০৯. গভীর জঙ্গলে বড় ঝিলটার কাছে

গভীর জঙ্গলে বড় ঝিলটার কাছে কাকাবাবুরা সদলবলে পৌঁছে গেলেন দুপুরের একটু পরেই। চারটে বড় গাছে মাচা বাঁধা হয়েছে। অন্য গাছের ডাল। কেটে সেই মাচাগুলোর সামনে এমনভাবে ঢেকে দেওয়া হয়েছে যে, তলা থেকে কেউ কিছু বুঝতেই পারবে না।

কাছাকাছি অন্য ঝিলগুলো শুকিয়ে ফেলা হয়েছে বলে এই দিনের বেলাতেই একপাল হরিণ এখানে জল খেতে এসেছিল, মানুষজনের শব্দ পেয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালিয়ে গেল।

কাকাবাবু ঝিলের ধারে দাঁড়িয়ে বড়ঠাকুরকে বললেন, একটা জিনিস লক্ষ করুন। ঝিলটার তিনদিকে বেশ খাড়া পাড়। এক দিকটা ঢালু। জন্তু-জানোয়াররা এই এক দিক দিয়েই আসবে-যাবে। তাতে নজর রাখার সুবিধে হবে।

বড়ঠাকুর বললেন, তা ঠিক। কাকাবাবু, একটা খবর শুনেছেন? কলকাতার চিড়িয়াখানার মধ্যে ঢুকে একটা লোক একটা গণ্ডারের শিং কেটে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। সে করাত-রাত সব সঙ্গে নিয়ে ঢুকেছিল।

কাকাবাবু বললেন, তাই নাকি? তা হলে ওরা কীরকম বেপরোয়া হয়ে গেছে দেখুন! বম্বেতে বিদেশি ব্যবসায়ীরা এসে বসে আছে, তাদের কাছে শিং বিক্রি করার জন্য এরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। অনেক টাকার কারবার।

বড়ঠাকুর বললেন, এর মধ্যে পশ্চিম বাংলার জলদাপাড়ায় একটা গণ্ডার মারা পড়েছে। দুজন ফরেস্ট গার্ড চোরাশিকারিদের ধরতে গিয়েছিল, একজন গার্ড খুন হয়ে গেছে। ওরা একসঙ্গে অনেকে দল বেঁধে আসছে এখন।

কাকাবাবু বললেন, এখানে গণ্ডারের সংখ্যা অনেক বেশি, তাই এখানে হামলা হবে বেশি। অন্য রাজ্য থেকেও চোরাশিকারিরা এখানে এসে জুটবে। মনে হয়, আজকের পূর্ণিমা রাতের সুযোগটা তারা ছাড়বে না।

বড়ঠাকুর বললেন, আমরা আর-একটা রিপোর্ট পেয়েছি। আফ্রিকাতেও অনেক গণ্ডার আছে, কিন্তু তাদের দুটো করে শিং থাকে। আমাদের দেশের গণ্ডারের শিং থাকে একটা। গুজব রটে গেছে যে, ভারতীয় গণ্ডারের শিঙের শক্তি বেশি। এই শিং একটা খেতে পারলেই খুব তাড়াতাড়ি যৌবন ফিরে পাওয়া যায়। সেইজন্যই ভারতীয় গণ্ডারের শিঙের চাহিদা খুব বেড়ে গেছে।

কাকাবাবু বললেন, গুজবটা নিছকই গুজব। কোনও গণ্ডারের শিং খেলেই কিচ্ছু উপকার হয় না। চোরাব্যবসায়ীরাই এই গুজব রটিয়েছে। ভারতীয় গণ্ডার শিকার করাও খুব শক্ত। আফ্রিকার গণ্ডারের চেয়ে এ-দেশের গণ্ডারের চামড়া অনেক বেশি শক্ত, যেন লোহার বর্মের মতন, গুলি লাগলে ছিটকে যায়। যে জিনিস যত কম পাওয়া যায়, তার তত বেশি দাম বাড়ে।

রাজ সিং সব কটা মাচা ঠিকমতন মজবুত হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখে এসে বললেন, সব ঠিক আছে। যে তিনজন লোক মাচাগুলো বানিয়েছে, তাদের এবার ছেড়ে দেব?

বড় ঠাকুর বললেন, না, না, ওদের ছাড়া হবে না। ওদের হাতে হাতকড়া লাগান। আমার ড্রাইভার খুব বিশ্বস্ত। আমার গাড়িতে ওদের এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে সারা রাত আটকে রাখবে। যাতে ওরা এখন ফিরে গিয়ে এখানে মাচা বাঁধার খবর কাউকে না দিতে পারে।

কাকাবাবু বললেন, বাঃ, ভাল ব্যবস্থা।

বড়ঠাকুর বললেন, আমি যতদূর সম্ভব সাবধানে সব ব্যাপারটা গোপন রেখেছি। আমরা যে এখানে আজ আসব, তা কারও জানার কথা নয়। কাকাবাবু, আপনি যা-যা বলেছেন, সব মানা হয়েছে। শুধু একটা ব্যাপার আপনাকে জানানো হয়নি। সেটা আমাকে মানতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর আদেশে।

কাকাবাবু বললেন, সেটাও আমি জানি। এক ব্যাটেলিয়ন সৈন্য আনা হয়েছে তো?

বড়ঠাকুর বললেন, আপনি জেনে গেছেন? মুখ্যমন্ত্রী আপনার প্ল্যানটা সব শুনেছেন। তার পর বললেন, আপনারা এই কজন সেখানে রাত্রে থাকবেন, আপনাদের প্রাণের দায়িত্ব কে নেবে? স্মাগলারদের কাছে অনেক অস্ত্রশস্ত্র থাকে। আর্মি দিয়ে জায়গাটা ঘিরিয়ে রাখুন। তাই এক ব্যাটেলিয়ন আর্মি আসছে। এরা গাভোয়ালি সৈন্য, খুব বিশ্বাসী, এখানকার ভাষাই বোঝে না। এরা আবার ক্যামোফ্লেজ জানে। গায়ে, মাথার সঙ্গে গাছের ডালপালা বেঁধে এমনভাবে জঙ্গলে মিশে যাবে যে ওদেরও গাছ বলে মনে হবে। আমাদের শচীনকে ওদের কম্যান্ডারের সঙ্গে রাখা হয়েছে, সে সব বুঝিয়ে দেবে।

কাকাবাবু বললেন, ওদের কমান্ডারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এখান থেকে আধ মাইল দূরে ওরা নিঃশব্দে ছড়িয়ে থাকবে। আমার নির্দেশ না পেলে ওরা নড়বে না, কিছুই করবে না।

বড়ঠাকুর বললেন, তা হলে আমরা এখন ওপরে উঠে পড়ি?

কাকাবাবু ঘড়ি দেখে বললেন, সূর্য অস্ত যেতে এখনও প্রায় এক ঘণ্টা দেরি

আছে। আপনারা এখানে দাঁড়ান, আমি একটু ঝিলটার চারপাশ দেখে আসি।

কাকাবাবু রাধেশ্যাম বড়ুয়ার ঘোড়াটা সঙ্গে এনেছেন, সেটাতে চড়ে তিনি এগিয়ে গেলেন। এই ঝিলটা অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড় হলেও তিনদিকের পাড় বেশ উঁচু, কেউ নামতে গেলে গড়িয়ে পড়ে যাবে। এক দিকটা ঢালু। এর সুবিধে এই যে, এই এক দিকটায় নজর রাখলেই চলবে।

ফিরে এসে কাকাবাবু বললেন, এই বার শুরু হবে আমাদের কঠিন পরীক্ষা। যে যার মাচায় উঠে বসে থাকব, কিন্তু কতক্ষণ যে থাকতে হবে তার ঠিক নেই। হয়ত ওরা আসবে ভোরবেলা। এর মধ্যে আমাদের ঘুমোলে চলবে না, একটাও কথা বলা যাবে না। শুধু ঠায় বসে থাকা। প্রত্যেকের সঙ্গে খাবারের প্যাকেট থাকবে, তাও খেতে হবে নিঃশব্দে। সন্তু আর জোজো একসঙ্গে থাকলে কথা বলে ফেলতে পারে, তাই ওদের এক মাচায় দিচ্ছি না। সন্তু থাকবে তপনের সঙ্গে, আর জোজো রাজ সিংয়ের মাচায় থাকবে।

তপন রায় বর্মণ জিজ্ঞেস করল, চোরাশিকারিদের দেখতে পেলে আমরা কি গুলি চালাব?

কাকাবাবু বললেন, না, না, খবদার গুলি-টুলি চালাবে না। চুপ করে বসে থাকবে।

তপন বলল, ওরা যদি গণ্ডার মারতে শুরু করে, তা দেখেও আমরা চুপ করে থাকব?

