[সোর্স না জানা অজানা গল্প]

২০. প্রশান্ত মহাসাগরের বেলাভূমিতে

প্রশান্ত মহাসাগরের বেলাভূমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলুম বালির ওপর দিয়ে। একটু আগে সারা আকাশ রঙে ভাসিয়ে সূর্যদেব ডুব দিয়েছেন সমুদ্রে, তবু এখনও দিনের আলো আছে। লস এঞ্জেলিসের সূর্যাস্ত একটা বিশেষ দ্রষ্টব্য ব্যাপার। এখানে একটা বিখ্যাত রাস্তারও নাম সানসেট বুলেভার।

এখানে খুব একটা ভিড় নেই। ক্যালিফোর্নিয়ায় ভিড় হয় শীতকালে, যখন এ-দেশের প্রায় সব জায়গাই বরফে ঢাকা থাকে, শুধু ক্যালিফোর্নিয়ায় পাওয়া যায় বসন্তের হাওয়া।

তবে অনেকগুলো ছেলেমেয়ে সার্ফিং করছে জলে। এ এক বিচিত্র খেলা, ঢেউ-এর সঙ্গে যুদ্ধ করে ক্রমশই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। এইরকম খেলা চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ঠিক যেন পাগলামির মতন। শুনেছি অনেক ছেলেমেয়ে সারা রাতই জলে থাকে।

একটা ধপধপে সাদা রঙের ক্যাডিলাক গাড়ি থেকে নেমে একজন মহিলা ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে লাগলেন জলের দিকে। ভদ্রমহিলা পরেছেনও সাদা লম্বা স্কার্ট, মাথায় সাদা টুপি, দু হাতে সাদা রঙের গ্লাভস। জলের কাছাকাছি এসে শ্বেতবসনা সুন্দরীটি মাথা থেকে টুপি খুললেন, হাতের গ্লাভসও খুলতে লাগলেন। মনে হয়, তিনি সমুদ্রের জলে মুখ ধুতে চান।

টুপি খুলতেই দেখা গেল মহিলার মাথাভরতি সোনালি চুল। বয়েস অন্তত চল্লিশ তো হবেই, তবু এখনও মুখখানা বেশ সুন্দর, চোখের মণিদুটি নীল।

মহিলাকে দেখে জয়তীদি দারুণ চমকে উঠে তাঁর মেজদিকে বললেন, মেজদি, দ্যাখ, দ্যাখ! কে চিনতে পারছিস?

মেজদি প্রথমে একেবারে উলটো দিকে একটা লম্বা লোককে দেখে জিগ্যেস করলেন, কই? কই? কে রে?

আমরাও সবাই উৎসুক হয়ে দেখতে লাগলুম মহিলাকে। চেনা-চেনা লাগছে, কিন্তু ঠিক যে কে তা বুঝতে পারছি না।

জয়তীদি ফিসফিস করে বললেন, শার্লি ম্যাকলেইন!

আমরা সবাই তৎক্ষণাৎ চিনতে পারলুম। মাত্র দুদিন আগেই আমরা টিভি-তে জ্যাক লেমন এর সঙ্গে শার্লি ম্যাকলেইনের একটা চমৎকার ফিল্ম দেখেছি। সেই ফিল্মের তুলনায় এখন বয়েসটা বেশি দেখালেও সেই একই মুখ।

হলিউডের শহরে এসে এক জলজ্যান্ত হিরোইনকে দেখতে পাওয়ার রোমাঞ্চই আলাদা। বোম্বাই-এর কোনও হিরোইন একলা সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গেলে নিশ্চয়ই ভিড় সামলাবার জন্য পুলিস ডাকতে হয়, কিন্তু এখানে সেরকম কোনও ব্যাপার নেই। এখানে ফিল্ম স্টারদের কিছুটা স্বাধীনতা আছে মনে হচ্ছে।

শার্লি ম্যাকলেইন পা থেকে জুতো খুলে ফেলে খানিকটা জলে নেমে গেলেন, তারপর দিগন্তের দিকে তাকিয়ে রইলেন উদাসভাবে।

