কৃষ্ণকলি

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি , 
       কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক । 
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে 
       কালো মেয়ের কালো হরিণ - চোখ । 
ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে , 
মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে । 
        কালো ? তা সে যতই কালো হোক 
        দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । 
  
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে 
            ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই , 
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে 
            কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই । 
আকাশ - পানে হানি যুগল ভুরু 
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু । 
            কালো ? তা সে যতই কালো হোক 
            দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । 
  
পুবে বাতাস এল হঠাৎ ধেয়ে , 
            ধানের খেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ । 
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা , 
            মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ । 
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে 
আমিই জানি আর জানে সে মেয়ে । 
            কালো ? তা সে যতই কালো হোক 
            দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । 
  
এমনি করে কালো কাজল মেঘ 
            জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান কোণে । 
এমনি করে কালো কোমল ছায়া 
            আষাঢ় মাসে নামে তমাল - বনে । 
এমনি করে শ্রাবণ - রজনীতে 
হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে । 
            কালো ? তা সে যতই কালো হোক 
            দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । 
  
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি , 
            আর যা বলে বলুক অন্য লোক । 
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে             
            কালো মেয়ের কালো হরিণ - চোখ । 
মাথার ' পরে দেয় নি তুলে বাস , 
লজ্জা পাবার পায় নি অবকাশ । 
            কালো ? তা সে যতই কালো হোক 
দেখেছি তার কালো হরিণ - চোখ । 
Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *