দিতে পারে নয়া সাজ

অফিস উগরে দিলো দুপুরে। এখন, ওরে মন,
কী করি? বিবর্ণ স্ফীতোদের বাসে চেপে প্রথামতো
অবসন্ন মনে ফিরে যাবো কি বাসায়? ক্ষিপ্র ডান
হাতের ব্যাপার সেরে বিছানায় গোয়েন্দা কাহিনী
নিয়ে কিছু সময় গড়িয়ে দেবো? না, থাক; বরং
ট্যাঁক হালকা করে রেস্তোরাঁয়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত
সিনেমায় কিছুকাল কাটিয়ে আয়েশে ফেরা যাবে
ভাড়াটে বাসায় কায়ক্লেশে আরশোলার আস্তানায়।

কে কার জীবন আজ করছে যাপন? এই আমি
নগণ্য চাকুরে, মাস কাবারে, দেনায় হাবুডুবু,
গিন্নীর গঞ্জনা সয়ে খোদার তিরিশও দিন, এই
আমি কি আমার মধ্যে ন্যালাক্ষ্যাপা ভিন্ন মানুষের
জীবন ধারণ করি? হাজিরা খাতায় প্রত্যহ যে
করে সেই, সে কি আমি? মই বেয়ে উঠি নীলিমায়?

আগুনের রেশম কবিতা, মাঝে সাঝে এমনকি
আমারও বুকের মধ্যে মঞ্জরিত; ফেটে-পড়া বীজ
সাজাই খাতায়; বাজে কাগজের ঝুড়ির খোরাক
সুনিশ্চয় আমার পদ্যের শৈশবের হুটোপুটি।

প্রগাঢ় যযাতি রাত্রি মাথায় লাগায় চুপিসারে
স্বপ্নের কলপ আর দুর্ভিক্ষে রাস্তায় মৃতা কোনো
মায়ের বিশুষ্ক স্তনে মুখ-গোঁজা শিশুর মতোই
পড়ে থাকে বে-লেবাস আমার স্বপ্নেরা ইতস্তত।

সংসদ ভবন নির্বাসিত সম্রাটের মতো বড়
চিন্তাকুল, স্থাণু আর অন্ধকারে সূর্য সাজাবার
আ মরি তাগিদে হৈ-হুল্লোড়ে পাড়া তোলপাড় করে
বখাটে কর্মীরা বিদ্যুচ্চমকের মতো ওরা ভোল
পাল্টায় এবং মূঢ়তার ঘেরাটোপে জীবনকে
সঁপে দিয়ে জীবন হননে মাতে ঋতুতে ঋতুতে।
সতর্ক সেপাই ঘেরা বনেদী জলসা ঘরে ওহো
প্রাক্তন বিপ্লবীদের ওষ্ঠে চাকভাঙা মধু ঝরে,
মধু ঝরে; মুখে জনগণ নাম হামেশা, সাধের
প্রগতি চুলোয় যাক বীতশান সূর্যাস্তের পথে!

দেশ হালবিহীন নৌকোর মতো ঘুরপাক খায়
ঘূর্ণিজলে অবিরত। কবন্ধের দল চতুর্দিকে;
গরুর গাড়ির চাকা ডোবে পিচ্ছিল কাদায়, আর
ভাবি আজ বিপ্লবই দেশকে দিতে পারে নয়া সাজ।