০৯. অন্য পথ

০৯. অন্য পথ

সে যে কী কষ্ট, কী অসহ্য যন্ত্রণা, তা লিখে বোঝাতে পারি এমন ভাষা নেই আমার। কাকামণির কষ্ট সহ্য করবার ক্ষমতার কোনো তুলনা নেই। সঁতে দাঁত চেপে এগোতে লাগলেন তিনি। আর হাস? হাসের যে কোনো কষ্ট হচ্ছে এমন কোনো লক্ষণই চোখে পড়লো না। নীরবে চলতে লাগলো সে। শুধু পারলাম না আমি।

প্রথম দিনেই অল গেলো ফুরিয়ে। তখন জলের বদলে জিন পান করলাম আমরা। সেই তরল আগুনে পুড়ে যেতে চাইলে কণ্ঠনালী। বুক জুড়ে আকণ্ঠ পিপাসা, কিন্তু তবু ঐ জিনের বোতলের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করলো না আমার। বরং ক্রমেই আমার মনে হতে লাগলো চারদিকে যেন অসহ্য উত্তাপ, যেন আগুনের চুল্লির ভিতর দিয়ে চলেছি আমরা, মরুভূমিও বোধহয় এর চেয়ে ভীষণ নয়।

সত্যিসত্যিই শেষটায় আর পারলাম না। এক পাও চলবার মতো ক্ষমতা রইলো না আমার। কততবার যে চেতনা হারালাম তার কোনো হিশেব নেই। কাকামণি আর হান্‌স্‌ অনেক করে আমার চেতনা সঞ্চার করতে লাগলেন। ওদের মুখ দেখে বুঝতে পারছিলাম, অসহ্য পিপাসা ও নিদারুণ শ্রমে ওরাও ক্রমশ অবসন্ন হয়ে পড়ছেন।

কী করে যে পাঁচ দিন কাটলো, জানি নে। বহু কষ্টে শ্রান্ত তৃষ্ণাদীর্ণ দেহ টেনে-টেনে কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো বুকে হেঁটে আমরা সেই সুড়ঙ্গের মোহানার কাছে এসে পৌঁছলাম। বেলা তখন দশটা। সেখানে পৌঁছে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। জ্ঞান হারিয়ে পাথরের উপর পড়ে গেলাম।

যখন জ্ঞান ফিরলো, তখন দেখি কাকামণি আমাকে বুকে নিয়ে রুদ্ধ স্বরে বলছেন : হায়রে বাছা আমার! কেন তোকে সঙ্গে টেনে আনলাম!

কাকামণির এমন গাঢ় কথা শুনে আমার গলার কাছটা বেদনায় টন-টন করে উঠলো। আমার দু-হাতে ওঁর হাত তুলে নিয়ে একটু চাপ দিলাম। কাকামণির চোখ দিয়ে অঝোর ধারে অশ্রু ঝরতে লাগলো। নিজের বোতলটা আমার মুখের কাছে ধরে কাকামণি বললেন : এইখানে অল্প একটু জল আছে–

হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। স্বপ্ন, না সত্যি? পাগল না তো কাকামণি? বোতলে কি আর এক ফোঁটাও জল আছে?

কাকামণি বোতলটা আমার মুখে উপুড় করে ধরলেন। জল! সত্যিকার অল।

আমার আতপ্ত জিহ্বার উপরে যেন অমৃত ঝরে পড়লো। তৃপ্তিতে দুচোখ গাঢ় হয়ে এলো।

কাকামণি বললেন : অ্যাকজেল, এইটুকুই আমার শেষ সম্বল ছিলো, শেষ মুহুর্তের জন্য তুলে রেখেছিলাম। আর এক বিন্দুও জল নেই। আগেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এই পর্যন্ত আসতেই একেবারে মৃতপ্রায় হয়ে পড়বি। তাই জলটুকু তোর জন্যে রেখে দিয়েছিলাম। কততবার তৃষ্ণায় আকুল হয়ে ঐ বোতলের দিকে তাকিয়েছি, হাতও বাড়িয়েছি, মনে করেছি একফোঁটা জল খাই। কিন্তু খাইনি—তোর জন্যেই রেখে দিয়েছি। কজেল, অ্যাকজেল, আর আমাদের এক ফোঁটাও জল নেই।

