কবিস্মৃতি

নক্ষত্রের তৈরি পাল্‌কি দাঁড়ানো গলিতে, জীর্ণ বেশে
ক্ষুৎকাতর চেহারার বৃদ্ধ এক বসলেন এসে
রাজসিক ভঙ্গিমায়। ‘কে আপনি? মীর তকী মীর?’
সওয়ারী অভিজ্ঞ চোখ তুলে বলেন অত্যন্ত ধীর
কণ্ঠে, ‘আমি সেই সমুদ্রের তীর, যাতে ঢেউগুলি
ভীষণ আছড়ে পড়ে; এই হাতে মুঠো মুঠো ধূলি
নিমেষে হয়েছে স্বর্ণরেণু, আমি সেই ধ্বনি যার
সুরে সুরে একদা হয়েছে গুঞ্জরিত প্রাসাদ, পাহাড়।
আমি সেই লোক যাকে গুজেস্তা জামানা চেষ্টাশীল
উপেক্ষায় অপমানে করেছে শিকার রুক্ষ ঢিল
ছুড়ে ছুড়ে। ক্ষোভে আর অভিমানে দিল্লীর সিঁড়িতে
ছিলাম অপেক্ষমাণ কী উৎসুক গ্রীষ্ম কিংবা শীতে
খালিশ ভাষার টানে। দেখেছি আমার প্রিয়তম
শহরে বিধ্বস্ত বস্তি শত শত, ধ্বংসস্তূপ। যম
খেলেছে মড়ার খুলি নিয়ে কত বেরহম খেলা;
মানুষ তো নয়, যেন সব মাটির বিবর্ণ ঢেলা।
কখনো করিনি নত মাথা শত বিপর্যয়ে আর
ঘুরেছি ফকির হ’য়ে পথে পথে শুধু অহঙ্কার
ছিল এক অলঙ্কার।উজাড় হৃদয়, ছলছল
চোখ নিয়ে বিষাদে করেছি সৃষ্টি আজর গজল।
অথচ এ-ও তো ঠিক আমার প্রদীপ নেভানোর
জন্যে অনেকেই করেছিল অতিশয় তোড়জোড়।