1 of 2

১.৩৪ সম্মোহন ক্রীড়া

চতুস্ত্রিংশ পাঠ
সম্মোহন
ক্রীড়া (Hypnotic Exhibition)

সম্মোহন ক্রীড়া প্রচুর হাস্য-কৌতুকপূর্ণ নির্দোষ আমোদ। এই ক্রীড়া দ্বারা প্রায় সকল শ্রেণীর দর্শককেই তুল্যরূপে বিস্মিত ও মুগ্ধ করিতে পারা যায়। এই খেলা দেখাইয়া ইয়ুরোপ ও আমেরিকায় বহু সম্মোহনবিৎ যথেষ্ট অথোপার্জন করিয়া থাকেন এবং ইদানীং আমাদের দেশেও কেহ কেহ ইহা প্রদর্শন করিতেছেন। আমার ছাত্রদিগের মধ্যে কয়েকজন। ইহাকে ব্যবসায় রূপে অবলম্বন করতঃ বেশ দুই পয়সা আয় করিতেছেন। শিক্ষার্থীদিগের কেহ এই ক্রীড়া-প্রদর্শক হইবার অভিলাষী হইলে সে নিম্নোক্ত উপদেশানুসারে কাৰ্য্য করিবে। সে সখের ক্রীড়া প্রদর্শকরূপে (as an amature performer) বন্ধু-বান্ধবদের সমক্ষে “অত্যাশ্চর্য সম্মোহন ক্রীড়া প্রদর্শন করিয়া যথেষ্ট সুখ্যাতি ও প্রতিপত্তি লাভ করিতে পারিবে; কিম্বা সে ইচ্ছা করিলে ব্যবসায়ী ক্রীড়া প্রদর্শক রূপেও (as a professional performer) স্বাধীন ভাবে এবং সম্মানের সহিত বেশ দুই পয়সা আয়ের সংস্থান করিতে পারিবে।

ক্রীড়া প্রদর্শক হইবার অভিলাষী, পাত্র সংগ্রহ করিয়া প্রথম প্রথম তাহাদিগকে নির্জনে সম্মোহন করা অভ্যাস করিবে এবং তাহার চেষ্টার ফলাফল একখানা নোট বহিতে লিখিয়া রাখিবে, অর্থাৎ সে কোন তারিখে, কত বয়সের, কতজন লোকের উপর চেষ্টা করি। তন্মধ্যে কয়জনকে মোহিত করিতে পারি, তাহা নিয়মিতরূপে ঐ নোট বহিতে লিথিয়া রাখিবে। কিছুদিন পরে উহা দ্বারা অনায়াসেই বুঝা যাইবে যে, সে কতগুলি লোকের উপর চেষ্টা করিয়া তাহাদের কতজনকে মোহিত করিতে পারিল। যখন সে বিভিন্ন প্রকৃতির ৩০/৪০ জন লোককে সম্মোহিত করিতে পারিয়াছে, তখন সে তাহার বন্ধু-বান্ধবদের সমক্ষে ক্রীড়া প্রদর্শনের প্রয়াস পাইতে পারে। কিন্তু রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ হইবার পূর্বে সে যত বেশী সংখ্যক লোককে মোহিত করিয়া তাহার শক্তি বৃদ্ধি ও অভিজ্ঞতা লাভ করিতে পারিবে, সে তত উত্তমরূপে ক্রীড়া প্রদর্শন করিতে সমর্থ হইবে। কেবল দুই-চার জন লোককে মোহিত করিতে পারিলেই ক্রীড়া প্রদর্শনের উপযুক্ত হওয়া যায়, এরূপ মনে করা অত্যন্ত ভুল। উপযুক্তরূপে শিক্ষিত না হইলে কখনও উহা সুন্দর রূপে প্রদর্শন করা যায় না; অধিকন্তু উহাতে অকৃতকার্য হইয়া দর্শকদিগের নিকট লজ্জিত হওয়াও বিচিত্র নহে। কাৰ্যকুশল ক্রীড়া প্রদর্শক মাত্রই অভিজ্ঞ, আত্ম ক্ষমতায় দৃঢ় আস্থাবান, সাহসী, বাকপটু ও প্রত্যুৎপন্নমতি। সুতরাং শিক্ষার্থী উচ্চ শ্রেণীর প্রদর্শক হইতে ইচ্ছুক হইলে তাহাকে অত্যাবশ্যকীয়রূপে এই সকল গুণের অধিকারী হইতে হইবে; অন্যথায় তাহার এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করাই শ্রেয়।

