সে যখন বিদায় নিয়ে গেল , তখন নবমীর চাঁদ অস্তাচলে যায় । গভীর রাতি নিঝুম চারি দিক , আকাশেতে তারা অনিমিখ , ধরণী নীরবে ঘুমায় । হাত দুটি তার ধরে দুই হাতে মুখের পানে চেয়ে সে রহিল , কাননে বকুল তরুতলে একটিও সে কথা না কহিল । অধরে প্রাণের মলিন ছায়া , চোখের জলে মলিন চাঁদের আলো , যাবার বেলা দুটি কথা বলে বনপথ দিয়ে সে চলে গেল । ঘন গাছের পাতার মাঝে আঁধার পাখি গুটিয়ে পাখা , তারি উপর চাঁদের আলো শুয়েছে , ছায়াগুলি এলিয়ে দেহ আঁচলখানি পেতে যেন গাছের তলায় ঘুমিয়ে রয়েছে । গভীর রাতে বাতাসটি নেই — নিশীথে সরসীর জলে কাঁপে না বনের কালো ছায়া , ঘুম যেন ঘোমটা-পরা বসে আছে ঝোপেঝাপে , পড়ছে বসে কী যেন এক মায়া । চুপ করে হেলে সে বকুল গাছে , রমণী একেলা দাঁড়ায়ে আছে । এলোথেলো চুলের মাঝে বিষাদমাখা সে মুখখানি , চাঁদের আলো পড়েছে তার'পরে । পথের পানে চেয়ে ছিল , পথের পানেই চেয়ে আছে , পলক নাহি তিলেক কালের তরে । গেল রে কে চলে গেল , ধীরে ধীরে চলে গেল , কী কথা সে বলে গেল হায় , অতি দূর অশথের ছায়ে মিশায়ে কে গেল রে , রমণী দাঁড়ায়ে জোছনায় । সীমাহীন জগতের মাঝে আশা তার হারায়ে গেল , আজি এই গভীরে নিশীথে , শূন্য অন্ধকারখানি মলিন মুখশ্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে রহিল একভিতে । পশ্চিমের আকাশসীমায় চাঁদখানি অস্তে যায় যায় । ছোটো ছোটো মেঘগুলি সাদা সাদা পাখা তুলি চলে যায় চাঁদের চুমো নিয়ে , আঁধার গাছের ছায় ডুবু ডুবু জোছনায় ম্লানমুখী রমণী দাঁড়িয়ে ।
Leave a Reply