[সোর্স না জানা অজানা গল্প]

১৮. লস এঞ্জেলিস শহরটির ডাক নাম এল এ

লস এঞ্জেলিস শহরটির ডাক নাম এল এ। এরকম একটা জগঝম্প মার্কা শহর সারা দুনিয়ায় আর আছে কিনা সন্দেহ। এটা একটা শহরই না। অনেকগুলো উপনগরী সুতো দিয়ে জুড়ে-জুড়ে তৈরি হয়েছে এই এল এ।

নিউ ইয়র্ক শহর যেমন ওপর দিকে বাড়ছে, উঁচু হতে-হতে প্রায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে, লস এঞ্জেলিস বাড়ছে তেমন লম্বায়। এই শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ইচ্ছে মতন ঘুরে বেড়াবার কথা কল্পনাও করা যায় না। এই শহরে পনেরো-কুড়ি বছর ধরে আছেন এমন নাগরিকরাও যখন তখন এ শহরে রাস্তা হারিয়ে ফেলেন। কারুর বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে গেলে, শুধু সে বাড়ির ঠিকানা জানাই যথেষ্ট নয়, নিমন্ত্রণকর্তার কাছ থেকে সে বাড়িতে পৌঁছবার নির্দেশ দু-তিনবার শুনে মুখস্ত করে নিতে হয়। রাত আটটায় নেমন্তন্ন, রাত সাড়ে দশটায় পঞ্চাশ-ষাট মাইল ঘোরাঘুরি করে বিধ্বস্ত চেহারায় অতিথি এসে ঢুকলেন, এটাও আশ্চর্য কিছুনয়।

নিউ ইয়র্কের সঙ্গে লস এঞ্জেলিসের তুলনা এসেই পড়ে বারবার। এই দুই শহরের মধ্যে বেশ একটা রেষারেষির ব্যাপার আছে, ঠাট্টা-ইয়ার্কির সম্পর্কও আছে, অনেকটা আমাদের ঘটি বাঙালের ঝগড়ার মতন। আমাদের ঘটি বাঙাল, ওদের ইস্ট কোস্ট-ওয়েস্ট কোস্ট। এর মধ্যে পূর্ব উপকূল হল ঘটি আর পশ্চিম উপকূল বাঙাল।

কারণ, পূর্ব উপকূল তুলনামূলকভাবে পুরোনো অর্থাৎ বনেদি, আর পশ্চিম উপকূলের শহর টহর তো সেদিনকার ছোঁকরা! লস এঞ্জেলিস শহরটার নামের উচ্চারণের মধ্যেই যেন আছে টাকার ঝনঝনানি, যদিও নিউ ইয়র্ক শহরেই আছে সেই বিখ্যাত ওয়াল স্ট্রিট, যেখানে চলে ক্যাপিটালিস্ট দুনিয়ার সব বড়-বড় ধন-দৈত্যদের ফাটকা।

সবচেয়ে মজার কথা শুনেছিলুম টেলিভিশনে একটি ‘সাবান নাটকে’। (সাবান নাটকের ব্যাপারটা পরে বিস্তৃতভাবে বলা যাবে এখন সেই নাটকের এক নায়ক (এই সব নাটকে অনেক নায়ক-নায়িকা থাকে) বলছিল, কীরকম মেয়ে তার পছন্দ। সে বলল, তার স্বপ্নের নায়িকা হচ্ছে সেই রকম, যার রূপ হবে ওয়েস্ট কোস্টের মতন, আর মন হবে ইস্ট কোস্টের। এক সাহেবকে এই ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিতে বলেছিলুম। সে বলল, ব্যাপারটা কী জানো, পশ্চিম উপকূলের মেয়েদের মাথার চুল সত্যিকারের সোনালি হয়, মুখ ও শরীরের ডৌল বেশ কোমল আর নিখুঁত। কিন্তু বুদ্ধি? বুদ্ধিতে নিউ ইয়র্কের মেয়েরা অনেক তীক্ষ্ণ। সুতরাং এই-এই দুটোকে যদি মেলানো যায়…।