দিনের বেলা অথবা রাত্রিতে উপযুক্ত হলে বা বড় ঘরে ক্রীড়া প্রদর্শন করিবে। রাত্রিতে খেলা দেখাইতে খুব উজ্জ্বল আলোকের আবশ্যক। ক্রীড়া প্রদর্শনের জন্য হলের এক পার্শ্বে উপযুক্ত স্থান রাখিয়া অপর দিকে দর্শকদিগকে বসিতে দিবে। দর্শকগণ সমাগত হইলে তাহাদিগকে সম্বোধন করতঃ পূৰ্বে নিম্নোক্তরূপ বক্তৃতা করিবে। যথা—“সমবেত ভদ্র মহোদয়গণ, আমি আপনাদের সমক্ষে যে একটি ক্রীড়া প্রদর্শন করিতে প্রস্তুত হইয়াছি, তাহা আরম্ভ করিবার পূৰ্ব্বে, সে সম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলা আবশ্যক বিবেচনা করি। হিপ্নোটিজ্‌মকে বাঙ্গলায় সম্মোহন বিদ্যা বা পাশ্চাত্য বশীকরণ বিদ্যা বলিয়া অভিহিত করা যাইতে পারে। এই বিদ্যা বলে এক ব্যক্তি তাহার মনঃশক্তি দ্বারা অপর এক ব্যক্তিকে সম্মোহিত বা বশীভূত করতঃ তাহার মনে অত্যাশ্চর্যরূপে আধিপত্য স্থাপন করিতে পারে। স্বাধীন ইচ্ছা ও বিচার-শক্তি বিশিষ্ট মানুষকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বশীভূত করিয়া কিরূপ ক্রীড়া-পুত্তলীতে পরিণত করা যায়, আমি তাহারই কয়েকটি আশ্চৰ্য্য ও আমোদজনক দৃশ্য আপনাদের সম্মুখে প্রদর্শন করিব।”

“সম্মোহন বিদ্যা সম্বন্ধে কেহ কেহ অত্যন্ত ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করিয়া থাকেন। তাহারা বলেন যে, মোহিতাবস্থা সম্মোহনবিৎ ও পাত্রের ইচ্ছাশক্তির সংঘর্ষণ বা বিরোধে উৎপন্ন হয় এবং সম্মোহনবিং অপেক্ষা পাত্রের ইচ্ছাশক্তি অধিক থাকিলে সম্মোহনবিৎ তাহাকে মোহিত করিতে পারেন। আবার কেহ কেহ বলেন, যে, সম্মোহনবিৎ মানুষ মাত্রকেই সম্মোহিত করিয়া তাহাকে সম্পূর্ণরূপে নিজের আয়ত্তে আনয়ন করিতে পারে এবং তাহারা এমন কাৰ্যকারক দেখিয়াছেন, বা এমন কাৰ্যকারকের কথা শুনিয়াছেন, যিনি একবার মাত্র কাহার দিকে তাকাইয়া মুহূৰ্ত্ত মধ্যে তাহাকে বা শত শত লোককে মোহিত করিতে সমর্থ, ইত্যাদি। এরূপ ধারণা যেমন ভ্রান্তিপূর্ণ, তেমনই কৌতুকজনক। প্রকৃত পক্ষে মোহিতাবস্থা সম্মোহনবিৎ এবং পাত্রের ইচ্ছাশক্তির সংঘর্ষণে উৎপন্ন হয় না; উহা তাহাদের উভয়ের মনের সহযোগিতায় উৎপাদিত হইয়া থাকে। উক্তাবস্থা ইচ্ছাশক্তির বিরোধে উৎপন্ন হয়না বলিয়াই কাৰ্যকার অপেক্ষা পাত্রের ইচ্ছাশক্তি প্রখরতর হইলেও, তাহার শরীরে মোহিতাবস্থা উৎপাদনের কোন অন্তরায় হয়না। বরং পাত্রের ইচ্ছাশক্তি প্রখর থাকিলে, সে অপরাপর ব্যক্তি অপেক্ষা আদিষ্ট বিষয়ে অধিক মনোনিবেশ করিতে পারে বলিয়া সহজেই মোহিত হইয়া থাকে। অন্যান্য বিজ্ঞানের ন্যায় সম্মোহন বিজ্ঞানেরও কার্যকরী শক্তি একটি নির্দিষ্ট সীমায় আবদ্ধ। সুতরাং সম্মোহনবিদের শক্তিও সীমাবদ্ধ। তন্মধ্যে যে সকল কার্যকারকের পারদর্শিতা অল্প, তাহারা অল্প লোককে, আর যাহারা অভিজ্ঞ ও বহুদর্শী তাহারা অধিক লোককে মোহিত করিতে পারেন; কিন্তু কোন সম্মোহনবিদই সকল লোককে সম্মোহিত করিতে পারেননা।”