কাকাবাবু বললেন, হ্যাঁ, তাও চুপ করে থাকবে। আমরা বন্দুক এনেছি শুধু আত্মরক্ষার জন্য। ওরা যদি আমাদের অস্তিত্ব টের পেয়ে যায়, যদি আমাদের আক্রমণ করতে আসে, তা হলেই শুধু আমরা গুলি চালাব। এরা অতি সাঙ্ঘাতিক মানুষ। অনেক টাকার লোভে একেবারে মরিয়া হয়ে গেছে। আমাদের এমনভাবে থাকতে হবে, যাতে ওরা আমাদের অস্তিত্ব কিছুতেই টের না পায়।

ঘোড়া থেকে নেমে পড়ে তিনি ঘোড়াটাকে বাঁধলেন গাছের সঙ্গে, তারপর বললেন, তোমরা সবাই যে যার মাচায় উঠে পড়ো। মনে থাকে যেন, একটাও কথা নয়। আমার শুধু একটা কাজ বাকি আছে।

একটা ঝোলা ব্যাগ থেকে তিনি বের করলেন দু খানা জুতোর বাক্সের সমান একটা কাগজের বাক্স। তার থেকে বেরলো সাদা ধপধপে একটা ফেভিকলের বাক্স। চতুর্দিক সেলোটেপ দিয়ে এমনভাবে আটকানো, যাতে একটুও হাওয়া কিংবা জল ঢুকতে না পারে।

বড়ঠাকুর জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী?

কাকাবাবু বললেন, এটা আমি আর্মির কাছ থেকে জোগাড় করেছি।

বড়ঠাকুর বললেন, কী আছে এর মধ্যে?

কাকাবাবু মুচকি হেসে বললেন, সেটা যথাসময়ে জানতে পারবেন। খানিকটা কৌতূহল টিকিয়ে রাখা ভাল, তাই না?

কাকাবাবু সেই বাক্সটা ভাসিয়ে দিলেন ঝিলের জলে।

যে-কটা গাছে মাচা বাঁধা হয়েছে, সেখানে একটা করে দড়ির সিঁড়িও ঝোলানো আছে। যাতে জুতো পরেই ওঠা যায়। এই শীতের মধ্যে খালি পায়ে থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

কাকাবাবু মাচায় উঠে দড়ির সিঁড়িটা গুটিয়ে নিলেন। একপাশে রইল রাইফেল, অন্যপাশে খাবারের প্যাকেট। মাচার ওপর গদি পাতা আছে, বেশ আরামেই বসা যাবে।

এর পর শুধু প্রতীক্ষা।

কাকাবাবু অন্য মাচাগুলোর দিকে তাকালেন। কোন-কোন গাছে মাচা বাঁধা হয়েছে তা তিনি জানেন, তবু কিছু বোঝা যাচ্ছে না। প্রত্যেক মাচা প্রায় দু তলা সমান উঁচু, কোনও জন্তুও এত দূর থেকে মানুষের গন্ধ পাবে না। শীতকাল বলে একটা সুবিধে হয়েছে, হঠাৎ সাপ-টাপ এসে পড়বে না গায়ে। ডালটনগঞ্জে একবার জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থাকার সময় গায়ের ওপর দিয়ে সাপ চলে গিয়েছিল।

আকাশের আলো মিলিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গলের মধ্যে অন্ধকার তাড়াতাড়ি নেমে আসে, ওপর দিকটায় আরও কিছুক্ষণ আলো থাকে। উড়ে যাচ্ছে ঝাঁকঝাঁক পাখি। ঝিলের মাঝখানে কয়েকটা শাপলা ফুটে আছে, সেখানে ওড়াউড়ি করছে কিছু ফড়িং আর প্রজাপতি। সব মিলিয়ে বাতাসে একটা সুন্দর শান্ত ভাব।

কাকাবাবু ভাবলেন, জঙ্গল এত সুন্দর, তবু মানুষ এখানে বন্দুক নিয়ে ঢোকে। অকারণে প্রাণিহত্যা করে। এমনকী, মানুষকেও মারে। হিংসার বিষনিশ্বাস ছড়ায়। আজকেই কত খুনোখুনি হবে কে জানে!

প্রথম যে বুনো শুয়োরের পালটা এল, তাদের বেশ স্পষ্টই দেখতে পাওয়া গেল। ওরা দুলে-দুলে দৌড়য় আর ঘোঁত-ঘোঁত শব্দ করে। ঝিলের ধারে গিয়ে চকচক করে খানিকটা জল খেল, আবার দল বেঁধে দুলতে-দুলতে চলে গেল। যেন সময় নষ্ট করতে পারবে না, খুব তাদের জরুরি কাজ আছে।

কাকাবাবু লক্ষ করলেন, শুয়োরগুলো ঢালু দিকটা দিয়েই এল আর গেল।

খানিক বাদেই উঠল পূর্ণিমার চাঁদ। কী স্পষ্ট আর গোল, ঠিক যেন মনে হয় আকাশে একটা ফ্লাড লাইট জ্বালা হয়েছে। কিন্তু ইলেকট্রিক আলোর মতন কড়া নয়, চাঁদের আলো স্নিগ্ধ। তাই তো জ্যোৎস্না নিয়ে এত কবিতা লেখা হয়।

