উপন্যাস

১৪. উপসংহার (এ স্টাডি ইন স্কারলেট)

উপসংহার

বেস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হওয়ার তলব পেলেও বেস্পতিবার এলে পর দেখা গেল আমাদের সাক্ষী হওয়ার আর দরকার নেই। ঊর্ধ্বলোকের পরম বিচারপতি শমন পাঠিয়ে ডেকে নিয়েছেন জেফারসন হোপকে–ওপরওলার সেই বিচারালয়ে বিচার বড়ো কড়া, রায়ও বড়ো নির্ভুল। জেফারসনের বিচারের ভার তিনিই নিয়েছেন। ধরা যেদিন পড়ে, সেইদিন রাতেই ফেটে যায় জেফারসনের অ্যানিউরিজম। পরের দিন ভোরবেলা গারদের দরজা খোলার পর দেখা গেল হাসিমুখে সে শুয়ে আছে মেঝের ওপর। মৃত্যুর মুহূর্তে যেন সারাজীবনের সুষ্ঠু কর্ম নিমেষে প্রতিভাত হয়েছে মনের পর্দায় মুখ তাই নিবিড় প্রশান্তিতে সমুজ্জ্বল।

পরের দিন সন্ধ্যায় এই সম্পর্কে কথা প্রসঙ্গে হোমস বললে, জেফারসন ফাঁকি দিয়ে গেল বটে, কিন্তু হাত কামড়ে মরবে লেসট্রেড আর গ্রেগসন। খুব একটা জাঁকালো বিজ্ঞাপন ছেড়েছিল না?

জেফারসনের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে ওদের তো তেমন হাত নেই। বললাম আমি।

তিক্তকণ্ঠে জবাব দিলে বন্ধুবর, জীবনে আমরা যা করি, ফলের আশা না-রেখেই করি। লোকে জানলেই হল যে কাজটা তোমার। যাকগে, বলেই তিক্ততা ঝেড়ে ফেলে বললে খুশি খুশি গলায়, এ-তদন্তে আমার কিন্তু লোকসান হয়নি লাভই হয়েছে। সহজ হলেও শেখবার মতো কয়েকটা ব্যাপার পেয়েছি। ঠিক এ-রকম কেস আমার বরাতে এর আগে জোটেনি।

সহজ বলছ? আমি তো অবাক।

তা ছাড়া আর কী? আমার অবাক হওয়া দেখে হাসিমুখে বললে শার্লক হোমস। কেসটা যে সহজ তার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ হচ্ছে কোনোরকম সাহায্য ছাড়াই স্রেফ কয়েকটা মামুলি অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্তের ওপর বশ করে তিন দিনের মাথায় গ্রেপ্তার করেছি আসামিকে।

তা ঠিক।

এর আগেও তোমাকে বলেছি, যা গতানুগতিক, তা অসুবিধের বদলে সুবিধেই করে দেয়। এ ধরনের ধাঁধার জবাব পাওয়ার মোক্ষম পন্থা হল পিছু-হাঁটা চিন্তাধারা। পদ্ধতিটা সোজা তো বটেই, কাজও হয় দারুণ কিন্তু কেউ তা নিয়ে মাথা ঘামায় না–চর্চাও করে না। রোজকার জীবনে আমরা সামনে হাঁটায় অভ্যস্ত বলেই উপেক্ষা করি পিছু-হাঁটা চিন্তাকে। সংশ্লেষণমূলক চিন্তা যারা করে, সেরকম পঞ্চাশজনের মধ্যে হয়তো একজন বিশ্লেষণমূলক চিন্তায় অভ্যস্ত।

তোমার কথা মাথায় ঢুকছে না।

ঢুকবে বলেও ভরসা রাখি না। আর একটু স্পষ্ট করে বলা যাক। পরপর কতকগুলো ঘটনা শোনার পর বেশির ভাগ লোকই বলতে পারে ঘটনা পরম্পরার ফলটা কী হতে পারে। ঘটনাগুলো মনের মধ্যে সাজিয়ে দিয়ে মনে মনে তর্ক করে ঠিক করে নেয় অমুক ঘটনার অমুক পরিণাম হবেই। আবার কিছু লোক আছে যাদেরকে শুধু পরিণামটা বললে তাই থেকে মনের মধ্যে যুক্তি-তর্ক দিয়ে খাড়া করে নেয় কী-কী ঘটনার ফলে এমনি একটা পরিণাম সম্ভব হতে পারে। চিন্তার এই ক্ষমতাকেই আমি বলি পিছু-হাঁটা চিন্তা বা বিশ্লেষণমূলক যুক্তি।

বুঝলাম!

