আমার লোহিত ম্যান্ডোলিন

স্বপ্নের গহন লোকালয়ে একা হেঁটে যেতে যেতে
সেই কবে আমি পেয়েছিলাম একটি ম্যান্ডোলিন।
গভীর সোনালি ঝোপ থেকে রাজহাঁসের মতন
বাড়িয়ে নিস্তব্ধ গ্রীবা এসেছিল আমার নিকটে-
আমার আঙুলে চুমো খেয়ে একরাশ রইল ঝুলে
নিভৃত গলায় স্বপ্ন এবং অশ্রুত সুর নিয়ে।
কখনো বাজাই ওকে ভয়ে-ভয়ে, যেমন নিঃসঙ্গ
কেউ বন্দিনিবাসে বাজায় সুর খুব সাবধানে।

যখন পাখির রক্তে অজস্র বুদ্বুদ গান গায়,
সহসা ফুলের গন্ধে যখন ধুলায় প’ড়ে-থাকা
অত্যন্ত নীরব হাড় বেহালার আদল নিজেই
পেতে চায় অথবা যখন কোনো একাকী কুকুর
ডাগর চাঁদের দিকে মুখ তুলে প্রায় ভবঘুরে
প্রেমিকের মতো করে প্রহর যাপন, ম্যান্ডোলিন
দেয়ালের স্বপ্ন থেকে জেগে উঠে অন্য স্বপ্নে ডোবে,
রাত্রিকে পরায় কত সুরময় স্বপ্নিল কাতান।

যমজ ভায়ের মতো আমরা দু’জন সর্বদাই 
আছি কাছাকাছি, অবিচ্ছিন্ন, আমি আর
আমার লোহিত ম্যান্ডোলিন। প্রহরে প্রহরে বাজে
সত্তা তার, সুরে কোন ভূগর্ভস্থ নগরের মৃত
কলরব, কোনো খ্রিস্টপূর্ব শতকের সুন্দরীর
সোনালি শরীর, দীর্ঘশ্বাস, খনি আর টানেলের
অন্ধকার, জাহাজের ভগ্নাংশ এবং পথরেখা
জেগে ওঠে; কখনোবা বর্তমান বাজে ম্যান্ডোলিনে।

কোনো কোনো শেষ রাতে প্রেমিকার ছায়ার মতন
একটি নিঃশব্দ সুর আমাকে মাতিয়ে রাখে খুব,
এখন সে দূরবর্তী গাছের আড়ালে যেন ক্লান্ত
ডোরাকাটা চাঁদ, চাঁদ অকস্মাৎ নামে ম্যান্ডোলিনে,
নাচে তারে তারে, কাঁদে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে, বারে বারে
বিহ্বল আমাকে নিয়ে যায় জনশূন্য এভেন্যুতে।
দেখি স্তব্ধ চৌরাস্তায় এক অলৌকিক অর্কেস্ট্রায়
বাজিয়ে চলেছি আমি আমার লোহিত ম্যান্ডোলিন।

তবে কি এখন আমি অস্তরাগে মাতাল বাদক?
আহত এ-যুগ ঘন ঘন ছুড়ছে পা যন্ত্রণায়,
কষে ফেনা, চোখে তার দুঃস্বপ্নের ক্রূর ঊর্ণাজাল
এবং সেবার্থে তার আসে দলে দলে অন্ধ নার্স
চতুর্দিকে থেকে-কালো, সাদা, পীত, বাদামি; একাকী
আমি ছুটি দিগ্ধিদিক, কখনোবা ভাবি ক্লান্ত মনে-
আগুন লাগুক বনে, নামুক ব্যাপক ধস পথে,
আমৃত্যু আমাকে ম্যান্ডোলিনে তুলতে হবে সুর।