গল্পগ্রন্থ

রক্তবৃত্তের রক্তাক্ত কাহিনি

রক্তবৃত্তের রক্তাক্ত কাহিনি
[ দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য রেড সার্কল ]

বিরাট স্ক্র্যাপবুকে নিজের সাম্প্রতিক কীর্তিকাহিনি সাঁটতে সাঁটতে বিরক্ত মুখে শার্লক হোমস বললে, মিসেস ওয়ারেন, আমার সময়ের দাম আছে। খামোখা ভেবে মরছেন, আমাকেও ভাবাতে এসেছেন।

কিন্তু বাড়িউলি মিসেস ওয়ারেন হাজার হলেও মেয়েমানুষ। মেয়েলি ধূর্ততার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সাধ্যি হোমসের নেই। ছিনেজোঁকের মতো ভদ্রমহিলা বললেন, গত বছর আমার এক ভাড়াটের ব্যাপার আপনি নিষ্পত্তি করে দিয়েছিলেন। নাম তার মিস্টার ফেয়ারডেল হবস।

আরে, সে তো একটা সোজা কেস।

কিন্তু আপনার প্রশংসায় তিনি এখনও পঞ্চমুখ। মানুষ ধাঁধায় পড়লে কখনো তাকে বিমুখ করেন না। আমিও সেই ধাঁধা নিয়েই ছুটে এসেছি।

হোমস যেমন তোষামোদে গলে যায়, কারো কষ্ট দেখলেও তেমনি সইতে পারে না। ডবল দাওয়াইয়ে কাজ হল তৎক্ষণাৎ। হাতের কাজ ফেলে রেখে হেলান দিয়ে বসল চেয়ারে।

বলল, আপনার নতুন ভাড়াটের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না বলে অস্বস্তিতে মরছেন, এই তো? আমি যদি আপনার ভাড়াটে হতাম, হপ্তার পর হপ্তা আমার মুখও আপনি দেখতে পেতেন না।

জানি স্যার জানি। কিন্তু সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত লোকটা ঘরের মধ্যে যদি সমানে পায়চারি করে, অথচ একবারও মুখ না-দেখায়, ভাবনা হয় না? এত ভয় কাকে? কী এমন কাণ্ড করেছে যে এভাবে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে? আমার স্বামী কাজ নিয়ে বাইরে থাকে, কিন্তু আমাকে তো দিনরাত বাড়িতে থেকে পায়ের আওয়াজ শুনতে হচ্ছে। স্বামী বেচারার ধাত ছেড়ে যাওয়ার

জোগাড় হয়েছে আমার অবস্থাও ভালো নয়।

ঝুঁকে পড়ে দীর্ঘ শীর্ণ আঙুল দিয়ে মিসেস ওয়ারেনের কাধ স্পর্শ করল হোমস উদবিগ্ন মানুষকে শান্ত করার অদ্ভুত একটা সম্মোহনী শক্তি ওর আছে–মিসেস ওয়ারেনও দেখতে দেখতে সহজ হয়ে এলেন। মুখ থেকে মিলিয়ে গেল ভয়ের রেখা সোজা হয়ে বসলেন চেয়ারে।

হোমস বললে, লোকটা আপনার কাছে দশ দিন আগে থাকা খাওয়া বাবদ পনেরো দিনের টাকা আগাম দিয়েছে বললেন না?

আজ্ঞে হ্যাঁ। উপরতলায় একটা বসবার ঘর আর শোবার ঘরের জন্যে কত দিতে হবে জানতে চাইল। আমি বললাম, হপ্তায় পঞ্চাশ শিলিং। ও বলল, হপ্তায় পাঁচ পাউন্ড দেব–কিন্তু আমার শর্ত মতো চলতে হবে। মিস্টার ওয়ারেনের আয় কম বুঝতেই পারছেন শর্তটা শুনতে চাইলাম। লোকটা একটা দশ পাউন্ডের নোট বাড়িয়ে দিয়ে বললে, পনেরো দিন অন্তর একখানা নোট পাবেন। কিন্তু বাড়ির চাবিটা আমার কাছে রাখতে হবে। শর্তটা এমন কিছু আশ্চর্য নয়, অনেক ভাড়াটেই চাবি কাছে রাখতে চায় কারোকে বিরক্ত করতে চায় না বলে।

তবে এখন এত আশ্চর্য হচ্ছেন কেন?

হচ্ছি কি করে সাধে? এই দশ দিনে একবারমাত্র বাড়ির বাইরে গেছে–প্রথম রাতে। তারপর থেকে চৌপরদিন খালি ঘরে হাঁটছে। ঝি-টা সুদ্ধ তার চেহারা দেখেনি। এ আবার কী কাণ্ড?

প্রথম রাতে তাহলে বেরিয়েছিল।

হ্যাঁ, ফিরেছিল মাঝরাতে। আগে থেকে বলে রেখেছিল বলে দরজার খিল দেওয়া হয়নি। পায়ের আওয়াজ শুনে বুঝলাম ওপরে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকল।

খাবারদাবার পৌঁছোয় কী করে? আগে থেকেই বলা আছে, ঘণ্টা বাজালে যেন খাবার দরজার সামনে চেয়ারে রেখে আসা হয়। আবার ঘণ্টা বাজালে এঁটো বাসন নিয়ে আসা হয়। বিশেষ কিছু দরকার পড়লে বড়ো হাতের অক্ষরে এক টুকরো কাগজে লিখে জানিয়ে দেয়।

বড়ো হাতের অক্ষরে?

আজ্ঞে হ্যাঁ। পেনসিলে লেখে। শুধু শব্দটা তার বেশি নয়। কয়েকটা কাগজ এনেছি। আপনাকে দেখানোর জন্যে। এটা দেখুন : SOAP; এই দেখুন আর একটা–MATCH; এইটা প্রথম দিন সকালে পেয়েছি–DA।LY GAZETTE; প্রত্যেক দিন সকালে ব্রেকফাস্টের সঙ্গে কাগজটা পাঠিয়ে দিই।

ভারি আশ্চর্য ব্যাপার তো! ফুলসক্যাপ কাগজ ছেড়া স্লিপগুলো দেখতে দেখতে তাজ্জব হয়ে বললে হোমস। টানা হাতে লেখার একটা মানে বুঝি কিন্তু বড়ো হাতের অক্ষর বসিয়ে লেখা তো একটা ঝামেলা। নিরিবিলিতে থাকার না হয় একটা কারণ থাকতে পারে কিন্তু বড়ো হাতের অক্ষরে লেখার কারণটা তো বুঝছি না। এ তো বড়ো অস্বাভাবিক ব্যাপার। ওয়াটসন, কী বুঝছ?

হাতের লেখা লুকোতে চায়।

কিন্তু কেন? বাড়িউলি তার টানা হাতের লেখা দেখলে এমন কী মহাভারত অশুদ্ধ হবে? তার ওপর দেখ অল্প কথার হুকুমগুলোও এক-একটা হেঁয়ালি।

বুঝলাম না।

বেগনি রঙের শিস পেনসিলটার, মোটা ধ্যাবড়া মুখ। কাগজটা লেখবার পর এমনভাবে ছেড়া হয়েছে যে SOAP শব্দটার কিছুটা ছিঁড়ে গেছে। খুবই অর্থপূর্ণ ব্যাপার হে!

হুঁশিয়ার আদমি, এই তো?

এক্কেবারে ঠিক। নিশ্চয় আঙুলের ছাপ-টাপ এমন কিছু একটা পড়েছিল যা দেখলে শনাক্তকরণ সহজ হয়ে যেত। মিসেস ওয়ারেন, লোকটা মাঝবয়েসি, কালচে আর দাড়িওলা বললেন না? বয়স কত?

ছোকরার বয়স–তিরিশের বেশি নয়।

আর কিছু লক্ষণ দেখেছেন?

ইংরেজিটা ভালো বললেও উচ্চারণ শুনে বুঝেছি বিদেশি মানুষ।

জামাকাপড় পরিপাটি?

দারুণ। ভীষণ স্মার্ট।

নাম বলেছেন?

আজ্ঞে না।

চিঠিপত্র আসে? দেখা করতে কেউ আসে?

একদম না।

কিন্তু সকালের দিকে ঝাড়পোঁছ করার জন্যে ঝি ঘরে ঢোকে না?

সব কাজ নিজের হাতে করে।

কী আশ্চর্য! কী আশ্চর্য! জিনিসপত্র কী আছে সঙ্গে?

একটা বাদামি ব্যাগ–মস্ত বড়ো–আর কিছু না।

ঘর থেকে কিছুই কি পাওয়া যায়নি?

ব্যাগ থেকে একটা খাম বার করে ঝাড়লেন মিসেস ওয়ারেন। বেরিয়ে এল দুটো পোড়া দেশলাইয়ের কাঠি, একটা পোড়া সিগারেট।

আজ সকালে ট্রেতে পেয়েছি। শুনেছি ছোটোখাটো জিনিস দেখেও অনেক বড়ো ব্যাপার ধরতে পারেন–তাই নিয়ে এলাম দেখানোর জন্যে।

কাঁধ ঝাঁকিয়ে হোমস বললে, তেমন কিছু তো চোখে পড়ছে না। কাঠিগুলি অল্পই পুড়েছে–তার মানে সিগারেট ধরানো হয়েছে। পাইপ বা চুরুট ধরাতে গেলে অর্ধেক কাঠি পুড়ে যায়। কিন্তু, এ আবার কী ব্যাপার! ভারি আশ্চর্য তো! পোড়া সিগারেটটা দেখেছ ওয়াটসন? মিসেস ওয়ারেন, লোকটার দাড়িগোঁফ আছে বললেন না?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

সব গুলিয়ে যাচ্ছে যে। সিগারেটের শেষ পর্যন্ত টানা হয়েছে–গোঁফ তো পুড়ে যাওয়ার কথা। আরে ওয়াটসন, তোমার এমন ছোট্ট গোঁফেও ছ্যাকা লাগত এইভাবে সিগারেটের শেষ পর্যন্ত ঠোঁটে রেখে দিলে। এভাবে সিগারেট খেতে পারে যার দাড়ি গোঁফ কামানো।

সিগারেট হোল্ডারে লাগিয়েছিল বোধ হয়? বললাম আমি।

না হে না, পিছনে থুথু লেগে রয়েছে। মিসেস ওয়ারেন, ঘরে দুজন লোক নেই তো?

আজ্ঞে না। লোকটা এমনিতে এত কম খায় যে বলবার নয়।

তাহলে আরও দু-দিন অপেক্ষা করা যাক। আপনার এত ধড়ফড় করারও দরকার নেই। আগাম টাকা পেয়েছেন, ভাড়াটে হিসাবেও লোকটা নচ্ছার নয়, একটু সৃষ্টিছাড়া হলেও বদ নয়। যতক্ষণ না তাকে কোনো কারণে অপরাধী বলে মনে হচ্ছে, ততক্ষণ নিরিবিলি বসে বিঘ্ন ঘটাতে চাই না। তবে কেসটা হাতে রাখলাম, নতুন কিছু ঘটলেই এসে বলবেন।

বিদায় হলেন বাড়িউলি। হোমস বললে, ওয়াটসন, কেসটা ইন্টারেস্টিং। হয় কারো নিছক বাতিক, না হয় গভীর জলের ব্যাপার। এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে ঘরে অন্য কেউ থাকে–ঘরভাড়া যে নিয়েছে, সে নয়।

কেন এমন মনে হল?

সিগারেটের ব্যাপারটা ছাড়াও অনেক অদ্ভুত ব্যাপার রয়েছে যে। লোকটা ঘর ভাড়া নিয়েই বেরিয়ে গেল। ফিরল অনেক রাতে যখন কেউ নেই, কেউ তাকে দেখল না। যে-লোক বেরিয়ে গেল, সেই লোকই যে ফিরে এল তার কী প্রমাণ? নিশ্চয় তার বদলে এল একজন। প্রথম জন ইংরাজি চোস্ত বলে, দ্বিতীয় জন ইংরাজিতে কাঁচা বলেই MATCHES না-লিখে MATCH লেখে। কেন জান, MATCH শব্দটা ডিকশনারি দেখে লিখেছে বলে ডিকশনারিতে শব্দটার বিশেষ্য আছে, বহুবচন নেই। কাটছাঁট কথায় হুকুম চালানোর কারণটাই হল ইংরেজি ভাষায় দখল নেই। এইসব কারণেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভাড়াটে পালটে গিয়েছে মিসেস ওয়ারেনের বাড়িতে!

উদ্দেশ্য?

সমস্যা তো সেইটাই। তদন্ত চালানোর লাইন এখন একটাই। বলতে বলতে তাক থেকে ইয়ামোটা একটা জাবদা খাতা নামাল হোমস। নানান কাগজ থেকে হারানো-প্রাপ্তি-নিরুদ্দেশের অদ্ভুত অদ্ভুত সব খবর কেটে দিনের পর দিন খাতায় সেঁটে রাখা ওর বরাবরের অভ্যেস। একটার পর একটা খবর পড়ে টিপ্পনী কেটে চলল হোমস। একটু পরেই চোখ আটকে গেল একটা খবরে।

বলল, ওয়াটসন, মনে হচ্ছে এই খবরই খুঁজছি। শোনো : ধৈর্য ধরো। যোগাযোগের কোনো উপায় বার করবই। তদ্দিন এইখানে চোখ রেখো–জি। রহস্যজনক ভাড়াটে মিসেস ওয়ারেনের বাড়িতে ওঠার দু-দিন পরের বিজ্ঞাপন। লোকটা তাহলে ইংরেজি ভালো লিখতে না-পারলেও পড়তে পারে। তিনদিন পরে দেখ আবার একটা বিজ্ঞাপন। কাজের ব্যবস্থা হচ্ছে। ধৈর্য ধরো। মেঘ কেটে যাবে।—জি। সাতদিন আর খবর নেই। তারপর এই বিজ্ঞাপনটা দেখছি অনেক স্পষ্ট–রাস্তা পরিষ্কার হচ্ছে। সুযোগ পেলে সংযোগ পেলে সংকেত করব। নিশানা-সংকেত মনে রেখো–একটা A, দুটো B, ইত্যাদি। শিগগিরই খবর দোব। জি। এটা হল গতকালের কাগজের বিজ্ঞাপন, আজ আর কোনো বিজ্ঞাপন নেই। ওয়াটসন, এবার সবুর করলেই ব্যাপারটা অনেকটা বোধগম্য হবে।