কয়েকদিন আগেই ন্যাটালি উড নামের আর একজন নায়িকার মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদ আমরা কাগজে পড়েছি। ‘ওয়েস্ট সাইড স্টোরি’-তে দারুণ অভিনয় করেছিলেন ন্যাটালি উড। তিনি এখানে একটা ছবির শুটিং-এর অবসরে একলা কিছুক্ষণ সময় কাটাবার জন্য একটা ছোট্ট নৌকো নিয়ে ভেসে পড়েছিলেন সমুদ্রে। কিছুক্ষণ বাদে দেখা গেল নৌকোটি ফাঁকা। সমুদ্রে ফাঁকা নৌকো দেখলেই অন্য নৌকো চালকরা বিচলিত হয়ে ওঠে। পরে ন্যাটালি উড-এর জলে ডোবা শরীর উদ্ধার করা হয়েছিল। দুর্ঘটনা না তিনি আত্মহত্যা করেছেন, তা বোঝা গেল না। উনি সাঁতার জানতেন। সার্থকতা অনেক সময় মানুষকে চরম অসুখী করে দেয় বোধহয়। ন্যাটালি উডের পেটে অনেকখানি অ্যালকোহল পাওয়া গিয়েছিল।

আমরা ভাবলুম, ন্যাটালিউড নিশ্চয়ই শার্লি ম্যাকলেইন-এর খুব বান্ধবী ছিলেন, সেই জন্য উনি এখনও সেই দুঃখ ভুলতে পারছেন না।

দীপকদা বললেন, এই রে, এই নায়িকাটিও আবার আত্মহত্যা করবে না তো? অনেকখানি জলে নেমে যাচ্ছে যে।

আমি বললুম, না, না, শার্লি ম্যাকলেইন খুব ভালো মেয়ে। মদটদ খায় না।

মেজদি বললেন, তুমি এমনভাবে বলছ, যেন ও তোমার বান্ধবী?

আমি বললুম, বান্ধবী না হলেও ওঁর সঙ্গে আমার আলাপ আছে। একদিন অনেকক্ষণ একসঙ্গে থেকেছি।

সকলে আমার দিকে এমনভাবে তাকাল, যেন আমি একটা ডাহা মিথ্যুক। সত্যি কথা সরলভাবে বললে কেউ বিশ্বাস করে না। এরা ভাবছে শার্লি ম্যাকলেইন হলিউডের টপ হিরোইনদের একজন, বিরাট বড়লোক, আর আমি কলকাতার একটা ফ্যাফ্যা করে ঘুরে বেড়ানো ছোঁকরা, আমাদের মধ্যে পরিচয় হওয়া অসম্ভব। কিন্তু এরকম অসম্ভবও সম্ভব হয় মাঝে মাঝে।

আমি বললুম, শার্লি ম্যাকলেইন প্রায়ই কলকাতায় যান। অন্তত দুবার যে গেছেন, তা আমি নিজেই জানি। ডায়মন্ডহারবারের কাছে একটা অনাথ আশ্রম আছে। একজন বিদেশি পাদরি সেই আশ্রমটি চালান। শার্লি ম্যাকলেইন সেই আশ্রমকে অনেক সাহায্য করেন, টাকা তুলে দেন।

এবারে মেজদি এবং শিবাজি দুজনেই স্বীকার করল যে এরকম একটা খবর দেশে থাকতে তারা কাগজে পড়েছে বটে একবার। গ্র্যান্ড হোটেলে শার্লি ম্যাকলেইন কী যেন একটা ফাংশান করেছিল।

আমি বললুম, একজ্যাকটলি। সেই ফাংশান উনি করেছিলেন অনাথ আশ্রমের টাকা তোলার জন্য। তারপর নিজে ডায়মন্ডহারবারের সেই আশ্রমেও গেছেন।

দীপকদা বললেন, তোমার সঙ্গে কোথায় দেখা হল? তুমি কি সেই অনাথ আশ্রমে অনাথ বালক হয়ে ছিলে নাকি?