কাকামণি খালি বোতলটা উপুড় করে ধরলেন। এবারে আমি কেঁদে ফেললাম। কাকামণি কি মানুষ, না অন্য কিছু?

ঐ একফোঁটা জলে আমার তৃষ্ণার জালা সামান্যই কমলো বটে, কিন্তু তাতেই শরীর বেশ সুস্থ হলো। গলা একেবারে শুকিয়ে গিয়েছিলো, এখন আবার খানিকটা ভিজলো, কথা বলবার ক্ষমতা ফিরে পেলাম। কাতর কণ্ঠে বললাম : কাকামণি, আর না। জল যখন ফুরিয়ে গেছে, তখন পৃথিবীতে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো গতি নেই। চলো, এখুনি আমরা ফিরে যাই।

কাকামণি নত মুখে চুপ করে আমার কথা শুনলেন। কোনো জবাব দিলেন না।

আমি আবার বললাম : ফিরতে আমাদের হবেই কাকামণি, ফিরতে আমাদের হবেই। তবে শেষ পর্যন্ত স্নেফেলের চুড়ো অবধি ওঠবার শক্তি থাকবে কি না কে জানে।

অক্ষুট কণ্ঠে কাকামণি বললেন : এততদুরে এসে শেষটায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাবো?

ফিরতে আমাদের হবেই। আরো জোর দিয়ে বললাম এবার। ফিরে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। আর এক মুহূর্তও দেরি করা ঠিক হবে না।

অনেকক্ষণ, অনেকক্ষণ চুপ করে রইলেন কাকামণি। বিবর্ণ মুখে হতাশার রঙ লাগলো। মুখ দেখে বোঝা গেলো, কী করবেন তা ঠিক করে উঠতে পারছেন না। কিন্তু অবশেষে আবার প্রতিজ্ঞার দীপ্তিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো ওঁর চোখমূখ। অনতিক্ষুট কণ্ঠে বললেন : তুই যে আশা হারিয়ে ফেলেছিল, তা আমি জানি, অ্যাকজেল। কিন্তু আমার শেষ সম্বলটুকু দিয়ে গলা ভিজিয়েও কি তোর। হারানো সাহস ফিরে এলো না? এখনও তুই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে বলছিস? তোর মনে কি আর কখনো আশার আলো জেগে উঠবে না, অ্যাকজেল?

এমন কথা আমি মোটেই আশা করিনি। এইরকম সঙ্কটময় মুহূর্তে কোনো মানুষ যে এরকম কথা বলতে পারে, আমার তা ধারণারও বাইরে ছিলো। অস্ফূট স্বরে বললাম : তবে কি তুমি ফিরতে চাও না কাকামণি?

কাকামণি বললেন : যখন পরিবেশ আমার অনুকূলে তখন কি আর ফিরতে পারি? তা কখনও হতে পারে না।

বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম। পরিবেশ তোমার অনুকূলে? তুমি কী বলছে কাকামণি?

কাকামণি বললেন : ঠিকই বলছি। জলের অভাবই তো এখন আমাদের সবচেয়ে বড়ো বাধা? তুই তো সেই কারণেই ফিরে যেতে চাস? কিন্তু ভেবে দ্যাখ, এবার আমরা ঠিক পথ ধরেই এগোবো। আর সাউজও এই পথ বরে গিয়েছিলেন। এই পথে যদি জল না থাকতো, তবে তিনি যেতে পেরেছিলেন কী করে? এই পথে গেলে আমরা জল পাবো।

শুধোলাম : কী করে তুমি অতোটা নিঃসন্দেহ হলে?

এই সুড়ঙ্গের ভিতরে খানিক দূর আমি গিয়েছিলাম। প্রস্তরের স্তরবিন্যাস দেখেই বুঝতে পেরেছি, এই পথে জল আছে।

কিন্তু যদি জল না পাওয়া যায়?

বাধা দিয়ে কাকামণি বললেন : কলম্বাসের আবিষ্কারের কাহিনী জানিস তো? যখন কলম্বাস ঠাণ্ডায় খিদেয় আর উপর্যুপরি বিপদের আবাতে ভেঙে পড়েছিলেন, যখন তার নাবিকেরা ঠিক করেছিলো আর অগ্রসর হবে না, তিনি তখন তাদের কাছ থেকে মাত্র তিনদিন সময় চেয়েছিলেন; বলেছিলেন-তিন দিনের মধ্যে যদি কোনো নতুন দেশের মাটি চোখে পড়ে, ভালো-নইলে নিশ্চয়ই দেশে ফিরে যাবেন। নাবিকেরা সহজেই তাকে সেই সময়টুকু দিয়েছিলো, আর তাই তিনি আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন আমেরিকা। আমি কিন্তু তোর কাছে তিন দিনও সময় চাইনে, অ্যাকজেল-শুধু আজকের দিনটা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা কর। যদি জল না পাওয়া যায়, তবে, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, তোর সরে কালকেই ফিরে যাবো।

এই কথায় রাজি না হয়ে উপায় ছিলো না বলে সম্মতি জানালাম। কাকামণি বললেন, বেশ। তবে এক সেকেণ্ডও দেরি না আর। শিগগির চল পশ্চিমের সুড়ঙ্গে।

অন্য পথে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। পা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কেন যেন মনে হলো এই গহ্বর থেকে জীবনে আর ফিরতে পারবে না। কে জানে, এই সুড়ঙ্গ ঘুরে-ফিরে কোথায় কোন অন্ধকারে গিয়ে শেষ হয়েছে। এবারে কখনো গাঢ়, কখনো ফিকে-নীল রঙের স্লেট-পাথরের প্রাচীর; প্রাচীরের গায়ে কোথাও সোনা, কোনোখানে বা প্ল্যাটিনামের আর সোনার সুতো বিনুনির মতো প্রাচীরের গায়ে।

স্লেট-পাথরের পর স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো ধাতব পদার্থের গ্রন্থিপ্রস্তর। রাশিরাশি অভ্র আমাদের টর্চের আলোয় হিরের মতো জ্বলতে লাগলো। সন্ধের কিছুক্ষণ আগে এই হিরের আলোর ঝলমলানি অন্ধকারের অতলে মিলিয়ে গেলো। আবার আমরা আভাহীন গ্রন্থি-প্রস্তরের প্রাচীরের পাশ দিয়ে চলতে লাগলাম।

আরো দু-ঘণ্টা কাটলো, কিন্তু জলের কোনো চিহ্ন দেখা গেলো না কোথাও। ক্রমশ আবার যন্ত্রণা বেড়ে চললো আমার। বুঝতে পারছিলাম কাকামণিদের আমাদের চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তবু থামলেন না কাকামণি। একটানা এগিয়ে চললেন।

ক্রমশ আমার আর হাঁটবার শক্তি রইলো না। পা যেন আর চলতে চাইছে না। তবু কোনোমতে ধুকতে ধুকতে এগিয়ে চললাম। তারপর একসময় অস্ফুট আর্ত কণ্ঠে চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে পাথরের উপর পড়ে গেলাম।

