বাংলা বর্জিত বিশ্ব কবিসম্মেলন

বাংলা বর্জিত বিশ্ব কবিসম্মেলন

সেটা ছিল সত্যিকারের একটি বিশ্ব কবিসম্মেলন। সম্ভবত, ভারতে প্রথম। কিন্তু সেখানে বাংলার কোনও স্থান ছিল না। তার জন্য অবশ্য আমি মোটেই দায়ী নই, যদিও আমি উপস্থিত ছিলাম সেখানে।

১৯৮৯-এ ভোপালে একটি কবিসম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। সেবারের সেই কবিসম্মেলনের নাম ছিল ‘অন্তর্ভারতী’, ভারতের সংবিধান স্বীকৃত সবকটি ভাষায় কয়েকজন করে কবি আমন্ত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন, শোনা গিয়েছিল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিভিন্ন কণ্ঠস্বর।

সেবারই অশোক বাজপেয়ী একদিন কথায়-কথায় বলেছিল, দ্যাখো না, এরপরে এখানে সারা এশিয়া কবিসম্মেলনের ব্যবস্থা করব, তার পরের বছর বিশ্ব কবিসম্মেলন!

তখন ঠিক বিশ্বাস করিনি, মনে হয়েছিল ওটা অশোকর স্বপ্ন। যদিও অশোক ঠিক স্বপ্নবিলাসী ধরনের নয়, কাজের মানুষ, খাটতে পারে প্রচুর এবং সে বড় করে চিন্তা করে। অনেকের জীবনবৃত্তটাই ছোট হয়, এই যুবকটির আকাঙ্ক্ষা সীমাহীন। সত্যিই পরের বছর ভারত ভবনে সারা এশিয়ার কবিসম্মেলন হয়েছিল, এবং তারপরে বিশ্ব কবিসম্মেলনের মতন একটা বিরাট ব্যাপার অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠিত হল।

অশোক বাজপেয়ীকে অনেকদিন ধরে চিনি। প্রথম যেবার দেখা হয়, তখনও ভারত ভবন তার স্বপ্নে ছিল না। সাহিত্য আকাদেমির একটি সেমিনার হয়েছিল, ‘সমাজের নীচের তলার মানুষের কবিতা’ এই বিষয়ে, মধ্যপ্রদেশ সরকার সাহিত্য আকাদেমিকে ভোপালে জায়গা দিয়েছিল সেই সেমিনারের জন্য। অশোক বাজপেয়ী একজন আই এ এস অফিসার, মধ্যপ্রদেশ সরকারের সংস্কৃতি দফতরের সচিব, সে-ই প্রধান ব্যবস্থাপক। অশোক নিজেও একজন কবি ও প্রাবন্ধিক, হিন্দি ও ইংরেজিতে লেখে, কিন্তু উদ্যমী পুরুষ হলেও সে কবি হিসেবে লাজুক, তার আয়োজিত কবি সম্মেলনগুলিতে সে নিজের কবিতা কখনও পাঠ করে না, কবি হিসেবে নিজেকে জাহির করার কোনও চেষ্টা কখনও দেখিনি।

কিন্তু সে কবিতা ভালোবাসে, কবিতাপাগল বলা যায়। অন্য কবিদের সে কীভাবে সাহায্য করে, তার একটা উদাহরণ দিই। সব রাজ্য সরকারের মতন মধ্যপ্রদেশ সরকারও প্রতিবছর বই কেনার জন্য গ্রন্থাগারগুলিকে অনেক টাকার অনুদান দেয়। যেহেতু কবিতার বই কম বিক্রি হয়, লাইব্রেরিগুলো তো কিনতেই চায় না, সেইজন্য মধ্যপ্রদেশ সরকার শর্ত করে দিয়েছে যে অনুদানের টাকায় কেনা বইগুলির মধ্যে অন্তত কুড়ি পারসেন্ট কবিতার বই রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, সরকারের কাছে অর্থ আদায় করার আগে প্রকাশকদের প্রমাণ দাখিল করতে হবে যে, তাঁরা কবিদের প্রাপ্য রয়ালটি চুকিয়ে দিয়েছেন। মধ্যপ্রদেশের কবিদের এখন প্রকাশক পাওয়ার সমস্যা নেই এবং কবিতা লিখে তাঁরা কিছু টাকাও পান।

ভারতের প্রত্যেকটি রাজ্য সরকারেরই একটি সংস্কৃতি দফতর আছে, এবং একজন করে আই এ এস অফিসার তার সেক্রেটারি। কিন্তু আর কোনও রাজ্য সরকারের কালচারাল সেক্রেটারির বিশেষ কোনও ক্রিয়াকলাপের পরিচয় আমরা পেয়েছি কি? সকলেই চাকরির কর্তব্য সম্পন্ন করেন। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের এই সরকারি অফিসারটি ওপর দুটির বিভাগের দায়িত্ব (সংস্কৃতি ও পর্যটন), তারপরেও অন্য অনেককিছু করার জন্য তার অদম্য উৎসাহ। সেই উদ্যম থেকেই ভারত ভবনের প্রতিষ্ঠা।

গল্প শুনেছি, মধ্যপ্রদেশের এই আই এ এস অফিসারটি বছরদশেক আগে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে বিনীতভাবে প্রশ্ন করেছিলেন, স্যার, এ-রাজ্যের বার্ষিক বাজেটের মাত্র এক পারসেন্টও কি সংস্কৃতির জন্য খরচ করা যায় না?

রাজনৈতিক নেতারা সংস্কৃতি নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামান না। সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করলে ভোট আদায়ের তো কোনও অসুবিধা নেই। তবু মাত্র এক পারসেন্ট শুনলে মনে হয় সে টাকাটা কিছুই না। দুর্বল মুহূর্তে সেই মুখ্যমন্ত্রী নাকি বলেছিলেন, হাঁ, হাঁ, মিল যায়গা। মধ্যপ্রদেশে বার্ষিক বাজেট কত তা আমি জানি না, ধরা যাক, যদি পাঁচশো কোটি টাকা হয়, তবে তার এক পার্সেন্ট পাঁচ কোটি, সে-ও অনেক টাকা। সেইভাবে ভারত ভবনের শুরু।

এখন ভোপালের বড় হ্রদটির গায়ে ভারত ভবন শিল্প সংস্কৃতির এক বিশাল কেন্দ্র, যে বাড়িটি স্থাপত্যকলার দিক দিয়েও একটা চমৎকার নিদর্শন। এখানে নাট্যচর্চা, সঙ্গীত, চিত্রশিল্প এবং কাব্যসাহিত্য নিয়ে নিয়মিত অনুষ্ঠান ও ওয়ার্কশপ হয়। এই ভবনটি যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন এখানকার চিত্রকলা বিভাগের পরিচালক স্বামীনাথন পরীক্ষামূলকভাবে কুলি-কামিনদের হাতে রং তুলি দিয়ে ছবি আঁকতে বলতেন মাঝে-মাঝে। এক আদিবাসী রমণী, মাথায় করে ইট বওয়া যার কাজ, তার আঁকা ছবি দেখে বিশেষজ্ঞরা হতবাক। সেই রমণীটি এখন নামকরা শিল্পী।