শুধু নারী নয়, নগরী হিসেবেও তুলনা করলে নিউ ইয়র্কের তুলনায় এল এ শহরটি দেখতে অনেক বেশি সুন্দর। তবু, আমায় যদি কেউ জিগ্যেস করে এই দুটি শহরের মধ্যে কোনটি আমার বেশি পছন্দ, আমি বিনা দ্বিধায় নিউ ইয়র্কের নাম বলব। নিউ ইয়র্কের অনেক রাস্তা বেশ ভাঙাচোরা, এখানে সেখানে ময়লা পড়ে থাকে, অনেকটা কলকাতা-কলকাতা ভাব, তবু অসাধারণ প্রাণচাঞ্চল্য আছে ওই শহরটির। সেই তুলনায়, এল এ একেবারে ঝকঝকে তকতকে এবং কৃত্রিম।

এল এ শহরটির আর একটি দুর্ভাগ্য এই যে, এই শহরটি আমার, আমি একে ভালোবাসি, এইরকম গর্ব করার কেউ নেই। এই শহরটা বারো ভূতের। সবাই আসে এটাকে লুটেপুটে নেওয়ার জন্য। কিন্তু নিউ ইয়র্কের নাগরিকরা তাদের শহরটির জন্য গর্ব বোধ করে। ‘আই লাভ এন ওয়াই’ এরকম লেখা বড় বোতাম কিনতে পাওয়া যায়, অনেকেই সেরকম বোতাম কিনে বুকে লাগিয়ে ঘোরে। যারা খাঁটি আমেরিকান নয়, যেমন ইহুদি বা কৃষ্ণকায়রা (খাঁটি আমেরিকান হচ্ছে বোলতারা। বোলতা অর্থাৎ ওয়াসপ, অর্থাৎ হোয়াইট–আঙ্গলো-স্যাক্সন এবং প্রোটেস্টান্ট) তাদেরও সাহিত্য পড়লে দেখা যায়, তারা নিউ ইয়র্ক শহরটাকে খুব প্রিয় আর নিজস্ব মনে করে। এল এ নিয়ে সেরকম কোনও সাহিত্যও নেই।

লস এঞ্জেলিস বলতেই প্রথমে মনে পড়ে হলিউডের কথা। যদিও এই বিশাল শহরে হলিউড একটা পাড়া মাত্র। দূর থেকে দেখা যায় পাহাড়ের গায়ে হলিউডের নাম খোদাই করা।

হলিউডের প্রতিষ্ঠা নিয়ে একটা বেশ মুখরোচক গল্প আছে। চলচ্চিত্র শিল্পের গোড়ার দিকে আমেরিকান সিনেমার কেন্দ্র ছিল নিউ ইয়র্ক, বড়-বড় কোম্পানিগুলোর অফিস ছিল ওখানেই। সেই যুগের একজন পরিচালক, যার নাম সিসিল বি ডিমিল (যিনি মার্কিনি ভাষায় ঢাউস-ঢাউস হিন্দি ফিলম বানাবার জন্য বিখ্যাত) একটা ছবির আউটডোর শুটিং-এর জন্য দলবল নিয়ে এসেছিলেন আরিজোনা রাজ্যের একটি জায়গায়। ট্রেন থেকে নেমেই সিসিল বি ডিমিল বললেন, ওরে বাস রে, এ কী পাণ্ডববর্জিত জায়গা! উঃ কী গরম! এ যে মরুভূমি। না, না, এখানে শুটিং চলবে না। ট্রেনটা তখনও দাঁড়িয়ে ছিল, সেই ট্রেনেই আবার সবাই হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়ল। ডিমিল সদলবলে নামলেন একেবারে ট্রেন শেষ পর্যন্ত যেখানে গিয়ে থামল, সেখানে। সেখানকার আবহাওয়া খুব মনোরম, নাতিশীতোষ্ণ। সমুদ্রের ধারে, সন্ধের পর চমৎকার বাতাস দেয়, এখানে লোকজনের ভিড়ও তেমন নেই। শহরের উপকণ্ঠে একটা নিরিবিলি পাহাড়ি গ্রাম মতন জায়গা বেছে নিয়ে ডিমিল কোম্পানিকে টেলিগ্রাম পাঠালেন, শুটিং-এর খুব ভালো জায়গা পেয়েছি।

সেই গ্রামটির নামই হলিউড। প্রথমে নাকি একটা মাছের গুদাম ভাড়া করে স্টুডিও বানানো হয়েছিল। এখন সেখানে এলাহি কারবার।

একদিন দেখতে গিয়েছিলুম স্টুডিও পাড়া।

এমনি-এমনি তো ঢুকে পড়া যায় না, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। একটি কোম্পানি তাদের স্টুডিও এলাকায় প্রত্যেকদিন টুরের ব্যবস্থা করে। তা বলে সত্যি সত্যি শুটিংও দেখা যায় কিংবা শুকনো কয়েকটা সেট বা ক্যামেরা দেখিয়েও ছেড়ে দেয় না। এন্টারটেইনমেন্ট ব্যাপারটা এরা ভালো জানে, আপনার কাছ থেকে পয়সা নিলে তা যাতে পুরোপুরি উসুল হয়, সে দিকে এদের নজর আছে। দশ টাকার টিকিটে সারাদিন ধরে এরা কতরকম জিনিস যে দেখায়, তার ইয়ত্তা নেই।

মূল সফরটি হয় একটি ট্রামে। টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকবার পরই একজন জানিয়ে দেবে যে তখন থেকে দেড় কি দু-ঘণ্টা বাদে আপনার জন্য সেই ট্রামে জায়গা নির্দিষ্ট থাকবে। এতক্ষণ সময় কিন্তু কোনও বেঞ্চে বসে বাদাম চিবিয়ে কাটাতে হবে না, তারও ব্যবস্থা আছে। আলাদা আলাদা জায়গায় কয়েকটি নাটকীয় প্রদর্শনী আছে, তার যেকোনও একটায় ঢুকে পড়া যায়। যেমন একটাতে আছে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের বাড়ি, সেখানে সত্যিকারের জ্যান্ত ভূত ও ভ্যামপায়ার আসে, নানারকম কাণ্ডকারখানা হয়, তারপর শেষে লাগে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ও হালকের (মানুষ দৈত্য) মধ্যে মারামারি। অন্য একটি জায়গায় দেখানো হয় যত রাজ্যের পোষা জন্তু-জানোয়ারের খেলা। আর একটিতে থাকে কোনও ওয়েস্টার্ন ছবির একটি দৃশ্য, ছবি নয়, বাস্তব। এক বাড়ির ছাদ থেকে অন্য বাড়ির ছাদে লাফিয়ে চলে যাচ্ছে নায়ক, নীচ থেকে ভিলেন তাকে গুলি করল, রক্তাক্ত দেহে নায়ক সেই তিনতলা থেকে এক তলায় পড়ে গিয়েও বাঁ-হাতে হাঁটুর তলা দিয়ে গুলি চালিয়ে দিল। অর্থাৎ এই সব দৃশ্যে যে ট্রিক ফটোগ্রাফি নেই, স্টান্টম্যানদের কৃতিত্ব, দেখিয়ে দেওয়া হল সেটাই।

এইরকম সব নানা ব্যাপার দেখে সময় কাটবে। পুরো এলাকাটা সাজানো কোনও অষ্টাদশ শতাব্দীর শহরের মতন, সেইরকম সব দোকান, সেইরকম সাইন বোর্ড। এরই মধ্যে এক জায়গায় চোখে পড়ে যাবে জ’স ফিলমের নকল হাঙরটি।

এরপর মূল সফর।

ট্রামে চড়লে একজন গাইড নানা রকম রঙ্গকৌতূক করে হলিউডের বিভিন্ন সব মজার ঘটনা শোনাবে। মাঝে-মাঝে ট্রাম থামিয়ে নিয়ে যাবে এক-একটা স্টুডিয়োতে, দেখাবে স্টার ওয়ার ছবির সেট, বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মেকআপ রুম, কিংবা সুপারম্যান কীভাবে আকাশ দিয়ে উড়ে যায় সেই কায়দা। দর্শকদের মধ্যে দু-একজনকে বেছে নিয়ে তাদেরও উড়িয়ে দেবে।