জ্ঞান ফিরতেই তাকিয়ে দেখি কাকামণি আর হান্‌স্‌ আমার পাশেই পাথরের উপরে শুয়ে ঘুমোচ্ছন। মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর তখন আমার অবস্থা। অতন্দ্র চোখে তাকিয়ে রইলাম অন্ধকারের দিকে। অনেকক্ষণ বাদে হঠাৎ দেখতে পেলাম, হান্‌স্‌ ঘুম থেকে উঠে একটা টর্চ হাতে নিয়ে আস্তে-আস্তে কোথায় যেন চলেছে। তবে কি আমাদের মৃত মনে করে পালিয়ে যাচ্ছে ও? প্রাণপণে চেঁচিয়ে উঠবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু শুকনো গলা থেকে কোনো শব্দই বেরুলো না। ইচ্ছে হলে ছুটে গিয়ে ধরি ওকে। কোনোমতেই শরীরটাকে টেনে তুলতে পারলাম না। ওদিকে হাসের টর্চের আলো অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো, পায়ের শব্দ ঢাকা পড়ে গেলো অসহ নীরবতায়। আর যন্ত্রণায়, দুর্ভাবনায় আমি কিছুক্ষণ বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলাম। তারপর হঠাৎ মনে হলো, হান্‌স্‌ তো ক্রমশ নিচে নেমে গেলো, উপরে তত উঠল না। নিচে তো পাতালের অন্ধকার! হান্‌স্‌ তবে গেলো কোথায়? পালিয়ে যাবার উদ্দেশ্য থাকলে তো উপরে উঠতো, নিচে নামলো কেন তবে?

কোনো কিছু বুঝবার ক্ষমতা আমার তখন ছিলো না। তাই আমি সেই অন্ধকারের মধ্যে চোখ মেলে পড়ে রইলাম শুধু। ঘণ্টাখানেক বাদে হাসের পায়ের শব্দ শুনতে পাওয়া গেলো।

হান্‌স্‌ ফিরে এসে কাকামণির ঘুম ভাঙালো ধাক্কা দিয়ে। বিড়বিড় করে কী যেন বললে তাঁকে।

জ্যা-মুক্ত তীরের মতো উঠে দাঁড়ালেন কাকামণি : জল। কোথায় জল? কোনখানে?

প্রথমটা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম, তারপর কোনোরকমে টেনে-হিচড়ে খাড়া করলাম শরীর। শুনতে পেলাম হান্‌স্ বলছে : ঐ যে দূরে-নিচের দিকে জল আছে। উল্লাসে অধীর হয়ে সজোরে ওর হাত ধরে ঝাঁকুনি দিলাম আমি। হাসের মুখ কিন্তু চীনেদের মতো নির্বিকার।

জলের আশা শরীরে নতুন শক্তি আনলো। তখনি জলের খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম আমরা। কোনোরকমে শ্রান্ত শরীর টেনে-টেনে হাজার-দুই ফুট নিচে নামলাম। এমন সময়ে কাকামণি হঠাৎ আমায় বললেন : কান পেতে শোন দিকিন, কিছু শুনতে পাচ্ছিস কি না?

রুদ্ধশ্বাসে কান পেতে শুনতে পেলাম, গ্রন্থি-পাথরের কঠিন দেয়াল ভেদ করে দূরাগত বজ্রনির্ঘোষের মতো কি যেন এক উদাত্ত আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ঐ শব্দ নিঃসন্দেহে কালের কল্লোলের।

যতো নিচে নামতে লাগলাম, ততই স্পষ্ট হতে লাগলো জলের কলতোল। মনে হলো, দেয়ালের ওপাশ দিয়ে একটি সঞ্জীবনী ঝরনা-ধারা বয়ে চলেছে। কিন্তু জল কই-জল তো চোখে পড়ছে না! হয়তো এরই নাম মৃগতৃষ্ণিকা।