বিশেষ উল্লেখযোগ্য এই যে, এই কেন্দ্রটির নাম ভোপাল ভবন কিংবা মধ্যপ্রদেশ ভবন নয়, এখানে সারাভারতের শিল্পী-গায়ক-লেখকদের ডেকে আনা হয়। আর কোনও রাজ্যে এমন সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি নেই। আমাদের পশ্চিমবাংলায় সরকার যেমন বাঙালি লেখক শিল্পীদের প্রতি বছর নানান পুরস্কার দেন, সেইরকম প্রত্যেক রাজ্যেই এখন স্থানীয় লেখক-শিল্পীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে। অন্য রাজ্যের লেখক শিল্পীদের কেউই কিছু দেন না। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ সরকার সঙ্গীত, অভিনয়, কবিতার জগতের বিশিষ্ট প্রতিভাবানদের প্রতিবছর দেড় লক্ষ টাকার এক একটি পুরস্কার দেন, সেই পুরস্কার প্রাপকেরা যে-কোনও রাজ্যের অধিবাসী হতে পারেন। যেমন বাঙালিদের মধ্যে থেকে শম্ভ মিত্র এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায় এই পুরস্কার পেয়েছেন। আমরা বাঙালিরা প্রাদেশিকতাকে অবজ্ঞা করি। কিন্তু আমাদের এখানে এরকম কোনও ব্যবস্থা নেই।

ভারত ভবন এখন থেকে মধ্যপ্রদেশের সরকারি সংস্থা নয়। একটি পৃথক ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত, অর্থাৎ মন্ত্রিসভা অদলবদলের ওপর এর ভাগ্য নির্ভর করে না। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে এই সংস্থা একটি বার্ষিক অনুদান পায়, কখনও-কখনও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকেও কিছু পাওয়া যায়। যেমন, এই বিশ্ব কবিসম্মেলনের সঙ্গে জওহরলাল নেহরুর শতবার্ষিকী উৎসব যুক্ত করা হয়েছে। নেহরু কবিতাপ্রেমিক ছিলেন, এই যোগাযোগ অসংগত নয়, সেইজন্য নেহরু শতবার্ষিকী কমিটিও কিছু সাহায্য করেছেন।

যেহেতু এতবড় কর্মকাণ্ডটি চলছে অনেকটাই অশোক বাজপেয়ীর নিরলস উদ্যমে, সেহেতু তাঁর অনেক শত্রু ও নিন্দুক যে থাকবেই, তা বলাই বাহুল্য। পরনিন্দা তো আমাদের ন্যাশনাল পাস্টাইম। যারা নিজেরা কিছু করে না, তারাই অন্য কারুকে কিছু করতে দেখলেই তারস্বরে নিন্দে শুরু করে দেয়। ভারত ভবনের কাজেকর্মে হয়তো কিছু কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে। আমি ওঁদের সঙ্গে প্রতক্ষ্যভাবে যুক্ত নই, মাঝে-মাঝে অতিথি হয়ে যাই। গিয়ে দেখেছি, এরকম প্রতিষ্ঠান সারা ভারতে আর একটিও নেই, সারাভারতের শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত-নাটক নিয়ে এখানে যতখানি কাজ হচ্ছে তার সিকি ভাগও কোথাও হয় না। তবু কেউ-কেউ যেন ভারত ভবনটাকে সমূলে উৎপাটিত করে লেকের জলে ফেলে দিতে পারলেই খুশি হন।

পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলা অনুপস্থিত

ভোপাল যাওয়ার পথে দিল্লি এয়ারপোর্টে ওড়িশার কবি সৌভাগ্য মিশ্রর সঙ্গে দেখা। সৌভাগ্যের মুখেই শুনলাম, ওঁদের সাতজনের একটি দলকে ভোপাল সম্মেলনে যোগ দিতে পাঠাচ্ছেন ওড়িশা সরকার। ওঁরা সরকারি প্রতিনিধি। পরে জানা গেল, নেহরু শতবার্ষিকী উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে এই বিশ্ব কবিসম্মেলনে যোগদানের জন্য ভারত ভবনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক রাজ্য সরকারকে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। রাজ্য সরকার গাড়ি ভাড়া দেবেন, ভোপালে আতিথ্যের ভার ভারত ভবনের। ভারতের অনেক রাজ্য থেকেই প্রতিনিধিদল গেছে, অসম থেকে ওড়িশা থেকেও গেছে, পশ্চিমবঙ্গ বাদ। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই অনুরোধপত্রের উত্তরই দেননি।

আমাকে অশোক বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য। এর সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। গাড়িভাড়া, আতিথ্য ভারত ভবনই দেবে।

সেই বিশ্ব কবিসম্মেলনের সাত দিনের অনুষ্ঠানে বিদেশি কবিদের প্রাধান্য থাকাই স্বাভাবিক, সেইজন্যই ভারতীয় কবিদের অংশগ্রহণ সীমিত করতে হয়েছে, সব ভাষার কবিদের রাখা যায়নি, সাত দিনের জন্য মোট সাতজন। তার মধ্যে অবশ্য বাংলার একজন ছিলেন। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং আর কয়েকজন এর আগে ভারত ভবনের নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন, সুতরাং এবারে শঙ্খ ঘোষকে নির্বাচন করা খুবই যুক্তিযুক্ত হয়েছিল। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, শঙ্খ ঘোষ খুবই লাজুক প্রকৃতির এবং নিভৃতচারী ধরনের মানুষ, ইদানীং তাঁকে কোনও কাব্যপাঠের আসরে দেখাই যায় না। ভোপালের সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি প্রথমে সম্মত হয়েছিলেন, অনুষ্ঠাসূচিতে তাঁর নাম উঠে গিয়েছিল কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত আর গেলেন না।

প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকেও কোনও কবি আসেননি কিংবা আসতে পারেননি। অতএব, এই বিশ্ব কবিসম্মেলনে একটিও বাংলা শব্দ উচ্চারিত হল না।