এমন ফটফট করছে জ্যোৎস্না, সব কিছুই যেন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। লোকে বলে, জ্যোৎস্না রাতে তাজমহল দেখতে যেতে হয়। জ্যোৎস্না রাতে জঙ্গল দেখাও এক নতুন অভিজ্ঞতা। সব কিছুই যেন বদলে গেছে। এর মধ্যে কখন যে গোটা সাতেক হরিণ আর দুটো গণ্ডার এসে গেছে, টেরও পাওয়া যায়নি।

প্রাণী হিসেবে গণ্ডার সত্যিই সুন্দর নয়। ঘোড়া যেমন সুন্দর। হরিণ তো সুন্দর বটেই। হাতি, বাঘ, ভালুক এদেরও নিজস্ব রূপ আছে। গণ্ডারের মুখোনা বিচ্ছিরি। কিন্তু এখন গায়ে জ্যোৎস্না মেখেছে বলে তো তাদের বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে না। এত বড় ভারী একটা জন্তু, কিন্তু হাঁটছে নিঃশব্দে।

অরণ্যের প্রাণীদের মধ্যে যাদের খাদ্য-খাদক সম্পর্ক, তারা ছাড়া কেউ কাউকে নিয়ে মাথা ঘামায় না। হাতির পাশ দিয়ে হরিণ চলে গেলেও হাতি কোনও দিন তাদের মারবে না। হরিণের সঙ্গে শুয়োরের লড়াই হয় না। গণ্ডার তো কারও সাতে-পাঁচেও থাকে না। ওদের ছোট-ছোট চোখ, বিশেষ কিছু দেখতেই পায় না, আপন মনে ঘুরে বেড়ায়। হাতি তবু কখনও কখনও খেপে গিয়ে মানুষ মারে, কিন্তু গণ্ডার কখনও মানুষ মেরেছে, এমন শোনাই যায় না। ওরা নিরীহ প্রাণী, মানুষের ক্ষতি করে না।

যত নষ্টের গোড়া হচ্ছে বাঘ। যাকে-তাকে মারে। গায়ের জোরে পারবে না বলেই হাতি আর গণ্ডারকে ঘাঁটায় না। মানুষ আরও বেশি হিংস্র, মানুষ হাতির মাংস কিংবা গণ্ডারের মাংস খায় না, তবু ওদের মারে।

হরিণরা জল খেয়ে চলে গেল, রয়ে গেল গণ্ডার দুটো। ওরা জলে নামছে। অন্য সব জন্তরই শীত লাগে, কিন্তু গণ্ডারের শীত নেই। মোষরাও জল ভালবাসে, জলে ড়ুবে থাকে, কিন্তু তা গরম কালে। অন্য প্রাণীরা জল খেয়ে চলে যাচ্ছে একটু পরে, কিন্তু গণ্ডাররা যাচ্ছে না। শীতকালে ঝিলের জলে অন্য জন্তুরা থাকে না, গণ্ডারই শুধু থাকে, তাও অনেকক্ষণ থাকে, সেই জন্যই শীতকালে গণ্ডার শিকার করা সুবিধেজনক।

ঝিলের উঁচু দিকের পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছে দুটো হাতি। আকাশের গায়ে তাদের দেখাচ্ছে ছায়ামূর্তির মতন। হাতি দুটো সেখান থেকে নামার চেষ্টা না করে অনেকখানি ঘুরে চলে এল ঢালু দিকটায়। এদিকে জলের মধ্যে সাতটা গণ্ডার হয়ে গেছে।

অন্য জলাশয়গুলো শুকিয়ে ফেলায় এখানে আসছে অনেকে। একসঙ্গে এত জন্তু-জানোয়ার দেখার সৌভাগ্য অনেকেরই হয় না।

রাত বাড়ছে। কাকাবাবুর সঙ্গে রয়েছে খাবারের প্যাকেট, ফ্লাস্কে গরম কফি, তবু তাঁর কিছু খাওয়ার কথা মনেই নেই। তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা একদৃষ্টিতে চেয়ে আছেন ঝিলের ঢালু দিকটায়। ফেভিকলের বাক্সটা জলে ভাসছে, তাও দেখা যাচ্ছে।

অন্য কোনও মাচা থেকে কেউ একটাও শব্দ করেনি এ পর্যন্ত। শুধু একবার কার যেন খাবারের একটা ঠোঙা পড়েছে নীচে। তাতে অবশ্য কিছু ক্ষতি হয়নি। গাছের শুকনো পাতা বা ফলটলও তো পড়ে!