এই কেসে পাওয়া গিয়েছিল কেবল পরিণামটা–কী-কী ঘটনার ফলে ওই পরিণাম হতে পারে, সব ভেবে নিতে হয়েছে মনের মধ্যে। ঠিক কী-কী ভেবেছিলাম, এবার তা বলা যাক। যুক্তির ধাপগুলো শুনলেই বুঝবে ব্যাপারটা কত সোজা। একেবারে গোড়া থেকেই শুরু করছি। মনে আছে নিশ্চয় বাড়িটা পর্যন্ত পায়ে হেঁটে গিয়েছিলাম—মনকে পরিষ্কার স্লেটের মতো কঁকা রেখেছিলাম–আগে থেকে কোনো ধারণা মনে ঢুকতে দিইনি। পর্যবেক্ষণ শুরু করলাম রাস্তা থেকে। আগে বলেছি গাড়ির চাকার দাগ দেখলাম রাস্তায়। খোঁজ নিয়ে জানলাম, এ-দাগ পড়েছে নিশ্চয় রাত্রে ! গাড়িটা যে প্রাইভেট নয়–ভাড়াটে গাড়ি, তা বুঝলাম সরু চাকার দাগ দেখে। বাড়ির গাড়ি মানে, ব্রুমের চাকা অনেক চওড়া হয় লন্ডনের ছ্যাকড়াগাড়ির চাকার চেয়ে।

এই হল প্রথম পয়েন্ট। বাগানের রাস্তায় আস্তে আস্তে হাঁটতে দেখলাম আমার কপাল ভালো। বাগানের মাটি কাদা টাইপের পায়ের ছাপ যার ওপর ফোটে ভালো। তোমার চোখে স্রেফ পাঁক মাড়িয়ে যাওয়া মনে হওয়াটা আশ্চর্য নয়। কিন্তু আমার ট্রেনিং পাওয়া চোখে প্রত্যেকটা ছাপের মানে আলাদা। গোয়েন্দাগিরি একটা বিজ্ঞান। এই বিজ্ঞানের অনেক বিভাগের মধ্যে একটা বিভাগ হল পায়ের ছাপের মানে বার করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর দরকারি এই বিভাগটাই সবচেয়ে অবহেলিত হয়ে রয়েছে ডিটেকটিভ সায়েন্সে। আমি কিন্তু বরাবর বেশি জোর দিয়েছি বিশেষ এই আর্টের ওপর–শিখেওছি অনেক। পায়ের ছাপের মানে বার করা আমার দ্বিতীয় প্রকৃতি বলতে পার। কনস্টেবলদের গোদা পায়ের ভারি ছাপ দেখলাম ঠিকই, এও দেখলাম যে তার আগে আরও দু-জন লোক বাগানের কাদা মাড়িয়ে বাড়ির ভেতরে গেছে। আগে গেছে বুঝলাম খুব সহজে। এদের পায়ের ছাপে অনেক জায়গায় চাপা পড়েছে পুলিশ কনস্টেবলের ভারী পায়ের ছাপে। তাই সঙ্গেসঙ্গে অনুমান করে সিদ্ধান্তে পৌঁছে বলেছিলাম, নৈশ আগন্তুক দু-জনের একজন অদ্ভুত রকমের ঢ্যাঙা–দুটো পায়ের ছাপের মধ্যে অতখানি ফঁক থাকাটাই তার প্রমাণ–আর একজন শৌখিন পুরুষ–বুটের ছাপ ছোটো হলেও বাহারি। এইভাবেই পেলাম আমরা যুক্তি-শৃঙ্খলার দ্বিতীয় গ্রন্থি।

বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর শেষ সিদ্ধান্ত যাচাই করা হয়ে গেল সুটপরা লোকটাকে মেঝের ওপর দেখে! ঢ্যাঙা লোকটাই তাহলে নাটের গুরু। খুন করে লম্বা দিয়েছে–অবশ্য শৌখিন ব্যক্তিটি খুন হয়েছে বলেই যদি সাব্যস্ত হয়। মৃত ব্যক্তির গায়ে ক্ষত নেই, কিন্তু মুখে বিভীষিকা আছে। আসন্ন মৃত্যুর খবর সে পেয়েছিল। হার্টফেল অথবা স্বাভাবিক কারণে হঠাৎ যারা মারা যায়, তাদের মুখে কখনো বিভীষিকা বা উত্তেজনা ফুটে থাকে না। ঠোঁট শুকলাম। একটা তেঁতো গন্ধ পেলাম। এই থেকে গেলাম বিষ-প্রয়োগের সিদ্ধান্তে। বিষটা দেওয়া হয়েছে গায়ের জোরে মুখ তাই অমন বীভৎস। ঘৃণা আর আতঙ্ক অমন প্রকট। এই হল গিয়ে আমার তৃতীয় সিদ্ধান্ত। অন্যান্য পরিণতির সম্ভাবনা বাদ দিতে দিতে পৌঁছেছিলাম এই সিদ্ধান্তে। এটাও একটা পদ্ধতি। কেননা আর কোনো অনুমান দিয়েই এই পরিণতি সম্ভব হচ্ছে না। এ-জিনিস এর আগে কখনো শোননি ভেবো না যেন। অপরাধ ইতিহাসে গায়ের জোরে বিষ খাওয়ানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়। যেকোনো বিষবিজ্ঞানীকে জিজ্ঞেস করলেই সঙ্গেসঙ্গে দুটো উদাহরণ শুনিয়ে দেবে! একটা ওডেসা-র ডোলাঙ্কি মামলা। আর একটা পেলিয়ারের লেটুরিয়ার।

এরপর এল সবচেয়ে বড়ো চিন্তা। কেন এই খুন? লুঠপাটের নিশ্চয় উদ্দেশ্য ছিল না। কিছুই খোয়া যায়নি। তাহলে রাজনৈতিক হত্যা? স্ত্রীঘটিত হত্যাও বিচিত্র নয়। প্রশ্নটা ভাবিয়ে তুলল আমাকে। গোড়া থেকেই আমি অবশ্য শেষ সম্ভাবনার দিকে বেশি ঝুঁকেছিলাম। রাজনৈতিক গুপ্তঘাতকরা যা হোক করেই গা-ঢাকা দেয়। খুনটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু এই খুনের কর্তাটিই খুন করেছে বেশ তারিয়ে তারিয়ে এবং সারাঘরে নিজের চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে গেছে যাতে পরে বোঝা যায় আগাগোড়া ঘরের মধ্যেই ছিল সে-উদ্দেশ্যটা তাহলে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ। গহিত অন্যায়ের শোধ তুলে গেছে কেউ ধাপে ধাপে খুন করেছে–হট করে মেরে ঝট করে পালায়নি। দেওয়ালের লিখন দেখে অনুমানটা আরও গভীর হল। ধোঁকা দেওয়ার স্পষ্ট চেষ্টা। আংটিটা আবিষ্কারের পর আর কোনো সন্দেহই রইল না। জবাব মিলল প্রহেলিকার। হত্যাকারী আংটি বার করেছিল কোনো একটি মেয়ের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যে সে-মেয়ে অকুস্থলে তো নেই-ই, ধরাধামেও হয়তো নেই। কথাটা মাথার মধ্যে আসার সঙ্গেসঙ্গে গ্রেগসনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ক্লিভল্যান্ডে পাঠানো টেলিগ্রামে মি. ড্রেবারের অতীত জীবন সম্পর্কে খবর জানতে চাওয়া হয়েছে কিনা। তোমার মনে আছে নিশ্চয়, গ্রেগসন বলেছিল–না।