আমার আকর্ষণ

কবিতা পাঠ্য না শ্রাব্য, এই নিয়ে বির্তক আজও শেষ হয়নি। আমি এর মধ্যে কোনও একটি মতে স্থিরবিশ্বাসী নই; একা-একা ছাপা বই থেকে কবিতা পাঠ করে আমি বেশি আনন্দ পাই তা ঠিক, আবার কখনও-কখনও সঠিক, সুকণ্ঠ আবৃত্তি শুনতেও আমার ভালো লাগে। কবিদের স্বকণ্ঠে শোনা আমার সহ্য হয় না। মানুষের মস্তিষ্ক নাকি খুব ভালো জিনিস পঁয়তাল্লিশ মিনিটের বেশি নিতে পারে না।

আমার আরও কয়েকটি আকর্ষণ ছিল। বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিদের কাছাকাছি যাওয়া কিংবা তাঁদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করার ব্যাপারে আমার কিছুটা সংকোচ আছে। এবারে আমন্ত্রিত কবিদের মধ্যে পাঁচ-সাতজন যখন-তখন নোবেল প্রাইজ পেয়ে যেতে পারেন, তাঁদের সঙ্গে আগে থেকে খানিকটা ঘনিষ্ঠতা করে নেওয়ার ইচ্ছে আমার বিন্দুমাত্র ছিল না। তবে, ওই তালিকায় আমার কয়েকজন পূর্ব পরিচিত বন্ধুস্থানীয়ও ছিলেন। যেমন অ্যালেন গিনসবার্গের সঙ্গে বহুদিনের চেনা। তিন বছর আগে অ্যালেনের মধ্যস্থতাতেই ভজনেসেনস্কির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল যুগোস্লাভিয়ায়, স্করপিয়া নামে একটা ছোট শহরের এক কাফেতে বসে আড্ডা মারার লোভ ছিল। লেওপোলড সেঘরের দুটি কবিতা আমি অনুবাদ করেছিলাম অনেককাল আগে। একজন কালো মানুষের পক্ষে ফরাসি সাহিত্যে স্থান দখল করে নেওয়া কম কৃতিত্বের কথা নয়। এই প্রবীণ কবিকে একবার স্বচক্ষে দেখার বাসনা ছিল। কিন্তু হা হতোস্মি! এঁরা কেউই শেষ পর্যন্ত এসে উঠতে পারেননি। অ্যালেন গিনসবার্গ অসুস্থ, ভজনেসেনস্কির বদলে ইয়েফতুশেংকো আসবেন বলেও এলেন না, আর সেঘর যে কেন আসতে পারলেন না, তা জানা গেল না।

আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেতে-পেতে প্রায় সব কবিই বুড়ো হয়ে যান। এইসব মহাসম্মেলনে বেছে-বেছে সেইসব খ্যাতিমান বৃদ্ধদেরই ডাকা হয়। কিন্তু যোগদানের ইচ্ছে থাকলেও অনেকে গেঁটে বাত কিম্বা বুকের অসুখের জন্য দূর দেশে পাড়ি দিতে ভরসা পান না। ভাস্কো পোপা আসতে পারেননি তাঁর স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে, বাড়িতে আর দেখাশোনা করার কেউ নেই।

আবার এসেছেনও অনেকে, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বেশ বৃদ্ধ। যেমন স্টিফেন স্পেন্ডার, যিনি আশি বছরে পা দিয়েছেন, এসেছেন নিকারাগুয়ার আর্নেস্তো কার্ডিনাল, ফুরফুরে সাদা চুল ও দাড়িতে তাঁকে চমৎকার দেখাচ্ছিল।

উৎসবের শুরুতেই তো সকলে এসে সমবেত হননি, সুতরাং উৎসব চলতে-চলতে প্রতিদিনই বেশ একটা কৌতূহলময় রোমাঞ্চ ছিল, আজ কে-কে এসে পৌঁছবেন, কে আটকে গেছেন সিঙ্গাপুরে কিম্বা ভিয়েনায়, ঠিকমতন ফ্লাইট কানেকশান পাচ্ছেন না, কিংবা কেউ দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে খবর পাঠিয়েছেন, এসে গেছি, এসে গেছি, ভারতের মাটিতে পা দিয়েছি। সকাল-বিকেল এইরকম বুলেটিন শোনা যাচ্ছিল।

আমার আর একটা ইচ্ছে ছিল, নিজেকে যাচাই করা। নিছক শ্রোতা হিসেবে কোনও সভাসমিতি কিম্বা কাব্যপাঠের আসরে যোগদানের অভ্যেস আমার নষ্ট হয়ে গেছে। গত পনেরো-কুড়ি বছর ধরে নানা কবিসম্মেলনে অংশগ্রহণকারী হিসেবেইে যোগ দিয়েছি। এবারে শুধু শ্রোতা হতে আমার কেমন লাগবে। অংশগ্রহণকারী এবং শ্রোতা যেন দুটো আলাদা শ্রেণি, এবারে শুধু শ্রোতা হয়ে আমি কি কিছুটা হীনমন্যতায় ভুগব? বিদেশি অতিথিদের কেউ যদি জিগ্যেস করে, তুমিও কবিতা লেখো নাকি? তখন কি আমার বুকটা জ্বালা করে উঠবে? দেখাই যাক না, এই অভিজ্ঞতাটাই-বা কীরকম। মাঝে-মাঝে হঠাৎ কোথাও অপমানিত বোধ করলে শরীরটা চাঙ্গা লাগে। নিজের সঙ্গে অনেকক্ষণ সংলাপ চলে।

অন্যান্য বারের ভারত ভবনের আমন্ত্রণে কবিতা পাঠ করতে এসে জাহানুমা হোটেলে থেকেছি। এবারে ওই হোটেলটি অংশগ্রহণকারী কবিদের জন্য নির্দিষ্ট। সেটাই স্বাভাবিক। আমি উঠেছিলাম একটা মজার হোটেলে, সেটির নাম হোটেল পঞ্চানন, তাতে মাত্র পাঁচখানি ঘর। অবশ্য ব্যবস্থা বেশ ভালোই। আমার রাস্তায় ধারের ধাবায় রাত কাটানোর অভ্যেস আছে, সেই তুলনায় পঞ্চাননকে পাঁচতারা বলা যায়, তা ছাড়া তাদের ডাইনিং রুমটি এই শহরে বেশ জনপ্রিয়। তবু, বন্ধুস্থানীয় প্রখ্যাত হিন্দি কবি রঘুবীর সহায় যখন প্রশ্ন করেন, সুনীলবাবু, আপনি কত নম্বর ঘরে আছেন, আড্ডা দিতে যাব, আমি তাড়াতাড়ি বললাম, আমি জাহানুমা হোটেলে নেই, ওখানে আপনার মতন পারটিসিপেন্টরাই শুধু থাকছেন এবার। কথাটা বলার পরই আমার একটু খটকা লাগল। আমার কণ্ঠস্বর কি একটু উচ্চ হয়ে গিয়েছিল, কিছু কি ক্ষোভ ফুটে উঠেছিল? ছিঃ, আমি এত সাধারণ? কোনও বিশেষ হোটেলে থাকা-না-থাকা নিয়ে কী আসে যায়? ভোজনং যত্রতত্র, শয়নং হট্টমন্দিরে করেই তো এতটা কাল কেটে গেল। বিদেশের দারুণ দামি কোনও হোটেল কিংবা ক্যানিং-এর সাত টাকা ভাড়ার হোটেলের মধ্যে তো কখনও কোনও তফাত করিনি। নিজেকে খুব বকে দিলাম কিছুক্ষণ।

আর একদিন মহারাষ্ট্রের অংশগ্রহণকারী কবি অরুণ কোলাতকার বলল, আরে ইয়ার, শঙ্খদা তো আসছেন না, তাঁর বদলে তুমি পড়বে কবিতা নাকি? আমি বললাম, না, না, , সে প্রশ্নই ওঠে না। চুপ করো, এ কথা আর বোলো না।

চট করে সেখান থেকে সরে গেলাম বটে, কিন্তু মনটাও খচখচ করতে লাগল। নিজের ব্যবহার নিজেই বুঝতে পারছি না। অরুণ কোলাতকারের একটি নিরীহ প্রশ্নের এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া কেন হল আমার? খুব সহজভাবে হেসে বলা উচিত ছিল, না ভাই, পড়ছি না। কোথাও কবিতা পড়া কিংবা না-পড়াকে আমি এতখানি গুরুত্ব দিই? খেলাচ্ছলে কবিতা লিখি, লেখার মতনই তো কবিতা থেকে দূরে সরেও থাকতে পারি? আমার বন্ধুরা কেউ কেউ কবিতা পাঠ করছে, সেখানে আমি পড়ছি না, এই নিয়ে ক্ষুব্ধ হয় তো মাঝারি ধরনের লোকেরা। আমি নিজেকে এর থেকে উঁচুতে মনে করতাম, সেটা কি ভুল? নিজের গালে চড় মারলুম গোটা কতক? অন্যের অলক্ষ্যে নিজের পশ্চাতে কাঁত করে লাথিও কষালাম একখানা।

আমার অবশ্য একটু সুবিধে আছে। আমি ইচ্ছে করলেই পরিচয়, চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব। বদল করতে পারি। আমি হয়ে গেলাম সাতাশ বছর বয়েসি নীললোহিত এবং নীললোহিত কবিতা লেখেন না। নীললোহিত অনায়াসেই উৎসুক শ্রোতা এবং ভিড়ের পেছনের দিকে দাঁড়ানো নীরব দর্শক হতে পারে। আমার এই ভূমিকাবদল আমি বেশ উপভোগ করেছি।

ভারত ভবনে অন্যান্য কবিসম্মেলনে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার যেসব প্রতিষ্ঠিত কবিরা আগে অংশগ্রহণ করে গেছেন, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই অশোক বাজপেয়ী এই সপ্তাহব্যাপী সম্মেলনে পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আতিথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছে, কিন্তু অতিমাত্রায় আত্মসচেতন সেইসব কবিরা প্রায় কেউই আসেননি। অন্যতম ব্যতিক্রম হিসেবে চোখে পড়ল কেদারনাথ সিংকে, এই নিরহংকার মানুষটি হিন্দিতে উৎকৃষ্ট কবিতা লেখেন। এবং গিয়েছিলেন নবনীতা দেবসেনও, নবনীতা অবশ্য কিছুটা অংশগ্রহণকারিণীও বটে, তিনি দুজন বিদেশি কবির ইংরেজি অনুবাদ পড়ে দিয়েছেন। বাংলা থেকে সুবোধ সরকার এবং মল্লিকা সেনগুপ্তও অনেককিছুর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছে।

প্রস্তুতি এবং শুভারম্ভ

ছটি মহাদেশ থেকে বিভিন্ন মেজাজের এবং বিভিন্ন কারণে খ্যাতিমান প্রায় চল্লিশজন কবিকে সংগ্রহ করা একটা বিশাল দায়িত্বের ব্যাপার। আমার ধারণা, পৃথিবীর কোথাও কবিতা নিয়ে এতবড়ো কর্মকাণ্ড আগে হয়নি। কিন্তু ভারত ভবনের ব্যবস্থাপনার কোথাও ভারতীয় শৈথিল্য চোখে পড়েনি। আয়োজন প্রায় নিখুঁত। নিমন্ত্রিত কবিদের যাতায়াত ও আহার-বিহার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে তো বটেই, তার আগেকার প্রস্তুতিও বিস্ময়কর।

আগমনেচ্ছু সমস্ত কবিদের কবিতার অনুবাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে, ইংরেজিতে এবং অন্তত একটা করে হিন্দিতে। প্রস্তুত করা হয়েছিল বেশ কয়েকটি কাব্য সংকন, ইংরেজিতে ‘বাগর্থ’, হিন্দিতে ‘পুনর্বসু’। অনেকগুলি কবিতার পোস্টার, প্রসিদ্ধ শিল্পীদের ছবি সমেত কবিতাফোলিও এবং এক-একটি কবিতা নিয়ে এক-একটি কার্ড। প্রত্যেক কবির পৃথক ছবি। কবিতা নিয়ে এত এলাহি কাণ্ড পৃথিবীতে আর কোথাও হয়েছে বলে তো আমার জানা নেই।

অনেকগুলি পত্র-পত্রিকা এই উপলক্ষ্যে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছিল। বাংলায় তেমন কিছু হয়নি। তবে, সুবোধ সরকার সম্পাদিত ‘ভাষানগর’ পত্রিকাটির নতুন সংখ্যা

আমন্ত্রিত কবিদের কবিতার অনুবাদে সমৃদ্ধ। ভারত ভবনের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ‘ভাষানগর’ বাংলায় একটি নতুন ধরনের সুসম্পাদিত পত্রিকা হয়েছিল।

উদবোধনের দিন কিছু বক্তৃতা থাকবেই। যেমন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, ভারত সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা পুপুল জয়কার এবং অন্য কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। দেরি করে পৌঁছেছি বলে আমাকে সেইসব বক্তৃতা শুনতে হয়নি। তবে ব্যবস্থাপনার ওই বিশেষত্বের তারিফ করতেই হয়, সব বক্তৃতা প্রথম দিন এক বেলাতেই সেরে নেওয়া হয়েছে, পরবর্তী সাড়ে ছ-দিয়ে আর বক্তৃতার নামগন্ধ ছিল না। অশোক বাজপেয়ীর উদবোধনী বক্তব্যটি আমি পরে পড়ে নিয়েছি। ওই একটি রচনায় অশোক কবিতা বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান উজাড় করে দিয়েছেন। তাই সেটি বেশ কোটেশনকণ্টকিত। প্রায় সব দেশের কবিদের কিছু-কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে অশোক বোধহয় কবিদের খুশি করতে চেয়েছেন, কিন্তু কবিরা কি এত সহজে খুশি হয়? এমন অনেক কবি আছে, যারা অন্য কবিদের কবিতা বিষয়ে মতামত শুনে অবজ্ঞায় ঠোঁট ওলটায়।

আপত্তি, স্লোগান

ভারত ভবনের এইসব উদ্যমের সমালোচনা ও বিরোধিতা, দেশের অন্যত্র তো আছেই, ভোপালেও কম নেই। এর আগে রাস্তায় বিরোধী মিছিলও বেরিয়েছে, অত্যধিক হিন্দিপ্রেমীদের চ্যাঁচামেচিও শোনা গেছে অনেকবার। মধ্যপ্রদেশ একটি হিন্দিভাষী রাজ্য, এখানে হিন্দি কবি-লেখকদের প্রাধান্য থাকা উচিত এবং সব অনুষ্ঠান অবশ্যই হিন্দিতে পরিচালনা করতে হবে, এরকম দাবি আছে এক শ্রেণির মধ্যে।

এর মধ্যে একদিন জব্বলপুর থেকে আগত একদল ছাত্র আমাকে টেনে নিয়ে গেল চায়ের দোকানে। বারবার তারা বলতে লাগল, ভারতে এতবড়ো একটা কবিসম্মেলন হচ্ছে, এখানকার ঘোষণা এবং পাঠ ভারতীয় ভাষায় কেন হবে না বলুন? জাপানে কি জাপানি ছাড়া অন্য ভাষায় হয়? রাশিয়ায় হলে কি ইংরেজিতে সবকিছু চলত?

আমি মিনমিন করে বললুম, ইংরেজিও তো ভারতের রাষ্ট্রভাষা।

যুবকরা জোর দিয়ে বলল, তা হোক। কিন্তু ইংরেজিটা আপনার কিংবা আমার ভাষা নয়। এখানে যারা শুনতে এসেছে, তাদের প্রায় কারুরই মাতৃভাষা নয়! হিন্দির বদলে সব অনুষ্ঠান বাংলায় পরিচালিত হলেও আমাদের আপত্তি ছিল না, সেটাও আমাদের দেশজ ভাষা।

আমি বললুম এটা ঠিক কথা নয় ভাই। বাংলায় হলে তোমরা কেউ কিছু বুঝতে পারতে না। সবকিছু আবার হিন্দিতে, তারপর ইংরেজিতে অনুবাদ করতে হত। সেভাবে কোনও কবিসম্মেলন চলে না। যদি সবকিছু মালায়ালাম ভাষায় প্রচারিত হত, তাহলে আমিও কিছুই বুঝতুম না। আমার হিন্দিতে আপত্তি নেই, কারণ খানিকটা তবু বুঝি, কিন্তু হিন্দি হলে যে দক্ষিণ ভারতীয়রা একবর্ণ বোঝে না। সমস্যা অতি জটিল, ভারতের অবস্থা তো জাপান কিংবা রাশিয়ার মতন নয়, তাই ইংরেজিতেই কাজ চালাতে হয়। তবু তর্ক চলে। এই তর্কের শেষ নেই।

হিন্দিপ্রেমীদের খুশি করবার জন্য অশোক বাজপেয়ী তাঁর প্রতিবারের বক্তব্যের প্রথম কিছুটা অংশ হিন্দিতে বলেছেন। সমস্ত কবিদেরই একটি করে কবিতার হিন্দি অনুবাদ পাঠ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে একই কবিতা শুনতে হয়েছে তিনবার, (বিরক্তিকর ব্যাপার!), তবু হিন্দিপ্রেমীরা খুশি নয়। হিন্দি ইংরেজির এই লড়াইয়ে আমি মাথা গলাতে চাই না।

দেশে এত দারিদ্র্য, এখনও কত লোক খেতে পায় না, তা সত্বেও এত খরচ করে কবিসম্মেলনের ব্যবস্থা করা কেন? এই শুনে স্টিফেন স্পেন্ডার মন্তব্য করেছিলেন হ্যাঁ, গরিব তো এখন সারা পৃথিবীতেই আছে। গরিবদের জন্যই যদি সব টাকা খরচ করতে হত, তাহলে তো মানুষের সভ্যতাই এগোত না! রোমের ভ্যাটিকান প্রাসাদ দেখলে স্বয়ং যিশুও হয়তো বলতেন, এই বিশাল আড়ম্বরের কী দরকার, ওটা ভেঙে ফ্যালো! কিন্তু তাহলে ভ্যাটিকানের অমর শিল্পকীর্তি থেকেও পৃথিবী বঞ্চিত হত। অবশ্য জানি না, কোনটা ঠিক।

দারিদ্র্য এখন শুধু গরিবদের ব্যাপার নয়, দারিদ্র্য এখন ক্ষমতালোভীদের রাজনৈতিক অস্ত্র। যে যখন পারছে গরিবদের জন্য কেঁদে ভাসাচ্ছে, তারা নিজেরা ক্ষমতা পেলেই নাকি সব দারিদ্র্য দূর করে দেবে! ক্ষমতার হাতবদল হচ্ছে মাঝে-মাঝে, কিন্তু গরিবরা গরিবই থেকে যাচ্ছে কিংবা আরও গরিব হচ্ছে। যারা নিজেরা কোনও স্বার্থত্যাগ করে না, যারা নিজেদের জীবনযাত্রার ধরন বিন্দুমাত্র বদলায় না, তারাও যখন-তখন হাত মুঠো করে দারিদ্র্য, দারিদ্র্য বলে চ্যাঁচায়।

দেশের শতকরা ষাটভাগ মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নীচে। কোটি-কোটি মানুষ এখনও একবেলাও খেতে পায় না। এইসব ক্ষুধার্তদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করাই তো এখন একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাহলে এই গরিব দেশে জেট বিমান থাকার দরকার নেই, অতবড়ো রাষ্ট্রপতি ভবন থাকার দরকার নেই, গ্রামকে বঞ্চিত করে শহরে বিদ্যুৎ কিংবা বৈদ্যুতিক ট্রেনের দরকার নেই। কংগ্রেসি কিংবা অকংগ্রেসি কোনও মন্ত্রীর জন্যেই একখানা করে গাড়ি দেওয়ার দরকার নেই, একজন রাজ্যপালকে বিদায় জানাবার আগে হোটেলে এলাহি খানাপিনার দরকার নেই। এসব থেকে যেটুকু টাকা বাঁচে, সেটুকুই তো দরিদ্রদের দেওয়া যায়। কে বলে সেইসব কথা?

আজকাল ছোটখাটো রাজনৈতিক দলগুলিরও বার্ষিক সম্মেলন হয় বিরাট আকারে। সেইসব মচ্ছবে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, তার চেয়ে অনেক কম টাকা খরচ হয়েছে এই বিশ্ব কবিসম্মেলনে। রাজনৈতিক সম্মেলনগুলিতে মিতব্যয়িতার প্রশ্ন তুলতেও এখন আর সাহস পায় না কেউ। আদর্শ-ফাঁদর্শ সব চুলোয় গেছে, ক্ষমতা দখলের রাজনীতি আমাদের বিবেকও খেয়ে ফেলেছে। তাহলে এইসব রাজনৈতিক সম্মেলনই চলতে থাকুক, কবিসম্মেলন, চিত্রপ্রদর্শনী সব বন্ধ থাক!

ভোপালে সেই ভয়াবহ গ্যাস দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও আমাদের মনে রয়ে গেছে। অতবড়ো একটা ট্র্যাজিক ঘটনা যেখানে ঘটে গেছে, সেখানেই আবার কবিতা নিয়ে মাতামাতি কি সংগত? এ-প্রশ্ন আমারও মনে খচখচ করে। ভোপাল শহর ঘুরলে কিন্তু সেই বীভৎস ট্র্যাজেডির কোনও চিহ্ন এখন চোখে পড়ে না। জীবন চলে তার নিজস্ব নিয়মে। সেখানে আর সবকিছুই স্বাভাবিক। শুধু যারা নিহত হয়েছে, সেইসব পরিবারের লোকজন এখনও কিছুই পায়নি, যারা আহত হয়েছিল তারা এখনও ধুকছে, অতবড়ো

একটা অন্যায়ের কিছুই প্রতিকার হয়নি এখনও। আমেরিকার জোচ্চোর ধোঁকাবাজ ব্যবসায়ী কোম্পানি আর ভারত সরকারের অসৎ প্রতিনিধিরা মিলে এখনও গোঁজামিলের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, এমনকি বিচারকরাও এই উপলক্ষ্যে প্রচুর টাকা খাচ্ছে বলে শোনা যায়। কমিসম্মেলনটা বন্ধ রাখলে কি এসবের কিছু সুরাহা হত?

কবিতা লিখে দেশ বদলানো যায় না, সরকারকে শায়েস্তা করা যায় না, সাম্রাজ্যবাদীদের জব্দ করা যায় না, অত বড়-বড় বোঝা কবিতার ঘাড়ে চাপানো ঠিকও নয়। কবিরা শুধু নৈতিক প্রতিবাদ জানাতে পারে। বুলেট, বোমা, বিষবাষ্প দিয়ে যতই মানুষকে মারা হোক, কবিরা তবু বলে যাবে, মানুষ অপরাজেয়।

ভোপালে অনেক কবিই তাঁদের কবিতায় কিংবা বক্তব্যে সেই ট্র্যাজেডি স্মরণ করে ধিক্কার জানিয়েছেন। তার মূল্যও কম নয়।

কাব্য ও কবিতা ব্যবচ্ছেদ

সমুদ্র পেরিয়ে, পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে যেসব কবিরা এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের জন্য ধার্য হয়েছে মাত্র এক ঘণ্টা। আমি আবার যুগোশ্লাভিয়ায় একটা আন্তর্জাতিক কবিসম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে আতিথ্য ছিল পাঁচ দিনের, কিন্তু কবিতা পড়ার সময় পেয়েছিলাম, তিনটি শহর মিলিয়ে একুশ মিনিট। এইসব বৃহৎ সম্মেলনে মূল মঞ্চের বাইরে ছোট ছোট আড্ডাতেই কবিতার সৌরভ পাওয়া যায় বেশি করে। ভোপালেও সেইরকম অনেক আড্ডা ছিল, সুতরাং মূল মঞ্চে এক ঘণ্টা সময় যথেষ্টই মনে হয়। এই এক ঘণ্টার মধ্যে অর্ধেক সময় কবিতাপাঠ, তারপর প্রশ্নোত্তর।

চার হাজার বছর ধরে কবিতা লেখা হচ্ছে, তবু আজও কবিতার কোনও সঠিক সংজ্ঞা দেওয়া যায়নি। সংজ্ঞা দেওয়া যায় না বলেই বোধহয় কবিতা এখনও আকর্ষণীয়। এটা এখনও অনেকে বোঝে না বলেই হয়তো তারা কবিতার চুলচেরা ব্যাখ্যা করতে চায়, এই কবিতাটা কেন লেখা হয়েছিল, কিংবা কবির কোনও কমিটমেন্ট আছে কি না, এইসব প্রশ্ন তোলে। আরও কত সব অদ্ভুত প্রশ্ন। এক ধরনের অধ্যাপক আছে, যারা বস্তাপচা কাব্যতত্ব বিকট ধরনের ইংরেজিতে সব জায়গায় তুলবেই। কেউ-কেউ প্রশ্ন করতে উঠে দাঁড়ায় শুধু নিজেকে জাহির করবার জন্য।

কবিদের প্রতিক্রিয়াও হয় বিচিত্র। কেউ চালাক-চালাক কথা বলে পাশ কাটিয়ে যান। কেউ মজার কথা বলে হাস্যরোল তুলে প্রশ্নকারীকে নাজেহাল করেন, কেউ রেগে যান, কেউ চুপ করে থাকেন। যেমন অরুণ কোলাতকার চুপ করেছিলেন, দু–একবার মাথা নেড়ে বলেছেন আমি ওসব জানি না।

উর্দু কবি আখতারুল ইমাম বেশ রেগে গিয়েছিলেন, যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভারত এবং পাকিস্তান, এই দুই দেশের মধ্যে উর্দু কবিতা কোথায় বেশি ভালো। ‘কবির সম্মান’ পুরস্কার প্রাপক পাঞ্জাবের বর্ষীয়ান কবিকে যখন প্রশ্ন করা হল খালিস্তানি উগ্রপন্থীদের সম্পর্কে, তিনি ক্রদ্ধ বেদনার সঙ্গে বললেন, তুমি যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হও, তাহলে তুমি তাদের মনোভাব কিছুতেই বুঝতে পারবে না।

আর্জেন্টিনার কবি রবার্টো হুয়ারেজ কবিদের কমিটমেন্টের প্রশ্ন শুনে তিক্ত স্বরে বলে উঠলেন, কবিরা দেবদূত নয়! কবিদের বাজার করতে হয়, জামা-কাপড় কাচতে হয়, চাকরি করতে জুতোর শুকতলা খুইয়ে ফেলতে হয়। যারা খুব চোখাচোখা প্রশ্ন করছিল, তাদের দিকে কয়েকজন কবি এমনভাবে তাকিয়ে থাকছিলেন, যেন জীবনানন্দের সেই লাইনটি বলতে চান, ‘বরং নিজেই তুমি লেখো নাকো একটি কবিতা।’