ট্রামটার যাত্রাপথেও নানা রকম রোমাঞ্চ আছে। একটি নড়বড়ে কাঠের ব্রিজ পার হওয়া মাত্রই ভেঙে পড়ে যাবে ব্রিজটি। কোথাও সামনে জলাশয়, কিন্তু ট্রামটি জলের ওপর দিয়ে চলতে চাইলেই জল দু-পাশে সরে গিয়ে রাস্তা করে দেবে। মোজেস যে-ভাবে দলবল নিয়ে সমুদ্র পার হয়েছিলেন, দেখিয়ে দেবে সেই দৃশ্যটি। কোথাও মুখোমুখি অন্য গাড়ির সঙ্গে কলিশন হতে হতেও বেঁচে যাওয়া যাবে। কিংবা গাইড বলবে, এবার কিন্তু বৃষ্টি নামবে। সঙ্গে-সঙ্গে ঝুপঝুপ করে প্রবল বর্ষণ। কিংবা বলবে, ডান পাশে দেখুন উত্তর মেরু। অর্থাৎ একটা বিরাট সমতল মাঠে ময়দা ছড়িয়ে উত্তর মেরুর বরফ তৈরি করা হয়েছে। শেষের দিকে ট্রামটা ঢুকে যায় একটা গুহার মধ্যে, মনে হয় যেন পৃথিবীর পেটের মধ্যে চলে যাচ্ছে। জার্নি টুদা সেন্টার অফ দা আর্থ।

পুরো জায়গাটা যে কত বড়, তা ঠিক ধারণা করা যায় না। কী যেন একটা হিসেব দিয়েছিল, বোধহয় আট-দশ বর্গ কিলোমিটার। এই হল একটা মাত্র স্টুডিয়োর নমুনা।

কন্ডাকটেড টুর আমার কখনও বিশেষ পছন্দ হয় না। কিন্তু এ রকম টুর না নিলে তো হলিউডের স্টুডিয়ো দেখবার অন্য কোনও উপায়ও নেই। আমার সঙ্গে তো ডাসটিন হপম্যান কিংবা এলিজাবেথ টেলরের খাতির নেই যে আমাকে ওদের শুটিং দেখাতে নিয়ে যাবে! টিকিট কেটে এ জিনিস দেখাও একটা সত্যিকারের নতুন অভিজ্ঞতা।

এল এ-র অন্য বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থান হল ডিজনিল্যান্ড।

সেখানে গিয়ে আমার মন খারাপ হয়ে যায়। আমার চেনা যত বাচ্চা ছেলেমেয়ে আছে, তাদের জন্য কষ্ট হয়। আমার বদলে ওদেরই তো আসা উচিত ছিল এখানে।

পুরো ডিজনিল্যান্ডটিকেই একটি স্বপ্নরাজ্য করে রাখা হয়েছে। যন্ত্রপাতির সঙ্গে কল্পনা মিশিয়ে এক অপরূপ রূপকথা।

ডিজনিল্যান্ডের প্রধান আকর্ষণ এর বিশালত্ব। আমেরিকানদের সব কিছুই খুব বড়-বড়। এবং বড় হলেই যে তা আকর্ষণীয় বা সুন্দর হবে, তার কোনও মানে নেই। কিন্তু ডিজনিল্যান্ডের ক্ষেত্রে এ প্রশ্ন ওঠে না। সত্যিই এটা অভাবনীয় রকমের বড় এবং সুন্দর।

টিকিট কেটে ঢুকতে হয় এবং সব জায়গাটাই ঘেরা। কিন্তু এরই মধ্যে আছে একাধিক পাহাড়, নিবিড় জঙ্গল, বেশ চওড়া নদীও একাধিক, অনেকগুলি পার্ক, এক একটা শহরের টুকরো এবং বহু মণ্ডপ। এবং এর পরেও অনেক কিছু দ্রষ্টব্যই মাটির নীচে।