“প্রস্তাবিত ক্রীড়াটি প্রদর্শন করিবার নিমিত্ত, আমি আপনাদের মধ্য হইতে আপনাদের বিশ্বস্ত বা বিশেষ পরিচিত গুটি বার বালক ও যুবক ইব। আমি তাহাদিগকে মোহিত করিয়াই সমস্ত ক্রীড়া দেখাইব। ক্রীড়া প্রদর্শনের নিমিত্ত বিশেষ ভাবে এখানকার স্থানীয় লোক মনোনীত করার কারণ এই যে, আপনাদের নিজের লোকের সম্মোহিত হইলে তাহাদের মোহিতাবস্থা সম্বন্ধে আপনাদের যেমন দৃঢ় বিশ্বাস হইবে, আমার নিজের লোক বা অপর কোন অপরিচিত লোককে সম্মোহিত করিলে আপনাদের সকলের হয়ত তেমন বিশ্বাস হইবেনা। যদিও মোহিত ব্যক্তি দ্বারা এমন অনেক কাৰ্য্য করাইতে পারা যায়, যাহা সে স্বাভাবিক অবস্থায় ইচ্ছাপূর্বক কিছুতেই করিতে পারেন, তথাপি আমি সন্দেহ-সঙ্কুল পথ পরিত্যাগ করতঃ আপনাদের বিশ্বস্ত বা বিশেষ পরিচিত লোকদিগকেই মোহিত করিব। আমি যে বারটি লোক লইয়া পরীক্ষাগুলি আরম্ভ করিব, তাহাদের সকলকেই মোহিত করিতে পারিব, এমন কথা বলিতে পারিনা; কারণ সকল লোক মোহিত হয়না। যে সকল ব্যক্তি সম্মোহন শক্তির গতি রোধ করিয়া সম্মোহনবিৎকে ঠকাইতে ব্যর্থ, কিম্বা মোহিত হইতে অনিচ্ছুক, অথবা চঞ্চল চেতা—একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে কিছুক্ষণের জন্য মন স্থির রাখিতে পারেন। কিম্বা অনুসন্ধিৎসু বা ভীরু প্রকৃতির, তাহাদিগকে সহজে মোহিত করা যায়না। এজন্য আমি আপনাদের মধ্য হইতে এমন বারটি লোক চাই, যাহারা মোহিত হইতে ইচ্ছুক এবং কথিত নিয়ম প্রণালীগুলি যথাযথভাবে অনুসরণ পূৰ্ব্বক কিছুক্ষণের জন্য আবশ্যকীয় বিষয়ে মনঃসংযোগ করিতে সমর্থ। যদি তাহারা আমাকে ঠকাইবার মতলব না করেন, পক্ষান্তরে সততার সহিত আদিষ্ট বিষয়ে মনোনিবেশ পূর্বক আমাকে সাহায্য করেন, তবে আমি তাহাদের অধিকাংশ ব্যক্তিকে বা এমন কি তাহাদের সকলকেই সম্মোহিত করিতে সমর্থ হইব।”

আপনাদের অবগতির জন্য আমি পূৰ্বেই ইহা দৃঢ়তার সহিত বলিতেছি যে, যে সকল লোক মোহিত হইবেন তাহাদের শারীরিক বা মানসিক কোনরূপ অনিষ্ট হইবেনা। যদি মোহিত হওয়ার দরুণ তাহাদের বিন্দুমাত্রও অনিষ্ট হয়, তবে আমি উহার জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী হইব। যাহারা মোহিত হইতে ইচ্ছুক, তাহাদিগকে আমি সাদরে আহ্বান করিতেছি; তাহারা আমার নিকট আসিলেই আমি কাৰ্য্য আরম্ভ করিব।”

এইরূপ বক্তৃতা করার পর দর্শকবৃন্দের মধ্য হইতে বারটি বালক ও যুবক সম্মোহিত হইতে স্বীকৃত হইয়া তাহার নিকট আসিলে, সে তাহদিগকে দর্শকগণের দিকে মুখ করিয়া চেয়ারে বসাইবে; ঐ চেয়ারগুলি সে পূর্বেই অর্ধচন্দ্রাকারে ষ্টেজের উপর সাজাইয়া রাখিবে। তৎপরে দর্শকগণকে সম্বোধন করিয়া পুনর্বার বলিবে—“ভদ্রমহোদয়গণ, আমি ক্রীড়া আরম্ভ করিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হইয়াছি। এইক্ষণ, আপনাদের নিকট আমার একটি নিবেদন এই যে, আপনার কিছু সময় পর্যন্ত খুব নীরবভাবে অবস্থান করিবেন। এই ক্রীড়াটি সম্পূর্ণ মানসিক ব্যাপার বলিয়া আবশ্যকীয় বিষয়ের প্রতি আমার নিজের এবং পাত্রদিগের মনঃসংযোগ করিতে হইবে। যদি আপনাদিগের মধ্যে কেহ কথা-বার্তা বলিয়া বা অন্য কোন প্রকারে গোলমাল করেন, তবে আমরা উক্ত বিষয়ে মন একাগ্র করিতে পারিনা, তাহার ফলে আমার প্রয়াস ব্যর্থ হইতে পারে। এজন্য আমি আপনাদিগকে বিনীত ভাবে এই অনুরোধ করিতেছি যে, যে পর্যন্ত আমি পাত্রদিগকে কিয়ৎপরিমাণে আমার বশে আনিতে না পারিয়াছি, সে পৰ্যন্ত আপনারা অনুগ্রহপূর্বক সম্পূর্ণ নীরব থাকিবেন। আমি পাত্রদিগকে বশে আনিতে পারিলেই তখন আপনার ইচ্ছানুরূপ হাস্য-কোলাহল করিয়া আমোদ উপভোগ করিতে পারিবেন।” এরূপ বলা হইলে পর পাত্রদিগকে বলিবে—“এইক্ষণ আপনারা অত্যন্ত শান্ত ও গম্ভীর ভাব অবলম্বন করিবেন এবং আমি আপনাদিগকে যে বিষয় চিন্তা করিতে বলিব, আপনারা সততার সহিত একাগ্ৰমনে কেবল তাহাই চিন্তা করিবেন, কদাপি তদ্বিপরীত বা অন্য কোন বিষয়ের চিন্তা মনে স্থান দিবেননা। যে সকল ব্যক্তি মোহিত হইবেনা বলিয়া দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, কিম্বা আমাকে ঠকাইবার জন্য আগ্রহান্বিত, আমি তাহাদিগকে মোহিত করিতে কিছুমাত্র প্রয়াস পাইবনা। যাহারা মোহিত হইতে যথার্থ ইচ্ছুক এবং কথিত নিয়মপ্রণালীগুলি যথাযথভাবে অনুসরণ করতঃ আবশ্যকীয় বিষয়ে মনঃ সংযোগ পূৰ্ব্বক আমাকে সাহায্য করিবেন, আমি কেবল তাহাদিগকেই মোহিত করিবার চেষ্টা পাইব।”

এরূপ বলা হইলে পর, পশ্চাৎ দিকে ফেলিয়া দেওয়া পরীক্ষাটি হইতে ক্রীড়া আরম্ভ করিবে। পশ্চাৎ দিকে ও সম্মুখের দিকে ফেলিয়া দেওয়া এই পরীক্ষা দুইটি ঐ বারজন লোকের উপর পর্যায়ক্রমে সম্পাদন করিবে। যাহারা উহাদের দ্বারা অভিভূত হইবে, পরবর্তী পরীক্ষার জন্য কেবল তাহাদিগকে রাখিয়া, অপর লোকদিগকে চলিয়া যাইতে বলিবে। অবশ্যক বোধ করিলে ঐ পরীক্ষা দুইটি ব্যক্তি বিশেষের উপর দুই-তিন বারও করা যাইতে পারে। তৎপরে তাহাদের সকলকে সারিবদ্ধভাবে একত্র দাঁড় করাইয়া কেবল দৃষ্টিক্ষেপন ও আদেশের সাহায্যে “হাত জুড়িয়া দেওয়া”, “বাক্য রোধ” ইত্যাদি পরীক্ষাগুলি পৰ্য্যায় ক্রমে সম্পন্ন করিবে ক্রীড়া প্রদর্শনের সময় পাসের সাহায্য ব্যতীরেকে কেবল দৃষ্টিক্ষেপন ও আদেশ করিয়াই পাত্রদিগকে যাবতীয় শারীরিক পরীক্ষায় অভিভূত করা হয়। শারীরিক পরীক্ষাগুলি প্রদর্শিত হইলে পর পাত্রদিগকে এক সঙ্গেই বিভিন্ন চেয়ারে বসাইয়া, দৃষ্টি, পাস ও আদেশের সাহায্যে নিদ্রিত করণান্তর তাহাদের মনে “মায়া” ও “ভ্রম” ইত্যাদি জন্মাইবে। তৎপরে তাহাদের মধ্যে একটি উপযুক্ত পাত্র বাছিয়া লইয়া তাহার শরীরে সম্পূর্ণ ক্যাটালেী উৎপাদন করিবে। দুই ঘণ্টা খেলা দেখান যাইতে পারে, প্রদর্শনীয় বিষয়ের এরূপ একটি তালিকা নিয়ে প্রদত্ত হইল।

প্রদর্শনীয় বিষয়ের তালিকা

১ম দৃশ্য—হাত জুড়িয়া দেওয়া

২য় দৃশ্য—চক্ষু জুড়িয়া দেওয়া

৩য় দৃশ্য—বাক্য বোধ করণ

৪র্থ দৃশ্য—হাতে লাঠি জুড়িয়া দেওয়া

৫ম দৃশ্য—বসিতে অসমর্থ করণ

৬ষ্ঠ দৃশ্য—দাঁড়াইতে অসমর্থ করণ

৭ম দৃশ্য—মুখ বন্ধ করিতে অসমর্থ করণ

৮ম দৃশ্য—লাফ দিতে অসমর্থ করণ

৯ম দৃশ্য—চলিতে অসমর্থ করণ

১০ম দৃশ্য—মুখ খুলিতে অসমর্থ করণ

১১শ দৃশ্য—ঘুষি মারিতে অসমর্থ করণ

১২শ দৃশ্য—দুই ব্যক্তির হাত একত্রে জুড়িয়া দেওয়া

১৩শ দৃশ্য—পাদিগকে নিদ্রিত করণান্তর তাহার যথার্থরূপে নিদ্রিত হইয়াছে কিনা, তাহা পরীক্ষা করিবার জন্য তাহাদের উভয় হাতগুলিতে আংশিক ক্যাটালেপসী উৎপাদন করিয়া ৩৪ মিনিট কাল শূন্যে রাখিবে।

১৪শ দৃশ্য -পাত্রদিগকে পুনর্বার নিদ্রিত করিয়া বলিবে যে, তাহা দিগকে কয়েকখানা খুব মিষ্ট বিস্কুট দেওয়া যাইবে; ঐ বিস্কুটগুলি তাহাদের হাতে দেওয়া মাত্র তাহার অত্যন্ত আনন্দের সহিত উহাদিগকে খাইয়া ফেলিবে। তৎপরে তাহাদের প্রত্যেকের হাতে কয়েক টুকরা কাগজ দিয়া উহাদিগকে বিস্কুট বলিয়া নির্দেশ করিবে।

১৫শ দৃশ্য—পাত্রদিগকে পুনরায় নিদ্রিত করিয়া বলিবে যে, এইক্ষণ তাহারা একটি খুব সুগন্ধ গোলাপ ফুল শুকিতে পাইবে। তৎপরে গোলাকারে জড়ান এক টুকরা কাগজকে গোলাপ ফুল বলিয়া নির্দেশ করতঃ উহা পৰ্য্যায়ক্রমে তাহাদের নাকের সম্মুখে ধরিবে।

১৬শ দৃশ্য—পাত্রদিগকে পুনৰ্ব্বার নিদ্রিত করিয়া তাহাদের মুখের উপর কয়েক টুকরা কাগজ নিক্ষেপ করিতে করিতে বলিবে যে, এইক্ষণ তাহাদের মুখে খুব মশা কামড়াইতেছে, এবং তাহারা খুব জোরে থাপ্পর মারিয়া উহাদিগকে মারিয়া ফেলিবে।

১৭শ দৃশ্য—তাহাদিগকে নিদ্রিত করণান্তর বলিবে যে, এইবার তাহারা চোখ মেলিয়া একখানা পুস্তকের মলাটের উপর তাহাদের ফটো দেখিতে পাইবে। তাহারা চোখ খুলিলে পর একখানা পুস্তক লইয়া তাহাদের চোখের সামনে ধরিয়া কল্পিত ফটোগুলি দেখাইবে।

১৮শ দৃশ্য—তাহাদিগকে নিদ্রিত করিয়া বলিবে যে, তাহারা চোখ, খুলিয়া মনে করিবে, তাহারা সকলেই খুব দুষ্ট ছেলে এবং আরও কতকগুলি দুষ্ট ছেলে মেয়ে তাহাদিগকে মুখ ভ্যাংচাইতেছে। সুতরাং তাহারাও খুব বিশ্রি ভাবে মুখ ভ্যাংচাইয়া দিবে। তাহারা চোখ খুলিলে পর, দর্শক দিগকে বালক বালিকা বলিয়া নির্দেশ করতঃ তাহাদিগকে মুখ ভ্যাংচাইতে বলিবে।

১৯শ দৃশ্য—তাহাদিগকে নিদ্রিত করণান্তর বলিবে যে, এইবার তাহারা চোখু মেলিয়া অনুভব করিবে, তাহাদের খুব পেটের বেদনা হইয়াছে এবং তাহারা কল্পিত যন্ত্রণায় অত্যন্ত কাতর হইয়া বালকের ন্যায় কাঁদিতে সুরু করিবে।

২০শ দৃশ্য—তাহাদিগকে নিদ্রিত করণান্তর বলিবে যে, এইবার তাহারা চোখ খুলিয়া মনে করিবে, তাহারা ফুটবল খেলার জন্য মাঠে আসিয়াছে? তাহারা চোস্থ মেলিলে পর তাহাদিগকে দুই দলে ভাগ করিয়া দাঁড় করাইবে। উভয় দলের মাঝখানে ফুটবলটি রহিয়াছে বলিয়া, ক্রীড়া প্রদর্শক কল্পিত ফুটবলে একবার মাত্র কিক্ করিয়া সড়িয়া দাঁড়াইলেই তাহার খেলা আরম্ভ করিবে।

২১শ দৃশ্য——তাহাদিগকে নিদ্রিত করণান্তর তাহাদের একজনকে বলিবে যে, সে একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সে চোখ মেলিবার পর তাহার ছাত্রদিগকে দেখিতে পাইয়া পড়াইতে আরম্ভ করিবে। দর্শকদিগকেই ছাত্র বলিয়া নির্দেশ করিবে।

২২শ দৃশ্য—পাত্রদিগকে নিদ্রিত করণান্তর বলিবে যে, এইবার তাহারা চোখ মেলিয়া দেখিতে পাইবে, তাহাদের সম্মুখ দিয়া একটা বিড়াল একখানা লম্বা আরোহীপূর্ণ ট্রেন টানিয়া লইয়া যাইতেছে। তাহা দেখিয়া তাহাদের এমন হাসি পাইবে যে, তাহারা ঘরের মেঝেতে গড়াগড়ি করিয়া পাগলের ন্যায় হাসিতে থাকিবে।