ঠিক কবিতা সম্পর্কে নয়, তার আশপাশের কিছু বিষয় নিয়ে কথাবার্তা তবু আকর্ষণীয়। যেমন, চেকোস্লোভাকিয়ার প্রসিদ্ধ কবি মিরোশ্লাভ হোলুব মজা করেছিলেন খুব, তিনি ইংরেজি মোটামুটি ভালো জানেন, এই সুবিধে নিলেন। হলুব পেশায় একজন বৈজ্ঞানিক (ইমমিউনোলজিস্ট)। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি বিজ্ঞান ছেড়ে শুধু কবিতা লেখেন না কেন? যুক্তিবাদী বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে কবিতা রচনার কোনও বিরোধ নেই? তিনি বললেন, একটা কাজ না থাকলে খাব কী? কবিতার বই বুঝি কোনও দেশে লক্ষ-লক্ষ বিক্রি হয়? যুক্তির সঙ্গে কি কবিতার বিরোধ আছে? যে-কোনও কবিকেই দিনের অধিকাংশ সময় অ-কবি থাকতে হয়, ট্রেন ধরার জন্য লাইনে দাঁড়ানো, দুধের দোকানে লাইন, বউ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথাবার্তা, প্রতিবেশীর সঙ্গে তর্ক, অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে রেষারেষি, এইসব সময় কেউ কবি থাকে না!

ডেনমার্কের কবি হেনরিক নরডব্রান্ডটকে যখন প্রশ্ন করা হল, ডেনমার্কে কবিতার অবস্থা কীরকম, তিনি পরিহাসের সঙ্গে বলেন, ডেনমার্কে শিক্ষার মান খুব উঁচু, সেখানকার লোকেরা তত বেশি বোকা হচ্ছে! তারা সাহিত্য পড়তে চায় না, কবিতা তো পড়েই না, টিভি দেখে! আমার কবিতার বই বড়োজোর দুশো কপি বিক্রি হয়! (এই কবি ডেনমার্ক ছেড়ে এখন স্পেনে থাকেন, যদিও তাঁর সব খরচখরচা বহন করে ডেনিশ সরকার।)

ফরাসি কবি পিয়ের ওস্তার সুসুয়েকে যখন জিজ্ঞাসা করা হল, ফরাসি দেশের কবিসম্মেলনের তুলনায় ভারতে এসে এই সম্মলনে কবিতা পড়তে তাঁর কেমন লাগছে, তিনি ভুরু কপালে তুলে বললেন, ফরাসি দেশে তো কবিতা পড়তে কেউই ডাকেই না! কে সেখানে কবিতা শুনবে? ফরাসিরা সবসময় খুব ব্যস্ত।

নিকারাগুয়ার আর্নেস্তো কার্দিনালকে একজন প্রশ্ন করল, আপনি পাদরি হয়ে প্রেমের কবিতা লিখলেন কী করে! তিনি শুভ্র দাড়ি নাড়িয়ে বললেন, আমি বুঝি একসময় যুবক ছিলুম না? আমারও যে অনেক মেয়ে-বন্ধু ছিল, তা বুঝি বিশ্বাস হয় না?

কবিদের অবস্থা এখন ইংল্যান্ডে কীরকম, এই প্রশ্নের উত্তরে স্টিফেন স্পেন্ডার বললেন, টিউব ট্রেনে আমার কোনও সহযাত্রীকে যদি আমি বলি যে আমি কবিতা লিখি, তাহলে সে ভাববে আমি নির্ঘাত পাগল! শুধু ইংল্যান্ড কেন, পশ্চিমি দেশগুলিতে এখন বেশিরভাগ লোকেরই ধারণা, পাগলটাগলরাই কবিতা লেখে।

কবিতা ও রাজনীতির প্রশ্নে তিনি বললেন, ইংল্যান্ডে বসে এখন রাজনৈতিক কবিতা লেখা অসম্ভব। অবস্থা এমনই জটিল। তবে আমি যদি চিলিতে থাকতাম, তাহলে রাজনৈতিক কবিতাই লিখতাম। সেখানে শাসকপক্ষকে সোজাসুজি ঘৃণা করা যায়। ইংল্যান্ডে রাজনৈতিক কবিতা লিখলেও কেউ কর্ণপাত করবে না, অবস্থা কিছুই বদলাবে না।

একটু থেমে বললেন, ভারতে জওহরলাল নেহরু হয়তো কোনও কবিতা পড়ে বিচলিত হতে পারতেন, কিন্তু মার্গারেট থ্যাচার কবিতা-টবিতার ধার ধারেন না!

প্রাপ্তি

এই আন্তর্জাতিক কবিদের সমাবেশে কয়েকটা দিন কাটালে উপলব্ধি হয়, পৃথিবীর সব দেশেই কবিতার আঙ্গিক প্রায় একইরকম। বিদেশে কোনও প্রখ্যাত কবির রচনা শুনলেও মনে হয় অভিনব কিছু একটা শুনছি কিংবা বাংলায় এ-পর্যন্ত এরকম লেখা হয়নি! কিছু কবিতা ভালো লাগে, কিছু কবিতা অন্যমনস্ক করে দেয়। কবিতা পাঠের ভঙ্গিও খুব পরিচিত, ডেনমার্কের হেনরিরে আর আমাদের নীরেন্দ্রনাথ চক্রবতী একই রকমভাবে কবিতা পড়েন। রমাকান্ত রথের সুন্দর প্রেমের কবিতাগুলির সঙ্গে বিশেষ তফাত নেই টার্কিস এক কবির প্রেমের কবিতার। ব্যতিক্রম দু-একটা আছে। আমাদের মালয়ালম ভাষার কবি কবিতা হাতে নিয়ে গান করতে থাকেন কিংবা ইন্দোনেশিয়ার কবি এমন অগ্নিবর্ষী ভাষায় চিৎকার করতে থাকেন যে মনে হয় মনুমেন্টের তলায় নির্বাচনী বক্তৃতা দিচ্ছেন!