মাঝরাত্তির পার হওয়ার পর কাকাবাবু ফ্লাস্কের ঢাকনায় কফি ঢেলে একটু-একটু চুমুক দিচ্ছেন, হঠাৎ তিনি একটা ব্যাপার খেয়াল করলেন। হরিণের মতন ছোট প্রাণীরা জল খেতে-খেতে হঠাৎ মুখ তুলে ঢালু জায়গাটার বাঁ দিকের জঙ্গলের দিকে চেয়ে থাকছে। তারপর তিড়িং-তিড়িং করে লাফিয়ে দল বেঁধে দৌড়ে পালাচ্ছে।

ওখানে কিছু একটা আছে। বাঘ, কিংবা মানুষ। হিংস্র প্রাণীর উপস্থিতি হরিণই সবচেয়ে আগে টের পায়। মানুষ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। চোরাশিকারিরা এসে গেছে তা হলে! একেবারে নিঃশব্দে কী করে এল? এ-জায়গাটা জঙ্গলের অনেকটা ভেতরে। ওরা গাড়ি কিংবা ঘোড়ায় চেপে এসে, সেগুলো এক জায়গায় রেখে পা টিপে টিপে হেঁটে এসেছে?

যেসব সৈন্য গাছ সেজে দূরে ঘিরে আছেতাদের বলা আছে যে, কেউ ঝিলের দিকে আসতে চাইলে সাড়াশব্দ করবে না। কাকাবাবুর নির্দেশ না পেলে কিছুই করবে না ওরা।

সত্যিই চোরাশিকারিরা এসেছে কি না এখন বোঝা যাচ্ছে না। তবে ছোট-ছোট প্রাণীরা বাঁ দিকটায় তাকিয়ে চঞ্চল হয়ে পালাচ্ছে ঠিকই। বাঘ হলে কি এতক্ষণে একটাও শিকার ধরত না?

রাত ঠিক পৌনে একটায় কোথা থেকে এক টুকরো মেঘ এসে হাজির হল আকাশে। কাকাবাবু প্রমাদ গুনলেন। এই রে, আরও মেঘ এসে যদি চাঁদটা ঢেকে দেয়, তা হলে কিছুই দেখা যাবে না। আজকের এত উদ্যোগ মাটি হয়ে যাবে?

ঠিক তখনই বাঁ দিকের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এল কয়েকজন মানুষ। সাত-আট জন তো হবেই। সকলের হাতে বন্দুক। তাদের মধ্যে একজনের চেহারা তিনজন মানুষের সমান। এতদূর থেকেও চেনা যায়, সে হিম্মত রাও। পালের গোদা হয়ে সে নিজেও এসেছে।

ওরা সার বেঁধে এগিয়ে আসছে জলের দিকে। একসঙ্গে সবাই মিলে কী করতে চায়? আর ধৈর্য ধরতে পারেনি, ঢালু দিকটা আটকে এক সঙ্গে গুলি চালাবে? যত গুলি খরচ হয় হোক, এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে মারবে?

কাকাবাবু শঙ্কিতভাবে অন্য মাচাগুলোর দিকে তাকালেন। ওরা না ভুল করে কিছু একটা করে বসে!

চোরাশিকারির দলটা একেবারে জলের ধারে চলে এসেছে। উঁচু করেছে রাইফেল। এবার একসঙ্গে গুলি চালাবে।

কাকাবাবু ওভারকোটের পকেট থেকে একটা রিমোট কন্ট্রোল সুইচ বের করে টিপে দিলেন।

সঙ্গে-সঙ্গে প্রচণ্ড শব্দে সেই ভাসমান ফেভিকলের বাক্সটায় দুটো বোমার বিস্ফোরণ হল। শব্দ মানে কী, যেন আকাশ ভেঙে পড়ল, তোলপাড় হয়ে গেল ঝিলের জল।

তারপরই যেন শুরু হয়ে গেল প্রলয়। সমস্ত জন্তুগুলো প্রাণভয়ে আর্তনাদ করে ছুটল দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে। হাতি দুটো চিৎকার করে উঠল, জঙ্গলের গাছের সব ঘুমন্ত পাখিরা উড়ে গেল বাসা ছেড়ে। কাকাবাবুর গাছের সঙ্গে বাঁধা ঘোড়াটা লাফাতে লাফাতে দড়ি ছেঁড়ার চেষ্টা করতে লাগল প্রাণপণে।

