসাহেব-যে-অভ্যুত্থান শুধু আর সেপাইদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, দেশের আপামর জনসাধারণ ও আবালবৃদ্ধবনিতা যাতে প্রচণ্ড অংশ নেবে? কে জানে?

ঔরঙ্গাবাদে তার উপস্থিতি যে চাপা থাকেনি এটা তো স্পষ্ট বোঝা গেলো তার মাথার উপর দামের লেবেল এঁটে দেয়ায়। আরো সাবধান হতে হবে তাকে, আরো হুঁশিয়ার…

সেই রাত্রে নানাসাহেব আর এক ঘণ্টা সময়ও নষ্ট করলেন না। এই অঞ্চল তার নখদর্পণে; ঠিক করলেন পঁচিশ মাইল দূরে ইলোরার গুহায় গিয়ে এক্ষুনি অনুচরদের সঙ্গে দেখা করবেন।

ঘুটঘুটে কালো রাত। ছদ্মবেশী ফকির প্রথমে ভালো করে লক্ষ করে নিলে কেউ তার পাছু নিয়েছে কিনা, তারপর শাহসুফির স্মৃতিভবন মাজারটি পেরিয়ে, দৌলতাবাদের কেল্লার পাশ দিয়ে সমতল এলাকা ছেড়ে, ফকির এক বন্ধুর পাহাড়ি এলাকায় এসে পড়লো। উৎরাই এবার, কিন্তু তাই বলে নানাসাহেবের গতি রুদ্ধ হলো না। আজ রাতেই পঁচিশ মাইল পথ পেরিয়ে ইলোরায় পৌঁছুতে হবে। সূর্য যখন উঠলো, তখন নানাসাহেব রঞ্জাগ্রামে ঔরংজীবের সমাধি পেরিয়ে গেছেন। তার খানিকবাদেই তিনি সেই বিখ্যাত গুহায় গিয়ে পৌঁছুলেন। পাহাড়ের গা কেটে-কেটে এই তিরিশটা গুহা বানানো হয়েছে; পাথর কেটে ২৪টা চৈত্য বা বিহার বানিয়েছিলো এখানে স্থপতিরা, তারপর বাকিটুকু ভাস্করদের দান। এদের মধ্যে কৈলাস নামে একশিলা মন্দিরটি সবচেয়ে অবাক করে দেয় : ২০ ফুট উঁচু, ৬০০ ফুট পরিধি-ওলা একটা একা-পাথরের গা কেটে এই চৈত্য নির্মিত হয়েছে। স্তম্ভ, তেকোণা চূড়ো, বর্তুল গম্বুজ—সব-কিছুর ভিত্তি যেন অতিকায় একদল হস্তীযূথ। আর তারপর পাথরের গায়ে তারা কাজ করেছে মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে। কীসের সঙ্গে তুলনা হবে এর? মিশরের বিস্ময় পিরামিড ছাড়া আর-কোনো-কিছুর সঙ্গেই কি এর কোনো তুলনা চলে?

কেউ থাকে না এখন এই মন্দিরে; সময় এর মধ্যেই তার হাত বাড়িয়েছে এর দিকে, এই একহাজার বছরের পুরোনো বিস্ময়ের দিকে।

নানাসাহেব ইলোরায় পৌঁছুলেন সকলের অগোচরে; গভীর গুহার মধ্যে ঢুকে পড়লেন তিনি সন্তর্পণে, তার পরে একটি বিরাট হস্তীমূর্তির আড়ালে এক ফাটলের মধ্যে প্রবেশ করলেন। আসলে এটা একটা নালা-বৃষ্টির জল যাতে এই নালা দিয়ে বাইরে বয়ে যেতে পারে, এইজন্যেই এটা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখন এটা শুকনো ও ফাঁকা, বিষণ্ণ আঁধার ছাড়া আর-কিছু নেই এখন এই সুড়ঙ্গের মধ্যে। একটু এগিয়ে গিয়ে নানাসাহেব কি-রকম অদ্ভুতভাবে একবার শিশ দিয়ে উঠলেন, অমনি অন্ধকার ভেদ করে তেমনি আরেকটি শিশের শব্দ শোনা গেলো, আর অন্ধকারের মধ্যে দূরে একজায়গায় আলো জ্বলে উঠলো। প্রতিধ্বনির বিদ্রূপ নয়, এই কথাই বোঝালো যেন এই আলো। পরক্ষণেই একটা ছোটো লণ্ঠন হাতে একটি ভারতীয় এসে দাঁড়ালে।

বাতি নিভিয়ে ফ্যালো এক্ষুনি? চাপা স্বরে বলে উঠলেন নানাসাহেব।

ধুন্ধুপন্থ, তুমি? লোকটি বাতি নিভিয়ে ফেললে।

হ্যাঁ, আমিই। কিন্তু বড্ড খিদে পেয়েছে, পরে সব কথা বলবো। মনে রেখো, খাওয়াদাওয়া কথাবার্তা সবই অন্ধকারে সারতে হবে আমাদের। আমাকে হাত ধরে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলো।

লোকটা তাঁর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। ভিতরে এক জায়গায় কিছু খড় আর শুকনো পাতা বিছোনো : এতক্ষণ সে সেখানেই শুয়ে ছিলো, নানাসাহেবের সংকেতে জেগে গিয়েছে। নানাসাহেবকে ওই পত্ৰশয্যায় বসিয়ে রেখে সে খাবার আনতে গেলো। খাবার অতি সামান্যই : চাপাটি, শুখা মাংস আর ডাবের জল।

নানাসাহেব যতক্ষণ খেলেন, কোনো কথাই বললেন না; বড্ড ক্ষুধার্ত আর ক্লান্ত ছিলেন; কিন্তু তার সমস্ত তেজ যেন চোখের তারায় জ্বলজ্বল করে উঠলো অন্ধকারে, যেন এই জ্বলন্ত চোখ দুটো কোনো তেতে-ওঠা ক্রুদ্ধ বাঘের। লোকটি সারাক্ষণ চুপ করে রইলো; নানাসাহেবকে বিরক্ত করতে চাইলে না। এ আর-কেউ নয়, বালাজি রাও, নানাসাহেবেরই ভাই, বয়েসে এক বছরের বড়; দেখতে একেবারে একরকম–নানাসাহেব কে, আর কে-যে বালাজি রাও-লোকেরা অনায়াসে ভুল করে বসতে পারে, আগে থেকে না-জানলে। দৈহিক মিল মানসগঠনে ও কৌশল-রচনায় নৈপুণ্যের ফলেই যেন আরো সম্পূর্ণ হয়েছে। বৈদেশিক শক্তির প্রতি তীব্র ঘৃণা, বুদ্ধিতে, আর নির্মমভাবে সংকল্প সাধনে তারা যেন দুই দেহে আসলে একই মানুষ। সিপাহী বিদ্রোহের সময় এই দুজন সবসময় একসঙ্গে ছিলেন। আগুন যখন নিভে গেলো, দুজনেই একসঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন নেপাল-সীমান্তে। আর এখন দুজনেই আবার একই মশাল নিয়ে ভারতে ফিরে এসেছেন : লক্ষ্য, এক, সার্থকতাও এক, এবং একইভাবে প্রস্তুত দুজনে।

খাওয়ার পর নানাসাহেব কিছুক্ষণ তার হাতে মাথা রেখে চুপ করে রইলেন। বালাজি রাও-এর ঘুম পাচ্ছিলো। কোনো কথা না-বলে তিনিও চুপ করে রইলেন।

হঠাৎ ধুন্ধুপ মাথা তুলে ভাইয়ের হাতটি চেপে ধরলেন, কথা যখন বললেন মনে হলো গমগমে আওয়াজ বেরিয়ে এলো কোনো গভীর গহুর থেকে : আমার নামে হুলিয়া

বের করেছে ওরা! যে আমার মাথা নিয়ে যেতে পারবে, তাকে দু-হাজার মোহর ইনাম দেবে বলে ঘোষণা করেছে।

মুহূর্তে বালাজি রাও সচকিত হয়ে উঠলেন, তোমার মাথার দাম তার চেয়েও অনেক বেশি, ধুন্ধুপ। দু-হাজার মোহর তো আমার মাথারই দাম হবে না। কুড়ি হাজার মোহর দিয়ে যদি আমাদের ধরতে পায়, তাহলেই তাদের ভাগ্য বলতে হবে।

আর তিনমাস পর ২৩ শে জুন পলাশির যুদ্ধের স্মৃতি উদ্যাপিত হবে। আমাদের জ্যোতিষীরা বলেছিলো, পলাশির যুদ্ধের একশো বছর হলে-১৮৫৭ সালে ব্রিটিশরা হার স্বীকার করবে, সূর্যবংশের পুনরভ্যুদয় হবে তখন। একশোর জায়গায় একশো নয় বছর কেটে গেছে, অথচ ভারত এখনও যত বদমায়েশ বিদেশীর পদানত রয়ে গেলো।

বালাজি রাও বললেন, ১৮৫৭ তে হেরে গেলেও তার দশ বছর পরে আমাদের জয় হবেই। ১৮২৭, ৩৭, ৪৭-প্রতি দশ বছর পর-পর বিদ্রোহের আগুন জ্বলেছে ভারতে। এ-বছরও আবার আগুন লাগবে চারধারে!

