১১. ইহুদি কনসেনট্রেশান ক্যাম্প

এইখানে একদিন লক্ষ লক্ষ মানুষকে পশুতে পরিণত করা হয়েছিল। এইখানে একদিন নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল খোঁয়াড়ে। শক্ত সমর্থ পুরুষদের মুখের রক্ত তুলে খাটানো হত সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত। সন্তানের সামনে থেকে ভাইকে জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়া হত, তারা আর ফিরত না। সভ্য, শিক্ষিত, শ্বেতাঙ্গ মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে থেকেছে, নিজের মলমূত্রের মধ্যে শুয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছে। এইখানে বয়ে গেছে নররক্তের স্রোত। এই মাটিতে মিশে আছে এক লক্ষেরও বেশি নারী-পুরুষের শব।

এইখানে ছিল হিটলারের নাতসি বাহিনীর অধীনে ইহুদি কনসেনট্রেশান ক্যাম্প।

রিগা শহর থেকে মাইল চল্লিশেক দূরে এই এলাকাটির নাম সালাসপিলস। তিনদিকে নিবিড় বন। তার মাঝখানে বিশাল উন্মুক্ত চত্বর। সেই কনসেনট্রেশান ক্যাম্পের কোনও চিহ্নই এখন আর এখানে নেই; বরং জায়গাটি দেখতে বড়ই সুন্দর। খুব যত্নে এই এলাকাটি সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

গাড়ি থেকে নামার পর দু-ধারে বৃক্ষ সারি সমন্বিত একটি প্রশস্ত পথ ধরে অনেকখানি হেঁটে আসতে হয়। তারপর চোখে পড়ে একটি অতিকায় স্মৃতিসৌধ। এখানে রাখা আছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বহু ছবি ও নানান ইতিহাস-চিহ্ন। এই ভবনটি পার হয়ে এলে প্রকাণ্ড চত্বরটিতে এসে দাঁড়াতে হয়। আগাগোড়া কংক্রিটে বাঁধানো। এই চত্বরটি অন্তত দশখানা গ্রাউন্ডের সমান। হিটলারি আমলের কাঁটাতারের বেড়া ও বন্দি নিবাসগুলো নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে, তার জায়গায় রয়েছে কয়েকটি মহান, গম্ভীর ভাস্কর্য। মূর্তিগুলি এইরকম : প্রথমে দেখা যাচ্ছে অত্যাচারিত মানুষ মাটিতে পড়ে আছে। আর একটু এগোলে দেখা বায় তারা আস্তে-আস্তে উঠে দাঁড়াচ্ছে। তারপর তাদের প্রতিরোধের ভঙ্গি। একেবারে শেষ দিকে দেখা বায় সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে মা। তার পাশে বিজয়ী পুরুষ, যে বজ্রমুষ্টি, তুলে ধরেছে আকাশের দিকে। এরপর অরণ্যের সবুজ দেওয়াল। মূর্তিগুলি লাইফ সাইজের দু-তিন গুণ বড়।

হিটলারি বাহিনীর কনসেনট্রেশান ক্যাম্পের নানান কাহিনি আমরা পড়েছি। পোলান্ডের কুখ্যাত গ্যাস চেম্বার নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। ফিলম তোলা হয়েছে। রিগার এই সালাসপিলস বা কনসেনট্রেশান ক্যাম্পের কথাও অনেকের কাছে ইদানীং সুপরিচিত, ফ্রেডরিক ফরসাইথের অতি জনপ্রিয় উপন্যাস ‘ওডেসা ফাইল’-এর মূল পটভূমিকা হল এই জায়গা। সেই উপন্যাসে এখানকার ক্যাম্পের নৃশংস অত্যাচারের অতি জীবন্ত বর্ণনা আছে।

