অচেনার মধ্যে এই ডেকে যাওয়া

মারাত্মক ভুল হয়ে গেছে কি তোমার? প্রমাদের পাশাপাশি
থেকে তুমি নিজে
প্রমাদ গুনেছ কতবার, মনে পড়ে? উদ্ধার-রহিত তুমি
এবং স্বভাবদোষে প্রতিটি সকালবেলা সন্ধ্যা পান করো।
আনন্দোমেলাকে কালো ব্যাজ পরিয়ে বানাও দীর্ঘ শোকসভা
বারংবার আর
সমাজে থেকেও তুমি ভীষণ অসামাজিক, রুক্ষ হয়ে যাচ্ছ,
একাকীর চেয়েও একাকী।

তবে কি তোমার
নৈরাশের কেশপাশে বন্দি হতে ভালো লেগেছিল?
কী যে ভালো লাগে আর লাগে না তোমার, বোঝা দায়।
কখনো ফুলের পাশে দাঁড়াও এভাবে, যেন ফুল
ছাড়া কিছু আর নেই পৃথিবীতে, কখনোবা ক্রোধে
পুষ্পের ঘাতক হয়ে ঘোরো একা বাগানে বাগানে।
ঘোড়ার কেশরে হাত ডুবিয়ে দাঁড়াতে ভালো লাগে?
ভালো লাগে অন্ধকার ঘরে হুকে-আটকানো কোনো
কঙ্কালের দোলা কিংবা নীলিমায় বামন এবং
অপ্সরীর মেলামেশা? কোথাও ঘুণের কিছু চিহ্ন
দেখলে তোমার মুখ বিরক্তির কুশে ঢেকে যায়,
ভালোবাসাবাসি নিয়ে কেউ আদিখ্যেতা করলেই
তাকাও বঙ্কিম, ক্রূর হেসে ওঠো, আবার নিজেই
ভালোবাসা মানুষের প্রকৃত পতাকা জ্বলজ্বলে 
বলে মগ্ন হও প্রেমে। টিন আর সিসার জঞ্জাল
ফুঁড়ে ক্লান্ত পরিবেশে একটি সারস এলে তুমি
ফিরিয়ে নেবে কি চোখ? হত্যাকারী হবে কি পাখির?
বুঝি ভালো লাগে খুব করোটিতে স্বপ্নের কম্পন।
এখানে তোমার কেউ নেই,
সেখানে তোমার কেউ নেই,
কোথাও তোমার কেউ নেই,
ব্যাপক ‘নেই’-এর মধ্যে যাকে
একান্ত তোমার বলে ভাব, সেও কি তোমার কেউ?
তুমি তো অবহেলিত অতিশয়, যেন বাংলা ভাষা। সেই কালো
অবহেলা মুছে নিতে পারে যে ওষ্ঠে অমাবস্যা দ্রুত
ঘনায় বেকলি।

তুমি তো বোতলে বাণী বন্দি করে দিয়েছ ভাসিয়ে লোনা জলে-
তরঙ্গে তরঙ্গে নেচে কোথায় যে যাবে কে তা জানে। কোনো দিন
হয়তো পড়বে 
কারো আবিষ্কারপ্রিয় হাতে অথবা হারিয়ে যাবে দূরে চিরতরে।
এক্ষুণি বিদায় নিতে চাও? তুমি রুমাল উড়িয়ে চলে যাবে
এত শীঘ্র নিরুদ্দেশে? কেন যাবে এই পার্ক আর ঝলমলে
রেস্তোরাঁ বন্ধুর ডেরা, নিজস্ব চেয়ার,
বিমান, বলাকা ছেড়ে? অলৌকিক ঘণ্টার মতন
কারো কণ্ঠস্বর, বৃষ্টিভেজা নৈশ পথ, কত গীতিকবিতার
সোনালি কম্পন ছেড়ে নিরিবিলি সিঁড়ির গোলাপ
বারান্দা, পুরোনো চিঠি, ব্যাংক নোট, স্বপ্নময় টেলিফোন ছেড়ে
কেন যাবে এমন একাকী?
মৃত্যু ছাড়া সব কিছু মুঠি থেকে ঝরে যায় বলে
এক্ষুণি বিদায় নিতে চাও?
শহীদ মিনার আর ধারালো অস্ত্রের মতো মুক্তিযুদ্ধের গৌরব আর
স্বাধীনতা ছেড়ে দূরে বহুদূরে চলে যেতে চাও?

পুরোনো গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে ডাকছ ক্রমাগত,
আকাশ বধির,
ডাকছ, ডাকছ তুমি গলা ছেড়ে, হাওয়া মুছে ফেলে ডাক,
তোমার প্রবল ডাক প্রতিধ্বনি হয়ে ফেরে কিছুকাল, নদী উদাসীন,
নিয়ত ডাকছ তুমি, তোমার সে ডাক
খেয়ে ফেলে গাছ।
এ-ও কি তোমার ভুলে? না থেমো না, বেলাবেলি এই ডেকে যাওয়া
অচেনার মধ্যে এই ডেকে-যাওয়া গান হয়ে ঘুরবে
হয়তো মাঝে মাঝে।