তুণে খুঁজি তীর


একদা আমার স্বপ্ন সুপ্রাজ্ঞ নূহের করতল
থেকে উড়ে-যাওয়া কপোতের মতো ছিল যার ঠোঁটে
পুষ্পল জলজ কণা সদ্য জাগা পল্লবের ঘ্রাণ।
একদা আমার স্বপ্ন নীলিমাকাতর ঊর্ধচারী
পাখায় জড়িয়ে নিয়ে নির্বাসিত দান্তের ভাবনা
ক্লান্তিকালে খুঁজেছে নীড়ের ওম; একদা আমার
স্বপ্ন ছিল দ্য ভিঞ্চির অলৌকিক আঙুলের মতো;
একদা আমার স্বপ্ন মুক্তিযোদ্ধাদের নিত্যসঙ্গী
ছিল ঝোপঝাড়ে, বনবাদাড়ের আঁধারে, জলার-
সবুজ গ্রেনেডে, বন্দুকের নলে, ক্যাম্পে, পরিখায়।
এখন আমার স্বপ্ন ক্রাচাশ্রয়ী, একা-একা ঘোরে
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাঝে-মাঝে; এখন আমার স্বপ্ন
চাঁদা আর ভাতা প্রার্থী, কখনও আবার নজরুলী
কবিতার মতো অগ্নি উদ্‌গীরণে ব্রতী হতে চায়।


তবু আমি নিজেকে বিপন্ন ভেবে করি না বিলাপ।
ক্রমশ কাদার চাকা দেবে যাবে, আমার শোণিত
মিশে যাবে অস্তরাগে, ভূলুণ্ঠিত শরীর দলিত
হবে আর শস্যশূন্য মাঠের মতন এ জীবন
ক্ষণকাল হবে উদ্ভাসিত দৃষ্টপথে, অনন্তর
লুপ্ত গান, স্মৃতি সমুদয়, অতীত ও বর্তমান।
এখন যদিও স্বপ্ন রোগা ঈগলের মতো বাঁচে
উপহাস কুড়িয়ে সর্বদা, তবু স্বপ্নের টানেলে
কাটে বেলা মাঝে-মধ্যে। সম্প্রতি আমার নেই কোনো
সঙ্গী আর; একদা যাদের সঙ্গ দিত সুখ, তারা
তিন ডাইনীর প্ররোচনা মেনে অতি দ্রুত পাল্টে
নিয়েছে জীবন, আমি একা এখনও কুড়াতে যাই
ফুল বনবাদাড়ে এবং চাকা নাছোড় কাদায়
দেবে যাবে নিশ্চিত জেনেও আজও তূণে খুঁজি তীর।