এবং এ জন্যেই

এই যে আজ অব্দি কোথাও আমি
একটা বাড়ি তৈরি করতে পারি নি, সেজন্যে আমার
কোনো দুঃখ নেই।
ব্যাঙ্কের গুহায় আমার লক্ষ লক্ষ টাকা
গা ঢাকা দিয়ে নেই বলে
দুঃখ আমার বুক আঁচড়ায় না বেড়ালের মতো।
পাঁচতলা হোটেলের স্যুইটে
সোফায় গা এলিয়ে
ঝাঁক ঝাঁক ক্যামেরা ঝলসিত
প্রেস-কনফারেন্স করবার সৌভাগ্য আনি নি, সেজন্যেও
দুঃখের ঢেউ
আছড়ে পড়ে না অস্তিত্বের তটে।

এতদিনে মেনে নিয়েছি
বস্তুত দুঃখ হলো ইলাসটিকে, যত বেশি টানো
তত যাবে বেড়ে আর এমন কিছু বিলাসী ব্যক্তি আছেন
যাঁরা দুঃখকে ময়ূরের কলাপের সঙ্গে
তুলনা করতে ভালোবাসেন। দুঃখকে তাঁরা
আঙুলের ডগায় দাঁড় করিয়ে দেখেন ওর মার্চপাস্ট।

তার অস্তিত্ব নেই, এ বিষয়ে কেউ
বৃহদায়তন দার্শনিক বই লিখলেও, পাড়ার পাঁচজন
কানে তুলবে না সেকথা।
কথার আরপ্যাঁচ যত উঁদুরেরই হোক,
এই থিসিস কেউ মেনে নেবে না যে সে নেই।
দুঃখ আছে এই গ্রহে
কোনো কোমল প্রাণীর মতো, যার ভেতর থেকে
যখন তখন হতে থাকে হিমশীতল, ধারালো ক্ষরণ।

আজকাল যখন আমি জুতোর ফিতে বাঁধি
কিংবা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে
দৃষ্টি মেলে দিই সুপুরি গাছের নির্জনতায়,
তখন দুঃখ আমার কাঁধে হাত রেখে ভরাট গলায়
বলে, আমি এসেছি।
অবাক হই না; কেননা ইদানীং
কী যে হয়েছে, আমার নিজের ঘরের ভেতর
ইচ্ছে হলেই
ফোটাতে পারি না গোলাপ, পারি না বইয়ে দিতে
মন্দাকিনীর ধারা, অথবা ডেকে আনা
সম্ভব হয় না আমার পক্ষে
সিরাজউদ্দৌলার কালের উদাসীন ঘোড়াগুলিকে।

কিন্তু সময় তার অ্যাসিডে সবকিছুর ধার
ক্ষইয়ে দেয় ক্রমে। কোনো কিছুই
ঠিক আগের মতো
থাকে না আর। সত্যি বলতে কি, সম্প্রতি দুঃখ যখন
আমার মুখোমুখি এসে বসে মোড়টায়
ওর প্রাচীন দীঘির মতো
চোখে চোখ রেখে আগের মতো দুঃখ আমার ওপর ঝুঁকে থাকে।