[সোর্স না জানা অজানা গল্প]

১৯. নিউ ইয়র্কের হার্লেম পাড়ায়

নিউ ইয়র্কের হার্লেম পাড়ায় এক বাড়ির রকে বসে তিনটি নিগ্রো ছোঁকরা আড্ডা দিচ্ছিল। বাড়ির মালিক একজন সাদা লোক। সে বলল ছোঁড়া তিনটেকে উঠে যেতে ঝাঁটফাঁট দেবে, ফুলগাছে জল দেবে–এই অজুহাতে। কিন্তু রকবাজ ছেলেরা কবে আর সুবোধ বালকের মতো উঠে যেতে শিখেছে! সুতরাং তারা ঠাট্টা মশকরা করতে লাগল বাড়িওলার সঙ্গে। রেগেমেগে বাড়িওলা স্টিপ পাম্পে জল ছিটিয়ে দিলে ওদের গায়ে। ছেলেরাও ছাড়বে কেন–উলটেপালটে ইট পাটকেল ছুঁড়তে লাগল। পাশের এক রেডিয়োর দোকান থেকে বেরিয়ে এল এক পুলিশ সার্জেন্ট, সাদা। সার্জেন্ট সাহেবের তখন অফডিউটি, তবু উৎপাত দেখে কর্তব্যপরায়ণতা জেগে উঠল, কোমর থেকে রিভলবার খুলে পরপর তিনটে গুলিতে পাওয়েল নামের একটি ছোঁকরাকে খুন করে ফেলল। শুরু হয়ে গেল নিউ ইয়র্কের দাঙ্গা।

পুলিশ পক্ষ বলছে, ছেলেটা ছুরি নিয়ে সার্জেন্টকে তেড়ে এসেছিল, প্রাণ বাঁচাবার জন্য সার্জেন্ট গুলি করেছে। নিগ্রোরা বলছে, মিথ্যে কথা, ছেলেটির হাতে ছুরি ছিল না, উপরন্তু, পুলিশটি নাকি গুলি করার পরও ছেলেটার গায়ে লাথি মেরে বলেছে ডার্টি নিগার। সাদা পুলিশ মাত্রই বন্দুক-খুশি, সুযোগ পেলেই নিগ্রোদের ওপর হাতের সুখ করে নেয়। কোনটা সত্যি কে জানে, তবে এ কথা বোঝা যাচ্ছে না–চোদ্দ বছরের একটা ছেলে ছুরি নিয়ে তেড়ে এলেও–তার হাতে বা পায়ে গুলি করেও তো তাকে থামনো যেত–তিন তিনটে গুলি খরচ করা ওই সামান্য কারণে।

আমি সেদিন ওয়ার্ল্ড ফেয়ার দেখতে গিয়েছিলুম। সেখানে বসে এর কিছুই টের পাইনি। সেখানে রং ও রূপের সমভিব্যাহার, যেন মায়াপুরী, ঝলমল রং-এর পোশাক পরে ছেলেমেয়ে, বিশেষত মেয়েরা ঘুরছে। মনে হয় পৃথিবীতে কোথাও কোনও দাঙ্গা নেই, যুদ্ধ নেই, বিভেদ নেই! বিরাট প্রান্তর জুড়ে সারা বিশ্বের মেলা বসেছে। ভারী চমৎকার জায়গা–স্বর্গ ফর্গ বোধহয় এই ধরনেরই অনেকটা! এক একটা প্যাভেলিয়ন-এ যাচ্ছি, যেন সেই দেশ ঘুরে আসছি। পাকিস্তানের প্যাভেলিয়নে মোরগ মেশল্লাম খেয়েই চলে গেলুম মেক্সিকোর নাচ দেখতে, সেখান থেকে সুইডেনের ছবি, যুগোশ্লাভিয়ার গান, জাপানের রহস্য, ভারতের ঘরে এসে বাঁকুড়ার পোড়া মাটির ঘোড়া মূর্তিকে বললুম, কেমন আছ? জেনারেল মোর্টসের বিশাল এলাকা, তার সামনে তার চেয়ে বড় লাইন পড়েছে। ওরা নাকি সবাইকে নিয়ে যাবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে! আমি অ্যালেনকে জিগ্যেস করলুম, যাবে নাকি?

দুজনে আধঘণ্টাটাক লাইনে দাঁড়ালুম! তারপর বসতে পেলুম ইলেকট্রিকের বেঞ্চিতে–সেটা আপন মনে চলতে লাগল–এক অন্ধকার সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে, খানিক বাদে আমরা ঘুরতে লাগলুম, সমুদ্রের তলায় আগামী শতাব্দীর শহরে–যেখান দিয়ে ট্রেন ও মোটর গাড়ি চলছে, গেলুম চাঁদের গ্র্যান্ড হোটেলে, মঙ্গল গ্রহের চৌরঙ্গিতে, মরু প্রদেশের মধুপুর-দেওঘরে। অ্যালেনের রং ফরসা, আমার রং খয়েরি, আমার পাশে একজন নিগ্রো মেয়ে বসে–আমরা তিনজনেই একসঙ্গে ঘুরছিলাম ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে।

ওখান থেকে বেরলুম অনেক রাত্রে। মাটির তলার ট্রেনে চেপে বাড়ি ফিরলুম–সুতরাং শহর চোখে দেখিনি। ফিরে রেডিওতে শুনি, ভীষণ দাঙ্গা চলছে তখন হার্লেমে। আর রেডিয়োওয়ালারা কী বিষম ওস্তাদ ওদেশে, গোপনে ওখানে কোথায় একটা পাওয়ারফুল মাইক্রোফোন রেখে দিয়েছে, আর আমরা রেডিওতে শুনছি দাঙ্গার সমস্ত হই হল্লা, গুলির শব্দ, পুলিশের সাইরেন, বিয়ারের বোতল ভাঙা।

দিন চারেক চলল বেশ ঘোরতরভাবে সেই দাঙ্গা। দিনের বেলা চুপচাপ সন্ধে হলেই শুরু হয়, হার্লেমপাড়াটা মোটামুটি নিগ্রোদের কিছু সাদা লোকও আছে। কিন্তু সাদা লোকেরা ভয়ে দরজা বন্ধ করে পালাল, হার্লেম হয়ে উঠল নিগ্রোদের দুর্গ। ও পাড়া দিয়ে আর একটাও গাড়ি চলে না ভয়ে, বাস যায় না। চলন্ত গাড়ি আটকেও সাদা লোক দেখলেই মারধোর চালাল, রাত্তির বেলা পুলিশের গাড়ির উদ্দেশ্যে ইট, বোতল, গরম জল ছোঁড়া–তার উত্তরে পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস ও গুলি। সেই সঙ্গে লুটপাট। নিগ্রোদের দোকানও লুঠ করতে লাগল নিগ্রোরাই। সমস্ত ঘটনাটাই চলে গেল চোর-বদমাশ আর লুঠেরাদের হাতে। এমনকী নিগ্রো নেতাদের (যারা গান্ধিবাদী ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বিশ্বাসী) আবেদনও কেউ গ্রাহ্য করল না। তাদের মিটিংয়েও চলল ইট-পাটকেল।

খুব একটা অস্বাভাবিক বা ধারণাতীত ছিল যে এই দাঙ্গা, তা নয়। যে-কোনও একটা কারণের অপেক্ষায় ছিল। নিগ্রোদের রাগি সর্দার ম্যালকম এক্স বহুদিন থেকেই ঘোষণা করেছিল–এই গ্রীষ্ম হবে দীর্ঘ রক্তাক্ত গ্রীষ্ম–লং ব্লাডি সামার। খুনের বদলে খুন। দক্ষিণ অঞ্চলে যে অমানুষিক অত্যাচার চলছে এখনও, যেরকম হাসি ঠাট্টাচ্ছলে নিগ্রো খুন করছে–তার জন্য আর দয়া ভিক্ষা নয়, অনুরোধ-উপরোধ নয়, এবার শুরু করতে হবে শ্বেতকায় খুন। এক হিসেবে একটা পাগলের প্রলাপ–কারণ দু-কোটি নিগ্রো কী করে দাঁড়াবে সতেরো কোটি শ্বেত আমেরিকানের বিরুদ্ধে তা ছাড়া শাসনযন্ত্র শ্বেতকায়দের হাতে। সেইজন্যই বোধহয় ম্যালকম এক্স–আফ্রিকায় চলে এসেছিল–আফ্রিকার নিগ্রোদের সাহায্য পাওয়ার আশায়। এও এক ছেলেমানুষি অ্যাডভেঞ্চারের নেশা–আফ্রিকার নিগ্রোরা আমেরিকায় এসে ওখানকার নিগ্রোদের সাহায্য করবে–এ এক রূপকথা। যখন আফ্রিকানরা খোদ আফ্রিকাতেই এখনও ভেরউডকে সরাতে পারেনি। অবশ্য, এ কথাও ঠিক, ম্যলকম এক্স বা জঙ্গি ব্ল্যাক মুসলিমদের দল–খুব বেশি সমর্থন পায়নি নিগ্রোদের মধ্যেও–মার্টিন লুথার কিং-এর নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহ অনেক বেশি বিশ্বাস এবং জোর এনে দিয়েছে সে সঙ্গে বহু সংখ্যক সাদা লোকেরও এই আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা।

সেই দাঙ্গার সময় আমার কী অবস্থা? আমার রং ফরসাও নয়, কালোও নয়। খয়েরি বলা যাক। নিগ্রো-সাদার লড়াইতে আমাদের কোনও প্রত্যক্ষ অংশ থাকার কথা নয়! আমরা ভারতীয়রা, বা এশিয়ার লোকরা একটা আলাদা জাত-জাপানি-চিনেরা কালো না হলেও হোয়াইট ম্যান নয়, যেমন নয় আরব-তুর্কিরা। ইংরেজরা আমাদেরও তো গালাগালের সময় ‘নিগার’ বলত ইংল্যান্ডেও যে এখন কালো-সাদার সমস্যা উঠেছে সেখানে নিগ্রো-ভারতীয় সবাইকেই কালার্ড লোক বলে ধরা হচ্ছে। আমেরিকাতেও যে ভারতীয় বা এশীয় হলেই নিগ্রোদের চেয়ে বেশি খাতির হবে তা নয়–অনেক জায়গায় সমান। জাপানিদের বিরুদ্ধেও আমেরিকায় এক সময় দাঙ্গা হয়েছিল। ভারতীয় ছাত্ররা সব পাড়ায় বাড়ি ভাড়া পায় না। আমেরিকার দক্ষিণ প্রদেশগুলিতে যেখানে নিগ্রোদের প্রতি অহরহ মারধোর চলছে–সেখানেও ভারতীয় বললে রেয়াৎ করে না। অনেক মিশ্রিত নিগ্রোর গায়ের রং আমাদের মতোই শুধু চুল কোঁচকানো। ওদিকে নিগ্রোরাও আমাদের যে পরম আত্মীয় মনে করে তা না। তারা সমর্থন খুঁজছে আফ্রিকার কাছে–এশিয়ার কাছে নয়। আফ্রিকায় স্পষ্টতই ভারতীয় বিদ্বেষ খুব ঘোরালো হয়ে উঠছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আর নিগ্রোরা নৃশংসভাবে মারামারি করছে। সুতরাং আমরা একটা তৃতীয় জাত-এখনও পর্যন্ত।

সোজা কথা দাঙ্গার সময় আমি হার্লেম পাড়ার তল্লাটও মাড়ালুম না। যেমন আমেরিকার নানা জায়গায় বেড়াবার সুযোগ পেয়েও আমি কখনও দক্ষিণে যাইনি। কী দরকার বাবা, ওসব ঝঞ্ঝাটে জড়াবার। কারণ ও সমস্যাটা আমার সমস্যা নয়। ওটা আমেরিকার ঘরোয়া ব্যাপার। ‘আমেরিকার উচিত অবিলম্বে নিগ্রোদের সবরকম সমান অধিকার দেওয়া–’ এ কথাটা আমরা প্রায়ই বলে থাকি বটে, কিন্তু এটা অতিরিক্ত মানবতার দাবি। আমাদের দেশে তো বটেই সব দেশেই দেখি এ ধরনের কিছু না কিছু সমস্যা রয়েছে!

সিভিল রাইটস বিল হয়েছে।–কিন্তু কতদিন লাগবে সেটা কার্যকরী হতে কে বলবে। জঙ্গি নিগ্রোরা ভাবছে–সাদারা যেন দয়া করে আমাদের অধিকার দিচ্ছে–তা কেন, আমরা জোর করে নেব। দক্ষিণের সাদারা ভাবছে–আইনকে গায়ের জারে আটকাব, ভোট দিতে দেব না নিগ্রোদের। সেই দাঙ্গার আগেই তো তিনজন সিভিল রাইটস কর্মী নিখোঁজ হয়ে গেল–পুলিশ, শেষ পর্যন্ত সরকারি ফৌজ এসে তন্নতন্ন করে খোঁজার পর চল্লিশ দিন বাদে তাদের বুলেট-ফোঁড়া, পচাগলা দেহ পাওয়া গেল এক নতুন বাঁধের মাটির নীচে। সেই সময়কার একটা ছবি বেরিয়ে ছিল কাগজে…সৈন্যেরা এক নদীর পারে খোঁজাখুঁজি করছে–আর একদল বখা সাদা ছেলে হাসতে-হাসতে বলছে, ‘ওতো মাছের খাদ্য হিসেবে দু-চারটে নিগ্রোকে মাঝে-মাঝেই আমরা নদীতে ছুঁড়ে দিই!’ কিন্তু ওই তিনজন শহীদের মধ্যে দুজনই সাদা, অসংখ্য সিভিল রাইটস কর্মীদের মধ্যে সাদার সংখ্যাই বেশি। চার-পাঁচটা প্রদেশ বাদে, বাকি তরুণ আমেরিকা বর্ণ বিভেদ মুছে ফেলতে চায়।

চার-পাঁচটা প্রদেশের নামে দোষ দিচ্ছি বারবার। সত্যিই ওরা আমেরিকার কলঙ্ক, কিন্তু বাকি অংশকি নিষ্কলুষ? বিভেদ সব জায়গাতেই আছে! কত অসংখ্য উদার মনের মানুষ দেখলুম, যাঁরা বিষম লজ্জিত আমেরিকার এই সমস্যায়। তাঁরা কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, অধ্যাপক। কিন্তু তার বাইরেও বহু লোক থেকে যায়। মুখে চায় নিগ্রো-শ্বেত মিলন, কিন্তু মন থেকে সম্পূর্ণ গ্লানি বা ভয় ঘোচেনি। নিগ্রোরা (দু-এক জায়গায় ভারতীয়ও) তাদের কাছে বাড়ি ভাড়া চাইতে এলে–দিতে অস্বীকার করবে না, বা দক্ষিণের মতো বন্দুক উঁচিয়েও ধরবে না, কিন্তু মিষ্টি করে মিথ্যে কথা বলবে, ‘দুঃখিত, আমার ঘর আগেই ভাড়া হয়েছে। কিছু কিছু সৎ সাদা লোকদের মনে নিগ্রোদের সম্বন্ধে নতুন ভয় ঢুকেছে। তার জন্য ওই জঙ্গি ব্ল্যাক মুসলিমরা দায়ী। নিগ্রোরা ভোটের অধিকার পেয়েছে। ওদের বংশবৃদ্ধির রেট অসম্ভব বেশি। একদিন যদি ওরা রাজনৈতিক ক্ষমতা পায় তবে এখন যেমন প্রতিহিংসার কথা বলছে এখনও যদি সাদাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা নিতে শুরু করে! এ ভয় খুব অমূলক নয়। পুরোনো দাবি যা প্রতিশোধ ইতিহাসকে বহুবার বিষাক্ত করেছে।

আমি নিউইয়র্কের দাঙ্গা এড়িয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিলুম। দাঙ্গা অবশ্য হার্লেম থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল অন্যান্য জায়গায়। সন্ধের আগেই সুট করে বাড়ি ঢুকে পড়তুম। একদিন দুপুরে নাপিতের দোকানে চুল ছাঁটতে ঢুকেছি। সামনের আয়নার পিছন দিকের একটি সুন্দরী মেয়েকে দেখা যাচ্ছিল। ঘাড়ের ভঙ্গি ও শরীরের ঔদ্ধত্যে এমন বিভোর হয়ে গিয়েছিলুম যে, নাপিত কী করছে খেয়ালই করিনি! হঠাৎ দেখি যে আমার মাথার এক পাশের ঘাড়-জুলপি হেঁটে তালুর কাছ পর্যন্ত ফরসা করে দিয়েছে। হা-হা করে উঠলুম, কিন্তু তখন আর উপায় নেই, ‘নাবিক ছাঁট’ না কী বলে–মাথার একদিকের চুল আধ ইঞ্চি করে দিয়েছে। বাকি দিকটাও তা না করে উপায় নেই। নইলে ন্যাড়া হতে হয়। হায়, হায়–আমার অমন সুন্দর কালো ঘন-ঢেউ খেলানো চুল মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি যাচ্ছে হাওয়ায় উড়ে চলে গেল ওপাশের সেই সুন্দরীর পদপ্রান্তে-ভক্তের নিবেদনের মতো। মাথা চাপড়াতে-চাপড়াতে বেরিয়ে এসে ঢুকলুম এক হোটেলে কিছু খাবার খেয়ে রাগ ঠান্ডা করতে। একটা হ্যামবার্গার নিয়ে বসেছি। টেবিলের উলটো দিকে একজন ম জ্বর শ্রেণির শ্বেত লোক। খুব ক্লান্ত ও বুড়ো লোকটা। সে হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি হার্লেমে থাকো, নাব্রুকলিনে?

কীরকম খটকা লাগল। এরকম তো কেউ প্রশ্ন করে না। বড়জোর জিগ্যেস করতে পারত, তুমি কোথায় থাকো? কিন্তু আমি যে ওই দু-জায়গার এক জায়গাতেই থাকব তার কী মানে আছে।

জিগ্যেস করলুম, তুমি কি বলছ, বুঝতে পারছি না।

আবার প্রশ্ন :তুমি হার্লেমে থাকোনাব্রুকলিনে?

হঠাৎ মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল। শিউরে উঠল সারা শরীর। ওই দুটো পাড়াতেই সাধারণত বহু নিগ্রো থাকে। লোকটা আমাকে ধরে নিয়েছে মিশ্রিত নিগ্রো–মাথার আমার চুল নেই, প্রমাণ নেই।

জিগ্যেস করলুম, কেন? কেন জানতে চাইছ?

–তাহলে আলোচনা করতুম, তোমরা দাঙ্গা করছ কেন? দাঙ্গা করে তোমাদের কী লাভ?

প্রথমটায় ভয় পেয়েছিলাম। তারপর নিজেকে নিগ্রো বলে অস্বীকার করতেও ইচ্ছে হল না। স্পষ্ট গলায় বললুম, না দাঙ্গা করে কোনও লাভ নেই। দাঙ্গা করে কোথাও কোনও লাভ হয় না। এই কথাটা বলার সময় প্রথম আমার ঢাকার দাঙ্গার কথা ও কলকাতার দাঙ্গার কথা মনে পড়েছিল। তারপর মনে পড়ে নিউইয়র্ক-শিকাগোয় নিগ্রোদের দাঙ্গা, মিসিসিপি-অ্যালেবামায় সাদাদের দাঙ্গা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভারতীয় আফ্রিকানদের দাঙ্গা, সাইপ্রাসে গ্রিক-তুর্কিদের দাঙ্গা। আমি আবার বললুম, না, কোনও লাভ হয় না।