খুঁটিয়ে ঘর পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে পেলাম আরও কয়েকটা খবর। আমার পূর্ব অনুমানের অকাট্য প্রমাণ। যেমন, হত্যাকারীর উচ্চতা কতখানি, সে ত্রিচিনোপল্লী চুরুট খায় এবং তার নখ বেজায় লম্বা। ধস্তাধস্তির লক্ষণ না-পাওয়ায় রক্তপাতের কারণও ভেবে নিয়েছিলাম। উত্তেজনার সময়ে হত্যাকারীর নাক থেকেই রক্ত ঝরেছে ঘরময়। ছিটানো রক্তের দাগের সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছিল হত্যাকারীর পায়চারি করার ছাপ একই লাইনে গিয়েছে। গায়ে অনেক রক্ত থাকলে উত্তেজনার মুহূর্তে কারো নাক দিয়ে এভাবে রক্ত ঝরে। এই থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, গুপ্তঘাতক সম্ভবত বিরাটদেহী, লালমুখো পুরুষ। সিদ্ধান্ত যে নির্ভুল সে-প্রমাণ পরে পেয়েছি।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে গ্রেগসন যা উপেক্ষা করেছে, মন দিলাম সেই কর্তব্যে। টেলিগ্রাম পাঠালাম ক্লিভল্যান্ডের পুলিশ প্রধানকে। বেশি কথা না–জানতে চাইলাম শুধু একটা খবর এনক ড্রেবারের বিয়ের সময়ে চাঞ্চল্যকর কিছু ঘটেছিল কিনা–এক উত্তরেই পৌঁছে গেলাম শেষ সিদ্ধান্তে। ড্রেবার নাকি পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছিল প্রেমের ব্যাপারে এক পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর কবল থেকে বাঁচবার জন্যে। নাম তার জেফারসন হোপ। লোকটা নাকি এখন ইউরোপে। হত্যারহস্যের চূড়ান্ত সূত্র হাতের মুঠোয় পেয়ে উঠে পড়ে লাগলাম হত্যাকারীকে জালে ফেলবার চেষ্টায়।

মনে মনে আগেই ভেবে নিয়েছিলাম, ড্রেবারের সঙ্গে বাড়ির মধ্যে যে ঢুকেছিল, ঘোড়ার গাড়িটাকেও চালিয়ে এনেছিল সে। রাস্তায় ঘোড়ার পায়ের ছাপ দেখেই এসেছিলাম সেই সিদ্ধান্ত। ঘোড়াটা এলোমেলো ভাবে হেঁটেছে–লাগাম ধরে কেউ বসে থাকলে ঘোড়া এ-রকম খেয়ালখুশি নিয়ে চলে না। গাড়োয়ান তাহলে ছিল কোথায়? নিশ্চয় বাড়ির মধ্যে। গাড়ি ছেড়ে বাড়ির ভেতর ছাড়া আর কোথাও যাওয়া তো সম্ভব নয়। তৃতীয় ব্যক্তিকে সাক্ষী রেখে পাগল ছাড়া কেউ খুন করে না। অর্থাৎ গাড়োয়ানই তাহলে খুনি। তা ছাড়া লন্ডন শহরে অগোচরে কারো পেছন নেওয়ার মতলব থাকলে গাড়োয়ান হওয়াটাই কিন্তু সবচেয়ে সুবিধাজনক! এই সব পয়েন্ট আর সিদ্ধান্ত বিবেচনা করে একটাই চরম সিদ্ধান্তে আসা যায় এবং তা হল বিরাট এই শহরের বিভিন্ন গাড়ির আচ্ছায় জেফারসন হোপ নামধারী এক গাড়োয়ানকে খোঁজ করা।

এই নামের কোনো লোক যদি সত্যিই থাকে গাড়ির আচ্ছায়, রাতারাতি নাম পালটে উধাও হওয়া বোকামি হবে তার পক্ষে। কারো মনে যাতে সন্দেহের আঁচ না-লাগে, তাই দিন। কয়েক গাড়ি নিয়ে বেরোতে হবে যাত্রীর সন্ধানে। হঠাৎ ধরাচুড়ো পালটালেই তো লোকের চোখে পড়বে। ছদ্মনাম নিয়েছে এমন সন্দেহ করারও কোনো কারণ নেই। যে-দেশে কেউ তার আসল নামই জানে না, সে-দেশে নকল নাম নেওয়ার কোনো যুক্তি আছে কি? রাস্তার বাউন্ডুলে ছোঁড়াগুলোকে লাগিয়ে দিলাম সেই কাজে। লন্ডনে সবকটা গাড়ির আড্ডার মালিকদের কাছে গিয়ে খোঁজ নিতে লাগল জেফারসন হোপের পেয়েও গেল শেষপর্যন্ত। কীভাবে কত তাড়াতাড়ি তারা নিয়ে এল জেফারসনকে এবং কীরকম নাটকীয়ভাবে বাগে আনলাম তাকে, সে-দৃশ্য এখনও টাটকা তোমার স্মৃতিতে। স্ট্যানজারসনের খুন হওয়াটা নেহাতই অপ্রত্যাশিত কিন্তু তা আটকানোর পথও আর ছিল না। ছুরি খেয়ে মরেছিল বলেই না বিষ-বড়িগুলো পেলাম আমার পূর্ব অনুমানেরও অকাট্য প্রমাণ হাতে এল। তাহলেই দেখ, গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত সবটাই একটা ধারাবাহিক ব্যাপার যুক্তিসিদ্ধ অনুমানের শেকলও বলতে পার ফাঁক কোথাও নেই।

