২.১২ ক্যাপ্টেন হুডের পঞ্চাশ নম্বর বাঘ

২.১২ ক্যাপ্টেন হুডের পঞ্চাশ নম্বর বাঘ

কর্নেল মানরো ও তার দলের আর-কোনো ভয় নেই কিংবদন্তির সেই আগুনজ্বালা মানুষটির কাছ থেকে। সেই মরাঠা বীরের ছিন্ন দেহ নিয়ে বেহেমথ বিস্ফোরণের মতো ফেটে পড়েছে। ফিরে এসে তিনি আর-কোনোদিন বলবেন না, জব্বলপুরের রাস্তায় যে প্রাণ দিয়েছে সে আমার ভাই বালাজি রাও। কিন্তু তার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবো আমি, মানরো–ভুলে যেয়ো না!

বিস্ফোরণের শব্দে গোরা সেপাইরা ছাউনি থেকে হুড়মুড় করে বেরিয়ে এলো। আর তাদের দেখেই নেতৃত্বহীন ও বিপন্ন ভারতীয় দলটা পালিয়ে গেলো।

পরিচয় দিতেই কর্নেল মানরোদের জব্বলপুরে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে খাদ্য, বিশ্রাম ও নিশ্চিন্তি পেলেন তিনি এতদিন পরে।

লরাকে নিয়ে যাওয়া হলো একটা মস্ত হোটেলে। সেখানে মানরোর শুশ্রষা ও যত্নে সেই পাণ্ডুর চোখে স্বাভাবিক দীপ্তি ফিরে এলো, আস্তে-আস্তে ফিরে এলো স্মৃতি ও স্বাস্থ্য। আর কিঞ্চিৎ সুস্থ হতেই সবাই ট্রেনে করে বই রওনা হয়ে পড়লেন।

কিন্তু ট্রেনে বসে বারেবারে তাদের মনে পড়তে লাগলো বেহেমথকে—সেই অতিকায়। বাষ্পচালিত শকট, যে কিনা তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে নিজে টুকরো-টুকরো হয়ে গেলো।

বেহেমথের ধ্বংসাবশেষ তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিন্তু নানাসাহেবের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। হয়তো তার অনুচররা তার মৃতদেহ বয়ে নিয়ে গিয়েছে অন্ত্যেষ্টির জন্যে। আর মৃতদেহ পাওয়া গেলো না বলেই মধ্যভারতে রচিত হলো মৃত্যুহীন এক অত্যুজ্জ্বল কিংবদন্তি—যার সারমর্ম হলো নানাসাহেব এখনও মরেননি, এখনও তিনি বেঁচে আছেন, আর তার অশান্ত ও আগুনজ্বালা পৌরুষ এখনও আবার বিদ্রোহের উদ্যোগে লিপ্ত হয়ে আছে। নানাসাহেবের যে মৃত্যু হতে পারে—এটা মধ্যভারত কিছুতেই বিশ্বাস করলে না।

নভেম্বর মাসের শেষ দিকে মানরোরা বম্বাই থেকে কলকাতা ফিরে এলেন। লরা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ, তবু চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছেন। মানরোর অনুরোধে ব্যাঙ্কস, মানরোর বাংলোতেই ছুটিটা কাটিয়ে যাবেন স্থির করেছেন। ম্যাক-নীল আর গৌমিও এখানেই কাজ করে। মঁসিয় মোক্রেরকে অবিশ্যি ইওরোপ ফিরে যেতে হবে শিগগিরই। আর মোক্লের যেদিন মানরোদের বাংলোয় বিদায় নিতে গেলো, সেদিন হুড আর ফক্সও সেখানে এসেছিলো—বিদায় নিতেই; তাদেরও ছুটি ফুরিয়ে এসেছে-তারা মাদ্রাজে ফিরে যাবে।

অনেক দিন পরে কলকাতার সেই বাংলায় চায়ের আসর জমে উঠলো।

তাহলে, হুড, মানরো বললেন, আমাদের সঙ্গে উত্তর ভারত বেড়াতে তোমার খারাপ লাগেনি তেমন? শুনে ভালো লাগলো। তবে একটা দুঃখ থেকে গেলো আমার : তোমার আর পঞ্চাশ নম্বর বাঘটা মারা হলো না!

কে বললে, মারিনি! হুড প্রতিবাদ করলে, পঞ্চাশ নম্বর বাঘটা ছিলো সবচেয়ে ভীষণ ও মারাত্মক। কেন? আপনাদের চোখের সামনেই তো তাকে গুলি করলাম।

আমাদের চোখের সামনে? কই দেখতে পাইনি তো? কখন? কোনখানে?

কেন—জব্বলপুরের রাস্তায়। হড হিশেব দাখিল করলে, উনপঞ্চশটা বাঘ, আর …আর কালোগনি? কী—পঞ্চাশ হলো না? কালোগনিকে আপনি ভারতবর্ষের রাজাবাঘ ছাড়া আর কীই-বা বলতে পারেন?

—–