২১৬. কুন্তীর রূপা বর্গা প্রভৃতি অপ্সরার শাপকাহিনী

২১৬. কুন্তীর রূপা বর্গা প্রভৃতি অপ্সরার শাপকাহিনী

ষোড়শাধিকদ্বিশততম অধ্যায়।

বৈশম্পায়ন কহিলেন, “মহারাজ! অনন্তর অর্জুন দক্ষিণসাগরে তপম্বি জনসুশোভিত অতি পবিত্র তীর্থস্থানে গমন করিলেন, কিন্তু পূর্বে যে সকল তীর্থস্থানে অনেকানেক তপস্বিজনের সমাগম হইত, মহর্ষিগণ সেই পঞ্চতীর্থ পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। অগস্ত্যতীর্থ, সৌভদ্র, পৌলোম, অশ্বমেধ ফলোৎপাদক কারন্ধম তীর্থ ও অশেষ পাপাপহারক ভারদ্বাজ তীর্থ, অর্জুন এই পঞ্চ তীর্থ দর্শন করিলেন। তিনি সেই সমস্ত তীর্থ জনশূন্য এবং ধর্মবুদ্ধিপরায়ণ মহর্ষিগণ কর্তৃক ত্যজ্যমান দেখিয়া কৃতাঞ্জলিপুটে জিজ্ঞাসা করিলেন, হে মহর্ষিগণ! ব্রহ্মবাদীরা কি নিমিত্ত এই সকল তীর্থ পরিত্যাগ করেন? তাপসেরা প্রত্যুত্তর করিলেন, হে কুরুনন্দন! এই তীর্থে পাঁচটি কুম্ভীর বাস করিতেছে, তাহারা অবগাহন মাত্রেই তাপসদিগকে সংহার করিয়া থাকে; এই কারণে আমরা ঐ পঞ্চতীর্থ পরিহার করিয়াছি।

মহর্ষিগণের বাক্য শ্রবণানন্তর মহাবীর অর্জুন তাহাদের কর্তৃক নিবারিত হইয়াও সেই সমস্ত তীর্থস্থান দর্শনার্থে যাত্রা করিলেন এবং সৌভদ্রতীর্থে উপস্থিত হইয়া সহসা অবগাহনপুর্বক স্নান করিতে লাগিলেন। এই অবসরে এক কুম্ভীর আসিয়া তাহার পাদগ্ৰহণ করিল; ধনঞ্জয় সেই ভয়ঙ্কর কুম্ভীরকে বলপূর্বক গ্রহণ করিয়া উত্থিত হইলেন। কুম্ভীর অর্জনকর্তৃক উদ্ধৃত হইবামাত্ৰ সৰ্বালঙ্কার-শোভিত সৰ্বাঙ্গসুন্দরী এক নারীরূপ পরিগ্রহ করিল। এই অদ্ভুত ব্যাপার প্রত্যক্ষ করিয়া অর্জুন প্রীতমনে সেই নারীকে কহিলেন, হে কল্যাণি! তুমি কে? কি নিমিত্ত জলচরী হইয়াছ? আর পূর্বে এমনই বা কি পাপ করিয়াছিলে? দিব্যাঙ্গনা কহিল, হে মহাভাগ! আমি দেবারণ্যবিহারিণী এক অরা, আমার নাম বর্গা, ধনপতি কুবের আমাকে যথেষ্ট সমাদর করিয়া থাকেন। একদা আমি চারি সহচরীর সহিত দেবরাজ ইন্দ্রের ভবনে গমন করিয়াছিলাম। প্রত্যাবর্তনকালে অধ্যয়নপর পরম রূপবান একান্তচারী এক ব্রাহ্মণকে নয়নগোচর করিলাম। তিনি স্বকীয় তেজঃ ও তপঃপ্রভাবে প্রদীপ্ত দিবাকরের ন্যায় সকল বনবিভাগ আলোকময় করিতেছে। আমরা আকাশমার্গ হইতে তপঃপ্রভাব, আকার ও সৌন্দৰ্য্য সন্দর্শন করিয়া তাঁহার তাদৃশ তপস্যার বিপ্ন সম্পাদন করিবার নিমিত্ত তথায় অবতীর্ণ হইলাম। তৎপরে সৌরভেয়ী, সমীচী, বুদ্বুদা ও লতা এই চারি সহচরী সমভিব্যাহারে তপস্বিসন্নিধানে গমন করিলাম। গমন করিয়া মধুর সঙ্গীত ও হাস্যালাপে তাঁহাকে বিবিধ প্রকারে প্রলোভন দেখাইতে লাগিলাম, কিন্তু তিনি কিছুতেই ক্ৰক্ষেপ করিলেন না। তৎকালে তিনি ধ্যানে মনোনিবেশ করিয়াছিলেন, আমরা কোন মতেই তাহাকে বিচলিত করিতে পারি নাই। অনন্তর ব্রাহ্মণ আমাদিগের এইরূপ ভাবভঙ্গী দর্শনে তৎক্ষণাৎ ক্রোধপরবশ হইয়া, অভিসম্পাত করিলেন, রে অপ্সরাগণ! আমার শাপপ্রভাবে তোরা শত বৎসর কুম্ভীরযোনি প্রাপ্ত হইয়া থাক্।