তোমরা ও আমরা

           তোমরা হাসিয়া বহিয়া চলিয়া যাও 
            কুলুকুলুকল নদীর স্রোতের মতো। 
   আমরা তীরেতে দাঁড়ায়ে চাহিয়া থাকি,
            মরমে গুমরি মরিছে কামনা কত। 
   আপনা-আপনি কানাকানি কর সুখে,
   কৌতুকছটা উছসিছে চোখে মুখে,
   কমলচরণ পড়িছে ধরণী-মাঝে,
   কনকনূপুর রিনিকি ঝিনিকি বাঝে। 
   অঙ্গে অঙ্গ বাঁধিছে রঙ্গপাশে,
            বাহুতে বাহুতে জড়িত ললিত লতা। 
   ইঙ্গিতরসে ধ্বনিয়া উঠিছে হাসি,
            নয়নে নয়নে বহিছে গোপন কথা। 
   আঁখি নত করি একেলা গাঁথিছ ফুল,
   মুকুর লইয়া যতনে বাঁধিছ চুল। 
   গোপন হৃদয়ে আপনি করিছ খেলা,
   কী কথা ভাবিছ, কেমন কাটিছে বেলা। 
   চকিতে পলকে অলক উড়িয়া পড়ে,
            ঈষৎ হেলিয়া আঁচল মেলিয়া যাও— 
   নিমেষ ফেলিতে আঁখি না মেলিতে,ত্বরা 
            নয়নের আড়ে না জানি কাহারে চাও। 
   যৌবনরাশি টুটিতে লুটিতে চায়,
   বসনে শাসনে বাঁধিয়া রেখেছ তায়। 
   তবু শতবার শতধা হইয়া ফুটে,
   চলিতে ফিরিতে ঝলকি চলকি উঠে। 
   আমরা মূর্খ কহিতে জানি নে কথা,
            কী কথা বলিতে কী কথা বলিয়া ফেলি। 
   অসময়ে গিয়ে লয়ে আপনার মন,
            পদতলে দিয়ে চেয়ে থাকি আঁখি মেলি। 
   তোমরা দেখিয়া চুপি চুপি কথা কও,
   সখীতে সখীতে হাসিয়া অধীর হও,
   বসন-আঁচল বুকেতে টানিয়া লয়ে 
   হেসে চলে যাও আশার অতীত হয়ে। 
   আমরা বৃহৎ অবোধ ঝড়ের মতো 
            আপন আবেগে ছুটিয়া চলিয়া আসি। 
   বিপুল আঁধারে অসীম আকাশ ছেয়ে 
      টুটিবারে চাহি আপন হৃদয়রাশি।  
   তোমরা বিজুলি হাসিতে হাসিতে চাও,
   আঁধার ছেদিয়া মরম বিঁধিয়া দাও,
   গগনের গায়ে আগুনের রেখা আঁকি 
  চকিতে চরণে চলে যাও দিয়ে ফাঁকি। 
   অযতনে বিধি গড়েছে মোদের দেহ,
            নয়ন অধর দেয় নি ভাষায় ভরে। 
   মোহন মধুর মন্ত্র জানি নে মোরা,
            আপনা প্রকাশ করিব কেমন করে?
   তোমরা কোথায় আমরা কোথায় আছি,
   কোনো সুলগনে হব না কি কাছাকাছি। 
   তোমরা হাসিয়া বহিয়া চলিয়া যাবে,
   আমরা দাঁড়ায়ে রহিব এমনি ভাবে! 
Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *