কেউ না ডাকলেও

কেউ না ডাকলেও কেন এমন নিঃসাড় থাকি ইদানীং কেন
ডাকের কম্পনে
তক্ষুণি কী করে টোল নিয়ে আপন সত্তায়
দোল খেতে হয় প্রতিবার ভুলে গেছি? নাকি তার কোনো মানে
অধুনা পাই না খুঁজো! কেউ ডাকলেও কেন আমার হৃদয় ঢিল-খাওয়া
ঝিলের মতন হয়ে ওঠে না তক্ষুণি?

রাত্রি কত গাঢ় হলে দুঃখী তার কণ্ঠে আনে গান, জানি আমি;
একাকীত্বে তার কত সূর্যোদয়, কত সূর্যাস্ত জমেছে-
সেও তো অজানা নয়। বেদনার তীর্থে যে-জন আঁজলা ভরে
করে জল পান,
আস্তে-সুস্থে ধোয়া
পায়ের শতেক ক্ষত, আমার ভেতরে তার জন্মপরিচয়
জ্বলে সারাক্ষণ আর ঋতুতে ঋতুতে কত আর্তি অস্ত যায়।

তোমাদের মনে রাখা দরকার, এই তো এই আমিও একদা
ডাক আর আহ্বানের সূক্ষ্ম সব বিবাদ মিটিয়ে
চায়ের আসরে খুব উড়িয়েছি কথার রঙিন ঘুড়ি, তুড়ি
মেরে নৈরাশ্যের মুখে ঘোড়ার আড়াই ঘর লাফ কিংবা গজের দুলুনি
কখনও দেখেছি আড়চোখে। চমৎকার চমৎকার বলে চায়ে
দিয়েছি চুমুক বারবার।

কখনও ডাকলে কেউ আমার সত্তায় আগে নামতো আকাশ,
হতো সূর্যোদয়।
আমার দুয়ারপ্রান্ত থেকে বিফল যায়নি ফিরে কেউ, কেউ
‘বন্ধ’ শব্দ কখনও করেনি পাঠ আমার কপাটে, মনে রেখো।
চতুরতা বিনা
সবাইকে প্রায়শই ফুল দিয়ে বলেছি, দেখুন
আমার আঙুলে এই অশেষ আনন্দ ফুটে আছে নিশিদিন।

টেবিলে অনেক চিঠি জমে, অগণিত টেলিগ্রাম
অবসন্ন ছেঁড়াখোঁড়া পাখির ডানার মতো ঝোলে
পুরনো দেয়ালময়, কড়া
নেড়ে নেড়ে ক্লান্ত চলে যায় কত আগন্তুক, কেউবা সুদূর
পথপ্রান্তে প্রতীক্ষায় একাকি দাঁড়িয়ে
গোধূলি আবৃত্তি করে খুব,
তবুও দিই না সাড়া, বসে থাকি ছায়াচ্ছন্ন বিদায়ের ঘরে।

অকস্মাৎ কী-যে হয়, কখনও কেউ না ডাকলেও ছুটে যাই
শূন্যতায়, গলা ছেড়ে ডাকি
অন্তপুরে, প্রান্তরের মধ্যযামিনীতে, ডেকে যাই ক্রমাগত,
অনেক পেছনে থাকি পড়ে নির্বাসনের গৈরিক আলখাল্লা, নিরিবিলি।