১১. জো বেশ জমকালো ভঙ্গিতে

জো বেশ জমকালো ভঙ্গিতে বসে ছিলো বেলুনের তলায়।কি ওপরে চুল্লির আগুন তাতিয়ে গনগনে করবার ব্যবস্থা করেছেন, আর ফার্গুসন গেছেন ডাইনি-পুরুতের সঙ্গে সুলতানের কাছে। কাজেই বাজারে যত লোক ছিলো, তারা জো-কে চাঁদের অন্যতম পুত্র ভেবে গদগদভাবে নানা ভঙ্গিতে তার চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করছিলো। কতগুলি মেয়ে-পুরুষ অদ্ভুত এক আচাভুয়ো বাজনার সঙ্গে তালে-তালে পা ফেলে বিচিত্র ভঙ্গিতে নাচ দেখাচ্ছিলো তাকে। জোও একটু কপার ভঙ্গিতে তাদের দিকে তাকিয়ে তাদের ধন্য করছিলো, লোকজনেরা জো-র কাছে হরেক রকম জিনিশপত্র এনে উপচার হিশেবে হাজিরও করছিলো।

অবস্থা যখন এইরকম জমকালো, হঠাৎ জো দেখতে পেলো ফার্গুসন খুব দ্রুত পায়ে বেলুনের দিকে এগিয়ে আসছেন, প্রায় দৌড়চ্ছেন বলা চলে, আর তার পেছনপেছন ভীষণ হৈ-চৈ করে একদল কালো মানুষ অনুসরণ করে আসছে, তাদের পুরোভাগে আছে সেই বিকট চেহারার ডাইনি-পুরুতেরা। জো-র মনে হলো তারা ভীষণ রাগে ফেটে পড়তে চাচ্ছে, বিশেষ করে পুরুৎগুলো তুলকালাম কাণ্ড শুরু করেছে, তাদের বিষম কোলাহলে কান পাতা দায়, তবে রাগের ভাব স্পষ্ট। ব্যাপার কী? অবাক হয়ে ভাবলে জো। আগেকার সেই ভক্তি ও বিনয় হঠাৎ মন্ত্রবলে উবে গিয়ে এই উগ্রচণ্ড রাগি মেজাজ এলো কেন? তাহলে কি যাকে তারা চাঁদের সন্তান ভেবে অনুনয় করে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো সেই ফার্গুসনের হাতে সুলতানের আকস্মিক মৃত্যু ঘটেছে? তাহলেই তো সর্বনাশ!

প্রায় ছুটেই এলেন ফার্গুসন-উত্তেজনায় তার কপালের শিরা রক্তের তীব্র চাপে ফুলে উঠেছে, সারা মুখে ভয়ে ছাপ স্পষ্ট, চোখদুটো কেমন চক করে উঠেছে। সোজা তিনি ছুটে এলেন মইয়ের কাছে। হয়তা সংস্কারের প্রবলতা তখনও কায়েমি হয়ে ছিলো বলেই তাকে উপেক্ষা করে, জনতা তখনও তাকে কোনোরকম আঘাত করা থেকে বিরত থেকেছে। চট করে মই বেয়ে কার-এ উঠে এলেন, ফার্গুসন, আর তার উত্তেজিত ইশারায় জো-ও আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট না-করে ক্ষিপ্র বিদ্যুতের মতো তার অনুসরণ করলে।

আর একমুহূর্তও দেরি কোরো না। নিশ্বাস রোধ করে উত্তেজিত গলায় ফাণ্ডসন নির্দেশ দিলেন, নোঙর খোলবার সময় পর্যন্ত নেই, বরং দড়ি কেটে দাও তাড়াতাড়ি! শিগগির উড়ে যেতে হবে আমাদের।

কী হয়েছে? ব্যাপার কী; খুলে বললা তো ফার্গুসন।

ওই দ্যাখো, ওদিকে তাকিয়ে। আকাশের এক কোণের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন ফার্গুসন।