–প্রায় তাই বলতে পারেন। আমার এক মাসতুতো দাদা ওই অনাথ আশ্রমের সঙ্গে খানিকটা যুক্ত। সেই জন্য আমি ওখানে কয়েকবার গেছি। সবচেয়ে বড় কথা এই, কলকাতা থেকে শার্লি ম্যাকলেইন যখন ডায়মন্ডহারবারে যাচ্ছিলেন, তখন সেই গাড়িতে আমি জায়গা পেয়েছিলুম। গাড়িটা প্রায় খালিই যাচ্ছিল, উনিই বললেন, দু-একজন এই গাড়িতে আসুক না। তারপর আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, এই, তুমি এসো। তারপর যেতে-যেতে অনেক গল্প হল।

দীপকদা বলেন, শার্লি ম্যাকলেইন নাচ-গানের ছবিতে অভিনয় করে বটে, কিন্তু এমনিতে খুব তেজি মহিলা। আমি একটা ঘটনা জানি, ওঁর একটা ছবি ইন্ডিয়াতে রিলিজ আটকে দেওয়া হয়েছিল। তারপর কী একটা উপলক্ষে লন্ডনে ওঁর সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধির দেখা। একগাদা লোকজনের মাঝখানে শার্লি ইন্দিরা গান্ধিকে জিগ্যেস করল, আপনাদের দেশে নাকি ডিমক্রেসি আছে?তাহলে আমার ছবিটা দেখাতে দিচ্ছেন না কেন?ইন্দিরা গান্ধি অপ্রস্তুতের একশেষ। দেশে ফিরেই ছবিটি রিলিজের ব্যবস্থা করে দেন।

জয়তীদি মুচকি হেসে আমার পিঠে একটা ছোট্ট ধাক্কা দিয়ে বললে, তবে তো দেখছি তোমার গার্ল ফ্রেন্ড। যাও, গিয়ে কথা বলো।

আমি বললুম, ধ্যাৎ। আমায় উনি চিনতে পারবেন কেন? মেজদি বোধহয় তখনও পুরোপুরি আমার কথা বিশ্বাস করেননি, তাই বললেন, না, না, ওর কথা বলার দরকার নেই।

শার্লি ম্যাকলেইন স্কার্ট ভিজিয়ে প্রায় হাঁটু পর্যন্ত জলে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এবার আস্তে আস্তে উঠে এলেন।

তারপরেই সেই চমকপ্রদ ঘটনাটি ঘটল।

শার্লি ম্যাকলেইন কৌতূহলী চোখে আমাদের দলটির দিকে তাকালেন। শাড়িপরা মহিলা দেখলে এ-দেশের মহিলারা বেশ আকৃষ্ট হয়।

শার্লি আমাদের উদ্দেশে বললেন, হাই!

আমাদের মধ্যে জয়তীদিই সবচেয়ে সপ্রতিভ। উনি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, হাই।

শার্লি কয়েক পা এগিয়ে এলেন আমাদের দিকে। তারপর আমাদের আর একটু ভালো করে দেখে নিয়ে জিগ্যেস করলেন, বাই এনি চ্যানস, আর ইউ অল ফ্রম খ্যালখাটা?

জয়তীদি বললেন, ইয়া।

এরপর সেই ভুবনমোহিনী সরাসরি আমার মুখের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে জিগ্যেস করলেন, ডিডনচাই মিটয়ু সামহোয়ার বাফোর?

চিত্রতারকার এরকম অত্যাশ্চর্য স্মৃতিশক্তি? এ যে অবিশ্বাস্য। হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে এঁদের দেখা হয়। তবে কি আমার বোঁচা নাক এবং ছোট ছোট কুতকুতে চোখের জন্য বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অসুন্দর পুরুষ হিসেবে আমায় উনি মনে রেখেছেন?

আমি থতমত খেয়ে বললুম, হ্যাঁ, হ্যাঁ, আপনার কি ডায়মন্ডহারবার বলে একটা জায়গার কথা মনে আছে? সেখানকার অনাথ আশ্রম…আমি সেবারে আপনার সঙ্গে অনেক কথা বলেছিলাম…

শার্লি বললেন, ডায়মন্ডহারবার। অফ খোর্স। কী চমৎকার নাম। সেই বয়েজ হোম…তার অবস্থা এখন…

কথা বলতে-বলতে থেমে গিয়ে তিনি সকলের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলেন, তোমাদের এখন কি খুব জরুরি কাজ আছে? এসো না আমার বাড়িতে…কিছুক্ষণ গল্প করা যাবে। আমি ডায়মন্ডহারবারের সেই বয়েজ হোম সম্পর্কে খবরটবর জানতে চাই।

আমি সগর্বে আমার সঙ্গিনী ও সঙ্গীদের দিকে তাকালুম। সব সময় আমায় হেলা তুচ্ছ করো, কিন্তু বেভার্লি হিলস, যেখানে রাজা-রাজড়ারাও সহজে প্রবেশ অধিকার পায় না, সেখানে নেমন্তন্ন জোগাড় করার হিম্মত তোমাদের কারুর আছে?

