১৯২. প্রচ্ছন্ন ধৃষ্টদ্যুম্নের পাণ্ডবস্বরূপনির্ণয়

১৯২. প্রচ্ছন্ন ধৃষ্টদ্যুম্নের পাণ্ডবস্বরূপনির্ণয়

দ্বিনবত্যধিকশততম অধ্যায়।

বৈশম্পায়ন কহিলেন, পাঞ্চালাত্মজ ধৃষ্টদ্যুম্ন ভীমার্জুনের পশ্চাৎ পশ্চাৎ ভার্গবনিকেতনে প্রবেশ করিলেন এবং সকলের অজ্ঞাতসারে অতি নিভৃত প্রদেশে বিলীন হইয়া রহিলেন। তৎসহচর পুরুষেরা ইতস্ততঃ গুপ্তভাবে রহিল। সায়ংকাল উপস্থিত হইলে উদারপ্রকৃতি ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব ভিক্ষা করিয়া প্রত্যাগমনপূর্বক যুধিষ্ঠিরকে নিবেদন করিলেন।

অনন্তর বদান্যা কুন্তী দ্রৌপদীকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন; ভদ্রে! তুমি ইহার অগ্রভাগ লইয়া দেবতাদিগকে বলি ও ব্রাহ্মণদিগকে ভিক্ষা এবং উপস্থিত অন্নকাদিগকে প্রদান কর। অনন্তর অবশিষ্টাংশ দ্বিধা বিভক্ত করিয়া একাৰ্দ্ধ ছয় অংশ কর এবং একাৰ্দ্ধ নাগেন্দ্রবিক্রম মহাবীর ভীমকে প্রদান কর। ভীম চিরকাল অধিক ভোজন করিয়া থাকে। রাজপুত্রী দ্রৌপদী সাধুবাদ, প্রদানপূর্বক কুন্তীর আদেশ প্রতিপালন করিলে, সকলে পরমসুখে ভোজন করিলেন। ভোজনান্তে নকুল ও সহদেব ভূমিতলে কুশশয্যা প্রস্তুত করিলে পর স্ব স্ব অজিন বিস্তীর্ণ করিয়া দক্ষিণশিরাঃ হইয়া সকলে শয়ন করিলেন। কুন্তী উঁহাদিগের শিরোভাগে শয়ান হইলেন এবং দ্ৰৌপদী তাঁহাদিগের পদতলে শয়ন করিলেন। দ্রৌপদী পাণ্ডবগণ সমভিব্যাহারে ভূমিশয্যায় শয়ান ও হাদিগের চরণোপাধানভূত হইয়াও কিঞ্চিত্ৰ দুঃখিত হইলেন না এবং তাহাদিগের প্রতি কোনরূপ অসম্মান প্রদর্শনও করিলেন না। এইরূপে কুশশয্যায় শয়ন করিয়া সেই বীরপুরুষেরা যুদ্ধ ও সেনাসম্পকীয় নানা কথাপ্রসঙ্গে ত্রিযামা অতিবাহন করিতে লাগিলেন। তাহারা বিবিধ প্রকার অস্ত্র, খড়গ, গদা, পরশ্বধ, গজ ও রথ প্রভৃতি বিষয় বর্ণন করিতে লাগিলেন। পঞ্চালরাজনন্দন হাদিগের সমুদায় কথোপকথন শ্রবণ করিলেন এবং তাঁহার সঙ্গীলোকেরা কৃষ্ণাকে তদবস্থ দর্শন করিলেন। রাজকুমার ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁহাদিগের কথিত বিভাবরীবৃত্তান্ত সমস্ত দ্রুপদরাজকে নিবেদন করিবার নিমিত্ত সত্বর গমন করিলেন। দ্রুপদরাজ পাণ্ডবদিগকে সবিশেষ চিনিতে না পারিয়া সাতিশয় বিষ হইয়া রহিয়াছেন, এমন সময়ে ধৃষ্টদ্যুম্নকে সমাগত দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, পুত্র! দ্রৌপদী কাহার সহিত কোথায় গমন করিলেন। তিনি কি কোন হীনকুলোদ্ভব শূদ্র, না কোন করদ বৈশ্যের হস্তগত হইলেন? আমার মস্তকে ত পঙ্কদিগ্ধচরণ অর্পিত হয় নাই? সুললিত কুসুমমালা কি শ্মশানে পতিত হইল? কোন সবর্ণ কি কোন উত্তমবর্ণ পুরুষ দ্রৌপদীকে হরণ করিলেন? আমার মস্তকে কে বাম চরণ অৰ্পণ করিল? অথবা সৌভাগ্যক্রমে দ্রৌপদী, নরোত্তম পার্ধের সহিত সঙ্গত হইয়া আমাদিগের প্রতিবৰ্ধন করিলেন? হে মহানুভব! তুমি যথার্থ করিয়া বল, কে আমার কন্যাকে গ্রহণ করিয়াছে? যথার্থই কি পার্থ শরাসন গ্রহণপূর্বক লক্ষ্য ভেদ করিয়াছেন?

স্বয়ংবর পর্বাধ্যায় সমাপ্ত।