চাঁদ! সমস্বরে বলে উঠলেন অন্য দু-জনে।

দিগন্তের বেশ কিছুটা ওপরে মস্ত এক সোনালি চাঁদ ভেসে উঠেছে। সেই চাঁদ আর ভিক্টরিয়া উভয়ই আকাশে শোভা পাচ্ছে একসঙ্গে। হয় পৃথিবীতে দুটি চাঁদ আছে, নয়তো শাদা চামড়ার লোকগুলি শঠ প্রবঞ্চক ও প্রতারক, মোটেই দেবতা নয় এরা–এই ভাবটাই এখন সব লোকের মনে জেগে উঠেছে। তাই তারা রাগে, অবিশ্বাসে মারমুখো হয়ে উঠেছে।

হো-হো করে না-হেসে থাকতে পারলেন না ডিক।

কাজের লোকেরা যখন দেখলো যে ঐ শ্বেতাঙ্গ প্রতারকগুলো নকল চাঁদে করে পালিয়ে যাবার মৎলব আঁটছে, অমনি প্রবল স্বরে চ্যাঁচামেচি করে উঠলো। দুর্বোধ্য ভাষায় গালাগাল করতে-করতে বেলুন তাগ করে তীর ছুঁড়তে উদ্যত হলো তারা, কেউকেউ আবার কতগুলো চোখা বল্লম উঁচিয়ে ধরলে। কিন্তু একটি ডাইনি-পুরুৎ হাত তুলে তীরধনুক ব্যবহার করতে বারণ করলে জনতাকে। তারপর অসীম ক্ষিপ্রতায় সে গাছে ওপর উঠতে লাগলো : মনে-মনে সে মৎলব এঁটেছে যে নোঙরটা ধরে টেনে নিচে নামিয়ে নেবে এই নকল চঁাদ।

কার থেকে কুড়ুল হাতে ঝুঁকে পড়লো জো। জিগেস করলে দড়ি কেটে দেবো?

একটু রোসো। কিন্তু ওই ডাইনি-পুরুটা যে উঠে আসছে!

আগে দেখাই যাক কী হয় না-হয়। হয়তো শেষ পর্যন্ত নোঙরটা বাঁচাতে পারবো আমরা, ফার্গুসন বললেন, না-হলে, শেষটায় লক্ষণ খারাপ বুঝলে, দড়ি কেটে দেয়া যাবে।

ডাইনি-পুরুংটি ততক্ষণে ওপরে উঠে, এসে ডাল ভেঙে নোঙরটাকে মুক্ত করে ফেলেছে। যেই ডালটা ভেঙে গেলো, অমনি বেলুনের টানে আচমকা নোঙরটা উঠে গেলো ওপরে আর লোকটার পা তাতে আটকে গেলো, লোকটাকে নিয়েই বেলুন উঠে এলো আকাশে, তলায় লোকটা ঝুলতে লাগলো।

নিচে যে-সব লোক এসে জমায়েৎ হয়েছিলো, তারা হতবাক হয়ে বিস্মিত চোখে দেখতে লাগলো, তাদের জাদু-জানা ঐন্দ্রজালিক পুরুৎ আকাশে ভেসে যাচ্ছে।

চমৎকার হলো! উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠলো জো।

লোকটা বেশ আঁকড়ে ধরেছে দড়িটা, নইলে-কেনেডি বললেন, কখন তলায় পড়ে যেতো।

লোকটাকে কি শূন্য থেকেই ফেলে দেবো? জো জিগেস করলে।

ছিঃ! ফার্গুসন বললেন, আমরা খামকা একটা লোকের মৃত্যু ঘটাবো কেন? বরং ওকে আমরা নিরাপদেই মাটিতে নামিয়ে দেবো, যদিও তার ফলে অবশ্য ওর দলবলের সকলের কাছে ওর প্রতিপত্তি ও মাহাত্ম অনেক বেড়ে যাবে।

ভিক্টরিয়া এর মধ্যেই প্রায় হাজার ফিট ওপরে উঠে এসে ভেসে যাচ্ছিলো। প্রাণপণে দড়িটা আঁকড়ে ধরেছিলো সেই ডাইনি-পুরুৎটি; ভয়ে-আতঙ্কে তার চোখদুটো কোটর থেকে যেন ঠেলে বেরুতে চাচ্ছে, মুখে টু শব্দটি পর্যন্ত নেই। এমনিভাবে বেলুন একটুক্ষণ পরে ধীরে-ধীরে শহরের সীমা ছাড়িয়ে এলো।