এ পি এন-এর একজন প্রতিনিধি এসেছেন আমাদের সঙ্গে। তিনি আমাদের চত্বরটির এক পাশে টেনে নিয়ে গিয়ে বললেন, এইখানে একটা পুকুর ছিল। পুকুরটি কী করে কাটা হয়েছিল শুনবেন? এখানকার নাতসি কর্তার শখ হল, তিনি পুকুরে মাছ ধরবেন। তার জন্য পুকুর কাটানো দরকার। সে কাজের জন্য তো বন্দিরা আছেই। কিন্তু নাতসি কর্তার আরও উৎকট খেয়াল হল এই যে, পুকুর খোঁড়ার জন্য বন্দিদের খন্তা-কোদাল কিছু দেওয়া হবে না। খালি হাতে, নোখ দিয়ে মাটি খুঁড়তে হবে। হাজার হাজার বন্দিদের লাগিয়ে দেওয়া হল সেই কাজে, তাদের পেছনে স্টেনগান হাতে প্রহরীরা। এইভাবেই একটা পুরো পুকুর কাটা হল।

একটু থেমে তিনি বললেন, অবশ্য নাতসি কর্তার মাছ ধরার শখ শেষ পর্যন্ত মেটেনি। সেই পুকুরের মাছ বড় হওয়ার আগেই নাতসিবাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

আর এক পাশে রয়েছে একটি ডোবা। ভদ্রলোক বললেন, এই ডোবাটা কী কাজে ব্যবহার করা হত শুনুন। ছোট ছোট শিশুদের গা থেকে সব রক্ত টেনে যার করে নেওয়া হত সিরিঞ্জের সাহায্যে, তারপর সেইসব মৃত শিশুদের ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হত এই ডোবায়!

আমি চোখ বুজলুম, ফিসফিস করে বললুম, যাক, আর বলবেন না। আর শুনতে চাই না।

চত্বরটির প্রান্তে এসে আমি নিবিড় বনের দিকে তাকিয়ে রইলুম। এই গাঢ় সবুজের দিকে দৃষ্টি মেলে আস্তে আস্তে মন ভালো হয়ে বায়। নাতসিবাহিনী যখন চোখের পলক পর্যন্ত না ফেলে শত-শত মানুষ খুন করেছে, তখনও তো এখানে এই অরণ্য ছিল! কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তারা কিন্তু প্রতিপক্ষের সৈনিক নয়, তারা সবাই নিরীহ সাধারণ মানুষ। তাদের অপরাধ, তারা ইহুদি। অবশ্য লাটভিয়ানদেরও নাতসিরা ক্রীতদাসের মতনই গণ্য করত। গত যুদ্ধে এই ছোট্ট দেশটিতে নিহত হয়েছে তিন লক্ষ সাধারণ মানুষ, আর দু-লক্ষ আশি হাজার নারী-পুরুষকে দাস-শ্রমিক হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জার্মানিতে। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রয় এক-চতুর্থাংশই যুদ্ধের শিকার। হিটলারের ইচ্ছে ছিল, গোটা দেশটাতে শুধু খাঁটি জার্মান রক্তের মানুষরাই বসবাস করবে।

সারগেইও আগে কোনও কনসেনট্রশান ক্যাম্প দেখেনি। তার মুখখানা থমথমে। আমরা তিনজনে নিঃশব্দে এদিক-ওদিক ঘুরছি।

আমরা ছাড়াও এখানে অনেক দর্শনার্থী এসেছে। এসেছে গাড়ি ভরতি করে স্কুলের ছেলেমেয়েরা। এসেছে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সকলেরই হাতে ফুল। মে মাসের এই সময়টা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মে মাসের ন’তারিখে সোভিয়েত বাহিনী চূড়ান্ত জয়লাভ করেছিল।