অপূর্ব। সোল্লাসে বললাম। তোমার প্রতিভার জনস্বীকৃতি দরকার। কেসটা ছেপে বার করা দরকার। তুমি যদি না-লেখ, আমি লিখব।

তোমার যা মন চায় তাই কর। এই দ্যাখো! আমার দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলল হোমস, দ্যাখ! পড়ে দ্যাখ!

কাগজটা সেইদিনের একো পত্রিকা, আঙুল দিয়ে যে-খবরটা দেখাল হোমস, এই :

মি. এনক ড্রেবার এবং মি. জোসেফ স্ট্যানজারসনকে হত্যার অভিযোগে ধৃত হোপ নামক লোকটির অকস্মাৎ মৃত্যুতে চাঞ্চল্যকর একটি বিচার কাহিনি থেকে বঞ্চিত হল দেশের মানুষ। মামলাটির বিশদ বিবরণ কোনোদিনই আর উদঘাটিত হবে না। বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জেনেছি, তা এই : জোড়া খুনের পেছনে নাকি বহু পুরোনো ব্যর্থ প্রেমের জ্বালা আছে, সেইসঙ্গে আছে একটা রোমান্টিক কাহিনি এবং করুণ উপাখ্যান। নিহত দুই ব্যক্তিই নাকি যৌবনকালে সন্তদের দেশবাসী ছিলেন। হোপ নামক মৃত আসামি নাকি সল্টলেক সিটি থেকেই এসেছে। মামলাটায় আর কিছু লাভ না-হোক, একটা লাভ হয়েছে। ব্রিটিশ পুলিশের দক্ষতা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং বিদেশিদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে পুরোনো ঝগড়ার মীমাংসা যেন দেশের মাটিতেই করে আসা হয় ব্রিটিশ মাটিতে করতে গেলে ঝকমারি অনেক। ব্রিটিশ পুলিশের আশ্চর্য এই দক্ষতার পূর্ণ কৃতিত্ব যে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের দুই স্বনামধন্য তরুণ গোয়েন্দা সর্বশ্রী লেসট্রেড এবং গ্রেগসনের প্রাপ্য–এ-খবরও আর গোপন নেই। আসামিকে ধরা হয়েছে শার্লক হোমস নামক শখের গোয়েন্দার ঘরে। গোয়েন্দাগিরিতে ভদ্রলোক যৎকিঞ্চিৎ প্রতিভার চিহ্ন দেখিয়েছেন এবং উপর্যুক্ত উপদেষ্টা পেলে ভবিষ্যতে আরও দক্ষতা দেখাবেন আশা করা যায়। কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তরুণ পুলিশ গোয়েন্দা দু-জনকে একটা প্রশংসিকা দেওয়া হবে, এ-আশা করা নিশ্চয় অন্যায় হবে না।

হাসতে হাসতে শার্লক হোমস বললে, কী হে, শুরুতেই বলিনি তোমাকে? এ স্টাডি ইন স্কারলেট তদন্তের ফল এটাই–ওদের দুজনকে প্রশংসিকা পাইয়ে দেওয়া।

আমি বললাম, মন খারাপ কোরো না। সব ঘটনাই লিখে রেখেছি আমার খাতায়–দেশের মানুষ শিগগিরই তা জানবে। যদ্দিন তা না-হচ্ছে, মনকে ঠান্ডা রেখো শুধু একটা কথা ভেবে : এ-জয় শুধু তোমারই।