প্রায় আধঘণ্টা বাদে ফার্গুসন যখন দেখলেন যে তারা অনেকদূর চলে এসেছেন, তখন তিনি চুল্লির উত্তাপ এমনভাবে কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করলেন যাতে বেলুন সরাসরি মাটির দিকে নেমে আসে। বেলুন যখন প্রায় কুড়ি ফিট উপরে, সেই ডাইনি-পুরুৎটি হঠাৎ বুকের ভেতর সাহস পেলে; যথেষ্ট পরিমাণ ভরসা সঞ্চয় করে সে চট করে লাফিয়ে নামলে মাটিতে, তারপর কোনো দিকে না-তাকিয়ে কাজের দিকে তীরের বেগে ছুটে চলে গেলো।

আর সেই মুহূর্তে হঠাৎ বেলুনটি হালকা হয়ে যাওয়ায় আবার তরতর করে ওপর দিকে উঠে যেতে লাগলো।

ধীরে-ধীরে সন্ধ্যা নেমে এলো তার ঝাঁপসা আবছায়া নিয়ে, তারপর সেই আবছায়াকে আরো-পাৎলা করে দিয়ে ধীরে-ধীরে আকাশের এককোণায় শোভা পেতে লাগলো সোনালি, নিটোল, জ্বলজ্বলে চাদ।

ওই দেখুন, চাঁদ যেন আজ অন্য দিনের চেয়েও অনেক বেশি জ্বলজ্বল করছে। জো বললে, বেশ দিব্যি জাঁকিয়ে বসেছিলুম চাঁদের পুত্র হিশেবে, কিন্তু ওই চাদই কিনা শেষটায় আমাদের এই নতুন পরিচয় ভেস্তে দিয়ে ফাস করে দিলে যে আমরা চাঁদের কেউ নই।

এ-দেশের নাম কী, জানো? ফার্গুসন বললেন, এখানকার লোকেরা একে চাঁদের দেশ বলে। এখানকার বাসিন্দারা চিরকাল ধরে চাঁদের পুজো করে আসছে। তাছাড়া এ-দেশের মতো উর্বর দেশ আর-কোথাও সহজে মেলে না।

এই জংলি দেশেই কেন প্রকৃতি এমন অকৃপণ, সে-কথা ভাবলে অবাক লাগে। কেনেডি বললেন।

এই দেশই হয়তো একদিন সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সভ্য হয়ে উঠবে, সেই সম্ভাবনার কথাটাই বা তুমি ভাবছো না কেন? এমনও তো হতে পারে যে, ইয়োরোপে লোকসংখ্যা এত বেড়ে গেলো যে কিছুতেই আর কুলোয় না; তখন তো তারা বাধ্য হয়েই এ-দেশে বসবাস করতে চলে আসবে।

কেনেডি জিগেস করলেন, তা-ই ভাবছে নাকি তুমি?

হ্যাঁ, আমার তো অন্তত তা-ই ধারণা। ফার্গুসন বলে চললেন, মানুষের ইতিহাস খুঁটিয়ে দেখলে এই ঘটনাই দেখতে পাওয়া যায়। তার প্রাকৃতিক সম্পদ এত বেশি যে, তাই দিয়েই আফ্রিকা একদিন সকলকে টানবে। নানা কলকজা যন্ত্রপাতি নিয়ে ইয়োরোপ থেকে লোক আসবে, বাসযোগ্য করে তুলবে এই কালো বন আর পাহাড়ি শ্যামলতা, গড়ে উঠবে স্বাস্থ্যকর লোকালয়, নাব্য হয়ে উঠবে এর স্রোতস্বিনী, তারপর ধীরে-ধীরে হয়তো বিশাল এক সুসভ্য সাম্রাজ্য গড়ে উঠবে এখানে। কে জানে হয়তো এ-দেশ থেকেই বাষ্প আর বিদ্যুৎশক্তির আরো চমকপ্রদ ও বিস্ময়কর অনেক কিছু আবির্ভূত হবে।(১)