হলও তাই। সকাল বেলা দেখলাম আগুনের দিকে পিঠ ফিরিয়ে তাকিয়ে সন্তোষ-উজ্জ্বল মুখে হাসিভরা চোখে দাঁড়িয়ে আছে বন্ধুবর।

টেবিল থেকে সেইদিনের খবরের কাগজটা তুলে নিয়ে বললে, ওয়াটসন, দেখ, দেখ, ঠিক যা ভেবেছিলাম। উঁচু লাল বাড়ি, সামনের দিকটা সাদা পাথর। চারতলা। দ্বিতীয় জানলা ছেড়ে। সন্ধের পর। জি। এবার তো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে জল কোনদিকে গড়াচ্ছে। প্রাতরাশ খেয়ে ভাবছি মিসেস ওয়ারেনের ভাড়াটের সঙ্গে একটু দেখা করে আসব। আরে, মিসেস ওয়ারেন যে! সাতসকালে কী খবর নিয়ে এলেন!

সাংঘাতিক নতুন কিছু একটা ঘটেছে মনে হল। বিপুল উদ্যমে ধূমকেতুর মতো সাঁ করে চলে এসেছেন মিসেস ওয়ারেন।

মি. হোমস! মি. হোমস! আপনার সঙ্গে পরামর্শ না-করে কিছু করব না বলেই ছুটে এলাম। কিন্তু এবার আমি পুলিশ ডাকব। আমার বুড়ো স্বামীকে যারা ছুঁড়ে ফেলে দেয়—

মিস্টার ওয়ারেনকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে?

খুব খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে তার সঙ্গে।

কে করেছে?

আজ সকালে সাতটা নাগাদ আমার কর্তা কাজে বেরিয়েছিল। বাড়ি থেকে বেরোতে-বেরোতেই হঠাৎ রাস্তায় দুটো লোক পেছন থেকে এসে ঝপাং করে একটা কোর্ট মাথায় ছুঁড়ে দিয়ে সবসুদ্ধ জাপটে তুলে ফেলে পেছনের একটা গাড়িতে। ঘণ্টাখানেক পরে ফেলে দেয় রাস্তায়। কর্তা তখন ঠক ঠক করে কাঁপছে। গাড়িটা পর্যন্ত দেখেনি। দেখে কী হ্যাম্পস্টেড হিদের ফুটপাতে পড়ে আছে। বাসে করে বাড়ি ফিরেছে। সোফায় শুয়ে এখনও কাপছে।

লোকগুলোর চেহারা দেখেছেন? কথা বলতে শুনেছেন?

না। ওঁর তখন মাথা ঘুরছিল। শুধু মনে আছে ঠিক যেন ম্যাজিক দেখানোর মতো তুলে নিয়ে গেল রাস্তা থেকে, আবার ম্যাজিক দেখানোর মতো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেল রাস্তায়। দুজন কি তিনজন লোক ছিল বোধ হয়।

আপনার ধারণা এ-ব্যাপারে আপনার ভাড়াটে জড়িত?

তা ছাড়া আর কে? পনেরো বছর এ-বাড়িতে রয়েছি কখনো এমন কাণ্ড ঘটেনি। যথেষ্ট হয়েছে, আর না, টাকা না, টাকা সব নয়। আজকেই ওকে বিদেয় করব বাড়ি থেকে।

অত ধড়ফড় করবেন না মিসেস ওয়ারেন, ধৈর্য রাখুন। সকাল সাতটার কুয়াশায় আততায়ীরা ভুল করে আপনার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে ভুল বুঝতে পেরে ফেলে দিয়ে গেছে। কাজেই আসল বিপদটা আপনার ভাড়াটের। ভুল যদি না হত, ভাড়াটের কী দশা হত ভেবে পাচ্ছি না।

তাহলে আমি কী করব, মি. হোমস?

মিসেস ওয়ারেন, আপনার এই ভাড়াটের মুখশ্রী দেখতে বড় ইচ্ছে হচ্ছে।

দরজা না-ভাঙলে ঢুকবেন কী করে? খাবারের ট্রে দরজার সামনে বসিয়ে সিঁড়ি বেয়ে যখন নেমে যাই, তালা খোলার আওয়াজ পাই তখন–তার আগে নয়।

ট্রে-টা ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বাইরে আসতে হয় তো। তখনই দেখে নেব কিন্তু কোথাও লুকিয়ে থাকতে হবে আমাদের।

একটু ভেবে নিয়ে মিসেস ওয়ারেন বললেন, বেশ তো, সে-ব্যবস্থা হয়ে যাবে। দরজার উলটোদিকে একটা মাচা-ঘর আছে। আমি একটা আয়না বসিয়ে রাখব ভেতরে–আপনারা ঘাপটি মেরে থাকবেন দরজার আড়ালে।

চমৎকার! দুপুরের খাওয়া কখন খায় লোকটা?

একটা নাগাদ।

ওই সময়ে আসছি আমি আর ডাক্তার ওয়াটসন। আপাতত বিদায়।

সাড়ে বারোটার সময়ে পৌঁছালাম ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কাছে গ্রেট ওরমে স্ট্রিটে। মিসেস ওয়ারেনের বাড়িটা বেশ উঁচু, হলদে ইট দিয়ে তৈরি। রাস্তার কোণে হোয়ে স্ট্রিটের আবাসিক ফ্ল্যাটবাড়িগুলো চোখে পড়ার মতো। একটা বাড়ির দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে খুকখুক করে হেসে উঠল হোমস। বাড়িটা অন্যান্য বাড়ি থেকে এমনভাবে ঠেলে সামনে এসেছে যে চোখে না-পড়লেই নয়।

বলল, ওয়াটসন দেখেছ! উঁচু লাল বাড়ি, সামনেটা পাথর দিয়ে তৈরি। সংকেত খবরের সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে। একটা জানলাতে ঘর ভাড়ার নোটিশও ঝুলছে দেখছি। অর্থাৎ একটা খালি ফ্ল্যাটে ঢোকবার ব্যবস্থা করে ফেলেছে স্যাঙাত। এই যে মিসেস ওয়ারেন, বলুন কোথায় যেতে হবে।

বুটজোড়া নীচের চাতালে খুলে রেখে ওপরে চলে আসুন। সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।