লরেন্স বেঁচে নেই, বার্নার্ড, হোপ, নাপিয়ের, হাডসন, হ্যাভলক-কেউ বেঁচে নেই আর। কিন্তু ক্যামবেল আর রোজ এখনও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে-আর আছে ওই কর্নেল মানরো-ওরই পূর্বপুরুষ একদিন কামানের মুখে বিদ্রোহীদের উড়িয়ে দিয়েছিলো। ও-ই ঝাঁসির রানীকে নিজের হাতে বধ করেছে। একবার আমার হাতে পড়লে আমি তাকে দেখিয়ে দেবো সেকেন্দ্রাবাদের হত্যাকাণ্ড, বেগম মহলের রক্তপাত, বেরিলি, ঝাসি, মেবার, দিল্লি-কিছুকেই আমি ভুলে যাইনি। শুধু বারুদের স্কুপে আগুন ধরাতে হবে একবার, তারপর আমি পেতে চাই তাকে মুখোমুখি।

মানরো শুনেছি পল্টন থেকে অবসর নিয়েছে, বালাজি রাও বললেন।

আগুন জ্বলে উঠলেই আবার সে এসে যোগ দেবে। কিন্তু আমরা যদি আর আগুন জ্বালাতে না-পারি, তাকে আমি তাই বলে কিছুতেই ছেড়ে দেবো না। কলকাতায় তার বাংলায় গিয়ে আমি তার রক্ত দেখবো।

তা না-হয় হলো—কিন্তু এখন?

এখন কাজ শুরু হবে। সারা দেশ-জোড়া অভ্যুত্থান হবে এটা। আবালবৃদ্ধবনিতা, ধনী-গরিব, জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাই যাতে অংশ নেয়, যাতে একযোগে সব গ্রাম-নগর দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে-সেই চেষ্টাই করতে হবে আমাদের। আমি দক্ষিণাপথের নানা অংশ ঘুরে এসেছি—শুকনো বারুদের স্কুপের মতো প্রতীক্ষ্ণ করছে সব জায়গা, কখন একটা ফুলকি এসে পড়ে। এখন শুধু দিনক্ষণ স্থির করে একযোগে সর্বত্র যাতে বিদ্রোহ শুরু হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

নানাসাহেব বুকের উপর হাত ভাঁজ করে অন্ধকারের দিকে চেয়ে রইলেন; যেন কোনো আলোকদৃষ্টির বলে সমস্ত ভবিষ্যৎ তার সামনে উন্মোচিত হয়ে পড়েছে, তার দৃষ্টি থেকে তা-ই মনে হয়। বালাজি রাও কোনো কথা বললেন না। এই ভয়ংকর হৃৎপিণ্ডে যখন আগুনের ফুলকি এসে পড়ে, তখন কেমন করে মুহূর্তে শিখা জ্বলে ওঠে, বালাজি রাও সারাক্ষণ তা-ই দেখতে ভালোবাসেন।

নানাসাহেব যেন তার স্বপ্ন থেকে জেগে উঠলেন : আর-সবাই কোথায়?

তারা আগেকার পরিকল্পনা মতো অজন্তার গুহায় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

আর আমাদের ঘোড়াগুলো?

ইলোরা বড়োগামির রাস্তায় রেখে এসেছি।

কালোগনি আছে সেখানে?

হ্যাঁ, ধুন্ধুপস্থ। সবাই প্রস্তুত।

তাহলে এক্ষুনি রওনা হতে হবে। সূর্যোদয়ের আগেই আমাদের অজস্তায় পৌঁছুতে হবে। নানাসাহেব বললেন, সাতপুরা পাহাড়ের চূড়োয় পৌঁছুতে হবে আমাদের, যাতে ব্রিটিশের গোয়েন্দাদের আমরা প্রতিরোধ করতে পারি। তারপর ভীল আর গোর্তাদের জাগিয়ে তুলতে হবে আমাদের-যাতে বিন্ধ্যপর্বতের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত পর্যন্ত মুহূর্তে দপ করে জ্বলে উঠতে পারে।

বলতে-বলতে দুজনে হস্তীগুম্ফা থেকে বেরিয়ে এলেন। ইলোরা থেকে অজন্তার দূরত্ব পঞ্চাশ মাইলকিন্তু নানাসাহেব তো এখন আর পায়ে হেঁটে যাবেন না–বিশ্বস্ত ভৃত্য কালোগানি ঘোড়াগুলো নিয়ে মাইল খানেক দূরে জঙ্গলের মধ্যে অপেক্ষা করছে। তার জন্যে।

জিনের উপর উঠে বসেই তিনজনে জোর কদমে ঘোড়া ছুটিয়ে দিলেন। ইলোরা ছেড়ে আসার পনেরো ঘণ্টা পরে এক সংকীর্ণ গিরিখাতের মধ্য দিয়ে সেই সপ্তবিংশতি মন্দিরের জগৎবিখ্যাত উপত্যকায় প্রবেশ করলেন নানাসাহেব। তখন কালো রাত নেমে এসেছে চারপাশে; চাঁদ ওঠেনি—কিন্তু লক্ষ তারায় ঝিকমিক করে উঠেছে আকাশ : ঝোঁপের আড়াল দিয়ে তিনজনের ঘোড়া টগবগ করে ছুটে চললো। হাওয়া থেমে আছে, গাছের পাতা স্তব্ধ, রাতটা থমথমে-ঘোড়ার খুরের শব্দ ছাড়া দূর থেকে কেবল এক চঞ্চল ঝরনার কলরোল কানে আসে! আস্তে-আস্তে ঝরনার আওয়াজ স্পষ্ট হয়ে উঠলো : সাত কুণ্ডের প্রপাত পেরিয়ে ধুলো উড়িয়ে তিনজনে আরো এগিয়ে এলেন, যেখানে কনুইয়ের মতো মোচড় খেয়ে এগিয়েছে গিরিখাত। নিচে বৌদ্ধ স্থাপত্যের আশ্চর্য সমৃদ্ধি তাদের চোখের সামনে উন্মোচিত হয়ে গেলো।

এই রহস্যময়, গরীয়ান ও চমকপ্রদ মন্দিরগুলো নানাসাহেবের নখদর্পণে। কতবার যে গোয়েন্দার তীক্ষ্ণ্ণ চক্ষু এড়াবার জন্যে এইসব গুফার সুড়ঙ্গের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। তাই কোনো আলো লাগলো না…অন্ধকারেই অনায়াসে তিনি এগিয়ে যেতে পারলেন।

তারপর অজন্তায় ঢোকবার মুখে জঙ্গলে পৌঁছে নানাসাহেব সংকেত করতেই উপরে গাছের ডালপালা থেকে লুকোনো মুখগুলো উঁকি মারলে। জনাকুড়ি হবে তারা সংখ্যায় : সাপের মতো পিছলে নেমে এলো নানাসাহেবের সশস্ত্র অনুচরেরা।

চলো!

ধুন্ধুপন্থ তাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন, জানতে না-চেয়েই তারা পায়ে-পায়ে অনুসরণ করলে অশ্বারোহীদের। বিশ্বস্ত তারা, নানাসাহেবের জন্যে দেহের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত তারা উৎসর্গ করেছে, ঘোড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দূর-দূরান্তরে ছুটে যেতে পারে তারা।

ছোটো দলটা উত্তরমুখো এগুলো–সাতপুরা পাহাড়ের গিরিখাতের দিকে। সকালবেলা নাগপুরের উপরে তারা বম্বাই-এলাহাবাদ রেলপথের কাছে গিয়ে পৌঁছুলো।

আর তখনই হঠাৎ বাঁশি বাজিয়ে ঝড়ের মতো ছুটে এলো কলকাতা এক্সপ্রেস।

নানা লাগাম টেনে ঘোড়া থামালেন, চলন্ত ট্রেনটির দিকে হাত বাড়িয়ে প্রচণ্ড গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন : ছুটে গিয়ে বড়োলাটকে জানিয়ে দাও নানাসাহেব এখনও বেঁচে আছে। তাকে বোলো যে শিগগিরই রক্তের স্রোতে ভেসে যাবে এই রেলপথ–সারা হিন্দুস্থান রক্তে রাঙা হয়ে যাবে।

–চলন্ত বাড়ির রহস্য —
–মঁসিয় মোক্লের-এর দিনপঞ্জি থেকে আবার–