ফিরতে গিয়ে এক জায়গায় থমকে দাঁড়িয়ে পড়লুম। দৃশ্যটি দেখে আমার মতন কঠোর হৃদয় মানুষেরও চোখ জ্বালা করে উঠল। যে-জায়গাটিতে শিশুদের হত্যা করা হত, সেখানে রয়েছে একটি চিত্র-বিচিত্র স্মৃতিবেদি। সেখানে ভিড় করে আছে এখানকার স্কুলের ছেলেমেয়েরা। নানান রকমের রঙিন তাদের পোশাক, সরল সৌন্দর্যময় স্বাস্থ্যবান মুখ। তারা শুধু ফুল আনেনি, তারা এনেছে লজেন্স, চকোলেট, অনেক খেলনা। সেগুলো তারা বেদির ওপরে সাজিয়ে রাখছে। চল্লিশ-বেয়াল্লিশ বছর আগে যেসব শিশুরা প্রাণ দিয়েছে, তাদের জন্য চকোলেট খেলনা উপহার এনেছে আজকের দিনের শিশুরা।

নাতসি অত্যাচারের ফোটোগ্রাফিক দলিল দেখার আর ইচ্ছে হল না আমার। ফিরে এসে উঠে বসুলম গাড়িতে। কিছুক্ষণ চুপচাপ চলবার পর এ পি এন-এর প্রতিনিধি ভদ্রলোকটি বললেন, চলুন, এর পরেই যেখানে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে পরে যাব, তার আগে একটু সমুদ্র দেখে আসা যাক।

আধ ঘণ্টা গাড়ি যাত্রার পর আমরা যেখানে পৌঁছলাম, সে জায়গাটিকে আমাদের দীঘার সঙ্গে তুলনা করা যায়। জায়গাটির নাম জুরমালা বিচ। রিগা শহর থেকে লোকে এখানে ছুটি কাটাতে সমুদ্রে স্নান করতে আসে। জায়গাটি মাছ ধরারও একটি বড় কেন্দ্র। মাছ ধরা ল্যাটভিয়ানদের একটি প্রধান জীবিকা।

এখানে যে জলরাশি দেখছি, সেটি আমার পূর্বে দেখা বালটিক সাগর। এই সমুদ্রে নাকি প্রচুর মাছ। কয়েক বছর হল এখানে নতুন করে ঝাঁকে-ঝাঁকে কড মাছের সাক্ষাৎ পাওয়া যাচ্ছে। এখানে মাছ ধরা পড়ে জনসংখ্যার মাথাপিছু ২৩২ কিলোগ্রাম বছরে। এখানকার লোকের খাদ্য তালিকায় দু-তিনরকম মাছ থাকে প্রায়ই।

আমাদের পশ্চিমবঙ্গ বা ওড়িশাও ঠিক এই রকমই সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চল, এবং বঙ্গোপসাগরেও মাছের অভাব নেই, তবু আমাদের এই অঞ্চলে মাছের কত আকাল!

সমুদ্র তীরে কিছুক্ষণ বসে রইলুম আমরা। জলে একজনও স্নানার্থী নেই। যদিও মে মাস। তবু এখানে এখনও শীতকাল। আর কয়েকটা দিন পরেই স্নানের পরব শুরু হবে। সেই জন্যই এখানে অধিকাংশ বাড়ি এখন ফাঁকা। বড়-বড় হোটেলের বদলে এখানে কো অপারেটিভের বাড়ি কিংবা বিভিন্ন ইউনিয়নের হলিডে হোম রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এখানে ছুটি কাটাবার জন্য নামমাত্র ভাড়ায় থাকতে পারে। লেখক সমিতিরও একটি তিনতলা বাড়ি রয়েছে। তবে, একজন লেখকও এই সময়ে এখানে আসেননি।

সমুদ্রের ধারে খানিকক্ষণ বসে থাকার পর আমি জিগ্যেস করলুম, এই সমুদ্রের ওপারে কোন দেশ?

আমাদের সঙ্গী বললেন, ঠিক ওপারেই সুইডেন। দূরত্ব হবে দুশো মাইলের মতন। সুইডেন থেকে পাওয়ার বোটে চেপে কেউ কেউ এদিকে চলেও আসে।

আমি চোখ সংকুচিত করে চেষ্টা করলুম, ওপারের সুইডেন দেখতে পাওয়া বায় কিনা!

