আত্মজীবনীর খসড়া

আত্মজীবনীর খসড়া

বাঁশি বাজানো শিখতে শুরু করেছিলুম উঠতি বয়সে
সবাই বললে, ওরে, ও কম্ম করিস নি
গরিবের ছেলে দিন রাত বাঁশি ফুকলে নির্ঘাৎ টি বি
ত্রিপুরা থেকে কিনে আনা প্রিয় বাঁশিটি দান করে দিলুম এক বন্ধুকে
সে দুচারদিন ফুঁ দিতে না দিতেই
মথুরার রাজা হয়ে চলে গেল
আমায় টি বি পোকায় খায় নি, খেয়েছে পঙ্গপাল!

পকেটে যখন ট্রামবাস ভাড়ার বিষম টানাটানি
তখন এক শুভানুধ্যায়ী প্রস্তাব দিলে, একটি প্রাক্তন সুন্দরীর
আত্মজীবনী লিখে দিতে পারবি?
সে নাকি এক সময় ছিল বাংলা সিনেমার বিবি, এখন কোনো এক
সাবান ব্যবসায়ীর রাঁঢ়
স্ত্রীলোকটির কিঞ্চিৎ মাথার গোলমাল, কিন্তু পারিশ্রমিক দেবে ভালোই
মন্দ নয়, বলে আমি পা বাড়াতেই মঞ্চ থেকে নেমে এসে
শিশির ভাদুড়ী আমার গালে কষালেন এক থাপ্পড়
আমি রাগের মাথায় ঝটিতি কিছু করে ফেলার আগেই
তিনি নিজেই ঘুরে পড়ে গেলেন মাটিতে, এবং
অক্কা!
এরপর নির্জন রাতে নিজের পৌরুষটি হাতে ধরে বসে থাকা ছাড়া
আর উপায় কী?

তারপর সেই এক দাঙ্গা হাঙ্গামার সাড়া জাগানো বছরে
সামান্য রুখু দাড়ি রেখেছিলুম ও লুঙ্গি পরে ঘুড়ি ওড়াতুম বলে
বেমক্কা আমাকে সন্দেহ করলো মুসলমান বলে হিন্দুপাড়ার বীরপুঙ্গবেরা
তখন নিরীহ মুসলমান ডিমওয়ালা কিংবা শালকরদের।
মাথা ঘেঁৎলে দেবার জন্য বেরিয়েছে অসংখ্য বাঁশ ও
শাবল
ওদিকে অন্য কোনো পাড়ায় ছোটজাতের হিন্দুরাও
কচুকাটা হচ্ছে টপাটপ
তখন একজন আমাকে বললো, পেন্টুল খুলে দেখা তো
শুয়োরের বাচ্চা
আমি প্রকৃত শুয়োরের বাচ্চার মতন উদোম হতেই
তাবৎ পৃথিবী কেঁপে উঠলো জন্তু-জানোয়ারদের পুলক শীৎকারে
বস্তুত আমার ঐ ব্যাপারটির সঙ্গে ষাঁড় না শুয়োরের বেশি মিল,
সে সম্পর্কে আমি এখনও নিশ্চিত নই!

বন্ধু বলে যাদের জড়িয়ে ধরতে গেছি, তারা পিঠ ফেরাতেই
ঢেলেছে বিষ
সেই বিষে আমার স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে, নির্জনতা খুঁজতে গেছি রঙ্গালয়ে
এই তো দেখছি কয়েকটি বহুরূপী এখানে সেখানে লেখা ছাপাবার জন্য
গোপনে উমেদারি করে যায়,
আবার
বাইরে গ্যালারি কাঁপাবার জন্য তুলে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার জিগির
কেউ গায়ে জড়িয়েছে সুবিধেবাদী মার্ক্সবাদের নামাবলী, মাথার টিকিতে
জবাফুলের মতন বেঁধে নিয়েছে
লেনিনের নাম
তারপর দুরন্ত সত্তর দশকে চেয়ার ভেঙে সামান্য আহত হয়ে
কমরেড মাও সেতুঙ আমায় বললেন,
চলো, নদীতে গিয়ে ওসব অতি বিপ্লবীপনা ধুয়ে ফেলি
আমি জলের নামে ডরাই শুনে উনি হেসে বললেন, ভয় কী,
আমি তোমায় সাঁতার শেখাবো
এরকম কথা না রাখা যেন ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব ডিগবাজি
তিনি নিজেই টুপ করে ড়ুবে গেলেন বিস্মৃতির গভীরে
আমি এখনও খাবি খাচ্ছি…