প্রেতের নিকট থেকে

রাত এক্কেবারে চুপ মেরে গেছে। ধরে নিচ্ছি,
এ মুহূর্তে তুমি গা এলিয়ে
দিয়েছ শয্যায়,
বালিশে ছড়ানো চুল, যে বইটা পড়ছিলে তার শব্দশোভা
স্মৃতিতে প্যাস্টেল চিত্র। তুমুল ঘুরছে চকচকে
পাখার তিনটি ব্লেড। বাম পাশে ঘুরে তুলে নিলে
হাতঘড়ি, জ্বলে রাত বারোটা, আয়ত
চোখে জ্বালা, ঘুম বিছানার চারদিকে থই থই, ধু-ধু চোখে নেই,
বারবার শুধু মনে পড়েছে তাকে, যে তোমার প্রিয়
স্বপ্ন চেটেপুটে
দিয়েছে গা ঢাকা লুটেরার মতো। তুমি
অতীতের মঞ্জরী ফুটিয়ে চিদাকাশে
তার অবয়বহীন মাথা বুকে টেনে নিয়ে পোড়াচ্ছ নিজেকে।
একটি প্রেতের কাছে তোমার হৃদয়
এখনো গচ্ছিত রেখে অস্তিত্বে লালন করো ধোঁয়াটে শ্মশান।

রাত্রির ভেতরে রাত্রি গড়ায় কেবলি, যেন কালো উন্মাতাল
ঢেউয়ের ভেতরে ঢেউ; জেঁকে আসে ঘুম
তোমার শরীরে রাত দেড়টায়। ঝিঁ ঝিঁ পোকা শূন্যতার গায়ে
লেপ্টে থেকে ক্রমাগত ডেকে যায় আর
তখন তোমার দরজার কিয়দ্দূরে একজন
দীর্ণ কবি, তোমাকে যে তার প্রিয় প্রেমের কবিতা
ব্যাকুল শোনাতে দীর্ঘ সময় নিয়েছে,
রয়েছে দাঁড়িয়ে ঠায় সেই কবে থেকে। তুমি তাকে
তোমার অধর, স্তন শ্রোণীর লুণ্ঠনকারী পুরুষের মোহে
দেখতে পাওনি। হোশ-হাওয়াসবিহীন
বেখাপ্পা কবির দিকে চটুল তাকিয়ে
অকস্মাৎ রাত্রি হো হো হেসে ওঠে বেশরম গণিকার মতো।

বন্ধ দরজার ঔদাস্যের গূঢ় নিস্তব্ধতা থেকে
কুড়িয়ে স্বপ্নের ছাই জবুথবু কবি

হেঁটে যায় বড় একা রাত্রির হাওয়ায়। জপছেন
কানে কানে তার একজন
মরমী সাধক-বারবার
কী ঘর বানাও তুমি শূন্যের মাঝার? মগজের
ভেতরে গুঞ্জন তার। ফিরে গিয়ে নিজস্ব ডেরায়
রাত জেগে খাতার পাতায়
সারি সারি অক্ষরের গায়ে ভোরের আবীর নিয়ে
প্রেতের নিকট থেকে কেড়ে নিতে চায় ছায়াময় জয়োল্লাস।