১৯৪. দ্রুপদভবনে পাণ্ডবগণের আহ্বান

১৯৪. দ্রুপদভবনে পাণ্ডবগণের আহ্বান

চতুর্নবত্যধিকশততম অধ্যায়।

রাজদূত কহিল, দ্রুপদ বরযাত্রীয়গণের নিমিত্ত অত্যুৎকৃষ্ট খাদ্যদ্রব্যের আয়োজন করিয়াছেন, আপনারা তথায় গমন করিয়া দ্রৌপদীর পাণিগ্রহণপূর্বক সেই সমস্ত দ্রব্যসামগ্রী গ্রহণ করুন। এখানে বিলম্ব করিবার আর প্রয়োজন নাই। এই সকল কাঞ্চনপদ্মখচিত, সদশ্বযুক্ত, রাজোচিত রথে আরোহণ করিয়া দ্রুপদভবনে আগমন করুন। পাণ্ডবগণ দূতমুখে এই কথা শ্রবণ করিয়া পুয়োহিতকে অগ্রে প্রেরণ করিলেন এবং কুন্তী ও দ্রৌপদীকে এক যানে অবোহণ করাইয়া আপনারা অপর অপূর্ব যানে আরোহণপূর্বক যাত্রা করিলেন। ধর্মরাজ পুরোহিতের বচন শ্রবণ করিয়া যাহা কহিয়াছিলেন, তদ্বারা তাহাদিগকে কৌরব বলিয়া জানিতে পারিয়া দ্রুপদরাজ নানাপ্রকার দ্রব্যসামগ্রীর আয়োজন করিয়া রাখিলেন। তাহার উপস্থিত হইলে সেই সকল পবিত্র ফল, মাল্য, বর্ম, চর্ম, গে, রঞ্জু, কৃষিনিমিত্তক নানাপ্রকার বীজ, অন্যান্য শিল্পনিমিত্তক দ্রব্যসামগ্রী ও ক্রীড়ানিমিত্তক বিবিধ বস্তুজাত এবং অশ্ব, রথ, সুতীক্ষ্ণ শর, শরাসন, খড়গ, শক্তি, প্রাস, ভুষুণ্ডী ও পরশু প্রভৃতি সংগ্ৰামিক দ্রব্য ও রত্নময় শয্যা ও বিবিধ বসনভূষণ তাঁহাদিগকে উপহার প্রদান করিলেন।

কুন্তী দ্রৌপদীকে লইয়া দ্রুপদের অন্তঃপুরে প্রবেশ করিলেন। তত্রস্থ স্ত্রীগণ কৌরবরাজপত্নীর পরিচর্যা করিতে লাগিলেন। মহাপুরুষ-লক্ষণাক্রান্ত, অজিনোড়রীয়, পুরুষপ্রবীর পাণ্ডবদিগকে নয়নগোচর করিয়া রাজা, রাজকুমার, সচিব, ভৃত্য ও রাজার সুহৃদ্বর্গ, সকলেই অনিন্দপ্রবাহে নিমগ্ন হইলেন। পাণ্ডবেরা গৃহ প্রবিষ্ট হইয়া অশঙ্কিত ও অসঙ্কুচিতচিত্তে পাদপীঠসহিত মহার্ঘ আসনে উপবেশন করিলেন। অনন্তর দাস, দাসী ও সূপকারের। উজ্জ্বল বেশভুষা পরিধানপূর্বক সুবর্ণপাত্রে পার্থিবভোজ্য বহুবিধ সুস্বাদ অন্ন ব্যঞ্জন পরিবেশন করিল। তাঁহারা স্বেচ্ছানুরূপ ভোজন করিয়া সাতিশয় তৃপ্ত ও প্রীত হইলেন। অনন্তর উপদীকৃত অন্যান্য সমস্ত ধনসম্পত্তি পরিত্যাগপূর্বক কেবল সাংগ্রামিক দ্রব্য লইবার বাসনা করিলেন। তদ্দর্শনে রাজা, রাজপুত্র এবং মন্ত্রিগণ হৃষ্টমনে কুন্তীতনয়দিগকে সাধুবাদ প্রদান করিতে লাগিলেন।