বসুধৈব

বসুধৈব

ট্রেনে ধূপ বিক্রি করতে উঠলো যে নুলো ছেলেটি
সে কি আমার কোনো পিসতুতো ভাই?
থুতনির ডৌলে কোথায় যেন বহুকাল আগেকার আমার
কুমারী পিসিমার আদল
জিজ্ঞেস করতে ভরসা হয় না, যদি কাঁধে চেপে বসে, যদি
আমার হাত দুখানা সে ধার চায়?
আমি মুখ ফিরিয়ে নিই, ধূপের গন্ধ আমার সহ্য হয় না।

বারাসত বাস গুমটিতে জানলার কাছে যে হাত পেতে দাঁড়ালো।
সে আমার ছোট মাসি হতেই পারে না
সে তো হারিয়ে গেছে মৃত্যুর চেয়েও কঠিন বিস্মৃতিতে
তার নামের ওপর জন্মে গেছে অসময়ের লতাগুল্ম
তবু সেই লম্বা ভিখারিনীটি হঠাৎ হাত সরিয়ে নিয়ে
গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কেন?
সেই চোখে যেন ছেলেবেলার রান্নাঘরের বারান্দার
পারিবারিক গল্প
পুকুর থেকে স্নান সেরে উঠে আসবার মন আঁচলে জড়ানো গা
আমি কিছু বলার আগেই সে চলে গেল উল্টোদিকের অন্ধকারে
ভিখারিনীরও এত অহঙ্কার?

অ্যাকসিডেন্টে হেলে পড়া ট্রাকটির ড্রাইভারের দিকে চাইতেই
আমার বুক কাঁপলো কেন?
ঐ চওড়া কপাল, বাজপাখির মতন নাক, শাজাহান না?
কলেজ জীবনে টাকা ধার দিয়ে আর ফেরৎ নেওয়া হয়নি, আমার চেয়ে
তারই বেশি লজ্জা ছিল সেইজন্য
সেই শাজাহান তো মার্কিন দেশে মহাশূন্য রকেটের নাট-বল্টু লাগায়
সে নাকি কিনেছে কোনো দ্বীপ, সেখানে নিজস্ব পতাকা ওড়াবে
তবু ট্রাক ড্রাইভারের থ্যাৎলানো মুখখানায় জ্বলজ্বল করছে চোখ,
সে অবিকল শাজাহান হয়ে বলছে, চিঠির উত্তর দিসনি কেন,
রাস্কেল?
বড় রাস্তা ছেড়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে একটা গলির মধ্যে ঢুকে গেলেন
আমার ছোটকাকা, আমার বাবার কোনো ভাই-টাই ছিল না কখনো…