আমাদের সঙ্গী মৃদু হেসে বললেন, তা কখনও সম্ভব? মানুষের দৃষ্টিশক্তির তো একটা সীমা আছে!

আমি বললুম, না তো! মানুষ ইচ্ছে করলে লক্ষ-লক্ষ মাইল দূরের জিনিসও দেখতে পারে। সেরকম কয়েকটা জিনিস আমরা রোজই দেখি। কী কী বলুন তো?

তিনি একটু অবাক হতেই আমি হেসে বললুম, এটা অনেকটা ছোটদের ধাঁধার মতন হয়ে গেল, তাই না? আমরা চাঁদ, সূর্য দেখতে পাই। আকাশের এমন অনেক তারা আমরা দেখি যেগুলি কোটি কোটি মাইল দূরের।

সমুদ্রকূল ছেড়ে আমরা জুরমালা শহরটিতে দু-এক চক্কর দিলুম। ছোট শহর। আপাতত জনসমাগম কম বলে খানিকটা ঘুমন্ত মনে হল।

ফেরার পথের রাস্তাটি সুন্দর। দুপাশে বড়-বড় গাছ। সারগেই আমাকে জিগ্যেস করল, সুনীলজি, এটা আমাদের সোভিয়েত গাড়ি। আমাদের গাড়ি কেমন লাগছে আপনার?

আমি বললুম, আমি মোটর গাড়ির কলকবজা কিছুই বুঝি না। এই গাড়িটা চলছে ঠিকঠাক, দেখতে-শুনতেও ভালো, সুতরাং ভালোই বলতে হবে!

সারগেই জিগ্যেস করল, আপনি তো অনেক আমেরিকান গাড়ি দেখেছেন, সেগুলো কি এর চেয়ে ভালো?

আমি বললুম, মোটর গাড়ির তুলনামূলক বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে একটা জিনিস বলতে পারি, আমেরিকানরা বানায় ঢাউস ঢাউস গাড়ি, কিন্তু অনেক আমেরিকানই আজকাল কিনতে চায় জাপানি বা ফরাসি বা জার্মান ছোট-ছোট গাড়ি। তোমাদের সোভিয়েত গাড়িগুলো খুব বড়ও নয়, খুব ছোটও নয়, মাঝারি আকারের।

-আপনাদের দেশেও তো গাড়ি তৈরি হয়।

-হ্যাঁ। আমরা ভারতীয় গাড়ি চড়ি। তবে আমাদের গাড়ির একটা মজা আছে। অন্য দেশের গাড়ি প্রতি বছরই ক্রমশ ভালো হয়, বেশি মজবুত হয়, গাড়িতে নতুন-নতুন জিনিস জুড়ে দেওয়া হয় আর দাম কমাবার চেষ্টা হয়। আর আমাদের দেশের গাড়ি প্রতি বছরই খারাপ হয়, সেইসঙ্গে দামও বাড়ে।

-আপনাদের প্রধানমন্ত্রীর ছেলেও তো একটা গাড়ি বানাবার কোম্পানি খুলেছিল…

সারগেই ইন্ডিয়া ডেস্কে কাজ করে, সে ভারত সম্পর্কে অনেক খবর রাখে। গাড়ি সম্পর্কে আলোচনা চালাতে আর আমার ইচ্ছে হল না। মাটিতে নীচের সমস্ত পেট্রোল ফুরিয়ে গেলে পৃথিবীর থেকে যদি মোটরগাড়ি নামে ব্যাপারটা উঠেই বায়, তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। তখন আমরা আবার ঘোড়ায় চাপব। মনে-মনে আমি যেন অশ্বারোহীদের শতাব্দীগুলিতে প্রায়ই ফিরে গিয়ে বেশ আরাম পাই।

মাঝপথে আমরা থামলুম একটি কৃষি খামারে। সেখানকার পরিচালক অপেক্ষা করছিলেন আমাদের জন্য।