লুকিয়ে দেখার পক্ষে জায়গাটা খাসা। আয়নাটা এমনভাবে বসানো হয়েছে যে অন্ধকারে গা ঢেকে বসে থেকে উলটোদিকের দরজাটা স্পষ্ট দেখা যায়। আসন গ্রহণ করলাম, মিসেস ওয়ারেন বিদায় নিলেন এবং সঙ্গেসঙ্গে অনেক দূরে শুনলাম ঘণ্টাধ্বনির ক্ষীণ শব্দ–খাবার তলব করছে। রহস্যময় ভাড়াটে। একটু পরেই ট্রে নিয়ে উঠে এলেন মিসেস ওয়ারেন, দরজার সামনে চেয়ারের ওপর রেখে নেমে গেলেন সিঁড়ি বেয়ে। দরজার কোণে সেঁটে থেকে আয়নার মধ্যে দিয়ে চেয়ে রইলাম বন্ধ দরজার প্রতিবিম্বর দিকে। হঠাৎ শোনা গেল চাবি ঘোরানোর ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ, ঘুরে গেল হাতল, ঈষৎ ফঁক হল পাল্লা এবং একজোড়া সরু হাত ঝপ করে চেয়ার থেকে তুলে নিয়ে গেল ট্রে-টা। এক মুহূর্ত পরেই খালি ট্রে-টা বসিয়ে দেওয়া হল চেয়ারে এবং চকিতের জন্যে দেখলাম দরজার ফাঁক দিয়ে একটা সুন্দর কালচে ভয়ার্ত মুখ কটমট করে চেয়ে আছে মাচা-ঘরের। অল্প ফাঁক করা দরজার পানে। পরমুহূর্তেই দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল দরজা, ঘুরে গেল চাবি এবং নিস্তব্ধ হল বাড়ি। আমার গা টিপে দিয়ে মাচাঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল হোমস–পেছনে আমি।

নীচে নেমে মিসেস ওয়ারেনকে বললে, রাত্রে আসবখন। এসো ওয়াটসন, বাড়ি গিয়ে কেসটা নিয়ে কথা হবে।

বেকার স্ট্রিটে ফিরে ইজিচেয়ারে বসে বলল, ওয়াটসন, আমার অনুমানই শেষ পর্যন্ত সত্যি হল। ভাড়াটে বদল হয়েছে বাড়িটায়। কিন্তু বদলি ভাড়াটে যে একজন মহিলা এবং নিতান্ত সাধারণ মহিলা নয়–সেটা আগে আঁচ করতে পারিনি।

মহিলাটি কিন্তু আমাদের দেখেছে।

আমাদের দেখেছে কি না বলতে পারব না–তবে আঁতকে ওঠার মতো কিছু একটা দেখেছে। ব্যাপারটা এবার বুঝেছ? সাংঘাতিক কোনো বিপদের ভয়ে লন্ডনে পালিয়ে এসেছে একটি দম্পতি। স্বামীটির অন্য কাজ আছে–দিনরাত বউকে আগলানো সম্ভব নয়। তাই তাকে নিজের জন্যে ঘরভাড়া করে লুকিয়ে রেখে দিলে এমনিভাবে রাখল যে বাড়িউলি পর্যন্ত জানল

কে রয়েছে বাড়িতে। দেখাসাক্ষাৎ সম্ভব নয় পাছে শত্রুরা পাছু নিয়ে বউকে ধরে ফেলে–সোজাসুজি চিঠি লেখাও সম্ভব নয়–তাই খবরের কাগজের হারানো-প্রাপ্তি-নিরুদ্দেশ কলম মারফত খবর পাঠানো শুরু করল হুঁশিয়ার স্বামীটি। স্ত্রীটি মেয়েলি হাতের লেখা গোপন করার জন্যে কাগজের টুকরোয় বড়ো হাতের অক্ষরে চাহিদা লিখে রেখে দিতে লাগল বাইরের চেয়ারে।

কিন্তু এত লুকোচুরি কীসের জন্যে?

ওয়াটসন, তুমি চিরকালই বড়ো কাঠখোট্টাভাবে প্র্যাকটিক্যাল–আসল পয়েন্টে হাত দিয়েছ–ঠিক কথা, এত লুকোচুরি কীসের জন্যে? প্রাণ বাঁচানোর জন্যে নিশ্চয়। সেইজনে ভুল করে মিস্টার ওয়ারেনের ওপর হামলা করা হয়েছে। কিন্তু মজা হচ্ছে এই যে মিস্টার ওয়ারেনকে যারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তারা নিজেরাও কিন্তু এখনও জানে না ভাড়াটে বদল হয়ে গিয়েছে ভদ্রলোকের বাড়িতে। ভারি জটিল, ভারি অদ্ভুত কেস।

কিন্তু এ-কেসে আর এগিয়ে তোমার কী লাভ?

ভায়া, ডাক্তারি শেখবার পর নতুন কেস পেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়তে কি দক্ষিণার আশায়?

মোটেই না। শেখবার জন্যে।

আমিও এ-কেসে লেগে থাকতে চাই শেখবার জন্যে। যশ চাই না, অর্থ চাই না–শুধু চাই শিখতে। এ-কেসে শেখবার মতো অনেক কিছু আছে।

সন্ধে হল। দুই বন্ধু হাজির হলাম মিসেস ওয়ারেনের বাড়িতে। অন্ধকার বসবার ঘরে বসে দেখলাম অনেক উঁচুতে ওপরতলার ফ্ল্যাটবাড়ির জানলায় টিমটিম করে জ্বলছে একটা আলো।

শার্সিতে শীর্ণ ব্যগ্র মুখ চেপে ফিসফিস করে হোমস বললে, ঘরে একজন পুরুষ রয়েছে। ছায়া দেখতে পাচ্ছি। ওই তো আবার দেখা যাচ্ছে! হাতে একটা মোমবাতি রয়েছে। জানলা দিয়ে দেখছে এ-বাড়ির ওপরতলায় ভদ্রমহিলা ওদিকে তাকিয়ে আছে কি না। এবার আলোর নিশানা শুরু করেছে। ওয়াটসন, বার্তাটা তুমিও লেখো–দুজনে মিলিয়ে দেখব পরে। একটা ফ্ল্যাশ মানে, A। আবার ফ্ল্যাশ হচ্ছে, কঙ্বার গুনলে? কুড়িবার। তার মানে T, AT–মানে বুঝলাম না। আরেকটা T; দ্বিতীয় শব্দ শুরু হচ্ছে নিশ্চয়। লেখা–TENTA। ব্যস আর ফ্ল্যাশ নেই। কী বুঝলে ওয়াটসন? ATTENTA শব্দের কোনো মানে হয়? আবার শুরু হয়েছে ফ্ল্যাশ। আরে, আরে একই শব্দ আবার ফ্ল্যাশ করছে–ATTENTA। ওয়াটসন, এ তো দেখছি ভারি অদ্ভুত ব্যাপার! ওই দেখো আবার সেই একই শব্দ–ATTENTA! পরপর তিনবার ATTENTA! আর ক-বার ATTENTA বলবে বুঝছি না। সরে গেল জানলা থেকে ওয়াটসন, কী বুঝলে বলো তো?

সাংকেতিক খবর।

হঠাৎ মানেটা মাথায় এসে গেল হোমসের! হেসে উঠলে খুক খুক করে। বলল, খুব একটা জটিল সংকেত নয়। ইটালিয়ান শব্দ। A লেখা হয়েছে স্ত্রীলোককে উদ্দেশ্য করা হচ্ছে বলে। সাবধান! সাবধান! সাবধান! বুঝলে?

ঠিক ধরেছ মনে হচ্ছে।

খুব সাংঘাতিক কিছু ঘটতে চলেছে বলেই পর পর তিনবার হুঁশিয়ার করা হল ভদ্রমহিলাকে। আরে গেল যা লোকটা যে আবার জানলায় এসেছে!

ঝুঁকে পড়ে জানলার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে একটি ছায়ামূর্তি–শিখা নেড়ে নেড়ে দ্রুত নিশানা করছে এ-বাড়ির মেয়েটিকে। খুব দ্রুত মোমবাতি নাড়ছে–লিখতেও সময় পাচ্ছি না।

পেরিকোলো–পেরিকোলো–সেটা আবার কী ওয়াটসন? বিপদ, বিপদ, তাই না? আরে হ্যাঁ, এ তো বিপদের সংকেত। আবার শুরু হয়েছে। পেরি–আরে গেল যা। নিভে গেল কেন?

আচমকা অন্ধকার হয়ে গেল আলোকিত জানলা–শব্দহীন আর্ত চিৎকারের যেন কণ্ঠরোধ করে দেওয়া হল মধ্যপথে। জানলার সামনে থেকে লাফ দিয়ে নেমে এল হোমস।

ওয়াটসন, আর তো চুপচাপ এ-জিনিস দেখা যায় না। সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটেছে ওই ঘরে–নইলে আলোর সংকেত মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল কেন? চলো যাই স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে। তার আগে নিজের চোখে দেখব কী ঘটেছে ও-ঘরে।

 

বেরিয়ে এলাম রাস্তায়। ঘাড় ফিরিয়ে দেখলাম, মিসেস ওয়ারেনের বাড়ির ওপরতলার জানলায় একটি মেয়ের মুখ কাঠ হয়ে রুদ্ধনিশ্বাসে আচমকা বন্ধ-হয়ে-যাওয়া আলোকবার্তা আবার দেখবার আশায় তাকিয়ে আছে সামনের বাড়ির দিকে। হোয়ে স্ট্রিটের ফ্ল্যাটবাড়ির দরজার সামনে আসতেই রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রেটকোট পরা মনুষ্যমূর্তিটি সবিস্ময়ে বলে উঠল, আরে হোমস যে!

গ্রেগসন নাকি! তুমি কী মনে করে?

আপনি কী মনে করে?

একই ধান্দায়। আমি দেখেছিলাম জানলায় আলোর সংকেত।

সংকেত?

ওই জানলাটায় আলো নেড়ে খবর পাঠানো হচ্ছিল এতক্ষণ হঠাৎ গেল থেমে। তাই দেখতে যাচ্ছিলাম ব্যাপারটা। কিন্তু তুমি যখন স্বয়ং হাজির

দাঁড়ান! দাঁড়ান! উত্তেজনায় লাফিয়ে ওঠে গ্রেগসন। আপনি পাশে থাকলে মনে দারুণ বল পাই। কাজেই বাছাধন পালিয়ে যাবে কোথায়!

কার কথা বলছ?

তাহলেই দেখুন, আপনাকেও আমি টেক্কা মারতে পারি। বলেই ফুটপাতের পাথরে সজোরে ছুরি ঠুকল গ্রেগসন। অমনি রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা চার চাকার ঘোড়ার গাড়ি থেকে চাবুক হাতে নেমে এল গাড়োয়ান। আসুন মি. শার্লক হোমস, আলাপ করিয়ে দিই। ইনি পিনকারটন্স আমেরিকান এজেন্সির মিস্টার লেভারটন।

হোমস বলে উঠল, লং আইল্যান্ড গুহা রহস্যের সেই নায়ক? কী সৌভাগ্য আমার।

প্রশংসা শুনে মুখ লাল হয়ে গেল তরুণ আমেরিকানের।

বললে, মি. হোমস, গোরজিয়াননাকে যদি ধরতে পারি—

রক্তবৃত্তের গোরজিয়াননা? বলেন কী!

ইউরোপেও গোরজিয়াননা এত বিখ্যাত জানা ছিল না। আমেরিকায় তো একডাকে সবাই চেনে। পঞ্চাশটা খুনের নায়ক, অথচ টিকি পর্যন্ত ছুঁতে পারছি না। নিউইয়র্ক থেকে পিছু নিয়ে লন্ডনে এসে সাতদিন ধরে ওত পেতে আছি কোনো একটা অছিলায় বাছাধনকে খাঁচায় পোরার জন্যে। পেছনে পেছনে এসেছি আমি আর গ্রেগসন। শয়তানটা উঠেছে ওই বাড়িটায়–বেরোনোর পথ একটাই। এবার আর চোখে ধুলো দিতে পারবে না। তিনটে লোক এখুনি বেরিয়ে গেল বটে, কিন্তু ওদের মধ্যে গোরজিয়াননা ছিল না।

গ্রেগসন বললে, মি, হোমস এ-ব্যাপারে আরও খবর রাখেন মনে হচ্ছে। এইমাত্র আলোর সংকেতের কী সব কথা বলছিলেন।

সংক্ষেপে হোমস বলল ও যা জানত।

সক্ষোভে আমেরিকান ডিটেকটিভ বললে, তার মানে ও জেনে ফেলেছে আমরা পেছন নিয়েছি।

এ-কথা কেন বললেন?

আলো নেড়ে দলের লোকেদের খবর পাঠাতে পাঠাতে হঠাৎ দেখেছে আমরা ওত পেতে রয়েছি নীচে তাই খবর আর শেষ করেনি। এখন কী করি বলুন তো?

হানা দোব ওপরে–একসঙ্গে, বললে হোমস।

কিন্তু অ্যারেস্ট করার মতো শমন তো আনিনি।

গ্রেগসন বললে, সে-দায়িত্ব আমার। চলুন।

গ্রেগসনের মাথায় বুদ্ধি কম থাকতে পারে, কিন্তু মনে সাহসের অভাব নেই। চরম বিপদের সামনে নিজেই এগিয়ে গেল সবার আগে। আমেরিকান ডিটেকটিভকে কিছুতেই উঠতে দিল না নিজের আগে। লন্ডনে বিপদের মোকাবিলা করুক লন্ডন ডিটেকটিভ আমেরিকানকে সে-সুযোগ দিতে সে রাজি নয়।

তিনতলায় বাঁ-হাতের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখে ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ল গ্রেগসন। অখণ্ড নৈঃশব্দ্য এবং নীরন্ধ্র তমিস্রা বিরাজ করছে ভেতরে। আমি দেশলাই জ্বালিয়ে ধরিয়ে দিলাম গ্রেগসনের লণ্ঠন। পলতের শিখা কাঁপতে কাঁপতে স্থির হয়ে যেতেই বিস্ময়ে শ্বাস টানলাম তিন জনেই। কার্পেটহীন মেঝের ওপর টাটকা রক্তের ধারা। রক্তমাখা পদচিহ্ন আমাদের দিকে এগিয়ে এসে গিয়ে ঢুকেছে ভেতরের একটা ঘরে। দরজাটা বন্ধ ছিল। ঠেলে খুলে দিয়ে লণ্ঠনটা মাথার ওপর তুলে ধরল যাতে আমরা সবাই দেখতে পাই ঘরের দৃশ্য। এবং দেখলাম সেই ভয়াবহ দৃশ্য। দেখলাম শূন্য ঘরের ঠিক মাঝখানে সাদা কাঠের মেঝেতে মুখ গুঁজড়ে থই থই রক্তের মধ্যে বীভৎসভাবে লুণ্ঠিত একজন বিরাটকায় দাড়ি গোঁফ কামানো পুরুষ। দু-হাঁটু মুড়ে দু-হাত সামনে ছড়িয়ে নিঃসীম যন্ত্রণায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে যে-বস্তুটির মরণ মারে, সেটি তখনও চওড়া বাদামি গলায় আমূল ঢুকে থেকে বার করে রেখেছে কেবল সাদা বাঁটটুকু–অত্যন্ত ধারালো হিলহিলে পাতলা একটা ছোরা। হাতের কাছে পড়ে একটা কালো দস্তানা আর একটা ভীষণ দর্শন মোষের শিংয়ের হাতলওলা দু-দিক ধারালো ছোরা।

