কাঙাল

একজন হতচ্ছাড়া লোককে আমি প্রত্যহ দেখি,
সারাক্ষণ সে দাঁড়িয়ে থাকে
আমার দরজার সামনে, তার মুখে টুঁ শব্দটি নেই।
এক মাথা ঝাঁকড়া কাঁচাপাকা চুল, তোবড়ানো তার
ট্রাউজার, শার্ট বোতামহীন,
সমস্ত শরীরে দেশ-বিদেশের নানা স্ট্যাম্প।
যেন সে মুঠি খুললেই করতলে
স্বপ্ননগরীর পায়রাময় সিংহদ্বার ঝলমলিয়ে উঠবে,
প্রস্ফুটিত হবে দিনান্তের ছাপ-লাগা মরূদ্যান!

প্রত্যহ দেখি তাকে, একই রকম উদাস দৃষ্টি মেলে
দাঁড়িয়ে থাকে সর্বক্ষণ দরজার সামনে, চুপচাপ।
কী অন্ধকারে, কী জ্যোৎস্নায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে
প্রহরের পর প্রহর।
সেসব প্রহর কুষ্ঠরোগীর ওষ্ঠের মতো ভারি
মনে হয় আমার।
আমি তাকে ‘আমার দরজা থেকে দূর হ’ বলে তাড়িয়ে 
দিতে চাই বারংবার; সে এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে যায় না,
ভাস্কর্যের মতো দাঁড়িয়ে থাকে একা।
এ কেমন কাঙাল তুই দাঁড়িয়ে থাকিস নির্বিকার?
তোর কণ্ঠ থেকে যাঞ্চা ঝরে না এক ফোঁটা,
হাত দুটো বুকের ওপরেই থাকে আড়াআড়ি।
যদি এতই অহংকারী, তবে কেন আমার মতো নৈরাশ
মুখে নিয়ে অপেক্ষা করিস এখানে প্রতিদিন?

জানলার পর্দা সরিয়ে দেখি সবিস্ময়ে-
রৌদ্র পোড়ায় তাকে, বৃষ্টি করায় স্নান।
শত শত মাকড়সা ওকে ঘিরে বুনতে থাকে জাল,
কোত্থেকে উন্মাতাল এক জেব্রা ছুটে এসে
প্রবেশ করে ঊর্ণাজালে। উন্মাদের স্মৃতির মতো
ছিন্নবিচ্ছিন্ন জাল ঝুলতে থাকে তার চোখে-মুখে
ওষ্ঠে, হাতে, গ্রীবায় আর একা সে দাঁড়ানো
পুরাকালের শিলীভূত যোদ্ধার মতো।
যত তাড়াতে চাই, তত তীব্র দাঁড়িয়ে থাকে, অনড়।

আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেই সে নেই।