এটি একটি সরকারি খামার। এখানে খামার আছে দু-রকম। অনেক জায়গায় চাষিরা নিজেদের সব জমি মিলিয়ে সমবায় প্রথায় যৌথ খামার করেছেন। আর কোথাও-কোথাও সরকারই জমি অধিগ্রহণ করে কৃষকদের দিয়ে চাষ করাচ্ছেন। উৎপাদন অনুযায়ী চাষিদের আয়।

এ সম্পর্কে আগে থেকেই কিছুটা ধারণা ছিল বলে চমকে গেলুম না এখানকার চাষিদের সচ্ছলতা দেখে। সোভিয়েত রাশিয়ায় এসে আমি গরিব চাষি দেখব, এমন তো আশঙ্কাও করিনি। আমাদের দেশে চাষি, মজুর, জেলে, মুচি, কুমোরদের এমনই অবস্থা যে ওইসব শব্দগুলো উচ্চারণ করলেই ছেঁড়া কাপড়, খালি গা, হত-দরিদ্র চেহারার মানুষের ছবি ফুটে ওঠে। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য বহু দেশেই জীবনযাপনের একটা নিম্নতম মানই আমাদের চেয়ে অনেক উঁচুতে উঠে গেছে। সেসব দেশে চাষি-মজুর-মুচিরাও ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকে, ঘরে টেলিভিশান আছে, কারুর-কারুর নিজস্ব মোটর গাড়ি থাকাও কিছুই আশ্চর্যের নয়।

এখানকার এই সরকারি খামারটি সুপরিচালিত। শুধু চাষবাস ছাড়াও এখানে হাঁস মুরগি পালন, গরুর দুধের কারবারও হয়। কৃষকদের এই কলোনিটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। নিজস্ব দোকানপাট ছাড়াও আমোদ-প্রমোদেরও ব্যবস্থা আছে।

আমি মাঠের চাষ দেখতে গেলুম না, কালোনিটিই ঘুরে-ঘুরে দেখলুম। বেশ নিরিবিলি, শান্ত জায়গাটি। প্রথম দিকে তৈরি হয়েছিল দোতলা বাড়ি, তার একতলা-দোতলায় দুটি করে পরিবার থাকে। এখন তৈরি হচ্ছে লম্বা-লম্বা ফ্ল্যাট বাড়ি। কিছু-কিছু একতলা বাড়িও আছে, সেখানকার সংলগ্ন জমিতে নিজস্ব শাক-সবজি ফলানো যায়।

ডিপার্টমেন্ট স্টোর্সের সামনে কয়েকখানি গাড়ি দাঁড়িয়ে। কৃষকেরা বাজার করতে এসেছেন। মহিলারা সুসজ্জিত। এক জায়গায় একজন বলিষ্ঠকায় কৃষক একটি গাড়িতে বোঝাই করছেন ভুট্টা। তাঁর পায়ের গামবুট জলকাদা মাখা, নীল রঙের ঢোলা পোশাকেও নোংরা লেগেছে। বিকেলবেলা ইনি স্নান-টান করে, পোশাক বদলে হয়তো বউকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবেন।

এই খামারের পরিচালক আমাদের ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে সবকিছু বোঝাচ্ছিলেন। এক সময়ে তিনি বললেন, আমি ভারতে গিয়েছিলুম। পশ্চিমবাংলাতেও গেছি। আমাদের তুলনায় আপনাদের চাষিরা ভাগ্যবান। তারা বছরে দুবার চাষ করতে পারে। আমরা তো আবহাওয়ার জন্য বছরে একবারের বেশি চাষ করতে পারিই না!

আমি মনে মনে হাসলুম। সোভিয়েত চাষিরা পাকা বাড়িতে থাকে, গাড়ি চাপে, বউকে নিয়ে নাচতে কিংবা সিনেমা দেখতে কিংবা দেশ ভ্রমণে যায়। আর ভারতীয় ভাগ্যবান চাষি, যারা বছরে দুবার চাষ করে, তারা সারা বছর পেট ভরে খেতে পায় না, পাকা বাড়িতে থাকার দুঃস্বপ্ন তারাও দেখে না!