এই আশ্বিনে

এই আশ্বিনে বারান্দাটায় পড়ছি বসে
হালফ্যাশনের দিলতড়পানো উপন্যাস।
হাওয়ার চুমোয় গাছের পাতারা যাচ্ছে খসে
হৃদয়ে আমার হঠাৎ ফোঁপায় হলদে ঘাস।

কখনো ঢুলুনি ব্যেপে আসে খুব, কখনো বই
বুকে রেখে ছুটি অতীতের ধুধু তেপান্তরে।
কখনো অমল কখনো কিশোর ডেভিড হই,
তন্দ্রা ফলায় বিষাদ আমার প্রৌঢ় স্বরে।

ট্রাফিকের খর কলরবে ফের চমকে উঠি,
পথিপার্শ্বের আদল কেমন অচেনা লাগে।
দু’চোখে ঘনায় অতীতের কিছু শ্বেত পিঁচুটি,
সত্তা আমার স্নাত অবেলায় অস্তরাগে।

জীবন এখন, বলা যেতে পারে, হতচেতন;
খবর কাগজে গল্পগুজবে সীমিত প্রায়।
নিউরসিসের পাকে আবদ্ধ ক্লান্ত মন
এবং নিয়ত আমাকে ভাবায় কন্যাদায়।

পেনসনহীন জীবন গোঙায় রাত্রিদিন;
ট্যাঁকে কুলোয় না, আশরাফি ঠাঁট আছে বজায়।
দরবারী বাজে মেদমজ্জায় বিরামহীন,
মানসম্ভ্রম আস্তে সুস্থে অস্ত যায়।

দৌহিত্রের লাল বল এসে গড়ায় পায়ে;
গৃহিণী কিচেনে, ছেলেটা ক্যাসেট প্লেয়ারে শোনে
ডোনা সামারের গান আর চলে ক্রমশ বাঁয়ে।
ওর উদ্যমে হৃদয় আমার স্বপ্ন বোনে।

এই আশ্বিনে মনে পড়ে যায় মজেছিলাম
আমিও একদা কারো চঞ্চল চোখের নীলে।
একদা জপেছি প্রহরে প্রহরে একটি নাম,
সাজিয়েছি তাকে আবেগ-ঋদ্ধ ছন্দে মিলে।

জানি সে দয়িতা আজকে আমাকে রাখেনি মনে;
অভিযোগহীন বসে আছি আশি ভীষণ একা।
চিরদিন কেউ করে না ভ্রমণ বৃন্দাবনে,
মেঘের ঘষায় মুছে বায় ক্রমে চন্দ্রলেখা।

তা বলে আমার উদ্বেগ নেই, এমন নয়;
তাইতো আজকে আমার হৃদয়ে গোধূলিবেলা
তার পদপাতে হয়েছে ব্যাপক হিরন্ময়,
অবচেতনের জলে ভাসে এক বিবাগী ভেলা।

স্বরচিত ঘোর কেটে যায় দেখি অকস্মাৎ
দূরবর্তী সে মিছিলের রোলে নাড়ির গতি
বাড়ে ক্রমাগত, হায়রে আমার পক্ষপাত
এখনো অটুট মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতি।

কবন্ধ এই সমাজ এখন শ্মশানবাসী,
আমিও এখানে দশের মতোই ওড়াই ছাই,
বাজলো কি আজ ইস্রাফিলের ভীষণ বাঁশি?
প্রস্পেরো তার কেতাব ডোবায়। কোথায় যাই?