এক কথায় এরকম নেমন্তন্ন গ্রহণ করা উচিত কি না এই ভেবে দীপকদারা ইতস্তত করছিলেন, কিন্তু শার্লি আমাদের দ্বিধার বিশেষ সুযোগ দিলেন না। মেজদি আর জয়তীদির দিকে এগিয়ে এসে খুব আন্তরিকভাবে বললেন, এসো, এসো। বেশিক্ষণ আটকে রাখব না।

জয়তীদির দুই মেয়েকে রেখে আসা হয়েছে দীপকদার এক বোনের বাড়িতে। ওরা খুব মিস করল। আমরা ভাগাভাগি করে দুটি গাড়িতে উঠলুম। এবারও আমার স্থান হল শার্লি ম্যাকলেইনের গাড়িতে। শার্লি নিজেই গাড়ি চালান।

বেভার্লি হিলস-এ আমরা আগেও একবার ঘুরে গেছি। পাহাড়ের গায়ে গায়ে এক-একটা বাড়ি আর নিরিবিলি ঝকঝকে রাস্তা। এর মধ্যে এক-একটা বাড়ি এক-একজন বিখ্যাত স্টারের, কোনটা কার বাড়ি তা অবশ্য বোঝবার উপায় নেই। আগেরবার আমরা কল্পনাই করতে পারিনি যে এই রকম কোনও বাড়িতে ঢুকব।

শার্লি ম্যাকলেইন কতবার বিয়ে করেছেন কিংবা বর্তমানে তাঁর কোনও স্বামী আছে কি না তা আমি জানি না। জিগ্যেস করা যায় না। জয়তীদির বড় মেয়ে জিয়া সব খবর রাখে, সে থাকলে নিশ্চয়ই বলতে পারত। ওঁর বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই যেটা নজরে পড়ে, তা হল নির্জনতা। বেশ বড় বাড়ি, সামনে বাগান, কিন্তু কোনও লোকজন চোখে পড়ে না। একটি মাত্র ঘরে আলো জ্বলছে। গেটে কোনও দরোয়ান নেই, সেক্রেটারি বা বডিগার্ড জাতীয় কেউ অভ্যর্থনা করতে ছুটে এল না। এত বড় বাড়িতে এই ধনী মহিলা একা থাকেন নাকি? প্রথমেই মনে হয়, এসব বাড়িতে ডাকাতি করা তো খুব সোজা!

বাড়ির মধ্যে আমাদের দ্বিতীয় চমকটি অপেক্ষা করছিল।

বসবার ঘরটি অতি প্রশস্ত। এক সঙ্গে অন্তত পঞ্চাশজন লোক এঁটে যায়। ফিল্ম স্টারদের বাড়িতে প্রায়ই বড় বড় পার্টি হয়, সেই জন্যই এরকম ঘর দরকার। সেই ঘরের এক কোণে দুজন বেশ বুড়ো লোক গেলাস হাতে নিয়ে প্রায় ফিসফিস করে কথা বলছে। শার্লি ঘরে ঢুকে ওঁদের দেখতে পেয়ে বললেন, হাই গ্রেগ! হাই অ্যাল!

আমার প্রায় দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। গ্রেগরি পেক আর অ্যালেক গিনেস। এই দুজনই যে আমার প্রথম যৌবনের হিরো। গ্রেগরি পেকের ছবি এলে পাগলের মতন দেখতে ছুটতাম। আর অ্যালেক গিনেস, সেই ব্রিজ অন দা রিভার কোয়াই-এর নায়ক! পরদার দুই দেবতা জলজ্যান্ত অবস্থায় বসে আছে আমাদের সামনে!

