১৫৬. পাণ্ডবগণের ব্যাসসাক্ষাৎকার, একচক্রানগরীতে পাণ্ডবগণের বাস

১৫৬. পাণ্ডবগণের ব্যাসসাক্ষাৎকার, একচক্রানগরীতে পাণ্ডবগণের বাস

ষটপঞ্চাশদধিকশততম অধ্যায়।

বৈশম্পায়ন, কহিলেন, হে রাজন্! অনন্তর মাতৃসমবেত পাণ্ডবগণ বল্কলাজিন পরিধান ও জটাবন্ধন প্রভৃতি তাপসবেশ ধারণপূর্বক বনে বনে ভ্রমণ করিয়া মৎস্য, ত্রিগর্ত, পাঞ্চাল, কীচক প্রভৃতি নানা দেশমধ্যবর্তী পরম রমণীয় কাননপরম্পরা ও মনোহারিণী সরসিজশালিনী সরসী সমূহ নিরীক্ষণ করিয়া বলপূর্বক বহুবিধ মৃগবধ করিতে করিতে সত্বরগমনে চলিলেন। তাঁহার শীঘ্র গমন করিবার নিমিত্ত স্থানবিশেষে জননীকে নিজ পৃষ্ঠদেশে বহন করিতে লাগিলেন। গমনকালে তাহারা উপনিষৎ, সমস্ত বেদাঙ্গ এবং নীতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করিতেন। এইরূপে তাহারা গমন করিতে করিতে একদা পিতামহ ব্যাসদেবকে দেখিতে পাইলেন। তখন তাঁহারা মাতৃসমভিব্যাহারে, ভগবান্ কৃষ্ণদ্বৈপায়নকে অভিবাদনপূর্বক কৃতাঞ্জলিপুটে তাঁহার সম্মুখে দণ্ডায়মান হইলেন। ব্যাসদেব পৌত্রদিগের তাদৃশী দুরবস্থা দেখিয়া সান্ত্বনাবাক্যে কহিলেন, হে ভরতবংশাবতংসগণ! ধৃতরাষ্ট্রতনয়ের অধর্মানুষ্ঠানদ্বারা তোমাদিগকে যে ঈদৃশ দুরবস্থাগ্রস্ত করিয়াছে, তাহা আমি ইতিপূৰ্বে বুঝিতে পারিয়াছি এবং তন্নিমিত তোমাদের হিতসাধনমানসে এস্থানে উপস্থিত হইলাম; হে বৎসগণ! বিষ হইও না; তোমরা পরিণামে পরম সুখী হইবে। যদিও ধার্তরাষ্ট্রগণ ও তোমরা আমার পক্ষে উভয়ই সমান, কিন্তু আমি এখন তোমাদিগকে ধৃতরাষ্ট্রসন্তানগণ অপেক্ষা অধিক স্নেহ করি; কারণ, দীনগণ ও শিশুজন যথার্থ স্নেহের পাত্র। আমি স্নেহবলে তোমাদের হিতসাধনে উদ্যত হইয়াছি। এক্ষণে তোমরা এই অনতিদূরবর্তী নগরে বাস করিয়া আমার পুনরাগমন প্রতীক্ষা কর।

সত্যবতীনন্দন পাণ্ডবগণকে এইরূপ আশ্বাস প্রদানপূর্বক তাহাদিগকে সমভিব্যাহারে লইয়া একচক্রা নগরীতে গমন করিলেন এবং তথায় উপস্থিত হইয়া কুন্তীকে আশ্বাস দিয়া কহিতে লাগিলেন, হে জীবৎপুলি! এই তোমার জ্যেষ্ঠপুত্র পুরুষশ্রেষ্ঠ যুধিষ্ঠির অসাধারণ ধর্মপরায়ণ; ইনি স্বীয় ধর্মবলে ও ভীমার্জুনের ভুজবলৈ সসাগরা ধরা জয় করিয়া যাবতীয় নৃপতিগণকে শাসন করিবেন। ইহাঁরা পঞ্চভ্রাতাই মহাবল পরাক্রান্ত এবং সুস্থমনে ও স্বচ্ছন্দে স্বরাজ্যে সর্বদা বিরাজমান হইবেন, ভুজবলে সমস্ত পৃথিবী জয় করিয়া বহুদক্ষিণ রাজসূয় ও অশ্বমেধ প্রভৃতি যজ্ঞানুষ্ঠান করিবেন এবং ভোগসাধনদ্বাবা সুহৃদ্বৰ্গকে সুখী করিয়া পরমসুখে স্বীয় পিতৃপৈতামহ রাজ্য ভোগ করিবেন, কদাচ ইহার অন্যথা হইবে না।

ভগবান্ কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ কুন্তীকে এইরূপ অশ্বাস দিয়া এক ব্রাহ্মণের আলয়ে তাঁহাদিগকে স্থাপনপূর্বক যুধিষ্ঠিরকে কহিতে লাগিলেন, হে ধর্মাত্মন! তুমি মাতৃভ্রাতৃসমভিব্যাহারে দেশকালানুসারে কাৰ্য্য করিয়া একমাস এই স্থানে পরমসুখে বাস কর; মাস পূর্ণ হইলে আমি পুনর্বার এখানে আগমন করিব। তাঁহারা সকলেই বদ্ধাঞ্জলি হইয়া “যে আজ্ঞা মহাশয়” বলিয়া তাহার উপদেশবাক্য স্বীকার করিলেন। ভগবান ব্যাসদেবও স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন।

হিড়িম্ববধপর্ব সমাপ্ত।