১৪৮. নারদপ্রমুখ মহর্ষিগণের কৃষ্ণ-অভিনন্দন

অষ্টচত্বারিংশদধিকশততম অধ্যায়
নারদপ্রমুখ মহর্ষিগণের কৃষ্ণ-অভিনন্দন

নারদ কহিলেন, বাসুদেব! মহাত্মা মহাদেব এই কথা কহিয়া নিরস্ত হইবামাত্র অকস্মাৎ নভোমণ্ডলে জলদজাল উদিত, বিদ্যুদ্দাম স্ফুরিত ও মেঘের অতি গভীর গর্জ্জনে চতুর্দ্দিকে প্রতিধ্বনি হইতে লাগিল। দিঙ্মণ্ডল ঘোরতর অন্ধকারে আচ্ছন্ন ও অদৃশ্য হইল। মেঘ হইতে মুষলধারে বৃষ্টিধারা নিপতিত হইতে লাগিল। তখন সেই পবিত্র দেবগিরিতে মহর্ষিগণ মহাদেব বা ভূতগণকে আর কেহ দেখিতে পাইলেন না। অনন্তর অবিলম্বে নভোমণ্ডল হইতে জলদজাল অপসারিত হইয়া গেল। তখন ব্রাহ্মণগণ এক অদ্ভূত ব্যাপার দর্শন ও শঙ্করের সহিত পার্ব্বতীর কথোপকথন শ্রবণ করিয়া বিস্ময়াবিষ্ট চিত্তে তীর্থ পর্য্যটন করিবার নিমিত্ত তথা হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন। হে বাসুদেব! গিরিপৃষ্ঠে ভগবান্ মহাদেব যাঁহার মহিমা কীর্ত্তন করিয়াছিলেন, তুমিই সেই সনাতন ব্রহ্ম। পূর্ব্বে মহাদেব হিমালয় দগ্ধ করিয়া আমাদিগকে বিস্মিত করিয়াছিলেন; এক্ষণে তোমার তেজঃপ্রভাবে পুনরায় সেইরূপ বিস্ময়কর ব্যাপার নিরীক্ষণ করিলাম। এই আমি তোমার নিকট মহাদেবের মাহাত্ম্য কীর্ত্তন করিলাম। দেবকীনন্দন ভগবান্ বাসুদেব নারদের মুখে এইরূপ বাক্য শ্রবণ করিয়া ঋষিগণকে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করিতে লাগিলেন।

অনন্তর মহর্ষিগণ প্রীতিপ্রফুল্লচিত্তে বাসুদেবকে সম্বোধন পূর্ব্বক কহিলেন, কৃষ্ণ! তোমাকে দর্শন করিলে আমাদিগের যেরূপ আন্তরিক প্রীতি উৎপন্ন হয়, দেবলোকেও আমাদিগের তাদৃশ প্রীতিলাভ হয় না। অতএব তুমি আমাদিগকে বারংবার দর্শন প্রদান করিও। ভগবান্ মহাদেব তোমার মহিমা যেরূপ কীর্ত্তন করিয়াছেন, তাহার অণুমাত্র মিথ্যা নহে। তুমি সকল বিষয়ই জ্ঞাত আছ এবং আমরা তোমাকে কোন বিষয় জিজ্ঞাসা করিলে তুমি আমাদিগের নিকট তাহা কীর্ত্তন করিয়া থাক; এই নিমিত্তই আমরা তোমার প্রতিপ্রিয় অনুষ্ঠান করিবার বাসনায় এই তোমার নিকট হরপার্ব্বতীসংবাদ বিষয়ক রহস্য কীর্ত্তন করিলাম। এই ত্রিলোকমধ্যে তোমার অবিদিত কিছুই নাই। আমরা নিতান্ত চপলস্বভাব, কোন গোপনীয় বিষয় আমরা প্রচ্ছন্ন রাখিতে পারি না। তুমি সর্ব্বজ্ঞ হইলেও আমরা স্বীয় লঘুত্ব নিবন্ধনই তোমার নিকট নানাপ্রকার কহিয়া থাকি। এই বিশ্বমধ্যে তোমার অবিদিত কোন বিস্ময়কর পদার্থই বিদ্যমান নাই। কি ভূলোকে, কি দ্যুলোকে যে কোন স্থানে যে কোন পদার্থ আছে, তৎসমুদায়ই তুমি অবগত আছ। এক্ষণে তোমার বুদ্ধি পরিবর্দ্ধিত ও পুষ্টিলাভ হউক, অবিলম্বেই তোমার এক মহাপ্রভাবসম্পন্ন, দীপ্তিশীল, কীর্ত্তিমান্ ও তোমা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট পুত্ত্র উৎপন্ন হইবে। আমরা চলিলাম। মহর্ষিগণ এই বলিয়া দেবদেব বাসুদেবকে প্রণাম ও প্রদক্ষিণ করিয়া স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন।

কৃষ্ণকীর্ত্তিপ্রসঙ্গে ভীষ্মের যুধিষ্ঠিরসমীপে নির্দ্দেশ

হে ধর্ম্মরাজ! অনন্তর শ্রীমান্ বাসুদেব হৃষ্টমনে বিধাননুসারে ব্রত সমাপন করিয়া পুনরায় দ্বারকায় সমুপস্থিত হইলেন। কিয়দ্দিন পরে দেবী রুক্মিণী গর্ভ ধারণ পূর্ব্বক দশম মাস পূর্ণ হইলে এক বংশধর পুত্ত্র প্রসব করিলেন। ঐ পুত্ত্র দেবতা, অসুর, মনুষ্য ও পশুপক্ষী প্রভৃতি সর্ব্বভূতের অন্তরে সঞ্চরণ করিয়া থাকেন। উঁহার নাম কাম।

(অসম্পূর্ণ)