[সোর্স না জানা অজানা গল্প]

১২. জয়তীদিকে যাদবপুরের ছাত্রী অবস্থায়

জয়তীদিকে যাদবপুরের ছাত্রী অবস্থায় যেরকম দেখেছিলুম, এখনও চেহারাটা ঠিক সেই রকমই আছে। ছিপছিপে লম্বা তন্বী, ঠোঁটে সব সময় একটা চাপা হাসির ভাব, জীবনটাকে যেন উনি একটা কৌতুক হিসেবে নিয়েছেন। সাহেবদের দেশে প্রবাসী হয়ে আছেন প্রায় চোদ্দো-পনেরো বছর, উনি যখন মাঝে-মাঝে দেশে বেড়াতে আসেন, তখন সবাই ওঁকে দেখে অবাক হয়। ইওরোপ-আমেরিকার খাদ্যে এখন এত বেশি প্রোটিন আর দুধ-মিষ্টির আধিক্য যে সকলেরই ধাত মোটা হয়ে যাওয়ার দিকে। সাহেব মেমদের মধ্যে এত বেশি মোটা-মোটা চেহারা আগে দেখা যেত না। এমনকী অনেক তরুণ-তরুণীর চেহারাও ভীম ভবানী বা হামিদা বানুর মতন। চেহারা ঠিক রাখার জন্য এখন ওরা শুরু করেছে জগিং, অর্থাৎ আস্তে-আস্তে দৌড়োনো। সকাল নেই, দুপুর নেই, রাত নেই দেখা যাবে কোনও নির্জন রাস্তায় একজন নিঃসঙ্গ মানুষ আপন মনে ছুটে চলেছে। অনেক সময় এমনও দেখা যায়, কোনও অফিসের বড় সাহেব লাঞ্চ আওয়ারের বিরতির সময় কোট-প্যান্ট-টাই খুলে একটা গেঞ্জি আর জাঙিয়া পরে নিয়ে ছুটতে বেরিয়ে গেলেন!

অনেক বাড়িতে গেলেই খাওয়া সম্পর্কে একটা আতঙ্কের ভাব দেখা যায়! এটা খাব না, ওটা খাব না! খেলেই ওজন বৃদ্ধি। অথচ কোনও রকম বাড়াবাড়ি না করেই জয়তীদি ফিগারটি রেখেছেন বেতস লতার মতন। অবশ্য মানিকদাও যেমন রোগা সেই রকম লম্বা। মানিকদার খাদ্য হচ্ছে দুটি কফি আর সিগারেট, দিনে প্রায় তিরিশ কাপ কালো কফি আর পঞ্চাশ-ষাটটা সিগারেট। মাঝে দু-একদিন জয়তীদির অনুরোধে মানিকদা সিগারেট একটু কমালেন, তখন কফি আর সিগারেট সমান হয়ে গেল, দুটোই পঁয়ত্রিশ!

ওঁদের দুই মেয়ে, জিয়া আর প্রিয়া। জিয়ার বয়েস এগারো, সে ইংরিজিতে কবিতা লেখে, পিয়ানো বাজায় এবং বাংলা ভোলেনি। কিন্তু প্রিয়ার বয়েস মাত্র ছয় হলেও তার ব্যক্তিত্ব অনেক বেশি, বাড়িতে তার উপস্থিতি সে কক্ষনো অন্যদের ভুলতে দিতে চায় না। তার প্রতি কারুর অমনোযোগী হওয়ার উপায় নেই। দুই বোনে কখনও ঝগড়া হলে ছোট বোনটিই প্রত্যেকবার জেতে এবং বড় বোনটি কেঁদে ফেলে। প্রিয়াও কবিতা লেখে। পিয়ানো বাজায়, বাংলা সে বলতে ভুলে গেলেও বুঝতে পারে সবই এবং তার মধ্যে অলিম্পিক-বিজয়িনী বালিকা-জিমনাস্ট হওয়ার সব রকম সম্ভাবনাই আছে।

