১৭. কাকাবাবু নামলেন মাটির নীচে

পরদিন সকালে কাকাবাবু নামলেন মাটির নীচে। যদুকে দিয়ে এক গেলাস লেবু-চিনির শরবত বানিয়ে নিয়েছেন হাতে।

এই বারো দিন কর্নেল যে শুধু কিছু খায়নি, তা নয়। বোধহয় একদিনও ঘুমোয়নি। এরই মধ্যে রোগা হয়ে গিয়েছে বেশ। চোখের নীচে কালি।

মেঝেতে বসে ছিল, উঠে দাঁড়িয়ে বলল, রায়চৌধুরী, প্লিজ, প্লিজ, আমাকে গুলি করে মারো। এভাবে মেরো না।

কাকাবাবু বললেন, এই শরবতটা খেয়ে নাও।

কর্নেল ঘৃণার সঙ্গে বলল, শরবত! আমার হাতে দিলে ছুড়ে ফেলে দেব। তোমাদের কোনও কিছু আমি খাব না।

কাকাবাবু বললেন, এতদিন খাওনি। আজ খেলে ক্ষতি নেই। অনশন ভাঙার সময় প্রথম এই শরবত খেতে হয়। অন্য কিছু খেলে বমি হয়ে যায়।

কর্নেল ভুরু কুঁচকে বলল, কেন, আজ খেলে ক্ষতি নেই কেন? আজ কোনও পুজোর দিন? আমি ওসব মানি না।

কাকাবাবু ঘড়ি পরা হাতটা ওর মুখের সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, এটা দ্যাখো।

কাকাবাবুর হাতটা সরিয়ে দিয়ে সে বলল, আমি ঘড়ি দেখে কী করব? সময় জেনে আমার কী হবে?

কাকাবাবু বললেন, ঘড়িতে সময় ছাড়া অন্য জিনিসও দেখা যায়। তারিখ দেখা যায়। দ্যাখো, আজ কত তারিখ। তেরো। এটা কোন মাস!

কর্নেল বলল, জানি না। আমার সব গুলিয়ে গিয়েছে।

কাকাবাবু বললেন, অক্টোবর মাস। আর কদিন পরেই পুজো। শোনো কর্নেল, তেরো অক্টোবর মানে কী? ছমাস আগে আমাদের ডেথ-ডেথ খেলা শুরু হয়েছিল। সেটা কাল শেষ হয়ে গিয়েছে। তুমি বলেছিলে, তুমি জেন্টলম্যান। ছমাস কেটে গেলে আর কেউ কারও শত্রু থাকব না। ঠিক কিনা?

দারুণ অবাক হয়ে কর্নেল বলল, ছমাস শেষ হয়ে গেল?

কাকাবাবু পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে বললেন, এটা পড়ে দ্যাখো। তোমার বাবা একজনকে খুন করে জেল খেটেছিলেন। সে-ও প্রতিশোধের ব্যাপার ছিল। তুমিও সেই একই কারণে আমাকে মারতে এসেছিলে। অথচ তুমি জানতেও পারোনি, আর্মিতে থাকার সময় তোমার ভাই নষ্ট হয়ে যায়। স্মাগলিং, ডাকাতিও করেছে।

কাগজটা পড়তে পড়তে কর্নেল অবিশ্বাসের সুরে বলল, সত্যি তাই? আমার ভাইয়ের এই অবস্থা হয়েছিল?

কাকাবাবু বললেন, এসব পুলিশ রেকর্ডে আছে। এই ধরনের ক্রিমিনালরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেই মরে। নাও, কর্নেল, শরবতটা খেয়ে ফেলো।

তুমি এখন থেকে নতুনভাবে জীবন শুরু করো।

এবার আর আপত্তি করল না সে। এক চুমুকে খেয়ে ফেলল শরবত। তারপর কাকাবাবুর পা জড়িয়ে ধরে বলল, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।

কাকাবাবু তাকে টেনে তুলে জড়িয়ে ধরলেন বুকে। সন্তু, জোজোরা একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল। এবার তারা হাততালি দিয়ে উঠল।