ডিজনিল্যান্ডেও যেতে হয় সকালে, ফিরতে হয় মধ্যরাতে। তাতেও অবশ্য সব কিছু দেখে শেষ করা যায় না।

ডিজনিল্যান্ডের বর্ণনা দিয়ে কোনও লাভ নেই, কেন না, এর কোনওটাই চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এবং নিজের রুচি অনুযায়ী বেছে নেওয়ার অজস্র দ্রষ্টব্য এবং উপভোগ্য ব্যাপার আছে। যার উত্তেজনা কিংবা বিপদের অভিজ্ঞতা ভালো লাগে, তার জন্যও যেমন আছে ব্যবস্থা, আবার যে ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান বা মহাশূন্য পছন্দ করে, তাকে পাঠিয়ে দেওয়া যায় সেখানে, কেউ ভুতের বাড়িতে গিয়ে অজস্র ভূত-পেত্নি দেখতে পারে, আর যে ভালোবাসে নরম মধুর দৃশ্য বা সঙ্গীত, সে তাও খুঁজে পাবে। অথবা কোনও মণ্ডপে না ঢুকে চুপচাপ মাঠে বসে থাকতেও তো ভালো লাগতে পারে। সেজন্য আছে অনেক খাবারের জায়গা এবং সুরম্য বিশ্রাম স্থান। এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাওয়ার জন্য আছে ঘোড়ায় টানা ট্রাম কিংবা পুরোনো আমলের ছাদখোলা দোতলা বাস, কিংবা আকাশ ট্রেন, সব বিনামূল্যে।

শুধু একটি প্রদর্শনীর কথা বলি, যেটি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিল, এটি দেখতে হয় একটি ছোট নৌকোয় চেপে, যেটি আপনা-আপনি চলে। পুরো মণ্ডপের মধ্যে খাল কাটা আছে, তার মধ্য দিয়ে এ রকম যাত্রীবাহী বহু নৌকো চলছে। এখানে দেখা যাবে মানুষের চেয়ে একটু ছোট সাইজের সব পুতুল এবং তাদের বাড়ি ঘর এবং পারিপার্শ্বিক। এই রকম পুতুল নিছক পঞ্চাশ বা একশোটা নয়, হাজার-হাজার। এখানে রয়েছে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের আদল, সেই রকম বিভিন্ন দেশের সাজপোশাক, সেই রকম পরিবেশ, এবং অন্তরীক্ষে বাজে প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট জায়গার আলাদা সঙ্গীত। সব মিলিয়ে এমন একটা ব্যাপার যা মনকে একেবারে অভিভূত করে দেয়। এই প্রদর্শনীটির নাম ‘ইটস আ ল স্মল ওয়ার্লড’। ওই শব্দগুলি দিয়ে একটি গানও বাজে শেষকালে, সেই গানের সুরটি যেন এখনও আমার কানে লেগে আছে।

এল এ শহরে দর্শনীয় ব্যাপার আরও আছে। কিন্তু আমার বুক কেঁপে উঠেছিল একজনকে দেখে। প্রথম দিন সন্ধেবেলাতেই তাঁকে দেখতে যাই। তাঁর নাম প্রশান্ত মহাসাগর। সব সমুদ্রের চেহারাই মোটামুটি এক রকম। কিন্তু ইনি প্রশান্ত মহাসাগর। সব সমুদ্রের রাজা। জলধিপতি, এই অনুভূতিতেই শ্রদ্ধা জাগে। মাউন্ট এভারেস্টকেও তো দূর থেকে দেখলে আর পাঁচটা বরফওয়ালা পাহাড়ের মতন দেখায়। তবু, মাউন্ট এভারেস্টের নাম শুনলেই বুক কেঁপে ওঠে না?

সমুদ্রের বুকের ওপর দিয়ে একটা সেতু অনেকখানি টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তার মাথায় একটা জেটি। সেখানে অনেকে বেড়াতে যায়। সেখানে যাওয়ার আগে আমি জলের কিনারায় গিয়ে খানিকটা জল আঁজলা করে তুলে প্রশান্ত মহাসাগরকে প্রণাম জানালুম।