২৩শ দৃশ্য—তাহাদিগকে নিদ্রিত করিয়া বলিবে যে, তাহারা চোখ, মেলিবার পর মনে করিবে, তাহারা একটা বড় পুকুরের সান বাধান ঘাটের উপর বসিয়া ছিপে মাছ ধরিতেছে। তাহারা চোখ, মেলিলে পর, তাহাদের প্রত্যেকের হাতে একখানা লাঠি দিয়া ঐ গুলিকে ছিপ বলিয়া এবং সম্মুখস্থ স্থানকে পুকুর বলিয়া নির্দেশ করিবে।

২৪শ দৃশ্য—তাহাদিগকে পুনরায় নিদ্রিত করিয়া বলিবে যে, এইবার তাহারা চোখ মেলিয়া মনে করিবে, তাহারা সকলে শিয়াল এবং সকলে মিলিয়া একতানে শিয়ালের মত ‘হুয়া হুয়া’ শব্দে চীৎকার করিবে।

২৫শ দৃশ্য—পাত্রদিগকে নিদ্রিত করণান্তর তাহাদের একজনকে বলিবে যে, সে চোখ মেলিবার পর মনে করিবে, সে একজন প্রসিদ্ধ বক্তা—অনেক স্থানে বক্তৃতা দিয়াছে এবং তাহার বক্তৃতা শুনিবার জন্য অনেক লোক আসিয়াছে। সে চোখ মেলিলে পর দর্শকদিগকে তাহার শ্রোতা বলিয়া নির্দেশ করতঃ তাহাকে বক্তৃতা করিতে বলিবে।

২৬শ দৃশ্য—তাহাদিগকে পুনরায় নিদ্রিত করিয়া তাহাদের হাতের কোন এক স্থানে বোধরহিতাবস্থা (anaesthesia) উৎপাদন করিবে। বাজারে যে বড় হাটপিন পাওয়া যায়, সেই গুলির অগ্রভাগ পোড়াইয়া লইবার পর ব্যবহার করিবে।

২৭শ দৃশ্য—তাহাদের মধ্যে যাহাকে সর্বাপেক্ষা সুস্থকায় ও সবল মনে করিবে তাহার শরীরে সম্পূর্ণ ক্যাটালেন্সী (complete catalepsy) উৎপাদন করিবে।

তৎপরে পাত্রদিগকে প্রকৃতিস্থ করতঃ ক্রীড়া শেষ করিবে।

উপরোক্ত পরীক্ষা গুলিই দুই ঘন্টা কাল ব্যাপী ক্রীড়ার পক্ষে যথেষ্ট। এস্থলে দৃশ্য গুলিকে কেবল সংক্ষেপে বর্ণনা করা হইল, ক্রীড়া-প্রদর্শক উহা হইতে ভাব গ্রহণ করিয়া প্রত্যেকটি মায়াও ভ্রমের জন্য বিস্তৃত ভাবে ও বুদ্ধি মত্তার সহিত আদেশ দিবে এবং সে স্বয়ং চাতুর্য ও ক্ষিপ্ৰকারিতার সহিত কাৰ্য্য করিবে। চতুরতার সহিত আদেশ দিতে পারিলে, পাত্রগণ তাহার আদিষ্ট কাৰ্যগুলি সম্পাদন করিবার সময় এরূপ ভাব-ভঙ্গী ও রঙ্গ প্রকাশ করিবে যে, তদ্দর্শনে রঙ্গালয় হাস্য-কোলাহলে মুখরিত হইয়া উঠিবে। ক্রীড়া প্রদর্শক এই দৃশ্য গুলি দ্বারা দর্শকদিগকে যুগপৎ বিস্মিত, স্তম্ভিত ও মুগ্ধ করিতে পারিবে। যাহারা ব্যবসায়ীরূপে ক্রীড়া প্রদর্শন করিবার অভিলাষী, তাহারা এই ক্রীড়ার সহিত “চিন্তা-পঠন ক্রীড়া (Thought-Reading Performance) catst afaut aecat centras হিসাবে বেশ লাভবান হইতে পারিবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *