১২. মুম্বইয়ে অমলের ফ্ল্যাটে

মুম্বইয়ে অমলের ফ্ল্যাটে সকাল থেকে আড্ডা জমেছে খুব। চা খাওয়া হয়েছে। দুবার, এখন অমল লুচি ভাজছে।

টেবিলের ওপর অনেক খবরের কাগজ ছড়ানো। জোজো একটা কাগজ দেখতে দেখতে বলল, কাকাবাবু, সব খবরের কাগজেই বিক্রম ওসমানের খবর আর ছবি ছাপা হয়েছে। আপনার ছবি কোথাও বেরোয়নি কেন?

কাকাবাবু বললেন, আমি আর কী করেছি? আমি শুধু ওকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে আত্মসমর্পণ করতে রাজি করিয়েছি।

জোজো বলল, আপ্পা রাওটাও ধরা পড়েছে। তাতে আমি আরও খুশি হয়েছি।

কাকাবাবু বললেন, একবার দাও তো কাগজটা?

উলটোদিকের পাতায় একটি সুন্দরী মেয়ের খুব বড় ছবি। সেটা দেখতে দেখতে কাকাকবাবু রান্নাঘরে গিয়ে অমলকে জিজ্ঞেস করলেন, একে তুমি চেনো?

অমল বলল, বাঃ, চিনব না? বিখ্যাত নায়িকা। অনেক ফিল্‌মে দেখেছি।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, এর বাড়ি কোথায় জানো?

অমল বলল, সবাই চেনে। এখান থেকে বেশি দূরে নয়।

কাকাবাবু বললেন, লুচি ভাজা এখন থাক। আমাকে একবার সেখানে নিয়ে চলো তো!

অমল বলল, দেখা তো করতে পারবেন না। আগে ওর সেক্রেটারির সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হয়। তাও বড় বড় প্রোডিউসার ছাড়া কেউ দেখা পায় না।

কাকাবাবু বললেন, আমার সঙ্গে দেখা করবে। চেনা আছে।

জোজো আর সন্তুকে কিছু না বলে কাকাবাবু অমলকে নিয়ে বেরিয়ে এলেন।

কস্তুরীর বাড়ির সামনে পৌঁছে তিনি বললেন, অমল, তুমি এখানেই অপেক্ষা করো, আমি কয়েক মিনিটের মধ্যেই আসছি।

গেটে দুজন বন্দুকধারী দরোয়ান। কাকাবাবু নিজের ঘড়ি দেখিয়ে বললেন, ঠিক সাড়ে নটায় সেক্রেটারির সঙ্গে আমার দেখা করার কথা আছে।

তারা গেট খুলে দিল।

মোরাম বিছানো রাস্তা, একপাশে বাগান। বারান্দায় সারি সারি ঘর। একটা ঘরের দরজায় সেক্রেটারির নাম লেখা। দূরের একটা ঘর থেকে নাচের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কাকাবাবু সেই দিকে এগিয়ে গেলেন।

একটা লোক কোথা থেকে এসে বিশ্রীভাবে বলল, এই বুড়ো, ওদিকে কোথায় যাচ্ছ? কে তুমি?

কাকাবাবু উগ্র মূর্তি ধারণ করে ক্রাচ দিয়ে লোকটিকে এক বাড়ি মেরে বললেন, সরো, হঠ যাও!

দপদপিয়ে তিনি ঢুকে পড়লেন নাচের ঘরে। সেখানে তবলা, সারেঙ্গি, আরও অনেক বাদ্যযন্ত্র নিয়ে কস্তুরী নাচের রেওয়াজ করছে। আর কয়েকটি মেয়েও রয়েছে তার পাশে।

কাকাবাবুকে দেখে কস্তুরী নাচ থামিয়ে পাথরের মূর্তি হয়ে গেল। মুখোনা একেবারে ফ্যাকাসে।

কাকাবাবু ঝট করে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে পকেট থেকে রিভলভারটা বার করলেন। অন্যদের বললেন, কেউ নড়বে না, যেমন আছ, বসে থাকো।

কস্তুরীকে বললেন, আমাকে চড় মেরেছিলে, মনে আছে? কুকুর দিয়ে খাওয়াবে, না আরও কীসব করবে বলেছিলে? আমার গায়ে কেউ হাত তুললে আমি প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়ি না। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, মেয়েদের গায়েও আমি হাত তুলতে পারি না। কিন্তু শাস্তি তোমায় পেতেই হবে। এখন দুটো উপায় আছে। আমি পকেটে এক শিশি অ্যাসিড এনেছি। সেটা তোমার মুখে ছুড়ে দিলে মুখোনা পুড়ে সারাজীবনের মতন কালো হয়ে যাবে। আর কখনও অভিনয় করতে পারবে না। অথবা, তুমি ক্ষমা চেয়ে মাটিতে নাকখত দাও যদি—

কস্তুরী বিনা বাক্যব্যয়ে বসে পড়ে। মাটিতে নাক ঠেকিয়ে বলল, ক্ষমা চাইছি!

কাকাবাবু বললেন, ওই কথাটা দশবার বলো, আর এদিক থেকে ওদিক পর্যন্ত নাকখত দাও। কানদুটো ধরে থাকো!

কস্তুরী ঠিক তাই-ই করতে লাগল। ঘরের অন্য সবাই ভয়ে কাঠ হয়ে দেখছে।

বাইরের দরজায় দুম দুম আওয়াজ হচ্ছে। যেন ভেঙেই ফেলবে।

কাকাবাবুর মুখটা রাগে লালচে হয়ে গিয়েছিল। এখন হাসি ফুটল। তিনি কস্তুরীকে বললেন, ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে। আর বেশি করলে তোমার নাক ছোট হয়ে যাবে। কেউ নায়িকার পার্ট দেবে না! উঠে পড়ো৷

কাকাবাবু দরজাটা খুলে দিতেই হুড়মুড় করে কয়েকজন ঢুকে পড়ল। দুজন বন্দুকধারী চেপে ধরল কাকাবাবুকে!

কাকাবাবু কস্তুরীর দিকে ফিরে বললেন, আবার নতুন করে এসব খেলা শুরু হবে নাকি? আমাকে ধরে রাখতে পারবে?

কস্তুরী সঙ্গে-সঙ্গে বলে উঠল, না, না। ওকে ছেড়ে দাও। একে কেউ কিছু বলবে না। রাস্তা ছাড়ো, ওকে যেতে দাও!

কাকাবাবু গট গট করে এমনভাবে বেরিয়ে এলেন, যেন কিছু হয়নি।

অমল জিজ্ঞেস করল, কী কাকাবাবু, কস্তুরীকে দিয়ে সিনেমা করাবেন নাকি? বাংলা বই?

কাকাবাবু বললেন, নাঃ! ও আমাকে দিয়েই একটা পার্ট করাতে চাইছিল।

আমি পারব না বলে এলাম। চলো, এবার লুচি খাওয়া যাক!