চোরাশিকারিরা আচমকা সেই সাঙ্ঘাতিক আওয়াজে দিশেহারা হয়ে গিয়ে গুলি চালাতে পারল না। নিজেদের সামলে নেওয়ার আগেই দেখল, গণ্ডার-হাতি-শুয়োরের পাল প্রচণ্ড বেগে ছুটে আসছে তাদের দিকে। পালাবার সময় পেল না, তারা পড়ে গেল ওই জানোয়ারদের সামনে।

হিম্মত রাও অত বড় চেহারা নিয়ে একটা গণ্ডারকে হাত দিয়ে রুখবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু গণ্ডারের তুলনায় তার গায়ের জোর কিছুই না। গণ্ডারটা তাকে ঠেলে নিয়ে চলেছে আর হিম্মত রাও চেঁচাচ্ছে, বাঁচাও, বাঁচাও!

কাকাবাবু হাসতে লাগলেন। এখন আর তাঁর করার কিছু নেই। যারা নিরীহ জন্তুদের শিকার করতে এসেছিল, এখন তারাই জন্তুদের শিকার। হাতির পায়ের চাপে কিংবা গণ্ডারের ভূঁসোয় মরবে না বাঁচবে, তা ওরাই বুঝবে। যারা এই জানোয়ারদের হাত ছাড়িয়ে কোনওক্রমে পালাতে পারবে, তারা ধরা পড়বে সেনাবাহিনীর হাতে।

ঝিলের ঢালু দিকটা শেষ হওয়ার পর জঙ্গলের মধ্যে একটা লণ্ডভণ্ড কাণ্ড চলছে। হঠাৎ কাকাবাবু দেখতে পেলেন, একটি কালো পোশাক পরা লম্বা লোক রাইফেল হাতে নিয়ে ছুটে আসছে এদিকে। কাকাবাবু এক পলক তাকিয়েই চিনতে পারলেন টিকেন্দ্রজিৎকে। সঙ্গে-সঙ্গে কাকাবাবুর রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠল, ওকে পালাতে দেওয়া চলবে না, ওকে কাকাবাবু নিজে শাস্তি দেবেন।

দড়ির সিঁড়িটা ফেলে কাকাবাবু তরতর করে নেমে এলেন নীচে।

কিন্তু তারই মধ্যে টিকেন্দ্রজিৎ কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। ঝিলের দিকটা থেকে সে ছুটে আসছিল, এর মধ্যে কোনও বড় গাছ নেই যে, সে গাছে উঠে পড়বে। তা হলে লোকটা গেল কোথায়? অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে, না কাকাবাবু চোখে ভুল দেখেছেন!

তিনি রাইফেলটা উঁচিয়ে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে ওকে খুঁজতে লাগলেন।

যেন মাটি খুঁড়ে হুস করে উঠে এল টিকেন্দ্রজিৎ। ঠিক কাকাবাবুর পেছনে। সামান্য একটু শব্দ পেয়ে কাকাবাবু ঘুরে দাঁড়াবার আগেই টিকেন্দ্রজিৎ তার রাইফেলটা উলটো দিকে ধরে তার বাঁট দিয়ে প্রচণ্ড জোরে মারল কাকাবাবুর ঘাড়ে।

কাকাবাবু ঝুপ করে পড়ে গেলেন মাটিতে।

টিকেন্দ্রজিৎ দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, বারবার বেঁচে যাবে? আমার প্ল্যান নষ্ট করেছ, তোমাকে খতম করে দিয়ে যাব।

আবার সে রাইফেলটা তুলল।

আগের বারের আঘাতটা খুব জোর হয়নি। এবার কাকাবাবুর বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নেই, এবার সে তাঁর মাথাটা চুরমার করে দিতে চাইল।

ঠিক তখনই পেছন থেকে টিকেন্দ্রজিতের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ল সন্তু। গায়ের জোরে সে পারবে না জেনেই টিকেন্দ্রজিতের চোখ দুটোতে সে আঙুল ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল।

কিন্তু টিকেন্দ্রজিৎ অসাধারণ ক্ষিপ্র। মাথার ঝাঁকুনি দিয়ে সন্তুকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল সে, একটুর জন্য ভারসাম্য হারিয়ে সন্তুকে নিয়েই পড়ে গেল মাটিতে।

সন্তু চট করে গড়িয়ে গিয়ে টিকেন্দ্রজিতের বুকে চেপে বসে তার গলা টিপে ধরে চিৎকার করল, জোজো, শিগগির সবাইকে ডাক, টিকেন্দ্রজিৎকে ধরেছি!

টিকেন্দ্রজিৎকে কাবু করার ক্ষমতা সন্তুর নেই। সে দু পা তুলে জোরে লাথি কষিয়ে ছিটকে দিল সন্তুকে। স্পিংয়ের মতন লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল সে। সন্তুকে কিংবা কাকাবাবুকে আর মারার জন্য জোর না করে সে রাইফেলটা তুলে নিয়ে বিদ্যুতের বেগে ছুটে চলে গেল। আর তাকে দেখা গেল না।

সন্তুই যে এবার কাকাবাবুর প্রাণ বাঁচাল, তা তিনি জানতে পারলেন না। তাঁর জ্ঞান নেই।

ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে জ্ঞান ফিরে এল তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে তিনি উঠে বসে বললেন, সে-লোকটা কোথায় গেল? আমি কোথায়?

কাকাবাবুর দু ধারে বসে আছে জোজো আর সন্তু। বড়ঠাকুর দাঁড়িয়ে ছিলেন একটু দূরে। কাছে এসে বললেন, আপনি জেগে উঠেছেন? বাঃ, আর চিন্তার কিছু নেই।

কাকাবাবু বললেন, আমার কী হয়েছিল?

বড়ঠাকুর বললেন, মাথার পেছন দিকে একটা চোট লেগেছে। ঘেঁতলে গেছে খানিকটা, তবে ক্ষত খুব গভীর নয়। আমার কাছে ফার্স্ট এড বক্স ছিল, আমি ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি। আর ভয়ের কিছু নেই। এদিকে খবর খুব ভাল জানেন তো? একটাও গণ্ডার মারা যায়নি, কিন্তু চোরাশিকারি ধরা পড়েছে সাতজন। এদের মধ্যে তিনজনের হাত-পা ভেঙেছে। হিম্মত রাওয়ের অবস্থাটা যদি দেখতেন! একটা গণ্ডার ওকে টুসো দিয়ে-দিয়ে কতবার যে শূন্যে ছুঁড়ে দিয়েছে তার ঠিক নেই। দুটো পা-ই ফ্র্যাকচার। আর ও কোনওদিন উঠে দাঁড়াতে পারবে কি না সন্দেহ!

কাকাবাবু বললেন, আর টিকেন্দ্রজিৎ?

বড়ঠাকুর বললেন, সে পালিয়েছে। তাকে ধরা গেল না। ও লোকটা যে। অসম্ভব ধূর্ত! তবু সন্তু প্রায় কজা করে ফেলেছিল। সন্তুর অসাধারণ সাহস, আপনাকে মারবার পর সন্তু টিকেন্দ্রজিতের গলা টিপে ধরেছিল, আমাদের পৌঁছোতে একটু দেরি হয়ে গেল, সেই ফাঁকে পালাল।

কাকাবাবু আপনমনে বললেন, পালাল!

বড়ঠাকুর বললেন, সে পালিয়েছে বটে, কিন্তু তার দলবল ধরা পড়ে গেছে, আর সে এদিকে মাথা গলাতে সাহস করবে না। আপনার বুদ্ধির জন্য এবারকার মতন অনেক গণ্ডার বেঁচে গেল।

কাকাবাবু মাথায় হাত বুলিয়ে ব্যান্ডেজটা অনুভব করলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, এই জায়গাটা কোথায়?

বড়ঠাকুর বললেন, এটা একটা ওয়াচ টাওয়ার। এই একটা মুশকিল হয়ে গেছে। ওখানে সব মিটিয়ে আমরা এই কজন একটা গাড়িতে আসছিলাম। হঠাৎ গাড়িটা মাঝপথে খারাপ হয়ে গেল। কিছুতেই স্টার্ট নিচ্ছে না। তাই এই ওয়াচ টাওয়ারেই রাতটা কাটিয়ে দিতে হবে। এখানে কোনও ভয় নেই। রাতও প্রায় শেষ হয়ে এল।

কাকাবাবু শুয়ে আছেন চৌকিদারের খাটিয়ায়। সেটা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই বড়ঠাকুর হা-হা করে উঠে বললেন, আপনি বিশ্রাম নিন, উঠবেন না।

কাকাবাবু বললেন, আমার বিশেষ কিছু হয়নি।

সন্তু এতক্ষণ কোনও কথা বলেনি। সে বলল, কাকাবাবু, জোজো স্বীকার করেছে, ও আজ যা দেখেছে, সে রকম আর কখনও দেখেনি। হিম্মত রাওয়ের দৌড়ের দৃশ্যটা ভি ডি ও ক্যামেরায় তুলে রাখা উচিত ছিল!

কাকাবাবু একথায় হাসলেন না। তাকালেনও না ওদের দিকে। মুখোনা উদাসীন। চৌকিদারের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে-যেতে বললেন, টিকেন্দ্রজিৎ পালিয়ে গেল? শুধু ওকেই ধরা গেল না!