এই উৎসবে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন আর্নেস্তোকার্দিনাল। নিকারাগুয়ার সম্পর্কে আমাদের দুর্বলতা, এই ছোট দেশটি আমেরিকান সরকারের গুণ্ডামির বিরুদ্ধে যেরকম সাহসের সঙ্গে লড়ে যাচ্ছে, তাতে আমাদের সকলেরই শ্রদ্ধা অর্জন করে। মানুষটিও চমৎকার, ছোটখাট চেহারা, ধপধপে সাদা দাড়ি ও চুল, মাথায় আবার পুরুতদের গোল টুপি, ভাঙা-ভাঙা ইংরেজি বলেন, মধুর ব্যবহার, সকলের সঙ্গেই ভাব জমে গিয়েছিল। তিনি মার্কসবাদী বলে তাঁকে কার্ডিনালগিরি থেকে বরখাস্ত করেছেন পোপ, তবু তিনি সেই পোশাকে থাকেন এবং নিকারাগুয়ার গির্জার কার্ডিনাল হয়ে আছেন। এ ছাড়া তিনি নিকারাগুয়ার সংস্কৃতিমন্ত্রী।

তিনি প্রথমে কয়েকটি ছোট ছোট প্রেমের কবিতা পড়লেন, চতুর বাক্যবন্ধের জন্য সেগুলি বেশ উপভোগ্য। কিন্তু তাঁর পরের কবিতাগুলি শুনে শুধু আমি নয়, সকলেই হতাশ। সেগুলো নিছক গালমন্দ আর চ্যাঁচামেচি, যেন সরকারি প্রচারপুস্তিকাগুলি তিনি কাব্য নাম দিয়ে উচ্চারণ করে যাচ্ছেন। শুনতে-শুনতে আমার আপশোশের সঙ্গে মনে হল, এই ব্যক্তিটিকে নিকারাগুয়ার মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা ঠিক হয়নি, তাহলে হয়তো তিনি ভালো কবিতা লিখে যেতেন।

আমি সবচেয়ে অভিভূত হয়েছি হাঙ্গারির কবি ফেরেনস জুহাজস-এর দীর্ঘ কবিতাটি শুনে। এঁর কবিতাটির নাম ‘দ্য বয় চেঞ্জ ইন টু আ স্টাগ ক্রাইজ আউট অ্যাট দ্য গেট অব সিক্রেটস।’ প্রথমেই তিনি বললেন, মাত্র সাত দিন আগে তাঁর মা মারা গেছেন, তবু তিনি ভারতের টানে এসেছেন। তাঁর কবিতাটিও মা ও সন্তান বিষয়ক। মা ডাকছেন তাঁর ছেলেকে ফিরে আসার জন্য, ছেলেও ফিরতে চায়, কিন্তু ফিরতে পারছে না। বলাই বাহুল্য, কবিতাটি এই মাতা-পুত্রের বিষয়কে ছাড়িয়ে পৃথিবী ও মানুষ, আদিমতা ও সভ্যতা, জন্ম ও মৃত্যু ইত্যাদি বিভিন্ন স্তরে চলে গেছে। মহৎ গভীরতার সঙ্গে মাঝে-মাঝে অতি সাধারণ কথার মিশ্রণ কবিতাটিকে বিশেষ ব্যঞ্জনা দিয়েছে।

ফরাসি কবি পিনের ওস্তার সুসুয়ে-ও একটি দীর্ঘ কবিতা পাঠ করলেন, সেটি মূলত প্রকৃতি বর্ণনা, মাঝে-মাঝে একটু ক্লান্তিকর। তিনি বললেন, তিনি সারাজীবন ধরে একটিই কবিতা লিখে যাচ্ছেন কোন কবি তা না লেখে?)।

অন্যরা প্রায় সবাই ছোট ছোট কবিতা পাঠ করেছেন অনেকগুলি। শ্রোতা দর্শকদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সমাদর পেয়েছেন চেকোশ্লাভিয়ার মিরোশ্লাভ হোলুব। অনুবাদের মাধ্যমে ইনি আগে থেকেই ভারতে পরিচিত, তা ছাড়া এঁর কবিতাগুলি সহজবোধ্য, কিছু কাহিনির আভাস থাকে, কৌতুক থাকে। পশ্চিমি কবিতায় আজকাল কৌতুক থাকবেই, আমাদের বাঙালি কবিরা অনেকে এটা এখনও বোঝেন না। হোলুবের একটি সূক্ষ্ম বিদ্রুপের কবিতার নাম, ‘ব্রিফ রিফ্লেকশন অন আ ফেনস’। পৃথিবীর সর্বত্র এখন বেড়া ও সীমানা নিয়ে ঝগড়া। এই কবি লিখেছেন :

A Fence
begings nowhere
ends nowhere
and
seperates the place where it is
from the place where it isn’t…

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য পূর্ব ইউরোপের কবিদের রচনা একেবারেই প্রচারধর্মী নয়। ব্যক্তিগত আলাপচারিতে এঁরা নিজেদের সরকারের এবং বিগ ব্রাদারের দিব্যি সমালোচনা করেন। হোলুব একদিন জানালে যে এতদিন বাদে নাকি চেকোশ্লাভিয়া থেকে ফ্রানৎসা কাফকা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা তোলার চেষ্টা হচ্ছে।

অনেক বিখ্যাত কবি বেশ হতাশ করেছেন, তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। আগে যাঁদের নাম শুনিনি, সেইরকম দু-একজন কবির একটি-দুটি লাইন বিদ্যুৎ স্পর্শের মতন চমকিত করে, সেই লাইনগুলি মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে, তখন মনে হয় এখন অন্য আর কিছু না শুনলেও চলে। মাঝে-মাঝে কফি পানের বিরতিতে চলে যাই হ্রদের প্রান্তের চত্বরে…মনে হয় পরের অনুষ্ঠানটি না শুনলেই বা ক্ষতি কী?

একটি প্রেমের কবিতা শুনে মনটা হঠাৎ নির্মল হয়ে গেল। কবিতাটি এইরকম :

No I can no longer use you
as a rose in my love poems;
You’re much, too large, much too beautiful
and much, too much yourself…

তখন বিকেল শেষ হয়ে এসেছে, একটা ঠান্ডা রঙিন আলো এসে পড়েছে হ্রদে, নিঃশব্দে উড়ে যাচ্ছে তিনটি সাদা বক, আকাশ ঝুঁকে এসেছে অনেক নীচে, পেছন দিকে নারী-পুরুষদের অস্পষ্ট কোলাহল, আমি আরও এগিয়ে যাই জলের দিকে, আমার মাথায় ঘুরতে থাকে একটি অর্ধস্কুট নিজস্ব কবিতার লাইন। আমি হারিয়ে যাই কিছুক্ষণের জন্য।

বলাই বাহুল্য, এই বিশ্ব কবিতা সম্মেলন প্রায় পনেরো বছর আগেকার কথা। হায়! ভারত ভবনের সেই গৌরব আর নেই। অশোক বদলি হয়ে যায় দিল্লিতে। তারপর অবসর গ্রহণ করেছে। মধ্যপ্রদেশের মধ্যবর্তী রাজনৈতিক ডামাডোলে ভারত ভবনের সেই গৌরব অস্ত গেছে। এখন সেখানে কবিতার কোনও স্থান নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *