পৃথিবীর নিচু কোণে

পৃথিবীর নিচু কোণে

পৃথিবীর নিচু কোণে, এই কলকাতার খুব অন্ধকার প্রান্তে
এক প্ৰাচীন গুহায়
শুয়ে আছি–
___দিন ভালুকের সঙ্গে দেখা হয়।
____বিকেল উড়ে যায় স্ট্রাটোস্ফিয়ারের খুব কাছাকাছি স্বর্গে
শিশুর ওষ্ঠের মতো তরল অরুণ শুধু
চুঁইয়ে পড়ে
গীর্জার ঘড়িতে
দমকল ছুটে গেলে আরতির ঘণ্টা বলে ভ্ৰম হয় না
অরণ্যের শুক্লপক্ষ নগরের পূর্বজন্ম স্মৃতি হয়ে ভাসে।
বাঁ হাতে বিষম ব্যথা, চোখে লাল ছিট
আমি
আহত বিমর্ষ গুহাবাসী
নারীর ঈষার মতো ধারালো পাথরে ঠেস
দিয়ে রাখা
ইহকালময়
দুই অবসন্ন কাঁধ
রক্ত গন্ধ, উপচ্ছায়াময় রক্ত গন্ধ, যৌবনের হরিৎ বিষাদ।
পশমের মতো কালচে-নীল রোঁয়া
তরাই ভালুক তার দুই থাবা তুলে
হঠাৎ দাঁড়িয়ে ওঠে—
ঝলসে ওঠে মার্কেলের মতো দাঁত
চাপা গর্জনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী জেদ—
রাগ নয়, আমার বিষম অভিমান হয়—
নিরন্ত্র অশক্ত আমি,
এই কি দ্বন্দ্বের যোগ্য কাল?
গুহা ছাড়বো না, আমি যুদ্ধ করবো না, আমি
তীব্র ধিক্কারের চোখে ভালুকের দিকে চেয়ে থাকি—
কাপুরুষ!
পশুটে হাওয়ার মধ্যে রক্তগন্ধ,
উপচ্ছায়াময় রক্তগন্ধ, যেন
বজুকীট ভেদ করে ছদ্মবেশী ঊরু।
মান চৈত্রসন্ধ্যা থেকে ভেসে ওঠে ভ্ৰষ্টা রমণীর
গুপ্ত হাহাকার
টালিগঞ্জ থেকে দূর বেলগাছিয়াময় এক অরণ্যের
হরিৎ বর্ণের মধ্যে ছোপছোপ ধূসরতা দেখে হিম হয়।