বড়ঠাকুর পেছনে আসতে-আসতে বললেন, আপনি আর চিন্তা করবেন। এবার তো পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশ ঠিক ওকে ধরে ফেলবে।

কাকাবাবু বললেন, না, পুলিশ ধরতে পারবে না। ও জঙ্গলে লুকিয়ে থাকলে কেউ ওকে ধরতে পারবে না। দু-তিন মাস পরে সবাই এ-ঘটনা ভুলে যাবে। আবার ও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে। আর আমি কলকাতায় গিয়ে খাব-দাব, ঘুমোব? আর সব সময় মনে পড়বে, টিকেন্দ্রজিৎ আমাকে দু-দুবার মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে, আমাকে অপমান করেছে, তবু আমি তার প্রতিশোধ নিতে পারিনি!

একটু দূরে স্টেশন ওয়াগনটা দাঁড় করানো, তার সামনে একটা ডালা খুলে খুটখাট করছে ড্রাইভার। কাছেই বাঁধা রয়েছে ঘোড়াটা, তার এক পাশে রাইফেল বাঁধা, আর একটি থলি।

কাছে গিয়ে ঘোড়াটার গায়ে দু বার চাপড় মারলেন। রাইফেলটা তুলে নিয়ে দেখলেন গুলি ভরা আছে কি না। তারপর শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় বললেন, আমাকেই যেতে হবে টিকেন্দ্রজিৎকে খুঁজতে। আমি যাচ্ছি। তোমরা এখানে থাকো। তোমরা আমার পেছন-পেছন এসো না, টিকেন্দ্রজিৎকে শাস্তি দিয়ে তার পর আমি ফিরব।

বড়ঠাকুর দারুণ চমকে গিয়ে বললেন, আপনি..এখন…এই অসুস্থ শরীর নিয়ে তাকে খুঁজতে যাবেন? না, না, তা অসম্ভব!

কাকাবাবু বললেন, মোটেই অসম্ভব নয়। আমি টিকেন্দ্রজিৎকে শাস্তি দেব, প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। যতক্ষণ না সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করছি, ততক্ষণ আমার ঘুম হবে না!

বড়ঠাকুর বললেন, আপনি কি পাগল হয়েছেন, কাকাবাবু? এইভাবে একা-একা গেলে… টিকেন্দ্রজিৎ তো যে-কোনও জায়গা থেকে লুকিয়ে গুলি করে আপনাকে মেরে ফেলতে পারে।

কাকাবাবু বললেন, মারুক! হ্যাঁ, আমি পাগল হয়েছি। প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে না পারলে আমি বাঁচতেও চাই না। আত্মসম্মান বজায় রাখতে না পারলে বেঁচে থেকে লাভ কী? আমি রাজা রায়চৌধুরী, আমাকে অপমান করে এ-পর্যন্ত আর কেউ পার পায়নি। আমি চললাম।

বড়ঠাকুর বললেন, আপনাকে আমরা এ-অবস্থায় কিছুতেই যেতে দিতে পারি না!

বড়ঠাকুর এগোবার চেষ্টা করতেই কাকাবাবু রাইফেলটা তাঁর দিকে তাক করে বললেন, খবরদার, বাধা দিতে গেলে আমি গুলি চালাব। সত্যি গুলি চালাব।

সন্তু দৌড়ে এসে কাকাবাবুর একটা হাত চেপে ধরে বলল, তা হলে আমিও তোমার সঙ্গে যাব!

কাকাবাবু হিংস্রভাবে এক ধাক্কা মেরে সন্তুকে ঠেলে দিয়ে ভয়ঙ্কর মুখভঙ্গি করে বললেন, না, তুই আমার সঙ্গে আসবি না। তুই আমার পেছন-পেছন যদি দৌড়ে আসিস, তোকেও আমি গুলি করব।

তারপর বড়ঠাকুরকে বললেন, এই ছেলেটাকে ধরে রাখুন। ওর কিছু হলে তার দায়িত্ব আপনার! আমি যাচ্ছি। হয় আমি টিকেন্দ্রজিৎকে ধরে নিয়ে আসব, নয় আমি মরব।

তারপর লাফ দিয়ে ঘোড়াটার পিঠে চেপে ছুটিয়ে দিলেন খুব জোরে। প্রায় চোখের নিমেষে মিলিয়ে গেলেন জঙ্গলে।

বড়ঠাকুর বললেন, মাই গড! মাথায় চোট লাগার ফলে উনি কি সত্যি-সত্যি পাগল হয়ে গেলেন?

জোজো অস্ফুট স্বরে বলল, ইচ্ছামৃত্যু! ইচ্ছামৃত্যু!