এসব দেশে যেমন ভালো টাকা রোজগার করা যায়, সেই রকম খাটতেও হয় প্রচণ্ড। ফাঁকি দেওয়ার কোনও উপায় নেই। হঠাৎ ছুটি নেওয়ার উপায় নেই। সারা সপ্তাহ সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত কারুর প্রায় নিশ্বাস ফেলারও সময় নেই বলা যায়। সবাই তাকিয়ে থাকে শনি-রবিবারের জন্য। সে ছুটির দিন দুটো ফুরিয়ে যায় দেখতে-দেখতে, কারণ তখন সারতে হয় সারা সপ্তাহের জমে থাকা বাড়ির কাজ।

এ দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদেরও ফাঁকি দেওয়ার কোনও পথ নেই। কারণ পড়াশুনোর খরচ খুব বেশি। আমাদের মতন সবাই তো আর ঢালাও ভাবে বি-এ, এম-এ ক্লাসে ভরতি হয়ে যায় না। স্কুল-ফাইনালের সমতুল্য পড়া শেষ করলেই একটা কিছু চাকরি পাওয়া যায়। কোনও দোকান-কর্মচারী কিংবা ট্রাক-ড্রাইভারের উপার্জন কোনও অফিস-কেরানির চেয়ে কম নয়। গ্রে-হাউন্ড বাসের ড্রাইভারদের তো রীতিমতন ভারিক্কি অফিসার-অফিসার মনে হয়। সুতরাং উচ্চ শিক্ষার ইচ্ছে যদি থাকে কারুর, তাকে বেশ টাকা খরচ করে কষ্ট করে পড়তে হবে। যেহেতু এদেশের ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নেয় না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার খরচ জোগায় নিজের রোজগারে, সেই জন্য তারা জানে, একটা টার্মে ফেল করলে, পরের টার্মের জন্য তাকেই আবার টাকা জোটাতে হবে, তাই সে দিনরাত পড়াশুনা করে তাড়াতাড়ি পাশ করার চেষ্টা করে।

উচ্চ শিক্ষার কোনও বয়েস নেই এদেশে। আর্থিক কারণে কেউ পড়াশুনো ছেড়ে দিয়ে দু-পাঁচ বছর বাদে আবার শুরু করতে পারে। চাকরিতে উন্নতির কারণে যোগ্যতা অর্জনের জন্যও অনেকে মাঝবয়েসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স নেয়। পঁয়ষট্টি বছরের কোনও ঠাকুমার হঠাৎ মনে হল, জীবনে ভালো করে অঙ্কটা শেখা হয়নি, এখন শিখলে কেমন হয়? তিনি নিয়ে নিলেন একটা অঙ্কের কোর্স। কিংবা কেউ হয়তো যৌবন বয়সে পড়াশুনো অসমাপ্ত রেখে চাকরি বা বাণিজ্যে ঢুকে পড়েছিলেন, তারপর জীবনে টাকাপয়সা রোজগার হয়েছে অনেক, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেওয়া হয়নি বলে মনে একটা ক্ষোভ থেকে গেছে, সেই জন্য পরিণত বয়েসে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে গেলেন।

অবশ্য সবাইকেই কলেজে গিয়ে নিয়মিত ক্লাস করতে হয় না। তার জন্য আছে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে চিঠিপত্রে কিংবা টেলিফোনেও পাঠ নেওয়া যায়। বিজ্ঞানসম্মত পাঠব্যবস্থা আছে, পরীক্ষার মান সমান। মানিকদা এরকমই একটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগীয় প্রধান। তাঁর চাকরি, বলতে গেলে, ঘুমের সময়টুকু বাদ দিয়ে আর সব সময়ের জন্য। তিনি এ শহর ছেড়ে যখন তখন বাইরে চলে যেতে পারেন না, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে যেতে হবে। ইউনিভার্সিটিতে তিনি তো সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত কাটান বটেই, তা ছাড়াও তাঁর বাড়িতে যখনতখন তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা ফোন করে যেকোনও প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইতে পারে।

জয়তীদিরও এতদিন পরে পড়াশুনো করবার শখ হয়েছে। বিদেশে এসে প্রায় বারো বছর চুপচাপ থাকার পর উনি আবার ভরতি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি থাকতে থাকতেই জয়তীদির পরীক্ষা শুরু হল। ওরে বাবা, সে কি পরীক্ষার পড়া, সারা বাড়ি একেবারে তটস্থ। জয়তীদি শোওয়ার ঘরে পড়ছেন, বসবার ঘরে পড়ছেন, রান্না ঘরে পড়ছেন, এমনকী বোধহয় বাথরুমে গিয়েও পরীক্ষার পড়া পড়ছেন। সন্ধের সময় একটু ঘুমিয়ে নিয়ে ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাত বারোটার সময় জেগে সারা রাত পড়াশুনো। অবশ্য জয়তীদির খাটুনি সার্থক, রেজাল্ট বেরুলে দেখা গেল উনি নব্বই-এর ঘরে নম্বর পেয়েছেন। জয়তীদিকে জিগ্যেস করলুম, আপনি ফার্স্ট হয়েছেন নিশ্চয়ই? উনি ফরাসি কায়দায় কাঁধে ঢেউ তুলে বললেন, কী জানি।

এ দেশে বেশিদিন থাকলে একাকিত্ব বোধ আসতে বাধ্য। সারা সপ্তাহ কাজ, আর শুধু নিজের পরিবারের মধ্যে আবদ্ধ থাকা। এর মধ্যেই আনন্দের উপকরণ সংগ্রহ করে নিতে হয়। জয়তীদি অধিকাংশ সময় নিজেকে ডুবিয়ে রাখেন গানের মধ্যে। রবীন্দ্র-অতুলপ্রসাদ সঙ্গীতের কত যে স্টক ওঁর গলায় তার ঠিক নেই। যখনতখন মুক্তোর মতন নিখুঁত সুরের কথাগুলো ওঁর কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ে। দীপকদারও খুব রেকর্ড কেনার শখ, একদিন হঠাৎ ঝাঁ করে ঋতু গুহর নতুনতম এল পি খানা কিনে নিয়ে এলেন। সেদিন বাইরে বর্ষা, পাশে চায়ের সঙ্গে মুড়ি-বাদাম-কাঁচা লঙ্কা, তার সঙ্গে ঋতু গুহর গলার গান শুনতে-শুনতে ভুলে যাই কানাডায় না কলকাতায় আছি।

এরকম মাঝে মাঝে ভুলে যাওয়া যায়। কাছাকাছি, অর্থাৎ পনেরো-কুড়ি মাইলের মধ্যে বেশ কিছু বাঙালি আছেন। পনেরো-কুড়ি মাইল তো এদেশে কোনও দূরত্বই না, কুড়ি-পঁচিশ মিনিটের ব্যাপার। গাড়ি ছাড়া রাস্তায় ঘোরাঘুরির কথা কেউ চিন্তাও করে না। এরকম দুপুরে জয়তীদির এক পিসতুতো দিদি-জামাইবাবুরা থাকেন, সেখানে যাওয়া হয় মাঝে মাঝে। তা ছাড়া আরও কয়েকটি বাঙালি পরিবারের সঙ্গে ওঁদের ঘনিষ্ঠতা আছে। এক এক সপ্তাহান্তে এক এক বাড়িতে আড্ডা বসে।

সব বড় শহরেই ভারতীয়দের ক্লাব আছে। ভাষার ব্যবধানের জন্য বাঙালি-গুজরাতি পাঞ্জাবিদের আলাদা প্রতিষ্ঠানও থাকে। এডমন্টনের বেঙ্গলি ক্লাবের উদ্যোগে মাঝে মাঝে নাচ গানের জলসা, থিয়েটার হয় নিজেদের, কখনও-সখনও দেখা হয় বাংলা ফিল্ম। বাচ্চাদের বাংলা শেখাবার জন্য একটা সানডে স্কুলও করেছেন এঁরা। অবশ্য যেখানে বাঙালি থাকবে, সেখানে যে দলাদলিও থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। এঁর সঙ্গে ওঁর ঝগড়া, ইনি উপস্থিত থাকলে উনি আসবে না, অমুকের স্ত্রী তমুক বাড়িয়ে গিয়ে অন্য একজনের নামে কী যেন বলেছে, এরকম টিপিক্যাল বাঙালি ব্যাপারও যে এখানে বেশ স্বচ্ছন্দে প্রবাহিত, তা দুদিন থেকেই টের পেয়ে যাই।

দীপকদাদের বিশিষ্ট বন্ধু বিমল ভট্টাচার্য ওসব সাতে পাঁচে নেই। প্রথম দিন আলাপেই উনি আমাকে একটা বিড়ি উপহার দিলেন। অতি দুর্লভ বস্তু। গত বছর দেশ থেকে এক বান্ডিল বিড়ি এনেছিলেন, তার মধ্যে শেষ দুটি মাত্র বাকি ছিল।

এরপর থেকে উনি ক্রমাগত নানা রকম জিনিস উপহার দিয়ে যেতে লাগলেন। দেশলাই-এর ছদ্মবেশে রেডিও, কলমের ছদ্মবেশে লাইটার কিংবা আলপিনের মধ্যে ঘড়ি, এইসব জিনিস ওঁর খুব পছন্দ। অতদিন দেশ ছাড়া, তবু চেহারায়-পোশাকে ও ব্যবহারে উনি একেবারে মজলিশি বাঙালি। ওঁর স্ত্রী মীরার মুখখানি সব সময় হাসিতে ঝলমল আর অফুরন্ত প্রাণশক্তি। দারুণ রান্না করেন, আর সবাইকে ডেকে ডেকে খাওয়াতে ভালোবাসেন। রাত দুপুরে একদল ছেলে যদি ঘুম ভাঙিয়ে তুলে ওঁকে বলেন, মীরাদি, আপনার হাতের খিচুড়ি খেতে খুব ইচ্ছে করছে, উনি অমনি ঝাঁ করে খিচুড়ির সঙ্গে আরও নানান পদ বেঁধে ফেলবেন।

ওদের আর এক বন্ধু দিলীপ চক্রবর্তী, যিনি আমাকে উত্তর মেরুর রুই মাছ খাইয়েছিলেন, তিনি একটু স্বভাব-লাজুক। মানুষটি অতি মাত্রায় ভদ্রলোক। তাঁর স্ত্রী পর্ণার যেমন মিষ্টি স্বভাব, তেমনই রান্নার হাত। দেশে থাকলে এই সব মহিলারা অতি উচ্চপদস্থ অফিসারের স্ত্রী হিসেবে গণ্য হতেন। কোনওদিন রান্না ঘরে ঢুকতেন কিনা সন্দেহ, সংসারের ভার থাকত ঠাকুর-চাকরের ওপর। কিন্তু এখানে যেহেতু সবাইকেই নিজের হাতের রান্না করতে হয়, সেইজন্য রান্নার নানারকম এক্সপেরিমেন্ট করতে-করতে হাতটি অতি সুস্বাদু হয়ে যায়। জয়তীদিও ছানার সন্দেশ বানাতে জানেন। দেশে থাকতে আমি যত না মিষ্টি খেয়েছি, তার চেয়ে বেশি মিষ্টি খেতে হয়েছে এখানে এসে। যেকোনও বাড়িতে গেলেই সন্দেশ-রসগোল্লা খেতে হয়, সবই বাড়িতে তৈরি।

একটু দূরে থাকেন ডাক্তার মিহির রায়। ছিমছাম পরিচ্ছন্ন ধরনের মানুষ। তাঁর স্ত্রী সুপর্ণাও খুব সপ্রতিভ আর হাসিখুশি মহিলা। ওঁদের বাড়িতে একদিন নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে ডাক্তার রায় অনেক পুরোনো-পুরোনো বাংলা গানের রেকর্ড বাজিয়ে শোনালেন। সেই সন্ধ্যায় সেই ঘরের আবহাওয়া যেন পুরোপুরি কলকাতার হয়ে গেল। কিংবা বড়জোর বলা যায় শিলংকিংবা পুণা।

দীপকদা, বিমলবাবু আর দিলীপবাবু এক সঙ্গে হলেই তাস খেলতে বসেন। ব্রিজ। আমার অনেকদিন তাস খেলার অভ্যেস নেই, বিদ্যেটা একটু ঝালিয়ে নিয়ে ওঁদের পার্টনার হতে লাগলুম প্রায়ই। অনেক বাড়িতে যেমন একটা বেকার গলগ্রহ ভাগ্নে বা ভাইপো থাকে, আমার অবস্থা প্রায় সেই রকম। দীপকদা-জয়তীদিদের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে আছি, ওঁদের যেখানে যেখানে নেমন্তন্ন হয়, আমিও সেখানে সেখানে ওঁদের সঙ্গে যাই, অনেকে চোখের ইশারায় জিগ্যেস করে, এ আবার কে?

দীপকদা আমাকে ছাড়ছেনও না, আর এখানে আমার কিছু করবারও নেই। সারাদিন ফাঁকা বাড়িতে শুয়ে বসে বইটই পড়ি, কারণ একা-একা শহরে ঘুরে বেড়াবার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। সন্ধেবেলা ওঁরা বাড়ি ফিরলে কিছুক্ষণ আড্ডা হয়।

এখানে বাঙালিদের আর একটি মিলন-উপলক্ষ্য হল হিন্দি ফিল্ম। ভিডিও ক্যাসেটে সমস্ত হিন্দি ফিল্ম পাওয়া যায়, এমনকী যেসব ছবি এখনও ভারতে রিলিজ করেনি, সেইসব টাটকা ছবিরও। কিছু কিছু দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্মেরও ক্যাসেট পাওয়া যায় কিন্তু বাংলা ফিল্মের এখনও সে সৌভাগ্য হয়নি। এই ক্যাসেটগুলো কেনারও দরকার নেই, ভাড়া পাওয়া যায় সব জায়গায়, তাও ক্রমশই বেশ সস্তা হয়ে যাচ্ছে, যেমন ধরা যাক এক ডলার। বাড়ি থেকে বেরুতে হবে না, ঘরে বসেই ভি সি আর-এ দেখা যাবে পুরো একটা ফিল্ম। সিনেমা যেহেতু একা দেখে সুখ নেই তাই শুক্কুর-শনিবার রাত্তিরে কোনও না কোনও বাড়ি থেকে ডাক আসে, এই আমার বাড়িতে সিলসিলা এসেছে চলে এসো। কিংবা ইয়ারানা কিংবা এক দুজে কে লিয়ে কিংবা কাতিলে কি কাতিল! মার-দাঙ্গা-কান্নাকাটি-নাচ-গান-প্রেম-বিরহ-স্নেহ-প্রতিহিংসা ইত্যাদি সব কিছুই থাকে প্রত্যেক ফিল্ম।

এই রকম ডাক এলে দীপকদাদের সঙ্গে আমিও চলে যাই। কয়েক সপ্তাহ পরেই আমি আবিষ্কার করলুম, যে-আমি দেশে থাকতে কক্ষনো ওই সব সিনেমা দেখি না, সুদূর কানাডায় এসে সেই আমি রীতিমতন হিন্দি সিনেমার ফ্যান হয়ে গেছি। অন্যদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ধর্মেন্দ্রর ও অমিতাভ বচ্চনের তুলনামূলক আলোচনা করছি।