আমি সেই শুভদিনের অপেক্ষায় রইলুম। কেনেডি বললেন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই পূর্ব-টাঙ্গানাইকা হ্রদ থেকে বেরিয়ে আসা মালালারাজি নদীস্রোতের কাছাকছি এসে পড়লো ভিক্টরিয়া। মন্ত-মন্ত লম্বা ঘাসে গোটা এলাকাটা ঢাকা, তারই মধ্য দিয়ে দলে-দলে বিশাল-কুঁজ-ওলা গোরুর দল চরে বেড়াচ্ছে। এই ঘাসের বন যেখানে গভীর, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সেখানে মাঝে-মাঝে সিংহ, চিতাবাঘ, হায়েনা ও অন্যান্য হিংস্র জন্তুরা আত্মগোপন করে থাকে। মাঝে-মাঝে মটমট করে ডাল ভেঙে মস্ত পাহাড়ের মতো হাতির পালকে নেমে আসতে দেখা যায়।

কী অপূর্ব শিকারের জায়গা। কেনেডি বলে উঠলেন।

হঠাৎ সমস্ত প্রকৃতি যেন কীসের আশঙ্কায় স্তব্ধ থমথমে হয়ে গেলো। ঝড়ের পূর্বলক্ষণকে চিনে নিতে মোটেই দেরি হলো না ফার্গুসনের। চাঁদ ড়ুবিয়ে দিলে কালো মেঘ, অন্ধকার করে এলো সারা আকাশ। উসেণ্ডা নামক গ্রামের অগুনতি কুটিরগুলোর ঝাঁপসা-কালো অস্পষ্টতার অনেক ওপরে ভিক্টরিয়া নিশ্চল দাঁড়িয়ে রইলো।

এমন সময় হঠাৎ তীক্ষ্ণ্ণ বাঁকা রেখায় আকাশকে শতখান করে চিরে দিলে বিদ্যুতের তীব্র বিষম বাঁকা রেখা, তারপরেই কানফাটা আওয়াজ করে আলো ফেটে পড়লো, গড়িয়ে গেলো এক গুমগুমে ভয়ানক ধ্বনি, চারদিক থরথর করে কেঁপে উঠলো।

ওঠো, ওঠো—শিগগির উঠে পড়ো। ফার্গুসনের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর শুনে চমকে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন কেনেডি, জো-ও তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো-পরবর্তী আদেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলেন তারা। ঘুম তাড়াবার জন্য চোখ কচলাতে লাগলেন সজোরে।

আমরা কি নিচে নামবো? কেনেডি জিগেস করলেন।

না, তাহলে বেলুন ধ্বংস হয়ে যাবে, ফার্গুসন বললেন, বৃষ্টির আগে, প্রবল বাতাস শুরু হবার আগেই, আমাদের ওপরে উঠে যেতে হবে! এই বলে তিনি চুল্লির আগুন পুরোদমে চড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করলেন।

উষ্ণ জঙ্গলের এই ঝড় যেমন নিমেষের মধ্যে তার প্রচণ্ডতা নিয়ে হাজির হয়, তেমনি তুলকালাম কাণ্ড বোধহয় আর-কোথাও হয় না। আবার চোখ ধাঁধিয়ে দিলে তীব্র এক বিদ্যুতের বাঁকা রেখা, যেন আকাশকে এফোঁড়-ওফোড় করে ছিঁড়ে ফেলতে চাচ্ছে সে, তারপর ছোটো-বড়ো অসংখ্য বিদ্যুৎ থেকে-থেকে চমকে উঠলো, যেন সারা আকাশ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গেছে। আর তার সঙ্গে তাল রেখে নেমে এলো প্রবল বর্ষণ।

বড্ড দেরি হয়ে গেলো আমাদের, ফার্গুসনের গলায় ত্রাস আর চিন্তার ছাপ সুস্পষ্ট, এখন এই বৈদ্যুতিক আকাশ ছুঁড়ে এই গ্যাস-ভর্তি বেলুন নিয়ে আমাদের উঠতে হবে। বুঝতে পারছো তো কী সাংঘাতিক অবস্থা— যে-কোনো মুহূর্তে আগুন লেগে সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।

আরো-গনগনে করে তোলা হলো চুল্লির আগুন। বেলুন এমন তীব্রভাবে কেঁপে উঠলো, যেন ঝড় এসে তার ঝুঁটি ধরে নাড়াচ্ছে। বেলুনের চারপাশে যে-একটি আবরণ পরানো ছিলো তাতে অনেক বড়ো-বড়ো ফুটো হয়ে গেলো, আর হাওয়া এলো ভেতরে, ভীষণ আওয়াজ করে দাপাদাপি শুরু করে দিলে বাতাস, আর তার সঙ্গেই তাল বজায় রেখে বড়ো-বড়ো শিলাবৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো বেলুনের গায়ে। কেনেডির মুখ শুকিয়ে এলো, ফার্গুসনের কপালেও চিন্তার রেখা দেখা গেলো, কেবল জো-র মুখ দেখে বোঝবার উপায় নেই সে ভয় পেয়েছে কি না। বিদ্যুতের তীব্র-নীল শিখা কুটি করে শাসাতে লাগলো চারদিকে, কিন্তু তবু এতসব সত্ত্বেও, সমস্ত বাধা ঠেলে বেলুন ওপরে উঠতে লাগলো।

ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করুন! ঝড়ের বাতাসের মধ্যে ফার্গুসনের ভেজা গলা করুণ শোনালো, নিচে পড়লে তেমন জোরে পড়বো না, এই ভরসা থাকলেও যে-কোনো বিপদের জন্যে আমাদের প্রস্তুত হয়ে থাকতে হবে।

মৃত্যুর সঙ্গে প্রাণপণে যুঝতে-যুঝতে বেলুনটি যখন ঝোড়ো মেঘের ওপর উঠে এলো, তখন মাত্র পনেরো মিনিট কেটেছে। আগেও একবার উষ্ণ জঙ্গলের কালো ঝড়ের পাল্লায় পড়েছিলেন তারা, কিন্তু সেবার বিপদের আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিলো। ঝড়ের আওতার বাইরে চলে এসে বিদ্যুতের তীব্র বাদ-প্রতিবাদ সত্ত্বেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন তারা।

সমস্ত ব্যাপারটাই অদ্ভুত! নিচে ভীষণ মেঘ তার কালিমা দিয়ে সারা পৃথিবীটাকে যেন চিরকালের জন্যে ঢেকে ফেলে দিতে চাচ্ছে, অথচ তার ওপর দিয়ে ভিক্টরিয়া ভেসে যাচ্ছে নিরাপদ ও অনুকুল হাওয়ায়। আকাশ, নিচের মেঘ, চাঁদের আলোয় ঝলমল করে উঠেছে। আর কত তারা ফুটে আছে এই ওপরে, ঝিকমিক! আশ্চর্য! অদ্ভুত মাথার ওপর তারা-আঁকা আকাশ, আর নিচে উম্মত্ত কােলা মেঘের প্রচণ্ড দাপাদাপি।

এত সহজেই যে বিপদ থেকে বাঁচতে পেরেছি সেই জন্যে ঈশ্বরকে অনেব ধন্যবাদ! ফার্গুসন স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লেন। এখন প্রায় হাজার বারোশো ফিট ওপরে আছি আমরা, কাজেই আর-কোনো ভয় নেই।

কেনেডি বললেন, তাজ্জব অভিজ্ঞতা হলো কিন্তু! যে-পরিস্থিতিতে পড়েছিলুম, এখন তার কথা ভাবতেই আশ্চর্য লাগছে।

জো কেবল একবার চোখ তুলে তাকিয়ে ইঙ্গিতে সে কথায় সায় দিলে।

———
১. জুল ভের্ন তার এই ধারণাকে নিয়ে দ্য বারজাক মিশন নামে মস্ত একটি রহস্যময় উপন্যাস রচনা করেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর সেটি প্রকাশিত হয়েছিলো।