দুজনেই বেশ বুড়ো হয়ে গেছেন। কিছুদিন আগেই ‘বয়েজ ফ্রম ব্রাজিল’ নামে একটা ফিল্মে গ্রেগরি পেককে বুড়ো অবস্থাতেই দেখেছি, সেইজন্য চিনতে অসুবিধা হল না। তবে রোমান হলিডের নায়কের সেই হাসিটি এখনও একই রকম আছে মনে হল।

আমাদের সঙ্গে শার্লি ওঁদের পরিচয় করিয়ে দিতে ওঁরা দুজনেই সসম্ভ্রমে উঠে দাঁড়ালেন। কিন্তু আমাদের দেখে ওরা খুব খুশি হয়েছেন বলে মনে হল না। ওঁরা বোধহয় শান্ত নিরিবিলি সন্ধ্যা কাটাতে চেয়েছিলেন, তার মধ্যে এই ভারতীয় উৎপাত পছন্দ হবে কেন?

গ্রেগরি পেক তাঁর সেই বিখ্যাত গলায় শার্লিকে বললেন, অ্যাল প্যাচিনো আর মেরিল স্ট্রিপ একটুবাদেই আসবে। ওরা কি একটা জরুরি ব্যাপারে মিটিং করতে চায়। তোমাকে ফোন করেছিল, মনে নেই।

শার্লি বললেন, হ্যাঁ, মনে আছে। অ্যাল প্যাচিনো পরে আবার ফোন করে জানিয়েছে যে সে আটটার আগে আসতে পারবে না। তার আগে আমার কলকাতার বন্ধুদের সঙ্গে একটু গল্প করে নিই।

শার্লি সুমধুর টুংটাং রবে একটা ঘণ্টা বাজাতেই সঙ্গে-সঙ্গে একজন জাপানি পরিচারক এসে হাজির হল, তাহলে বাড়িটা একেবারে জনহীন নয়। কিন্তু এরা এরকম নিঃশব্দে থাকে যে বোঝাই যায় না।

শার্লি জিগ্যেস করলেন, আমরা কে কী পানীয় নেব। উনি নিজের জন্য চাইলেন শুধু এপ্রিকটের রস।

তারপর আমরা গল্প করতে বসলুম।

কিন্তু গল্প ঠিক জমল না। শার্লির অনবরত ফোন আসতে লাগল। উনি উঠে-উঠে ফোন ধরছেন আর কথা থেমে যাচ্ছে। টুকরো-টুকরো ফোনের সংলাপ শুনে বুঝতে পারলুম, আরও অনেকে এ বাড়িতে আজ আসবে। কী একটা ব্যাপারে চিত্র তারকারা বেশ উত্তেজিত।

জয়তীদি আমায় বললেন, এই শোনো, উনি আমাদের ডেকে এনে খুবই ভদ্রতা করেছেন। এখন আমাদের পক্ষে ভদ্রতা হল খুব তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া। এঁরা আজ ব্যস্ত আছেন।

সুতরাং আমরা সবাই এক সঙ্গে উঠে দাঁড়ালুম। শিবাজি সকলের অটোগ্রাফ নিল। শার্লি ম্যাকলেইন বললেন, শিগগিরই ওঁর একটা শুটিং আছে জাপানে, তখন একবার কলকাতায় যাবেন। তখন আবার নিশ্চয়ই দেখা হবে?

আমরা বললুম, নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই।

বাইরে বেরিয়ে এসে শিবাজি বলল, গ্রেগরি পেক আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেছে, কলকাতায় কেউ শুনলে বিশ্বাস করবে?

এবার আমার প্রশ্ন : সরলমতি পাঠকপাঠিকারা আমার এই কাহিনিটি বিশ্বাস করেছেন তো? এরকমভাবেও যে ভ্রমণ কাহিনি লেখা যায়, তার একটি নমুনা দেখাবার জন্যই এবারের এই রচনা। পুরো ব্যাপারটাই বানানো। এমনকী শার্লি ম্যাকলেইনের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়েরও ব্যাপারটাও গুল। লস এঞ্জেলিসে বেভার্লি হিলে ঘুরে-ঘুরে কোনও নায়ক-নায়িকার দর্শন পাওয়া তো দূরে থাকুক, চিনতে পারা যায় এমন কোনও একস্ট্রাকেও আমরা দেখতে পাইনি।