আমেরিকান ডিটেকটিভ লাফিয়ে উঠল সেই দৃশ্য দেখে, আরে সর্বনাশ! এ যে স্বয়ং ব্ল্যাক গোরজিয়াননা! আমাদের আগেই কেউ কারবার শেষ করে গেছে দেখছি।

গ্রেগসন বললে, মি. হোমস, এই দেখুন জানলার সামনে মোমবাতি। আরে! আরে! ওটা কী করছেন?

মোমবাতিটা জ্বালিয়ে নিয়ে জানলার সামনে গিয়ে এদিক-ওদিক কিছুক্ষণ নাড়ল হোমসতারপর উঁকি মেরে বাইরেটা দেখে নিয়ে ফু দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল মেঝেতে।

বলল, ওতেই কাজ হবে। আচ্ছা, নীচে দাঁড়িয়ে তিনটে লোককে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলেন বললেন না? খুঁটিয়ে দেখেছিলেন?

দেখেছিলাম।

একজনের গালে কালো দাড়ি ছিল কি? মাঝারি সাইজ, বয়স বছর তিরিশ, কালচে মুখ? ছিল। সবশেষে সে-ই তো আমার পাশ দিয়ে গেল।

খুনটা সে-ই করেছে। দেখতে কীরকম শুনলেন, পায়ের ছাপটা মেঝেতেই দেখে নিন। ওই যথেষ্ট, এবার লেগে পড়ুন।

ওতে খুব একটা সুবিধে হবে না মি. হোমস। লন্ডনের লক্ষ লক্ষ লোকের মধ্যে ওই চেহারার মানুষ খুঁজে পাওয়া খড়ের গাদায় ছুঁচ খুঁজে পাওয়ার শামিল বলতে পারেন।

মোটেই না। সেইজন্যেই তো এই ভদ্রমহিলাকে ডেকে আনলাম।

কথাটা শুনে সচমকে সবাই তাকালাম দরজার পানে। চৌকাঠে দাঁড়িয়ে এক দীর্ঘাঙ্গী সুন্দরী ব্লুমসবেরির সেই রহস্যময়ী ভাড়াটে। দুই চোখে অসীম ভয়ার্তি নিয়ে চেয়ে আছে মেঝের রক্তহ্রদে লুণ্ঠিত মৃতদেহটির পানে। সম্মোহিতের মতো বিবর্ণ মুখে পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে সেইদিকে।

পরক্ষণেই বিলাপধ্বনির মতো বিড়বিড় করে বললে–ডিও মিও… ডিও মিও… ওকেও শেষে খুন করলে!তারপরেই অবশ্য সব নিশ্বাস টেনে দু-হাত মাথার ওপর তুলে তাথই তাথই নাচ আরম্ভ করে দিলে ঘরময়। সেইসঙ্গে সে কী উল্লাস-চিৎকার! হাততালি দিয়ে আর অনর্গল ইটালিয়ান শব্দের তুবড়ি ছুটিয়ে ঘরময় নেচে নেচে বেড়াতে লাগল রহস্যময়ী রূপসি। আমি হতবাক, স্তম্ভিত এবং শঙ্কিত হলাম এ-রকম একটা বিকট দৃশ্যের সামনে এই ধরনের উন্মত্ত নৃত্য দেখে। আচমকা নাচ থামিয়ে জিজ্ঞাসু চোখে আমাদের পানে চাইল রূপসি।

আপনারা কে? দেখে তো মনে হচ্ছে পুলিশ! গুইসেপ্পি গোরজিয়াননাকে তাহলে আপনারাই খতম করেছেন, তাই না?

ম্যাডাম, আমরা পুলিশ ঠিকই।

কিন্তু জেনারো কোথায়?ছায়া ঢাকা কোণগুলোয় চোখ বুলিয়ে নিল সুন্দরী। সে যে আমার স্বামী। জেনারো লুক্কা আর আমি এমিলি লুক্কা নিউইয়র্ক থেকে পালিয়ে এসেছি একসঙ্গে এই কালকুত্তার ভয়ে। কিন্তু সে গেল কোথায়? এই তো একটু আগে জানলা থেকে LET ডাকল আমাকে ডাক শুনেই তো ছুটতে ছুটতে আসছি।

ম্যাডাম, আমি ডেকেছি আপনাকে, বললে হোমস।

আপনি ডেকেছেন? আপনি কী করে ডাকবেন?

আপনার সংকেত আমি ধরে ফেলেছি বলে। এখানে আপনার থাকাটা দরকার ছিল বলেই শুধু Vieni। শব্দটা ফ্ল্যাশ করেছিলাম–দেখেই দৌড়ে এসেছেন।

ভয় মেশানো চোখে হোমসের পানে তাকায় রূপসি ইটালিয়ান।

কিন্তু… কিন্তু… হঠাৎ থমকে যায় সুন্দরী। গর্ব আর উল্লাস ফেটে পড়ে চোখের তারায় তারায়।বুঝেছি বুঝেছি… ঝড়ঝায় আপদে বিপদে শোকে দুঃখে যে-মানুষটা এতদিন আমাকে আগলে রেখে দিয়েছে–এ তারই কাণ্ড! নিজের হাতে শয়তানদের রাজা পিশাচ শিরোমণি গুইসেপ্লি গোরজিয়াননাকে খুন করেছে তার নিজের হাতে! জেনারো… জেনারো… কত ভাগ্য করলে তোমার মতো পুরুষের স্ত্রী হওয়া যায়!

