১৭. কাছেই একটা ছোট ঝরনা

কাছেই একটা ছোট ঝরনা, সন্তু আঁজলা করে জল এনে ছিটিয়ে দিতে লাগল লোকটির চোখে-মুখে। আগেই সে লোকটির নাকে হাত দিয়ে দেখে নিয়েছে যে তার নিঃশ্বাস পড়ছে। কোনও কারণে অজ্ঞান হয়ে গেছে সে। কাকাবাবু ঘোড়াটিকে একটা কুঁড়েঘরের কাছে নিয়ে গিয়ে অতিকষ্টে নিজেই নামলেন। সেই ঘরের সামনে আর একটি মেয়ে শুয়ে আছে। সেও অজ্ঞান। এই মেয়েটির মুখেও জলের ঝাপটা দেওয়া হল, তবু সে চোখ মেলল না।

জোজো অন্য ঘরগুলো ঘুরে দেখে এসে অবাক হয়ে বলল, আরও চারজন লোক অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। কী ব্যাপর বলুন তো, কাকাবাবু?

কাকাবাবু বললেন, এ যে দেখছি রূপকথার মতন। ঘুমন্ত পুরী। এখন বেলা সাড়ে এগারোটা, সবাই এখন অঘোরে ঘুমোচ্ছে!

সন্তু বলল, এটা ঘুম নয়। এরা নিশ্চয়ই কিছু খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে, বিষাক্ত কোনও ফল-টল খেয়েছে বোধহয়।

কাকাবাবু বললেন, সবাই মিলে বিষাক্ত ফল খাবে? তা ঠিক বিশ্বাস করা যায় না। যাই হোক আমাদের তো এখানে কিছু করার নেই। ওদের নিশ্বাস পড়ছে যখন, বেঁচে উঠবে নিশ্চয়ই! আমাদের আর এখানে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।

জোজো কাকাবাবুকে আবার ঘোড়ায় চড়তে সাহায্য করল। সন্তু কাছাকাছি জঙ্গলের মধ্যে দৌড়ে ঘুরে দেখে এল। তার মনে একটা সন্দেহ হয়েছিল, সেটা মেলেনি। এদিকে গাড়ি যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই, এমন জঙ্গলে গাড়ি চালাবার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। অংশুমান চৌধুরীরা তা হলে, এদিকে আসেনি।

কাকাবাবু ঘোড়ায় চড়ে এগোলেন, সন্তু আর জোজো ঠিক পাশাপাশি না থেকে খানিকটা দূরে দূরে রইল। কেন যেন মনে হচ্ছে, কাছাকাছি কোনও বিপদ ওৎ পেতে আছে।

জঙ্গল ক্রমশ ঘন হচ্ছে, ওরা ক্রমশ উঠে যাচ্ছে ওপরের দিকে, কিন্তু পাহাড়ের মাথাটা দেখা যাচ্ছে না। তিরাংরা যে-পাহাড়ে থাকে, সেই পাহাড়ের একটা চুড়া গণ্ডারের শিঙের মতন। ওরা কি সেই পাহাড়েই উঠছে?

আরও খানিকটা যাওয়ার পর পাওয়া গেল একটা ফাঁকা জায়গা। তার এক কোণে তিন-চারটে মোষ ঘাস খাচ্ছে। সেই দৃশ্য দেখে জোজোর খিদে পেয়ে গেল। সকাল থেকে ওদের কিছু খাওয়া হয়নি। চিড়ে-গুড়ের পুঁটুলিটা চলে গেছে পলাতক ঘোড়াটার সঙ্গে। এখন দুপুর প্রায় দুটো।

জোজো বলল, ওদিকে যখন মোষ চরছে, তখন কাছাকাছি নিশ্চয়ই গ্রাম আছে। তিরাংদের গ্রাম হতে পারে।

কাকাবাবু ঘোড়া থামিয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন সামনের দিকে। ঠোঁটে আঙুল দিয়ে জোজো আর সন্তুকে চুপ করতে বললেন। একেবারে স্থির হয়ে রইল ওরা। দুএকটা পাখির ডাক ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই।

প্রায় পনেরো মিনিট বাদে মোষগুলো ঘাস খাওয়া শেষ করে আস্তে-আস্তে ঢুকে গেল জঙ্গলের মধ্যে। কাকাবাবু একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ফুঃ! ওগুলো তোরা সাধারণ মোষ ভেবেছিস! ও তো বাইসন। জঙ্গলের সবচেয়ে সাঙ্ঘাতিক প্রাণী। বাঘেরা ওদের ভয় পায়। ওরা দল বেঁধে তাড়া করলে হাতিও সামনে দাঁড়াতে পারে না।

জোজো বলল, কাকাবাবু, জংলিদের গ্রামের কী একটা মূর্তি সেটা দেখতে। যাওয়া কি আমাদের খুবই দরকার? এই ঝুটঝামেলা বাদ দিলে হয় না?

সন্তু জিজ্ঞেস করল, তুই ফিরে যেতে চাস নাকি?

জোজো বলল, এখন ফিরে গিয়ে পরে একটা হেলিকপ্টার ভাড়া করে আসলেই তো হয়। এত কষ্ট করার কোনও মানে হয় না।

কাকাবাবু বললেন, তাই তো, জোজো একা তো ফিরে যেতে পারবে না? কে ওর সঙ্গে যাবে? সন্তু, তুই যাবি নাকি?

সন্তু বলল, সে কোশ্চেনই ওঠে না। আমি মোটেই ফিরতে চাই না।

জোজো অভিমানের সঙ্গে বলল, কাকাবাবু, আপনি বারবার বলেছিলেন যে, আপনি আমার পিসেমশাইয়ের সঙ্গে কমপিটিশানে নামবেন না। এখন তো আমার পিসেমশাই কাছাকাছি নেই, তবু আপনি ইচ্ছে করে তাকে ফলো করছেন।

কাকাবাবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,ঠিকই বলেছ। কিন্তু কী করি, কৌতূহল সামলাতে পারছি না যে। ওই মূর্তিটার ওপর বাইরের লোকের কেন এত লোভ, সেটাই জানতে ইচ্ছে করছে খুব। এতদূর এসে ফিরে যাওয়ার কোনও মানে হয়?

জোজো বাচ্চা ছেলের মতন বলল, আমার খিদে পেয়েছে। বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকলে আমার মাথা ঝিমঝিম করে।

সন্তু বলল, আমাদের বুঝি খিদে পায় না? কিন্তু এই জঙ্গলে কোনও ফল-টলের গাছও দেখছি না।

কাকাবাবু হালকাভাবে বললেন, বরং তাড়াতাড়ি চলো, তিরাংদের গ্রামে গেলে ওরা নিশ্চয়ই কিছু খেতেটেতে দেবে!

আবার শুরু হল চলা। যে দিকে বাইসনগুলো গেছে, তার উলটো দিকে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে খুব সন্তর্পণে আরও খানিকটা যাওয়ার পর চোখে পড়ে গেল গণ্ডারের শিং-এর মতন সেই পাহাড়। খুব কাছেই। মাঝখানে শুধু একটা সবুজ উপত্যকা। এই পাহাড় থেকে ওই পাহাড়ের গ্রামের ঘরবাড়িও চোখে পড়ে একটু একটু।

কাকাবাবু বললেন, এই তো এইবার এসে গেছি! আর কতক্ষণ লাগবে, বড়জোর এক ঘন্টা?

সন্তু বলল, কাকাবাবু এখানে গাড়িতে আসার কোনও উপায় নেই। ওদেরও হেঁটে আসতে হবে।

কাকাবাবু বললেন, ওরা আসবে পাহাড়ের উলটো দিক থেকে। অবুঝমাঢ়ের রাস্তা ওইদিকেই হবে। আমি ঘোড়া ছুটিয়ে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে তোদের জন্য নামব। একসঙ্গে যেতে গেলে তোরা হাঁপিয়ে যাবি। জোজো, এখন থেকে তুমি সন্তুর কাছাকাছি থাকো, দুজনে আলাদা হয়ে গেলে আবার খুঁজতে সময় লাগবে।

কাকাবাবু নেমে গেলেন ঢালু উপত্যকার দিকে।

সন্তু জোজোর একটা হাত ধরে বলল, মোটে তো একবেলা খাসনি, তাতেই তুই এত কাহিল হয়ে গেলি?

জোজো বলল, কাল দুবেলাই যে নিরামিষ খেয়েছি। নিরামিষে কি পেট ভরে? উঃ, কতদিন যে একটা ডিমসেদ্ধ খাইনি!

সন্তু বলল, তিরাংরা যদি ভাল লোক হয়, তা হলে ওদের গ্রামে নিশ্চয়ই। মুর্গির ডিম পাওয়া যাবে। মনে মনে ভাব। একটু পরেই ডিমসেদ্ধ খাব, একটু পরেই ডিমসেদ্ধ খাব, তা হলে দেখবি খিদেটা কমে যাবে।

জোজো রেগে গিয়ে বলল, ধ্যাত! খাবার কথা ভাবলে খিদে আরও বেড়ে যাবে না!

দুজনে হাত ধরে দৌড় মারল নীচের দিকে। মাইলখানেক দূরে কাকাবাবু দাঁড়িয়ে আছেন একটা বড় গাছের নীচে। ওদের দেখে বললেন, তোরা এখানে একটু জিরিয়ে নে, আমি আবার এগোচ্ছি।

এইরকম তিনবার করবার পর, গণ্ডার পাহাড়ের সিকি ভাগ উঠে কাকাবাবু বললেন, এইবার একটা পরীক্ষা আছে। সামনে চেয়ে দ্যাখ, একটা গাছের ওপর মাচা বাঁধা, ওখানে নিশ্চয়ই কোনও লোক বসে থাকবে। তার মানে, তিরাংরা তাদের গ্রামে ঢোকার মুখটা পাহারা দেয়। তিরাংদের ভাষা আমি জানি না। ওরা নাকি হিন্দি বোঝে না। আমরা এগোবার চেষ্টা করলেই যদি ওপর থেকে তীর ছুঁড়ে মারে?

একটা ঝোপের আড়ালে খানিকটা গুঁড়ি মেরে গিয়ে সন্তু দেখল, সামনের পাশাপাশি দুটো গাছের ডগার কাছে মাচা বাঁধা, সেই মাচাটা প্রায় একটা ঘরের মতন, সেখানে রাত্তিরে কেউ শুয়েও থাকতে পারে। মাচাটায় এমনভাবে বেড়া দেওয়া যে, এখন ওখানে কেউ রয়েছে কি না তা বোঝার উপায় নেই।

সন্তু ফিরে আসার পর কাকাবাবু বললেন, আমি ঘোড়া ছুটিয়ে ওই ফাঁকা জায়গাটা পার হয়ে যেতে পারি। তীর ছুঁড়লেও আমার গায়ে লাগবে না। কিন্তু তাতে লাভ কী? তোদের তাতে আরও বিপদ হবে!

সন্তু বলল, তা হলে তো মনে হচ্ছে, সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। অন্ধকারে যদি যাওয়া যায়।

জোজো আঁতকে উঠে বলল, সন্ধে পর্যন্ত এখানে বসে থাকব, কেন অন্য কোনও দিক দিয়ে যাওয়া যায় না?

কাকাবাবু বললেন, অন্য দিক দিয়ে যাওয়ার রাস্তা থাকলে সেখানেও নিশ্চয়ই পাহারা থাকবে। এদিককার আর কোনও গ্রামে এরকম পাহারার ব্যবস্থা দেখিনি। তা হলে বোঝা যাচ্ছে, ওদের মন্দিরের মূর্তিটাকে ওরাও খুব দামি মনে করে।

সন্তু বলল, কাকাবাবু, আর একটা কাজ করা যেতে পারে। তোমরা ওই ডান দিকটায় গিয়ে ঝোপের আড়ল থেকে খানিকটা শব্দ টব্দ করো। লোকটা তা হলে ওদিকেই মনোযোগ দেবে। সেই ফাঁকে আমি বাঁ দিক দিয়ে বুকে হেঁটে হেঁটে মাচাটার কাছে এগিয়ে যাব।

জোজো জিজ্ঞেস কল, এগিয়ে যাওয়ার পর কী করবি?

সন্তু বলল, চুপিচুপি মাচাটায় উঠে লোকটাকে ঘায়েল করব।

জোজো বলল, ওখানে যদি একটা জোয়ান লোক হাতে তীরধনুক বা ছুরি নিয়ে বসে থাকে, তুই তাকে ঘায়েল ব্রতে পারবি? ওসব সিনেমায় হয়! অত সোজা নয়!

সন্তু বলল, যদি রিভলভারটা সঙ্গে নিয়ে যাই?

কাকাবাবু বললেন, নাঃ। এরকম ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। এদের আপত্তি থাকলে গ্রামে ঢোকা আমাদের সম্ভব হবে না। আমরা জানান দিই, দেখা যাক ওরা কী করে?

কাকাবাবু খুব জোরে চেঁচিয়ে হিন্দিতে বললেন, আমরা বন্ধু। আমরা কোনও ক্ষতি করতে আসিনি। আমরা গ্রামের সদরের সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই।

দুতিনবার এরকম চিৎকারেও মাচা থেকে কোনও সাড়া শব্দ পাওয়া গেল। কাকাবাবু মুখ ফিরিয়ে আস্তে বললেন, ওরা হিন্দি না বুঝলেও কিছু তো একটা উত্তর দেবে।

আরও কয়েকবার চেষ্টা করা হল। ওদিকে কোনও লোকই দেখা গেল না। এত চ্যাঁচামেচিতে গ্রাম থেকেও দু একজনের ছুটে আসা উচিত ছিল।

কাকাবাবু বললেন, তা হলে তোরা এখানে দাঁড়া। আমি ঘোড়া ছুটিয়েই এই জায়গাটা পার হয়ে যাই। মাচার তলায় গিয়ে দাঁড়াব। দেখি কেউ নেমে আসে কি না।

কাকাবাবু রিভলভারটা একবার হাতে নিয়েও পকেটে ভরে রাখলেন। সন্তু জানে কাকাবাবু রিভলভার নিয়ে শুধু ভয় দেখান, কোনও মানুষকে তিনি কিছুতেই গুলি করতে পারেন না।

জোজো আর সন্তু মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল, কাকাবাবু খুব জোরে ঘোড়া ছুটিয়ে বেরিয়ে গেলেন। তাতেও কেউ তীর ছুঁড়ল না, মাচার ওপর কেউ একটু নড়াচড়াও করল না।

কাকাবাবু হেঁকে বললেন, এখানে কেউ নেই মনে হচ্ছে। তোরা চলে আয়।

মাথা নিচু করে সন্তু আর জোজোও দৌড় মারল। প্রতি মুহূর্তে তাদের মনে হচ্ছে, পিঠে এসে তীর বিঁধবে, কিন্তু হল না কিছুই।

কাকাবাবু বললেন, যার পাহারা দেওয়ার কথা, সে বোধহয় এখন খেতে গেছে। তার বদলে অন্য কেউ ডিউটি দিতে আসেনি।

সন্তু বলল, ওপরটায় উঠে একবার দেখে আসব? মন্দিরটাও দেখা যেতে পারে।

মাচায় উঠবার কোনও সিঁড়ি নেই। সন্তু গাছে চড়ায় ওস্তাদ, মোটা গাছটার গুঁড়ি ধরে তড়বড়িয়ে ওপরে উঠে গেল। মাচার মধ্যে ঢুকে পড়ে সে প্রথমেই অবাকভাবে বলল, আরেঃ!

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, কী হল? এখানেও একটা লোক অজ্ঞান হয়ে আছে। অজ্ঞান?

হ্যাঁ। নাক দিয়ে নিশ্বাস পড়ছে। মুখটা হাঁ করা। একটা কালো হাঁড়িতে সাদা সাদা কী যেন রয়েছে। বোধহয় ওই জিনিসটা খাচ্ছিল।

ঠিক আছে, তুই নেমে আয়।

কাকাবাবু, এখান থেকে দেখতে পাচ্ছি, খানিকটা দূরে, আমার পেছন দিকে। আর একটা লোক শুয়ে আছে মাটিতে। সেই আগে যে গ্রামটা দেখেছিলুম, সেই রকম এখানকার লোকেরাও কিছু খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।

কাকাবাবু খানিকটা এগিয়ে গিয়ে সেই লোকটাকে দেখতে পেলেন। উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। দুচারবার তাকে ধাক্কা দিতেও সাড়া পাওয়া গেল না।

তারপর একটার পর একটা বাড়ি দেখতে পাওয়া গেল। কোনও কোনও বাড়ির সামনে, কোথাও কোথাও গাছের নীচে পড়ে আছে অজ্ঞান মানুষ। ছেলে, মেয়ে, বুড়ো, বাচ্চা সবারই একই রকম অবস্থা। কোনও জাদুকর যেন এদের ঘুম পাড়িয়ে রেখে গেছে!

কাকাবাবু শুধু বলতে লাগলেন, আশ্চর্য! আশ্চর্য!

সন্তু বলল, আমি ওপর থেকে মন্দিরটাও দেখতে পেয়েছি। একটা ঝরনার ধারে। আধ মাইল মতন দূর হবে।

জোজো বলল, চলুন, চট করে আমরা মন্দিরটা দেখে এখান থেকে সরে পড়ি। জায়গাটা কীরকম ভুতুড়ে-ভুতুড়ে লাগছে!

সারা গ্রামে আর কোনও আওয়াজ নেই, শুধু শোনা যাচ্ছে ঝরনার জলের শব্দ। সেখানে পৌঁছতে বেশি দেরি হল না। মাটির তলা থেকে কুঁড়ে বেরোচ্ছে জল। তার পাশেই মন্দির।

মন্দিরটা পাথর দিয়ে তৈরি। চৌকোমতন একটা ঘর। ছাদে উড়ছে অনেকগুলো সাদা রঙের পতাকা। কাকাবাবু ঘোড়া থেকে নেমে মন্দিরের দরজার সামনে দাঁড়ালেন।

একটা সাদা বেদীর ওপর রয়েছে মূর্তিটা। আড়াই ফুটের মতন উঁচু। নীল রঙের পাথরের তৈরি। মূর্তিটা কোনও পুরুষ দেবতার। পায়ে গামবুটের মতন জুতো, মাথায় মুকুট।

কাকাবাবু বললেন, একটা আদিবাসী গ্রামে এরকম মূর্তি থাকা সত্যিই আশ্চর্যের ব্যাপার। ভুবনেশ্বরে লিঙ্গরাজ মন্দিরের এক পাশে একটা সূর্য মূর্তি আছে, অনেকটা সেইরকম।

সন্তু বলল, তা হলে আমরা ওদের আগেই এসে পৌঁছে গেছি। ওরা বোধহয় এখনও রাস্তা খুঁজছে। ঘোড়াটা পেয়ে আমাদের খুব সুবিধে হয়েছে।

কাকাবাবু মন্দিরের মধ্যে ঢুকলেন। এখানেও একজন লোক অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। বোধহয় মন্দিরের পুরোহিত। কাকাবাবু মূর্তিটার গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে কয়েকবার টোকা দিলেন। ভেতরটা ফাঁপা। টংটং শব্দ হল।

কাকাবাবু বললেন, এই মূর্তিটা নকল!

সন্তু আহত বিস্ময়ের সঙ্গে বলল, নকল?

জোজো বলল, এখানে হাওয়ায় যেন কিসের গন্ধ? নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে না?

সন্তু বলল, হ্যাঁ, তাই তো, মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছি কিসের যেন..।

বলতে বলতে সন্তুর কথা জড়িয়ে গেল। জোজো বসে পড়ল মাটিতে। কাকাবাবু দারুণ ব্যস্ত হয়ে বললেন, শিগগির, শিগগির এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। ক্লোরোফর্মের গন্ধ। আমাদের ঘুমিয়ে পড়লে চলবে না। তিরাংরা জেগে উঠে আমাদের চোর বলবে। সন্তু, জোজো, বাইরে..

সন্তু আর জোজো ততক্ষণে শুয়ে পড়েছে। কাকাবাবু ওদের দুজনের কাঁধ ধরে টেনে হেঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করলেন। পারলেন না। মন্দিরের দরজার কাছে এসে তিনি নিজেও ঘুমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।