আরো আধ ঘণ্টা কাটলো। আরো প্রায় মাইলখানেক নিচে নামলাম। এবার ক্রমশ জলের রাগিণী মিলিয়ে যেতে লাগলো। তখন আমরা ফিরে দাঁড়ালাম। দেয়ালের গায়ে যেখানে শব্দ সবচেয়ে স্পষ্ট ছিলো, হান্‌স্‌ সেখানে দাঁড়ালো। আমার আর দাঁড়াবার শক্তি ছিলো না। পাথরের উপরে বসে পড়লাম।

এই দেয়াল ভাঙবার পরে জল পাওয়া যাবে? সে তো অসম্ভব! এ দেয়াল ভাঙবার ক্ষমতা কার আছে? তাহলে মৃত্যু।–আমি মরবার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলাম।

হান্‌স্‌ আমার দিকে তাকিয়ে বিবর্ণভাবে ইসলো। তারপর আবার কান পাতলে দেয়ালের গায়ে। শুনবার চেষ্টা করলো অদেখা ঝরনার কলয়োল। তারপর ও ওর বিরাট গাঁইতিটা হাতে তুলে নিলে। কোনোদিকে না তাকিয়ে একমনে আস্তে-আস্তে পাথরে আঘাত করতে লাগলো। প্রায় এক ঘণ্টা কাটলো। হান্‌স্‌ তখনও পাথরে আঘাত করে চলেছে। শেষটায় কাকামণিও গিয়ে গাইতি ধরলেন।

আরো খানিকক্ষণ কাটলো। তারপর হঠাৎ একটা তীব্র শোঁ-শোঁ শষ শোনা গেলো। বিদ্যুৎবেগে একটা জলধারা বেরিয়ে এসে আছড়ে পড়লো অন্য পাশের দেয়ালে। জলের আঘাতে হান্‌স্‌ আর্তনাদ করে উঠলো।

জল ছুঁয়ে দেখি আগুনের মতো গরম, যেন টগবগ করে ফুটছে। উষ্ণ বালে সারা সুড়ঙ্গ ভরে গেলো। বন্ধনহীন উত্তপ্ত জলতর পাতালের দিকে তীব্রবেগে ছুটে চললো।

সেই জল অনেকক্ষণ ধরে ঠাণ্ডা করে আমরা পান করলাম। অমৃতের মতো লাগলো সেই সঞ্জীবনী ধারা। তারপর যখন আনন্দের প্রথম উদাস কালো, কাকামণি বললেন : এর নাম আজ থেকে হলো হাল নদী।

সানন্দে কাকামণির কথায় সায় দিয়ে উঠলাম আমি। হান্‌স্‌ কিন্তু তখনো এমন নির্বিকার, যেন কিছুই ঘটেনি। একপাশে বসে সে তখন জলের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে ছিলো।

কাকামণিকে বললাম : এমন করে জল নষ্ট করা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না আমাদের। জলের বোতলগুলি ভরে নিয়ে দেয়ালের রন্ধ্রটা বন্ধ করে দিই।

হেসে কাকামণি বললেন : ভয় নেই। এই উৎসধারা অফুরন্ত। দরকার নেই ঐ রন্ধ্র বন্ধ করে। জল যেমন যাচ্ছে, যাক,-নিচের দিকেই তো যাচ্ছে। আমরাও নিচেই যাচ্ছি। জলস্রোতের অনুসরণ করে চললে পথ হারানোরও ভয় থাকবে না, জলেরও অভাব ঘটবে না কখনো।

যদি উৎস ফুরিয়ে যায়?

ঘাড় নেড়ে কাকামণি বললেন : না, তা যাবে না। জলের এতো স্রোত দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে এর উৎস অনেক উপরে–এ উৎস ফুরোবে না।

উৎফুল্ল মনে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। অনেক দিনের পর আজ খেয়ে-দেয়ে ভালো করে ঘুমোনো যাবে!

অন্তহীন অন্ধকার ভেদ করে পাতালের দিকে জলধারা এগিয়ে চললো। ঠিক যেন আমাদের বিনি-মাইনের পথ-প্রদর্শক।