ভাবাবেশের ধার দিয়ে গেল না কাঠখোট্টা গ্রেগসন। ভদ্রমহিলা যেন নেহাতই একটা নটিং হিল জাহাবাজ–ঠিক সেইভাবে বাহুতে হাত রেখে বললে নীরসকণ্ঠে, আপনি কে ঠিক ধরতে পারছি না। কিন্তু যা শুনলাম তাতে মনে হচ্ছে আপনার এখন থানায় যাওয়া দরকার।

বাধা দিল হোমস। বলল, একটু দাঁড়াও, গ্রেগসন। ম্যাডাম, খুন করার অপরাধে আপনার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন কুউদ্দেশ্যে খুনটা উনি করেননি, তাহলে যা জানেন তা বলুন–তাতে আপনার স্বামীর ভালো হবে।

গোরজিয়াননাই যখন খতম হয়ে গেল, তখন দুনিয়ার কেউ আমার স্বামীর কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না। ওকে খুন করার জন্যে পৃথিবীর কোনো আদালতেই তার সাজা হবে না।

হোমস বললে, তাহলে এ-ঘরের দরজা বন্ধ করে লাশ যেমন তেমন ফেলে রেখে চলুন এই ভদ্রমহিলাকে নিয়ে ওঁর ঘরে গিয়ে গল্পটা শোনা যাক।

আধঘণ্টা পরে সিগনোরা লুক্কার ঘরে বসে অত্যাশ্চর্য যে কাহিনি শুনলাম, তা এখানে হুবহু লিখছি তার জবানিতে ভাষাটা কেবল মেজেঘষে দিতে হল–কেননা ভদ্রমহিলার ভাঙা ভাঙা ইংরেজি অনেকেই বুঝবেন না। ব্যাকরণে ভুল ছিল বিস্তর।

নেপলস-এর কাছে পোসিলিপ্পোতে আমার জন্ম। আমার বাবা অগাস্টাস বেরিলি ওখানকার উকিল। জেনারো তার চাকরি করত। ওর রূপ ছিল, প্রাণশক্তি ছিল–কিন্তু টাকা ছিল না, সামাজিক প্রতিষ্ঠা ছিল না। আমি ভালোবাসলাম ওর যা ছিল তার জন্যে–বাবা বিয়েতে রাজি হলেন না ওর যা নেই তার জন্যে। দুজনে তখন পালিয়ে গেলাম, গয়নাগাটি বেচে সেই টাকায় চার বছর আগে আমেরিকায় গিয়ে সুখের সংসার পাতলাম। বিয়ে করেছিলাম আগেই–প্যারিতে।

প্রথম থেকেই কপাল খুলে গেল আমাদের। ক্যাসটালোট্টি অ্যান্ড জামবিয়া কোম্পানির ক্ষমতাশালী অংশীদার টিটো ক্যাসটালোট্রিকে একবার কিছু গুন্ডাবদমাশের খপ্পর থেকে বাঁচায় আমার স্বামী। ক্যাসটালোট্টি নিজেও ইটালিয়ান, বিয়ে-থা করেননি, কোম্পানির একমাত্র কার্যক্ষম অংশীদার বলতে তিনিই জামবিয়া বিছানা ছেড়ে নড়তে পারতেন না। উপকার ভুলতে না-পেরে আমার স্বামীকে ক্যাসটালোট্টি নিজের ফার্মে বড়ো চাকরি দিলেন। ব্রুকলিনে নিজের বাড়িতে থাকতে দিলেন, নিজের ছেলের মতো ওকে দেখতে লাগলেন এবং বেশ বুঝলাম ওঁর সব সম্পত্তিই শেষ পর্যন্ত আমাদের লিখে দেবেন। এরপরেই কপাল পুড়ল আমাদের।

একদিন কাজ থেকে জেনারো বাড়ি ফিরল দানবের মতো বিরাট একটা লোককে সঙ্গে নিয়ে। পোসিলি পেপার মানুষ সে নাম গোরজিয়াননা। সব কিছুই তার দানবিক। কথা বললে মনে হয় বাজ ডাকছে, হাত পা নাড়লে মনে হয় গদা ঘোরাচ্ছে। এ-রকম কিম্ভুতকিমাকার কদাকার, বুক কাঁপানো হাড় বজ্জাত মানুষ আমি আর দেখিনি। লাশটা আপনারাও দেখেছেন বাড়িয়ে যে বলছি না নিশ্চয় বুঝছেন। কিন্তু রাক্ষসটার কথার মধ্যে যেন জাদু ছিল, ঠায় বসে শুনতে হত–ওঠা যেত না। এক লহমার মধ্যেই মনে হত যেন হাতের মুঠোয় এনে ফেলেছে–প্রাণটা নির্ভর করছে তার খেয়ালখুশির ওপর।

জেনারো কাঠ হয়ে বসে তার বকবকানি শুনত। লোকটা ঘনঘন আসত। মুখ দেখে বুঝতাম আমার মতোই জেনারো তাকে দু-চক্ষে দেখতে পারে না। তবুও চুপ করে বসে কখনো রাজনীতি, কখনো সমাজবাদ, কখনে ছাইপাঁশ বক্তৃতা শুনত। প্রথম প্রথম ভাবতাম বুঝি জেনারো ওকে অন্তর থেকে ঘৃণা করে। তারপর ওর মুখের চেহারা দেখে আসল কারণটা ধরতে পারলাম। জেনারো ওকে সাংঘাতিক ভয় করে। একটা চাপা, গোপন, মারাত্মক আতঙ্কে ভেতরে ভেতরে তাই সিটিয়ে আছে। সেই রাত্রেই ওকে দু-হাতে ধরে বললাম, সত্যিই যদি সে আমাকে ভালোবাসে, তাহলে বলতে হবে গোরজিয়াননাকে তার এত ভয় কেন।

জেনারো তখন সব খুলে বলল। শুনে ভয়ে হিম হয়ে গেলাম আমি। একটা সময় এসেছিল জেনারোর জীবনে, যখন সংসারে তার বন্ধু বলতে কেউ ছিল না, নিজের প্রচণ্ডতায় দাপাদাপি করে বেরিয়েছে সমাজে–তখন, সেই আধ পাগল অবস্থায়, হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নিউপলিটান সোসাইটিতে নাম লেখায়–এই হল গিয়ে কুখ্যাত সেই রেড সার্কল–রক্তবৃত্ত সমিতি। এ-সমিতিতে শপথ নিয়ে যে ঢোকে, জীবন নিয়ে সে আর বেরোতে পারে না। আমেরিকায় পালিয়ে এসে জেনারো ভেবেছিল বুঝি বেঁচে গেল। কিন্তু কবজি পর্যন্ত মানুষের রক্তে লাল করেছে যে সেই গোরজিয়াননাও ইটালিয়ান পুলিশের ভয়ে আমেরিকায় পালিয়ে এসে সমিতির একটা শাখার পত্তন করলে সেখানে। তারপর একদিন রাস্তায় জেনারো দেখল সেই সাক্ষাৎ মৃত্যুকে–এল আমাদের বাড়িতে। এখানেও একটা গুপ্তচক্র প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে শমন ধরিয়েছে জেনারোকে বিশেষ দিনে প্রতিষ্ঠিত হবে রেড সার্কলের নতুন শাখার। মানে, নতুন করে আরম্ভ হবে রক্তারক্তি কাণ্ড।

কিন্তু এর চাইতেও বড়ো বিপদের তখনও বাকি। লক্ষ করেছিলাম সন্ধের দিকে বাড়ি এসে জেনারোর সঙ্গে ফালতু কথা বলে গেলেও গোরজিয়াননার রাক্ষুসে চোখের দৃষ্টি থাকত আমার দিকে। একদিন যা হবার তা হয়ে গেল, জেনারো বাড়ি ফেরার আগেই গোরজিয়াননা বাড়ি এল। আমাকে কোণঠাসা করে বললে ওর সঙ্গে পালিয়ে যেতে। ঠিক সেই সময়ে জেনারো ঢুকল ঘরে, প্রচণ্ড রাগে পাগল হয়ে গিয়ে মারতে মারতে পোরজিয়াননাকে বার করে দিলে বাড়ি থেকে। সেই থেকে শয়তান আর বাড়ি ঢোকেনি।

ক-দিন পরেই মিটিং হল রেড সার্কলের। মুখ অন্ধকার করে বাড়ি ফিরল জেনারো। সর্বনাশ হয়েছে। আমাদের পরম হিতৈষী ক্যাসটালোট্টিকে বাড়িসুদ্ধ ডিনামাইট মেরে উড়িয়ে দেওয়ার ভার পড়েছে জেনারোর ওপর। পুরোটাই একটা ঘোর ষড়যন্ত্র চালাকিটা গোরজিয়ানোর। রেড সার্কলের নিয়ম হল, সমিতির তহবিলে টাকা তোলার জন্যে ধনী ইটালিয়ানদের দোহন করা। প্রথমেই ক্যাসটালোট্টিকে ধরা হয়। তিনি এক পয়সা দিতে রাজি হননি–উলটে পুলিশকে খবর দিয়েছেন। সমিতি তাই ঠিক করেছে এমন শিক্ষা তাকে দেওয়া হবে যে অন্য ইটালিয়ানরা সুড় সুড় করে টাকা বের করে দেবে। লটারি হল কোন মূর্তিমানের ওপর ভারটা পড়বে ঠিক করার জন্যে। কী কায়দায় জানা নেই, থলির মধ্যে থেকে গোরজিয়াননা টেনে বার করল জেনারোর নাম লেখা রক্তবৃত্তের চাকতি–মুখে তার শয়তান হাসি। দেখেই বুঝল জেনারো–কী চায় গোরজিয়াননা। এটা তার পুরানো কায়দা। কাউকে দল থেকে এবং পৃথিবী থেকে জন্মের মতো সরিয়ে দিতে হলে এই কৌশল করে। নিজের প্রিয়জনকে মারবার ভার দেয়–না-পারলে দলকে লেলিয়ে দেয় তার পেছনে।

সমস্ত রাত আতঙ্কে কাঠ হয়ে হাতে হাত দিয়ে বসে রইলাম স্বামী-স্ত্রী। পরের দিন সন্ধে নাগাদ ডিনামাইট দিয়ে ক্যাসটালোট্টিকে বাড়িসমেত উড়িয়ে দেওয়ার সময় ধার্য হয়েছে। কিন্তু দুপুরেই লন্ডন রওনা হলাম দুজনে। যাওয়ার আগেই ক্যাসটালোট্টিকে আসন্ন বিপদ সম্বন্ধে সাবধান করে এলাম–পুলিশকে খবর দেওয়া হল যাতে ভবিষ্যতে তাঁর গায়ে আঁচ না-লাগে।

তারপর কী হয়েছে আপনারা জানেন। প্রতিহিংসা পাগল গোরজিয়ানোর তাড়া খেয়ে এখানেও লুকিয়ে থেকেছি। কিন্তু জেনারো ইটালি আর আমেরিকায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে বলে অন্যত্র থেকেছে–কোথায় তা আমিও জানি না। গোরজিয়াননার শয়তানি আর ক্ষমতার শেষ নেই। কোনদিক দিয়ে আঘাত হানবে বোঝা সম্ভব নয় বলেই এইভাবে এখানে আমাকে লুকিয়ে রেখেছিল আমার স্বামী। খবর পাঠাত খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে। কিন্তু একদিন দেখলাম রাস্তায় দুজন ইটালিয়ান এ-বাড়ির দিকে চেয়ে আছে। বুঝলাম পিশাচ পোরজিয়াননা আমার ঠিকানা জেনে ফেলেছে। তারপরেই জেনারো খবর দিলে সামনের বাড়ির ওই জানলাটা থেকে সংকেত করবে। সংকেত এল ঠিকই কিন্তু বিপদের। হঠাৎ তাও বন্ধ হয়ে গেল। বুঝলাম, গোরজিয়াননা যে ওর নাগাল ধরে ফেলেছে, এই কথাটাই বলতে গিয়েছিল জেনারো। এখন দেখছি ও তৈরি হয়েই ছিল শত্রু নিধনের জন্যে। কাজ শেষ করে চলে গেছে। এখন আপনারাই বলুন কাঠগড়ায় ওঠবার মতো অপরাধ জেনারো করেছে কি না।

গ্রেগসনকে বলল আমেরিকান ডিটেকটিভ, নিউইয়র্কে কিন্তু মাথায় তুলে নাচা হত জেনারোকে নিয়ে। ব্রিটিশ আইন তাকে কী চোখে দেখবে আমার জানা নেই।

গ্রেগসন বলল, উনি যা বললেন, তা যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে কারোরই কোনো ভয়ের কারণ নেই। কিন্তু ওঁকে থানায় আসতে হবে। একটা ব্যাপার কিন্তু মাথায় ঢুকছে না। এ-ব্যাপারে আপনি কী করে জড়িয়ে পড়লেন মি. হোমস?

শেখবার জন্যে, আমি আবার পুরোনো পাঠশালার ছাত্র কিনা–শিক্ষার শেষ দেখতে পাই। ওহে ওয়াটসন, তোমারও একটা শিক্ষা হল। কিম্ভুতকিমাকার শব্দটার মানে যে ট্র্যাজেডিও হতে পারে–তা জানলে। এখনও আটটা বাজেনি। কভেন্ট গার্ডেনে গিয়ে বাজনা শোনা যাক। চটপট পা চালাও!

———-

টীকা

রক্তবৃত্তের রক্তাক্ত কাহিনি : দি অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য রেড সার্কল প্রথম প্রকাশিত হয় স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনে ১৯১১-র মার্চ এবং এপ্রিল সংখ্যায়। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিলি লাইব্রেরির সংগ্রহশালায় রাখা পাণ্ডুলিপিতে দেখা যায় কন্যান ডয়াল প্রথমে এই গল্পটির নাম দিয়েছিলেন দি অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য ব্লুমসবেরি লজার।

নিষ্পত্তি করে দিয়েছিলেন : এই কাহিনির বিষয়ে ওয়াটসন কখনো পাঠকদের জানাননি।

DA।LY GAZETTE : এই নামটি কাল্পনিক।

এই খবরই খুঁজছি : লোকটি বিজ্ঞাপন না-দিয়ে ডাকে চিঠি পাঠাল না কেন মিসেস ওয়ারেনের বাড়ির ঠিকানায়? প্রশ্ন তুলেছেন মার্টিন ডেকিনসহ কয়েকজন গবেষক কয়েকজন গবেষক।

পিনকারটন্স আমেরিকান এজেন্সি : অ্যালান পিনকারটনের প্রতিষ্ঠা করা গোয়েন্দা সংস্থা পিনকারটন ন্যাশনাল ডিটেকটিভ এজেন্সির বিষয়ে প্রথম খণ্ডে দ্য ভ্যালি অব ফিয়ার উপন্যাসের টীকা দ্রষ্টব্য।

লং আইল্যান্ড গুহা রহস্য : বেশ কিছু গবেষক জানিয়েছেন লং আইল্যান্ডে কোনো গুহা নেই।